ভেটো সদস্যপদ জাতিসঙ্ঘকেই না বুঝলে ভারত পাবে না


 ভেটো সদস্যপদ জাতিসঙ্ঘকেই না বুঝলে ভারত পাবে না

গৌতম দাস

০৪ মে ২০২০, ০০:০৬ সোমবার

https://wp.me/p1sCvy-2YP

 

Can-un-security-council-make-the-reform-happen-in-september

_

জাতিসংঘ [United Nations] সম্পর্কে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা অনেকে যা করেন অথবা এমন কিছু যা দৃঢ় আশা করেন  তা হল এই যে, এর সদস্যরাষ্ট্র সবার ক্ষমতা সমান আছে বা থাকবে। মানে, এখানে ইউনিভার্সালি সব রাষ্ট্রকে সমান ক্ষমতার সদস্যপদ দানের প্রতিষ্ঠান এমন বোধহয় এটা হয়ে আছে অথবা হওয়া উচিত। অথচ পপুলার শব্দে বললে এখানে “সমান ক্ষমতার গণতন্ত্র” বলে কোন ধারণা নাই। এমনকি আবার সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে এখানে সব (তবে কিছু হয়) সিদ্ধান্ত হয় না।

এখানে প্রথম যে ব্যতিক্রম তা হল এর সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিবার কমিটি বা বডি কোনটা তা নিয়ে আর তা কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সে প্রসঙ্গে। যেমন প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণত ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলো সকলে সমবেত হয় এক সাধারণ সভায় (General Assembly বা UNGA) তা এক অর্থে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ কমিটি। আর এর সিদ্ধান্ত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে।  কিন্তু আবার না। কেন?  কারণ নিরাপত্তা পরিষদ বলে জাতিসংঘের আরও ক্ষমতাধর অন্য এক কমিটি আছে। আর তা সব সময় প্রতীকী ভাবে বসে থাকা অর্থে সাময়িক মূলতবিতে থাকে (যা যেকোন সময় ডেকে বসানো যায়), এটা এমন এক রাজনৈতিক কমিটি। এটাই যেকোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিবার সর্বোচ্চ কমিটি, আর তা  অবশ্যই সাধারণ পরিষদের (UNGA) চেয়ে উপরে। এই রাজনৈতিক কমিটিই বা এই বডির নাম হল সিকিউরিটি কাউন্সিল বা বাংলায় নিরাপত্তা পরিষদ।  সাধারণ পরিষদ সভার সিদ্ধান্তের উপর দিয়ে চাইলে এই সিকিউরিটি কাউন্সিল (নিরাপত্তা পরিষদ) UNSC সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

সবাই মিলে ১৯৩ বনাম ভেটো ৫
জাতিসংঘে সাধারণ সভার সদস্য হল সবাই, যেকোন সদস্য রাষ্ট্রই, যা এখন মোট ১৯৩ টা রাষ্ট্র।  আর তুলনায় নিরাপত্তা পরিষদের মোট সদস্য মাত্র মোট ১৫ টা রাষ্ট্র।  অথচ নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘের সবগুলো কমিটির উপর দিয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এছাড়া আরও কথা আছে। নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১৫ সদস্যের আর এই পনেরোর অন্তত দশ সদস্য এরা প্রতিনিধিত্বমূলক বলে তারা দাবি করে।  মানে এই দশ রাষ্ট্র কেবল নিজেই নিজের প্রতিনিধি না বরং  নিজ মহাদেশের বাকি সবারও প্রতিনিধি আর নির্বাচনও হয় নিজ মহাদেশের অন্যান্য সদস্যবাষ্ট্রের ভোটে, লবিংয়ে। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপুর্ণ দিকটা হল এই ১৫ রাষ্ট্রের  সবাই সমান ক্ষমতার নয় বরং এদের মধ্যে আবার ভাগ আছে। এখানে সবার ক্ষমতা সমান না। যেমন ঐ বডিতে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তাব উঠলে ঐ ১৫ রাষ্ট্রের মধ্যে বিশেষ পাঁচ রাষ্ট্র আছে যাদের যেকোন একটা রাষ্ট্র আপত্তি দিলে ঐ বডিতে উঠা যেকোন প্রস্তাব নাকচ হয়ে যাবে, পাশ হয় নাই মনে করা হবে; এমনকি তাতে বাকি ১৪ সদস্যই প্রস্তাবের পক্ষে থাকলেও তা নাকচ বলে বুঝতে হবে। ঐ পাঁচ বিশেষ সদস্য হল আমেরিকা, রাশিয়া আর ইউরোপের দুই রাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স আর এশিয়ায় চীন। এরাই বিশেষ সদস্য বা ভেটোক্ষমতা সম্পন্ন সদস্য। মানে  যারা একাই আপত্তি দিয়ে যেকোন সিদ্ধান্ত-প্রস্তাব গ্রহণ বাতিল করে দিতে পারে।  এটাই ভেটো [VETO] বা আপত্তি দেয়া।
আরও একটা দিক হল, ঐ পাঁচ ভেটো সদস্যপদধারীরা স্থায়ী সদস্য। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১৫ সদস্যের অবশিষ্ট দশ সদস্যপদ অস্থায়ী ও রোটেশনাল [rotational] মানে, ঘুরে ঘুরে একেকবার একেকজন। মানে এই দশ পদ মাত্র দুবছর মেয়াদের আর প্রতিদুবছর পর পর  তা আনুপাতিক হারে  বিভিন্ন মহাদেশের মধ্য থেকে নির্বাচিত করে নিয়ে পূরণ করা হয়।  মানে একবার এশিয়া থেকে ভারত বা জাপান সদস্য হলে দুবছর পরে, পরের বার হয়ত লবিতে বাংলাদেশ অথবা পাকিস্তানকে তাদেরকে পালটা নির্বাচিত করে দিতে হবে। এভাবে এশিয়া-আফ্রিকা মহাদেশ মিলে এখান থেকে পদ আছে মোট পাঁচটা, ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্রের জন্য পদ দুইটা, পুর্ব ইউরোপের জন্য একটা, পশ্চিম ইউরোপের ও বাকিরাষ্ট্রের জন্য দুইটা পদ, এভাবে মোট ১০টা অস্থায়ী পদ।

কিন্তু  জাতিসংঘের গঠননীতিতে আপতিক দৃষ্টিতে সদস্যদের মধ্যে যা  “বৈষম্যমূলক মনে হচ্ছে” তা এমন কেন? প্রথমত, এটা সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত কোন রাষ্ট্রজোট বা ক্লাব-সমিতি নয়। বরং জাতিসংঘ যে এমন সংগঠনই নয় সেটা নিয়েও কোন লুকাছুপিও নাই। তাহলে এমন সংগঠন গড়তে সদস্যরা রাজি হল কেন?

বিচার ও সমাজের সম্পর্কঃ
বিচার আর সমাজ শব্দ দুটোর মধ্যে সম্পর্ক হল, এরা পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। যদি কোথায় কোন সমাজ গড়তে চাই তবে সেখানে আগে বিচার প্রতিষ্ঠা করে নিতেই হবে। অথবা এভাবে বলা যায় বিচার-ইনসাফ থাকলে বুঝতে হবে এবার এটা সমাজ হয়ে উঠতে পারবে। ঘটনা হল, মানুষ এক জায়গায় জড়ো হয়ে থাকলে সেখানে মানুষের মাঝে নানান পারস্পরিক স্বার্থবিরোধ দেখা দিবেই। এই বিরোধ মীমাংসা দুটা পথ হতে পারে। এক, গায়ের জোর খাটিয়ে মীমাংসা। যার গায়ের জোর বেশি সে ঐ জোর খাটিয়ে মীমাংসা নিজের মত করে করে নিবে, আর এতে “যার গায়ে জোর বেশি সেই সঠিক” – এই ভিত্তিতে এমন অবস্থাটাই বাকিদের মেনে নিতে হবে। আসলে বলা বাহুল্য, এখানে কোন ন্যায়-অন্যায় ইনসাফের ধারণা কার্যকর থাকবে না। আর অন্য দ্বিতীয় পথটা হল, অনেক পরিপক্ক ধারণা। এখানে বিরোধ মীমাংসা গায়ের জোরে বা সামরিক জোরে একেবারেই নয় বরং আগেই যেকোন বিরোধে মীমাংসা কোন নিয়মনীতিতে ফয়সালা করা হবে তা সকল সদস্যের মতামত নিয়ে ঠিক করে রাখা হবে। এগুলোকে কনভেনশন (Convention) বা আন্তর্জাতিক আইনে গৃহিত সকলের অবস্থান বলে বলা হয়। আর ঐ নিয়মনীতির ভিত্তিতে যেকোন রাষ্ট্রবিরোধ মীমাংসা করার চেষ্টা করা হয় এখানে। জাতিসংঘ এই দ্বিটিয় পথটা অনুসরণ করে আগানোর চেষ্টা করে থাকে।

এই আইডিয়ার আলোকের গ্লোবাল প্রতষ্ঠান জাতিসংঘ গড়ার প্রস্তাবটাই করেছিলেন অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট রুজভেন্ট ১৯৪২ সালে, সবার আগে রাশিয়ার স্টালিন আর বৃটেনের চার্চিলের কাছে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দেয় তাঁরা এতে রাজি হবেন কেন? কেননা তাদের ভয় হয়েছিল, ধরা যাক সংখ্যাগরিষ্ট্রের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে যেহেতু তাতে, হবু রাষ্ট্রসমিতিতে আমেরিকা যদি বাকি গরীব সদস্য রাষ্ষ্ট্রগুলোকে ছলে বলে চাপে নিজের পক্ষে নিয়ে এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত পাশ করিয়ে ফেলে তখন রাশিয়ার কী হবে? বিশেষ করে রাশিয়ার হাতে ত সামরিক শক্তি আছেই – কিন্তু এটা হাতে সাথে থাকা সত্বেও কেন সে অমন কোন  রাষ্ট্রসমিতির সদস্য হতে যাবে যারা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত রাশিয়ার উপর চাপিয়ে দিবে? অর্থাৎ প্রথম সমস্যা দেখা দেয় আমার হাতে সামরিক শক্তি থাকা সত্বেও কেন আমি অন্যের সাথে কোন কমিটিতে বাধ্যবাধকতার দায় নিয়ে বসতে যাব?  আর এতে যেখানে আমার হাত বাধা পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে? তাই মূলত এটা সমাধান করতেই এবার প্রস্তাব সংশোধন করে ভেটো আইডিয়া এনে বলা হয় যে কোন সিদ্ধান্ত নিজের বিপক্ষে গেলে এই ভেটো-ক্ষমতাধর পাঁচ রাষ্ট্রের যে কেউ আগেই সেটা জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত নয় বলে ভেটো প্রয়োগ বা  সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিতে পারবে। তার মানে এতে দাঁড়াল ঐ পাঁচ রাষ্ট্র যেসব ইস্যুতে সকলেই একমত কেবল সেটাই জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত বলে পাস হতে পারবে। সেটা জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত বলে পাস হবার সম্ভাবনা। আর তাতে বাকি সকল সদস্যের সাথে নিতে দিবে বা পারবে।  যেকোন ইস্যুতে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত হতে হবে ঐ পাঁচ স্থায়ী সদস্যকে অবশ্যই ঐক্যমতে থাকতে হবে।   এই হল ভেটো বা স্থায়ী ইত্যাদি এসব শব্দগুলোর আসল অর্থ ও ব্যবহারিক তাতপর্য। রুজভেল্ট এভাবে সংশোধিত করে প্রস্তাব করতে পেরেছিলেন বলেই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠান জন্ম হতে পেরেছিল।

রুজভেল্টের ইচ্ছা উদ্দেশ্য ছিল কনভেনশন বা আন্তর্জাতিক আইন বলে গৃহিত আগাম নির্ধারিত নীতিগুলোর ভিত্তিতে দুনিয়ার সম্ভাব্য রাষ্ট্রবিরোধগুলো যতটা সম্ভব কমানো যায়, যুদ্ধ লাগা দেরি করিয়ে দেয়া যায় – এরই এক উদ্যোগ হবে জাতিসংঘ।  আর অবশ্যই এটা তখনকার মত করে করা এক উদ্যোগ বলে এটা তখনকার হিসাবে দুনিয়ায় কারা কারা সম্ভাব্য গ্লোবাল সামরিক  ও অর্থনৈতিক শক্তি বিবেচনা করা হয়েছিল – সেই ভিত্তিতেই ভেটো সদস্য দেয়া হয়েছিল ঐ ৫ রাষ্ট্রকে। যেটা এখন দিনকে দিন অনেক উত্থানপতন ঘটছে যেমন আমেরিকার জায়গা নেওয়ার দিকে ভেসে উঠছে চীন, এরকম আরও অনেক কিছু।  এজন্য এই পাঁচ কারা হবে এটাই আবার সেকালের জাতিসংঘ গড়ার প্রধান লিমিটেশন বা অস্থায়ীত্বের একটা বড় প্রমাণ।

দ্বিতীয় পর্বঃ ভারতের ভেটো ক্ষমতার সদস্য হবার খায়েস
শুধু খায়েশ বা আকাঙ্ক্ষা থাকলেই কিছু হয় না, স্বপ্ন দেখতে জানতে হয়, সেইসাথে সামর্থ্য আর বিস্তর ইতিবাচক ও ব্যাপারটা নিয়ে পুরাপুরি জানাশোনা হোমওয়ার্ক থাকতে হয়। শুধু ক্ষোভ থাকলে যে ভেটো ক্ষমতা  কিছুতেই পাওয়া যাবে না তা আগেই বলে দেয়া যায়। ভারতের হয়েছে এই দশা। এছাড়া আরেক প্রধান শর্ত হতে হয় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের জাতিসংঘ সেকালের এই ফেনোমেনাটা – এমন এক প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য আমেরিকা কেন এত ডেসপারেট ছিল এসব কিছু বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা কেবল একা রুজভেল্টের বাসনা নয়, বরং এটা ছিল এক পুরা আমেরিকান ড্রিম, বা বাসনা বলতে পারি। যেমন , প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৮) পরেও ততকালিন অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তিনিও প্রায় একই স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর তাঁর সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ হল – “লীগ অব নেশন”, এর জন্ম হওয়া।  লীগ অব নেশন (১৯২১) – এটাকে বলা যায় জাতিসংঘের আগের রূপ বা উদ্যোগ কিন্তু ব্যর্থ ভার্সান। এটা টিকে নাই, ১৯৩০  সালের পর থেকে এটা কার্যত নাই হয়ে গেছিল। কিন্তু এখনকার প্রসঙ্গের প্রাসঙ্গিক মুল কথাটা হল, ভারত জাতিসংঘ জন্মের ফেনোমেনা বুঝেছে, সে পরিপক্ক হয়েছে  এটা বিশ্বাস করা এখনও খুবই কঠিন হয়েই আছে। বিশেষ করে আগে সেকালে নেহেরু তো বটেই আর একালের মোদী কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে যেভাবে দায়ীত্বজ্ঞানহীন খেলা করছে।

সৈয়দ আকবরউদ্দিন, ভারতের একজন পেশাদার আমলা ডিপ্লোম্যাট, মাত্র গত ৩০ এপ্রিল তিনি অবসরে গেছেন। জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি পদে থাকা অবস্থায় তিনি অবসরে গেলেন। আমলা চাকরিজীবীর এক ব্যক্তিদিক থেকে চোখ ফেললে, তাঁরা যত উপরের পদে আসীন হতে থাকেন ততই অশান্তি-অনিশ্চয়তা, কনুই মারামারিতে দিন কাটে তাদের। সেইসাথে একটা কথার সাথে ততই তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে, কথাটা হল ‘কপাল’। সব প্রচেষ্টা ও উদ্যোগগুলোর উপরে দাঁড়িয়ে ভেসে থাকে এই ‘কপাল’। কপালে না থাকলে পোস্টিংয়ের ভাগ্যের চাকা ফিরবে না, তাই এসব বাক্যে ততই গভীর আস্থাভাজন হয়ে পড়তে থাকেন আমলারা। বিশেষ করে রাষ্ট্রটা যখন ভারত, যা চালায় বা চলে এসব মূলত পেশাদার শক্তিশালী আমলাগোষ্ঠির মাধ্যমে।

এসব আমলাজাত সমস্যা অন্যদের মত আকবরের ভাগ্যেও ঘটেছিল ব্যাপকভাবেই। গত ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সর্বশেষ যখন ‘তিস্তাচুক্তি না হওয়া-খ্যাত’ বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তখন আকবর ছিলেন – ভারতের ফরেন অফিসের  মুখপাত্র ও নিয়মিত ব্রিফিংদাতা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রায় সব আমলারই এক লালিত স্বপ্ন থাকে চাকরির মেয়াদশেষে বিদেশমন্ত্রী হয়ে যাওয়ার। ভারতে অনেকে হয়েছেনও। আর সেটি না হতে পারলেও অবসরে যাওয়ার আগে যদি পররাষ্ট্রসচিবও না হতে পারেন তবে ‘জীবনই বৃথা’- ধরনের অনুভূতি হয় তাদের। গত ২০১৩ সালের কংগ্রেসের দুই টার্মের সরকার সমাপ্তিকালে আমেরিকার সাথে ভারতের সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি শুধু না তা একেবারে সঙ্ঘাতময় ‘টিট ফর ট্যাটও’  হয়ে উঠেছিল। টেনশন বেড়েই চলেছিল। তাই, পরের বছরে ২০১৪ সালে মে মাসে মোদীর প্রধানমন্ত্রী জামানার শুরুতে আমেরিকা ও ভারত উভয়েই প্রবল আগ্রহে দ্রুত খারাপ সম্পর্কটা কী করে মিটমাট স্বাভাবিক করে নেয়া যায়, কার্যকর রুটিনে ফিরে শুরু করা যায় তা করতে উভয়ে উদগ্রীব থাকায়,  তা সহজেই হয়েই গিয়েছিল। এদিকে চীনের সাথে ভারতের সম্পর্কও জটিল এবং “কন্ট্রাডিক্টরি অনেক ফ্যাক্টরে” প্রায় সবসময়ই পরিপূর্ণ থাকে। চীনের থেকে বিনিয়োগ পুঁজি পাওয়া, চীনের সস্তা পণ্য আমদানি করা, চীনের বাজারে প্রবেশ করতে পারা এসবই ভারতের কাম্য। আবার এই চীনই ভারতের চোখে সম্ভাব্য সামরিক হামলার হুমকি; ১৯৬২ সালে ভারতের আসাম দখল করাতে সেই চীনা হামলার ট্রমা ও এর খারাপ স্মৃতি এখনও ভারতের মনে টগবগে। তাই দেখা যায়, এদুই দেশ আমেরিকা ও চীন  ক্ষেত্রে ভারতের বেস্ট অবস্থানগুলো কীকী হতে পারে তা নিয়ে সবচেয়ে ভালো হোমওয়ার্ক করা থাকা ভারতের কূটনীতিকদের জন্য পদ পাবার আসল সিড়ি।  এই বিচারে সেকালের রাষ্টদূত সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর ছিল বাস্তবত সবার উপরে। সেই সূত্রে তিনি অস্থির মোদীর চোখে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। মোদী তাকে তাই সটান সব বাধা ভেঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব করে নেন। আর শুধু তাই না, জয়শঙ্করের অবসরে যাবার পর ২০১৯ সালে মোদীর দ্বিতীয় টার্মের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও হয়ে যান তিনি। আর এসবের ঝাপটা লেগে ততই আকবরউদ্দিনের “কপাল” ক্রমশ ঢলে পড়া। যদিও সচিব তিনি হতে পারেননি, তবে জাতিসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি হতে পেরেছিলেন; আর সেটিই ছিল তার চাকরির মেয়া্দে শেষ পদবি।

ভারতের দক্ষিণের প্রাচীন ও বিখ্যাত ইংরেজি পত্রিকা ‘দ্য হিন্দু’ [THE HINDU], ব্রিটিশ আমলে ১৮৭৮ সালে এর জন্ম। এই ‘দ্য হিন্দুর’ আমেরিকায় স্থায়ী সংবাদদাতা রাখার সামর্থ্য আছে, তিনি হলেন শ্রীরাম লক্ষ্মণ। আকবরউদ্দিনের অবসরে যাওয়ার প্রাক্কালে শ্রীরাম নিজ পত্রিকার জন্য আকবরের এক বড় সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সেখানে প্রসঙ্গের ফোকাস করা হয়েছে –  জাতিসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়া এবং এর সম্ভাবনা।

জাতিসঙ্ঘ কী? কেন এবং ইতিহাসের কোন পটভূমি ও পরিপ্রেক্ষিতে এর জন্মচিন্তা এসেছিল বা জন্ম দেয়া দরকার হয়েছিল ও এর জন্ম হতে পেরেছিল, তা জানা ও নিজে ব্যাখ্যা করতে পারা, তাতপর্য বুঝা খুবই জরুরি। অন্তত আকবরুদ্দিনের। তাতে ভারতের রাজনীতিবিদেরা বেজার হলেও সত্য কথাটা তাকেই উচ্চারণ করতে হত।  ভারতে এই কাজটা রাজনীতিবিদ তো বটেই, কোনো একাডেমিকও সম্যক বুঝেছেন ও এর তাৎপর্য অন্যকে বুঝাতে পারেন এমন খুব কমই দেখা যায়। এমনকি জাতিসঙ্ঘের ভবিষ্যৎ কী, তাতে কোন দিকে আসন্ন কী অথবা এর সম্ভাবনা এবং লিমিটেশন কী, এসব নিয়ে কথা বলার মত ভারতীয় একাডেমিকও খুব বেশি দেখা পাওয়া যায় না। ভারতের আজন্ম ভুল হচ্ছে, হয়েছে কী তা বোল্ড মুখের উপরে উচ্চারণের লোক এখনও দেখা যায় নাই।

এর মূল কারণ সেই ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে অল্প কথায় যা বলা যায়ঃ ইউরোপের লেখা ইতিহাসে জাতিসংঘের জন্ম তাতপর্য নিয়ে আলোকিত করার দিক, এ’ব্যাপারে আমেরিকার চেয়ে তারা সবসময় পিছিয়েই থেকেছে।  এর মূল কারণ, আসলে ইউরোপের দুনিয়ার উপর রুস্তমি নেতাগিরি-কলোনিগিরিটাই  হারানোর দাসখত লিখে দিয়েই জাতিসঙ্ঘের জন্ম ইউরোপকে মেনে নিতে হয়েছিল। ঐ দাসখতে, যুদ্ধ শেষে তারা আর কলোনিগিরি করবে না ছেড়ে দিবে  – এই বলে দাসখত দিয়েই জাতিসংঘকে তাদের মেনে নিতে হয়েছিল।  তাই জাতিসংঘের জন্মকে বেশি গ্লোরিফাই অন্তত আমেরিকার লেভেলে তুলে করা সম্ভব ছিল না। আর এসব কিছুর প্রভাব পড়েছিল ব্রিটিশ কলোনি ভারতেও, ভারতীয় এলিট ও রাজনীতিবিদদের উপরেও। কারণ এসব এলিটেরা দুনিয়া সম্পর্কে ধারণা হয়েছে বৃটিশ পত্রিকা বা বই পড়ে, য়ামেরিকান রাইটিংস তাদের তেমন লাগালেই ছিল না।  ইউরোপ কালচারালি আমাদের কলোনিয়াল কাজিন ও মাস্টার, ফলে  পথ প্রদর্শক।  সম্ভবত সেকারণে, জাতিসংঘের গ্লোরিফাই প্রশ্নে আমরা বৃটিশদের চেয়েও নিচে। ভারতের কোনো রাজনীতিবিদ বা একাডেমিকও তাই জাতিসঙ্ঘের বৈশিষ্ট্য, তাৎপর্য, সম্ভাবনা ও লিমিটেশন সম্যক বুঝেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এর সবচেয়ে ভাল প্রমাণ নেহেরু নিজে।  এমনকি নেহরু থেকে মোদী পর্যন্ত (ফাঁকে মন্ত্রী/রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব মুখার্জিও) ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা জাতিসঙ্ঘ নিয়ে ঠিক কী বুঝতেন, কী ধারণা রাখেন এর ভাল প্রমাণ হল – জাতিসঙ্ঘের কাছে তারা কী চেয়েছেন, নিজ আমলে ঠিক কী আশা করেছিলেন এর মধ্যেই প্রকাশিত হয়ে আছে। আর সবার ক্ষেত্রেই এর সবচেয়ে ভাল আর স্থায়ী ও পোক্ত উদাহরণ হল কাশ্মির ইস্যু, যা ভারতের কপালে এক গভীর অবুঝ বা না-বুঝের লজ্জা হয়ে এখনও ঝুলে আছে।

আলোচ্য সাক্ষাৎকারে আকবরউদ্দিনও ভারতকে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ দেয়ার দাবি করেছেন, যুক্তি তুলে ধরেছেন। যেখানে মুল যুক্তির পয়েন্ট ভারতের জনসংখ্যা বেশি। অথচ জাতিসংঘের গঠনভিত্তি্র বাক্য বা চিন্তায় কার জনসংখ্যা কী তা কোথাও একেবারেই ফ্যক্টর বা বিবেচ্য নয়। তবু তিনি তা করেছেন।   কিন্তু কার কাছে? স্থায়ী সদস্যপদ কী কারো কাছে দাবি করতে হয়? অথবা খোদ সদস্যপদ জিনিসটাই কী কারো থেকে দাবি করে নেয়ার বিষয়? তাহলে আরো গোড়ার প্রশ্ন, জন্মের শুরুতে জাতিসঙ্ঘের স্থায়ী সদস্যপদ যারা পেয়েছিলেন তারা কার কাছে দাবি করে পেয়েছিলেন? এমনকি তাদের সদস্যপদ লাভ বা অর্জন করার ভিত্তি কী ছিল? সেটি কি একালের আকবরসহ সেকালের নেহরুরাও জানতেন?

এখানে প্রণব মুখার্জির কথা জুড়ে দিলাম এজন্য যে, তিনিও ভারতের জাতিসঙ্ঘের ইতিহাসবোধ কোন পর্যায়ে এর মস্ত উদাহরণ। গত ২০০৯ সালে শুরু হওয়া আওয়ামী রাজত্বের বর্ষপূর্তিতে পরের বছর ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা প্রথম ভারত সফরে গেলে সেটা ছিল ভারতের প্রধান “বাংলাদেশ-ডিলার” অর্থ/পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রণবের বোনা-ফসলের লাভালাভ বুঝে নেয়ার সময়। তখন ঐ সফর উপলক্ষে প্রায় ৫০ দফার দুদেশের এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত  হয়েছিল। ওর ৪৭ নম্বর দফা ছিল- “বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ দাবি সমর্থন করছে” […Prime Minister of Bangladesh conveyed her country’s support in principle for India’s candidature for the permanent membership of the United Nations Security Council……]। তবে যদিও আমরা আজও ঠিক জানি না আমরা তা কেন সমর্থন করেছিলাম, কীইবা পেতে। তার চেয়ে বড় কথা, তখন বা এখন আমরা যেন হলাম ‘ঘরে বেঁধে রাখা প্রিয় মুরগি’, কিন্তু যখন খুশি যাকে জবেহ করে খেয়ে ফেলা যায়। সেই আমাদেরই আবার এই সমর্থনের ওজন কী এতটাই? কাজেই এতে ভারতের লাভ কী হয়েছে আমরা জানি না। তবে বান্ধা মুরগি আরেকবার জবেহ দেওয়া হয়েছে বলা যায়। আর বিরাট লাভালাভের দিকটা হল,  জাতিসঙ্ঘ সম্পর্ক প্রণব মুখার্জির জানাশোনা কেমন এতে তা প্রকাশ পেয়েছিল। আর এর মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘ সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের মাত্রা ছড়িয়েছিলেন।

জাতিসঙ্ঘ সম্পর্কে বলা যায়, এটা ছিল সেকালে গত শতকের চল্লিশের দশকে বসে “আমেরিকান সেঞ্চুরি কায়েম হবে” [টাইম ম্যাগাজিনের মালিক সম্পাদক ‘হেনরি লুস’ – এর হাউজ থেকে ১৯৪১ সালে প্রকাশিত নতুন পত্রিকা লাইফ এ প্রকাশিত একেমিকান সেঞ্চুরি নামের আর্টিকেল] আগ্রহিরা যোগাড় করে পড়তে পারেন। ] – এমন এক হবু দুনিয়া সম্পর্কে আমেরিকার স্বপ্ন, আইডিয়া ও ইমাজিনেশনের প্রকাশ – এই হল আমেরিকার জাতিসংঘ বিষয়ক স্বপ্ন। আর বিশেষ করে তা ব্যক্তি হিসেবে ততকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট (১৯৩২-৪৫) রুজভেল্টেরই আইডিয়া। আবার ইউরোপের সাথে এই আইডিয়ার সম্পর্ক হল – ইউরোপ এর সাথে একমত হয়ে যায় এজন্য যে, মানে রুজভেল্টকে ইউরোপ নেতারা (মূলত হিটলার বাদে বৃটিশ-ফরাসী) নেতা মেনে নিলে হিটলারের হাতে তাদেরকে আর বেঘোরে মারা যেতে হয় না এবং তা সমূলে ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার একটা বিরাট  পথ ও সুযোগ হতে পারে। এ কারণে জাতিসঙ্ঘ জন্মের প্রধান তাৎপর্য হল, মার্কিন নেতা ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের সাহায্য পাওয়ার লোভে ইউরোপ হিটলারকে পরাজিত করার পরবর্তী দুনিয়াতে নিজেদের কলোনি দখল-ব্যবসা ত্যাগ করতেও রাজি, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছিল।

কিন্তু জওয়াহেরলাল নেহরুসহ ভারতীয় রাজনীতিবিদরা না এই ফ্যাক্টস জেনেছিলেন বা এর তাৎপর্য বুঝেছিলেন। এনিয়ে এখনো ভারতের কোনো মহলের স্টাডি আছে বলে জানা যায় না। তবে জানা যে নাই এর বড় প্রমাণটা হল- ভারতের এখনো – কাশ্মিরকে ভারতের বলে দাবি করার ভিত্তি তদানীন্তন রাজা হরি সিংয়ের স্বাক্ষর, তিনি অ্যাকসেশন (ভারতে অন্তর্ভুক্তি হতে দলিলে স্বাক্ষর) চুক্তিতে স্বাক্ষর দেয়াকে মনে করা হয়। জাতিসঙ্ঘের গঠনভিত্তি যে নীতি বা বাক্যের ওপরে দাঁড়ানো সে মূলনীতি অনুসারে, রাজা হরি সিংয়ের স্বাক্ষর মূল্যহীন বা কাশ্মিরের হয়ে কথা বলার আসল বা বৈধ কোনো অথরিটিই হরি সিং নন। কারণ, জাতিসঙ্ঘের জন্মনীতি অনুসারে- যেকোনো ভূখণ্ডের বাসিন্দা জনগোষ্ঠী সম্মিলিত মতামতই একমাত্র অথরিটি যারা বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে নির্ধারণ করবে তারা কিভাবে শাসিত হতে চান, কোথায় যুক্ত হতে চান অথবা আলাদা ভুখন্ড রাষ্ট্র থাকতে চান কিনা।

সার কথাটা হলো – কলোনিমুক্তিতে ১৯৪৭ সালে জন্ম থেকেই ভারত জাতিসঙ্ঘের ভিত্তিনীতি জানে না বা সে অনুসারে এই নীতি আমলই করেনি। তাই, ১৯৪৮ সাল থেকে কাশ্মির দখল করে আছে অথচ প্রধানমন্ত্রী নেহরু নিজেই কাশ্মীর ইস্যুটা জাতিসঙ্ঘের কাছে  মীমাংসা করে দিতে  নিয়ে গিয়েছিলেন। অথচ জাতিসঙ্ঘ নিজের জন্মভিত্তি অনুসারে কাশ্মির ইস্যু মীমাংসার জন্য গণভোট করার রায় দিবে এটা  তো জানা কথা। অথচ, জাতিসঙ্ঘ যে এমন রায়ই তো দেবে, নেহরু এটা জানতেনই না। মানে জাতিসঙ্ঘের জন্মনীতি তার জানা ছিল না বলেই জানতেন না তাই তিনি জাতিসঙ্ঘে গিয়েছিলেন। সেই থেকে জাতিসঙ্ঘ সংক্রান্ত এর তাতপর্য ও জন্মনীতি বুঝাবুঝি ’ সারা ভারতের একাডেমিক, রাজনীতিবিদসহ সবার কাছে ‘নিজের চায়ের কাপ নয়’ হয়ে আছে। অর্থাৎ, ভারতের কথিত দেশপ্রেম যেটা আসলে হিন্দু-জাতিপ্রেমে হাবুডুবু খাওয়া রাষ্ট্রচিন্তা, গড়াগড়িতে ডুবে আছে বা বলা যায়, এসব চিন্তাভাবনা তলায় চাপা পড়ে আছে। কারণ জাতিসঙ্ঘের ভিত্তি বুঝে গেলে নিজ দেশের কাশ্মির নীতি ভুল এবং তা জাতিসঙ্ঘের মূল নীতিবিরোধী বলে অবস্থান নিতে হবে।

মজার কথা হল – এই জাতিসঙ্ঘেরই স্থায়ী ভেটো সদস্যপদ লাভের জন্য ভারত আবার প্রবল আকাঙ্ক্ষী। যত তীব্র তার আকাঙ্ক্ষা, ততই তীব্র ও গভীর তার অজানা হল – ভেটো সদস্যপদ পাওয়া যায় কী করে! জাতিসঙ্ঘের জন্মের সময় ওই পাঁচ রাষ্ট্র তা পেয়েছিলই বা কী করে, তা কখনো জানা হয়নি।

‘সরি আকবর উদ্দিন! আপনিও ফেল করলেন’। কারণ তিনি ওই সাক্ষাৎকারে দাবি করছেন, যেহেতু ভারত দুনিয়ার বড় জনসংখ্যার দেশ, তাই তাকে ভেটো ক্ষমতা বা স্থায়ী সদস্যপদ দিতে হবে। বোঝা গেল, হোমওয়ার্ক তিনিও যথেষ্ট করেননি। তাই ফেল করলেন। সবার আগে জানতে হবে, ওই পাঁচ রাষ্ট্র স্থায়ী সদস্যপদ পেয়েছিল ঠিক কিসের ভিত্তিতে। তাই আপাতত আকবরের কথা ভারতের কারো কাজে লাগবে না, হিন্দুত্বের মোদীর কাছেও না। সুতরাং তার কপালও আর খুলবে না।

আসলে মূল কথাটা হল যদি কখনো আবার দুনিয়ার বা গ্লোবাল নেতৃত্ব চেঞ্জ হয়, কখনো নতুন করে আরেক জাতিসংঘের জন্ম হয় অথবা সংস্কার করে আর একটা জাতিসঙ্ঘ গড়ার পরিপ্রেক্ষিত তৈরি হয়, সর্বোপরি গ্লোবাল পলিটিক্যাল নতুন কিছু কমন ভিত্তি তৈরি হয়, তবেই জাতিসংঘে এমন কোনো পরিবর্তন হতে পারে। এর আগে কিছুই ঘটবে না। যদি এর আগে এক খসড়া কমিটি আগে গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা এখন ফ্রিজে ঢুকে গেছে। ট্রাম্পের উত্থান ফেনোমেনা বলে এটা এমনই হওয়ার কথা। গ্লোবাল নেতা আমেরিকা এখন এক জাতিবাদী আমেরিকা হতে চাইলে সেটা মসকরা ছাড়া অন্যকিছু হবে না।  আর তত দিনে ভারতের কী হবে? ক্রমেই ভারত নিজ সংহতিতে টিকে থাকতে পারবে কি না সেই  চ্যালেঞ্জ বড় আর মুখোমুখি হতে থাকবে। সেটি সামলে ভারত টিকে থাকতে পারবে কি না, এটাই তার চ্যালেঞ্জ। মুরোদ থাকলে নতুন করে ভারতের সবাইকে ইনক্লুসিভ এক রাজনৈতিক ভিত্তি খাড়া করে ভারত গড়তে পারে কি না দেখা উচিত। এর ভিতরেই ভারতের আগামি ভারতের ভবিষ্যত এবং ভবিষ্যতের জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তি ঘটতে পারে!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা  গত ০২ মে ২০২০ দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ওয়েবে ও  পরেরদিন প্রিন্টে  আর জাতিসঙ্ঘের ভেটো সদস্যপদের আকাঙ্ক্ষা” – এই শিরোনামে উপ-সম্পাদকীয়তে ছাপা হয়েছিল।  পরবর্তিতে সে লেখাটাই এখানে আরও নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে এখানে আজ ছাপা হল। ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s