বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কথার পিঠে কিছু মন্তব্য
গৌতম দাস
২৮ জুলাই ২০১৫
http://wp.me/p1sCvy-aR
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এক সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে গত মাসের ২৩ জুন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায়। বিগত আশি’র দশকে তাকে আমরা নিজেদের মধ্যে সংক্ষেপে SIC বা সিক স্যার বলে ডাকতাম। সে সময়ে উনি কী বলেন তা শোনার, কী লিখতেন তা পড়ার একটা আগ্রহ কাজ করত, ফেসবুকের ভাষায় যাকে বলে, তাকে ফলো করতাম। যদিও গত কয়েক বছর ধরে তার কোনো লেখা ধৈর্য ধরে পড়েছি বলে আর মনে পড়ে না। গত ৮০’র দশকের শেষ থেকে আগ্রহে ভাটা পড়ে গেছে। এর কারণ সম্ভবত ওই সময় থেকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট বুঝতে তার কথা আর কোনই কাজে লাগছিল না। অর্থাৎ ৮০’র দশকের প্রথম দিকে মনে হতো যে, বোধহয় কাজে লাগছে। ফলে একালে আলোকিত বাংলাদেশের ওই সাক্ষাৎকার পড়ার পর থেকে নিঃসন্দেহে আবার নতুন এক ধরনের আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। যা থেকে এ’লেখার সুত্রপাত।
বাংলাদেশে সেক্যুলারিজম নিয়ে তত্ত্ব করা ও পক্ষে তত্ত্ব দেয়া তার চেয়ে বেশি বোধহয় আর কেউ করেননি। বদরুদ্দীন উমরসহ কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লিটারেচারে যারা লিখেছেন ‘সেক্যুলারিজম’ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রসঙ্গ হিসেবে সেখানে ছিল অবশ্যই। কিন্তু সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর “সেক্যুলারিজম” এর বয়ান তফসির সেগুলো থেকে আলাদা। কেন আলাদা, কোথায় আলাদা তা তখন বুঝতে বা বুঝিয়ে বলতে পারতাম না, শুধু ফারাকটা টের পেতাম। পেছন ফিরে দেখলে এখন মনে হয় সম্ভবত ফারাকটা বুঝতে পারি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্টরা ইউরোপকে, ইউরোপের ইতিহাসকে যা জেনেছে তা শুধু লাল বই পড়ার ভেতর দিয়ে। লাল বইয়ের বাইরে দিয়ে অন্য কোনো বই পড়ে ইউরোপকে জানার চেষ্টা কমিউনিস্ট রেওয়াজে নিরুৎসাহিত করা হয়, তাই। অর্থাৎ ইউরোপের নিজের সম্পর্কে নিজস্ব লেখা পড়ে সেখান থেকে ইউরোপকে জানার চেষ্টা কমিউনিস্টদের চর্চা-অভ্যাসে নেই। নেই এজন্য যে, লাল বইয়ের বাইরের কোনো কিছু মানে ‘বুর্জোয়া’ জ্ঞান; যা কমিউনিস্টদের চোখে শত্রুর বয়ান, মানে অনাস্থা রাখতে হবে তাতে – এই ধারণা প্রবলভাবে কাজ করে। এটা করত বলা ভাল কারণ এখন সব আউলায়া গেছে, কমিউনিস্টরা আর সে ধারণা ধরে রাখতে, টিকাতে পারে নাই।
বিপরীতে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঠিক কোনো দলীয় ধারার কমিউনিস্ট নন, আর নিজেকে তিনি কমিউনিস্ট বলার চেয়ে ‘প্রগতিশীল’ বলতে পছন্দ করেছেন দেখা গেছে। এছাড়া তিনি লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন, সেখানে বসে ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন। ইংরেজি সাহিত্য বোঝার প্রয়োজনে ইংলিশ সামাজিক রাজনৈতিক পটভূমি তিনি জানতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ কারণে তিনি ইউরোপের ঘরের বই শুধু নয়, তিনি ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক আন্দোলন “এনলাইটমেন্ট আন্দোলন ও আধুনিকতা” সম্পর্কে জেনেছেন, নিজের শখের পড়াশোনা সূত্রে নয়, বরং বাধ্য হয়ে, ইংরেজি ভাষার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক ঘটনা ও এর ফলে ভাষায় বদলকে বোঝার প্রয়োজনে। একজন কমিউনিস্টের চোখে এনলাইটমেন্ট আন্দোলন ও আধুনিকতাকে বুঝা, পারলে তত্ত্বের দিকসহ বিস্তার করে বুঝা, জানা ও পড়াশোনা কোন কাজের বিষয় নয়। কারণ মোটা দাগে এগুলো সবকিছুই ‘বুর্জোয়া’ জ্ঞান যা শত্রুর বয়ান, যা এত জানার কিছু নয়। ফলে এখানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একজন সক্রিয় কমিউনিস্টের চেয়ে একেবারেই আলাদা। অতএব তাঁর আধুনিকতা ও সেক্যুলারিজমের বর্ণনা কমিউনিস্টদের চেয়ে বিস্তারিত ও ভিন্ন হতে বাধ্য। এখন বুঝি, এই ফারাকটাই পাঠক হিসেবে আমাকে আকর্ষণ করত। তবে অবশ্যই তিনি যাই লিখতেন তা বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনীতিকেই সমাজে পুষ্ট করত। নিজের জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রগতিশীল, আধুনিক, বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্য রাজনীতির মতাদর্শ সরবরাহকারী, পোক্তকারী।
ফলে একালে আলোকিত বাংলাদেশের এই সাক্ষাৎকার নিঃসন্দেহে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে যিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের মতাদর্শ সরবরাহকারী, তাদের আধুনিকতা ও সেক্যুলারিজম সম্পর্কে বয়ান যার কারণে পোক্ত হয়েছে, তিনি একালে এসে যখন সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেন, “বাঙালি জাতীয়তাবাদের এখন আর দেয়ার কিছু নেই” তখন এটা খুবই ইন্টারেস্টিং ও কৌতূহল উদ্রেককারী।
পত্রিকার সম্পাদকের চোখে সাক্ষাৎকারের এদিকটা শিরোনাম হওয়ার যোগ্য হওয়ারই কথা। হয়েছেও তাই। কিন্তু আমার মন আকর্ষিত হয়েছে শুধু এদিকটার কারণে নয়। অন্য কারণে। যারা বয়সে ১৯৪৭ সালে কমপক্ষে সজ্ঞান কিশোর বা টিনএজে ছিল, তাদের নিয়ে আমার এক বিশেষ কৌতূহল আছে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তেমনই একজন ব্যক্তিত্ব। তাঁর জন্ম ১৯৩৬ সালে, বয়স এখন ৮০ বছর। তাঁর প্রজন্মের সদস্যরা এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ অথবা দেহ রেখেছেন। এদের সেকালের প্রবল রাজনৈতিক আন্দোলন হল “পাকিস্তান আন্দোলন”, যার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাধারী ছিলেন তাদের প্রজন্ম। এ সাক্ষাৎকারেও আমরা সেটাই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু “পাকিস্তান আন্দোলনের” প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাধারী এই প্রজন্ম গুরুত্বপূর্ণ কেন? কারণ ষাটের দশকের পর থেকে পুর্ববঙ্গের বা পুর্ব-পাকিস্তানের রাজনীতিতে ‘পাকিস্তান আন্দোলনকে’ আর নিজের মনে না করা এবং এর সাথে সম্পর্ককে অস্বীকারের নতুন বয়ান খাড়া করা শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও ১৯৭১-২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সিক স্যারের প্রজন্ম সাধারণ কথাবার্তার মধ্যেও ‘পাকিস্তান আন্দোলনের’ কথা ঘুণাক্ষরেও যেন রেফারেন্স হিসেবে না এসে যায় সেজন্য মুখে কুলুপ আঁটেন, একাজে নিজেকে প্রশিক্ষিত করে নেন। কারণ তাদের কৈশোর বা তরুণ বয়সের অভিজ্ঞতা, তখন যা তাদের আন্দোলিত করেছিল, চরম সত্য মনে হয়েছিল তা স্বাধীনতার পরের কালে উচ্চারণ করলে নিজ পরিবারের তরুণের হাতে নিগৃহীত না হলেও কটুকথা শোনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কারণ তারা রক্ষণশীল, প্রাচীনপন্থী শুধু নয়, পরাজিত চিন্তাধারার প্রতীক বলে চিহ্নিত হতে পারেন। এভাবে পাকিস্তান আন্দোলনের প্রত্যক্ষদর্শী প্রজন্ম কিন্তু সেই যে ঐকালে মুখে কুলুপ আঁটলেন সে অভিজ্ঞতা কাউকে আর তাঁরা বলেন না। এমনকি নাতি-নাতনিদেরকেও না। যদিও শুধু রাজনীতির মাঠে নয়, সেসময়ের পুর্ববঙ্গের প্রতিটা মুসলমান পরিবারের ঘরে ঘরে প্রত্যেক সদস্যের কাছে পাকিস্তান আন্দোলনে কোথায় কি হচ্ছে তা সকলের জীবনের আপন ঘটনাবলী হিসাবে লেগে ছিল। সেই প্রজন্মের এরা আজ বয়সের ভারে একে একে সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রজন্ম শেষ হয়ে যাওয়ার আগে, আমরা তাদের অভিজ্ঞতাকে মানি আর নাই মানি, তাদের অভিজ্ঞতা একালে সংরক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের কারণে আমাদের ইতিহাস বয়ান শুরু হয় ১৯৫২ সাল থেকে। যেন এর আগে পুর্ববঙ্গে আমরা কেউ ছিলাম না। ভুঁইফোঁড়ের মতো ১৯৫২ সাল থেকে যেন আমাদের আবির্ভাব ঘটেছিল। এর আগে পাকিস্তান আন্দোলন বলে যেন কিছুই ঘটেনি। অথচ মানুষ তো ভুঁইফোঁড় নয়, হতে পারে না। অতীতের সবই ভালও নয় আবার সবই মন্দও নয়। এমন অতীতের উপরেই বর্তমান জন্মায়, দাঁড়িয়ে থাকে। আবার ফাউন্ডেশনাল কিছু বৈশিষ্ট্য থাকেই, যার ওপর বর্তমান খাড়া হয়ে থাকে। পাকিস্তান আন্দোলন তেমনই একটা কিছু। এটা ভীষণ আগ্রহ ও কৌতূহলের যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার নিজের পাকিস্তান আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন। আমাদের সঙ্গে শেয়ার করছেন। এখানে নিচে সেসব নিয়ে কিছু অবজারভেশন ও মন্তব্য বলে এই লেখা শেষ করব।
এক. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী পাকিস্তান আন্দোলন ওন করছেন বা আপন বলে ধারণা দিচ্ছেন।
তিনি বলছেন, ‘ব্রিটিশ ভারতে আমাদের জন্ম, ব্রিটিশ-বিরোধী লড়াই, পাকিস্তান আন্দোলন দেখে বড় হচ্ছি। ফলে বেড়ে ওঠার মধ্যেই একটা রাজনীতি সচেতনতা ছিল।’ অর্থাৎ পাকিস্তান আন্দোলন খারাপ কিছু ছিল না, যা তিনি সে সময় দেখেছেন এবং এখন স্মরণ করার মতো তা গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন। যদিও পরের প্রশ্নের জবাবে তিনি পাকিস্তান আন্দোলনকে নতুন গড়ে ওঠা মুসলমান মধ্যবিত্তের আকাঙ্খার বাহক হিসেবে দেখছেন। তার এ’কথাটা সত্য, তবে আংশিক ও খন্ডিত। খুব সম্ভবত তার কাছে যা ইমিডিয়েট বা চোখের সামনে, শুধু সেই শহুরে মধ্যবিত্তের কথাই তিনি এখানে ফোকাসে এনেছেন। কেন খন্ডিত বলছি?
আসলে পাকিস্তান আন্দোলনের প্রধান এবং একনিষ্ঠ শক্ত সমর্থক ছিল গ্রামের কৃষক-প্রজা। সব সমাজে সব কালের রাজনীতিতে কোনো না কোনো একটা প্রধান বা মুখ্য স্বার্থ দ্বন্দ্ব থাকে। যাকে ঘিরে সমাজের বাকি সব স্বার্থ দ্বন্দ্বের সংঘাত আবর্তিত হয়, আকার নেয়, অ্যালায়েন্স করে। পাকিস্তান আন্দোলনের কালে সে সমাজের প্রধান দ্বন্দ্ব ছিল জমিদার-প্রজা; এমন প্রধান দ্বন্দ্ব হয়ে তা বিরাজিত ছিল পেছনের দেড়শ’ বছরের বেশি। কলকাতা কেন্দ্রিক বা কলকাতাগামী দৃশ্যমান মুসলমান মধ্যবিত্তের উত্থান বা জন্ম ১৯০০ সালের পর থেকে। এরপরেই একমাত্র এর আগে থেকে চলে আসা গ্রামের কৃষক-প্রজার জমি পাওয়ার আন্দোলনের সঙ্গে শহুরে মধ্যবিত্তের যে রাজনৈতিক অ্যালায়েন্স গঠিত হয় সেটাকেই আমরা অন্য ভাষায় পাকিস্তান আন্দোলন বলে চিনি। এই শ্রেণীমৈত্রীর রাজনৈতিক শক্তির বাহকের নাম মুসলিম লীগ। স্মরণ করিয়ে দেয়ার দরকার আছে যে, এটা ১৯৭১ সালের মুসলিম লীগ নয়। এমনকি এটা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান কায়েমের পরের সব ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে কুক্ষিগত করে সাজানো দাপটে চাপা পড়া পূর্ব পাকিস্তান, এমন সময়কালের মুসলিম লীগের কথাও বলা হচ্ছে না। ১৯৪৭ সালের আগের কথা বলছি, যখন পূর্ববঙ্গের গ্রাম-শহরের এমন কোনো মুসলিম প্রজন্ম পাওয়া যাবে না যারা সেকালের মুসলিম লীগকে তাদের ভবিষ্যৎ, তাদের সব আকাঙ্খার বাহক সংগঠন মনে না করত। তৎকালের জমিদারি উচ্ছেদের প্রধান এবং একমাত্র দাবিদার সংগঠন মুসলিম লীগ। এ অর্থে মুসলিম লীগ বিপ্লবী। পূর্ববঙ্গের চোখের মণি এই আন্দোলনের নাম “পাকিস্তান আন্দোলন”। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সেই স্মৃতির কথা বলছেন।
দুই. মুসলিম লীগের পাকিস্তান আন্দোলনকে তিনি ‘জাতীয়তাবাদী আন্দোলন’ বলছেন
এটা খুবই ইন্টারেস্টিং যে, তিনি পাকিস্তান আন্দোলনকে ‘জাতীয়তাবাদী আন্দোলন’ বলছেন। কথাটা বলছি এজন্য যে, ১৯৪৭ বা পাকিস্তান আন্দোলন সম্পর্কে ভারতের ঐতিহাসিকদের সাধারণ মূল্যায়ন বয়ান এবং অভিযোগ হলো এটা ‘ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের আন্দোলন’, ‘জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব’ ইত্যাদি। অতএব মুসলিম লীগের এই রাজনীতি নেতিবাচক, ‘সাম্প্রদায়িক’ ও ঘৃণিত। পূর্ববঙ্গের অনেক কমিউনিস্ট বা প্রগতিশীল এই বয়ান অনুমোদন করেন বা আপন মনে করেন। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িকতা ও সেক্যুলারিজম নিয়ে বই-পুস্তক, কলাম লিখে যিনি বিখ্যাত সেই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তা আজও মনে করছেন না। পাকিস্তান আন্দোলনকে ‘জাতীয়তাবাদী আন্দোলন’ বলছেন এটা নিঃসন্দেহে ইন্টারেস্টিং। অনেকের মনে হতে পারে, এটা তার হাতছুট বা মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কোনো কথা। তাদের নিশ্চিত করার জন্য বলছি – না তা নয়। তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্নের লম্বা জবাবের শেষ প্যারায় তিনি আবার পাকিস্তান আন্দোলন সম্পর্কে আর একটু পরিষ্কার করে বলছেন, এটা ‘পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ’। বলছেন জিন্নাহর বক্তৃতার (১৯৪৮) প্রতিক্রিয়ায় “… এই সূত্রেই পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যাত্রা শুরু হলো।”
অর্থাৎ এখানে তার সার মূল্যায়ন হলো, পাকিস্তান আন্দোলন কোনো নেতিবাচক আন্দোলন তো নয়ই, কোনো ‘ঘৃণিত’ বা “সাম্প্রদায়িক” ধর্মভিত্তিক আন্দোলনও নয়; বরং জনগণের আকাঙ্খার ধারক, জনগণকে দেয়া এক প্রতিশ্রুতির আন্দোলন। তবে ১৯৪৮ সালের পর থেকে জিন্নাহর বক্তৃতায় এটা বিপথগামী বা বিচ্যুত হয়ে যায়।
তিন. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ সাক্ষাৎকারেও নিজে একটা প্রগতিশীল পজিশন নিচ্ছেন বলে মনে করছেন।
তিনি কোনো দলীয় কমিউনিস্ট সদস্য বলে আমার জানা নেই। তবে তিনি নিজেকে কমিউনিস্টদের প্রতি নেক আছে এমন ধারণার প্রগতিশীল বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন, দেখেছি। চতুর্থ প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রশ্ন তুলে বলছেন, “কমিউনিস্ট পার্টি কিন্তু মধ্যবিত্তেরই পার্টি আসলে। কমিউনিস্ট পার্টির এখানে প্রধান দুর্বলতা হলো, তারা কৃষকের কাছে যেতে পারেনি। এজন্য দেশে বিপ্লব হয়নি।”
এখানে আমরা দেখছি মূলত তার অভিযোগ দুইটাঃ ‘মধ্যবিত্তেরই পার্টি’ আর ‘তারা কৃষকের কাছে যেতে পারে নাই।’ খুবই মারাত্মক অভিযোগ, সন্দেহ নেই। তবে অভিযোগ অবশ্যই জেনুইন এজন্য যে, কমিউনিস্ট পার্টি কখনও ‘জমিদারি উচ্ছেদ’ এর পক্ষে কখনও কোনো অবস্থান নেয়নি। তবু সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কমিউনিস্টদের প্রতি যথেষ্ট সিমপ্যাথিটিক। তাই সাতচল্লিশের পরের কথা বলছেন, ‘পাকিস্তান রাষ্ট্রও কমিউনিস্টদের খুব অত্যাচার করতে শুরু করল।’ তার মতো অনেক কমিউনিস্ট বা একাদেমিসিয়ানরাও তাই মনে করে থাকেন যে, স্বাধীন পাকিস্তানেও কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধই থেকে গিয়েছিল। কিন্তু এগুলো বাস্তব সত্য কিন্তু সবটা সত্যি না এবং একপেশে। সেকালের এবং একালের আমাদের অনেকে মনে করতে পারেন, আয়ুব খানই পাকিস্তানে প্রথম ক্যু করেন। এ কথাটাও সঠিক নয়। প্রথম ক্যু করে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করেন কমিউনিস্টরা মার্চ ১৯৫১ সালে এবং তাতে ব্যর্থ হলে তাদের দল নিষিদ্ধ হয়ে যায়, এসব জিন্নাহর মৃত্যুর পর লিয়াকত আলী খানের প্রধানমন্ত্রীর আমলের ঘটনা। ইতিহাসের খাতিরে “রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র” নামে খ্যাত এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত প্রসঙ্গ সামনে আনার দরকার আছে। ফলে একথা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে সারা পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্টরা ধর্মবিরোধী বলে অজুহাতে বা আমেরিকার প্ররোচনাতে নিষিদ্ধ ছিল না।
চার. “পাকিস্তান ধর্মরাষ্ট্র হবে এমনটা তারা চায় নাই”
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এই বক্তব্য পাকিস্তান আন্দোলন ও মুসলিম লীগ সম্পর্কে বহু অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করে। পঞ্চম প্রশ্নের জবাবে তিনি নিজের এ গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন পেশ করছেন। আবার একদিকে স্বীকার করছেন, ‘পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ছিল ধর্ম।’ কিন্তু এই পাকিস্তান আন্দোলনের সপক্ষে আবার শক্ত ন্যায্যতা নিজেই দিয়েছেন। বলছেন, “তারা একটা রাষ্ট্র (অর্থাৎ পাকিস্তান) চেয়েছে, যেখানে তারা মুক্ত হতে পারবে। তারা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চেয়েছে। জমিদার হিন্দু, মহাজন হিন্দু, চাকরি-বাকরিতে হিন্দু, ব্যবসা-বাণিজ্যে হিন্দু ওদের হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য পাকিস্তান দরকার”।
তবু তাঁর এই শক্ত ন্যায্যতার প্রশংসা করার পরেও একটা ক্রিটিক্যাল সমালোচনার দিক মনে রাখার দরকার আছে। একথা সত্যি সেসময়ের সমাজ বলতে সেটা ছিল হিন্দুদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক একচেটিয়া ক্ষমতা আধিপত্যের সমাজ। বিপরীতে মুসলমানদের অবস্থান হিন্দু জাত-বর্ণপ্রথায় নমশুদ্রেরও নীচে, এমনকি মুসলমানেরা বাঙালি বলেও কোন স্বীকৃতি ছিল না। এরপরেও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যেভাবে পরিস্থিতিটাকে হাজির করেছেন যে জমিদারগিরি, মহাজনগিরি, চাকরি-বাকরিতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ইত্যাদি সবকিছুতে হিন্দু প্রাধান্যে ছিল বলে পাকিস্তান আন্দোলন জমিদার হিন্দু, মহাজন হিন্দুকে সরিয়ে মুসলমান জমিদার, মুসলমান মহাজন কায়েমের আন্দোলন ছিল না। ফলে কমিউনিষ্টদের মধ্যে যেমন সব কিছুকে অর্থনীতিবাদী ঝোঁকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা থাকে এটা তা ছিল না। বরং খোদ জমিদার-প্রজা সম্পর্কটাই উতখাত, ‘জমিদারি উচ্ছেদ’ এই ছিল পাকিস্তান আন্দোলনের দাবি এবং এক ঐতিহাসিক অর্জন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান কায়েমের পরে পুর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ কমিটি বাস্তবে পশ্চিম পাকিস্তান মুসলিম লীগের অধীনস্ত, উচ্ছিষ্টভোগী হয়ে পড়ে একথা সত্য। ফলে অচিরেই (১৯৪৯) আওয়ামি মুসলিম লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। কিন্তু সেজন্য পাকিস্তান আন্দোলনের বিখ্যাত অর্জন ১৯৫১ সালের ১৫ মে জমিদারি উচ্ছেদ আইন (THE STATE ACQUISITION AND TENANCY ACT, 1950) পাশ করা সবচেয়ে বিপ্লবী ঐতিহাসিক ঘটনা। একে খাটো করতে পারি না। আজও স্বাধীন বাংলাদেশের দিক থেকে দেখলে আমাদের জন্য এটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। ফলে এটা হিন্দু জমিদারের জায়গায় মুসলমান জমিদার বসানোর আন্দোলন ছিল না। এই তাতপর্য যেন আমাদের চোখ না এড়ায়।
পাঁচঃ “নিপীড়ন জিনিসটা আসলে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র এই দিক থেকে দেখতে হবে”
এতক্ষণ রাষ্ট্র আলোচনায় ধারণাটাকে তিনি ‘আধুনিক রাষ্ট্র বনাম ধর্ম রাষ্ট্রের’ মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু এবার ষষ্ঠ প্রশ্নে এসে ‘পুঁজিবাদী রাষ্ট্র’ বলে এক নতুন ধারণা আমদানি করেছেন। তিনি বলছেন, “নিপীড়ন জিনিসটা আসলে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র এই দিক থেকে দেখতে হবে”। ‘নিপীড়ন জিনিসটা আসলে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র’ এ কথার একটাই অর্থ হতে পারে যে, নিপীড়ন বলতে তিনি শ্রেণী বা অর্থনীতিবিষয়ক নিপীড়নের কথা বলছেন। কিন্তু অর্থনীতিবিষয়ক ছাড়াও ভিন্ন ধরণের নিপীড়ন হতে পারে। যেমন জাতিগত নিপীড়ন বলতে মুখ্যত তা রাজনৈতিক নিপীড়নের ঘটনাই বোঝায়।
তবে এর চেয়েও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এক মারাত্মক মন্তব্য এখানে আছে – জাতিরাষ্ট্র বা নেশন স্টেট বিষয়ে। তিনি ধারণাটা অপ্রয়োজনীয় দাবি করে বলছেন, ‘পৃথিবীতে জাতিরাষ্ট্র বলে কোনো রাষ্ট্র নেই। এখানে (বাংলাদেশ) একটা জাতিপ্রধান আছে বটে, কিন্তু অন্য জাতিগোষ্ঠীও আছে।’ তার কথা হয়তো সঠিক। তবে ইংরেজি শব্দ ‘রেস’ ও ‘নেশন’ ধারণার বিভ্রান্তি থেকে এসবের ভুল ধারণার উৎপত্তি। তিনিও এই বিভ্রান্তি নতুন করে ছড়ালেন। মুল সমস্যা হল, ‘রেস’ ও ‘নেশন’ দুইটি শব্দকেই বাংলায় ‘জাতি’ অনুবাদ করে সে বিভ্রান্তিকে আরও উসকে দেয়া হয়েছে। ফলে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব বিভ্রান্তির বাইরে এমন দাবি করা যাচ্ছে না। যেমন তিনি বলছেন, ‘রাষ্ট্র এবং জাতি এক না। একটা রাষ্ট্রে একাধিক জাতি থাকতে পারে। রাষ্ট্র হচ্ছে একটা রাজনৈতিক প্রপঞ্চ, আর ‘জাতি হচ্ছে নৃতাত্ত্বিক বর্গ’। এর প্রথম দুই ছোট বাক্য হয়ত সঠিক। কিন্তু “জাতি হচ্ছে নৃতাত্ত্বিক বর্গ” এ কথাটা তিনি যথেষ্ট ভেবে বলেছেন বলে মনে হয় না। কারণ এ বাক্যটাও ‘রেস‘ ও ‘নেশন’ বিষয়ক বিভ্রান্তির বাইরে নয়। রেস অর্থে ‘জাতি হচ্ছে নৃতাত্ত্বিক বর্গ’, কথাটা সঠিক। কিন্তু নেশন কথাটার বেলায় “নেশন অর্থে জাতি হচ্ছে নৃতাত্ত্বিক বর্গ’, এই কথাটা সঠিক নয়। ‘নেশন’ অবশ্যই পলিটিক্যাল ক্যাটাগরি। রাজনৈতিকভাবে কনস্ট্রাকটেড বর্গ ও ধারণা। রেস ধারণার মতো তা প্রাকৃতিক বা ‘নৃতাত্ত্বিক বর্গ’ নয়, বরং রাজনৈতিক বর্গ।
তবে হয়তো এটা বলা যায় যে, ‘জাতিরাষ্ট্র’ ধারণাটা অপ্রতুল ও অস্পষ্টই শুধু নয়, বেকুবি এবং অনিবার্যভাবেই তা বর্ণবাদিতায় ঢলে পড়বেই, এমন ধারণা।
এই প্রসঙ্গটা শেষ করার আগে, “নিপীড়ন জিনিসটা আসলে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের…” প্রসঙ্গে –
বাংলাদেশে পাহাড়িদের ওপর বাঙালি রাষ্ট্রের নিপীড়ন, এটা কি ‘পুজিবাদী রাষ্ট্রের’ কারণে ঘটছে? আমরা কি তাই বলতে পারি না এগুলো অর্থহীন কথাবার্তা হবে? আসলে এসব ‘শ্রেণী বিলাসী’ চিন্তা আমাদের ত্যাগ করতে হবে। অনেক হয়েছে। তবে তার শেষ বাক্য, তাই, “জাতিরাষ্ট্র নয়, আমরা চেয়েছি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র” – এ কথা বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা কখনও মানবে না। বোঝা যাচ্ছে, শেষ বয়সে এসে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে হাত ছেড়ে দিতে চাইছেন। প্রসঙ্গটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, এ স্বল্প পরিসরের বাইরে সময় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ তুলতে হবে।
ছয়ঃ “হেফাজতের সঙ্গে গণজাগরণের যে দূরত্ব সেটা আসলে শ্রেণীদূরত্ব”
গত ২০১৩ থেকে শাহবাগ অন্দোলন সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কিছু সাহসী মন্তব্য করেছেন। সাধারণ কমিউনিষ্টদের থেকে ব্যাতিক্রমী মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেছেন, “শাহবাগ আন্দোলন পর্বে আত্মপরিচয়ের রাজনীতির চেয়ে আমার কাছে বড় দিক মনে হয়েছে শ্রেণী পরিচয়। শ্রেণী-বিভাজনটাই সেখানে ছিল প্রধান ইস্যু। হেফাজতের সঙ্গে গণজাগরণের যে দূরত্ব সেটা আসলে শ্রেণীদূরত্ব। গ্রামে মাদ্রাসাগুলোতে যারা পড়ছে তারা দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত। আমরা এখানে যারা পড়ছি তারা সুবিধাপ্রাপ্ত। এখানে দূরত্ব আছে। গণজাগরণ মঞ্চে তুমি কিন্তু শ্রমজীবীকে টানতে পারছ না। যে রিকশাঅলা তোমাকে ওখানে পৌছে দিয়ে যায় সে কিন্তু মঞ্চে যাচ্ছে না। রাস্তায় যেসব শ্রমিকরা আছে তারাও কিন্তু আসছে না। এমনকি তোমরা ভদ্রলোকরা যে সভা করছে সে তার বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়ে যেতে পারে। যে ওটা বড়লোকদের ব্যাপার, নাচানাচি করতেছে, গান বাজনা করতেছে। শ্রেণীর সমস্যাটাই হচ্ছে প্রধান সমস্যা। শ্রেণীর দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখলে এগুলো ব্যাখ্যা করা যাবে না”। তাঁর কথায় হয়ত পয়েন্ট আছে কিন্তু কোন কমিউনিষ্ট এমনকি “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ” করার সুযোগ হিসাবে যারা “শাহবাগকে” দেখেছেন, নিয়মিত সাময়িকী বের করেছেন, টক শোতে কমিউনিষ্ট হয়েও লীগ ও সরকারের পক্ষে সাফাই, তত্ত্ব দিয়েছেন এমন কাউকেই এমন অবস্থান নিতে দেখা যায় নাই। সে হিসাবে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এমন মন্তব্য সাহসী ও ব্যতিক্রমী অবশ্যই।
সাতঃ “আমার রাষ্ট্রের প্রধান সমস্যা কী? একটা হলো নদীর সমস্যা”
কোন রাখঢাক না রেখে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলছেন, “বাঙালি জাতীয়তাবাদ আছে, কিন্তু তার এখন আর দেওয়ার কিছু নাই। আমার রাষ্ট্রের প্রধান সমস্যা কী? একটা হলো নদীর সমস্যা। আমাদের চুয়ান্নোটি অভিন্ন নদীর প্রবাহ যে শুকিয়ে আসছে সেটা নিয়ে কি জাতীয়তাবাদীরা কথা বলছে? হিন্দির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কি তারা কথা বলছে? নরেন্দ্র মোদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দিতে বক্তৃতা দিয়ে গেলেন। পাকিস্তানের কেউ যদি উর্দুতে বক্তৃতা দিত আমরা মানতাম? অথচ মোদিকে আমরা হাততালি দিলাম। জাতীয়তাবাদের কথা বললে। জাতীয়তাবাদের প্রধান উপাদান তো ভাষা”।
এটা খুবই তাতপর্যপুর্ণ যে “প্রগতিশীল” আশি বছরের তরুণ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সরাসরি ভারতের বাংলাদেশ নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ এখনও অনেক কমিউনিষ্টকে আমরা পাই যারা এমন সমালোচনাকে “সাম্প্রদায়িক” হিন্দু বিরোধীতার কাজ মনে করেন। এর আগেই কখনও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে “চুয়ান্নোটি অভিন্ন নদীর প্রবাহ” নিয়ে কথা বলতে শুনেছি বলে মনে করতে পারলাম না। তাকে অজস্র ধন্যবাদ জানাই সকলকে সাহস যোগানোর জন্য। মনে হচ্ছে টেক্কা কে টেক্কা বলতে চাইছেন তিনি। আপাতত সবাইকে এর তাতপর্য অনুধাবণ করতে বলব।
[লেখাটা এর আগে কিছুটা সংক্ষিপ্তভাবে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল গত ২৭ জুলাই ২০১৫ তারিখে। এখানে পরিপুর্ণভাবে আরও অনেক কিছু সংযোজন ও এডিট করে আবার ছাপা হল।]
[কোন ব্যাপার নজরে আনতে বা লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে goutamdas1958@hotmail.com এই ঠিকানায় মেল করতে পারেন।]