আমেরিকার চোখে ‘ফরাসি রাজনৈতিক কালচার’ দায়ী
গৌতম দাস
২৯ এপ্রিল ২০১৬, শুক্রবার, ১২:০০ রাত
এক তামাশার স্টাডি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে সম্প্রতি ফরেন এফেয়ার্স পত্রিকায়। দ্বিমাসিক এই পত্রিকা ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’ আমেরিকান সমাজে খুবই মান্যগণ্য পত্রিকা মনে করা হয়। সেখানে এক গবেষণা রিপোর্টের ফলাফল নিয়ে একটা লেখা ছাপা হয়েছে গত ২৪ মার্চ, ২০১৬। পশ্চিমা সমাজের নেতা বা যারা পশ্চিমা রাষ্ট্র চালান অথবা নীতিনির্ধারক, এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চিন্তার অলিগলি মতিগতি পাঠের জন্য জরুরি হচ্ছে এই ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’ জার্নাল, এমনটা মনে করা হয়।
ফরেন অ্যাফেয়ার্সে চলতি এই লেখার শিরোনাম, ‘দুনিয়াজুড়ে সুন্নি জঙ্গিতত্ত্বকে ব্যাখ্যা করে এমন ফরাসি সংযোগ-সূত্র’। ইংরেজিতে ‘The French Connection Explaining Sunni Militancy Around the World”। এই লেখার সারকথা হল, অন্য সব কিছুর চেয়ে ‘ফরাসি কালচার’- এর মধ্যে বিচুটি-মার্কা জলুনির এমন আলাদা কিছু আছে যে জন্য অন্য দেশের চেয়ে ‘ফরাসি ভাষাভাষী’ দেশে ‘সুন্নি মিলিট্যান্সি’ বেশি। কথাগুলো সাম্প্রতিককালে ইউরোপের দুই রাজধানী প্যারিস (ফ্রান্স) ও ব্রাসেলসে (বেলজিয়াম) কয়েক মাসের ব্যবধানে পরপর আইএস হামলার কথা স্মরণ করেই বলা হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে দুনিয়ায় ২০০১ সালের পর থেকে আলকায়েদা ফেনোমেনার আবির্ভাব ঘটা, ৯/১১ টুইন টাওয়ারে হামলা, সেই থেকে আমেরিকান “ওয়ার অন টেরর” নীতি অনুসরণ করা ও তার ভয়াবহ ফলাফলে এলোমেলো হয়ে যাওয়া দুনিয়া ইত্যাদি এই ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে আমেরিকার যেন কোনই হাত নাই এমন একটা ভাব, সাজেশন হাজির করা হয়েছে। তামশা করে বলা হয়েছে, আমেরিকার এসব “মহান অবদান” নয়, মনোভাব দৃষ্টিভঙ্গী নীতি নয় দুনিয়াজুড়ে আজ যাকে সন্ত্রাসবাদ বলছে, ‘সুন্নি মিলিট্যান্সি’ বলছে এর জন্য ফরাসী ভাষাভাষী রাষ্ট্রগুলো দায়ী। একেবারে গবেষণা করে নাকি তারা এই প্রমাণ পেয়েছে। নায়ক হয়ে ঘটনা ঘটিয়ে এরপর সামলাতে না পেরে এখন হাত ধুয়ে ফেলার জন্য সত্যিই এটা আমেরিকার দেখানো এ’এক চতুর রাস্তা!
বলা বাহুল্য, এটা সুই আর চালুনির কুতর্কের মতো যারা পরস্পর পরস্পরকে পেছনে ফুটা থাকার কারণে খোঁটা দেয়- সে জাতীয়। আমেরিকা ফরাসি ভাষাভাষীদের পেছনে ফুটা থাকার জন্য অভিযোগ করছে। যাহোক, এই অর্থে এই পত্রিকার রিপোর্ট বেশ তামাশার তা বলতেই হবে।
এখানে আগেই বলে নেয়া হয়েছে একটা ‘এম্পেরিক্যাল স্টাডি’ মানে অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণা উপর ভিত্তি করে তারা এসব কথা বলছেন। অর্থাৎ সংখ্যাবাচক প্রাপ্ত তথ্য থেকে খোজাখুজিতে পাওয়া ধারণাকে ব্যাখ্যা করে তারা কথাগুলো বলছে। গত ২০০১ সাল থেকে আলকায়েদা ফেনোমেনার দুনিয়ায় হাজির হওয়া পর থেকে এর সর্বশেষ প্রভাবশালী রূপ হলো আইএস (আইএসআইএল)- এর খলিফা রাষ্ট্র ও তৎপরতা। আলকায়েদার সাথে আইএসের মধ্যে অনেক ফারাক আছে সেগুলোর মধ্যে অন্তত একটা ভিন্নতা হল, পশ্চিমা দেশ বিশেষত ইউরোপ থেকে তরুণদের আইএস এ যোগদানের হিড়িক। আর সেই সাথে ‘কেন তরুণেরা কিসে আকৃষ্ট হয়ে এই যুদ্ধে যাচ্ছে’ এ নিয়ে গবেষণা স্টাডিরও পাল্লা দিয়ে কমতি দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সেই স্টাডির তথ্য থেকে সব দোষ ফরাসি ভাষাভাষীদের বা যারা ফরাসী ভাষায় কথা বলে তাদের – এ কথা বলে আমেরিকার দায় এড়িয়ে এখন কেটে পড়ার তাল করছে। তবে আর যাই হোক এ দেখে অন্তত আমাদের মেতে ওঠার কোনো কারণ নেই।
এখানে এই স্টাডির মূল বিষয়টি কী ছিল তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রিপোর্টটা বলছে, “ইউরোপের কোন দেশ থেকে কতজন বিদেশী যোদ্ধা হিসেবে আইএসে যোগ দিতে গেছে আর সে দেশ কয়টি আইএস হামলা খেয়েছে এই দুই তথ্য থেকে ওই দেশে সুন্নি রেডিক্যাল ও সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার মাত্রাকে সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে এমন তত্ত্বটা কী’হতে পারে তা খোঁজ করা। এভাবে, খুঁজতে গিয়ে আমরা যা পেলাম তাতে আমরাই আশ্চর্যান্বিত। বিশেষত যখন আমরা বিদেশী যোদ্ধাদের রেডিক্যাল হয়ে ওঠার প্রসঙ্গে গেলাম। দেখা গেল, বিদেশী যোদ্ধাদের রেডিক্যাল হয়ে ওঠার কারণ একটা দেশের সম্পদ কেমন তা নয়। এমনকি এর নাগরিকেরা কেমন কী মাত্রায় শিক্ষিত অথবা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তাও নয়। বরং আমরা দেখলাম বিদেশী যোদ্ধাদের রেডিক্যাল হয়ে ওঠা কিসের ওপর নির্ভর করে এ বিষয়টিকে যা সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে তা হল যে, ওই দেশটা ফরাসি ভাষাভাষী কি না”। এখানে ফরাসী ভাষাভাষী বলতে যেমন ওই রাষ্ট্রের ঘোষিত জাতীয় ভাষা (ন্যাশনাল ল্যাংগুয়েজ) আগে অথবা এখন ফরাসি কি না – সেটাকে ভিত্তি হিসাবে ধরা হয়েছে। কিন্তু “অদ্ভুত ব্যাপারটা দেখা গেল, সবচেয়ে বেশি সুন্নি রেডিক্যাল হয়ে উঠেছে এমন পাঁচটা দেশের মধ্যে চারটাই ফ্রাঙ্কোফোন, মানে ফরাসি ভাষাভাষী, যার মধ্যে আবার ইউরোপের প্রধান এমন দুই দেশ হল – ফ্রান্স ও বেলজিয়াম”।
ইংরেজি ভাষাভাষী যুক্তরাজ্য যেমন ফরাসি ভাষাভাষী বেলজিয়ামের চেয়ে অনেক বেশি বিদেশী যোদ্ধার জন্ম দিয়েছে। এবং এটা সৌদি যোদ্ধাদের চেয়েও সংখ্যায় কয়েক হাজার বেশি। কিন্তু এভাবে সংখ্যাগুলোর দিকে তাকালে তা বিভ্রান্তিতে ফেলবে। বরং আমরা যদি কোনো দেশের জন্ম দেয়া বিদেশী যোদ্ধাদের সংখ্যা ওই দেশের মোট মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা কত ভাগÑ এ দিক থেকে দেখি তাহলে আসল ছবিটা আমরা পাবো। প্রত্যেক মুসলিম বাসিন্দাপিছু কতজন বিদেশী যোদ্ধা জন্মেছে এই হিসাবের বিচারে বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য বা সৌদি আরবের চেয়েও অনেক বেশি বিদেশী যোদ্ধার জন্ম দিয়েছে।
এখন ফরাসি ভাষাভাষী বলতে এখানে ঠিক কী বুঝব বা কী বোঝানো হয়েছে? ফরেন অ্যাফেয়ার্সের লেখা এর জবাব দিচ্ছে। বলছে, ফরাসি ভাষাভাষী বলতে বোঝানো হচ্ছে, “ফরাসি রাজনৈতিক কালচার”। এরপর ফরাসি রাজনৈতিক কালচার কথাটাকেই আরও ব্যাখ্যা করে দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, “ফরাসি কায়দার সেকুলারিজম ব্রিটিশ কায়দার সেকুলারিজমের চেয়েও বড় আগ্রাসী। যেমন- ইউরোপের মাত্র দু’টি দেশ (ফ্রান্স ও বেলজিয়াম) পাবলিক স্কুলে বোরখা নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া ইউরোপের বিচারে এরাই সেই দুই রাষ্ট্র যেখানে গণতন্ত্রের মান বা মাত্রা সবার নীচে”।
এককথায় বললে, ফরেন অ্যাফেয়ার্সের বক্তব্যের মূল পয়েন্টটা হল ফ্রান্সের সেকুলারিজম ব্রিটিশদের সেকুলারিজমের চেয়েও খারাপ। এটা ছাড়া বাকি সব কথাই চর্বিত চর্বণ। আবার খুব কৌশলে আমেরিকার এই জার্নাল ফরাসিদের তুলনা করেছে আর অন্য ইউরোপীয় দেশের সাথে। সচেতনে নিজেদের, মানে আমেরিকার সাথে তুলনা করেনি।
কিন্তু আসল কথা হল,বিষয়টা কোনভাবেই স্রেফ ব্রিটিশ আর ফরাসিদের মধ্যকার ভালো বা খারাপ সেকুলারিজমের তর্ক নয়। এ প্রসঙ্গটা এর আগে আমার এই সাইটে এক লেখায় এনেছিলাম এই লিঙ্কে যার শিরোনাম ছিল, ‘মাল্টিকালচারালিজম বনাম অ্যাসিমিলিয়েশন’ । বলেছিলাম, ‘মাল্টিকালচারালিজম বলতে ব্রিটিশ বুঝটা হল ব্রিটিশ সমাজটাকে সে নানা কমিউনিটির সহযোগে এক বড় কমিউনিটি হিসেবে রাখতে চায়। কলোনি মাস্টারের দেশ ও সমাজে সবাই যে যার ফেলে আসা নৃতাত্ত্বিক জাত, ধর্মীয়, ভৌগোলিক ইত্যাদি পরিচয় বজায় রেখেই আবার এক বৃহত্তর ব্রিটিশ সমাজে এক ব্রিটিশ পরিচয়ে তবে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে বড় হোক। বিপরীতে ফরাসি পছন্দের অ্যাসিমিলেশন। শুনতে ভালো কিন্তু আসলে এখানে অনেক বেশি বলপ্রয়োগে জবরদস্তির ব্যবহার দেখাক যায়। এভাবে বল ব্যবহার করে সব ধরণের নাগরিক বিশেষ করে “অ-সাদা” সবাইকে বাধ্য করে এক রকম করার প্রচেষ্টা এটা। অর্থাৎ ফরাসি কলোনি মাস্টারের দেশ সমাজে যারা নিজের পুরানা সব কিছু ফেলে এসেছে এমনদের বেলায় তাদের সেসব নৃতাত্ত্বিক জাত, ধর্মীয়, ভৌগোলিক ইত্যাদি পরিচয়ের স্বীকৃতি নেই। সব ভুলে যেতে হবে, বাদ দিতে হবে। এ জন্য বাধ্য করা হবে। কিন্তু এই বাধ্যবাধকতার দিকটা আড়াল করে ‘সুন্দর’ ইউনিফর্মভাবে এক রকম করার নামে (ইংরেজি সিমিলার বা এককরণ থেকে অ্যাসিমিলিয়েশন) আসলে জবরদস্তিতে সবাইকে ফরাসি হতে, ফরাসি কালচারই একমাত্র চর্চার কালচার হতে, করতে বাধ্য করা হয়েছে।
কিন্তু এরপরও ওই লেখায় এই প্রশ্ন সেখানে সেখানে তুলেছিলাম যে, ফরাসিরা ব্রিটিশদের মতো মাল্টিকালচারালিজমের বদলে অ্যাসিমিলিয়েশনের পথ ধরল কেন? এর ব্যাখ্যায় বলেছিলাম, ঘটনাচক্রে ফরাসিদের ভাগে যেসব কলোনি পেয়েছিল সেই সব জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই মুসলমান জনসংখ্যার। কলোনি-পূর্ব থেকেই এরা তাই, বিশেষত আলজেরিয়া থেকে পশ্চিম আফ্রিকা পুরোটাই, মুসলমান। আর এ অঞ্চল থেকেই মাস্টার দেশ ফ্রান্স নিজ দেশের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক সে এনেছিল। েই বাস্তবতার কারণে, এরপর ফ্রান্স মাল্টিকালচারের লাইনে থাকলে আফ্রিকার মুসলমানদের ধর্মসহ কালচারাল বৈশিষ্ট্য জিইয়ে এবং ডমিনেটিং থেকে যেতে দিতে হত। এটাকে তারা রিস্কি কাজ মনে করেছিল। বিশেষত নিজ দেশেযেখানে সাদা চামড়ার জনসংখ্যা কমতির দিকে, আর কালো এবং মুসলমান আফ্রিকান জনসংখ্যা বাড়তির। তাই নিজ কালচারাল ডমিনেন্সির বজায় অটুট রাখার তাগিদে অ্যাসিমিলিয়েশনের লাইন বা জবরদস্তি ফরাসি কালচার চাপিয়ে রাখাটাই ফরাসিরা উত্তম মনে করেছিল। আর সেটাকেই ফরেন এফেয়ার্স এই রচনায় ব্রিটিশ সেকুলারিজমের থেকে ফরাসিদেরটা ভিন্ন বলে চেনাতে চেয়েছে।
এখানে আর একটা মৌলিক তথ্য মনে করিয়ে দেয়া যেতে পারে। বুশের ‘ওয়ার অন টেরর’-এর নির্বিচার হত্যা ও সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল ২০০১ সালে আফগানিস্তানে হামলা দিয়ে এবং এই হামলার পক্ষে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও সম্মতি পকেটে রেখে এবং সেই সুত্রে একাট্টা সারা ইউরোপকে পাশে নিয়ে। কিন্তু পরে ইরাক হামলার সময় ২০০৩ সালে ঘটনা আর একই রকম থাকেনি। ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের হাতে মানব বিধ্বংসী মারণাস্ত্র (ডব্লিউএমডি) আছে এই মিথ্যা ও অপ্রমাণিত অভিযোগ তুলে এই হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু সেই জাতিসঙ্ঘের চোখেই এবার বুশ-ব্লেয়ারের জোট ইরাকে দখলদার বাহিনী বলে পরিচিত হয়েছিল। কারণ এই হামলার পক্ষে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও সম্মতি বুশ-ব্লেয়ার জোগাড় করতে পারেনি। বরং বুশ-ব্লেয়ারের বিপক্ষে সোচ্চার থেকে নির্ধারক ভোট দিয়েছিল ফরাসি ও জার্মানি। সেকারণে, পরে ইরাক হামলায় ফরাসিরা অংশগ্রহণ করেনি। তবে অংশগ্রহণ করেনি সম্ভবত দুটা জিনিস চিন্তা করে। এক, ব্রিটিশদের সাথে ফরাসিদের বহু প্রচলিত পুরনো এক প্রতিযোগিতা হল কে কত বেশি আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠ তা হওয়া ও দেখানো। আর এ ক্ষেত্রে ব্রিটিশরা বেশির ভাগ সময়ে জিতেছে। ফলে এটাকে ফ্রান্সের টনি ব্লেয়ারের উল্টো অবস্থান নিয়ে আমেরিকান তোয়াজ পাওয়ার চেষ্টা হিসাবে অনেকে মনে করে। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, এভাবে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে গেলে এই যাওয়ার মানে হবে মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা আর তা থেকে নিজ দেশের অ-সাদা চামড়া ও মুসলমান জনগোষ্ঠীর সম্ভাব্য রোষের মধ্যে পড়া। এটা ফ্রান্স এড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু পরের পাঁচ বছরের মধ্যে ফ্রান্স বুঝে যায় যে, ইরাকের তেলের খনি বা অবকাঠামো প্রজেক্ট আর ফরাসিদের ভাগে কখনও কিছুই আসবে না। তাই অবস্থান বদল করে ২০০৮ সালের পর থেকে আবার ফরাসি সৈন্য ন্যাটো নামের আড়ালে অংশগ্রহণ করেছিল। আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওঁলাদের আমলে ফ্রান্স আমেরিকান সক্ষমতার ঘাটতি মেটাতে একাই মালিতে ‘ইসলামি জঙ্গি’দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। সুবিধা করতে না পেরে তা এখন আছে জাতিসঙ্ঘ বাহিনী নামের আড়ালে। যেন ইরাক হামলায় ফ্রান্সর অংশগ্রহণ না করাটা পুষিয়ে দিতে এার সে একাই মালিতে লড়তে গিয়েছিল। গাদ্দাফির পতন ঘটিয়ে এই ইসলামি গ্রুপটাই পরে মালিতে গিয়ে নিজেদের আইএস বলে পরিচিতি দেয়। আর মূল কথা হল, পরবর্তিতে মালিতে ও সিরিয়ায় আইএস বেধরকভাবে ফরাসি বোমা হামলা শিকার হয়েছিল। তাই ঐ আক্রমণের প্রতিক্রিয়াতেই ফরাসিরা প্যারিসে আইএসের হামলার শিকার হয়েছিল। তাহলে সার কথায় এটা সত্য যে, ইউরোপের মাত্র দু’টি দেশ ফ্রান্স ও বেলজিয়াম পাবলিক স্কুলে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু সেটা ফরাসি সেকুলারিজম ব্রিটিশের সেকুলারিজম থেকে বেশি আগ্রাসী, কারণটা এমন নয়। বরং তা অ্যাসিমিলিয়েশনের লাইনের জন্য, বা জবরদস্তি ফরাসি কালচার চাপিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে।
goutamdas1958@hotmail.com
[লেখাটা এর আগে দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় গত ১০ এপ্রিল ২০১৬ ছাপা হয়েছিল। সেই লেখা আরও এডিট সংযোজন করে আবার ফাইনাল ভার্সান হিসাবে ছাপা হল। ]