সংলাপ, নাকি বিরোধী দলে বসার প্রস্তাব!


সংলাপ, নাকি বিরোধী দলে বসার প্রস্তাব!

গৌতম দাস

০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০৩

https://wp.me/p1sCvy-2vz

 

 

সংলাপ কত দূর, কোথায় গিয়ে দাঁড়াল? গত ০১ নভেম্বর সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে হাজির হওয়া সংলাপ শেষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় নিয়ে যাবে?

ত মাসে ১৩ অক্টোবর “জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট” গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এরপর তাদের দাবি ও করণীয় দফার তালিকা নিয়ে তারা সরকারের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু শুরু থেকেই অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা দেখেছিলাম সরকারি দল কোনো ধরনের সংলাপ বা আলোচনাকে একেবারেই নাকচ করে দিচ্ছে। আর টিটকারি বা বাঁকা কথা দিয়ে হাসিনাসহ মন্ত্রীরা কাঙ্খিত   যেকোনো সংলাপের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে নানান কটুকথা বলে চলছিলেন। “কোনো সংলাপ হবে না। …সংলাপের কথা ভুলে যান” – স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিংবা, “যে ঐক্য নীতিহীন, যে ঐক্য স্বাধীনতাবিরোধী ও দেশবিরোধী—সেই ঐক্যে এ দেশের সাধারণ জনগণ যাবে না, মেনে নেবে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে।” – আইনমন্ত্রী ইত্যাদি… এধরণের কথা শুনতে শুনতে আম-পাবলিকে মনেও তা দৃঢ়বিশ্বাস জন্মে গেথে গেছিল। কেউ আর আশা করেনি যে, আলোচনা-সংলাপ বলে এবার এমন কিছু আর বাংলাদেশ দেখবে। কিন্তু না।  তাহলে সরকারের এই মন পরিবর্তনকে অবশ্যই আকস্মিক বলা যায়। কারণ, এটা কেবল গত শেষ এক সপ্তাহের গতিপ্রকৃতি ও বিকাশ। কিন্তু এমন পরিবর্তন কেন?

সংলাপে সরকারের তাগিদ কী এবং কেন? সেটি কী দিয়ে কোথা থেকে এই বোঝাবুঝি শুরু করব? সে কাজ সবচেয়ে সহজে করতে আর সবচেয়ে বেশি অথেনটিক রেজাল্ট পেতে চাইলে এর উপায় হল জাতীয় পার্টির এরশাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা। আমাদেরকে এরশাদের নড়াচড়ার দিকে চোখ ফেলতে হবে। এই সংলাপের দিন ১ নভেম্বর বাংলাদেশের সবচেয়ে বিরক্তিবোধ করা ব্যক্তিটি ছিলেন জাতীয় পার্টির এরশাদ। এর চেয়েও বড় কথা তিনি যে, এ দিন খুবই বিরক্ত সেটা তিনি রেজিস্টার করে রাখতে চেয়েছিলেন এবং তা রেখেছিলেন একেবারে মিডিয়ায়।

কিন্তু এ’দিন ঢাকায় মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া খুবই কঠিন ছিল। কারণ, এ দিনের ঢাকার মিডিয়া বিশেষ করে টিভি মিডিয়াগুলো দু’টি হাই-প্রফাইল কাভারেজ নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিল। এর একটি হল, এ দিন রাষ্ট্রপতির সাথে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের নির্ধারিত সাক্ষাতের দিন ছিল। আর ওই সাক্ষাতের শেষে নির্বাচনের তারিখ যা ফাইনাল হয়েই আছে অনুমান করা যায়, এর ঘোষণার দিন না হলেও ইঙ্গিতে তা সামনে চলে আসতে পারে। ফলে সেটির কাভারেজ গুরুত্বপুর্ণ এবং প্রতিযোগিতাপুর্ণ। আর দ্বিতীয়ত সবচেয়ে বড় প্রফাইল হল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সরকারের সংলাপের সংবাদ কাভারেজ। অতএব বলাই বাহুল্য, সংলাপের এই দিনের এই দুই হাই-প্রফাইল ঘটনার বাইরে আর কারও মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া সত্যি কঠিন। ব্যাপারটা আঁচ করতে এরশাদ ও তার সঙ্গীদের সময় লাগার কথা না। খুব সম্ভবত এসব চিন্তা করেকায় মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া নিশ্চিত করতে এরশাদকে রংপুর চলে যেতে হয়। যাতে রংপুরের স্থানীয় কাভারেজ দিয়ে তিনি ঢাকার ড্রয়িংরুমগুলোতে সন্ধ্যায় নিজেকে হাজির করতে পারেন।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ দিন তিনি ছিলেন যেন ১ নভেম্বরের বাংলাদেশের সবচেয়ে বিরক্তিবোধ করা মানুষ। আর সেই বিরক্তি তিনি মিডিয়ায় আনতে চান, এই তার উদ্দেশ্য। কিন্তু আসল কথা এরশাদের নড়াচড়া দেখলে ঢাকায় সংলাপ আয়োজনের মূল কারণ জানা যাবে কেন?

এরশাদ গত ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এক অদ্ভুত বিপদের মুখে আছেন। সেই থেকে থাকেনও প্রায় সময়ই। তুলনা করে বললে, ব্যাপারটা যেন এমন, এক লোক খুবই আকর্ষণীয়, কিন্তু অদ্ভুত এক দাওয়াত পেয়েছেন। সেটি বলা বাহুল্য খুবই লোভনীয় কিন্তু ওই দাওয়াত খাওয়ার ক্ষেত্রে সেখানে একটা শর্ত আছে। সেটি হল দাওয়াতের হোস্ট বা দাওয়াতদাতা এই ব্যক্তিকে আগাম জানাচ্ছেন, আপনি দাওয়াত পেয়েছেন বটে কিন্তু আসলে দ্বিতীয় একজনও দাওয়াত পেয়েছেন যিনি আসলে মূল গেষ্ট বা দাওয়াতি, ফলে তারই আসার কথা। মূলত এই দ্বিতীয় দাওয়াতিকে খাওয়ানোর জন্যই এত আয়োজন, তার সেখানে খাওয়ার কথা। তবে এখানে শর্ত হল দ্বিতীয়জন বা মূল গেষ্ট – তিনি যদি আসেন ও খাওয়াদাওয়া করেন তবে সে ক্ষেত্রে প্রথমজন আপনি – ভাই, আপনার জন্য ভাত বা খাবার কোনোটার ব্যবস্থা থাকবে না। আর উল্টো হলে, স্বভাবতই মূল দাওয়াতি দ্বিতীয়জন যদি অনুপস্থিত থাকেন তবে প্রথমজনের কপাল খুলে যাবে। তিনি তার দোস্তদের সাথে পেটপুরে খেতে পাবেন। এই গল্পের মূল দাওয়াতি বা দ্বিতীয়জন হলো আসলে বিএনপি। আর প্রথমজন হলেন এরশাদ, তিনি এই অদ্ভুত দাওয়াত পেয়ে অপেক্ষায় আছেন। আপাতত রংপুরে গেছেন।

২০১৪ সালে তিনি এমন দাওয়াত দিলে তা খাবেনই না বলার পরও কোনো এক কারিশমাতে তিনি ও তার দল একাধারে সরকারি ও বিরোধী দলেরও এমপিই – দুটোই হয়ে গেছিলেন। অর্থাৎ সরকারি মন্ত্রিত্ব নিয়েছেন আবার তারা নিজেদেরকে বিরোধী দল মনে করেন। সংসদের সকলেও তাদেরকে সরকারি মন্ত্রীত্ব পাওয়া আবার বিরোধী দল মর্যাদা পাওয়া এমপি গণ্য করতে দ্বিধা করে না। আজ এর প্রায় পাঁচ বছর শেষের দিকে দেখা যাচ্ছে এরশাদ ও তার দলের অভিজ্ঞতা হলো, ভালোই ছিল বলে তারা উপভোগ করেছেন। তাই এবার এরশাদ নিজেই যেচে সেটি এবারো চাইছেন।

সেই এরশাদ এবার সংলাপের দিন সংলাপ প্রসঙ্গে রংপুর থেকে খুবই বিরক্তি প্রকাশ করে কথা বলেছেন। কারো মুখের সামনে থেকে খাবার সরিয়ে আনলে বা উঠিয়ে নিয়ে সরিয়ে রাখতে তার যেমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হয়, এই প্রতিক্রিয়া যেন তেমনই।

রশাদকে মিডিয়া কাভারেজ সবচেয়ে ভালো দিয়েছে যুগান্তর। আমরা এরশাদের বক্তব্য সেখান থেকে টুকে আনলে সেগুলা হল : “সংলাপের সফলতা নিয়ে এরশাদের সংশয়”… “ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির কোনোটিই মানা সম্ভব নয়”।… “সংলাপ ব্যর্থ হবে”… “শেখ হাসিনার পক্ষে কোনো দাবিই কোনোভাবে মেনে নেয়া সম্ভব নয়”। “বিএনপি আদৌ নির্বাচনে অংশ নেবে সন্দেহ রয়েছে”। আর সবশেষে বলেছেন… “বিএনপি নিজেদের অস্তিত্বের সঙ্কটে রয়েছে”। এগুলো সব দৈনিক যুগান্তর থেকে জড়ো করা এরশাদের ভাষ্য। দেখাই যাচ্ছে, এখানে প্রতিটি বাক্যে এরশাদের অসন্তোষ ফুটে উঠেছে। যেন তিনি বলতে চাইছেন, যেটা হবে না সেটা নিয়ে কেন যে আপা চেষ্টা করছেন!

এখান থেকে পরিস্কার ফুটে উঠেছে যা এরশাদকে দেয়া আছে – বিরোধী দল হয়ে থাকা – তা এই সংলাপ থেকে অন্য কাউকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সেকারণেই এরশাদ এবার “সর্ব হারা” হবার শঙ্কায় হাহুতাশ শুরু করেছেন।

ব্যাপারটা হল, অনুমান করা যায় এরশাদ জানতেন বা তাকে জানানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর এই সংলাপের মানে কী? এরশাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়, খুব সম্ভবত  ১ নভেম্বর এটি ছিল আসলে বিরোধী দলের আসন নিতে বিএনপি রাজি হবে কি না- এই লক্ষ্যে তাদেরকে ডেকে দেয়া অফার। কাজেই সংলাপ মানে ছিল বিরোধী দল হওয়ার জন্য বিএনপিকে দেয়া লীগের অফার। অতএব এই অফার মানে আবার, দেয়া দাওয়াত যদি বিএনপি তা না নেয়, তবেই এটা জাতীয় পার্টির এরশাদের। সে কারণে এরশাদের দাওয়াতটাই এমন যে, বিএনপি যদি বিরোধী দলের আসন নেয়ার অফার নিয়ে নেয়, তবে এরশাদের দলের ভাগে আর ভাত নেই হয়ে যাওয়া। সে কারণে এরশাদের পুরো বক্তব্যই বেশি বেশি করে গরু মরে না কেন এ জন্য শকুনের করা বদ-দোয়ার মত।

এরশাদের কাছে তাই অজানা নয় যে সংলাপের আসল মানে হল, বিএনপিকে বিরোধী দলের আসন নিতে হাসিনার অফার, এর মানে এরশাদের ভাগে সেক্ষেত্রে কিছুই জুটবে না। তাই স্বভাবতই সংলাপের দিন সবচেয়ে দুঃখ আর হা-হুতাশের দিন হলো এরশাদ ও তার দল জাতীয় পার্টির। আর এ কারণে তিনি এ দিন যা প্রচার চালিয়ে গেছেন এর সারকথা হল- “সংলাপ ব্যর্থ হবে”। সবার চেয়ে স্পষ্ট করে এরশাদ বলেছেন, সংলাপের সফলতা নিয়ে তার সংশয় আছে।
আর সবার শেষে একটা বোমা মেরে বলেছেন, “… আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে”।

অতএব এখান থেকেই আমরা সিদ্ধান্তে যেতে পারি, এরশাদের এই প্রবল বদ-দোয়া – এটা বলছে যে হাসিনা হঠাৎ মন পরিবর্তন করে সংলাপ করতে চাইলেন, এ জন্য যে বিএনপিকে তিনি বিরোধী দল হতে অফার করেছেন। বলা বাহুল্য বিএনপি যদি এই অফার মেনে নিতে আপসে রাজি হয়ে যায়, তবে এর সোজা অর্থ হল বিএনপি লীগকেও সরকারি দলে আবার ক্ষমতায় থেকে যেতে দিতে সেও আগাম রাজি হয়ে যাচ্ছে।
অতএব গত ১ নভেম্বর থেকে সবচেয়ে টেনশনে ও বদদোয়া দেয়ার মধ্যে আছে জাতীয় পার্টি। কত দিন যে থাকতে হয়। গতবার এক অদ্ভুত সরকারি মন্ত্রীর বিরোধী দল হতে পেরেছিল এরশাদ হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে। এবার কি আর সেই কপাল হবে?

সংলাপের দিনের বেশ কিছু সময় টিভি মিডিয়া কাভারেজে উভয় পক্ষকে দেখা গেছিল। স্বল্প সময়ের হলেও আমরা তাতে তাদের মুখ ও চোখের ভাষা বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ইত্যাদি দেখতে পেয়েছিলাম। লক্ষণীয় হল, অন্তত ক্যামেরার সামনে সরকারি দলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে অতিথিদের প্রতি যেন এক বিশেষ ধরনের সম্মান ও সম্ভ্রমবোধ প্রকাশ পাচ্ছিল। কাউকে সম্মান করে পা টিপে বা সতর্ক হয়ে হাঁটলে যেমন লাগে, তেমন মনে হচ্ছিল। লীগের চোখ দিয়ে দেখে সেটা কল্পনা করা যাক, তারা ভাবতে পারে এটা হল, এই দুর্বল সময়ে দুর্বল বিএনপিকে দেয়া আমাদের বেস্ট অফার। তাহলে লীগের দিক থেকে যার অর্থ হবে এটা লীগের জন্য শুধু আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতার নিশ্চয়তা নয়, বরং আসন্ন অ-নে-ক বছরের ও অনেক কিছুর নিশ্চয়তা। ফলে এমন বিএনপি বা তার বন্ধুদের জোট ঐক্যফ্রন্টের জন্য লীগের বিশেষ সম্মান ও সম্ভ্রমবোধ প্রকাশ- এটা কোনো ব্যাপারই নয়। চাই কি আরো একটু খাতির যত্নও তারা করতে পারে। তবে কাউকে একেবারে হিসাব করে বিরোধী দলের আসনে বসানো, কাজটা  ২০১৪ সালের নির্বাচনে (১৫৩ জন খ্যাত) ফলাফল বানানোর কারিগর এইচটি ইমাম এর মত হাতও ব্যর্থ হবে।

তবে প্রস্তাব সরকারি দল যাই দেক না কেন, সংলাপের নিয়ন্ত্রণ এখনও সরকারি দলের হাতে। তাই কাদের বলছেন, “আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না, আলোচনা অব্যাহত থাকবে: কাদের”। অর্থাৎ আমরা যা দিচ্ছি তাই। এর বাইরে কিছু নাই।

তবে আর একটা দিক আছে। গত ১ নভেম্বর গণভবনে টেবিলের দু’পাশে যারা মুখোমুখি বসেছিলেন, তারা এটা ১৯৯১ সালের পর প্রায় ২০ বছরের মতো হলো, এভাবে মুখোমুখি আগে কখনো এমন বসেছেন আমাদের মনে পড়ে না। এই সময়কালের শেষের ১০ বছর বিরোধীরা সরকারি দলের মুখোমুখি হয়েছে কেবল ভিকটিম হিসেবে। ফলে তারা যে আবার কখন টেবিলে মুখোমুখি বসতে পারে বা চোখে তাকিয়ে কথা বলতে পারে, এটা মিডিয়া বা সাধারণ মানুষের চোখে অকল্পনীয় হয়ে গেছিল। তাই অনভ্যস্ততার চোখ ছড়িয়ে ছিল চার দিকে।

এখন কী হবে?
প্রথমত, সরকারি পক্ষ ছিল সংলাপ কেন তা তাদের জানা। ফলে প্রস্তুতও পরিকল্পিত। অন্য দিকে, বিরোধীরা ছিল চোখে লাগার মত হোমওয়ার্কহীন আর পুরো অন্ধকারে। যদিও কেনো সংলাপ, কী অফার সেসব কিছুই আগাম ধারণা না থাকায়, সেটাও একধরনের অপ্রস্তুতি এবং পরিকল্পনাহীন হয়ে থাকতে হওয়া। তবে তারা এ ধরনের পরিস্থিতিতে সব ইতিবাচকভাবে দেখছিল, অথচ কোথাও কোনো ইঙ্গিত ছাড়াই। এ ছাড়া মানুষ ভালো হয়ে যেতেও পারে – ধরনের ভাবনাকে চিন্তার কোন অবস্থানে জায়গা দিয়েছিল; অথচ তাদের উচিত ছিল তাদের দাবির কোন কথাটা কিভাবে, কার পরে কী বলবে- এগুলো নিয়ে কিছু আগাম পরিকল্পনা করে হাজির হওয়া। আর আগাম কিছুই ইতিবাচক দেখার দরকার ছিল না। তবে এখন আর একটু গোছানোর সময় পেয়েছে।জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তা নিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপে ‘সমাধান পায়নি’ তারা।

তাহলে এখন কী হবে?
লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী কাদের এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করেছেন। তার অনুমান ৮ নভেম্বরের পর অনেক কিছু জানা যাবে। তিনি আসলে হয়ে যাওয়া সংলাপকে (মানে প্রদত্ত অফার) প্রবল ইতিবাচকভাবে দেখার ও পেশ করার সুযোগ নিয়েছেন। তিনি বলছেন, আবার ছোট আকারে বসার দরকার হতে পারে।

এখন ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি যদি সংলাপ (বা কোনো অফার) প্রত্যাখ্যান করলাম ধরনের কথা বলার দিকে যদি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে স্বভাবতই মধুচন্দ্রিমার দিন শেষ হবে, কাদেরের ৮ তারিখও। সে ক্ষেত্রে আমরা সংলাপ-পূর্ব দিনগুলোর মতো আবার দমন-নির্যাতনে সংঘাতের দিনগুলোতে ফিরে যেতে দেখব।

না, আজকের পরিস্থতি আরও আপোষের অভিমুখে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশা করছেন, আবার সংলাপ খালেদার মুক্তির এজেন্ডায় হতে পারে। কাদের: খালেদার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

সবশেষে গত কালকে ভারতের পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী এক লেখা ছাপা হয়েছে সাউথ এশিয়া মনিটরে, সেখানে তার কিছু মন্তব্য আছে। এটা মূলত আগের বার হাসিনাকে তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ যতকিছু বলে অভিযুক্ত করেছিলেন এবারের লেখাটা তার শোধবোধে থুক্কু বলা; কথা ফিরিয়ে নেয়া বলা যেতে পারে। যদিও লেখার শিরোনামটা অদ্ভুত – লিখছেন, “ঘেরার মধ্যে পড়া আওয়ালী লীগ কী সম্মিলিত বিরোধীদের চাপ সামলাতে পারবে?”। আসলে এবারের পুরা লেখায় তার বক্তব্য কেবল একটা বাক্যে – “In this effort, the AL can count on India’s support.”। অর্থাৎ তিনি বলতে চাইছেন, এই পরিস্থিতিতে হাসিনার ভারতের কোলে মাথা রাখতে পারে। “তারা খুশিই হবে”।

যদি পরিস্থিতির পরিণতি এদিকেই যায় বা নিয়ে যাওয়া হয় তবে এর মানে হবে, বাংলাদেশের রাজনীতিক সংকটে এরপর সমাজের একটা বড় অংশ এসবের বাইরে থেকে যাবে যারা রেডিকেল হতে থাকবে। না, বলা ভাল তাদেরকে ঠেলে দেয়া হবে; যাদেরকে না লীগ না বিএনপি বা এদের মত কেউ প্রতিনিধিত্ব করে।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

 

[এই লেখাটা এর আগে গত ০৩ নভেম্বর ২০১৮ দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার অনলাইনে (প্রিন্টে পরের দিন) “সংলাপ কোথায় গিয়ে দাঁড়াল  – এই শিরোনামে ছাপা হয়েছিল। পরবর্তিতে সে লেখাটাই এখানে  আরও নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে।  ফলে  সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে এখানে ছাপা হল। ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s