নেপালের রাজতন্ত্র ভেঙে দিয়ে ভারতের এখন আপসোস


নেপালের রাজতন্ত্র ভেঙে দিয়ে ভারতের এখন আপসোস

গৌতম দাস

২২ জুলাই ২০১৮, ০০:০৩

https://wp.me/p1sCvy-2sO

Indo-Nepal relations,India's neighbours,Foreign policyPrime Minister Narendra Modi with his Nepali counterpart KP Sharma Oli during delegation level talks in Kathmandu earlier this year(PTI)

তার নাম ব্রক্ষ্ম চেলানি (Brahma Chellaney)। রাষ্ট্র পরিচালনের মূলত নীতি-পলিসি নিয়ে স্টাডি ও গবেষণা করা তার পেশা। আর গুছিয়ে বললে, তিনি স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের অধ্যাপক, বিশেষত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে তার বিশেষজ্ঞ খ্যাতি আছে বলে তিনি দাবি করেন। নয়াদিল্লির “সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ” নামে এক থিঙ্কট্যাঙ্ক পরিচালন করেন তিনি। পশ্চিমের বড় ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোর সাথে তার যোগাযোগ সম্পর্কের কথাও তিনি আমাদের জানিয়ে থাকেন। স্বভাবতই তাকে প্রো-আমেরিকান থিঙ্কট্যাঙ্কের একজন একাডেমিক বলা যায়। যদিও আবার, এক কথায় তার মূল পরিচয় হবে সম্ভবত তিনি এক পাঁড় জাতিবাদী ভারতীয়। তিনি ততটাই পাঁড় যতটা একজন একাডেমিকের জন্য বিপজ্জনক; ফলে যে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া অনুচিত; তবু ততটাই তিনি জাতিবাদী। একাডেমিকেরও চিন্তার সততার কিছু দায় থাকে। ইমোশনের আড়াল নিয়ে তিনি নিজেকে বেচে দিতে পারেন না বা উগ্র জাতিবাদী হয়ে যেতে পারেন না। তবে একাদেমিকের অবশ্যই সুনির্দিষ্ট চিন্তাগত অবস্থান থাকবে, তা কারও সাথে মিলুক আর নাই মিলুক, তিনি নিজের কথাই বলে যাবেন। আইডিয়ালি এমনই হওয়ার কথা। যেমন এমনই এক সুনাম বা ক্রেডেন্সিয়ালের একাডেমিক তিনি! তিনি মনে করেন, নেপালের রাজতন্ত্র ভেঙে দেওয়ার আন্দোলনে সাথ দিয়ে ভারত ভুল করেছে! আজিব ব্যাপারটা হল, এখন আপসোস করে  তিনি কী করে একালে এসে কোনো রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার পক্ষে যুক্তি দিতে পারেন? অথচ তিনি তাই করেছেন!

তার সাম্প্রতিক লেখা এক কলাম, যা গত ৬ জুলাই ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসে ছাপা হয়েছে। সেখানে তিনি নেপালের রাজতন্ত্র ভেঙে দিতে ভারতের অংশগ্রহণ ও ভুমিকা থাকায় এখন আপসোস করেছেন। ঐ লেখার শিরোনাম হল, “India’s mistakes have allowed China to make inroads into Nepal”। তিনি এখন দাবি করছেন, ভারতের ঐ ভুমিকা আসলে ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে।

কেন এই সময়ে তিনি এটা লিখলেন স্বভাবতই সে আপসোসের পটভূমি আছে। তা হল সবাই জানে, ল্যান্ডলক্ড নেপালের সমুদ্রপথে বের হওয়ার কোন যোগ-সুযোগ না ছিল না। আর এই ভৌগোলিক আবদ্ধতার ফলে নেপালের যে অর্থনৈতিক অসুবিধা – সেটাকেই ভারত নিজের সুবিধা হিসেবে এতদিন পুরোপুরি উসুলি নিয়ে গেছে। নেহরুর ভারত ১৯৫০ সাল থেকে নেপালকে এক দাসত্ব চুক্তিতে বেঁধে রেখে একে নিজের পক্ষের সুবিধা হাসিল করে গেছে। এতদিন ভারতের ভেতর দিয়ে ছাড়া নেপালের পক্ষে কোন সমুদ্রের নাগাল পাওয়া তো নয়ই এমনকি সড়ক পথেও বাইরে কোনো দেশে  যাওয়া সম্ভব ছিল না। আর একচেটিয়াভাবে এর ফায়দা তুলে গিয়েছে ভারত-রাষ্ট্র ও এর ব্যবসায়ীরা। ব্যাপারটা ছিল অনেকটা, নেপালে ব্যবসায়ের সুযোগ মানেই তা ভারতের সুযোগ। আর ওদিকে যেটা ভারতে তাদের যে সুযোগ তা তো কেবল ভারতীয়দের জন্য আছেই – এই নীতিতে। যেমন, এখনো ভারতের অনুমতি ছাড়া নেপাল বিদ্যুৎসহ তার কোনো উৎপন্ন পণ্য তৃতীয় দেশে (যেমন বাংলাদেশে) বিক্রি করতে পারে না। আর ভারত তাতে অনুমতি দেয় সাধারণত তা কেবল ভারতীয়দেরই বিনিয়োগ ও ব্যবসা হলে পরেই। অথচ বাংলাদেশের উপর দিয়ে নেয়া ভারতের ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিটকে দেখেন, এখানে ভারত তার কেন্দ্র দিল্লি অথবা কলকাতাসহ যেকোন প্রদেশ থেকে কোন কোন পণ্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত ট্রানজিট হিসেবে উত্তর-পূর্ব ভারতে নিতে পারবে অথবা কোনটা পারবে না তা নিয়ে ভারত আমাদের থেকে কোনো অনুমতিই নেয় নাই। এসবের বালাই-ই নাই।

এবার ভারতের কাছে নেপালের সেই অসহায়, একক সমর্পণের দিন সম্ভবত শেষ হয়ে যাচ্ছে। নেপাল এখন ভারত ছাড়াও আর একটা বিকল্প হিসেবে চীনকে পেতে যাচ্ছে। চীন নেপালকে নিজের ভূমি ব্যবহার করে এবং চীনের বন্দর বা সমুদ্রপথ ব্যবহারের অনুমতি বা ট্রানজিট দিতে সম্মত হয়েছে। এখন এর বিস্তারিত চুক্তি ও প্রটোকল প্রস্তুতের কাজ চলছে, কয়েক মাসের মধ্যে এই ‘ট্রানজিট চুক্তি’ চূড়ান্ত হবে।

ওদিকে, চীন সংলগ্ন নেপাল, অর্থাৎ নেপালের সারা উত্তরের সীমান্ত হল ওপাশে চীনের তিব্বত; এর উঁচু ও শক্ত প্লাটো, পুরাটাই পাহাড়ি উপত্যকা অঞ্চল। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে সরাসরি পণ্যবাহী লং কনটেইনার ট্রেনে চীনের কোনো সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত নেপাল ট্রেন ট্রানজিট পেতে এখন তিব্বত-কাঠমান্ডু এই শেষের কয়েক শত কিলোমিটার রেললাইন পাতা হচ্ছে, যা বাকি আছে। এক কথায় বললে নেপালের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ওপর একক নির্ভরশীলতার দিন এবার চিরতরে শেষ হতে চলেছে। এবার ১৯৫০ সালের দাসত্বের নিগড় চুক্তি থেকে বের হওয়ার বাস্তব শর্ত পূরণ হতে চলেছে, তা এখন কাঠমান্ডুর নাগালে আসতে চলেছে।
নেপাল ভারতের হাত ছুটে যাচ্ছে, আর এটাই মূলত ব্রক্ষ্ম চেলানির মতো অধ্যাপককে অস্থির ও চঞ্চল করে তুলেছে। তিনি দিকবিদিক ভুলে বলে বসেছেন নেপালের রাজতন্ত্র অর্থাৎ আগেকার ‘হিন্দু রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ হিসেবে নেপালের থেকে যাওয়া সেটা হলে সেটাই নাকি ভালো ছিল। সোজা বললে, হিন্দু-রাজতন্ত্র উতখাত করে, নেপালের নতুন করে প্রজাতান্ত্রিক নাগরিক সাম্যের রাষ্ট্র, ফেডারেল নেপাল- এই রাষ্ট্র হওয়া, এটা খুবই খারাপ কাজ হয়েছে বলে চেলানি আমাদের জানাচ্ছেন। তামশাটা হল, একালের নীতি-পলিসি নিয়ে স্টাডি ও গবেষণা করা একজন থিঙ্কট্যাঙ্ক একাডেমিক এমন কথা বলছে! কেন? কারণ সেটাই নাকি “ভারতীয় জাতিবাদী” স্বার্থ।

তিনি যদি ‘একাদেমিক’ হিসাবে একালে নিজের পরিচয় বজায় রাখতে চান তবে তাকে কোন স্বঘোষিত রাজা নয়, গণমানুষের ক্ষমতার রাষ্ট্রের পক্ষে দাড়াতে হবে। ‘মানুষ কেবল নিজেই নিজের শাসক হতে পারে’ কোন স্বৈরাচার বা কোন রাজতন্ত্র নয় – চিন্তার এমন মৌলিক মুল্যবোধ ও নীতি অনুসরণ করে – একটা আধুনিক রিপাবলিক রাষ্ট্রের পক্ষেই তাকে দাড়াতে হবে। অথচ তিনি এখানেই তাঁর একাদেমিক দায় ভুলে একে ছাপিয়ে উতখাত হয়ে যাওয়া রাজতন্ত্রের ভিতর ভারতের জাতিবাদী স্বার্থ খুজতেছেন!

শুধু তাই নয়, তিনি এখনকার নেপালের প্রধান দোষ হিসেবে মনে করেন, এই রাজতন্ত্র উতখাতের আন্দোলনের এবং এখনকার ক্ষমতাসীন নেতারা হলেন কমিউনিস্ট। নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি, তার দলসহ প্রধান দুই বড় দল যারা দুটোই হচ্ছে কমিউনিস্ট। প্রধানমন্ত্রী অলি ছাড়া তার অপর দলটা আবার মাওবাদী কমিউনিস্ট, পুষ্পকমল দাহালের মাওবাদী সেন্টার দল। এছাড়া এই দুই দল আবার এক দল হতে, এক ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আর সবার উপরে ভারতের চক্ষুশূল আর এক ঘটনা আছে। তা হল, এই কমিউনিস্ট দুই দল ও অন্যান্য আঞ্চলিক মাধেসি দলসহ মিলিয়ে তাদের এক জোট – এখন ক্ষমতাসীন সরকার, যারা এখনই নেপালের সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ আসন তাদের দখলে আছে। আর ওদিকে মোট সাত প্রদেশে বিভক্ত নেপালের ছয়টাতেই প্রাদেশিক সরকারও তাদের এই জোটের। ফলে স্বভাবতই নেপালের এই কমিউনিস্টরা চেলানির খুবই খুবই অপছন্দের। তিনি অভিযোগ তুলে বলছেন, নেপাল রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কমিউনিস্টদের হাতে পড়ে টিকবে কি না, এটা অনিশ্চিত। তিনি বিরাট নেপাল-দরদি হয়ে বলছেন, চারিদিকে এত কমিউনিস্ট এটাই নাকি “কালো অশুভ ছায়া” ফেলেছে।  “casts an ominous shadow over Nepal’s sputtering democratic transition.”।

তাঁর আরো আপত্তি হল গুরুত্বপুর্ণ সরকারি পোস্টের অনেকেই কমিউনিস্ট।  [From constitutional functionaries, such as the president and vice president, to key officials, including the chief of police services, are today card-carrying communists.]। আসলে তাঁর এই বক্তব্যগুলোওই খুবই ‘কালো’ এবং ভারতের “অশুভ ছায়াময়”।

অপছন্দ আর বিদ্বেষ দুটা পরিস্কার আলাদা জিনিষ। আপনি একটা চিন্তা – কমিউনিস্ট অথবা  ইসলামি – চিন্তাকে অবশ্যই অপছন্দ করতে পারেন। ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করতে পারেন না। এই পরেরটার পুরাপুরি দায় একান্তই আপনার। এমনকি ‘ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ’ করা, এটা অপরাধের সীমায় নিয়ে ফেলে আপনাকে।

তিনি মনে করছেন, “এটা স্পষ্ট, ভারতের নিরাপত্তার জন্য নেপাল হুমকি হয়ে উঠেছে”।  কেন এমন মনে হচ্ছে তাঁর? কারণ “কমিউনিস্টদের হাতে গণতন্ত্র টিকে কি না” তিনি  এটা অনিশ্চিত। বাহারে গণতন্ত্রী! [Whether democracy will survive under communist rule is uncertain. What is clear is that Nepal is impinging on Indian security.] আর এটাই নাকি ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য হুমকি!

তার মানে রাজতন্ত্রী-নেপাল রাষ্ট্র যখন ছিল তখন ভারতীয় চেলানি ভারতের জন্য এটাকে নিরাপত্তার হুমকি মনে করেন নাই। এখন কমিউনিস্টরা নতুন রিপাবলিক রাষ্ট্র গঠন করেছে এবং ক্ষমতায় আছে বলে তিনি হুমকি দেখছেন। বাহ রে বা! চেলানির কথার ধরনের ব্যাপারটা অনেকটা নেকড়ে-ভেড়ার গল্পের মতো যে, ভাটিতে থেকে তুই না হলে তোর দাদা উজানে আমার পানি ঘোলা করেছিস। অতএব আমি এখন তোর ঘাড় মটকাব…।

চেলানিকে আসলে এখানে চ্যালেঞ্জ জানানো যায়। রাষ্ট্র গঠন বৈশিষ্ট ও নীতি হিসাবে একটা রাষ্ট্রকে কিভাবে বিচার করব – এর মাপকাঠি কী? এই আলোকে চেলানির চিন্তায় ঘাটতি আছে তা বলা যায়। হিন্দুগিরি ছেড়ে নেপাল রাষ্ট্র রিপাবলিক বৈশিষ্ট এনেছে, নিজেকে সাজিয়েছে। অন্যদিকে বিপরীতে, ভারত-রাষ্ট্র যে জন্ম-খুত নিয়ে সাতচল্লিশে জন্ম নিয়েছে আর এখনো প্রধান কারণ হিসাবে যা তাকে দগ্ধাচ্ছে তা হল, এর ফেডারল বৈশিষ্ট নাই বা অসম্পুর্ণ। বরং নেহেরু  এন্ড গংয়েরা সেকালে জোর দিয়েছিল, ভারতকে এক রাখবে কী করে সেটাকে সমস্যা হিসাবে দেখে। কতগুলো ফেডারল প্রদেশের ভারত রাষ্ট্র নয় বরং কী করে জবরদস্তি জোর খাটিয়ে ভারতের প্রদেশগুলোকে এক করে রাখা যায়; এই “জবরদস্তির ভারত” এটাই তাদের চোখে একমাত্র সমাধান মনে হয়েছিল। এখনও ভারতের কোন একাদেমিক ভারতের জন্য এক ফেডারল রাষ্ট্র ধারণা কেন গুরুত্বপুর্ণ তা নিয়ে একাদেমিক আলোচনা করেছেন তা দেখা যায় নাই। আবার রাজনীতিকেরা, নেহেরুর জমানা থেকেই ভারতের রাজনীতিকরা ফেডারল অর্থে রাষ্ট্র ধারণা বুঝেছেন (যেমন  আমেরিকার ফেডারল বৈশিষ্ট) এমনটা জানা যায় না। রাষ্ট্র কী করে এক জায়গায় সবাইকে ধরে রাখে, কোন জবরদস্তি ছাড়াই  রাখা যায় ও সম্ভব – এই প্রশ্নে তারা সবসময় একটা ‘আঠা’ বা গ্লু (glue) খুজে ফিরেছেন। আর সেই গ্লু হিসাবে পেয়েছে হিন্দুত্ব। চিন্তার এই মারাত্মক গলদ ও ঘাটতির কারণে ‘হিন্দুত্ব’  – একেই উপযুক্ত গ্লু মনে করে ভারতের সকল রাজনীতিবিদ। হিন্দুত্ব ছাড়া ভারত অচল, “এক ভারত” হয়ে ভারতকে ধরে রাখার বেকুবি মহামন্ত্র। এটা বিজেপি বলে প্রকাশ্যে আর অন্যেরা মন বাসনায় ও কাজে বলে থাকে; এই প্রশ্নে কংগ্রেস বিজেপি-কমিউনিস্টসহ সকলে এখানে এক।  নিশ্চিত করে বলা যায়, নেপালের ফেডারল বৈশিষ্ট ও হিন্দুগিরি ছেড়ে নেপাল রিপাবলিক বৈশিষ্ট – অন্তত এই দুই প্রশ্ন বর্তমান নেপাল ভারত-রাষ্ট্রের চেয়ে শতগুণে উন্নত, চিন্তায় পোক্ত। রাজতান্ত্রিক নেপাল-ই যার কাছে আপন সেই চেলানি আসলে কোন রাষ্ট্র-বৈশিষ্ট বিচার করার অযোগ্য – “রাজতান্ত্রিক নেপাল” কামনা করে এই প্রমাণ উনি নিজেই আমাদের জানিয়েছেন। আমাদের কিছু বলার নাই!

সামনে আরো যাওয়ার আগেই বলে নেয়া যায়, চেলানির লেখার মধ্যেই বিরাট বিরাট স্ববিরোধীতায় ভরা। যেমন, একদিকে তিনি বলছেন, নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্টরা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আবার লেখার মধ্যে তিনি নিজেই লিখছেন, ভারতের জন্য যে চ্যালেঞ্জ নেপাল তৈরি করেছে সেটা আসলে ভারতেরই নিজ-সৃষ্ট। [Simply put, Nepal represents a critical challenge for India. But, to a significant extent, this is a self-created problem. ]। তাহলে কী দাঁড়াল? ঘটনা যদি ভারতেরই সেলফ ক্রিয়েটেড বা নিজ সৃষ্ট হয়ে থাকে, চেলানি তাই মনে করে থাকেন; আর ঘটনার বড় প্রভাবক যদি ভারত নিজেই হয়ে থাকে তবে আবার সেটার জন্য নেপালকে দায়ী করার সুযোগ কই? ব্রহ্ম চেলানির এই বক্তব্যই তো স্ববিরোধী। এ ছাড়া তিনি ওই রচনার শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে; লিখছেন, “ভারতের ভুলের কারণে তা চীনকে নেপালে জায়গা করে নিতে সুযোগ করে দিয়েছে”।

অর্থাৎ নিজেই যেচে ভারতের দায় স্বীকার করে নিচ্ছেন। ভারতের শাসকদের দায়ী করছেন। এরপর তিনি নিজেই পরের বাক্যে এবার এক তালিকা দিয়ে বলছেন, ভারতের তিনটা ভুল কী কী? বলছেন, ‘ভারতের তিনটা ব্লান্ডারের প্রথমটা হল, নেপালি রাজতন্ত্র অবসানের ক্ষেত্রে ভারতের মূল চালিকাশক্তি হয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়টা হল, দাহালের দল মাওবাদীরা ছিল আন্ডারগ্রাউন্ড গোপন সশস্ত্র দল। ভারত তাদের নেপালের রাজনীতিতে মধ্যমণি হতে দিয়েছে। আর তৃতীয়টা হল, নেপালের সমতলে বাস করা মাধেসি জনগোষ্ঠীকে ভারত উস্কানি দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে হাত ছেড়ে দিয়েছে।

[Three Indian blunders since the mid-2000s have proved very costly for India — spearheading the abolition of Nepal’s constitutional monarchy; bringing the underground Maoists to the centre-stage of Nepali politics; and, more recently, aiding the plains people’s revolt against the new, 2015-drafted Nepali Constitution and then abandoning their movement and pressuring them (Madhesis) to participate in the 2017 elections, thus legitimising a Constitution it said was flawed.]

তৃতীয় ব্লান্ডারের বিস্তারিত দিকটা হল, গত ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নেপালের নতুন কনস্টিটিউশন প্রক্লেমেশন বা ঘোষণা করে দেয়ার পরে ভারত প্রকাশ্যে এর বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা জানায়। তারা মাধেসিদেরকে বিদ্রোহী হয়ে ‘মানি না বলে’ উঠতে উসকানি দিয়েছিল। এটা চেলানিও স্বীকার করেই কথা বলছেন। নেপালে রান্নার জ্বালানিসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্য সরবরাহ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ওপর তারা শতভাগ নির্ভরশীল। আর এই উস্কানির অর্থ ছিল,  সেই ভারত থেকে নেপালে সব পণ্য আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করেছিল ভারত, অজুহাত দিয়েছিল যে এটা মাধেসিদের বাধা। যা বাস্তবে ছিল নেপালে ভারতেরই পণ্য-অবরোধ। কিন্তু এতে নেপালের গরিব-ধনী নির্বিশেষে সকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সব জনগোষ্ঠী চরমভাবে ভারতবিরোধী হয়ে যায়। সমতলের বাসিন্দা মাধেসিদেরকেও তারা ভারতের হাতের পুতুল হয়ে পড়ার জন্য দায়ী করে। প্রায় পাঁচ মাস পর এই পণ্য অবরোধ চরমে ওঠে। আর ফলাফল পরিস্থিতি চরমভাবে উলটো ভারতবিরোধী দিকে চলে যাওয়াতে, ভারত এবার সব দায় মাধেসিদের ওপর চাপিয়ে তাদের পরিত্যাগ করে। ফলে পরবর্তিতে, ২০১৭ সালের নির্বাচনে মাধেসিরা ভারতের সংশ্লিষ্টতা পুরো ত্যাগ করে মূল ধারার রাজনীতির মধ্যে ফিরে যায়। তারা, মূল ধারার রাজনীতিকদের সাথে একসাথে মিলে বিরোধ মিটিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। শুধু তাই নয়, মাধেসিদের মূল বিরোধ বিতর্ক ছিল, মাধেসিদের প্রদেশ একটি নয় দুটি নিয়ে হতে হবে, আর এর সীমানাইবা কী হবে আর প্রদেশের ক্ষমতা কী হবে এসব ছিল বিতর্কের ইস্যু। এ প্রসঙ্গে সমস্ত বিরোধ তারা আপস মীমাংসায় মিটিয়ে ফেলে। এব্যাপারে সব ভুলে সবচেয়ে বড় হাত বাড়ানো ভূমিকা পালন করে কমিউনিস্ট দাহাল। ফলে আপসে বিরোধগুলোর মীমাংসা এরপর কনস্টিটিউশনে সংশোধনী লিখে পাস করে নেয় সবাই। আর সবশেষে এখন মাধেসিরা ক্ষমতাসীন সরকারের জোটের অংশ হয়ে আছে। মাধেসিদের উসকানি দিয়ে অবরোধের রাস্তায় নামিয়ে পরে তাদের হাত ছেড়ে পরিত্যাগ করা- ব্রহ্ম চেলানি নিজে এটাকেই ভারতের তৃতীয় ভুল বলছেন!

তাহলে ঘটনা হল, ভারতের সব অপরাধই চেলানি নিজেই তালিকা দিয়ে স্বীকার করে নিচ্ছেন। অথচ নেপালের কমিউনিস্টদের দায় দিচ্ছেন, অনাস্থা রাখছেন। আসলে এখানে ঘটনাটা হল, শকুনের বদদোয়ায় গ্রামের গরুগুলো কখনোই মারা যায় না। আর শকুন অভুক্ত শকুন হয়ে থাকলে তাই হয়ে থেকে যায়।

ভারতের পাপ বা অপরাধ এতই বিশাল ও দৃশ্যমান যে চেলানি তা লুকানোর চেষ্টা না করে বলছেন, ‘ভারতের উচিত অতীতে নেপালের জনগণের জন্য কষ্টদায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য নেপালের জনগণের কাছে ভারতের উচিত হবে ক্ষমা চাওয়া। পরিস্থিতিটা ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে, আর এরই সুযোগ নিয়েছে চীন।’

[New Delhi indeed owes an apology to Nepal’s citizens for its past meddling, which, as if to underscore the law of unintended consequences, boomeranged on India’s own interests. India’s mistakes set in motion developments that seriously eroded its clout in Nepal and helped China to make major inroads.]

এই পুরো বিপর্যয় ঘটানোর জন্য তৎকালীন কংগ্রেসের মনমোহন সরকারকে চেলানি দায়ী করেন। কিন্তু এবার কথার ফাঁক সৃষ্টি করতে শুরু করেন তিনি। বলেন, “২৩৯ বছরের নেপালি রাজতন্ত্র ছিল নেপালের স্থিতিশীলতার প্রতীক। ভারত সরকার নেপালের রাজতন্ত্রকে উৎখাত করেছে আর মাওবাদীদের ক্ষমতার কেন্দ্রে এনেছে”। আসলে কী বলা যায় চেলানির রাজতন্ত্র প্রীতি দেখে – নেপালের প্রাক্তন রাজারাও লজ্জা পাবে। আসলে ব্যাপারটা হলো, রাজতন্ত্রের আমলে নেপালে ভারতের স্বার্থ যেভাবে রক্ষিত হচ্ছিল এখন আর তা রক্ষিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সে জন্য ভারতের কোনো একাডেমিক কি রাজতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গাইতে পারেন? অথবা এর দরকারই বা কী? অথচ চেলানি সেটাই করছেন!

ভারতের নিজের স্বার্থ দেখবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা কী করে? সেটা একটা বিষয় অবশ্যই। কিন্তু সে জন্য কোনো একাদেমিক রাজতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গাইতে যাবেন কেন? অর্থাৎ চিন্তার সততা নয়, চরম উগ্র জাতিবাদী এক ভারতীয়ই থাকতে চাইলেন ব্রহ্ম চেলানি বেছে নিলেন!

একালে যেটা চেলানির মতো একাডেমিকদের প্রো-আমেরিকান ভারতীয় ধারা, এই ধারার জন্ম ও শুরু করে দিয়ে গেছিলেন সাতচল্লিশের প্রধানমন্ত্রী নেহরু। তার দৃষ্টিভঙ্গিই ছিল এটা। যেমন, সাধারণভাবে নেহরু কলোনি শাসনকে খারাপ মনে করতেন না। ভারতের ওপর ব্রিটিশ কলোনির যে শাসনটা চড়ে ছিল সেটা মৌলিক স্বভাব বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে খারাপ ছিল না। এই ছিল তার অভিমত। তবে তা ভারতের ওপর চড়ে ছিল বলে একে খারাপ ভাবতেন তিনি। অর্থাৎ ব্রিটিশের ভারত ত্যাগে, ভারতের কলোনি মুক্তির পরে এবার ভারতই যদি নেপালকে কলোনি করার সুযোগ পায় তবে সেই সুযোগ নেয়ার চেষ্টাই ভারতের করা উচিত – এই ছিল নেহরুর কলোনি শাসন কী জিনিস সে সম্পর্কে বুঝ ও মনোভাব। তা বুঝার জন্য সবচেয়ে বড় তাতপর্যপুর্ণ হল ১৯৫০ সালের নেপাল চুক্তি। আর তাই নেপালের সাথে ভারতের তথাকথিত ঐ বন্ধুত্ব চুক্তি করে নেপালকে দাসত্বে বেঁধে ফেলা জায়েজ মনে করেই নেহরু ওই চুক্তি করেছিলেন। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভেতর দিয়ে দুনিয়ায় নতুন যে পরিবর্তন এসেছিল : ১. দুনিয়া থেকে কলোনি শাসন উঠে যাওয়া এবং তা অন্যায্য মনে করার প্রতিশ্রুতি দুনিয়া পেয়ে যায়। ২. দুনিয়া কলোনি ইউরোপের শাসকদের নেতৃত্বের কবজা থেকে মুক্ত হয়ে এবার আমেরিকান নেতৃত্বে নতুন এক গ্লোবাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও নিয়মে সাজানো হয়ে যায়।

এসব মৌলিক পরিবর্তনের তাৎপর্য ও গাঁথা নেহরুর চোখ-কান-মগজে ঢুকে ছিল এমন প্রমাণ দেখা যায় না, বরং তার কাজ দেখে বলা যায়, কোনো প্রভাবই পড়েনি। নেপালের সাথে নেহরুর করা ১৯৫০ সালের কলোনি চুক্তি এর সবচেয়ে ভালো প্রমাণ। নেহরু ধরে নিয়েছিলেন কলোনি শাসন ব্যাপারটা চিরন্তন। ওটাই দুনিয়ার নিয়ম। দুনিয়া ভাগ্য চিরকাল কলোনি শাসন দিয়েই লেখা হবে। তাই কথিত ‘সমাজতন্ত্রী নেহরু’ অবলীলায় পুরানা বৃটিশ-নেপাল চুক্তিতে (১৯২৩) ব্রিটিশের জায়গায় নেহরুর ভারতকে আসীন করে নেন। আর এভাবে নেপালে নেহরু-ভারতের কলোনি শাসন কায়েম করে নেন।
আর আজকের ব্রহ্ম চেলানি ওই নেহরু-ভারতের কলোনি শাসনই ফেরত দেখতে চাচ্ছেন। কারণ কলোনি হয়ে থাকা নেপালি অংশের অপর নাম হল নেপালি রাজতন্ত্র। চেলানি নেপালি রাজতন্ত্র এর পক্ষে সাফাই দিয়ে একালে বলছেন সেটাই নাকি ভারতের জন্য ভালো ছিল। নেপালে ভারতের স্বার্থ একমাত্র রাজতন্ত্রী নেপাল হলেই আদায় হবে – এই চিন্তাটাই একটা অযোগ্য, দেউলিয়া চিন্তা।

না ভুল বোঝা যাবে না। এখানে, ভারতের কোনো স্বার্থ থাকতে পারবে না বা ভারতকে স্বার্থ-ভোলা অবস্থান নিতে হবে- এমন কোনো সুপারিশ করা হচ্ছে না। খেয়াল করলে দেখা যাবে, ঠিক যেমন বিশ্বযুদ্ধের কালে সারা দুনিয়াকে ইউরোপের কলোনি শাসনের অধীনে রাখার বিরুদ্ধে ১৯৪০-এর দশকের আগে থেকেই আমেরিকা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট  বাধ্য করেছিলেন কলোনি শাসন ত্যাগ করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে। এবং তিনি তা আদায় করেছিলেন। কিন্তু তার মানে কী আমেরিকা নিঃস্বার্থ বা আত্মভোলা ছিল? মোটেও না। কলোনি শাসনের বদলে আমেরিকা নতুন গ্লোবাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিল এবং তা করেছিল। যেটা কলোনি শাসনের চেয়ে তুলনায় ঢের গুণে অগ্রসর সেই ব্যবস্থা – নতুন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে এর মাধ্যমে দুনিয়ার নেতা হয়ে আমেরিকা নিজের স্বার্থ হাসিল করেছিল। আমেরিকার কায়েম করা সেই  ব্যবস্হাটারই শেষ দিনগুলোতে আমরা এখন আছি।তুলনায় এটা অবশ্যই বৃটিশ কলোনি শাসনের চেয়ে অনেক ভাল এবং তুলনায় মুক্ত।

আবার এই বিচারে বলা যায়, আগামীতে আমেরিকার বদলে দুনিয়া চীনের অর্থনৈতিক নেতৃত্বে চলে গেলে সেটাও এখনকার আমেরিকার নেতৃত্বের দুনিয়ার চেয়ে তুলনামূলকভাবে অগ্রসর দুনিয়াই হবে।

বিশ্বযুদ্ধের শেষে সেকালের দুনিয়ার গতি-প্রকৃতি যেমন নেহরুর চোখে ধরা পড়েনি, পুরনো কলোনি শাসনই তিনি অনুকরণীয় ভেবেছিলেন, আজো তেমনি ব্রহ্ম চেলানির চোখেও আমেরিকার নেতৃত্বটাই ভালো বোধ হচ্ছে অথচ সেটা তো এখন বিগতযৌবনা। অপসৃয়মান সেটা, ফলে চাইলেও এর সমাপ্তি চেলানি ঠেকাতে পারবেন না, ঠেকানো যাবে না।

ব্রহ্ম চেলানির চোখে ধরাই পড়ছে না যে চীন যেখানে নেপালকে শর্তহীনভাবে চীনের ওপর দিয়ে ট্রানজিট দিতে রাজি হয়ে যাচ্ছে সেই মুরোদ গত সত্তর বছরে ভারতের হলো না কেন, ভারত চিন্তাও করতে পারেনি কেন?

কিন্তু সাবধান, এটা নেপালের জন্য চীন এক বড়ই মহান – এমন ঢোল পিটানির কথা মোটেও বলা হচ্ছে না। ব্যাপারটা হল, শর্তহীনভাবে চীনের ওপর দিয়ে নেপালকে ট্রানজিট দিলে তাতে চীনেরই লাভ বেশি। এই হলো নতুন বাস্তবতা। আর অবাধ ট্রানজিট দিলে তাতে নেপালে চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য স্বার্থ আরো ভালোভাবে রক্ষিত হয়। ঠিক যেমন দুনিয়ার বিশ্বযুদ্ধের সেকালে কোনো রাষ্ট্রকে সরাসরি কলোনি বানিয়ে না রাখাতেই ছিল আমেরিকার স্বার্থ। বরং তারা কলোনি শাসন মুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র কিন্তু আমেরিকান পণ্য বিনিয়োগ খাতক হলেই তাতেই সেকালে আমেরিকার স্বার্থ সবচেয়ে ভালোভাবে রক্ষিত হয়েছিল। তাই আমেরিকাই দুনিয়ার নতুন নেতা ছিল।

আর কমিউনিস্টদের সম্পর্কে একটা কথা।  চেলানি হয় জানেন না অথবা স্বীকার করতে চান না যে সেকালে ভারত মাওবাদীদের পক্ষে এবং নেপালি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়েছিল, মূলত আমেরিকার পরামর্শে, ক্রিস্টিনা রাকার নেপাল সফর থেকে যার শুরু। [এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত আমার লেখা “নতুন নেপাল” বইতে আলোচনা করেছি, সেখানে দেখা যেতে পারে। ] এছাড়া, গত ২০০৫ সালে বুশ প্রশাসনের ‘চীন ঠেকাও’ পলিসির মধ্যে ভারত গোনার ধরার মধ্যে নিজের জায়গা পেয়ে ভারত ভেবেছিল এটাই তার সর্বোচ্চ পাওয়া। সে বুঝতেই পারেনি যে, আমেরিকা একটা ক্ষয়িষ্ণু শক্তি। যার হাত সে ধরতে যাচ্ছে। আমেরিকা ভারতের কাঁধে চড়ে চীনের আগমন ও উত্থান ঠেকিতে রাখতে এসেছে। সে নিজে জানে এই উত্থান নিশ্চিতভাবে ঠেকানো যাবে না। তাই যতদূর পারা যায় নিজের পতন দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছে সে কেবল।

তাই প্রো-আমেরিকান একাডেমিক মানে ডুবন্ত শক্তির পক্ষে দাঁড়িয়ে যে কেবল সঙ্কীর্ণভাবেই নিজের স্বার্থ খুঁজতে অভ্যস্ত। আর সেটা যেনবা হিন্দুত্বেরই আর এক নাম।

তাই ব্রহ্ম চেলানি ভারতের শাসকদের দোষারোপ করেন আর নাই করেন;  নেপালি রাজতন্ত্রের পক্ষে সাফাই দেন বা না দেন – এখনকার বটম লাইনটা হল, নেপাল ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। এখন এই নতুন নেপাল, এটা আগের চেয়ে তুলনামূলক মুক্ত এক নেপাল। এ’আর ফিরবে না। বাংলাদেশও এমন প্রথম সুযোগে বের হয়ে যাবেই। আমরা কেউ পিছনে ফিরে যাই না।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা এর আগে গত ২০ জূলাই ২০১৮ দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার অনলাইনে (প্রিন্টে পরের দিন) নেপালে রাজতন্ত্র ভেঙে দেয়া ভারতের ভুল ছিল”  – এই শিরোনামে ছাপা হয়েছিল। পরবর্তিতে সে লেখাটাই এখানে  আরও নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে।  ফলে  সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে এখানে ছাপা হল। ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s