মধ্যপ্রাচ্য এখন প্রিন্সদের কর্তৃত্বে, রাজতন্ত্রের সমাপ্তি কি আসন্ন


মধ্যপ্রাচ্য এখন প্রিন্সদের কর্তৃত্বে, রাজতন্ত্রের সমাপ্তি কী আসন্ন

গৌতম দাস

০৮ আগষ্ট ২০১৭

http://wp.me/p1sCvy-2h3

 

ইউরোপের রাজতন্ত্রের (monarchy) শেষ যুগের দিকের এক ঘটনা হল, প্রিন্সরা ক্ষমতা ও রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল, বিশেষ করে রেনেসাঁস (1350-1700) যুগের প্রিন্সেরা। বলা বাহুল্য রেনেসাঁস পিতার চেয়ে পুত্রকেই বেশি প্রভাবিত করবে। তাই পুত্রের সঙ্গে পিতার প্রায়শ তাদের দৃষ্টিভঙ্গীর ভিন্নতার কারণ  অথবা তাঁরা ‘ভাল বুঝে’ বলে অনেক মুরব্বিরা জায়গা ছেঁড়ে দেয়া – এসব থেকেই তারা নতুন ভিত্তির ক্ষমতা তৈরি করতে শুরু করেছিল। ইউরোপের রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হলঃ বিখ্যাত ‘ওয়েষ্টফেলিয়া চুক্তি ১৬৪৮’;  যা সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে প্রিন্সদের এক বড় ইতিবাচক ভুমিকা ছিল।  যদিও এই চুক্তি পরে রাজতন্ত্রের অবসানেই বেশি ভুমিকা রেখেছিল। আর প্রিন্সরা রেনেসাঁসের সমর্থক হয়েও রাজতন্ত্র টিকাতে পারে নাই, বিলুপ্তই হয়ে গিয়েছিল। আর একালের মধ্যপ্রাচ্য কোন রেনেসাঁসের কাল না হলেও, গুরুত্বপুর্ণ হল তারা পশ্চিমের “ওয়ার অন টেররের” কালে পড়েছে। তাই একালে মধ্যপ্রাচ্যের প্রিন্সরা তাদের সক্ষমতা যার যাই থাকুক রাজনীতি ও ক্ষমতা বিষয়ে তারা এখন খুবই সক্রিয়।  তাদের এই সক্রিয়তা কী শেষ পর্যন্ত আসলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রের অবসানের ইঙ্গিত বয়ে নিয়ে আসছে? এমনই কিছু বিষয় পরীক্ষা করব এখানে।

সৌদি আরবের বর্তমান বাদশা হলেন সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ, সংক্ষেপে সালমান। আর গত ২০ জুন ২০১৭ সালের আগে পর্যন্ত তাঁর উত্তরসুরি বাদশা হিসাবে ঘোষিত ক্রাউন প্রিন্স ছিলেন মোহম্মদ বিন নায়েফ। কিন্তু গত ২১ জুন সকালে সৌদি আরবসহ সারা দুনিয়া জানতে পারে যে উত্তরসুরি বাদশা হিসাবে ক্রাউন প্রিন্সের নাম বদল করা হয়েছে।  আগের ঘোষিত ক্রাউন প্রিন্স  মোহম্মদ বিন নায়েফ ছিলেন বাদশা সালমানের ভাইয়ের ছেলে। তার বদলে এখন উত্তরসুরি ক্রাউন প্রিন্স হয়েছেন মাত্র ৩১ বছর বয়সের মোহম্মদ বিল সালমান, (এখন থেকে এখানে সংক্ষেপে মোহম্মদ লিখা হবে), যিনি বর্তমান বাদশা সালমান এর আপন বড় ছেলে। এমনিতেই তিনি আগে (২০১৫ সালে বাদশা সালমান ক্ষমতাসীন হবাব সময় থেকেই) থেকেই ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। এবং একই সঙ্গে তিনি ক্ষমতাবান সৌদি ইকনমিক কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা যে সংগঠনের প্রধান কাজ হল অধীনস্থ ‘সৌদি আরামকো’ দেখাশুনা করা। সৌদি আরবের সব তেলের মালিকানা যে রাজকীয় কোম্পানীর অধীনে তার নাম ‘সৌদি আরামকো’। সৌদি ট্রাডিশন অনুসারে চলতি বাদশা জীবিত থাকতেই, তিনি মারা গেলে পরের  বাদশা কে হবেন সেই, উত্তরসুরির নাম আগেই ঘোষিত করা থাকে। তিনিই ‘ক্রাউন প্রিন্স’ নামে ভুষিত হন। সে হিসাবে নায়েফের নাম ক্রাউন প্রিন্স হিসাবে ঘোষিতই ছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে মধ্য টার্মে নতুন উত্তরসুরি হিসাবে বড় ছেলে মোহম্মদ বিন সালমান বা মোহম্মদ এর নাম ঘোষিত হল।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এটা কী একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা, না কী আসলে এটা একটা প্রাসাদ আভ্যন্তরীণ, রক্তপাতহীন ক্যু। কারণ এই ঘটনার সাতদিন পর ২৮ জুন আমেরিকার নিউ ইয়র্ক টাইমস এক রিপোর্ট প্রকাশ করে যে এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। সেখানে বলা হয় ঐ ক্রাউন প্রিন্সের নাম বদলের পর থেকেই প্রিন্স নায়েফকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। প্রাসাদ থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না, ভিতরেরও তার নড়াচড়া সীমিত। টাইমসে এই খবরের উৎস হিসাবে বলা হয়েছিল রাজপরিবারের সাথে আগের বা বর্তমান আমেরিকান প্রশাসনের সম্পর্ক বা বন্ধুত্ত্ব আছে এমন চারজন আমেরিকান অফিসার এদের কাছ থেকে তারা পেয়েছেন। এই খবরের তিন সপ্তাহ পরে ১৮ জুলাই, নিউ ইয়র্ক টাইমস আবার আরও বিস্তারিত এবং খোলাখুলি রিপোর্ট করে জানায় যে ওটা আসলে এক রক্তপাতহীন ক্যু ছিল। ঐ খবরের শিরোনাম ছিল, “প্রতিদ্বন্দ্বিকে সরানোর জন্য সৌদি বাদশার ছেলের ষড়যন্ত্রের প্লট”। কীভাবে জোর করে ক্রাউন প্রিন্স নায়েফের (নায়েফ ও মোহম্মদ পরস্পর কাজিন) পদবি কেড়ে নেওয়া মেনে নিতে নাইফকে বাধ্য করা হয়, কেন তিনি চাপের মুখে রাজি হয়েছিলেন সে রাতের দীর্ঘ ও বিস্তারিত বর্ণনাও সেখানে দেয়া হয়।

কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা নিউ ইয়র্ক টাইমসের ঐ রিপোর্টে সিআইএর প্রসঙ্গ প্রথম আসে; পাঠককে জানানো হয় যে,এই পরিবর্তনে সিআইএ ‘খুবই অখুশি’। কেন? এর অনেক কারণ। তবে সেসব ঘটনার মূল প্রসঙ্গ হল ‘সন্ত্রাসবাদ’; অর্থাৎ আমেরিকা সন্ত্রাসবাদ বলতে যা বুঝে তাই। আমেরিকা ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের শুরু সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে। তবে সেসময় সম্পর্কের ক্ষেত্র হয়েছিল জ্বালানি তেল (মানে আমেরিকা তেলের ভোক্তা আর সৌদিরা এর সরবরাহকারী), যেটা এখন আর তেমন ইস্যু নয়। কারণ মূলত আমেরিকার নিজেরই বিকল্প তেলের (fracking shale oil) উৎস পাওয়া গেছে প্রচুর। এ ছাড়া, গ্লোবাল ইকোনমিতে তেলের চাহিদা মারাত্মকভাবে পড়ে গেছে এবং দাম কমে গেছে। কিন্তু আমেরিকা ও সৌদি আরবের  সম্পর্কের মধ্যে আগের মতই প্রায় সমান গুরুত্বের জায়গা এখন  নিয়ে আছে, টেররিজম বা সন্ত্রাসবাদ। এই ইস্যুতে বিশেষ করে নাইন-ইলেভেনের পর থেকে, আমেরিকার একাজে খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করার দরকার হয়ে উঠেছে সৌদি আরবকে। অপসারিত প্রিন্স নায়েফ অবশ্য ছিলেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। আর তা থাকলেও, আমেরিকার কাছে তিনি ছিলেন খুব গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু।  মধ্যপ্রাচ্য কাউন্টার-টেররিজমে আমেরিকার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল ব্যক্তিত্ব, আমেরিকার ভাষায় মূল ‘কনট্রাক্ট’ ছিলেন তিনি। কাউন্টার-টেররিজম মানে যাকে টেররিজম বলা হচ্ছে, ঠিক তার কায়দায় পাল্টা টেররাইজ বা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সব ভণ্ডুল করে দেয়া।  নায়েফকে আমেরিকা বহুবার কাউন্টার টেররিজম তৎপরতা প্রসঙ্গে নিজ দেশে নিয়ে ট্রেনিং দিয়ে এনেছে। আর শুধু তাই নয়, শুধু সৌদি আরবেও নয়, সারা মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার নানাবিধ কর্ম-পরিকল্পনায় আমেরিকা তাকে অংশীদার করে রেখেছিল, একসাথে কাজ করেছিল। সারকথায়, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কাউন্টার-টেররিজম প্রোগ্রামের মূল ‘কনট্রাক্ট’ ছিলেন তিনি। নায়েফকে আমেরিকা এভাবেই গড়ে তুলেছিল। ফলে সেই নায়েফকে এখন সরিয়ে দেয়াতে সিআইএ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে কথা তারা হোয়াইট হাউজে রিপোর্ট করে বলেছে বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট আমাদের জানিয়েছে। এছাড়া আরও আছে।

টাইমসের বর্ণনা অনুযায়ী নিউ ইয়র্কের একজন আমেরিকান অফিসিয়াল ও সৌদিরাজের একজন পরামর্শকের মতে, কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বে যে  অবরোধ আরোপ করা হয়েছে, প্রিন্স নায়েফ আসলে  এর বিরোধী ছিলেন। এটাও তাঁকে অপসারণের একটা কারণ। এ ছাড়া সিআইএ’র সংক্ষুব্ধ হওয়ার আর একটা বড় কারণ হল, নায়েফের সাথে তার অনুগত বহু সৌদি সিভিল এবং সামরিক অফিসার যাদের কাউন্টার টেররিজমের ট্রেনিং দিয়ে আমেরিকা একটা ওয়ার্কিং গ্রুপ বানিয়েছিল, নায়েফের অপসারণের সাথে সাথে তাদেরকেও চাকরিচ্যুত বা বন্দী করে রাখা হয়েছে। যেমন, নায়েফের খুবই ঘনিষ্ঠ সামরিক জেনারেল আবদুল আজিজ আলহুয়াইরিনিও বন্দী হয়ে আছেন।

এ তো গেল আমেরিকার তরফে খবর। কোল্ড ওয়ারের আমল থেকে সোভিয়েত ইনটেলিজেন্স সিআইএ এর পালটা দুনিয়ার সব জায়গাতেই ছড়িয়ে ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথে সেই অবকাঠামোর অনেকটাই ভেঙে গিয়েছিল, উত্তরসূরি রাশিয়া এর পরিচালনা খরচ আর জোগাতে না পারার কারণে। কিন্তু পুতিনের আমলে সেগুলো আবার খাড়া করা হয়েছে, আর পুতিন সেগুলোকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করেছেন। অথবা অন্যের কাছে নানা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ইনটেলিজেন্স বিক্রি অথবা অন্য রাষ্ট্রের সাথে শেয়ার করে, অনেক সময় নিজ বহু স্বার্থ উদ্ধার করেছেন। যেমন গত বছর তুরস্কে, ‘গুলেন পার্টি’ আমেরিকায় ও তুরস্কে বসে এরদোগানের বিরুদ্ধে কী কী ষড়যন্ত্র করেছিল, আর আমেরিকারইবা তাতে কী ভূমিকা ছিল সেই সব ইনটেলিজেন্স পুতিন এরদোগানকে জানিয়েছিলেন। এতে করে এরদোগানের আস্থা অর্জন করে পুতিন তুরস্কের সাথে রাশিয়ার আগে ভেঙে থেকে যাওয়া বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরায় চালু করেছিলেন। তবে পুতিনের রাশিয়ার সংগৃহীত ইনটেলিজেন্স বিক্রি বা শেয়ার বহুভাবেই করা হয়ে থাকে, এমনকি অনেক সময় তা পুতিনের প্রপাগান্ডায়ও ব্যবহার করা হয় ও হয়েছে। আবার অনেক সময় কোন ইস্যুতে এক পাল্টা মিডিয়া রিপোর্ট করে দেয়া হয়, বাজারে ফ্যাক্টস জানিয়ে দেয়ার জন্য। এমন এক ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক, আমেরিকাবিরোধী এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, কলাম লেখক হলেন পেপ এস্কোবার। তবে তিনি রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে অনেক সময় ভাষ্য তৈরি করেন। যদিও এতে আমাদের মত পাঠকের সুবিধা হল, যেহেতু রাশিয়ান ইনটেলিজেন্সে ঘনিষ্ঠতা থাকায় তিনি নিজে সংগৃহীত ইনটেলিজেন্স পেতে বা দেখতে তার একসেস আছে, তিনি জানতে পারেন আর তা তিনি লেখায় শেয়ার করেন, ফলে তার লেখা পাঠ করায় আমরা মেন-স্ট্রিমের বিপরীত বহু তথ্য ও ভাষ্য পেয়ে থাকি।

সৌদি আরবের এ ঘটনায় এস্কোবার দুটো রিপোর্ট লিখেছেন। একটি রাশিয়ান স্পুটনিক পত্রিকা, অন্যটি সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত সিরিয়াস পত্রিকা ‘এশিয়া টাইমস’-এ। সৌদি আরবের ইস্যুতে প্রায় একই ধরনের রিপোর্ট তিনি লিখেছেন দুজায়গাতেই;কথিত ‘প্রাসাদ ক্যু’র রদবদলের চার দিনের মাথায় ২৪ জুন স্পুটনিকে। আর ‘এশিয়ান টাইমসে’ লিখেছিলেন প্রায় এক মাস পরে ২০ জুলাই

ওদিকে প্রকাশিত বিদেশি প্রায় সব মিডিয়া ভাষ্যে নতুন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান চিত্রিত হয়েছেন একজন কম বয়সী, বেপরোয়া, দায়িত্বজ্ঞানহীন, উচ্চাভিলাষী, হামবড়াভাবের মানুষ ইত্যাদি হিসেবে। এসবের ভিতর তাদের মূল অভিযোগ হল,  তিনি কাজের গুরুত্ব ও দায়দায়িত্ব না বুঝেই সব কাজে মধ্যমণি থাকতে চান। সেদিকে ইঙ্গিত করে তাই,  গ্লোবাল বিনিয়োগ জগতের গুরুত্বপূর্ণ টিভি ও অনলাইন মিডিয়া ‘ব্লুমবার্গ’(Bloomberg) তার নাম দিয়েছে ‘মি. এভরিথিং’

এস্কোবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে দাবি করেছেন যে, সিআইএ নায়েফের অপসারণে প্রচণ্ড অসন্তুষ্ট। কারণ তারা মনে করে নতুন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ নিজেই ‘টেররিজম স্পন্সর’ করেন। দাবি করা হচ্ছে আল-নুসরা সংগঠনের সাথে তিনি সম্পর্ক রেখেছেন। আর এসব কারণে,গত এপ্রিল ২০১৪ সালে টেররিজম ইস্যুতে আমেরিকার সিআইএ সৌদি আরব ও আমিরাতের (বিশেষ করে আবুধাবির প্রিন্স জায়েদ, তিনি মোহাম্মদের মেন্টর/বড়ভাই বলে কথিত আছে) ক্ষমতাসীনদের ওপর প্রচণ্ড নাখোস হয়ে পড়েছিল। এমনকি তাদের অপসারণের কথা পর্যন্ত ভেবেছিল। পরে এক আপস ফর্মুলায় সাব্যস্ত হয় যে, বাদশা বদল করে নায়েফকে ক্ষমতায় এনে এর সমাপ্তি টানা হবে। এস্কোবার তার ইনটেলিজেন্স সোর্সকে উদ্ধৃত করে দাবি করেছেন, ওই ফর্মুলা সাব্যস্ত হওয়ার আগে আমেরিকা বা সিআইএ একপর্যায়ে সৌদি বাদশাহ’র বিরুদ্ধে নাকি আমেরিকান সৈন্য পাঠানোর কথাও ভেবেছিল। এটা ভাবার কারণ আছে যে, ওই ফর্মুলাটাই প্রিন্স মোহাম্মদ ও তার বাবা বাদশাহ সালমানকে আরো মরিয়া হতে উৎসাহিত করেছিল। ইতোমধ্যে খবর বেরিয়েছে, প্রিন্স মোহাম্মদ ও আবুধাবির প্রিন্স জায়েদ মিলে ভাড়াটে আমেরিকান সৈন্য (ব্ল্যাকওয়াটার) দিয়ে কাতারের তরুণ আমির শেখ তামিম আল থানিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এটা সিআইএ নাকি টের পেয়ে ভণ্ডুল করে দিতে সমর্থ হয়। কিন্তু তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রিন্স মোহাম্মদ ও বাদশাহ সালমান সিআইএ ’র পছন্দের হবু বাদশা নায়েফকেই সরিয়ে ফেলে দিতে সক্ষম হলেন। এটাই হল এস্কোবারের ব্যাখ্যা।

এসব ব্যাখ্যা হয়ত সবটা সত্যি নয়,কিন্তু ফেলনাও নয়। নয়। গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের দুই তারিখে জার্মান ইন্টেলিজেন্স এর বরাতে লন্ডন টেলিগ্রাফ এক রিপোর্ট ছেপেছিল।  শিরোনাম ছিল ‘সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলছে’। সেখানে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদের নাম ও ছবিসহ উল্লেখ করে, তাকে এক মহা ‘গ্যাম্বলার’, বিপজ্জনক ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছিল যে, সিরিয়াতে আলকায়েদার সাথে সম্পর্ক রয়েছে তাঁর। সৌদি আরবকে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা আনার জন্য দোষারোপ করা হয়েছিল। এস্কোবার বলছেন, আসলে এই অভিযোগটাই পরে কাতার অবরোধের সময় সৌদি আরব ও অন্যরা কাতারের বিরুদ্ধে তুলেছিল। অথচ  এই অভিযোগের সবটাই আসলে সৌদি বাদশাহ ও বর্তমান ক্রাউন প্রিন্সের বিরুদ্ধে এনেছিল সিআইএ এবং জার্মান ইনটেলিজেন্স।

লেখকঃ রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

[এই লেখাটা এর আগে গত ০৬ আগষ্ট ২০১৭ দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার অনলাইনে (প্রিন্টে পরে দিন) ছাপা হয়েছিল। এছাড়া আর একটা ভার্সান অনলাইন দুরবীন পত্রিকাতেও ০৭ আগষ্ট ২০১৭ তারিখে ছাপা হয়েছিল।   পরবর্তিতে সে লেখাটাই এখানে বহু তথ্য আপডেট করে দেয়া হয়েছে। আর নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে এখানে ছাপা হল। ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s