ভারতের নির্বাচনের তাত্পর্য
গৌতম দাস
ভারতের নির্বাচনে ফলাফল পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশটির নিজস্ব রাজনীতির গতি-প্রকৃতি এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে আলোচনার শুরুতে কতগুলো প্রিজুডিস বা মনে গেঁথে বসা আগাম অনুমান পরিষ্কার করা দরকার। কংগ্রেস আর বিজেপির তফাত কী— এ সম্পর্কে আমাদের অনুমিত ধারণা হলো, বিজেপি ধর্মীয় দল আর কংগ্রেস সেক্যুলার। বাংলাদেশে সাধারণভাবে মুসলমান পরিচয়ের দিক থেকে বিজেপির প্রতি ভয় ও আপত্তি আছে। সে তুলনায় কংগ্রেসের প্রতিও ভয় আপত্তি কম নয়। শহুরে জনগণ মূলত বিজেপির চেয়ে কংগ্রেসকে এগিয়ে রাখার একটা ঝোঁক তৈরি করে রেখেছে। কিন্তু উপর উপর নয়, বিষয়ে গভীরে গিয়ে চিন্তা করলে আমরা বুঝব যে, হিন্দুত্বের ভিত্তিতে এক ভারতীয় রাষ্ট্র— এই মৌলিক ধারণার ব্যাপারে কংগ্রেস ও বিজেপি একমত। অর্থাৎ এটা তাদের রাষ্ট্রভিত্তিগত মৌলিক মিলের দিক। এটা শুধু বিশেষ হিন্দুধর্মীয় কারণে নয় বরং বিশাল ভারতে কেন্দ্রীভূত করে ঐক্য ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় এবং নির্ধারক বলে এই উভয় দল বিশ্বাস করে। অনুমানটা হলো, একটা শক্ত এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রক্ষমতা তৈরি ও তা ধরে রাখার প্রধান উপাদান হলো হিন্দুত্ব। কারণ এছাড়া নাকি হাজারো পরিচয়ের বিভেদ চিহ্ন (ভাষা, রেসিয়াল অর্থে জাতিগত, সমতলী-পাহাড়ি, কৃষিপ্রধান-অকৃষি প্রধান, একেক অঞ্চলে একেক দেবদেবীর প্রভাব, ধর্মীয় প্রধান উত্সবের ভিন্নতা, জাতপাত বা কাস্টের বিরোধ আর সর্বোপরি নানান ধর্মীয় ভিন্নতা ইত্যাদি) এমন ভারতকে ধরে রাখা যাবে না। ফলে এক রাখার সহজ চাবি হতেই হবে হিন্দুত্ব। এটা আসলে কেবল কংগ্রেস বা বিজেপির দলীয় চিন্তা নয়, ভারতকে এক করে ইউনাইটেড এক ইউনিয়নে ধরে রাখা আর সেই ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক ভারত রাষ্ট্রের যে কল্পনা সবার মনে ১৯৪৭ সাল থেকে জারি আছে, এর মৌলিক ভিত্তি হিন্দুত্ব; হিন্দুত্বের ভিত্তিতে এক ভারতীয় রাষ্ট্র। কনস্টিটিউশন অনুযায়ী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হয় ইউনিয়ন সরকার। এই অর্থে ভারত ইউনিয়ন রাষ্ট্র, কোনো ফেডারেল রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামো এটা নয়। হিন্দুত্বের ভিত্তিতে এ ইউনিয়ন খাড়া করতে গিয়ে জোর দেয়া হয়েছে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার দিকে। আর এতে কেন্দ্রীয় ভুতুড়ে ক্ষমতায় সব শ্রেণী, অঞ্চলের ‘প্রতিনিধিত্ব’ নিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় দিকটা গায়ের জোরে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। এই হলো হিন্দুত্বভিত্তিক রাষ্ট্রের গোড়ার কথা। ওর জন্ম সমস্যার আদি কাহিনী। কংগ্রেস ও বিজেপির এই মৌলিক ভিত্তিগত মিলের পরে এবার তাদের ফারাকের দিকটা হলো— কংগ্রেস মনে করে এই মৌলিক ভিত্তিকে লুকিয়ে রেখে একে উপস্থাপন করতে হবে সেকুলার জামা পরিয়ে। বিপরীতে বিজেপি মনে করে— এটা লুকানোর কী আছে। লুকানোর ধার ধারে না শুধু নয়, সে এটা গর্বের পর্যায়ে নিয়ে উপস্থাপন করতে চায়। এ হিসাবে বিজেপিকে সৎ বলা যেতে পারে। আবার সূক্ষ্মভাবে বিচার করলে কংগ্রেসের সেকুলারিজম জামা লাগিয়ে নিজেকে হাজির করার এই নবপ্রয়াস কিন্তু ১৯৪৮ সালে গঠিত ভারত রাষ্ট্রে ছিল না। ১৯৪৮ সালের গৃহীত ও গঠিত ভারত প্রজাতন্ত্রের কনস্টিটিউশনে সেকুলারিজমের আলাপ পাওয়া যাবে না। এটা পাওয়া যাবে ১৯৭৪ সালের পরে সংশোধিত কনস্টিটিউশনে। আর ওদিকে হিন্দুত্ববাদের ভিত্তিকে গৌরবের বিষয় হিসেবে নিয়ে দাঁড়ানোর কারণে হিন্দুত্বের জন্য গালমন্দের পুরোটাই বিজেপির ওপর দিয়ে যায়। গত ৬৭ বছরের প্রজাতান্ত্রিক ভারতের ৫৬ বছরই কেটেছে কংগ্রেস বা কংগ্রেসের জোটের দ্বারা পরিচালিত সরকারের হাতে। কিন্তু এই ৬৭ বছরে সরকারে কে আছে— এর সঙ্গে দাঙ্গা ঘটছে বা ঘটেনি অথবা কমবেশি ঘটেছে, এর কোনো তালমিল, কো-রিলেশন খুঁজে পাওয়া যায় না। দাঙ্গা যার ইচ্ছা-পরিকল্পনায়ই ঘটুক, শুরু হোক, পুলিশ বাহিনীসহ প্রশাসনের মৌন অথবা সক্রিয় সমর্থন ছাড়া সেই দাঙ্গা সফল হওয়া একেবারে অসম্ভব। ১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার দাঙ্গার সময়ে প্রথম ৩ ঘণ্টা নির্দেশ দেয়ার মতো প্রধানমন্ত্রী ভারতে কেউ ছিলেন না। কারণ তখনকার কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও ওই ৩ ঘণ্টা আনডিস্টার্ব এক দীর্ঘ পূজায় বসেছিলেন— এমন খবরও আমরা শুনি। তবু হিন্দুত্বের এই রাষ্ট্রীয় ফাউন্ডেশন এ ভিত্তির দিকে নজর না ফিরিয়ে কেবল দল বিজেপিকে দোষারোপের এক আবহাওয়া তৈরির জন্য কংগ্রেসের প্রতি আমাদের ‘সেকুলার প্রগতিবাদী’ কামনা দায়ী। বাংলাদেশের মুসলমান ‘সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশকারী’ আসছে— এ ব্যাপারে কংগ্রেস, সিপিএম, এককালের তৃণমূল আর বিজেপি তো আছেই, সবাই একমত। পার্লামেন্টে আলোচনাও করেছে। গত দশ বছর কংগ্রেস শাসনে কথিত সেই ‘অনুপ্রবেশকারী’ মারার অজুহাতেই নির্বিচারে সীমান্তে হত্যা আমরা দেখেছি। ভারতের কোনো দল আপত্তি করেনি। যদিও বিএসএফ একজন ‘সন্ত্রাসবাদী’কেই সীমান্তে হত্যা করতে পেরেছে এমন রেকর্ড জানা নেই। যারা মরেছে তারা গরু চোরাচালানি বা নিরীহ সীমান্ত গ্রামবাসী, এককথায় যারা বড়জোর ‘ইকোনমিক মাইগ্রেন্ট’। ফেলানী ঘটনা যার জাজ্বল্য প্রমাণ। মজার কথা, এমনকি কোনো ফেনসিডিল চোরাচালানি তাতে নেই। তবু কংগ্রেস ভালো আর বিজেপি একমাত্র দোষের— এমন বয়ান আমরা নিয়মিত উৎপাদন করতে দেখছি। বাংলাদেশ থেকে ‘মুসলিম সন্ত্রাসবাদী’ অনুপ্রবেশকারী কল্পিত শত্রু না থাকলে হিন্দুত্বের ভিত্তিতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা ভারত রাষ্ট্রে ন্যায্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তাই এই প্রশ্নে কংগ্রেস, সিপিএম, এককালে তৃণমূল আর বিজেপি সবাই একমত। আশা করব ভারতে মোদির বিজেপির বিজয়ের কালে এর গতি-প্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে এই গোড়ার প্রিজুডিস থেকে আমরা মুক্ত থাকব।
বিশ্ব পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে ভারত ‘উন্নত আর উন্নয়নশীল’ এ বাইনারি ক্যাটাগরির বাইরে ‘রাইজিং ইন্ডিয়া’— এই নতুন ক্যাটাগরিতে গণ্য হতে পারে এমন সম্ভাবনার দেশ। দুনিয়ার অর্থনীতি এশিয়ামুখী, এশিয়া ভারকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ওবামাসহ সবাই এটা স্বীকার করেন। এই ভারকেন্দ্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে চীনের বিপরীতে একমাত্র ভারতই পশ্চিমের ভরসা। অনুভূত এ ফ্যাক্টর ওয়াল স্ট্রিটের কাছে ভারতের গুরুত্ব আরো কয়েক গুণ বাড়িয়েছে। ওদিকে ‘জব ক্রিয়েশন বা কাজ সৃষ্টি’ যে পপুলার নামে বিদেশী বিনিয়োগ ব্যবসা মিডিয়ায় হাজির থাকে, এর জোয়ার আর প্রথম ঝলক ভারতের মধ্যবিত্ত টের পেয়েছিল ২০০৫-০৬ সালের দিকে। ভারতের ক্ষমতার জন্য নির্ধারক ৫৪৩ আসনের লোকসভার মধ্যে ১৫০টি আসনকে নির্বাচন কমিশনের ম্যাপে আরবান বা শহুরে কনস্টিটুয়েন্সি মানা হয়। ‘শহর’ কথার তাত্পর্য হলো, গ্রামের বাইরে যেখানে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয় সেই কারখানা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে এই প্রয়াস। বলা হচ্ছে, ২০৩১ সালের মধ্যে ভারতের শহরগুলোয় মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ বসবাস করবে। শহুরে জনগোষ্ঠীর জীবনের অর্থ কী, ভোগ কী? মানুষ যা ভোগ করে, যেভাবে ভোগ করে জীবন-যাপন করে, জীবনের অর্থ তাতেই নির্ধারিত ও প্রকাশিত হয়। করপোরেট ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি শহুরে জীবনের নতুন অর্থ তাকে মিডিয়ার মাধ্যমে বয়ানে নিরন্তর সরবরাহ করে। শহুরে মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীতে সেট করা অর্থকে আবার অনুসরণ করে গ্রামের মধ্যবিত্ত। গ্রাম কি কিনবে কি কিনবে না সেই বোধের গাইড শহর। শহরে কাজ করে গ্রামে পরিবারের কাছে টাকা পাঠানো প্রতিটা শহুরে ব্যক্তি এর সবচেয়ে বড় বাহক। এসব মিলিয়ে নির্বাচনের সময় তাই মধ্যবিত্ত খুবই নির্ধারক। কমবেশি শিক্ষিত বলে সে ভোকাল, সবার পক্ষে অপিনিয়ন মেকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা হলো, ভারতের শহুরে মধ্যবিত্তের বয়স পাঁচ-সাত পুরুষের। জমির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন এই শহুরে উদ্বাস্তুদের জীবনমান প্রায় স্থবির। ভাড়া বাসায় থাকা কেরানির চাকরি জুটানো প্রজন্ম পরের প্রজন্মে জীবনমানে উন্নতি দেখবে এমন কোনো সম্ভাবনা, আশার আলো তার সামনে নেই। বরং সে চেষ্টা করে বাবার আমলের জীবনমানটাই যদি সন্তান আমলেও ধরে রাখা যায় তো সেটা বিরাট অর্জন। এটাই তার অর্জনের মাপকাঠি। জব ক্রিয়েশন বা কাজ সৃষ্টি বলে পপুলার ধারণাটার অর্থ বিদেশী বিনিয়োগের বাজার হওয়া ছাড়াও এখান থেকেও দেখতে হবে। ভারতের শহুরে মধ্যবিত্তের বড় অংশ গড়ে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ প্রজন্ম এভাবে দিশাহীন স্থবির হয়ে আছে। এরাই ২০০৫-০৬ সাল থেকে সম্ভাবনাময় ‘রাইজিং ইন্ডিয়ার’ প্রথম কিছু আলামত দেখেছিল। আশায় বুক বেঁধেছিল। গত নির্বাচনে ২০০৯ সালের সময় ভারত ছিল ‘রাইজিং ইকোনমি’ হয়ে উত্থিত হতে পারে কিনা— সে অর্থে উত্থানের পর্বে। কংগ্রেস জনগণের মধ্যে আশা আকাঙ্ক্ষার আস্থা তৈরি করতে পেরেছিল, তাই সহজে জিতেছিল। কিন্তু গত তিন বছরে এটা ক্রমে সবার কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ে যে, কংগ্রেস বিনিয়োগ সামলানোর অযোগ্য। এদিকটা নিয়ে বিস্তারিত আমার আগের লেখায় লিখেছি। এখন কথা অন্যদিক থেকে বলব।
এবারের নির্বাচনে প্রধান ইস্যু ছিল আবার সেই হতাশ মধ্যবিত্তকে আশার আলো দেখানো। ‘কাজ সৃষ্টির’ সক্ষমতা কার আছে কার নেই। মোদির বিজেপির বিপুল জয়লাভ প্রমাণ করেছে যে, এটাই মূল ইস্যু ছিল। কিন্তু শুধু দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীর আকাঙ্ক্ষা আর বিপুল মধ্যবিত্তের আকাঙ্ক্ষাকে এক সুতায় বাঁধে মোদী সরকার— এটুকুতেই এর তাত্পর্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং আরো গভীরে। ফলে জাতপাত, হিন্দু-মুসলমান অথবা সন্ত্রাসবাদ এসব মুখ্য হয়ে থাকা রাজনৈতিক ইস্যুর ভারত এবার অজান্তে তার রাজনৈতিক ইস্যুর পাটাতন বদলে ফেলেছে। মুখ্য ইস্যু ‘কাজ সৃষ্টি’। এত দিন হিন্দুত্বকে প্রধান করে গড়ে ওঠা ও পরিচালিত বিজেপি নিজেই পুরনো প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু বদলে ফেলেছে। মোদির জয়লাভ এ অর্থে পুরনো বিজেপির জয়লাভ নয়। পুরনো বিজেপির প্রতীক আদভানির বদলে মোদির হবু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রার্থিতা, জয়লাভ কেবল বিজেপি নয়, গোটা ভারতের রাজনীতিতে সব দলকে বদলে ফেলার সম্ভাবনা হিসেবে হাজির হয়েছে। সতর্কভাবে ‘সম্ভাবনা’ শব্দটা ব্যবহার করেছি। ভোটের জনগণের আকাঙ্ক্ষার দিক থেকে দেখলে হিন্দুত্বের ইস্যুকে গৌণ করে এখানে মুখ্য ইস্যু ‘কাজ সৃষ্টি’ এই রায় হাজির হয়ে গেছে। কিন্তু আকাঙ্ক্ষা তৈরি আর তাকে বাস্তবে ট্রান্সলেট করে ‘করে দেখানো’ এই ফারাকটা ঘুচে কিনা, মোদি সক্ষম হবেন কিনা, তা এখন দেখার বিষয়। হোক না এটা জিডিপির ভিত্তিতে সাফল্য মাপার আশা।
সার কথায়, মোদির বিজেপি মনমোহনের কংগ্রেসের মতোই অযোগ্য না নিজগুণে যোগ্য, তা সরকারের প্রথম এক থেকে দুই বছরেই পরিষ্কার বোঝা যাবে। যদি তারা কার্যকর ফল দেখাতে অযোগ্য হয়, তাহলে ভারতের রাজনীতি আবার চরম দাঙ্গা, জাতপাত, হিন্দু-মুসলমান অথবা ওয়ার অন টেররের সন্ত্রাসবাদ এসবকে মুখ্য করে পুরনো জায়গায় তবে আরো ভয়াবহ অবস্থায় ফিরে যাবে। হয়তো তা মোদির নেতৃত্বেই! আর যদি সফল হয়ে যায় তবে কেবল ভারত নয়, এ অঞ্চলের রাজনীতিতে তা গুণগত পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। তবু আরো এক অনুষঙ্গ আছে। বিজেপি এ নির্বাচনে আসামের অর্ধেক আসন মানে একাই সাতটা পেয়েছে। ওদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আসন মাত্র দুটো হলেও ১৭ শতাংশ ভোট জোগাড় করেছে। বিপরীতে মমতা মুসলিম কনস্টিটুয়েন্সির দিকে নতুন ভিত্তি তৈরি করে ‘মোদি ঝড়’ এবারের মতো সামলেছেন। নতুন ১৫ আসন দখলে তার আসন এখন মোট ৪২-এর মধ্যে ৩৪টা। যদিও ফলাফল-উত্তর সব বক্তব্যেই মোদি মূলকথা হিসেবে জোর দিয়ে বলছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা তিনি পেয়েছেন কিন্তু ‘সরকার চালানো আর দেশ চালানো’ এক নয়। ফলে তিনি দলমতের ঊর্ধ্বে সবাইকে নিয়ে ‘কাজ সৃষ্টি ও সমান উন্নয়নের দেশই’ চালাতে চান, কেবল সরকার নয়। ফলে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ‘স্থানীয় বিজেপির’ প্রবল বাংলাদেশবিরোধী রেঠরিক কি মোদিরও রেঠরিক এবং কৌশল হবে? হলে বাংলাদেশের স্বার্থের দিক থেকে শান্তি-অশান্তি নির্ধারক এক মোদির ভারতকে আমরা পাব। ফলে এর গতি-প্রকৃতির দিকে আমাদের গভীর নজর থাকবে। আবার আমাদের জন্য একটা নগদ ইস্যু আছে। বাংলাদেশে ‘আমার হাসিনা সরকারই চাই’ এমন নীতির কংগ্রেস আর তা নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে বিরোধের ভারত— এ অবস্থান ধরে রাখার পক্ষে মোদির কোনো দৃশ্যমান বিশেষ কারণ এখনো জানা যায়নি। ফলে ‘বাংলাদেশের জনগণ যাকেই তাদের প্রতিনিধি ও নেতা নির্বাচিত করুক, আমরা তার সঙ্গেই কাজ করতে চাই’— ওবামা ও মোদির সরকারকে এমন কমন এক অবস্থানে আগামীতে আসতে দেখতে পাওয়া কঠিন কিছু নয়। কারণ এটাই পরদেশী রাষ্ট্র বিষয়ে যে কোনো রাষ্ট্রের সবচেয়ে রুটিন কূটনৈতিক অবস্থান।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
লেখাটা গত ২৪ মে ২০১৪ দৈনিক বণিক বার্তায় ছাপা হয়েছিল। সেখান থেকে হুবহু নেয়া হয়েছে।