চতুর্থ ও শেষ কিস্তি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরাশক্তি: ভারত, চীন, রাশিয়া ও আমেরিকা (৪)
রাশিয়া ফ্যাক্টর ও উপসংহার
গৌতম দাস
১৫ মে ২০১৪
বাংলাদেশে রাশিয়ান স্বার্থ বা ষ্টেক উপরের (আগের তিন পর্ব) অন্যদের অর্থাৎ আগের পর্বে বলা আমেরিকা, ভারত ও চীনের সাথে তুলনায় তেমন বড় নয়। যদিও অস্ত্র সরবরাহ, গ্যাস উত্তোলন, পুরানা বিদ্যুৎ গ্যাস টারবাইন প্লান্ট ওভারহলিং বা বদলে দেয়া সম্পর্কিত বিষয় ইত্যাদিতে অর্থনৈতিক ব্যবসায়িক স্বার্থের বিষয় রাশিয়ার কাছে গুরুত্বপুর্ণ। কিন্তু গ্লোবাল পরিসরের রাশিয়া রাইজিং ইকোনমির একটা দেশ হিসাবে রাইজিং ইকোনমির উত্থান ও ফলাফলে দুনিয়ায় পরাশক্তিগত পালাবদলের আসন্ন হয়ে উঠার কালে রাশিয়া পশ্চিমকে জবাব দিবার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠছে, এদিকটা নজর করা জরুরি। কিসের জবাব? মনে রাখতে হবে বর্তমান রাশিয়া একদা পরাশক্তিধর সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসুরি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালে নিজে ভেঙ্গে পড়া ও আলাদা আলাদা ১৫ টা রাষ্ট্রে টুকরা হয়ে পড়ে। এই সময় থেকে (রাশিয়া বাদে) বাকি টুকরা প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোকে নিজ বলয় দখলে নিতে পশ্চিমা স্বার্থ বিশেষত ইউরোপ নিয়মিত উস্কানি দিয়ে গেছে, যাচ্ছে। উতসাহ উদ্যোগের কমতির এখনও দেখা নাই। গত প্রায় পঁচিশ বছর অনেকটা নিরুপায় রাশিয়া এই উস্কানি সহ্য করেছে। খুব সম্ভবত এই প্রথম রাশিয়া ঘুরে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা পেয়েছে। আপতিক দৃষ্টিতে যা ইউক্রেন ক্রাইসিস তাই এরই প্রকাশ।
ইউক্রেন ক্রাইসিস মোড় ফিরানো ঘটনা
ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও পশ্চিমা স্বার্থ লড়াই এক বিরাট ইস্যু গতবছরের নভেম্বর মাস থেকে য়াবার মুখ্য হয়ে উঠছে। এটা এক লম্বা সময় ধরে চলা এক ফেনোমেনার ভিতরের নানান মোচড়ের বাইরের দিক। লম্বা সময়ের ফেনোমেনাটা বেশ লম্বা সময় ধরে, মোটামুটিভাবে ১৯৮৯ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়া ও লুপ্ত হওয়ার আলামত শুরু থেকে। আনুষ্ঠানিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তি ঘটে ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সকালে। কিন্তু এরপর থেকে এই বিশাল ঘটনা্র প্রতি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমের মনোভাব খুব গুরুত্বপুর্ণ নির্ধারক হয়ে থেকেছে। অর্থাৎ পুরা পুর্ব ইউরোপের উথালপাথাল এঘটনায় পশ্চিমা বিশ্ব কিভাবে নিজেদেরকে পেশ করেছিল, জড়িত করেছিল, কিভাবে নিজেদের বিদেশনীতি সাজিয়েছিল আজকের ইউক্রেন ক্রাইসিসের পিছনের কারণ সেখানে লুকানো আছে। সাধারণভাবে বললে, গ্লোবাল অর্থনীতি যে দুটো ব্লক অর্থনীতিতে পশ্চিমা ব্লক আর সোভিয়েত ব্লক হয়ে ভাগ হয়ে চলছিল বিগত প্রায় সত্তর বছর, যাদের মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য লেনদেন বিনিময় প্রায় নাই এভাবেই ছিল – সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়ার মধ্য দিয়ে এর অবসান ঘটেছিল। অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়ার ফেনোমেনার পরে দুনিয়া এবার একই অর্থনৈতিক মানে একই গ্লোবাল পুঁজিতান্ত্রিক অর্ডারের অধীনে পরিচালিত হতে রাস্তা খুলে গিয়েছিল। আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমের দিক থেকে দেখলে পুঁজি বিনিয়োগের এটা এক বিরাট সুযোগ, বিনা-যুদ্ধেই গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম আরও বিস্তৃত হবার, দুনিয়াকে একই গ্লোবাল আন্তর্জাতিক পুঁজির বাজার হিসাবে ধরে ছড়িয়ে পড়ার দিক থেকে সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। আমেরিকার ওয়াল ষ্ট্রিট সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের পরিস্থিতিতেও এত বিরাট সুযোগ আগে কখনও পায় নাই। দুনিয়া একক গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের অর্ডারের অধীনে পারস্পরিক বাণিজ্য লেনদেন বিনিময়ে বিকশিত (এবং লড়াইও) হতে সুযোগ পায়।
কিন্তু আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিম এই বিশাল সুযোগকেও যথেষ্ট গণ্য করে নাই এবং নিজেদের সন্তুষ্ট মনে করতে পারে নাই। এটাই তার নষ্টা দিক। তাদের কাছে মনে হয়েছিল এটা তাদের বিজয় আর এ বিজয়ে বিজয়ীরা সাপ্টা দিয়ে সবটাই নিয়ে যাবে সেই সুযোগ -এই নীতিতে শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে সুযোগ যথেষ্ট নয় এটা একই সাথে পশ্চিমের জন্য রাজনৈতিক, সামরিক, ষ্ট্রাটেজিক ও সর্বোপরি পরাশক্তিগত রুস্তমিসহ সবকিছুতেই পশ্চিমের লাভ আর লাভ, বাড়তি সুবিধা, প্রভাব, জবরদস্তি দেখানো – লুট করার এক বিরাট সুযোগ এসেছে মনে করে বসেছিল। অর্থাৎ গোটা পুর্ব ইউরোপ অবজেকটিভভাবে বা বাস্তবত তো গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের কাছে এক নতুন উন্মুক্ত বাজার হয়ে হাজির হয়েছিল, ওয়াল ষ্ট্রীটের জন্য অবারিত দুনিয়া হয়ে পুঁজি ছড়িয়ে পড়ার অপার সম্ভাবনা হয়ে ধরা দিয়েছিল। কিন্তু এতটুকুতে তারা সন্তুষ্ট নয়। চকচকে লোভের বশে এই পরিস্থিতিকে তারা সাবজেকটিভাবে কর্তা হয়ে তাদের যুদ্ধজোট ন্যাটোকে বিস্তার করে নেবার সুযোগ হিসাবে দেখেছিল ও ততপর হয়েছিল। এভাবে লোভকাতর চোখে দেখার পিছনে কারণ আছে। কিন্তু আজকের ইউক্রেন ক্রাইসিস প্রমাণ করছে তাদের এই লোভকাতর চিন্তা কত মারাত্মক ভুল ও আত্মঘাতি ছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর আলাপ আলোচনার মাধ্যমে রফাতে রাশিয়া রাষ্ট্রসহ (রাশিয়ান ফেডারেশন) মোট এগারোটা (Russia, Ukraine, and Belarus, Armenia, Azerbaijan, Kazakhstan, Kyrgyzstan, Moldova, Tajikistan, Turkmenistan, and Uzbekistan) আলাদা আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে পুরানা শুধু সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্ত হয়েছিল। একথা সত্যি যে ঐ বাকি দশ যারা ভেঙ্গে নতুন রাষ্ট্র হল তারা এতদিন যেমন মূল রাশিয়ান রাষ্ট্রের (১৯১৭ সালে লেনিনের বিপ্লব কেবল রাশিয়াতেই ঘটেছিল) সুরক্ষা নিরাপত্তার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এর ফলাফলে ঐ ১১ রাষ্ট্র কেবল নিজেদের মধ্যেই পারস্পরিক লেনদেন, বিনিময় বাণিজ্য কারখানা উতপাদন, পরস্পর পরপস্পের বাজার এভাবে রাশিয়াসহ একই ভাগ্যের এক অর্থনীতি হয়ে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু গুরুত্বপুর্ণ বিষয়, এমন ঘটবার পিছনে লেনিনের বিপ্লব কেবল রাশিয়ান বিপ্লব ফলে নতুন বিপ্লবের রাষ্ট্র মূলত রাশিয়া হয়েছে আর এর প্রতিরক্ষার দরকারে বাকিরা ব্যবহৃত হয়েছে এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। গুরুত্বপুর্ণ তথ্য হল ঐ বাকি দশ রাষ্ট্র আসলে রাশিয়ার মতই একই জার সাম্রাজ্যের অধীনস্ত ছিল, ফলে জারের অধীনে পরিচালিত হত ১৯১৭ সালের বিপ্লবের আগে পর্যন্ত। তাই লেনিনের বিপ্লবের ফলাফলে কেবল রাশিয়া থেকেই জার সাম্রাজ্য শাসন ক্ষমতা উতখাত হয়েছিল তাই নয় ঐ বাকি দশ রাষ্ট্র এরাও অন্তত জার সাম্রাজ্য শাসন থেকে মুক্ত হয়েছিল। কিন্তু দশ রাষ্ট্রের দিক থেকে দেখলে জার সাম্রাজ্য শাসন উতখাতের শক্তি তারা নিজেরা আভ্যন্তরীণ জনগণ কেউ নয় বরং রাশিয়ান বিপ্লবীরা। এই অর্থে যারা বাইরের বা বিদেশী (রাশিয়ান) ফ্যাক্টর। ব্যাপারটা তুলনীয়ভাবে বুঝার জন্য কল্পনার চোখে দেখলে এমনঃ ১৯৪৭ এর আগে পর্যন্ত আমরা বৃটিশ-ইন্ডিয়া হয়ে থাকার সময় যদি বৃটেনে কোন এক লেনিনীয় বিপ্লবের উত্থানে ক্ষমতা দখলে বৃটিশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে যেত সেক্ষেত্রে আমরা ঐ বিপ্লবের কর্তা কোন বৃটিশ কমিউনিষ্ট পার্টিরই অনুগত হয়ে এক নবজীবনে পরিচালিত হতাম। সেটা ভাল না মন্দ হত সেটা আলাদা বিবেচনা। লেনিনের বিপ্লবে ফলে ১৯১৭ সালে বাকি দশ রাষ্ট্রের অবস্থা হয়েছিল তেমনই। আবার বৃটিশ উপনিবেশী শাসকেরা ১৯৪৭ সালে বৃটিশ ইন্ডিয়া ছেড়ে চলে যাবার পরে যেমন বৃটিশ কমনওয়েলথ নামে এক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে এর মাধ্যমে পুরানা কলোনীগুলোকে এক বাণিজ্য জোটে ধরে রাখার উদ্যোগ প্রচেষ্টা নিয়েছিল (এখনও তা বহাল আছে) অনেকটা তেমনই, সোভিয়েত ইউনিয়নও ভাঙ্গার পর ঐ ১১ রাষ্ট্রগুলো মিলে এক নিরাপত্তা ও বাণিজ্য জোট গঠন করেছিল, যার নাম CIS (Commonwealth of Independent States)।
এতক্ষণ বার বার রাশিয়াসহ মোট ১১ রাষ্ট্রে আলাদা হবার কথা বলছি বটে, কিন্তু একটা ছোট বাড়তি তথ্য। মূল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে আলাদা মোট রাষ্ট্র হয় ১৫টা। এর মধ্যে তিন বাল্টিক রাষ্ট্র (লিথুনিয়া, এস্তেনিয়া ও লাটভিয়া) ভাঙ্গন প্রক্রিয়ার শুরুতেই আগেই নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে আলাদা হয়ে যায়। আর জর্জিয়া ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় সময় আলাদা রাষ্ট্র হতে চেয়েছে ঠিকই কিন্তু আবার CIS গঠনের আলাপ আলোচনা চলাকালীন সময় থেকেই এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেনি ফলে এর সদস্য হতে চায়নি। যদিও আবার দুবছর যেতে না যেতে ১৯৯৩ সালে গঠিত হয়ে থাকা CIS এ সে যোগদান করে। মোট সদস্য হয় ১২ রাষ্ট্র। কেন এই অবস্থা? জর্জিয়ার যোগ না দেওয়া, পরে আবার যোগদান এই অস্থিরতা কি কেবল একা জর্জিয়ার ক্ষেত্রে?
এর জবাব হল অস্থিরতা কেবল জর্জিয়ার নয়, বলা চলে রাশিয়া বাদে কমবেশি ১১ রাষ্ট্রের বেলায় এটা দেখা গিয়েছে। সংক্ষেপে এর মূল কারণ বলব। আর সেকথা ব্লতে গিয়ে ঐ ১১ রাষ্ট্র বুঝাতে সাধারণভাবে এরপর থেকে প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্র বলব।
পশ্চিমা স্বার্থ বিশেষত লাগোয়া রাষ্ট্র বলে ইউরোপের প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর প্রতি নীতির দিক বড় ভুল হল তারা শুরু থেকেই কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে ঐ রাষ্ট্রগুলোতে প্রবেশের সুযোগে সন্তুষ্ট ছিল না তারা সামরিক ষ্ট্রাটেজিক দিকসহ সামগ্রিক প্রভাব চায় – ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিসাবে এই নীতিতে চলেছে। এরচেয়েও সম্ভবত তাদের আরও গুরুত্বপুর্ণ লক্ষ্য হল এসব রাষ্ট্র থেকে রাশিয়ান প্রভাব নষ্ট করা বা কমানো বিচ্ছিন্ন করাটাকে পুর্বশর্ত হিসাবে ধরে নিয়ে আগানো। এজন্য প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোকে কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান ঘটানো নয়, ন্যাটোতেও যোগদান করানোর পক্ষে তাদের কাজ ততপরতার নীতিতে পরিচালিত হয়েছে ইউরোপ। অথচ স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হত কেবল অর্থনৈতিকভাবে আগানো। এতে পরবর্তিতে কোন সময় স্ব-উদ্যোগে অনুভব করলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অথবা ন্যাটোতে যোগদান করতে চাইলে তাতে সাড়া দেয়া হত তাদের সঠিক নীতি। তাতে দীর্ঘদিনের পুরানা রাশিয়ান বাজার নির্ভর ঐ রাষ্ট্রগুলোর ছোট অর্থনীতি বিস্তৃত হয়ে উঠত। প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজ ক্ষমতার উপর দাড়াত। এমনিতেই প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলো আগে রাষ্ট্রীয় মালিকানা থাকার কারণে নতুন মালিক উদ্যোক্তা যারা নতুন করে হয়ে উঠছিল তারা সরকারি সম্পদ লুটেরা হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। সেটাও হয়ত তত মারাত্মক হয়ে দেখা দিত না যদি তা সীমাহীন স্তরে পর্যায়ে না পৌছাত আর এর চেয়ে বড় কথা তারা যদি ব্যবসা উতপাদন অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা পরিচালনা দক্ষ হত। বরং সেদিক থেকে সরকারী প্রশাসন কাঠামো আর ব্যক্তি উদ্যোগ এই দুটোই চরম অদক্ষ থাকার কারণে গত পচিশ বছরে বার বার সরকার চালানোর অর্থনৈতিক দুরবস্থা প্রকট হয়েছে।
ওদিকে আর এক গুরুত্বপুর্ণ ফ্যাক্টর হল স্মার্ট ডিপ্লোম্যাসী। হিলারি ক্লিনটনের ‘স্মার্ট পাওয়ার এপ্রোচ’ তত্ত্বের অত্যাচার প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর উপরেও ছেয়ে আছে। এই তত্ত্বের মহিমা হল, গণ কূটনীতির (public diplomacy) আলোকে সরকার বিরোধী জনমতকে উসকিয়ে দিয়ে প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সংস্কারের বুদ্ধির সরব পদচারণা। রাশিয়াসহ প্রাক্তন সব সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোতে এরা ততপর। এই তত্ত্বের প্ররোচনাতেই ২০০৪ সাল থেকেই লাল বা নীল বা বেগুনী ba komola রেভুলেশনের নামে এসব দেশে সুশীল ও এনজিওদের উদ্যোগে নানান তথাকথিত “গণ আন্দোলন” দেখেছি আমরা।
যেমন উদাহরণ হিসাবে ইউক্রেন এর ঘটনাবলীর দিকে তাকালে দেখব এবারের ক্রাইসিস শুরু হচ্ছে গতবছর নভেম্বরে। আর ঘটনার পিছনের পটভুমিটা হল, ইউক্রেনের সরকারী প্রশাসন কাঠামো আর সরকারি সম্পদ লুটেরা ব্যক্তি উদ্যোগ এই দুটোরই চরম অদক্ষতায় প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। আইএমএফ-ইউক্রেন অফিসের হিসাব ও পরামর্শ মতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি মিটিয়ে অর্থনীতিকে টেনে তুলতে ১৫ বিলিয়ন ডলার দরকার হবে। মধ্যস্ততাকারী আয়োজক হিসাবে লিথুয়ানিয়া তার রাজধানী Vilnius শহরে ইইউ এর সাথে ইউক্রেনের দরকষাকষির সভা আয়োজন করেছে। ইউক্রেনের সাথে ইইউ এর এক ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর, ইইউতে ইউক্রেনের সদস্য হিসাবে প্রবেশে চুক্তি স্বাক্ষর আর ঐ ১৫ বিলিয়ন ডলার লোনের ব্যবস্থা – এমন এক টোটাল প্যাকেজ প্রস্তাব ইইউ টেবিলে রেখেছে। কিন্তু অর্থনীতি আর সরকারি খরচে কৃচ্ছতা সাধনের যে শর্ত ইইউ রেখেছে (স্পেনের অষ্টারিটির বা কৃচ্ছতাসাধন শর্তের মতই ভয়াবহ) তা মানতে পারছেন না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি স্বাক্ষর না করে ফিরে আসলেন। এদিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় সরকার বিরোধী “গণ আন্দোলন” চলছে, যার দাবি ইউক্রেনকে ইইউ-তে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। “গণ আন্দোলন” মূল আয়োজক আমাদের ভাষায় বললে সুশীল সমাজ ও এনজিও – হিলারি ক্লিনটনের ‘স্মার্ট পাওয়ার এপ্রোচ’ তত্ত্ব প্রবল সক্রিয় সেখানে। অনেকটা আমাদের শাহবাগের মত “গণজাগরণ”। ওদিকে প্রেসিডেন্টের খালি হাতে ফিরে আসার আর এক বড় কারণ আছে। রাশিয়ার হুমকি। না সামরিক হুমকি নয়। হুমকিটা অনেকটা পুরানো দোকানদারের মত যার কাছে এতদিন বাকিতে মালামাল নিয়ে সংসার চালিয়েছি। কম দামে মালামাল নেবার সুবিধাও নিয়েছি। কিন্তু এখন দোকানের ধারদেনা শোধ না করে, সম্পর্ক ত্যাগ করে হঠাত অন্য দোকানদারের দিকে রওনা হবার চেষ্টা করলে তো হুমকি খেতেই হবে, সেরকম। রাশিয়ায় ইউক্রেনের রপ্তানি মালামাল প্রবেশে বাধা, ইউক্রেন কনসেশন রেটে রাশিয়ান গ্যাস ব্যবহার করে সেই কনসেশন সুবিধা প্রত্যাহার এবং গ্যাসের বিল সেই বিরাট বকেয়া পরিশোধের নোটিশ ইত্যাদির এক লম্বা তালিকার হুমকি। কিন্তু রাশিয়াও বিবেচক দোকানদার। তাই ইইউ এর বিপরীতে রাশিয়া নিজেও পাল্টা ১৫ বিলিয়ন ডলার ধার দিতে প্রস্তুত। এই প্রসঙ্গটা আর বিস্তারিত করব না। এখানে বরং জোর দিব কিয়েভের রাস্তায় গনজাগরণে হিলারি ক্লিনটনের ‘স্মার্ট পাওয়ার এপ্রোচ’ তত্ত্বের “গণ আন্দোলন” এর দিকে।
ইইউ অথবা রাশিয়া কোনদিকের সাথেই শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট চুক্তি করলেন না। কিন্তু “গণ আন্দোলন” এর তোড়ে প্রেসিডেন্ট পালিয়ে গেলেন। “গণ আন্দোলন” ওলারা ক্ষমতা দখল ও সরকার গঠন করে ফেললেন। কিন্তু সাথে সাথে রাজধানী কিয়েভসহ পশ্চিম ইউক্রেন বাদে বাদবাকি ইউক্রেন – মানে দক্ষিণ ও পুর্ব ইউক্রেন এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত ক্রিমিয়ার উপর নতুন সরকারের আর কোন কর্তৃত্ব নাই শুধু নয় ওগুলো বিচ্ছি্ন্ন হয়ে যাবার পথ ধরল। তাহলে কিয়েভের রাস্তায় মাসের পর মাস যাদের “গণ আন্দোলন” করতে দেখা গিয়েছিল তাঁরা এখন কই? তাঁরাই বা কারা, কাদের প্রতিনিধি? “গণ আন্দোলন” এর ‘গণ’ মানে তো সারা ইউক্রেনের গণমানুষের নাকি তারা প্রতিনিধি ছিল – এমন দাবিই তো তারা করেছিল? গতবছর আমাদের শাহবাগে “আরব স্প্রিং” এর এজেন্টরা ছিল কিন্তু তা আগে বাড়েনি ফলে সেই তুলনার দিকটা না ধরে নিয়েই বলছি। ব্যাপারটা হল ধরা যাক শাহবাগ একটা “গণ আন্দোলন” করে যদি ক্ষমতা দখল করে ফেলত আর তাঁরা সরকার গঠন করতে না করতেই যদি দেখা যেত চিটাগাং আলাদা হয়ে গেল আর বগুড়া বিচ্ছিন্ন হবার পথে। এর মানে কি হত? মানে হল শাহবাগ অন্ততপক্ষে “গণ আন্দোলন” ছিল না। সারা বাংলাদেশের কোন প্রতিনিধিত্বই তারা করছিল না। নইলে শাহবাগ ক্ষমতায় আসার প্রতিক্রিয়ায় কেউ আলাদা বিচ্ছিন্ন হবে কেন? ইউক্রেনের বর্তমান দশা প্রমাণ করে যারা এখন কিয়েভের সরকারে আছেন তারা সারা ইউক্রেনের প্রতিনিধি আগে মাঠে থাকার সময়ও ছিলেন না এমনকি এখন সরকার গঠন করার পরও নাই। এই হল হিলারি ক্লিনটনের ‘স্মার্ট পাওয়ার এপ্রোচ’ তত্ত্ব অথবা “গণ আন্দোলনের” পরিনতির দিক। এটাই আমেরিকা ও ইইউ এর প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর প্রতি তাদের বিদেশনীতির পরিণতি। ওদিকে ইউক্রেন প্রসঙ্গে অসামরিকভাবে কি করা যায় তা নিয়ে জেনেভাতে আমেরিকা-রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় রাশিয়া প্রস্তাব রেখেছিল ইউক্রেন এক ফেডারেল রাষ্ট্রের আকারে পুনগঠিত করা পথে যাওয়া একটা সমাধান হতে পারে। কিন্তু সেটা নিয়ে কথা আগায় নাই, বরং এখনও প্রপাগান্ডা যুদ্ধ আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে অকেজো কিছু অবরোধ এটাই মুখ্য হয়ে আছে। কোন নিগোশিয়েশনের দিকে যাবার জন্য কেউ তৈরি হয়নি।
এঘটনায় রাশিয়ার দিক থেকে বললে, রাশিয়া এই প্রথম আমেরিকা ও ইইউ এর প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর প্রতি নীতির পরিণতি কি তা দেখিয়ে দেবার সুযোগ নিয়েছে, দেখাতে পেরেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর থেকে চলমান পশ্চিমা নীতির বিরুদ্ধে এটাই প্রথম রাশিয়ার পালটা একশন। এটা যে কাজ করছে তা বুঝা যায় কিছু প্রতিক্রিয়া দেখলে; ইন্টারনাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইউক্রেন ইস্যুতে আজ এক রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। সেখানে পরামর্শ হলঃ A report by International Crisis Group urges both Russia and Western powers to “back a vision for the country [Ukraine] as a bridge between East and West, not a geopolitical battleground.” অর্থাৎ এখন বুঝছে আমেরিকা ও ইইউ প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর প্রতি নীতির ফয়দা হয় নাই।
এই লেখার মূল প্রসঙ্গ পরাশক্তিগত পালাবদলে বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আমেরিকাকে রোখা বা কাউন্টার করতে গিয়ে রাশিয়ান সাধারণ নীতি বাংলাদেশে যতটুকু প্রতিফলিত সেটুকুকে চিহ্নিত করা। ইউক্রেন প্রসঙ্গকে সংক্ষিপ্ত পটভুমিতে রেখে সেই সাধারণ দিকটা ব্যাখ্যা করলাম এতক্ষণ। লিখতে গিয়ে রাশিয়ান নীতি কৌশল আপাতত সঠিক ও জয়লাভ করছে এমন একটা ধারণা পাঠক পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে কোন পরাশক্তির নীতি জয়লাভ করছে ফলে সে ভাল এমন কোন ধারণা প্রতিষ্ঠা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। পরাশক্তিগুলো একান্তই তাদের নিজের নিজের স্বার্থে পরিচালিত হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের কাজ কোন পরাশক্তির সাথে আদর্শগত মিল বা ঐক্য খোজার চেষ্টা থেকে সতর্কে দূরে থাকা। বরং তাদের অভিমুখগুলো সম্পর্কে ওয়াকেবহাল থাকা এই উদ্দেশ্যে যে আমাদের স্বার্থ আমাদেরকেই দেখতে হবে, ফলে সেখান থেকে আমরা আমাদের স্বার্থ বের করে আনতে পারছি কি না এমন দিকে তথ্যগুলো ব্যবহার করা।
রাশিয়ার এই পালটা একশন নীতি এটা কেবলমাত্র পুর্ব ইউরোপীয় অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা রাশিয়ার সাধারণভাবে আমেরিকার নেতৃত্ত্বে পশ্চিমের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়ার সব অঞ্চলে পালটা একশনে যাওয়ার নীতি। এই অর্থে এটা আমাদের অঞ্চলে মানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্রাইসিসেও প্রতিফলিত। সেই সুত্রে হাসিনা সরকারের সাথে বর্তমানে আমেরিকার নীতির স্বার্থবিরোধ চলমান আছে সেটা থেকে রাশিয়া কি সুবিধা নিতে পারে এমন নীতিতে বাংলাদেশে রাশিয়ান কূটনীতি পরিচালিত। ফলে এমন গুজব বাজারে ছড়িয়ে আছে যে সরকারকে রাশিয়ান পরামর্শ নাকি এমন যে তা বয়ান করলে, মালয়েশিয়ার মাহথির তো আসলে স্বৈরশাসকই ছিলেন কিন্তু ব্যাপক বিনিয়োগ ও উন্নয়ন দিয়ে তিনি গণমনে নিজের একটা আসন করে নিয়েছেন। মাহথির সম্পর্কে এমন এক মুল্যায়নের অন্তর্নিহিত ম্যাসেজ হল, হাসিনা বিরোধীদের উপর আরও দমন নিপীড়নের কোন ব্যাপক ম্যাসাকারে গেলে রাশিয়ার সমর্থন থাকবে তাতে। আর সে পরিস্থিতিতে রাশিয়া হবে সেই উপচে ঢেলে দেয়া বিনিয়োগ আনয়নকারী। হয়ত এমন গুজব সত্যি হলেও হতে পারে। যদিও গুজব তো গুজবই। তবে রাশিয়ান নীতি অবস্থানের সাথে এমন গুজব বেমিল নয়, কেবল একটা জায়গা ছাড়া।
গ্লোবাল পরিসরে পশ্চিমা স্বার্থ জোট নিজেরা একসাথে সমন্বয় করে কাজ করে এবং পরাশক্তিগত ক্ষমতা খাটিয়ে নিজেদের ষ্টাটেজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থগুলো হাসিল করে – এমন এক প্রভাবের ভিতর আমরা এখনও আছে যদিও ক্রমশ সেই মুঠি আলগা হতে শুরু করেছে। এই স্বার্থজোট ও এর প্রভাব খর্ব করার তাগিদ চীন ও রাশিয়ার উভয়েরই আছে। এই তাগিদটাই তাদের উভয়ের এক কমন অবস্থানের ভিত্তি। ফলে এক ধরনের বুঝাবুঝি থাকার ভিত্তি সেটা। কিন্তু কোনভাবেই এটাকে পুরান দুই কমিউনিষ্টের আদর্শগত ঐক্য মনে করা ভুল হবে। তারা উভয়ে কুটনৈতিক অঙ্গনে একসাথে পরস্পরকে সমর্থন করে কাজ করবে, অবস্থান নিবে। তাদের বুঝাবুঝিটা এমন যে, যে ইস্যুতে রাশিয়ান ষ্টেক চীনের চেয়ে বেশি সেখানে রাশিয়া অবস্থানটাই চীন যতদুর সম্ভব সমর্থন করবে। অথবা ভাইসভারসা। যেমন সিরিয়া ইস্যুতে চীন রাশিয়ান অবস্থানের সমর্থক। এই সুত্রে বাংলাদেশ ইস্যুতে রাশিয়া মোটা দাগে চীনা অবস্থানের সমর্থক। যদিও রাশিয়ান অবস্থান নিজস্ব ব্যবসা স্বার্থ নিশ্চিত করতে আলাদা করে হাসিনা সরকারের সাথে যোগাযোগ সম্পর্ক রাখে। ফলে শক্ত হাতে বিরোধী দমনের পক্ষে যুক্তি পরামর্শ রাখার যে গুজবের কথা শোনা যায় রাশিয়ান এই অবস্থান কংগ্রেসের ভারতের বাংলাদেশ নীতি দ্বারাও অনেকটা প্রভাবিত। তবে সেটা, হাসিনা-ভারতের জোট “সেকুলার” এবং তাই হতে হবে – ধরনের কোন রাজনৈতিক অবস্থান রাশিয়ার নয়। বরং আমেরিকার বিরোধিতা করে (যেহেতু এর মধ্যে আমেরিকার বিরোধিতা আছে) এথেকে যতটা সম্ভব নিজস্ব ব্যবসা স্বার্থ নিশ্চিত করার সুযোগ পাওয়া যায়, এটাই রাশিয়ার মুখ্য অবস্থানের দিক। কিন্তু আলামত অনুযায়ী ভারত আর কংগ্রেসের ভারত থাকছে না। ফলে সম্ভবত এখনকার সমীকরণ হতে যাচ্ছে একেবারেই ভিন্ন কারণ বাস্তবতা বদলাচ্ছে। তবে শেষ কথা একটা আছে, শেষ বিচারে যদিও চীন রাশিয়ার সাধারণ বুঝাবুঝির দিক আন্ডারষ্টান্ডিং কমিটমেন্ট যেটা আছে বললাম – সেটার কারণে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নির্ধারক কোন পরিস্থিতিতে চীনের অবস্থা্নের পক্ষেই রাশিয়া অবস্থান নিবে। এটা অনুমান করা যেতে পারে।
তাহলে ভারতীয় নির্বাচন পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করা চীন বা রাশিয়ার কাছে বিষয়টা এমন সরাসরি সম্পর্কিত নয়, তবে পরোক্ষে সম্পর্কিত। নির্বাচন-ঊত্তর ভারতে কংগ্রেস বাদে কে সরকার গঠন করবে তাতে আমেরিকা-ভারতের বাংলাদেশ নীতি কি হবে (মূলত সামঞ্জস্য ও সমন্বয় থাকতে হবে) – এটার সাথে হবু ভারত সরকার ও আমেরিকা সরাসরি সম্পর্কিত। আর এই অবস্থানটা থিতু হলে পরে এর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত চীন ও রাশিয়ার বাংলাদেশ নীতির বাস্তবায়ন, এই অর্থে শেষের দুজন পরোক্ষে সম্পর্কিত।
ভারতের নির্বাচন প্রসঙ্গে সবশেষের সারকথাঃ
এখনকার সময়টা এমন যে বিশেষত আমাদের এই অঞ্চলের প্রসঙ্গে এর রাজনৈতিক খেলোয়ারদের কোন জোট গ্রুপ বেধে (আদর্শগত তো নয়ই) আগানো অথবা অক্ষশক্তি হয়ে আগানো – আমরা দেখতে পাব সে সময় এটা নয়। এমনকি বলা যায় সেটা সহসাই আবার ফিরেও আসছে না। চীন, আমেরিকা বা ভারত -এদের সবার সাথে সবার (ফলে আমাদেরটাও) সম্পর্কটা হবে – সবার সাথে সবার বিভিন্ন ইস্যুতে স্বার্থের মিলের দিক থাকবে, আবার একই সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রচন্ড দ্বন্দ্বের দিকও থাকবে। এর সবগুলোকে বিবেচনায় রেখে এক ভারসাম্যপুর্ণ অবস্থান অঞ্চলের প্রত্যেকে রাষ্ট্রকেই নিতে হবে, পরিচালিত হতে হবে। এককাট্টা জোটবদ্ধ হয়ে কিছুই আগাতে দেখা যাবে না। তবে নতুন এই ভারসাম্যপুর্ণ অবস্থান মানে কিন্তু নতুন এক ভারসাম্যপুর্ণ অবস্থান, কুটনৈতিক ভাষায় একে ব্যালেন্সিং এক্ট বলা হয়। প্রত্যেককেই কেবল নিজের স্বার্থ বিবেচনায় একটা ব্যালেন্সিং এক্ট বা অবস্থান নিতে হবে। আবার যেটাকে ব্যালেন্সিং এক্ট বলছি তা করতে সবাই বাধ্য হবে কারণ এর প্রাইম মুভার হল, দুনিয়া জুড়ে আসন্ন পরাশক্তিগত নতুন বিন্যাস। এছাড়া আর মোটা দাগে বললে, এটা শুধু পরাশক্তিগত নতুন বিন্যাসই নয় এটা একই সাথে ১৯৪৪ সাল থেকে জন্ম নেয়া আমেরিকার নেতৃত্ত্বে পশ্চিমের দিকে ভারসাম্যের কান্নি মারা যে গ্লোবাল অর্থনৈতিক অর্ডারটা চালু হয়েছিল এর আয়ুর শেষদিকের বছর চলছে তাই। পাশ ফিরে পুরাণ অর্থনৈতিক অর্ডার বা ব্যবস্থা টা মোচড় দিয়ে পাশ ফিরে আবার শোয়া শুরু করেছে। পাশ ফিরে শোয়াটাকেই আমরা অন্য ভাষায় পরাশক্তিগত নতুন বিন্যাস বলছি। এখন পুরানা ব্যবস্থাটাকে যদি ১৯৪৪ সালের গ্লোবাল অর্থনৈতিক অর্ডার বা ব্যবস্থা বলে বুঝি তবে এর আগামি হল ব্রিক ব্যাংক ও এ জাতীয় আরও জন্ম আসন্ন নতুন নতুন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু এতে অন্য সবার তুলনায় ভারতের অবস্থানটা হল একেবারেই দ্বিধাগ্রস্থতা। যেটা আমাদের জন্যও ক্ষতিকর। একদিকে আমেরিকার দেখানো লোভে পুরানা প্রাতিষ্ঠানগুলো থেকে এককভাবে সুবিধা লুটে নেবার চেষ্টা অন্যদিকে আগামি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অমনোযোগ, কার্যকর করার পক্ষে শক্তভাবে না দাঁড়ানো, দাঁড়াতে না দেয়া বা দেরি করিয়ে দেয়া – এই ছিল কংগ্রেসের ভারতের দ্বিধা। এই দ্বিধাগ্রস্থতার কারণেই ব্রিক ব্যাংক প্রচেষ্টা থমকে আছে। চীন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ভিতরে না ঢুকে বরং এককভাবে নিজের চায়না ডেভলবমেন্ট ব্যাংক নামে কাজ চালাচ্ছে। চীনা কারেন্সী ইউয়ানের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বাড়ছে। এটা অনেকটা ১৯৪৪ সালে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক গঠনের আগের মত পরিস্থিতি। আমেরিকা এককভাবে আমেরিকান এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক নাম নিয়েই যখন মুদ্রামান নিয়ন্ত্রণ ও অবকাঠামো গড়ার কাজ শুরু করেছিল। পরে ১৯৪৪ সালে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক জন্ম নেবার পর ঐ ব্যাংক বিলুপ্ত করে ওর সমস্ত সম্পদ আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকে আমেরিকান চাঁদা হিসাবে হস্তান্তর করে দেয়া হয়। আর সেগুলো আমেরিকান কন্ট্রিবিউশন বা শেয়ার হিসাবে গণ্য হয়। মোদির ভারত কি দ্বিধাগ্রস্থতা বা নগদের লোভ কাটিয়ে উঠার সিদ্ধান্তে আসতে পারবে? এটা দেখার জন্য ভারতের নির্বাচনের পরও আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের, আদৌ যদি দ্বিধাগ্রস্ততা কাটে তবেই।
আগামীকাল থেকে ভারতের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হতে শুরু করবে। দিন শেষে হয়ত ফলাফলের অভিমুখ পরিস্কার হতে শুরু করবে আর পরশুদিনের মধ্যে পুরা ফলাফল প্রকাশিত হয়ে যাবে। সাধারণভাবে বললে এ পর্যন্ত যতগুলো ইক্সিটপোল বা আলোচনা বা রিপোর্ট আমাদের নজরে এসেছে তাতে এমন কোন ধারণা পাওয়া যায় নাই যা মোদির বিজেপির ক্ষমতার আসার বিপক্ষে ইঙ্গিত করেছে।
নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে কিছু সরাসরি কথাঃ
এবার সরাসরি কিছু কথা বলা যাক। বিজেপি যদি ২১৮-২২০ এর কাছাকাছি বা উপরে আসন পায় তবে নিশ্চিতভাবেই ভারতে বিজেপির সরকারই গঠন হচ্ছে বলা যায়। এখন আমাদের জন্য অনুকুল হয় এমন সরকারটা কেমন হতে পারে? সেই কল্পনায় আমাদের আকাঙ্খা অর্থে আদর্শ সেই সরকার হবে “মমতার সমর্থনের মোদির বিজেপির এক সরকার”। মমতার সমর্থনের মানে বুঝিয়েছি মোদির বিজেপিকে সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে প্রয়োজনীয় (এখানে ধরে নিয়েছি যদি প্রয়োজনীয় হয়) আসনের সমর্থন মমতার তৃনমূল কংগ্রেস দিবে তবে তা সরকারের ভিতরে অংশ নিয়ে অথবা বাইরে থেকে অংশ না নিয়ে হলেও। এতে আমাদের জন্য অসুবিধা বা ফারাক নাই। কিন্তু কেন মমতার সমর্থনের কথা বলছি?
বলছি কারণ, বিগত অন্তত চার বছর ধরে মমতার রাজনীতির নীতি কৌশলে সে কাদের প্রতিনিধি হতে চাইছে এই অর্থে তার কনষ্টিটুয়েন্সি কি সেদিকে কেউ খেয়াল করেছে এমন আলোচনা আমি দেখিনি। আমরা মমতাকে চিনি বা চেনানো হয়েছে যে, মমতা আমাদের নদীর পানি পাবার ক্ষেত্রে বাধা, এমন ভিলেন সে। এটা সবটা সত্যি নয়। বিগত ২০১১ সালে মনমোহনের বাংলাদেশ সফর প্রাক্কালে (যখন তিস্তা চুক্তি হবে বলে আশা দেয়া হচ্ছিল) মমতাকে মনমোহনের সফরসঙ্গি করার পরিকল্পনা ছিল। সে মোতাবেক ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা বা ব্রিফ করেছিল। সেসময় মমতা প্রশ্ন তুলেছিল যে পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়ে কেন তিস্তা চুক্তি করতে যাওয়া হচ্ছে। সচিবের জবাব ছিল যেহেতু আগের সিপিএম সরকার এব্যাপারে তাদের অনাপত্তি জানিয়ে রেখেছে তাই। এটা স্বভাবতই মমতার পছন্দ হয় নাই। সচিব এরপর বলার চেষ্টা করেছিল যদি আপনার আপত্তি থাকে তবে কোন অসুবিধা নাই, চুক্তিটা স্বাক্ষর হয়ে যাক এরপর আপনার আপত্তির চিঠি কেন্দ্রকে দিলে আমরা চুক্তির বাস্তবায়ন বন্ধ রাখব। এতে মমতা আরও যড়যন্ত্রের গন্ধ পান। তিনি বলেন, পানিই যদি না দিবেন তবে এমন চুক্তি করার দরকার কি আর তাতে আমাকে জড়িত করার উদ্দেশ্যই বা কি? ফলাফলে তিনি সফরসঙ্গি হবার অনুরোধ ফিরিয়ে দেন। কিন্তু কংগ্রেস সরকারের পরিকল্পনাটাই ছিল এমন যে মমতা সফরসঙ্গি হন আর নাই হন যেদিকেই ঘটনা যাক চুক্তি না হবার জন্য মমতাকেই দায়ী হতে হবে, হয়েছেও। এপ্রসঙ্গ এখানেই থাক। কনষ্টিটুয়েন্সির প্রসঙ্গে আসি।
মমতাই প্রথম ভারতীয় রাজনীতিক যিনি সেকুলার মোড়ক ছুড়ে ফেলে দিয়ে এক রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে দেখিয়েছেন। তিনি বুঝেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সি ভোটের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপুর্ণ উপাদান। ফলে তাগিদ বোধ করেছেন মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সির নেতা হতে, প্রতিনিধিত্ব করতে। দেশভাগের পর থেকে এপর্যন্ত একাজে সেকুলারিজম এই বয়ানের আড়ালে প্রধানত কংগ্রেস মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সি দখলে রেখেছিল। এরপরে সিপিএমের আমলে এর বিরাট অংশ তারা নিজের পক্ষে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। বয়ান সেই একই সেকুলারিজম। কিন্তু ভারতের সাচা কমিশন রিপোর্ট প্রকাশের পর এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য হয়ে যায় যে সেকুলারিজমের আড়ালে সবই কথার কথা থেকে গেছে।
এবার এই মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সি দখলের প্রতিযোগিতায় মমতা হাজির ঠিকই কিন্তু সেকুলারিজম তার বয়ান নয়। এটা তাতপর্যপুর্ণ। মুসলিম নেতাদের সঙ্গে তিনি সরাসরি যোগাযোগ বাড়িয়েছেন, এরই সর্বশেষ হল কমিউনিটি লিডার পত্রিকা সম্পাদক ইমরান হাশমিকে রাজ্যসভার মনোনয়ন দিয়ে পাঠানো। আর এরও আগে যখন বাংলাদেশে শাহবাগ আন্দোলন তুঙ্গে তখন কলকাতার মুলনমান কমিউনিটি এর বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করতে চাইলে মমতা সেটা পৃষ্ঠপোষকতা করেন। বলা হয় ঐ মিছিলে প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোক সেখানে সমাগম হয়েছিল। ওদিকে এই ঘটনাটাকে ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক যে কোন মিডিয়ায় আলোচনা বা প্রবন্ধে এঘটনাকে ভারতের জন্য এক হুমকি হিসাবে এখনও রেফারেন্স দেয়া হয়। কিন্তু মমতা এব্যাপারে নির্বিকার। এবারের চলতি নির্বাচন উপলক্ষ্যে কলকাতায় সিপিএমের সে মূল নির্বাচনী সভাটা হয় সেখানে এব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সম্পাদক বিমান বসুকে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝা যায় মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সি দখলের লড়াইয়ে মমতা সিপিএমের উপর একটা ভাল কামড় বসাতে পেরেছেন। সম্ভবত একটা ভাল ভাগ তিনি পেতে যাচ্ছেন। বিমান বসুর সমস্যা ছিল তিনি সরাসরি বলতে পারেন না যে মমতা তার মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সি কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কারণ সেটা কোন আইন বা যুক্তিতে অপরাধ নয়। ফলে তিনি মমতাকে অভিযুক্ত করলেন এই বলে যে মমতা জঙ্গিবাদকে আর বাংলাদেশের জামাতকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। বলা বাহুল্য তার এই বক্তব্যের গ্রাহক হবেন যারা মুসলিম নন তারা ফলে মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এটা কার্যকর নয়। বলা যায় তিনি অমুসলিমদের কাছে বিচার দিয়ে হার স্বীকার করে নিলেন। এখানে বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে তাই বাড়তি একটা কথা বলার সুযোগ নেই। মোদির কলকাতার জনসভাগুলো বাংলাদেশ বিরোধী বা পশ্চিমবঙ্গে তথাকথিত বাংলাদেশের মুসলমান মাইগ্রেশন বিরোধী প্রচার চলেছে। মনে রাখতে হবে এগুলো নির্বাচনী ভোট যোগাড়ে বলা রেঠরিক কথাবার্তা। বিজেপি যেসব রাজ্যে মারাত্মক দুর্বল তার দুর্বলতম হল পশ্চিমবঙ্গ। এখানকার মোট বেয়াল্লিশ আসনের মধ্যে একটার বেশি আসন বিজেপি এপর্যন্ত কখনও পায় নাই। মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সি ইস্যুতে একদিকে সেকুলার কার্ডে কংগ্রেস আর সিপিএম দুই পুরানা খেলোয়াড়। ওদিকে মমতার নতুন লক্ষ্য সেকুলার-জামার আশ্রয় ছুড়ে ফেলেই মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সি লাভের উদ্যোগ। এই পরিস্থিতিতে মোদির ভরসা বাংলাদেশ বিরোধি মাইগ্রেন্ট ইস্যুতে প্রচারণা। তাতে মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সি নয় বরং অমুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সিতে যতটা দাঁত বসানো যায় যতটা অর্জন করা যায়। কারণ এদিকটাই একমাত্র খালি আছে। মোদি ইতোমধ্যে নিজেই টাইমস নাও টিভিকে বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় কি বলেছি সেটাই আমার সরকার পরিচালনার নীতি হতেই হবে এমন কোন মানে নাই। আবার মমতা এপ্রসঙ্গে মোদিকে কি জবাব দিয়েছেন, মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সিকে কি বলে আশ্বস্ত করেছেন সেটার চেয়ে গুরুত্বপুর্ণ সার কথা হল, তাঁর বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশকে এই বিরোধি প্রচারণার হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা –এটাকে মুখ্য করে কথা বলেছেন।
সারকথায় বললে মমতার যে মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সির ভর করে দাড়ানোর চেষ্টা তাতে তিনি যদি সফল হয়ে যেতে পারেন, তাদের মুখপাত্র ও প্রতিনিধি হয়ে যেতে পারেন অথবা হতে চান তবে বাংলাদেশের প্রতি তাকে সহানুভুতি হতে হবে এটা তিনি বুঝেছেন এবং এর স্বাক্ষর তিনি রেখে চলেছেন এটা মনে করার কারণ হাজির আছে। যদিও আগামিকালের ফলাফলে একমাত্র জানা যাবে তিনি কতটা সফল হলেন, আগালেন।
এই অনুমানের উপর ভর করে আমরা বলতে পারি, আগামিতে ভারতে যেই সরকার গঠন করুক তাতে যদি মমতার সমর্থন প্রয়োজনীয় আসন সমর্থন নির্ধারক হয় সেটা বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকুলে যাবে। বিশেষত মোদির বিজেপির সরকার হলে এটা আরও গুরুত্বপুর্ণ হবে একারণে যে মমতা হবে বিজেপির হিন্দু-ঝান্ডার ঝোঁকের বিরুদ্ধে ব্যালেন্সিং ফ্যাক্টর। তবে মমতা বলতে মমতা যতক্ষণ মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সির নেতা এই শর্তের মমতা থাকবেন – একথা মাথায় রাখতে হবে। কেবল এই শর্তেই তিনি বাংলাদেশের জন্য কুশন, প্রয়োজনীয় ফ্যাক্টর।
আবার ধরা যাক মমতার আসনের কোন সমর্থন ছাড়াই মোদির বিজেপি নিজে নিজেই সরকার গঠন করতে পারল। সেক্ষেত্রেও উপরের আলোচনায় বড় কোন রকমফের ঘটবে না। যতক্ষণ মমতা মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সির নেতা থাকবেন, হবেন অথবা থাকতে পারবেন – সেটাই মুখ্য বিষয়। কথাটা ‘হতে পারবেন’ এমন আগামি হিসাবে বলছি এজন্য যে মমতা মনে প্রাণে চাচ্ছেন, ঝোঁক দেখিয়েছেন যে তিনি মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সির নেতা হতে চান। কিন্তু তিনি হয়েছেন কি না, আসলে কতটা হলেন তা জানা যাবে আগামিকাল। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টা আসনের মধ্যে যদি ৩০টা বা তার বেশি আসন তিনি তুলতে পারেন তবে বুঝতে হবে তাঁর নীতি কৌশল কাজ করেছে। মুসলমান কনষ্টিটুয়েন্সির ভোট তার পক্ষে কাজ করেছে।
এখানেই শেষ করছি। “বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরাশক্তি: ভারত, চীন, রাশিয়া ও আমেরিকা” এই শিরোনামের চার পর্বের লেখা এখানেই শেষ।