তুরস্ক-রাশিয়া সামরিক উত্তেজনা
রাশিয়া পশ্চিমের জোটে অন্তর্ভুক্তি, অবরোধ তুলে নেয়া ইত্যাদিতে নজর চায়
গৌতম দাস ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫
http://wp.me/p1sCvy-iw
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেছে সেই কবে পঁচিশ বছর আগে। শুধু তাই নয় ভেঙ্গে রাশিয়া নামে এমন এক ক্ষুদ্র আকার নিয়েছে যে সেই রাশিয়া এখন সব গাইগুই ছেড়ে পুঁজিতান্ত্রিক মুল ধারা বা গ্লোবাল অর্ডারের অংশ। সোভিয়েত ধারার অর্থনীতি বলতে কিছুই ওর ভিতর অবশিষ্ট নাই। কিন্তু তবু সোভিয়েত ভক্ত পুরান কমিউনিষ্টদের মাথা ঠেকিয়ে ভক্তি দিবার জায়গার অভাব হয় নাই। তারা এখনও প্রবল ভক্তি সহকারে একালের মাফিয়া রাষ্ট্র পুতিনের রাশিয়াকে পুরান সোভিয়েৎ ইউনিয়নের জায়গায় বসিয়ে ভক্তি সেবা দেয়। মাফিয়া রাশিয়ার হয়ে প্রপাগান্ডায় মেতে উঠে। এটা সত্যিই এক আশ্চর্যের বিষয়। প্রেমের আবেগের সামনে জ্ঞান বুদ্ধি বিবেচনার যে আজও অচল সেটাই বরং আবার প্রমাণিত।
আজকের দুনিয়ার আইএস বা ইসলামী স্টেট ইস্যুটা দিনকে দিন বিশ্ব-রাজনীতিকে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলছে। ব্যাপারটি অনেকটা ‘কুইনাইন সারাবে কে’ অবস্থার মত। ম্যালেরিয়া তাড়ানোর জন্য রোগীকে কুইনাইন খাওয়ানো হয়েছিল। এতে কুইনাইনে ম্যালেরিয়া তাড়ানো গিয়েছিল কিনা, সেকথা চাপা পড়ে গিয়ে এর চেয়েও বড় ঘটনা হয়ে গিয়েছিল নতুন রোগ – কুইনাইন এ নতুন রোগ ডেকে এনেছে। তা থেকে আবার আরও অনেক নতুন নতুন রোগের বিস্তার ঘটেছে। এই অবস্থা। এভাবে সর্বশেষ জটিল ঘটনাটি হল, তুরস্কের বোমারু এফ-১৬ বিমান এক রাশিয়ান বোমারু এসইউ-৩০ বিমানকে গোলা মেরে ভূপাতিত করেছে। আগেই বলেছি, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলেও কমিউনিস্ট প্রগতিশীলদের চোখে রাশিয়াই এখন সেই তাদের চোখে পুরান সহানুভূতি পাবার রাষ্ট্র হিসেবে সে জায়গা নিয়েছে। সিরিয়াতে সেই রাশিয়ার বিমান হামলা শুরু হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে। প্রথম এক সপ্তাহ টানা বোমাবাজি করে এরপর থেকে থেমে থেমে যেন গড়ে দিনে একটা করে এবং বেছে বেছে জায়গায় বোমা ফেলা, যেখানে ফেললে তা আসাদের রাষ্ট্র যুদ্ধকৌশলের দিক থেকে সুবিধা পায়- এভাবে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়ার নতুন যুদ্ধবিমান খুয়ানোর ঘটনাটা ২৪ নভেম্বরের। ওই দিন তুরস্কের বোমারু বিমান রাশিয়ান এক বোমারু বিমানকে গোলা মারার ঘটনাটা ঘটে। এ ঘটনাটি নিয়ে বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া কার কী ধরনের, কে কী বলেছে এর একটা সঙ্কলন রিপোর্ট তৈরি করেছে আল জাজিরা টিভি নেটওয়ার্ক। সেই রিপোর্ট অনুসরণ করে এখানে কথা এগোব।
তবে এর আগে কেন তুরস্ক রাশিয়ান বোমারু বিমান ভূপাতিত করল সেদিকে কিছু আলোকপাত করা যাক। বিষয়টা নিয়ে এর স্বপক্ষে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আর রাশিয়ান প্রপাান্ডা থাকলেও সিরিয়া-তুরস্কের সীমান্তে হামলা হওয়া ওই অঞ্চলের কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্যের দিকে মনোযোগ দেব। যে অঞ্চলে তুরস্ক-রাশিয়ান বোমারু বিমানে হামলা হয়েছে, অথবা বলা যায় সিরিয়ার যে অঞ্চলে রাশিয়া বিমান হামলা করতে গিয়েছিল সেটা সিরিয়া-তুরস্কের একেবারে সীমান্ত অঞ্চল। সিরিয়ার দিক থেকে তা লাটকিয়া প্রদেশ আর তুরস্কের দিক থেকে সেটা হাতায়ে প্রদেশ- এই হলো দুই প্রদেশের সীমান্ত সেটা। শুধু তাই না, ওই অঞ্চলের বসবাসকারীরা আধুনিক রাষ্ট্রের সীমানা টানার বহু ঐতিহাসিক যুগ আগে থেকেই সিরিয়ার ‘সিরিয়ান টার্কম্যান’ বা অরিজিনাল টার্কি বংশোদ্ভূত তবে সিরিয়ায় বসবাসরত বলে সিরিয়ান। অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে যেহেতু আজকের সিরিয়া বলে কোনো আলাদা রাষ্ট্র ছিল না; বরং আজকের সিরিয়া, ইরাকসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যই তুরস্কের শাসনাধীন একই অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ সীমানা অঞ্চল ছিল। ফলে আজকের সিরিয়ান তুর্কিরা তুরস্কের মূল তুর্কি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার একই অংশ ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে অটোমান সুলতানের পরাজয়ের পর ওই সাম্রাজ্য ব্রিটিশ-ফরাসিরা গোপন চুক্তির কারণে ভাগাভাগিতে সিরিয়া বলে আলাদা রাষ্ট্র সীমানা টানার সময় লাটকিয়া অঞ্চল নতুন রাষ্ট্র সিরিয়ার ভাগে চলে যায়। এ হলো পুরনো ঐতিহাসিক দিক। আর একালের সংযোজিত গুরুত্বপূর্ণ আরও দুই তথ্য হলো- এক. সিরিয়ান আরব স্প্রিং বা সিরিয়ান গৃহযুদ্ধের শুরু থেকেই সিরিয়ান টার্কম্যানরা আসাদ সরকারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে লিপ্ত হয়েছিল এবং এখনও আছে। আর রক্ত এবং আত্মীয়তা সূত্রে তুরস্ক থেকে সব ধরনের সাহায্যপ্রাপ্তিও সেই থেকে তারা পেয়ে আসছে। তুরস্কের সরকারের দিক থেকে সরকারও নিজ টার্ক-জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক সূত্রে সিরিয়ান টার্কম্যানদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা নিজের সমাজের দা্বি । তথ্য দুই. এটা আমাদের প্রসঙ্গের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। লাটকীয়া অঞ্চল সিরিয়ান গৃহযুদ্ধের শুরু থেকেই আইএস অথবা পরবর্তীতে যারা আইএস হয়ে হাজির হচ্ছে তাদের কোনো তৎপরতা বা প্রভাব এখানে নেই, তাদের অনাগ্রহের এলাকা বা মুক্ত এলাকা।
কিন্তু রাশিয়ান বিমান ধ্বংস হওয়ার পর রাশিয়ান বয়ানে সুনির্দিষ্ট করে কেন রাশিয়ার বিমান লাটকিয়ায় গিয়েছিল, তা কোথাও উল্লেখ করে নাই, করতে চায় না। শুধু সামগ্রিকভাবে দাবি করে চলছে যে, পুরো সিরিয়াতে তারা আইএসের ওপর বোমাবাজি করতেই গিয়েছিল। অথচ মাঠের তথ্য হলো, লাটকিয়া প্রদেশ টার্কি বংশোদ্ভূত সিরিয়ানদের সশস্ত্র প্রতিরোধ তৎপরতা সিরিয়া-তুরস্কের এক ধরনের ঘরোয়া মামলা, যার মধ্যে আইএস নেই, স্বার্থসংশ্লিষ্টতার কিছু নেই। অতএব রাশিয়া লাটকিয়াতে আইএস মারতে গিয়েছিল- এ বয়ান অচল; কারও হজম হচ্ছে না। নিঃসন্দেহে রাশিয়া ওখানে আইএস মারার উসিলায় আসাদ সরকারকে সামরিক সুবিধা দিতে আর সিরিয়ান স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ হাসিলে আসাদের পক্ষ হয়ে সিরিয়ান টার্কম্যানদের উচ্ছেদ করতে গিয়েছিল। এ কাজ করতে যাওয়ার আগে রাশিয়া স্পষ্টত যেদিকটা আমলে নেয়নি তা হল, লাটকিয়ার বাসিন্দাদের রক্ষা করার স্বার্থ তুরস্ক সরকারেরও আছে। রক্ত ও আত্মীয়তা সূত্রে সিরিয়ায় থেকে যাওয়া টার্কদের রক্ষা করতে নিজ জনগণের কাছে তুরস্ক সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তাহলে সার কথা দাঁড়াচ্ছে, লাটকিয়া আসলে সিরিয়া ও তুরস্কের পারস্পরিক স্বার্থে সরাসরি সংঘাতের এক ইস্যু। সিরিয়ায় সশস্ত্র গৃহযুদ্ধ সংঘাতের শুরু থেকেই লাটকিয়ার বাসিন্দাদের তুরস্ক সব সময় সিরিয়ান বিমান হামলা থেকে সুরক্ষা করে গেছে। একালে রাশিয়া আইএস মারার উসিলায় তুরস্ক-সিরিয়ার স্বার্থ সংঘাতের ইস্যুতে নিজের হাত ঢুকালে তুরস্ক একইভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াবে এবং তা-ই দাঁড়িয়েছে। ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করছিল আল জাজিরা টিভি। তুরস্কের নিজের এই স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ানোর কারণকেই ওখানে তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন। তবে স্বভাবতই তুরস্কের এ স্বার্থের কথা তিনি পটভূমি হিসেবে বলছিলেন। রাশিয়ান বিমান ভুপাতিত করে দেয়ার পক্ষে আইনি বা কূটনৈতিক যুক্তি হিসেবে নয়। হামলার পক্ষে তুরস্কের আইনি যুক্তি হল- রাশিয়ান বিমান তুরস্কের আকাশসীমা ভঙ্গ করে তুরস্কের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে এবং তুরস্ক বিমান বাহিনীর পাঁচ মিনিটে ১০ বার ওয়ার্নিং রেডিও মেসেজ দেয়ার পরও রাশিয়ানরা তা উপেক্ষা করেছে। তুরস্ক ওই মেসেজের অডিও মিডিয়ায় উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আল জাজিরায় প্রচারিত মেসেজে শোনা যাচ্ছে ওই সাবধান বাণী। সেই সঙ্গে রাশিয়ান ওই বিমানের দুই পাইলটের বেঁচে যাওয়া একজন পাইলটের দাবিও আল জাজিরা আমাদের দেখিয়েছে। ওখানে তিনি দাবি করছেন, তুরস্ক থেকে কোনো ওয়ার্নিং দেয়া হয়নি।
অবস্থাদৃষ্টে সবমিলিয়ে বললে, বয়ানের ন্যায্যতা ও গাথুনির দিক থেকে রাশিয়া পিছিয়ে পড়েছে। রাশিয়া নিজ বয়ানের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই।
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতিক্রিয়া যেটা রয়টার্স থেকে আল জাজিরা টুকে এনেছে; ওখানে দেখা যাচ্ছে, পুতিনের ভাষ্যটা যেন হার স্বীকার করা হারু পার্টির ভাষ্য। যেমন- পুতিন দাবি করছেন, বিমানটা বোমার গোলা খাওয়ার পর ওর ভাঙা অবশেষ সীমান্তে সিরিয়ার দিকে চার কিলো ভেতরে পড়েছে। অতএব আমরা সিরিয়ান সীমার ভেতরেই ছিলাম, তুরস্কের সীমানায় ঢুকিনি। – এগুলো খুবই হাস্যকর যুক্তি। কোন মীমাংসায় আসা যায় না এমন দাবি, তবে মুখ রক্ষায় কাজে লাগে এমন যুক্তিও। সাধারণত যে কোনো বোমারু বিমান এক মিনিটে কমপক্ষে ১০-১৫ কিলোমিটার পার হয়ে যায়, এছাড়া টার্কিশ আকাশ সীমায় গুলি খেয়েও কোনো বিমানের পড়ার মাটি সিরিয়া হতেও পারে। সুনির্দিষ্টভাবে এক্ষেত্রে তুরস্কও দাবি করছে, রাশিয়ান বিমান তুরস্কের আকাশে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করেছিল এবং ১৭ সেকেন্ড ধরে ছিল। কাজেই সিরিয়া-তুরস্কের এসব সেকেন্ড-মিনিট দিয়ে মিডিয়া বয়ান কারও নিজের পক্ষে প্রমাণ হিসাবে কাজে আসবে না। বরং যে প্রশ্নে রাশিয়ানরা চুপচাপ তা হল, লাটকিয়া আইএসবিহীন অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ান বিমান ওখানে কেন গিয়েছিল! সেখানে আমাদের জবাব খুঁজতে হবে। যুদ্ধবিমান গোলা খাওয়ার পরে পুতিন অভিমানের ভাষায় বলছেন, “বিশ্বাসঘাতকতা করে তার পিঠে ছুরি মারা হয়েছে।” এছাড়াও বলছেন, “তারা (মানে তুরস্ক) কি ন্যাটোকে আইএসের পক্ষে খেদমতে লাগাতে চায়?” পুতিনের এ দুই বয়ানের পিঠে আগাম ধরে নেয়া আছে যে, রাশিয়ান পাইলটরা যেন আইএস মারতে ওখানে গিয়েছিল আর সেই যোদ্ধা রাশিয়ার সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। অথচ রাশিয়ান পাইলটরা ওখানে কোনো আইএস মারতে গিয়েছিল, তাই তো প্রতিষ্ঠিত নয়। পুতিন আমাদের ধরে নিতে বলছেন, সিরিয়ার যে কোনো জায়গায় রাশিয়ান বিমানের যাওয়া মানেই তা শুধু আইএসের ওপর বোমা মারতে যাওয়া। অথচ রাশিয়ার ভালোভাবেই জানা থাকার কথা যে, লাটকিয়ায় সিরিয়া রাষ্ট্রের স্বার্থ আর তুরস্ক রাষ্ট্রের স্বার্থ সরাসরি মুখোমুখি সংঘাতপূর্ণ হয়ে আছে। ফলে আইএসবিহীন ওই অঞ্চলে রাশিয়া যাওয়ার অর্থই হল আসাদের পক্ষে ভারসাম্য আনতে সরাসরি তুরস্কের বিপক্ষে সামরিকভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া। অতএব তুরস্কের গুলি খেয়ে বিমান হারানোর রিস্ক রাশিয়া তো আগে থেকেই জেনেশুনে নিজেই নিয়েছে। এছাড়া যেদিন রাশিয়ান বিমান ভূপাতিত হয় সেদিনই রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তুরস্ক সফরের কথা ছিল, যা ঐদিনের ঘটনা প্রেক্ষিতে পরে বাতিল করা হয়। ফলে কোনো বিশেষ কারণে রাশিয়াকে যদি লাটকিয়ায় বোমারু বিমান নিয়ে যেতেই হয়, তবে তা নিয়ে ওই সম্ভাব্য সভায় তুরস্কের সাথে মুখোমুখি বসে আগেই রাশিয়ার সিদ্ধান্ত সমন্বয় করে নেয়া যেত। অথচ রাশিয়া যেন ধরেই নিয়েছিল, আইএস মারার নাম করে রাশিয়া আসাদের পক্ষে মাঠের পরিস্থিতি এনে দেবে আর কেউ কিছুই বুঝতে পারবে না!
এ বিষয়ে ওবামার বক্তব্যের ভেতর একটা বাক্য আছে। ওবামা বলছেন, লাটকিয়ায় রাশিয়ানরা ‘মডারেটবিরোধী’ (মানে আইএস বাদে অন্য মধ্যপন্থী আসাদবিরোধীরা) বিরুদ্ধে অ্যাকশনে চলে গেছে। অর্থাৎ ওবামাও তার বক্তব্যে পুতিনকে বকা দিয়ে কথা বলেছেন।
সেকালের কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধী আমেরিকা ও ইউরোপের মিলিত যুদ্ধজোট হল ন্যাটো বা নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন,যার জন্ম ১৯৪৯ সালে। আর তুরস্ক ওর সদস্যপদ পায় বা নেয় ১৯৫২ সালে।
ফলে রাশিয়ান বিমানের ভূপাতিত হওয়ার পর এ ইস্যুতে সাধারণভাবে সব ন্যাটো সদস্যই তুরস্কের পক্ষে দাঁড়াতে ন্যাটোর ম্যান্ডেটের কারণে বাধ্য। তাই দেখা যায়, হামলার পরের বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়ায় প্রথমবাক্যেই তুরস্কের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু পরের বাক্যে তুরস্ক ও রাশিয়ার দুই রাষ্ট্রের প্রতি আবেদন রেখেছেন যেন সামরিক টেনশন আর না বাড়ানোর ব্যাপারে দুই পক্ষ সংযত থাকে। অর্থাৎ ইঙ্গিতটা হলো, বাকি ন্যাটো সদস্যরা তুরস্কের পক্ষে দাঁড়ালেও ন্যাটোর কোনো সদস্য বিষয়টা নিয়ে আরও কোনো উত্তেজনা, কোনো সামরিক সংঘাতের দিকে যাওয়ার কথা ভাবছে না। তারা বরং মূল শত্রু আইএসের ব্যাপারে সবাই একজোট হয়ে অ্যাক্ট করতেই চাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিরিয়ান সরকারের বিবৃতি স্বভাবতই রাশিয়ার পক্ষে। তবে রাশিয়ার পক্ষে এক আইনি যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেছে সিরিয়া। রাশিয়ার বিমান ভূপাতিত করায় তুরস্কের এ কাজকে “অ্যাক্ট অব এগ্রেশন” বলে চিহ্নিত করেছে সিরিয়া। এটা জাতিসংঘের আইনি ভাষা। অর্থ “আইন লঙ্ঘন কর হামলা করা”।
তাই তুরস্ক সরকারের বিবৃতিতে সিরিয়ান অভিযোগের পাল্টা জবাব দেয়া হয়েছে। বলেছে, “তুরস্কের তৎপরতা (বিমান ভূপাতিত করা) অন্যের ভূমিতে বেআইনি প্রবেশ করে হামলাকারী হওয়ার মতো কাজ নয়”। এই হল, তোলা অভিযোগ আর এর বিরুদ্ধে কাটান দেওয়ার কেচাল। এসবের বাইরে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্য এসব পাল্টাপাল্টির বাইরে যাওয়ার চেষ্টা। কারণ তাঁর রাষ্ট্রস্বার্থ আইএস বিরোধী জোটে রাশিয়ান অন্তর্ভুক্তি দেখতে চাওয়ার তাগিদ আছে। তিনি বলছেন, (রাশিয়া-তুরস্কের মধ্যে) সামরিক উত্তেজনা আর যেন না ঘটে, সেদিকে আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য আইএস দমনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের প্রতিক্রিয়া এবং ওবামার প্রতিক্রিয়ার প্রথম অংশ এভাবে সবারই প্রতিক্রিয়ার সাধারণ দিক হল, সবাই জোর দিচ্ছেন রাশিয়া-তুরস্কের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা আর না বাড়ানো এবং আইএসবিরোধী জোটে সবাইকে সামিল করা।
সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, নিট ক্ষতিটা হলো রাশিয়ার। রাশিয়ান এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান একেবারেই নতুন হাইটেক বিমান- এমন যুদ্ধবিমান রাশিয়াকে খোয়াতে হল। অথবা বলা যায়, আইএসবিরোধী পশ্চিমা জোটে অন্তর্ভুক্তি পেতে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে পশ্চিমা অবরোধের মধ্যে থাকা রাশিয়াকে যে মূল্য দিতে হল তা বোধহয় বেশ বেশি। তবু এটা রাশিয়াকে পশ্চিমের সাথে জোটে ঢুকিয়ে দেয়ার পক্ষে তা এক কদম আগাম পদক্ষেপ। রাশিয়ার কাছে এটা যথেষ্ট দামি। তবে মাঝখান থেকে রাশিয়া-তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য বিনিময় অচল হয়ে গেছে। কারণ যুদ্ধবিমান হারিয়ে রাশিয়া তুরস্কের বিরুদ্ধে বাণিজ্য অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে। পুতিনের রাগ, ক্ষোভ তো কারও কারও ওপর পড়ে তবেই না প্রশমিত হতে হবে! তবে লাটকিয়ায় পুতিনের বেকুবি থেকে তিনি কী কোনো শিক্ষা নেবেন? দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
দুইঃ
বিশ্বযুদ্ধ কোন ছেলেখেলা নয়!
রাষ্ট্র মাত্রই ওর পরিচালনার মধ্যে নিজের পক্ষে প্রপাগান্ডা করা একটা কাজ। কিন্তু সে প্রপাগান্ডা আপনি বিশ্বাস করে বসবেন কিনা,ঐ প্রপাগান্ডাকে সত্যি মনে করে নিজের চিন্তা সে আলোকে মানে নিজেকেও সাজাবেন কী না এর দায়দায়িত্ব সম্পুর্ণ আপনার নিজের। কানাডায় রেজিষ্টার্ড অফিস নিয়ে বসা রাশিয়ার এক প্রপাগান্ডা ওয়েব সাইট আছে, “গ্লোবাল রিসার্চ” নামে। রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্টের বরাতে বা বরাত উল্লেখ করা ছাড়াই বিভিন্ন খবর ওখানে ছাপা হয়। অর্থাৎ বুঝা যায় রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স ডাটা ও রিপোর্টে ঐ গ্লোবাল রিসার্চের কর্তাদের একসেস বা প্রবেশাধিকার আছে। তা খারাপ কী! ওয়েষ্টার্ণ সুত্রর বরাতের বাইরে এই উছিলায় আমরা কিছু তথ্য ও ব্যাখ্যা ওখান থেকে পেতে পারি। কিন্তু সেসব তথ্য নাড়াচাড়া করতে গিয়ে আমাদের অবশ্যই সাবধান হতে হবে, ‘ইন-বিটুইন দা লাইন’ নিজের মত করে পাঠ নিতে হবে কারণ ওসব তথ্যের সাথে আবার রাশিয়ান প্রপাগান্ডা-স্বার্থও মিশান আছে। ফলে টুইষ্ট আছে। সেদিকে খেয়াল রেখে তা বাদ রেখে বেছে পড়তে হবে। ঐ সাইটের টার্গেট পাঠক আপনিও হতে পারেন যদি দেশে দেশে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রগতিবাদী সমাজতন্ত্রীদের একজন খাতক হিসাবে আপনি নিজেকে এখনও মনে করেন। আর সেই সাথে যদি মনে করেন রাশিয়ান রাষ্ট্রের স্বার্থই আপনার স্বার্থ,মানে রাশিয়ান রাষ্ট্রের বৈদেশিক স্বার্থ-ব্যাগেজ বইবার দায় আপনি নিয়েছেন।
তো ঐ সাইটের অনেক প্রপাগান্ডা ইস্যু ও মেটেরিয়ালের মধ্যে একটা হল “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন” এমন একটা দামামা বছরের পর বছর ধরে বাজিয়ে চলা। প্রায়ই বাংলাদেশে দেখা যায় অনেক পুরান কমিউনিষ্ট পুরান অভ্যাসে বাছবিচারহীনভাবে ঐ দামামা বাজানোতে প্রভাবিত হয়ে পড়েন। তেমনই এক রিপোর্ট ছাপা হয়েছে গত ২৬ নভেম্বর দৈনিক মানবজমিনে – “মুখোমুখি তুরস্ক-রাশিয়া তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কী আসন্ন?” – এই শিরোনামে।
দুনিয়াতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোন দিন হতে পারে না – এমন কথা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু এটা তাড়াতাড়ি হচ্ছে না কেন; হলে আমেরিকার পতন হবে ফলে এমনটা দেখতে চাওয়ার একটা প্রবল কামনা রাশিয়ার আছে। এবং সেটাও হয়ত তেমন দোষেরও কিছু নয় যতক্ষণ না এটা যুক্তিবুদ্ধি বিচারহীন ম্যানিয়াক হয়ে না চাওয়া হয়, প্রপাগান্ডার ঘ্যানর ঘ্যানর করে ফেলা না হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য রাশিয়ার বিশেষত পুতিনের রাশিয়ার সে সমস্যা প্রবল। ১৯৯১ সালের আগে যে সোভিয়েত ইউনিয়ন (আজকের রাশিয়ার পুর্বসুরি) আমেরিকার সাথে পরাশক্তিগত টক্কর দিত রাশিয়ার আর সেই যৌবন নাই। অথচ আমেরিকা অটুট আছে শুধু না, ইতোমধ্যে এক মেরুর দুনিয়া ভোগ করার সুবিধা নিয়েছে। এটা যেন রাশিয়ার কিছুতেই আর সহ্য হয় না। যদিও আমেরিকার নেতৃত্বের দুনিয়াও আর টিকছে না। সেই নেতৃত্বে বিশ্বঅর্থনৈতিক অর্ডার শৃঙ্খলা একালে ক্রমশ ভাঙছে এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু তা ঘটাবার ক্ষেত্রে রাশিয়ার কোন ভুমিকা নাই; এটা রাশিয়ার হাতে নাই – না এটা ঘটাতে, না এটা ত্বরান্বিত করতে। বরং সবচেয়ে বড় নির্ধারক ভুমিকা আছে চীনের, তবে সেটাও অবজেকটিভ। অর্থাৎ এটা চীনা নেতাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা প্রসুত নয় বরং চীনের বৈষয়িক অর্থনৈতিক অর্জন উন্নতির কারণে পরোক্ষে পড়ে পাওয়া লাভ। এটা ঠিক আমেরিকার দুনিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর উদ্দেশ্যেই করা চীনের ততপরতা নয় বরং নিজের অর্থনৈতিক উত্থানের পক্ষে কাজ করে যাওয়া চীনের কারনে যেটা পরোক্ষ অর্থে – আমেরিকার দুরবস্থা এবং বিশ্বঅর্থনৈতিক অর্ডার শৃঙ্খলার নেতৃত্ব থেকে আমেরিকার অপসারণ ও নতুন অর্ডার জন্ম আসন্ন হয়ে উঠা। এই পালাবদলটা কেমন হতে পারে তা নিয়ে ষ্টাডি, আগাম অনুমান করা বলতে পারা ইত্যাদির জন্য বারদিকে বিস্তর গবেষণা পড়ালেখা চলছে। গত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ সংখ্যায় লন্ডন ইকোনমিস্ট পত্রিকা এবিষয়ে এক রিপোর্ট ছেপেছে। ওর সারকথা হল, দুনিয়াতে একালের পালাবদল পরিবর্তন বিষয়টার কিছুটা সমতুল্য পুরান ঘটনা হল ১৩৫ বছর আগের। সেটা হল, ১৮৮০ সালে বৃটিশ সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে আমেরিকান অর্থনীতি যখন দিনকে দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। আর দুনিয়ার ব্যবসা বাণিজ্য ১৯১৩ সালের দিক আর পাউন্ড-স্টার্লিংয়ে না ঘটে বরং এর চেইয়ে বেশি আমেরিকান ডলারে হওয়া শুরু করেছিল। ইকোনমিষ্টের উদ্দেশ্য হল, সেকালের ঘটনাবলি পাঠ করে সেখান থেকে একালে কোন আগাম অনুমান করা যায় কীনা! কতটা করা যায় ইত্যাদি। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে জিনিষটা সুনির্দিষ্টভাবে নিজের মত ঠিক করা লম্বা পা ফেলে আগাচ্ছে এবং যার উপর রাশিয়ার কোন হাত নাই তা নিয়ে প্রপাগান্ডা করা যে – “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন” বলে দামামা বাজানো যে কোন সময় বুমেরাং হতে পারে। বিশেষ করে আজকের রাশিয়ান অর্থনীতি হল, মাটির নিচের তেল-গ্যাস সম্পদ বিক্রি করে জমিদারি ফিউডাল দশায় যেন ফিরে যাওয়া অর্থনীতি, যার কোন শিল্প-ইন্ডাষ্টি ভিত্তি নাই। একালে রাশিয়ার যা আছে তুলনায় সেটা উন্নত শিল্প ভিত্তির ইউরোপের কোন রাষ্ট্র দূরে থাক, দক্ষিণ কোরিয়া লেবেলেরও নয়। সার কথায় রাশিয়ার পরাশক্তি ষ্টাটাস খুবই নড়বড়ে, কোন শক্ত শিল্প অর্থনৈতিক ভিতের উপর তা দাঁড়ানো নয় বরং তেল-গ্যাস বেচা অর্থনীতি। ফলে খুব সহজেই ৪০ ডলারে নেমে যাওয়া তেলের কারণে আর এর উপরে পশ্চিমা দেশের অবরোধে রাশিয়ার অর্থনীতি আরও চরম দুর্দশায় পড়েছে, পশ্চিম এঅবস্থায় রাশিয়াকে ফেলতে পেরেছে। সারকথায় আমেরিকান অর্থনীতি দুর্বল হয়ে তার বিশ্ব-অর্থনৈতিক অর্ডারে নিজের নেতৃত্বের স্থান থেকে চ্যুত হওয়াটা বাস্তবে চীন বা অন্যান্য রাষ্ট্রের রাইজিং অর্থনৈতিক অর্জনের মধ্য দিয়ে ঘটাবার, বাস্তবে করে দেখানোর মত কাজ। এটা প্রপাগান্ডা চালিয়ে অর্জন করার মত কাজ নয়। এছাড়া শকুনের বদ-দোয়ার কারণে বেশি বেশি করে গরু মরে ভাগাড়ে আসে না। এটা তো জানা পুরান প্রবাদের কথা। ফলে বদ-দোয়া দিয়ে, কামনা করে, প্রতিহিংসা দিয়ে আমেরিকান অর্থনীতিকে দুর্বল করা যাবে না। হবে না।
এছাড়া বারবার যে কথা বলি, কোল্ড ওয়ার (১৯৫০-৯০) কালের চল্লিশ বছরে একটা বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবার সম্ভাবনা যত বেশি ছিল সে তুলনায় এখন বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা ঠিক এর উলটা, অর্থাৎ আরও কম। এর মূল কারণ সেকালে বিবদমান পক্ষ রাশিয়া-আমেরিকার মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যে পুঁজি, পণ্য বা ভাবের লেনদেন বিনিময় তেমন কিছু ছিলনা বললেই চলে। দুটা দুই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন লেনদেনহীন অর্থনীতি ছিল। সে তুলনায় আজ রাশিয়া, চীন ও আমেরিকাসহ সবাই একই গ্লোবাল পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতির বিভিন্ন অংশ; পরস্পর পরস্পরের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যে পুঁজি, পণ্য বা ভাব ইত্যাদির লেনদেনে আষ্টেপৃষ্ঠে সংশ্লিষ্ট ও একে অন্যের উপর সরাসরি নির্ভরশীল। ফলে চীনের বোমায় আমেরিকা ধবংস হয়ে গেলে সেটাতে চীনেরই ক্ষতি হয় এবং তা আমেরিকার বোমার বেলায়ও ভাইস ভারসা। অতএব একটা বিশ্বযুদ্ধ ঘটে যাবার সম্ভাবনা এখন আগের মানে কোল্ড ওয়ার সময়ের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে কম। অবশ্য এর অর্থ আবার এমন নয় যে বিশ্বযুদ্ধ ঘটতেই পারে না। ঠিক এই জিনিষটাই প্রতিফলিত হয়েছে এই সপ্তাহে তুরস্কের ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় রাশিয়ান বোমারু বিমান ভুপাতিত হবার পরের পরিস্থিতি। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য হওয়াতে ন্যাটোর ম্যান্ডেটের বাধ্যবাধকতায় বাকী সদস্য সারা পশ্চিমাদেশ তুরস্কের পক্ষে দাড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু সাথে যোগ করা এক নিঃশ্বাসে বলা তাদের পরের বাক্যই হল – তুরস্ক ও রাশিয়া যেন আর উত্তেজনা না বাড়ার দিকে খেয়াল রাখে; এছাড়া আইএসের বিরুদ্ধে সকলের সমন্বয় গড়ে তোলা এখনকার করণীয়। ওদিকে মানবজমিনের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, যেসব বিশ্লেষণ মেনে সে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয় ছড়াচ্ছে তা সবই রাশিয়ান উৎসের বয়ান। যা এমনকি পারমানবিক যুদ্ধ বাধাবার ইঙ্গিত হুমকিতে ভরপুর। আসলে এটা রাশিয়ার এক নতুন যুদ্ধবিমান হারিয়ে এবার ইজ্জত ইমেজ রক্ষার ততপরতা মাত্র।
আর আমরা? অনেক তো হল, এবার আমাদের পরিপক্ক হওয়া দরকার। একালে রাশিয়ান বেকুবি, রাষ্ট্রের মাফিয়াগিরি আর রাশিয়ান স্বার্থের প্রপাগান্ডা দূরে রেখে নিজ হুশ জ্ঞানে বাস্তবতা বুঝা ও ব্যাখ্যা করতে পারার তাকত অর্জন দরকার। আমাদের সে তৌফিক হোক এই কামনায় -।
[লেখাটা আর আগে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ২৮ নভেম্বর সংখ্যায় এবং শেষের অংশ সাপ্তাহিক দেশকাল পত্রিকায় ০৩ ডিসেম্বর সংখ্যায় এর আগে ছাপা হয়েছিল। এখানে তা নতুন করে আরও সংযোজন ও এডিট করে সর্বশেষ এডিটেড ভার্সান হিসাবে এখানে ছাপা হল।]