পেটসর্বস্ব হলে বুদ্ধিজীবিতা হয় না
গৌতম দাস
১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০৩
[সার-কথাঃ বুদ্ধিজীবিতা করতে গেলে চিন্তার স্বাধীনতা লাগে। এটা প্রি-রিকুইজিট বা আগাম শর্ত। পেটের স্বার্থ তীব্র হয়ে গেলে অথবা আপনি নিজেই পেটসর্বস্ব চিন্তাবিদ হয়ে গেলে বুদ্ধিজীবিতা আর আপনার জন্য নয়। কারণ আপনার চিন্তার আর স্বাধীন হবার সুযোগ নাই। পেটের-স্বার্থ চিন্তার উপর আধিপত্য নিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের রাজনীতি প্রসঙ্গে ভারতের সরকার অথবা প্রাক্তন কূটনীতিক বা বুদ্ধিবৃত্তি জগতের কেউ কোনদিন কোন মুল্যবোধ নীতি-নৈতিকতার উপর দাঁড়িয়ে কথা বলে নাই। নাগরিক মৌলিক মানবিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক বা জাতিসংঘের গৃহীত মুল্যবোধের উপরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে না পারলে ভারতের সেসব কথা আন্ডার-স্টেটমেন্ট বা নিম্নতলের খাটো-কথা হয়েই থেকে যাবে; পেটসর্বস্ব কথা যাকে বলে।]
এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় (MEA) কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে ঐ অনুষ্ঠান ছিল নিয়মিত ব্রিফিং, বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষ কোনো কিছু নয়। বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোয় ৬ ডিসেম্বর তাদের নয়াদিল্লি প্রতিনিধি প্রেরিত এমন রিপোর্টে এটা ছাপা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, “এর আগে নানা সময় বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের ভোট নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগ্রহ দেখিয়েছে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখপাত্র রবীশ কুমার এড়িয়ে যান”।
তার মানে, ভারত অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করে না এমন নয়; করেই থাকে এবং সেটা এখানেও তারা অস্বীকার করে নাই। তার পরও কোনো মন্তব্য করেননি মুখপাত্র। কিন্তু তবুও যে কথার অর্থ হয় না, কথার কথা – এমন কথা হিসেবে বলেছেন, “বাংলাদেশের ভোট একান্তই ওই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমার মনে হয় না, প্রতিবেশী বন্ধুদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে”।
গত ১৭ নভেম্বর প্রথম আলোতে এমনই আর এক রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। তবে সেটা ছিল মূলত একই প্রতিনিধিরই নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে নেয়া কিছু মন্তব্য-প্রতিক্রিয়াসংবলিত একটি রিপোর্ট। আর সেই মন্তব্য-প্রতিক্রিয়াদাতা ছিলেন ভারতের কিছু সাবেক এবং বর্তমান রাষ্ট্রদূতও। এ ছাড়া, আরো ছিলেন এক থিংকট্যাংক ব্যক্তিত্ব।
১৭ নভেম্বরের রিপোর্ট লিখার আগে বাংলাদেশে ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সাথে সরাসরি সে প্রতিনিধির কথা হয়নি। তবে অন্য কোথাও তিনি যেসব কথা বলেছেন, এমন রেফারেন্সে কিছু কথা সেখানে আছে। যেমন – বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, এটা দেখে নাকি ভারত “উৎফুল্ল”। এছাড়া, ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য না করলেও তারা মনে করেন, “সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে ঠিক সময়েই ভোট হবে এবং সেই ভোট হবে “অংশগ্রহণমূলক”; বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকবে” ইত্যাদি।
কিন্তু ঘটনা হল, আমাদের নির্বাচন নিয়ে ভারতের এ’ধরনের প্রতিক্রিয়া পড়তে গিয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যায় পড়তে হয় তা হল, আমাদের কোনো ইস্যুতে ভারতের “সরকারি অবস্থান” অথবা ভারতের কোনো ইন্টেলেক্ট (Intellect) বা সাবেক ডিপ্লোম্যাটের বক্তব্য কখনোই কোনো “নীতিগত অবস্থানে” অথবা কোনো “মরালের” ওপর দাঁড়িয়ে তারা বলছেন – তা আমরা সাধারণত দেখিনা।
তাদের মন্তব্যগুলো অনেকটা – “মেরা ভারত মহান হ্যায়” ধরনের “জাতিবাদী দেশপ্রেমিকে” (State Interest) বক্তব্যের মত। যেকোন জাতিবাদী শ্লোগান কখনই কোন নৈতিকতা বা নীতির উপর দাঁড়াতেই পারে না যেটা অন্য রাষ্ট্রস্বার্থের ক্ষেত্রেও কাজ করবে, মানে কমন। এজন্য বলা হয় জাতিবাদী শ্লোগান মাত্রই এমন যে, তা সব সময় কোন কমন মরালিটি-ভিত্তিক হয় না। ফলে তা ‘জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম’ সর্বস্ব বক্তব্য। আর যা ভারতের ‘জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিকতা’ সর্বস্ব, তাতে ভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশের কী স্বার্থ? তাই এর সোজা মানে, এগুলা ভারতের সরাসরি একান্ত স্বার্থের দিক থেকে বলা কথা। অর্থাৎ কমন ইন্টেলেক্ট ভ্যালুজ বা “বুদ্ধিবৃত্তিক অভিন্ন মূল্যবোধ” – এর ওপর দাঁড়িয়ে বলা কোনো কথা নয়। ভারতের সরকারী অবস্থান বা কোন ইন্টেলেক্ট বা সাবেক ডিপ্লোম্যাটের বক্তব্য কোন “বুদ্ধিবৃত্তিক অভিন্ন মূল্যবোধ” দাঁড়াতে এখনও কোনদিন পারে নাই। শিখেনি বা পারেনি।
আসলে নীতিগত অবস্থানের উপরে দাঁড়ানো মানে কী? এর মানে হল, এমন এক অবস্থান যার পেছনে কিছু ভ্যালুজ বা মূল্যবোধ বা মরাল কাজ করে আছে। আর “বুদ্ধিবৃত্তিক কমন মূল্যবোধ” বলতে যেমন – যেকোন রাষ্ট্রের নাগরিক মৌলিক স্বার্থ (Human values) বা আন্তর্জাতিক মানবিক নাগরিক অধিকার (Civil & political Right)। সব রাষ্ট্রেরই করণীয় ‘নাগরিক অধিকার রক্ষার’ ন্যূনতম কর্তব্য আছে। সেকারণে চাইলে সহজেই, চেষ্টা করলে যেকোনো দু’টি রাষ্ট্রের “বুদ্ধিবৃত্তিক কমন মূল্যবোধের” কিছু ভিত্তি দাঁড় করানো সম্ভব। কিন্তু উলটা দিকে – এর অনুপস্থিতি মানে, কমন কোন ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে বলা কথা যদি না-ই থাকে, তবে ভারতের সরকারি অবস্থান অথবা ভারতের কোনো ইন্টেলেক্ট বা সাবেক কূটনীতিকসহ যে কারো মন্তব্যের কোনো অর্থ-তাৎপর্য বা ভিত্তি থাকে না। যেমন – বাংলাদেশের নির্বাচনে ‘নাগরিকদের স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার অধিকার’ থাকতে হবে। এটা মানার মত কী ভারতের কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যক্তিত্ব সত্যিই কী আছেন? অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না!
সব রাষ্ট্রেরই কৌশলগত নানা স্বার্থ থাকে, যার ফলে সব সময় সত্যি কথাটা সরাসরি বলতে পারে না। তবে মিথ্যা না বলে, মানে সত্য-মিথ্যার মাঝখানে নিজ অবস্থান অস্পষ্ট, রেখে কথা বলার ধরণ, এটাই যেন কূটনৈতিক ভাষার এক বড় বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এ তো গেল রাষ্ট্রীয় অবস্থান; তাহলে কোন বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যক্তি যিনি সরকারি পদে নেই, তার কোন ‘বুদ্ধিবৃত্তিক মূল্যবোধ’-এর ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলতে না পারার কোন কারণ নাই। আর এই না পারাটা অগ্রহণযোগ্য। বরং এতে তিনি আসলে একরকম করুণার পাত্র হয়ে যান। আর সোজা ভাষায় বললে তা হয়ে দাঁড়ায় – পেটসর্বস্ব এক লোকের অযাচিত বা গায়ে পড়া কিছু কথা। এর চেয়ে বড় কথা, এতে তাঁর ধান্ধাবাজি ও পেটিস্বার্থের দিকটিও উদোম হয়ে যায়। তবে আমাদের অবজারভেশন বলে, ভারতের প্রায় সব প্রাক্তন কূটনীতিক যেখানে চাকরি শেষে প্রো-আমেরিকান অথবা সরকারি শুভ-দৃষ্টিপ্রাপ্ত থিঙ্কট্যাঙ্কে নিয়োজিত হয়েছেন। খুব সম্ভবত চাকরি শেষের এই নিয়োগের স্বার্থেই তাদের কোন স্বাধীন অবস্থান আমরা দেখি নাই। সারা জীবন দল নির্বিশেষে ‘সরকারি অবস্থানের’ তাবেদারি করতে থাকেন। অতএব এটা পেট সর্বস্ব অবস্থান বলতে পারি, তাই কোন নীতিগত অবস্থানের কোন সুযোগ নাই।
একথা সত্য, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ (State Interest) জিনিসটার গুঢ় দিকটা অনেক সময় মরালিটি দিয়ে গঠিত ও উদ্ভূত হয় না। তাই অনেকের কাছে তা রক্ষা করা কঠিন। এর পরও রাষ্ট্র-সরকারের নীতি-পলিসিগত কিছু ন্যূনতম দিক সেখানে থাকে। চাইলে তা রাখাও সম্ভব; আর তা বজায় রাখতেও হবে যদি নুন্যতম কিছু মৌলিক নীতি নৈতিকতা মেনে চলতে নিজের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন। কিন্তু এই মাপকাঠিতে ব্যক্তির, বিশেষত বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে জড়িতদের বেলায় এমন ছাড়ের কথা বলা হচ্ছে না। সে সুযোগও থাকার কথা নয়।
আবার ‘রাষ্ট্রস্বার্থ’ বলেই তার ক্ষেত্রে সব ছাড়, ব্যাপারটা তেমনও নয়। বাংলাদেশে দিল্লির স্বার্থ আছে, থাকবে। কিন্তু অবশ্যই সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিষয়ক ন্যূনতম কিছু নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে এরপর সেই স্বার্থ প্রকাশিত হতে হবে। জাতিসঙ্ঘের বা আন্তর্জাতিক নীতি কনভেনশনের কিছু নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এবং মানবাধিকার হতে হবে এসবের ভিত্তি। আসলে এমন ভিত্তির ওপর যদি দাঁড়াতে পারি, তবে সেই কারণে আপনাতেই সেখান থেকে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে মন্তব্য করার ভিত্তি ও সাফাই তৈরি হতে পারে। কারণ, উভয় রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থের পক্ষের কিছু নৈতিকতা বা মূল্যবোধের অভিন্নতা, এটাই সেই ভিত্তি তৈরি করে দিতে পারে।
যেমন – “জনগণের ভোট দেয়ার সুযোগ অবাধ হতে হবে”। আর সেই অবাধে দেয়া ভোট থেকেই “একমাত্র রাষ্ট্রক্ষমতার ম্যান্ডেট প্রাপ্ত” বলে কোন দল বিবেচিত হতে পারে – এটা একটা কমন মুল্যবোধের ভিত্তি হতে পারে। কারণ এই কথাটা কেবল বাংলাদেশের বেলায় নয়, ভারত ত বটেই যেকোন রাষ্ট্রের বেলায়ও সমান ভাবে সত্য। আর এটা যেকোন মডার্ন রিপাবলিক রাষ্ট্রের ন্যূনতম বৈশিষ্ট্য। অতএব এটা হতে পারে অভিন্ন নৈতিকতা বা মূল্যবোধ। কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রস্বার্থ এমনই “দুস্থঃ আর হাভাতে” অবস্থায় পৌঁছেছে যে, বাংলাদেশের জনগণের “ভোট দেয়ার অধিকার”- ন্যূনতম এ দিকটি উপেক্ষা করে হলেও যেকোন উপায়ে ভারতকে বাংলাদেশ থেকে নিজের রাষ্ট্রস্বার্থ উদ্ধার করতে হয়! ভারত এমনই দুস্থঃ! এমন জায়গায় পৌঁছে গেছেন ভারতের নীতিনির্ধারক মহল।
গত সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের বাংলাদেশে আসা আর তাঁর খোলাখুলি হস্তক্ষেপ, এখনও এক রেকর্ড হয়ে আছে। তিনি বলেছিলেন, “সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দল নিয়ে” মানে, বিএনপির জোটকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। এছাড়া এরশাদের সাথে মিটিংয়ে সুজাতা এরশাদকে নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা এরশাদ গণমাধ্যমে প্রকাশও করে দিয়েছিলেন। এরশাদ বলেছিলেন, তাকে ‘পাতানো’ বিরোধী দল হয়ে যেতে বলা হচ্ছে, তা না হলে নাকি ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায়’ এসে যাবে।
আমরা সবাই বিস্ময়ে লক্ষ করেছি সুজাতার সে হস্তক্ষেপমূলক পদক্ষেপ নিয়ে ভারতের কোনো বুদ্ধিজীবী, সাবেক কূটনীতিক বা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কেউ কখনো নিন্দা বা সমালোচনা করেননি। নিজেরা লজ্জিত ও বিব্রতও হননি। অন্তত ভারত-সরকারের এই ভূমিকার প্রশ্নে তাদের কোনো ভিন্ন মত আছে, এমনটি দেখা যায়নি। এই হল ভারতের বুদ্ধিজীবীতা!
বাংলাদেশে আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন এসেছে। আর তাঁরা এই নির্বাচন নিয়ে আবার মন্তব্য করতে এসেছেন। রাষ্ট্র, নির্বাচন, সরকার ইত্যাদি বিষয়ে তারা কী বলবেন? কাকে ভালো, কাকে মন্দ বলবেন? কিসের ভিত্তিতে বলবেন? ভারতের ইন্টেলেক্ট, সাবেক ডিপ্লোম্যাট বা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কখনোই যে ভিত্তি তৈরি করা পর্যন্ত পৌঁছতেই পারেননি! এটা তো তাই একধরনের পেটসর্বস্ব বা স্বার্থসর্বস্ব হয়েই আছে সব কিছুতে। এ অবস্থায় এবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার যখন বলেন, ‘বাংলাদেশের ভোট একান্তই ওই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমার মনে হয় না প্রতিবেশী বন্ধুদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে”- তখন এই অট্টহাসি দেয়া ছাড়া আর কী করা যায়! স্বভাবতই এগুলো হাস্যকর ‘অনর্থক কথা’ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং হতে থাকবে।
কিন্তু তবু ঘটনার আর এক ভিন্ন সুক্ষ্ম কোণও সম্ভবত আছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমারের এবারের মন্তব্য করতে না চাওয়া – এরও অর্থ আছে অবশ্যই; তাহলে সেটাই বা কী? যে অর্থ না লিখলেও প্রকাশিত হয়ে যায়, সেই অর্থটা কী? এর সোজা অর্থ হল, বাংলাদেশে যা হচ্ছে, এ পর্যন্ত সেটাই ঠিকঠাক; অর্থাৎ যা যা হবে বলে তারা জেনেছে সেটিই ভারতের স্বার্থ ও অবস্থান এর পক্ষেই আছে। দ্বিতীয়ত, এর আর এক অর্থ হল – খুব সম্ভবত ভারত মনে করে এবারের নির্বাচন নিয়ে যদি ভারত প্রকাশ্যে তার “অনুমোদনের কথা” ২০১৪ সালের নির্বাচনের মত প্রকাশ করে ফেলে, তবে সমস্যা হবে। অবশ্যই মূল কারণ এবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। যেকোন ভাবে আওয়ামী লীগ আবার জিতেছে এটা দেখতে চাওয়া – এটা তাদের প্রথম চয়েজ বা কাম্য হলেও যদি কোন কারণে প্রধান বিরোধী “জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট” কোনো ‘বিপর্যয়’ ঘটিয়ে ফেলে, তখন কী হবে? এই দুশ্চিন্তা থেকেই সম্ভবত, মূলত তাদের এইসব “অনর্থক কথা” বলে রাখা। এমন অর্থই রবীশ কুমারের ‘না বলা কথা’ প্রকাশ করেছে।
বোঝা যাচ্ছে, ভারত সরকারের মুখপাত্র অথবা ভারতের কোনো ইন্টেলেক্ট, সাবেক কূটনীতিক বা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সবাই এখনও এমনই কঠিনভাবেই দুস্থ-হাভাতে অবস্থায় আছেন যে, তাদের পক্ষে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক ভোটের অধিকার প্রসঙ্গে কোনো নৈতিক অবস্থান নেয়া অসম্ভব। এ কারণেই ভারতের সরকার বা কোনো ইন্টেলেক্টের বিবৃতি-মন্তব্যের কোনো গুরুত্ব তাদের কাছেও নেই।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
[এই লেখাটা এর আগে গত ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার অনলাইনে (প্রিন্টে পরের দিন) “পেটসর্বস্ব বুদ্ধিজীবিতা“ – এই শিরোনামে ছাপা হয়েছিল। পরবর্তিতে সে লেখাটাই এখানে আরও নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে এখানে ছাপা হল। ]