ভারতের জয়িতা ভট্টাচার্য কী চায়, জানে?


ভারতের জয়িতা ভট্টাচার্য কী চা্‌য়, জানে?

গৌতম দাস

 ২২ জুন ২০২০, ০০:০৬ সোমবার

https://wp.me/p1sCvy-34w

 

ভারত ও বাংলাদেশের সরকার এরা নাকি পরস্পরের খুবই ঘনিষ্ঠ। এমন একটা অনুমান-পারসেপশন অনেকের মধ্যে আছে। একথার হয়ত কিছুটা সত্যতাও কেউ কেউ দেখাতে পারবেন। এরপরেও  সেটা যত ঘনিষ্ঠই কল্পনা করা যাক না কেন, শেষ বিচারে আমরা ভুলে যেতে পারি না যে এরা দুটো একেবারেই আলাদা রাষ্ট্র।  আমের মওসুম এটা, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মধ্যে যেন এখন – সবার কুড়ানো আম ফেলে দেওয়ার একটা গল্প আছে, তাই যেন কেউ আনতে চাইছে।

সবার কুড়ানো আম ফেলে দেওয়ার গল্পঃ
ছোটবেলায় বৈশাখ মাসের ঝড়ে আম কুড়াতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা একালের ঢাকা শহরে যারা বড় হচ্ছেন তাদের জীবন-অভিজ্ঞতার সাথে মিলবে না হয়ত। তবে যারা পুরনো দিনের বা জেলা শহরে বা গ্রামে বড় হয়েছেন তাদের এমন অভিজ্ঞতা আছে। তেমনি এক কালবোশেখি ঝড়ে আম কুড়ানোর বিকেলের ঘটনা। আট-দশ বছর বয়সের বন্ধুবান্ধবরা সবাই মিলে বিকেলে ঝড় উঠতেই আম কুড়াতে ছুটছে। বাগানে গিয়ে আম কুড়ানোর ধুম লেগেছে। কিন্তু বন্ধুদের একজনের যেন কোনো ঘুম নেই। দেখতে-শুনতেও সে অন্যদের চেয়ে একটু যেন আলাদা, সবার চেয়ে লম্বাতেও হয়ত একটু বেশিই হবে। সে আম কুড়াচ্ছে না।
কিন্তু আবার প্রচণ্ড ব্যস্ত। কারণ সে বরং সবাইকে আম কুড়াতে বাধা দিয়ে বেড়াচ্ছে – “এই আম নিবি না, রাখ” – বলে হাত থেকে আম কেড়ে ফেলে দিয়ে পরের জনেরটা কাড়তে যাচ্ছে। এভাবে সবার হাত থেকে আম ফেলে দিচ্ছে। আর মুখে বলে চলছে, “আমার খালাত দুলাভাইয়ের চাচার বাগানের আম, তোরা কেউ আম নিবি না”। কিন্তু এখানে সমস্যাটা হল, বাধাদানকারী একজন আর কুড়ানেওয়ালা বাকি সবাই। ফলে সবাই বিকল্প উপায় খুঁজতে গিয়ে কিছু সুযোগ পাচ্ছে। অন্যকে বাধা দেয়ার সময় কিছু না কিছু ফাঁকফোকর পেয়েই যাচ্ছে। সেই ফাঁকে দু’চারটা করে আম কুড়িয়ে নিচ্ছে। এদিকে একসময় ঝড় থেমে গেছে। সবাই যার যার বাড়ির পথে। কিন্তু অবাক ব্যাপার। দেখা গেল সবারই হাতে-কোচড়ে দু-চারটা করে আম আছে। বাধাদানকারী মেয়েটার ভাগে একটাও আম নেই! কারণ সে যখন পুরো সময়টা সবাইকে বাধা দিতে গিয়ে নষ্ট করেছে, অন্যরা প্রত্যেকে সেই ফাঁকে দু-চারটা করে আম সংগ্রহ করে নিতে পারলেও সে নিজে কিছুই পায়নি।
গল্পটার মরাল হলঃ হিংসা বা ঈর্ষা না, এর ইতিবাচক ফল নাই; তাই বরং কিছু অর্জন করার লক্ষ্যে নিজ শ্রম-উদ্যোগ কাজে লাগালে ভাগ্য কিছুটা ফিরতেও পারে।

থিংকট্যাংকের মাহাত্ম্যঃ
কথাগুলো মনে হল ভারতের এক জয়িতা ভট্টাচার্যের একটা রচনা দেখে। যেন তিনি সেই ঝড়ের সময় সবার কুড়ানো আম ফেলে দিয়ে বেড়ানো ছোট মেয়েটা। জয়িতা ভারতের ‘ওআরএফ [ORF]’ মানে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে এক থিংকট্যাংকের ফেলো। সম্ভবত আসামের শিলচরের মেয়ে তিনি, আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে পিএইচডি করেছেন।

আমেরিকান সমাজের পলিটিক্যাল কালচারে রাষ্ট্র-সরকারের নীতিনির্ধারণে বা পলিসি সাব্যস্ত করতে পক্ষ-বিপক্ষের পয়েন্টগুলোকে নিয়ে গুছিয়ে জোরালো করে তুলে ধরতে অনেক স্টাডি ও গবেষণা করতে হয় অথবা কখনও কনসেন্সাস তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কাজটা – আমেরিকান সমাজ সেগুলো থিংকট্যাংক ধরনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই করে থাকে। এমন প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত দাতব্য প্রতিষ্ঠান বা নন-প্রফিট ফাউন্ডেশন টাইপের কাঠামোর হয়ে থাকে। যদিও একটা দুর্ভাগ্য যে, একালে এসে লক্ষ করা যাচ্ছে অনেক সময় থিংকট্যাংক গড়ার নামে এক প্রপাগান্ডা প্রতিষ্ঠান গড়া ফ্যাশন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আমেরিকা চলতি শতকে এসে যখন এখাতে ভারতের দিকে তাকিয়ে বিপুল অর্থ ঢালতে শুরু করেছে। এমনিতেই আরেক দেশের অর্থে থিংকট্যাংক গড়া- এটা থিংকট্যাংক ধারণার মৌলিক ভিত্তিরই বিরুদ্ধে। কারণ থিংকট্যাংক তো গড়া হবে নিজ দেশেরই নীতি-পলিসি নিয়ে স্টাডি গবেষণার জন্য। কাজেই এ’খাতে অন্য-রাষ্ট্রের যেচে অর্থ দিতে আসা মানে এতে দাতাদেশের সরাসরি স্বার্থ ও চিন্তায় প্রভাব ছড়ানো শুধু নয়, এটা প্রায় ঐ দাতা দেশের ফরেন পলিসির বাস্তবায়ন করা। কিন্তু তামশার দিকটা হল প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে সবখানে এক “আত্মম্ভরিতা” মানে স্বনির্ভরতার গল্প বলে বেড়ানো ভারত সে-ই, প্রথম রাষ্ট্র যে আমেরিকার টাকায় ভারতে আমেরিকান থিংকট্যাংকের শাখা খুলে ভরিয়ে ফেলেছে। কিন্তু কেন?

সোজা কথাটা হল, চীন-ভারত দুরাষ্ট্র যেন পরস্পর থেকে দূরে থাকে, পরস্পরকে চরম ও একমাত্র ‘শত্রুজ্ঞান’ করে দূরে থাকে এটাই আমেরিকা নিশ্চিত করতে চায়। এদের পারস্পরিক প্রবল রেষারেষি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন এরা লিপ্ত ও ডুবে থাকে, ঈর্ষায় থাকে এটাই আমেরিকান স্ট্র্যাটেজি। আমেরিকা এখনও বর্তমান গ্লোবাল লিডার যদিও দ্রুত এটা শুকিয়ে আসছে, ক্ষীয়মান। আর বিপরীতে চীন উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি, নেতৃত্বের জায়গাটা সে দখল করবে এটাই এর অভিমুখ। এখন ভারত যদি চীনের পাশে দাড়ায় তবে এই  অনিবার্য রদবদলটা ঘটবেই তবে এবার দ্রুত হতে থাকবে।  আমেরিকা যদি ডুবতে বসা এক বর্তমান হয় তবে চীন পাশে ইন্ডিয়া এক সম্ভাব্য আগামি। এখন  আমেরিকার গ্লোবাল অর্থনৈতিক সামর্থ্য বা সক্ষমতায় পতন আর চীনের উত্থানের একালে তাই আমেরিকার চাওয়া ও তার ভয় হল যে চীন-ভারত যেন আমেরিকান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আগামীর নেতৃত্ব হয়ে একজোটে দাঁড়িয়ে না যায়। ফলে এর সোজা হিসাব হল, চীন-ভারত যেন রেষারেষির সম্পর্কে খাড়া হয়ে থাকে সবসময়। আর এখানে সবচেয়ে বড় ইনপুট যেটা দিয়ে রাখা হয়েছে যে, ২০৫০ সাল নাগাদ ভারতের অর্থনীতি নাকি সবার চেয়ে (চীনের চেয়েও) উপরে যাবে এমন কথা ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। আর তাই ভারত, বাস্তবতার সাথে মিল না পেলেও ‘যদি লাইগা যায়’ এই লোভে, ভারত চীনের সাথে সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে দাঁড়াতে গিয়ে বরং অস্থিরতায় একধাপ আগালে তিনধাপ পিছিয়ে যায়। এ কাজগুলোই নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে করিরে নিচ্ছে আমেরিকার কিছু থিংকট্যাংক যারা ভারতে এর শাখা খুলেছে।

আবার এটাও খুবই সম্ভব যে ভারত বিরাট কিছু হওয়ার লোভ করতে গিয়ে আমেরিকান পরামর্শের ফাঁদে পড়ে , ভারত আর হয়ত চীনের সহযোগী আগামির স্থানটাও নিতে পারল না। বরং আমেরিকান লোভ-উস্কানি বা পরামর্শে ডানে-বায়ে চীনের বিরোধিতা করতে গিয়ে যেটুকু সফল হওয়ার ভারতের সম্ভাবনা ছিল সেটুকুও ভেসে গেল। এমনও ঘটে যেতে পারে। এটা অসম্ভব নয়। কারণ, ভারত যদি দুনিয়ার আগামি বা আগামির মূল সহযোগী বলে নিজেকে মনে করে তবে ভারতকে অবশ্যই মানতেই হবে আমেরিকা তার পথে বাধা অর্থে এনিমি। কারণ আমেরিকার বর্তমান অবস্থান থেকে সে যদি চ্যুত না হয় তবে ভারতের ভাগ্য খুলতে পারে না। অথচ তামশাটা হল, ভারত আমেরিকার হাত জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে চাচ্ছে, আর মিথ্যা স্বপ্ন দেখছে কিছু একটা হওয়ার। যেটা আমেরিকার হাত ধরে অর্জন তো হবারই নয়।

আমেরিকা যেমন চীনকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তেমন ভারতের কাছেও আমেরিকা নিশ্চয় হারতে চাইবে না। অথচ এ কথাটা ভারতের কানে নিচ্ছে না, কোনো আমলই করে না। বরং ধরে নিয়েছে আমেরিকা তার বন্ধু থাকবে। এসব কারণেই ভারতের কোন ধরণের কোন অর্থনৈতিক শক্তির কিছুই না হয়ে ফলাফলে, কোনো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে না ওঠার সম্ভাবনাও প্রবল। এছাড়াও ভারতের আভ্যন্তরীণ রাষ্ট্র-কাঠামোগত  দুর্বলতার দিক  আছে যেমন অভ্যন্তরীণ গঠন দুর্বলতা হল কেন্দ্র বনাম রাজ্যের দ্বন্দ্ব। মানে এক রাজ্য আরেক রাজ্যের ঘাড়ে উঠে থাকতে চায় – ভুতুড়ে কেন্দ্রীয় ক্ষমতার নামে।

তবে ভারতের বিপুল এক ভোক্তা জনগোষ্ঠী আছে, যা তার নিজের জন্যই এটা চীনের মতোই বিশাল তবে তুলনায় একটু ছোট) এক বিরাট সম্ভাব্য রেডি বাজার। এই ফ্যাক্টরটা ছাড়া ভারতের সব কিছুই প্রায় নেগেটিভ জোনে। কাজেই কনস্ট্রাকটিভ (গঠনমূলক) আর পজিটিভ এটিটিউড লাগবে, খুবই জরুরি এটা। অন্যের ক্ষতি করে বেড়ানো কারও অন্তত ভারতের বেলায়, তার জনজীবনের লক্ষ্য হতেই পারে না। এটি কী সবার আগে ভারত বুঝবে? দেখা যাক!

আমেরিকান থিংকট্যাংকের শাখাগুলো যা ভারতে খোলা হয়েছে এরা আবার কাঠামোর দিক থেকে বিদেশী এনজিও গোত্রের। আর ভারতে ওদের বড় অফার হল, ভারতীয় স্টুডেন্ট-একাডেমিকদের পিএইচডি বা মাস্টার্স বিদেশে পড়তে স্কলারশিপ দেয়া। এটা ভারতের বুদ্ধিবৃত্তির উপর একে প্রলুব্ধ করে বিপথগামি বা বিভ্রান্ত করে ফেলার বিরাট পদক্ষেপ। আমেরিকা বিগতা অর্থনৈতিক শক্তি। অথচ এর স্বপক্ষে ভারতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক মনকে কব্জা করে সাজিয়ে নেয়া, মূল লক্ষ্য ভারতীয় মনকে কনফিউজ করে রাখা। । এর কাজ হল  ক্যারিয়ারের লোভে এরা ভারতে বা জাপানে বসে চীনা তৎপরতার এটা বা সেটা খারাপ, চীনা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য খারাপ এসব কথা প্রচার প্রপাগান্ডামূলক কাজ অথবা  ক্যাম্পেইন-মূলক গবেষণা স্টাডিতে এসব ভারতীয়দেরকে এনগেজ করে রাখা। গত ২০০৬ সালে বুশের ভারত সফর থেকে এসব কাজের ধারা শুরু হয়েছিল। পরে ওবামার আমলে তুঙ্গে উঠেছিল ডালপালা বিছিয়ে। কিন্তু ট্রাম্পের আমলে এসে ২০১৭ সাল থেকে ট্রাম্পের আধাখেচড়া জাতিবাদী  ধারণার ধাক্কায়  আমেরিকান থিংকট্যাংকগুলোর  আগের প্রায় সব অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায়। আর সেই সাথে, ভারতকে দেয়া আমেরিকায় বিশেষ রফতানি সুবিধা (যেন চীনবিরোধী হওয়ার বুকিং মানি) যা কিছু আগে ওবামা আমলে দেয়া হয়েছিল সব গুটিয়ে ফেরত নেয়া হয়। সারকথা ট্রাম্পের আমেরিকা এ ব্যাপারে আমেরিকানদের কোন লাভ হচ্ছে কিনা এনিয়ে হতাশ ও হয়রান, সন্ধিহান হয়ে উঠেছিল। থিংকট্যাংক এনজিওগুলো তাই ট্রাম্প আমলে এসে ফান্ড অনেক গুটিয়ে ফেলেছে। তবে “চীনা ঋণের ফাঁদ”, “চীনা ঋণের শোষণ” ইত্যাদি এসব ক্যাম্পেইনগুলো এখনও এরা চালিয়ে যায়।

তবে ওআরএফ এর গঠন ঠিক একইরকম নয়, ব্যতিক্রম। ওআরএফ এটাও দাতব্য অবশ্যই, তবে মুখ্যত স্থানীয় ব্যবসায়ী – রিলায়েন্স গ্রুপেরই প্রায় একক দানের অর্থে পরিচালিত। কিন্তু আমেরিকান  থিংকট্যাংকগুলোর সাথে ওআরএফ এর সবচেয়ে কমন মিল ও সম্পর্কের দিকটা হল, ওআরএফসহ সব থিংকট্যাংক পরিচালিত হয় ওই একই আমেরিকান চীনবিরোধী বয়ানভাষ্য ও নীতির অধীনে। আমেরিকার তৈরি যে অভিমুখ। আমেরিকান মাদার থিংকট্যাংকগুলোতে বসে যেসব চীনবিরোধী যুক্তি বয়ান তৈরি হয় সেগুলো সারা ভারতের সব থিংকট্যাংকই আউড়িয়ে যেতে থাকে। তবে লক্ষণীয় যে ভারত সরকার বেশির ভাগ সময়ই নিজের সরকারি ভাষ্য বা অবস্থানে ওইসব বয়ানকে য়ানে না, মূলত এড়িয়ে চলে। এর সম্ভাব্য কারণ, এই চীনের সাথেই তো ভারত সরকারের যৌথভাবে ব্রিকস [BRICS] ব্যাংক, এআইআইবি ব্যাংক [AIIB]  অথবা সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন [SCO] ধরনের জোট তৎপরতায় অংশ নিয়ে থাকতে হয়।

 ওআরএফ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখন কেনঃ
সারা দুনিয়ার মত করোনাভাইরাসে বাংলাদেশেও খারাপভাবেই আক্রান্ত। এখন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। করোনাভাইরাসের টেস্ট করার সুযোগহীনতা বা চিকিৎসাহীনতার চরম দিনগুলো পেরিয়ে বাংলাদেশ যখন প্রায় ৬০টির মতো টেস্ট-সেন্টার খুলতে সক্ষম হয়েছে তত দিনে আবার এখন দিনকে দিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডেড সংখ্যাটাই বিপজ্জনকভাবে বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। হাসপাতালগুলো রোগীতে উপচে উঠছে। হাসপাতালে একটা সিটের খোঁজে পাঁচ-ছয় হাসপাতাল ছোটাছুটি করতে করতেই রোগী মরে শেষ এমনই অবস্থা। এমনিতেই আমাদের সরকারের ম্যানেজমেন্ট সামর্থ্য সামলিয়ে যতটুকু যা রিসোর্স বা স্বাস্থ্য বাজেট আমরা জড়ো করতে সক্ষম সেটাও দুর্নীতির কারণে লোপাট হচ্ছে। যার সারকথাটা হল, এক চরম ম্যানেজমেন্ট ফেল করা অবস্থার মধ্যে আমরা আছি। বের হওয়ার উপায় নেই। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যব্যবস্থায় প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা সমস্যার কারণে ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ, ট্রেনিং বা দক্ষতা বাড়ানো পর্যন্ত আমাদের রিসোর্স পৌঁছাতে পারে না। করোনার আবির্ভাব আমাদের সবাইকে উদাম করে ছেড়েছে, নিজেদের অযোগ্যতায় নিজেরাই এখন চরম বিপদে পড়েছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীই হুমকি দিচ্ছেন ‘এভাবে চলতে থাকলে হাসপাতালে জায়গা দিতে পারব না।’ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের হাসপাতাল ব্যবস্থা যদি চূড়ান্ত ফেল করে তবে এরপর পুরা আইনশৃঙ্খলাই ফেল করতে আর সময় লাগবে না।

দেরিতে হলেও করোনা মোকাবেলায় একশন গত মার্চের শেষে আমরা যখন শুরু করি তখনই অনেকে জানতেন যে আমাদের জন্য সামনে অনেক রিস্ক অপেক্ষা করছে, আমরা ঢুকছি। যারা দূরেরটা আগে দেখতে পেয়ে যান; তাদের বলাবলি করতে শুনেছি যে, আমরা কঠিন বিপদে পড়ে গেলে শেষ পর্যায়ে আমাদের এ যাত্রায় টিকে যাওয়ার একটাই সম্ভাবনা আছে যে চীনের সাহায্য সহায়তা যদি পেয়ে যাই, দুয়ার খোলে যদি । কারণ করোনা যা দাবি করে আর আমাদের যা সামর্থ্য এ দুইয়ের গ্যাপ মিটাতে সক্ষমতা নিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারে সম্ভাব্য একমাত্র চীনা সহায়তা।
ঘটনাচক্রে সেটাই এখন বাস্তব, আমরা তারই মুখোমুখি। আমাদের সরকারপ্রধান চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে ফোনে কথা বলেছেন, ইতোমধ্যেই চীনা সাহায্যকারী টিমও এখন ঢাকায়।

আমরা উদ্যোগ নিতে পেরেছি এটা ভালো খবর অবশ্যই। সব সরকারই কোনো খারাপ অবস্থায় হাতের কাছে যা আছে ও সম্ভব তার সবই কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। নিশ্চয় আমরা এমন কোনো সরকার দেখার আশা করি না যারা বুঝছেন তাদের কোনো ভুল বা ব্যর্থতায় বা কোনো গ্যাপে শেষে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে, অথচ তারা সেটা দাঁড়িয়ে কেবল দেখছেন! এটা তো হতে পারে না!

তবে এরপর আরেকটু আছে, চীনেরই আরেকটা প্রোগ্রাম আছে ‘সিস্টার সিটি অ্যালায়েন্স’ [China wants ‘sister cities’ in Bangladesh]। পত্রিকার ঐ রিপোর্ট বলছে, চীনা টিম আমাদের ঐ এলায়েন্স প্রোগ্রামে আমরা যুক্ত হতে পারি বা চাই কিনা এর দাওয়াত দিয়ে রেখেছে। তা নিয়ে সরকারি নানা পর্যায়ে কথাবার্তা এখনো চলছে।

কিন্তু জয়িতা ভট্টাচার্যের লেখা দেখে বুঝা যাচ্ছে, এনিয়ে তাঁরা খুবই ক্ষেপে উঠেছেন।, ওই চীন-বাংলাদেশ সরকারপ্রধান পর্যায়ে টেলিফোন আলাপ ঘটার পর থেকেই। যেন তিনি বলতে চাইছেন আমার “দখলি প্রিয়া” কেন অন্যের সাথে কথা বলল। কিন্তু
সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশটা ইন্ডিয়া নয়। কাজেই তাদের চোখ দিয়ে চীনের টিম বা উহান সিটির কর্তাদের আমরা কেন দেখব?  আমরা দেখতে পারব না। আমাদের প্রয়োজনের চোখ দিয়েই আমরা দেখব?

বলা বাহুল্য, করোনা প্রসঙ্গে আমাদের সক্ষমতা সামর্থ্যরে সীমা কী তা জানতে আমাদের আর বাকি নেই। তাই চীনা বন্ধুদের আমরা দেখব আমাদের খারাপ সময়ের  সহায়তা-দাতা হিসেবেই। এই দাতা যাদের নিজ শহর সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে, দক্ষতা আছে, দক্ষ জনবল আছে, সব রিসোর্স আছে যারা আমাদের শিখিয়ে নিতে দিতে সহায়তা করতে পারবে। আর সর্বোপরি যাদের আগ্রহ আছে। এখন খাদের কিনারায় ঠেকে যাওয়া আমরা কোন ‘সিটি অ্যালায়েন্স চুক্তি’ তে যুক্ত হই আর নাই হই – করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় আমাদের চীনা সহযোগিতা খুবই দরকার। এ হলো বাস্তবতা। তাহলে আমরা কেন তা নেবো না?

ভারত পছন্দ করছে না তাই?
কোনদিক দিয়েই  ভারতের অবস্থান ও সক্ষমতা কোনোভাবেই চীনের কাছাকাছি নয়। না রিসোর্সের সক্ষমতায়, না অভিজ্ঞতায়। এর উপর ভারতেরই এখন অথবা আগামী মাসে করোনা সংক্রমণের পিক সময়কাল আসে কিনা এ নিয়ে তারা চরম এক হিমশিম অবস্থায়। এছাড়া আরো বিরাট এক সমস্যা আছে। ভারত থেকে সহায়তাকারী কোনো টিম এসেছে এমন যদি হয় তবে ওই টিমকে সাধারণ মানুষই গ্রহণ করবে না, এটা আমাদের আগে খোদ জয়িতাই জানেন! তিনিই লিখেছেন আমরা ভারতীয়দের পছন্দ করি না। তাহলে?

পাবলিকের উপর গোসসা করা  – যারা পাবলিক নিয়ে ডিল করেন যেমন কোন গবেষক তিনি কখনই তা করতে পারেন না। কারণ তিনি জানেন পাবলিকের উপর রাগ করা গোসসা দেখানো তার কাজ এক্তিয়ার একেবারেই নয়। কাজেই সাবধান! জীবনে ভাল সফল গবেষক হতে চাইলে তার উচিত হবে বরং পাবলিক কেন ওরকম বা সেরকম হয়েছে বা আচরণ করছে সেটা খুজে বের করা, এটা বের করতে জীবন লাগিয়ে দেয়া। সস্তা দেশপ্রেমিক হবেন না।

ইন্ডিয়ার সমস্যা এটা যে, নিজের আকার আকৃতি বা অবস্থানের ব্যাপারেও তার সঠিক ধারণা নেই। তাই ভান করে যেন সে এক পরাশক্তি। যেমন দেখেন, বাংলাদেশের এক পত্রিকা মালিক সম্পাদকের উপজেলার পৌরসভায় পানীয় জলের ব্যবস্থার জন্য প্রজেক্টে ভারত তাতে মাত্র কয়েক কোটি টাকার অনুদান দিয়েছে। অথবা ধরেন মফস্বলের একটা কলেজের কয়েকটা ঘর দোতলা করতে হবে তাকে এক কোটি টাকা অনুদান দিয়ে দিল। আর ভারতের হাইকমিশনার সেটা আবার ঘটা করে উদ্বোধনও করতে গেছেন। ভারতের ধারণা এতে এবার ভারতকে দাতা দেশের আসনে বসতে জায়গা দেয়া হবে। অথচ বুঝতে চেষ্টা করল না যে, সব রাষ্ট্রেরই অনুদান দেবার সক্ষমতা থাকতেই হবে এর তো কোনো মানে নেই। কিন্তু কোন ঘটনাটা নিজেকে অপমানের মধ্যে ফেলবে এটা তো সকলেরই অবশ্যই বুঝার ক্ষমতা থাকা উচিত! তাই না!
আবার দেখেন, এবার করোনা শুরু হলে সার্কের নামে একটা ফান্ড তৈরি করতে হবে বলে হইচই করা হল। কেন? সত্যিই অর্থপূর্ণ সাঙ্ঘাতিক কিছু কী তারা করতে চেয়েছিল?
ভারতের হাইকমিশনার বাংলাদেশকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (যেটা ম্যালেরিয়ার ট্যাবলেট) এটা করোনার ওষুধ বলে যা এখনও প্রমাণিত নয় – অথচ এটাকেই মোদীর পক্ষ থেকে করোনা নিরাময়ের ওষুধ বলে দান করে গেলেন। শুধু তাই নয়, জানিয়ে গেলেন ওই ওষুধের দাম মোদীর দেয়া চাঁদার ভাগ থেকে কাটা যাবে। বুঝেন মোদী-ফান্ডের কী মহিমা! এতে দুটো ঘটনা ঘটল। এর একটা অপরাধ। কারণ আমাদের ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনহীন একটা ওষুধ আমাদের দেশে আমদানি করা হল। আবার এটা তো ডাক্তারেরা ব্যবহার করতে বলতে পারবেন না। অন্তত আইনি ঝামেলায় পড়বেন। আর এটা করোনার বিরুদ্ধে কাজ করবে এর কোন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালই এখনো শেষ হয়নি,  ফলে প্রমাণিত কোনো ওষুধ নয় এটা। ফলে আমাদের ওষুধ প্রশাসনেরও কোন অনুমোদন দেয়ার সুযোগই নেই। মানে যেন দাওয়াত দিয়ে কাউকে গরম ভাতের বদলে পান্তা খেতে দেয়া যায়? আপনি তাই করলেন।

এদিকে, জয়িতা বলতে চাইছেন এই ‘সিটি অ্যালায়েন্সের’ অফারের মধ্যে চীনা “বেল্ট-রোড প্রকল্পের” সম্পর্ক আছে। আর এটাতে “চিনের জিও-স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য আছে”।  আসলে দুনিয়ার অনেক সমস্যারই জন্ম হত না। হয়েছে এস্টিমেশন থেকে মানে নিজেকে মাপতেই শিখে নাই। শিক্ষা নেয় নাই কখন। বিশেষ করে দুচারজন  বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার এরকম। এরা পোস্টিং পেয়েই মনে করা শুরু করে তারা বাংলাদেশের রাজা না হলেও কিছু অংশের মালিক হয়ে গেছেন!  আচ্ছা ধরা যাক, বাংলাদেশে “চিনের জিও-স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য আছে””  [The Chinese motivation exceeds the promotion of cultural ties and it has a larger Geo-strategic objective…]।  আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে বেল্ট-রোড প্রকল্প – এই ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের চীনা “চিনের জিও-স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য নাই।  কিন্তু সাবধান প্রশ্নটা “আছে কিনা” এর নয়, এটা একেবারে মুরোদের প্রশ্ন। এজন্য বাইরের কারও দিকে তাকানোর আগে নিজের মুরোদ চেক করা উচিত! তাই না! তাই প্রথম প্রশ্ন হল,  তাতে ভারতের কী সমস্যা? যার মুরোদ নাই আসলে তার কোন সমস্যা কী আমলযোগ্য? ভারতই বলুক! আচ্ছা এছাড়া আরও কাহিনী আছে! দেখেন  অফার তো বাংলাদেশকেই করেছে তাই না? ভারতকে তো করে নাই? নাকি? কাজেই প্রতিক্রিয়া যা দেখানোর তা বাংলাদেশই দেখাক। অন্তত বাংলাদেশকে দেখাতে দেয়া উচিত। এজন্যই বলে ওভার-এস্টিমেশন একটা গভীর অসুখ!

আসলে, বুঝা গেছে সমস্যার গোড়াটা মেন্টরের। জয়িতার মেন্টর-মুরুব্বি সম্ভবত বলে দিতে ভুলে গেছেন যে বাংলাদেশ কোন স্বাধীন রাষ্ট্র নয় এমন ধারণা জয়িতার মুখ দিয়ে প্রকাশ পেলে  লোকে জয়িতাকেই বেকুব বলবে!

আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি। ভারতে কী চীনা ঋণে নেয়া কোনো অবকাঠামো প্রকল্প চালু নেই? খোদ মোদীই মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই একাজে দক্ষ্মহস্ত নয়?  ভারতে কোনো নতুন শহরের অবকাঠামো নির্মাণ অথবা রেলের অবকাঠামো বা রেলকর্মী ট্রেনিং ইত্যাদি? এগুলো কাদের বিদেশি অবকাঠামো প্রকল্প? এখানে ভারতে চীনা রাষ্ট্রদুতের একটা সাক্ষাতকার আছে ২০১৫ সালের এপ্রিলের সেকালের চীনা প্রজেক্টের হদিশ মিলবে এখানে।  এটাই  মোদীর ক্ষমতায় আসার পরে চীনা বিনিয়োগ প্রকল্পে ঝাপিয়ে পড়া ছিল।  আমরা এই একটা নমুনা থেকে অ-নে-ক নিশ্চয় জানবে পেরে স্বর নিচা করব! এখন কথা হল,  তাহলে সেগুলোতে কী “চীনের জিও-স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য আছে” তা ভারতের মনে হয়নি? নাকি সব জিও-স্ট্র্যাটেজিক ব্যাপার কেবল বাংলাদেশের চীনা প্রকল্পের বেলায়? যত্তসব বিরক্তিকর কাণ্ড!

আর জয়িতা “চীনের জিও-স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য” খুজতে বাংলাদেশে এসেছেন? ভারতের মিডিয়া খবর লিখছে ভারতের ওষুধের বাজারের ৪০% কাচামাল বা তৈরি ওষুধ আমদানির দিক থেকে নির্ভরশীল।  সেই চীনের কাছে গালয়ানে মার খেয়ে এসে এখন চীনাপণ্য বয়কট আউড়াইতেছেন, “চীনের জিও-স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য বুঝতে আইছেন?  তো চীনা ওষুধ বা কাঁচামাল কী এখন আমদানি বন্ধ করতে পারবেন? এই আপনাদের স্ট্রাটেজিক বুঝ?  যে চীন ভারতের প্রথম সম্ভাব্য এনিমি তার কছেই আপনি ওষুধের মত জীবনরক্ষাকারি পণ্যে নির্ভরশীল। আর মুখে সেই গান্ধীর আমল থেকে আউড়াইতেছেন আত্মনির্ভরতা? অথচ এই আত্মনির্ভরতা শ্লোগানটাই বহু আগে থেকেই ভুয়া ও অপ্রয়োজনীয় বলে প্রমাণিত। অথচ ভারতের রাজনীতিকদের সে হুশই নাই।  আপনারা আসলে কাকে ফাঁকি দেন? চীনা ওষুধ বা কাচামাল সবচেয়ে সস্তা আর এই সস্তা থুয়ে অন্য জায়গায় যাবার মুরোদ কী ভারতের আছে, কেমনে সে মুরোদ অর্জন ক্রতে হয় তাও তো জানেন না। সস্তা দেখলে যেখানে কাপড় ঠিক রাখা মুশকিল – এমনই অর্থনীতি আপনারা বানাইছেন? আবার এই অবস্থায় আইছেন আমাদেরকে “চীনের জিও-স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য” বুঝাইতে? হা হা হা কী তামশা……

আবার কিছু কথা তো একেবারেই পরিষ্কার। যেমন বেল্ট-রোড প্রকল্পে বাংলাদেশ তো প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়ে যুক্ত আছে সেই ২০১৬ সাল থেকে। এটা তো লুকানো নয়। এ নিয়ে একবার আমাদের অবস্থান ইন্ডিয়াকে জানান দিতে গিয়ে য়ামাদের পররাষ্ট্র সচিবের সাথে ছোটখাটো একটা বিতর্কও হয়ে গিয়েছিল সে সময়। অর্থাৎ এই ফ্যাক্টসটা প্রতিষ্ঠিত। তবে ভারতের নিজের জন্য এই বেল্ট-রোড প্রকল্প হারাম বলে মনে করতেই পারে ভারত। এটা তাদের সিদ্ধান্ত। ভালো, তা করুক। কিন্তু তাহলে ভারতের জন্য যা হারাম তা আমাদের ওপরও হারাম বলে চাপানোর চেষ্টা কেন?

এখন চীনের ‘সিটি অ্যালায়েন্স প্রকল্পের’ সাথে যদি বেল্ট-রোড প্রকল্প যুক্তও থাকে আর তাহলে তা ভারতের জন্য “সন্দেহের উদ্রেক” [raised suspicions ] করলেও বাংলাদেশের তাতে কী? কারণ আমরা তো বেল্ট-রোড প্রকল্পের অংশ হয়েই ঢুকে আছি। কাজেই ভারতের ‘সন্দেহের উদ্রেক’ আমাদের ঘাড়ে চড়াবার তো সুযোগ নেই। ভারতের নিজের ঘাড়েই এটা রাখতে হবে জয়িতাকে। তিনি নিশ্চয় আশা করবেন না যে আমাদেরও চীনকে নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক করতে হবে! আশা করি জয়িতা পরিষ্কার থাকবেন, নাকী!

জয়িতার চীনা শোষণ তত্বঃ
আবার আরেক বিপদ। জয়িতার দাবি বেল্ট-রোড প্রকল্প বিভিন্ন রাষ্ট্রকে এতে ঢুকিয়ে নেয়ার এটা নাকি বিভিন্ন রাষ্ট্রকে চীনা ঋণগ্রস্ত করে ‘ঋণের বোঝা’ চাপানোর আর ‘শোষণের’ প্রকল্প [debt burden and the exploitation by China]। কিন্তু জয়িতা ভট্টাচার্য তাহলে বলেন, ভারতও কেন নানা ধরনের চীনা অবকাঠামো ঋণ নিয়ে চলে সেটা আবার কোন চীনা শোষণের পাল্লায় পড়ার জন্য? আমি অবশ্য ভুটানে ইন্ডিয়ান লোন কত তানিয়ে কিছু বলছি না। জয়িতা নিজের ক্রাইটেরিয়াতে নিজেই চেক করে দেখতে পারেন।

আবার এখানেই শেষ নয়। চীনা-বিশ্বব্যাংক এআইআইবি-তে সেখানে চীনা (শোষকের) সাথে ভারতই তো প্রধান পার্টনার-মালিক হয়ে আছে। আবার ভারত একই শোষক চীনের সাথে ব্রিকস ব্যাংক খুলেছে? এর মানে কী, তাহলে কি ভারতও শোষক? বলেন কী? না না – জয়িতা আপনাকে অনেক পড়াশোনা নিয়ে বসতে হবে!

এ জন্যই বলছিলাম, কেউ আজকাল ন্যূনতম হোমওয়ার্ক না করে লিখতে বসে না। থিংকট্যাংক বলতে আমেরিকানরা গবেষণা কাজ বোঝাত। অথচ আজকাল থিংকট্যাংক আর প্রপাগান্ডা কাজ সব একাকার করে ফেলা হয়েছে। যারা প্রপাগান্ডিস্ট তারাই গবেষক বলে নিজের পরিচয় দিচ্ছে। এমন দুর্দশার কথা কারে বলি!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা  গত ২১ জুন ২০২০, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ওয়েবে ও  সেদিনই প্রিন্টেও  ভারতের জয়িতা ভট্টাচার্য”– এই শিরোনামে উপ-সম্পাদকীয়তে ছাপা হয়েছিল।  পরবর্তিতে সে লেখাটাই এখানে আরও নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে এখানে আজ ছাপা হল। ]

Leave a comment