সিরিয়ায় পুতিনঃ তিনটা বাড়তি প্রসঙ্গ
পুরানা কমিউনিস্টদের কাছে রিভিউ এর জন্য কিছু বিষয়
গৌতম দাস
১৯ অক্টোবর ২০১৫
সিরিয়ায় রাশিয়া প্রসঙ্গে গতকালের লেখার সারকথা ছিল, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন সিরিয়ায় আইএস মারতে এসেছেন বলে যে দাবি তা ভিত্তিহীন। তিনি নামেন নাই। তাঁর কারণ নেমেছে কি না, নামতে চায় কি না এর বড় চিহ্ন বা প্রমাণ হিসাবে আমরা তাহলে দেখতে পেতাম পুতিন সিরিয়ার মাঠে সরাসরি রুশ সৈন্য নামিয়েছেন অথবা যোগ্য সমর্থবান কোন অন্য স্টেট অথবা নন-স্টেট একটরের সৈন্যদল নামিয়েছেন। তিনি আকাশ পথে কিছু বোমাবাজি করেছেন। এছাড়া বরং আমরা ইংরাজী মস্কো টাইমসে দেখেছি রাশিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় দলের সরকারি কর্তারা পরিস্কারই বলছেন, “মাঠে নামার কোন পরিকল্পনা তাদের নাই”। তাহলে রাশিয়ার সিরিয়ায় বোমাবাজির উদ্দেশ্য আইএস তাড়ানো নয়, বরং অন্য কিছু এবং তাও খুবই সীমিত। সিরিয়ান সরকারকে তার নিজের শত্রুর উপরে কিছু লিভারেজ বা বাড়তি সুবিধা এনে দেওয়া আর সিরিয়ার আসাদকে “আইএসের বিরুদ্ধে একমাত্র লড়াকু বলে হাজির করা” এটাই রাশিয়ার সেই “অন্য কিছু” উদ্দেশ্য। যদিও রাশিয়া আগেই জানে এই চেষ্টায় সফলতা আসবে না। কিন্তু এছাড়া এই বোমাবাজি থেকে রাশিয়া কেবল নিজের জন্য যা পেতে চায় তা হল, নিজেকে গোনায় ধরতে পশ্চিমকে যতটা বাধ্য করা যায়। বিশেষত ইউক্রেনে হামলা আর ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়ান সীমানার ভিতরে যুক্ত করে নেয়ার পর থেকে রাশিয়া একঘরে হয়ে আছে। সেই বিচ্ছিন্ন একা হয়ে থাকা দশা থেকে যতটা সম্ভব বের হয়ে আসার চেষ্টা করা যায়।
অথচ আমরা দেখছি পুরান কমিউনিষ্ট ভাইয়েরা কোন বিচার বিবেচনা ছাড়া প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে যে সেই পুরান সোভিয়েত ইউনিয়ন নাকি আবার এসে গেছে, জাগছে – এমন প্রপাগান্ডা উসকিয়ে বাংলাদেশেও তাদের দামামা বাজাতে চাইছে। এটা ঠিক যে গত ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর রাশিয়া পুরান সোভিয়েত রাষ্ট্রের এলাকাগুলোর বাইরে এই প্রথম সৈন্য, অস্ত্র, যুদ্ধজাহাজ সমাবেশ ঘটিয়েছে। এই হিসাবে নতুন রাশিয়ার প্রথম অভিযান সিরিয়ায়, প্রেসিডেন্ট আসাদকে রাজনৈতিকভাবে উদ্ধার করা। এর অর্থ তাতপর্য আছে। কিন্তু একে কোনভাবেই পুরান কোল্ড ওয়ারের মত রাশিয়ার দিন আবার ফিরে আসতেছে বলে বুঝা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা ভিত্তিহীন এবং অর্থহীন। এটা রাশিয়াও ভালভাবে জানে। সাথে রাশিয়া এটাও জানে বাস্তবে লুপ্ত হয়ে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের দিওয়ানা দেশে দেশের দ্বিবাস্বপ্ন দেখা পুরান কমিউনিস্টরা এখনও আছে। তাদের পড়ে পাওয়া সমর্থন পুতিন নিজের স্বার্থে ও কাজে না লাগানোর কোন কারণ দেখেন নাই।
তাহলে প্রথম যে শিক্ষা আমাদের দরকার তা হল, প্রপাগান্ডা আর ফ্যাক্টস এর ফারাক পড়ে আলাদা করতে পারতে হবে। কারণ দুনিয়াতে প্রপাগান্ডা থাকবেই। সম্ভবত আমরা নিজেরাও নিজের স্বার্থে নিজের কাজের স্বপক্ষে কখনও “কোন চিকন বুদ্ধির প্রপাগান্ডা” করার প্রয়োজন অনুভব করব হয়ত।
গতকালের লেখাটার সময় কিছু অনুষঙ্গি বিষয় এসেছিল। কিন্তু তা লেখার প্রেক্ষিত বড় করে ফেলবে, লেখার আকার বড় হয়ে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে পারে এই মনে করে ছেটে ফেলে রেখেছিলাম। বেছে এমন তিনটা বাড়তি প্রসঙ্গ নিয়ে এখানে কথা বলব। এটাকে গত লেখার বাড়তি সংযোজন হিসাবে পড়া যেতে পারে।
প্রথম প্রসঙ্গঃ
এখানে অনুষঙ্গ আর একটা বিষয় হল, রাষ্ট্র।
বিপ্লবী বলি আর নাই বলি শেষ বিচারে জন্ম থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন একটা আলাদা রাষ্ট্র ছিল। আলাদা মানে সোভিয়েত ইউনিয়ন যেসব কমিউনিষ্টের নিজের রাষ্ট্র নয়, তাদের থেকে আলাদা। যে কোন রাষ্ট্র স্বার্থ – তা একান্তই নিজের জনগোষ্ঠিগত স্বার্থ, কেবল নিজের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে সেটা সাজানো, অন্ততপক্ষে প্রেফারেন্স দিয়ে সাজানো হবেই। রাষ্ট্র প্রসঙ্গে এই সাধারণ ধারণা সে রাষ্ট্র কমিউনিস্ট হলেও ভিন্ন কিছু হয়ে যায় না, একই থাকে। আর রাষ্ট্র ওর সেই একান্ত নিজস্ব স্বার্থ যার দ্বারা সে একমাত্র তাড়িত ও পরিচালিত হয়ে থাকে। এই স্বার্থের ভিতর অন্যদের অর্থাৎ আমাদের স্বার্থ নাই। আমাদের দিকে তাকিয়ে এই স্বার্থ নির্ধারণ করা হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের দেশের বিপ্লবীদের চোখে বিশেষ গুরুত্বের রাষ্ট্র হয়ে থাকতেই পারে কিন্তু বিপ্লবী রাষ্ট্র ছিল বলে এই রাষ্ট্রের স্বভাব বৈশিষ্ট উপরে যেভাবে বর্ণনা দিলাম সেগুলো থেকে ভিন্ন হয়ে যায় না। কমিউনিস্ট বলে নিজের স্বার্থে রাষ্ট্র হয়ে থাকার বৈশিষ্ঠ লোপ পেয়ে কোন স্বর্গীয় গুণ সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর আরোপিত হয় না, করা যায় না।
আমাদের রাষ্ট্রস্বার্থ প্রতিনিধিত্ব করার দায় দায়িত্ব যদি সোভিয়েত রাষ্ট্র নেয় নাই তা যে যায় না হয় নাই এর বড় প্রমাণ হল সেক্ষেত্রে আমরা আর সোভিয়েত ইউনিয়ন একই রাষ্ট্র হতাম। আলাদা থাকতাম না। বাস্তবে যেহেতু আলাদা ছিলাম এর অর্থই হল,আমরা আর সোভিয়েত ইউনিয়ন দুটো আলাদা রাষ্ট্রস্বার্থ হয়েই বিরাজ করেছিল। সোভিয়েত রাষ্ট্র আমার রাষ্ট্রের চেয়ে নিজের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, প্রেফারেন্সই দেখাবে। তবে সেখানে সাময়িক কোন কোন সময়ে এবং কোন কোন ইস্যুতে আমরা একমত হতে পারি, কখনও একবারেই না। এই কথাটা আরও পরিস্কার করে বললে আলাদা রাষ্ট্র, আলাদা স্বার্থ হওয়া সত্বেও দুই রাষ্ট্রের মধ্যে আবার কৌশলগত দিক থেকে ঐক্য হতে পারে। অর্থাৎ কোন একটা জিনিষ পাওয়ার ব্যাপারে হতে পারে উভয়ে একই জিনিষ চাইছে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন কারণে। অর্থাৎ দুইটা ভিন্ন রাষ্ট্র দুই ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থে কিন্তু একই জিনিষ পেতে চাইতে পারে। যেমন ১৯৭১ সালে ভারত চেয়েছে বাংলাদেশে মানে ততকালীন পুর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান পরাজিত হয়ে চলে যাক। বাংলাদেশও চেয়েছে একই জিনিষ। কিন্তু ভারত এটা চেয়েছে ভারতের স্বার্থে আর বাংলাদেশ চেয়েছে বাংলাদেশের স্বার্থে। ফলে ভারত “বন্ধু রাষ্ট্র” এসব ভুয়া কথা না বলে বুঝতে হবে ওটা ছিল সাময়িক এবং কৌশলগত মিল। সোনার পাথরের বাটির মত বন্ধু রাষ্ট্র কথাটাও ভুয়া। এটা ভারতের নিজের স্বার্থ উদ্ধার, ভারতের বাংলাদেশ থেকে স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে পাবলিককে বাকচাতুরিতে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। অতএব সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা ওর উত্তরসুরি হিসাবে এখনকার রাশিয়া বিপ্লবী রাষ্ট্র ছিল কী ছিল না সেজন্য রাশিয়ান রাষ্ট্রস্বার্থ আর আমাদের স্বার্থ এক মনে করার কোন কারণ নাই। কিন্তু আমাদের কিছু বন্ধু সোভিয়েত রাষ্ট্র বিপ্লবী রাষ্ট্র ছিল বলে ওর স্বার্থ আর আমাদের রাষ্ট্রস্বার্থ একাকার ভাবার ভুল আমরা সেকালেও করছি, এখনও করতে চাচ্ছি। সোভিয়েত রাষ্ট্রস্বার্থকে আত্মস্বার্থ বিলীন করে সেটাকেই নিজেদের স্বার্থ মনে করেছি ভেবেছি। এমন ভাবনা অর্থহীন। তাসত্ত্বেও “কথিত এক বিশ্ব বিপ্লবের জোশ” তুলে সেকালের মতই একালেও বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, আমাদের বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে।
বিদ্রান্তির আর এক কারণ, সোভিয়েত কোন নেতার চিন্তা মতাদর্শের মধ্যে উজ্জ্বল দিক, ওর মধ্য নিজের স্বার্থ আছে কাজে লাগে মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। হতেই পারে সেটা। কিন্তু ভুল হবে যদি ভেবে বসি চিন্তা মতাদর্শের এত বিস্তর মিল, আমাকে আপ্লুত করেছে অতএব এই কারণে এমন অর্থ যদি করি যে, সোভিয়েত রাষ্ট্র আর বাংলাদেশের জনগণ ওর রাষ্ট্রস্বার্থ সব একাকার। এই বিভ্রান্তির মাত্রা কত সীমাছাড়ানি তা বুঝবার জন্য এক ভাল উদাহরণ টানব। গত ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্থান আক্রমণ ও দখল করেছিল। কেন? এসম্পর্কে আমরা নিজেরা যুতসইভাবে নিজেকে সন্তুষ্ট করতে পারি এমন জবাব কি আজও দিতে পেয়েছি?
আচ্ছা বিপ্লব হয়েছিল রাশিয়ায় ১৯১৭ সালে, এটাকে “রুশ বিপ্লব” বলেই আমরা গর্ব করে এসেছি। তাহলে ঐ বিপ্লবী রাষ্ট্রের নাম সোভিয়েত ইউনিয়ন হল কেন, নামের ভিতর “সোভিয়েত ইউনিয়ন” শব্দটা এল কোথা থেকে? বিপ্লবী জোশে আমরা কখনও এই প্রশ্ন বা কৌতুহল ধারালো করিনি। অথচ এর ভিতরেই ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগান হামলা ও দখলের কারণ লুকিয়ে আছে, যা জানা যেতে পারত।
জাতে রাশিয়ান সম্রাট জার ছিলেন বৃটিশ কলোনি সাম্রাজের মতই রুশ কলোনি, জার সাম্রাজ্যের অধিকারী। বৃটিশ এম্পায়ারের মতই সেটা রুশ এম্পায়ার (জার সাম্রাজ্য)। ১৯১৭ সালে বিপ্লবের আগে পর্যন্ত সেটা রুশ এম্পায়ারই ছিল। কিন্তু বিপ্লবের পরেও ছিল কী? এটাই এখানে মুখ্য প্রশ্ন, যা একজামিন করে দেখব। এই রুশ কলোনি এম্পায়া্রের বিস্তৃতি ছিল জর্জিয়া ইউক্রেন বেলারুশ ইত্যাদি হয়ে একেবারে সেন্টাল এশিয়া (কাজাখাস্তান, তুর্কিমেনিস্তান, আজারবাইজান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এই অঞ্চল) পর্যন্ত। জার সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল সেন্ট্রাল এশিয়া পেড়িয়ে আফগানিস্থানের আগে এসে থেমে যাওয়া সীমানা পর্যন্ত । আর এই যে রুশ সাম্রাজ্যের সীমানা বর্ণনা করলাম ১৯১৭ সালে কমিউনিষ্ট বিপ্লবের পরে এটারই নতুন নাম কী জারের রাশিয়ার বদলে সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়? বিপ্লবী রাশিয়ায় না হয় বিপ্লব হয়েছিল, বিপ্লবীরা ক্ষমতা নিয়েছিল কিন্তু রাশিয়া বাদে বাদবাকি জারের সাম্রাজ্য (১৯৯১ সালের সোভিয়েত ভেঙ্গে যাবার পরে এরা মোট ১৫ রাষ্ট্রে আলাদা টুকরা হয়) কি হয়েছিল? সবাইকে কি কলোনিমুক্তি, জার উপনিবেশমুক্তি আজাদি দেয়া হয়েছিল? কঠিন সত্য হল, তা কখনও হয় নাই। আর রাশিয়া বাদে বাদবাকী কলোনিকৃত কলোনি রাষ্ট্রে একটা প্রো-রাশিয়ান নামকাওয়াস্তে জো-হুকুমের কমিউনিস্ট পার্টি খাড়া করে তাদেরকে স্থানীয় ক্ষমতায় বসিয়ে নেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ বিপ্লবী রাশিয়ান রাষ্ট্র পুরান জার শাসক সুত্রে পড়ে পাওয়া কলোনি কর্তৃত্ব মালিকানা একচুলও ছেড়ে দেয় নাই। রাশিয়াসহ জার সাম্রাজ্যের নতুন নাম দেয়া হয়েছিল। নতুন কলোনি সাম্রাজ্যের নাম কি তাহলে সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়? তার মানে জন্ম থেকেই বিপ্লবী রাশিয়ারও কলোনি মাস্টার ছিল? তাই কী? আশা করি উতসাহি পাঠকেরা এর নিজ নিজ সন্তুষ্টির জবাব বের করে নিবেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগান দখল মূলত ১৯৭৯ সালের খোমেনীর ইরানী বিপ্লবের প্রতি ভয় থেকে। অর্থাৎ ট্রিগার পয়েন্ট ঘটনা হল ইরানি ইসলামি বিপ্লব। পুরা সেন্টাল এশিয়াই আব্বাসীয় আমল থেকে (৭৫০-১২৫৮ খ্রীষ্টিয়, একালে ইরান যার অংশ) ধর্মীয় সাংস্কৃতিক বন্ধনে আবদ্ধ এবং প্রভাবিত। ফলে ইরানী ইসলামি বিপ্লব এর “উপচে পড়া চিন্তার প্রভাবের ফলশ্রুতিতে না কাজাখাস্তান, তুর্কিমেনিস্তান, আজারবাইজান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান অঞ্চলগুলোতে না ইসলামি বিপ্লব ঘটে যায়। এটাই ব্রেজনেভের সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভীত করে তুলেছিল। এথেকে সাবধানতা হিসাবে, আগাম একশন হিসাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করে যাতে ইরান বিপ্লবের প্রভাব আফগানিস্তানের মাধ্যমে সোভিয়েত সাম্রাজ্যের অংশ সেন্টাল এশিয়াতে না ঢুকে পড়ে। আফগানিস্তান এক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইরান এইদুই রাষ্ট্রের মাঝে বাফার রাষ্ট্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে – এই ছিল সোভিয়েত পরিকল্পনা। তাই আফগানিস্তান দখল।
কিন্তু মজার কথা হল, এই যে পরিকল্পনা এটা হুবহু পুরান কালে জারের রুশ সাম্রাজ্যের মতই সাম্রাজ্য টিকানোর পরিকল্পনা, এর কার্বন কপি। কেন একথা বলছি। কারণ সাম্রাজ্য টিকানোর জন্য জারের আমলেও এই অঞ্চলে একই কাজ করা হয়েছিল। সেকালের দুই পক্ষ ছিল রুশ সাম্রাজ্য আর ভারতের বৃটিশ সাম্রাজ্য। আর এ’দুই এর মাঝে বাফার স্টেট ছিল সেই একই আফগানিস্তান। ইতিহাসে এটা এঙ্গলো-আফগান যুদ্ধ বলে পরিচিত এবং এর তিন পর্ব আছে প্রথমটা ছিল ১৮৩৯-৪২ সাল জুড়ে।
[Anglo-Afghan Wars, also called Afghan Wars,
three conflicts (1839–42; 1878–80; 1919) in which Great Britain, from its base in India, sought to extend its control over neighbouring Afghanistan and to oppose Russian influence there.]
আফগানিস্তানের সাথে বৃটিশ-পাকিস্তানের বিরোধ যুদ্ধ, ডুরান্ড লাইন টেনে দেওয়া, পশতুন বা পাঠান জনগোষ্ঠিকে বিভক্ত করা সব এখান থেকে শুরু। তাহলে সারকথা কমিউনিস্ট নেতারা সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে জার সাম্রাজ্যটাকেই ৭০ বছর ধরে চালিয়েছিল, আর শেষে ওই সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য আফগানিস্তান দখল করেছিল। কিন্তু তাতে প্রশ্ন হল – এসব কাজের সাথে দুনিয়ার কমিউনিষ্ট বিপ্লবের কী সম্পর্ক? কেন দুনিয়ার কমিউনিষ্টরা একাজের সাথে নিজেকে সামিল ভেবে এসেছে, দায় নিয়েছে? এখনও আবার সেরকম ভাবাবার জন্য দামামা বাজাচ্ছে? সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ান রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির তল্পীবাহক হওয়া ভিন্ন দেশের বা রাষ্ট্রের কমিউনিষ্টদের কাজ করণীয় হতে পারে না। কোন সম্পর্কই নাই, থাকতে পারে না। লেনিনের চিন্তা মতাদর্শ আমরা খুবই গুরুত্বের সাথে নিতে পারি, যথাযোগ্য গুরুত্ব আমাদের দেয়া দরকারও। কিন্তু এর সাথে সোভিয়েত ইউনিয়ন (বা একালে রাশিয়ান) রাষ্ট্রের দায় নেয়া, সোভিয়েত রাষ্ট্রের ব্যাগেজ বওয়া, অথবা ঐ রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ভাঁড় বা ফেরিওয়ালা হতে হবে এমন কোন মাথার দিব্যি নাই, কোন সম্পর্ক নাই।
অনেক হয়েছে, আমরা কী এখন পুরান কমিউনিস্টদের কাছে কিছুটা পরিপক্ক চিন্তা আশা কতে পারি না! আর কত?
দ্বিতীয় প্রসঙ্গঃ
রাশিয়ার সিরিয়ায় বোমাবাজির সাথে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা খবই বেশি উঠে এসেছে দেখা আছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসতে কত দেরি এর মিনিট সেকেন্ড গণনা শুরু হয়ে গেছে। একথাটাও যথেষ্ট বুঝে আমরা বলছি না। বরং রাশিয়ান প্রপাগান্ডার কবলে পড়েছি। পুতিনের রাশিয়ার লক্ষ্য হল, দুনিয়াতে রাশিয়া রাষ্ট্রের বিদেশনীতি পক্ষে আবার ফেরিওয়ালা হতে পুরান কমিউনিষ্টদের সমর্থক হিসাবে সামিল করা। সেকাজেই রাশিয়ার বাইরে কানাডায় গ্লোবাল রিসার্চ ওয়েব সাইট খোলা হয়েছে। এই কাজটা খারাপ না ভাল হয়েছে – এই বিচার অর্থহীন। প্রত্যেকের সব রাজনৈতিক কাজের পিছনে প্রপাগান্ডা করার প্রয়োজন থাকেই। আমাদের রাজনৈতিক কাজের পিছনেও থাকবে। ফলে অন্যের কাজকে নৈতিক বিচার করার মামলা নয় এটা। তবে কারো প্রপাগান্ডায় পা দিব কিনা, দুরে থাকব কী করে সে হুশ থাকা ও কাজের দায় তো নিজেরই। তো ঐ প্রপাগান্ডা ওয়েব সাইটের এক মুখরোচক ইস্যু হল ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটার কোন সম্ভাবনা নাই এটা প্রমাণ বা এটাকে গুরুত্ব না দিবার পক্ষে কথা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। মূল বলবার বিষয় হল -তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলে একটা ধারণা এমনভাবে তুলে ধরা হচ্ছে যাতে বর্তমান রাশিয়ার পক্ষে পুরান কমিউনিষ্টরা খারা হয়ে যেতে পারে। রাশিয়া মানে সোভিয়েত ইউনিয়ন যেন বা আবার আসছে – একটা কথিত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা ধবংস হয়ে যাচ্ছে ফলে রাশিয়ার জয়জয়কার আসছে – ফলে পুরান কমিউনিষ্টরা রাশিয়াকে বলয়ে করে ওর পররাষ্ট্রনীতির ফেরিওয়ালা হয়ে যাও। কারণ রাশিয়া ভাল আর আমেরিকা খারাপ তাই।
প্রথমত এই প্রপাগান্ডা থেকে বিশ্বযুদ্ধ জিনিষটা কী এর কোন ধারণা এখান থেকে হয় না। বিশ্বযুদ্ধ মানে কী? এটা আমাদের মত দেশের জন্য ভাল না খারাপ? আগের দুটা বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে এই প্রেক্ষিতে আমাদের ধারণা কী? বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে এপর্যন্ত কমিউনিষ্ট বয়ান বা ভাষ্য যা পাওয়া যায় তা নিজেদের গৌরবে পক্ষে বলা কথার প্রপাগান্ডা। আগেই বলেছি প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে আমাদের বলার কিছু নাই, কিন্তু এটা কোন বিষয় সম্পর্কের জানাবুঝা ধারণা লাভের পথ নয়। তাহলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি নাই বুঝে থাকে তাহলে কোন বুঝের বলে খুশি খুশি ভাব নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগমনের কথা ছড়াচ্ছি? কঠিন সত্যিটা হল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে কী হতে যাচ্ছে দুনিয়া কোন ডিরেকশনে যাচ্ছে, কে ডিরেকশনে দিচ্ছে, কার ডিরেকশন নির্ধারক ভুমিকা রেখেছে – এই অর্থে এর নায়ক কমিউনিষ্টরা ছিল না। ওরা এর তাতপর্য বুঝেছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং স্পষ্ট করে বলা যায় এর নায়ক আমাদের পছন্দ হোক আর না হোক, এটা আমেরিকা। আর এতে রাশিয়ান ভুমিকাটা ছিল যেভাবে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যুদ্ধটা সাজিয়ে শেষ করেছে ওর ভিতর থেকে কেবল রাশিয়ান স্বার্থটা ঠিক ঠিক মত বুঝে নেওয়া। বলা বাহুল্য এটা বিশ্বনেতা গিরি নয়। দুরদর্শিতা নয়। একথাগুলো নিশ্চয় ভাল লাগবে না। আমার লেখায় বিভিন্ন প্রসঙ্গে এনিয়ে লিখেছে। আরো লিখতে হবে।
বরং কেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটার সম্ভাবনা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে কম এনিয়ে খুব সংক্ষেপে বলব। পারস্পেকটিভটা গ্লোবাল পণ্য বিনিময়ের দিক থেকে বলা। পণ্য বিনিময় মানে এক্সচেঞ্জ, লেনদেন বাণিজ্য এসব অর্থে। বিনিময়ে গ্রামের সাথে গ্রাম ছাড়িয়ে, শহরের সাথে শহর বা এক দেশের ভিতর রাজধানীর সাথে সবাই ইত্যাদি ছাড়িয়ে রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের বিনিময় সেখান থেকে একেবারে গ্লোবাল হয়ে উঠা আজকের মাত্রায় – এই বিনিময়ের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে আমি কথা বলছি। এখন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালের এই বিনিময়ের বিস্তৃতির মাত্রা আজকের সঙ্গে তুলনাই চলে না এমন নিম্ন পর্যায়ে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কালে বিনিময় আরও সীমিত পর্যায়ে ছিল। মূলত তা কলোনী মাস্টার দেশের সাথে কলোনি শাসিত যেমন ভারতের সীমিত বিনিময়ের মত। এছাড়া কলোনি মাস্টারের সাথে আর এক মাস্টারের বিনিময় আরও আরো সীমিত পর্যায়ে ছিল। অর্থাৎ দুনিয়াব্যাপী কলোনি ধরণের সম্পর্কের আধিপত্য এটাই বিনিময় সীমিত করে রাখার মূল কারণ। এখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল তাতপর্য হল, দুনিয়াকে কলোনি সম্পর্ক থেকে মুক্ত করে ফলে বিনিময় আর একটু ব্যাপক হবার রাস্তা তৈরি করেছিল এটা। এর নায়ক ওয়াল স্ট্রীট। আর বাস্তবায়ক খোদ আমেরিকান রাষ্ট্র। কর্তা হিসাবে রাষ্ট্রপতি।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আবার আর এক নতুন বাধা সামনে হাজির হয়েছিল। দুনিয়াতে দুটো অর্থনীতি অর্থাৎ দুটা বড় ভাগে পণ্য বিনিময় সম্পর্ক চলতে শুরু করেছিল। যেটাকে আমরা কোল্ড ওয়ার বলে জানি সেটা আর একদিক থেকে দেখলে আমেরিকার নেতৃত্বে এক গ্লোবাল অর্থনীতিতে বিনিময় সম্পর্কটা ততটুকুই গ্লোবাল যতটুকু আমেরিকান ব্লক অংশে তার প্রবেশ আছে – অর্থাৎ রাশিয়ান ব্লক অংশটা বাদে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাষ্ট্র ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে আর অন্যদিকে ৭১ সাল থেকেই চীনের বড় নীতিগত পরিবর্তন যে সিদ্ধান্তের কারণ চীনের ক্রমশ আমেরিকার নেতৃত্বের গ্লোবাল অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত হয়ে যায়, গ্লোবাল পণ্য বিনিময় সম্পর্কের ভিতরে ঘোরতর সম্পর্কিত হয়ে যায়। এই দুই ঘটনার পর থেকে এই অর্থে পুরা দুনিয়াই এখন একই গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের অর্থনীতি্র অধীনে সম্পৃক্ত, গ্লোবাল পণ্য বিনিময় সম্পর্কে জটিল থেকে জটিলতর আর অবিচ্ছেদ্যভাবে পরস্পরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে।
পণ্য বিনিময়ে সব ধরণের লেনদেনের কথা বলছি। এই কথার আর এক অর্থ ইন্টারডিপেন্ডেন্সি বা পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া। এমনিতেই যেখানে পণ্য বিনিময়ের সমাজের সংজ্ঞা ছিল ইন্টারডিপেন্ডেন্সি নির্ভরশীল হয়ে জীবন যাপন সেখানে এবার তা হয়ে যায় গ্লোবাল সমাজ, গ্লোবাল ডিপেন্ডেন্সি।
এর ফলে এক নতুন শর্ত এখানে হাজির হয়ে গেছে। কী সেটা? কোল্ড ওয়ার যুগে (১৯৫০-১৯৯১) আমেরিকা আর সোভিয়েত দুই ব্লকে ভাগ হয়ে থাকা দুনিয়ার সময়কালে দুই ব্লক পরস্পর পরস্পরকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিবে, দিতে চায় এই ভেবে খুবই সহজে লড়তে পারত। এমন ভাবা সম্ভব হবার পিছনে মূল কারণ হল এই দুই ব্লকের মধ্যে তেমন কোন বিনিময় সম্পর্ক ছিল না। পুঁজি বা পণ্য বিনিময় এমনকি ভাব বিনিময়, বাণিজ্য কিছু ছিল না বললেই চলে। অর্থাৎ কেউ কারও উপর নির্ভরশীল না ইন্টারডিপেন্ডেন্সি নির্ভরশীলতা বলে কিছুর বিকাশ না ঘটিয়ে চলেছিল। অন্যভাষায় কোন সমাজ সম্পর্ক ওখানে ছিল না। কোন সম্পর্ক ছিল না বলেই সহজেই একে অপরকে নির্মুল করে দিবার কথা ভাবা কল্পনা করা সম্ভব ছিল। এই অর্থে আর এক যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটাবার দিক থেকে সেটাই সবচেয়ে ফেবারেবল সময় গিয়েছে। কিন্তু এখন? ইতোমধ্যে আমরা এখন ঘোরতরভাবে একই গ্লোবাল ইকোনমি বিনিময় ব্যবস্থার অন্তর্গত হয়ে গেছি, নির্ভরশীল হয়ে গেছি। এখন রাশিয়ার তেল গ্যাস বেচা অর্থ বিনিয়োগ হিসাবে নিয়োগ করে বৃটিশ অর্থনীতি চলছে। সারা চীনের বাজার চলছে ওয়াল স্ট্রীটের বিনিয়োগে। তাহলে ওবামা র আমেরিকা ও চীনের কোন রাষ্ট্র বিরোধে ওবামা চীনের উপর বোমা মারতে চাইলে বোমাটা আসলে ওয়াল স্ট্রিটের উপরেই মারা হয়ে যাবে। ফলে বিরোধের চালু সমাধান হিসাবে বোমা সহজেই অপশন হতে পারবে না। কিন্তু সেজন্য রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংঘাত তো বন্ধ হবে, ফলে সেকথা সেটা বলছি না। সংঘাত অবশ্যই বলকের পরে বলক তুলে উঠে আসতে চাইবে। কিন্তু বারবার যুদ্ধ ছাড়া অন্য নানান উপায়ে যুদ্ধ এড়িয়ে চলার চেষ্টা হতে থাকবে। চরম কোন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ অবশ্যই ঘটতে পারে। কিন্তু তা আসবে একেবারে উপায়হীন পরিস্থিতিতে।
এখানকার জন্য সারকথা এটাকেই আমি বলছি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের চেয়ে তুলনায় এখনকার ইন্টার ডিপেন্ডেন্ট সময়ে্র কারনে যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। একারণে রাশিয়ান প্রপাগান্ডার প্রয়োজনের দিক থেকে আলগা করে বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে কথা বলা উচিত নয়।
তৃতীয় প্রসঙ্গঃ
দুনিয়াতে কী পরাশক্তি, নেতৃত্ব পরিবর্তন আসন্ন নয়?
হা অবশ্যই। কিন্তু সেকাজে রাশিয়া নির্ধারক কেউ নয়। এর নায়ক চীন। রাশিয়ার অবস্থা হল একদিকে নিজের নির্ধারক মুরোদ নাই অথচ আমেরিকার মাতব্বরি সহ্য হয় না। সব সময় চীনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আমেরিকার চলতি নির্ধারক ভুমিকা শেষ হলে কী কী করবে এই স্বপ্নে রাশিয়া সবসময় একেবারে অস্থির হয়ে থাকে। ইউক্রেন ও ক্রিমিয়া ইস্যুতে পশ্চিম তাকে শাস্তি দিতে পেরেছে কথাটা সত্যি। তার মানে এখনও আমেরিকার সে সামর্থ নিঃশেষ হয়ে যায় নাই। তবে নিঃসন্দেহে এটা কমছে ধীরে ধীরে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এই কমার অর্থ সামরিক সক্ষমতা নয়। একেবারে মূল ক্ষমতা, গ্লোবাল অর্থনৈতিক সক্ষমতা। যেটা সব সক্ষমতার মুল চাবি। সেজন্য এটা নন-মেলেটারি ভাবে প্রকাশিত হতে দেখা যাবে। ফলে সময়জ্ঞানের দিক থেকে রাশিয়া সময়ের আগে আমেরিকার বিরুদ্ধে ও অসময়ে প্রপাগান্ডায় নেমে যায়। যেমন প্রচার করেছে সিরিয়া হামলায় চীন নাকি রাশিয়ার সাথে আছে। এটা একশ ভাগ মিথ্যা কথা। গত সত্তরের দশক থেকেই চীনের ঘোষিত নীতি সামরিক কর্মকান্ডে না জড়ানো, কেবল তাইওয়ান বা নিজের সরাসরি সার্বভৌমত্ত্ব ইস্যু ছাড়া। যেটা আবার একালে সাউথ চায়না সি ইস্যু পর্যন্ত বাড়িয়ে বিবেচনা করছে। এই অর্থে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার নীতিটাই এখানে চীনের অনুসৃত নীতি। তবে অস্থির রাশিয়ার প্রপাগান্ডার স্বার্থে চীন উলটা পালটা কাজ করতে পারে না। এটাই স্বাভাবিক।
শেষ কথাঃ
পুতিনের রাশিয়া – মুরোদহীন কিন্তু চরম অস্থির রাশিয়া নিজের পেটের কামড়ে নানান কিছু প্রপাগান্ডা করবে। তা নিয়ে কি করার আছে। কেবল আমাদের পুরান কমিউনিষ্টরা একটু বিবেচক হবেন, আশির দশকের চিন্তা ভাবনা থেকে বের হয়ে ঝাপিয়ে না পড়ে সবার আগে নিজের চিন্তার একটা রিভিউ করে নিবেন। কোথায় কতটুকু কেন বদল রিভিউ প্রয়োজন প্রযোজ্য এর বাছবিচার করবেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুনিয়ায় চিন্তা আপডেট করে নিবেন। এরপর পাক্কা বিবেচক ও পরিপক্ক আচরণ করতে পারবেন এই আশা রখি। দুনিয়াতে কমিউনিস্ট বিপ্লব প্রায় শত বছর পার করতে চলল। চুল পেকে ভুত হবার বয়স। আর কত? এখন পরিপক্ক আচরণ করার বয়স। পুতিনের অস্থিরতা পোলাপানি তো আমাদের চোখে ধরা না পড়ার কথা নয়।