চীন-ভারত যুদ্ধ কী না চাইতেও লেগে যাচ্ছে
গৌতম দাস
০৬ জুলাই ২০২০, ০০:০৬ সোমবার
Global times Editor – Hu Xijin, @HuXijin_GT আর বাংলা অনুবাদ নেয়া হয়েছে এখান থেকে
চীন-ভারত যুদ্ধ কী লেগে যাবে? মোদী মনের মধ্যে যুদ্ধ চাই না এই বাসনা রাখা সত্বেও? যদিও ইতোমধ্যে সাধারণ তবে শিক্ষিত মানুষ যারা এতদিন দূর থেকে দেখে একটু মজা পাচ্ছিল তারা এখন যুদ্ধের টেনশনটা দীর্ঘ হচ্ছে দেখে এবার নিজের জন্য একটু উদ্বিগ্ন হয়ে যাচ্ছেন যে, নিজের জন্য আমল করার মত এখানে কোন লুকিয়ে থাকা হুমকি বা বিপদ হঠাৎ হাজির হতে পারে কি না(!), তাই এনিয়ে ভাবা শুরু করেছেন। গত ১৫ জুন চীনা হামলায় কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা মারা যাওয়ার পর থেকে এই টেনশনটা এভাবে ক্রমেই সত্যি বলে হাজির হচ্ছে।
অপমানিত ‘ভারত-নেশন’ থেকে নিজেকে আলাদা করার দৌড়াদৌড়িঃ
পুরা ব্যাপারটা শুধু ভারতীয় সেনা মারা যাওয়ার মধ্যেই শেষ বা আটকে থাকলে তাও হয়ত চলত। কিন্তু সর্বদলীয় বৈঠকের ব্রিফিংয়ে ভারতের কেউ যা কল্পনাও করেনি তাই ঘটে গেছে। গত ছয় বছরে সবসময় ছাপান্ন ইঞ্চি বুকের ছাতি দেখিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই সভায় বলে বসেন, “সীমানা পেরিয়ে কেউ ভারতে ঢুকেনি। ভারতের কোনো সেনা চৌকিও অন্য কারো দখলে নেই”। এর সোজা মানে দাঁড়ায়, ওই ২০ ভারতীয় সেনা চীনের ভূখণ্ডে গিয়ে মার খেয়ে মরেছে। আর সহযোদ্ধা-সেনারা তাদের লাশ বয়ে ভারতে এনেছে। এতে ব্যাপারটা এতই শকিং আর বেইজ্জতির প্রশ্ন হয়েছে যে, বিরোধীরা বুঝে যান এ নিয়ে কথা বাড়ালে সারা ভারত আরও অপমানিত হবে। তাই ভারতের এক সাবেক রাষ্ট্রদূত নিজের কলামে লিখছেন, কোনো বিরোধী নেতা সভার ওই অবস্থায় আর যুদ্ধে যাওয়ার পক্ষে মুখ খোলেনইনি। কিন্তু কিছু “সাহসী” সাংবাদিক বা সাবেক কূটনীতিক যারা নিজেদের খুবই ‘সাচ্চা ন্যায়পরায়ণ’ মনে করেন তারা তাদের “ভারত-নেশন” আরো অপমানিত হবে, সে সম্ভাবনার দিকটা ভুলে বা পেছনে ফেলে বরং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কর্তব্য পালনে খুবই ব্যস্ত। আসলে তারা “নেশনের” অপমানের দায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে বরং এর দায় মোদীর ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন সফলভাবে। সুতরাং অন্তত নিজেরা আর অপমানিত বোধ করছেন না। ভারতের সাংবাদিক করণ থাপার আর সাবেক পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাওয়ের সাক্ষাৎকার দেখে তাই মনে হয়েছে। যেন তারা জানেন না যে, মোদীর রাজনীতি উগ্র হিন্দু-জাতিবাদী এবং তার বিজেপি দল মিথ্যা বলতে বলতে পুরা দেশকেই প্রায়ই অপমান করে ফেলে থাকেন। তারা ভারতের মুসলমান নাগরিকদের সীমাহীন নিপীড়ন নির্যাতন হত্যা করে থাকে। আর এজন্য নিয়মিত দুনিয়ার হিউম্যান রাইটস সংগঠনগুলো এসব কাজ তুলে ধরে মোদী সরকারের নিন্দা করে। তাতেও এরা কেউ বিজেপির মতোই কোন অপমান বোধ করেন না।
আসলে তারা “নেশন-স্টেট” বা জাতি এই বোধছাড়া কোন রাজনীতি হতেই পারে না বলে মনে করে নিশ্চিন্তে এতেই ডুবে থাকেন। অথচ এরাই আবার বাস্তবে অন্যের হাতে অপমানিত হলে বা মার খেলে তখন ওই কথিত নিজ জাতি-দেশ থেকে নিজেকে মুক্ত বলে কল্পনা করতে থাকেন। এরাও জানেন এতে অপমান বা সমস্যা যাবে না; তবু নিজেকে একটা সান্ত্বনা দিতে তারা এসব হাসির কাণ্ড করে থাকেন। কিন্তু তবু এরা ‘নেশনের’ রাজনীতিই যে ‘উগ্র জাতিবাদ’ তা বুঝেও এর প্রতি তাদের ভালোবাসা থেকে একটু হিলবেন না। তাদের বিশ্বাস এমনই শক্ত।
নতুন মরীচিকা দেখতে পাওয়াঃ
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে এই ব্যক্তিবর্গরা আরেকটা আশার আলো দেখে ফেলেছিলেন। এরা আলোর মরীচিকায় বিশ্বাস করেন, আর ওর পেছনে ছুটতে রাজি থাকেন। এরা জানেন এটা মরীচিকা এবং নিছক আলো নয়, এরপরেও নিজের প্রবল হতাশা ঠেকাতে মনকে বুঝ দেন যদি ওটা সত্যিই আলো হয়েই যায়! এমন ব্যক্তিরা বিশেষ করে মিডিয়াকর্মীরা আশার আলো জাগাতে বলতে শুরু করলেন, আমেরিকা নাকি ভারতের সমর্থনে সৈন্য সরিয়ে আনছে জার্মানি-ইউরোপ থেকে এশিয়ায়। বাংলাদেশেও আমেরিকান বা ভারতীয় স্বার্থ দেখা থাকতে চাওয়া মিডিয়ার কেউ কেউ এই খবরটাকে টুইস্ট করে প্রচার করেছে।
ঘটনা হল, যুদ্ধ করে নগদ বা বাকি কোনো রিটার্নই নাই – আমেরিকা নিজের জন্য তা আনতে পারেনি। অথচ এক বিপুল বেহুদা সামরিক খরচ করে ফেলেছে। সেটা কোথায় আর কবে? আপনারা অনুমান করলেই তা মিলে যাবে। জবাব হল, ইরাক ও আফগানিস্তানে। এই বেহুদা খরচের কারণে দুর্বল আমেরিকার অর্থনীতি আরো ডুবেছে, ২০০৭-৮ সালে গ্লোবাল মহামন্দা হয়েছে। এসব বাস্তবতায় সেই ২০১০ সাল থেকে লিয়ন পেনেত্রা, চাক হেগেল বা এশ কার্টার এভাবে পরপর যারা ডিফেন্স সেক্রেটারি ছিলেন তারা সবাই খরচের সেই দায়্ভার ভুলতে হাতের কাছে ইউরোপকে দেখে, ন্যাটোর মিটিংয়ে “ইউরোপ কোনো খরচ দেয় না” বলে প্রবল সরব থেকেছেন। আর প্রকাশ্যে মিডিয়ায় অভিযোগ তুলেছেন এই অনুমানে যে, অপমান করলে বোধহয় ইউরোপ যুদ্ধের এই ভাটির দিনে এসে কিছু খরচের দায় নেবে। কিন্তু না, প্রশ্নই আসে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকান সেনারা (যখন সেটা আমেরিকার এম্পায়ার উত্থানের যুগ, ফলে বহু খরচের দায় নিজেই এককভাবে নিয়ে নিয়েছিল) আর কখনও ইউরোপ থেকে ব্যারাক গুটিয়ে নিজ দেশে ফেরেনি বরং জার্মানিতেই ঘাঁটি গেড়ে থেকে গিয়েছিল। আর ন্যাটো গঠিত হলেও এর ৯৫ শতাংশ পরিচালন খরচের দায়ভার আমেরিকা একা বহন করে গেছে। যদিও ইরাক ও আফগানিস্তানেও আমেরিকা এক ব্যর্থ যুদ্ধে খরচ করে গেছে, তবু মনকে সান্ত্বনা দিতে – ইউরোপ ন্যাটোর খরচ দেয় না – বলে ইউরোপকে ঝাড়ি দিয়ে গেছে সেই থেকে।
যুদ্ধের বেহুদা খরচ সামলাতে না পেরে গ্লোবাল মহামন্দাঃ
আসলে আঁচ লাগা শুরু হয় ইরাক আফগানিস্তানে ওয়ার অন টেররের পরাজয় থেকে। একটা কমিটি বসেছিল ২০০৬ সালে যার পরিষ্কার রিপোর্ট ছিল যে, আমেরিকা যুদ্ধে হেরে গেছে এই অর্থে যে, আমেরিকা এমন এক অনন্ত যুদ্ধে আটকে গেছে যা থেকে বিজয় লাভ অসম্ভব; আবার ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াও খুব সহজ না। অথচ এ থেকে নিয়মিত যে খরচ বেড়েই চলেছিল, তাতেই মূলত আমেরিকান অর্থনীতির ভেঙে পড়া আর বেসামাল অবস্থার শেষে ২০০৭-০৮ সালের দুনিয়া মহামন্দা হাজির হয়েছিল। আর তখন থেকেই চীনের সাথে তুলনায় অর্থনীতিতে ক্রমশ আমেরিকার পিছিয়ে পড়ার শুরু। ওবামা আমলে তার প্রশাসন তাই এক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ইরাক-আফগান যুদ্ধে বিজয়ের চিন্তা তো আর নয়ই বরং, ২০১০-১৪ ধরে সময়কালের মধ্যে সব সৈন্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এই ছিল সবচেয়ে নির্ধারক সিদ্ধান্ত। এটা বাইপার্টিজান সিদ্ধান্ত। আর সেটার তলানি অংশটাও গুটিয়ে ফেলা হলো এবার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে, এটাও বাইপার্টিজান মানে দু-দল মিলে নেয়া সিদ্ধান্ত। তাই আফগানিস্তান ছেড়ে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার জন্য তালেবানদের সাথে ট্রাম্পের মরিয়া চুক্তি হল। ওদিকে ৭৫ বছরের আগের সিদ্ধান্ত বদলানো যে (ন্যাটোর অধীনে), ইউরোপে থাকা সেনা প্রত্যাহার, যা নিয়ে আবার ইউরোপের এখন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।
লক্ষণীয় যে, এই ফেরত আনা সেনা এশিয়ার কোথার মোতায়েন হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। কিন্তু সেনা প্রত্যাহারের যতগুলো কারণ ছিল তার মধ্যে মোদীর মতোই চাপাবাজি করে “চীন-ভারতের সামরিক টেনশনও একটা বাড়তি কারণ” বলে এই শব্দ কয়টা সেখানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।
ওবামার এশিয়ান পিভোট (২০১০) এটা আগেই ব্যর্থ হয়েছিল তবু সেটাই আবার আনা হচ্ছেঃ
তবু আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা একটা পুরানা ব্যর্থ উদ্যোগ। কেন? ওবামা আমলে খুবই জোর দিয়ে বলা হয়েছিল যে এটা হল ওবামার এশিয়া ‘পিভোট’ [Pivot] পলিসি। ওবামা আমলে অনুমান-পরিকল্পনাটা ছিল এমন যে, আমেরিকার অনুমিত ও কথিত চীনের “আগ্রাসী নীতির” কারণে ভয়ে আশ্রয় লাভের জন্য ইস্ট এশিয়া বা সাউথ চায়না সি- এর সংশ্লিষ্ট দেশগুলো (ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ভিয়েতনাম…) নিরাপত্তা খুঁজতে আমেরিকার কোলে এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর আমেরিকা ভারসাম্য রক্ষাকারী (পিভোটাল) ভূমিকায় নেমে কথিত আগ্রাসী চীনের হাত থেকে এদের সবাইকে রক্ষা করবে। এই ছিল মোটামুটি মূল অনুমিত ধারণা-পরিকল্পনা। আর এরই অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় একটা স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি বানানো ও উদ্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের মধ্যেই জানা হয়ে যায় যে এই পরিকল্পনাটাও ব্যর্থ ও পরাজিত হচ্ছে। কারণ এশিয়ার সাউথ চায়না সি- এর সংশ্লিষ্ট কেউই আমেরিকার কাছে নিরাপত্তা খুঁজতে যায়নি। জাপানের প্রো-আমেরিকান থিংকট্যাংক পত্রিকা ‘ডিপ্লোম্যাটের’ মতে সেকালে তারা লিখেছিল এটা ওবামার চরমতম ভুল [The Pivot to Asia Was Obama’s Biggest Mistake]।
কারণ সাউথ চায়না সি নিয়ে এশিয়ার এদিকে টেনশন আছে, অসন্তোষ আছে কথা সত্য। কিন্তু সেজন্য কোনো যুদ্ধজোটে যোগ দেয়া সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর কাছে তপ্ত কড়াই থেকে চুলার ভিতরে ঝাঁপ দেয়ার শামিল বলে তাদের মনে হয়েছিল। তাই তারা সামরিক প্রশ্নে চীন বা আমেরিকা কোন দিকে যায়নি, দূরে ছিল। বরং অর্থনীতির প্রশ্নে চীনের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করে গেছে। এক কথায় এটা আমেরিকার জন্য এক “বিগ মিস-ক্যালকুলেশন”। তবে নতুন করে যুদ্ধে কোন রিটার্ন আনা ছাড়াই আবার অর্থ নষ্ট হয়েছিল। মাঝখান থেকে অস্ট্রেলিয়াও ঘাঁটি বানাতে উৎসাহ ভরে যতটুকু নিজের অর্থ ঢেলেছিল সেটাও লস। যেটার জন্য বুক চাপরানি এখনও সে করে মাঝে মাঝে।
তাহলে এখন জার্মানি থেকে সেনা প্রত্যাহারের নামে সেই পতিত প্রকল্পে আবার হাওয়া, নাড়াচাড়া দেয়া কেন? প্রথমত আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, এর সাথে এসময়ের চীন-ভারতের উত্তেজনার কোনই সম্পর্ক নাই। কারণ চীন-ভারত উত্তেজনা শুরুর বহু আগে থেকেই এই সেনা প্রত্যাহারের নড়াচড়ার শুরু। আসলে এর কারণ মূলত হংকং। আর সাথে কিছু আলাদা টেনশনে থাকা তাইওয়ান। এক-চীনের দাবিতে চীন কবে তাইওয়ানে হামলা করে, আর তা থেকে নিজের নিরাপত্তার জন্য তাইওয়ান একেবারেই আমেরিকার হাতে বাঁধা। তাইওয়ানের কেসটা না হয় বুঝা গেল কিন্তু হংকংয়ে নতুন টেনশনটা কী?
হংকং নতুন ফোকাসঃ
মূল টেনশনটা হল, হংকংয়ের তরুণেরা তারা চীনের থেকে আপোষে যা পেতে পারে সেই অর্থে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা হল আরও এক স্বায়ত্তশাসনের চেষ্টা করা; কিন্তু ঘটনা সেদিকে মুভ করেনি। বরং ‘চীনের থেকে স্বাধীনতা’ মানে হংকংকে চীন থেকে আলাদা করার পরিকল্পনা – এদিকে তারা আগিয়েছে। এটা অবশ্যই তাদের স্বার্থ-বুঝ ও ইচ্ছা কী নিয়ে তারা আগাবে। তবে এটা ব্রিটিশ-আমেরিকান স্বার্থ-পরিকল্পনার দিকেও ঝুঁকে পড়া। মানে, এর ভিতরে নিজেদের স্বাধীনতার স্বার্থকে প্রোথিত করা। এখন হংকংয়ের বাসিন্দাদের জন্য এদুই পথের কোনটা ভালোমন্দ, ব্যাপারটা সেভাবে দেখার চেয়ে যেমন পথ তেমন ওটা মিস্টি না তিতা, এভাবে বলাই সঠিক হবে। তারা যেপথ বেছে নেবে তার সমান মূল্য তো দিতে হবেই। যদিও চরম আত্মাহুতি দিলেই হংকংয়ের স্বাধীনতা মিলবে এমন নিশ্চয়তা নাই, বেইজিংয়ের তিয়েনআনমিন স্কয়ারের অভিজ্ঞতা তাই বলে। সবচেয়ে বড় কথা, হংকং ইস্যুকে কোন সাধারণ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে মনে করা হবে অতি সরলীকরণ হবে। ফলে তা হবে মারাত্মক ভুল বিবেচনা।
এছাড়া যেমন, হংকংয়ের ব্যবসায়ীরা যাদের স্বার্থ এক বিরাট ফ্যাক্টর যে তারা কী ছাত্র-তরুণতরুণীদের সাথে স্বাধীন হবার আন্দোলন পর্যন্ত যেতে চাইবে কী? সেটা এখনো পুরাই অনিশ্চিত। কারণ হংকং হচ্ছে চীনা পণ্য বাইরে বিক্রির দিক থেকে এক বড় আড়ত বা ‘হাব’ [hub], দুনিয়াজুড়ে চীনা পণ্য পৌঁছে দেয়ার পাইকারি বাজার। কাজেই এই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ কতটা চীনবিরোধী হবে, তারা কতটা সাড়া দিতে আগ্রহী হবেন এখনও বলা মুশকিল। আবার এটা ১৯৮৯ সালও নয়। ফলে তিয়েনআনমিনের মতই ব্যাপক ম্যাসাকার এবারও চীন করে ফেললে তা সামলানো চীনের জন্যও খুবই কঠিন এক ঘটনা হবে, অন্তত দ্রুত এক ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হবে, তা বলাই বাহুল্য। এসব মিলিয়ে চিন্তা করে এতে চীনা তাতক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হল, আইনি প্রস্তুতি নেয়া। চীন ইতোমধ্যে ৩০ জুন একটা নতুন নিরাপত্তা আইন পাস করেছে (Hong Kong national security law)। যার কারণে, কেউ রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম যত যাই করুক, কিন্তু তা ছাড়িয়ে “হংকংয়ের স্বাধীনতা চাই” ধরনের স্লোগান দিলে, এটর্নি অফিস এর ভাল প্রমাণ পেলে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের শাস্তি’ মৃত্যুদণ্ড দিতে পারবে। এই আইনে ইতোমধ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের স্বাক্ষর হয়ে গেছে। যদিও এখন পর্যন্ত চীনের জন্য এর একটা দুর্বল পয়েন্ট হল, আইনটা পাস হয়েছে মেইনল্যান্ড চীনে, যা পরে হংকংয়ের আইনসভাতেও তা এনডোর্স করে নেয়া হয়নি। নিলে ভালো হত। যদিও এর পক্ষে চীনের জন্য কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে কি না আমরা পরিস্কার নই।
ঘটনা হল এ নিয়ে আমেরিকার প্রতিক্রিয়া কী হবে? ঘটনা সেখানে। একটা দুরবর্তি সম্ভাবনা কারও মনে হতে পারে যে চীন আমেরিকার সহায়তা নিয়ে এই বিক্ষোভকারীদের সাথে নিগোশিয়েট করে ফেলল। এর সম্ভাবনা খুবই কম কারণ চীন চাইবে না এভাবে আমেরিকাকে দেবতা বা গুরুত্বপুর্ণ বানানো। বরং নিউইয়র্ক টাইমসের ভাষায় এই আইন ইতোমধ্যেই আমেরিকা ও তার বন্ধুদের জন্য এক হুশিয়ারি সঙ্কেত (The law sends a warning to the U.S. and other countries.)।
অল-আউট অবরোধ, মানে কীঃ
তাই আমরা বরং অন্য দিকগুলো দেখি। যেমন, প্রত্যক্ষ সূত্র নেই; কিন্তু “হতে পারে” ধরনের আধাগুজব, মিডিয়ায় নিউজ ছিল যে, চীন এই আইন চালু করলে আমেরিকা নাকি চীনের ওপর ‘অল-আউট’ অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে। এর তাৎপর্য হল, চীন আমেরিকান ডলারে কোনো কিছু কেনাবেচা করতে পারবে না। বেচাকেনার কোন দলিল-ইনভয়েজ ডলারে হতে পারবে না। হলে তা ভাঙিয়ে এর অর্থ নিজের কারেন্সি ও একাউন্টে আনতে কোন না কোন আমেরিকান ব্যাঙ্কের কাছে যেতেই হবে। আর কোন আমেরিকান ব্যাঙ্কের জন্য এদেরকে সাহায্য করা হবে নিষিদ্ধ কাজ করা, ফলে দুই বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে হয়েছে অতীতে হংকং ব্যাঙ্ককে, আমরা দেখেছি। এদিকে চীনের ‘হংকং নিরাপত্তা আইন’ পাস হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিক্রিয়ায় ইতোমধ্যে আমেরিকার অল-আউট কোন অবরোধ আরোপ করা হয়নি। যদিও ছোটখাটো (যেমন ভিসা রেস্ট্রিক্টকশন ধরনের) অবরোধ, আপত্তিগুলো কার্যকর হতে যাচ্ছে।
অল-আউট অবরোধ আরোপ কথাটা শুনতে ভালো লাগে, আমেরিকা তা হয়ত ঘোষণা করে দিতেও পারে যদি, তাতে সে এখনো অনেক পাওয়ারফুল বল মনে হবে হয়ত। কিন্তু তাতে বাস্তবতা পুরো উলটো হয়ে যাওয়ারও প্রবল সম্ভাবনা। কারণ চীন এই সুযোগে তার কারেন্সি ইউয়ানকেই (ডলারের জায়গায়) চীনের আমদানি-রফতানিতে লেনদেনের মুদ্রা হিসাবে বসানোর চেষ্টা করতে পারে। যেমন শুধু যদি সে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কিনে এর দাম যদি ইউয়ানে পরিশোধ করতে পারে, তবে ডলার ফেলে ইউয়ানই দুনিয়ায় লেনদেন প্রধান কারেন্সি বলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যেতে পারে। এই সম্ভাবনা আছে – তখন কী হবে?
আর এথেকেই বাজারে অল-আউট অবরোধের গুজব আর সামরিক প্রস্তুতির সম্পর্কটা বোঝা যেতে পারে। কিন্তু সাবধান। আমেরিকা যদি যুদ্ধ-বেচার ক্ষেত্রে হেরে যাওয়া পার্টি হয়ে থাকে আর সেজন্য গত ১০ বছরে সে যদি প্রধানত খরচ কমানোর পার্টি হিসেবে নাম লিখিয়ে থাকে, তাহলে এখন আবার হংকং ইস্যুকে কেন্দ্র করে অল-আউট যুদ্ধের প্রস্তুতি নিবে এ কথাতো ঠিক মিলছে না, মানে কথা হয় না। সম্ভবত সেজন্যই এখনো পরিস্থিতি “ছোটখাটো অবরোধের” মধ্যে আটকে আছে। এই হল, জর্মানি থেকে সেনা প্রতাহারে ঘটনার পিছনের সত্যি কথাটা। চীনও আমেরিকার দিক থেকে এমনকি সাউথ চায়না সি তে কোন প্রতিরোধ দেখছে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু তা বলে হম্বিতম্বি করা, ট্রাম্প মোদীর মতো চাপাবাজি করতে যাবে না, তা তো নয়। দেখা যাক! অর্থাৎ ব্যাপারটা নিয়ে এখন পর্যন্ত নিট লাভালাভ হল মিডিয়া হাইপ বা উত্তেজনা তোলা, এর মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে।
মিডিয়ায় উত্তেজনা তোলা সেটাই সম্ভবত আপাতত করা হচ্ছে বা চলবে। কিন্তু মোদীর আমেরিকার পকেটে হাত ঢুকিয়ে থাকার কাজ-সার্ভিসটা করে দেয় কে? সম্প্রতি এনিয়ে নেপাল ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক এক আর্টিকেল লিখে বলেছেন, এই কাজের হোতা মূলত সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর, তিনি ভারতের এখনকার বিদেশমন্ত্রী। মোদীর সাথে তাঁর সম্পর্ক আমেরিকায় রাষ্ট্রদূত থাকার শেষজমানায়, তাঁর অবসরে চলে যাওয়ার আগে আগে, সেই ২০১৪ সালে। কিন্তু সেটা ছিল মোদীর ক্ষমতায় আসারও বছর। মোদী যখন আমেরিকার সাথে সম্পর্ক কীভাবে শুরু করবেন, কোন দিক দিয়ে আগাবেন, এসব দুশ্চিন্তায় বে-দিশা হয়েছিলেন, তখন রাষ্ট্রদূত জয়শঙ্করের আগেই করা কিছু হোমওয়ার্ক [আমেরিকান কিছু ডিপ্লোম্যাটদের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক বা র্যাপো(rapport) ও তাদের থেকে আমেরিকান মনোভাবের খোঁজখবর রাখা] মোদীর কাছে খুবই কাজের মনে হয়েছিল ও কাজে লেগেছিল। সেই থেকে জয়শঙ্কর মোদীর ‘আমেরিকান পকেটে হাত ঢুকানো’র বিশেষ দূতের ভূমিকায় আছেন। কারণ, আমেরিকান ডিপ্লোমেটদের কারো কারো সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক দু’পক্ষই খুবই কাজের জিনিস বলে মানতে শুরু করেছিল। আর একারণে সেই রাষ্ট্রদূত থেকে জয়শঙ্কর এখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জয়শঙ্কর মোদীর কে লাগেঃ
বলা হয়ে থাকে, চাপাবাজি বিষয়ক মোদীর সু অথবা কু পরামর্শ জয়শঙ্করই বয়ে নিয়ে যেয়ে থাকেন আমেরিকান সেক্রেটারি অব স্টেট পম্পেও-এর কাছে। আর সেখান থেকেই ট্রাম্প আরো নানা চাপাবাজির উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। মাইক পম্পেও জার্মানি থেকে আমেরিকার সৈন্য স্থানান্তরের কারণগুলোর মধ্যে একটা কারণ হিসেবে “চীন-ভারত টেনশন” কথা কয়টা ঢুকিয়ে দেন। আর তাতেই কিছু ‘পেইড মিডিয়া’ এ নিয়ে হইচই ছড়ানো শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু সবচেয়ে তামাশার দিকটা হল, মোদী সরকারের কেউ এ নিয়ে কোথাও কোন ইতি বা নেতি মন্তব্য করেননি। কারণ তাঁরা এই চাপাবাজিটা থেকে কিছু লাভালাভ তুলে নেয়ার চেয়েও বড় টেনশনে আছেন যে, চীন আবার এই চাপাবাজির খবরে ক্ষেপে গিয়ে কিছু না করে বসে।
কিন্তু এতে চীনা প্রতিক্রিয়াটা ধরা পড়ে যখন চীনা গ্লোবাল টাইমসে এক প্রফেসর আর্টিকেল লিখে বলেন, ভারতের প্রধান সমস্যা হল ‘উগ্র জাতিবাদ’। মানে তিনি বলতে চাইছেন মোদী সরকার চীনের বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে – এই করে ফেলবে, সেই করে ফেলবে, বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে, মুখ তোড়া জবাব দিব অথবা একমাত্র ৫৬ ইঞ্চি ছাতির মোদী এমন জবাব দিতে পারেন – ইত্যাদি এ ধরনের ‘উগ্র জাতিবাদ’ উস্কানি দিয়ে ভোটের ইস্যু বানানোতে মোদী এক ওস্তাদ লোক অথচ পুরো ব্যাপারটাই বানোয়াট। এতে সমস্যা হল, যদি কখনো সত্যিকার পরিস্থিতি আসে আর মোদী কিছুই করতে পারেন না অবস্থা হয়, তা হলে মোদী ইজ্জত-সম্মান হারানো এক ভয়ঙ্কর লোক হিসেবে হাজির হয়ে যান ও যাবেন। তাই ব্যাপারটা নিয়ে চীন এতই বিরক্ত যে, এবারের বিশ ভারতীয় সেনার বিপরীতে চীনা আহত-নিহতের ফিগারটা কী তা সে এখনও একেবারেই প্রকাশ করেনি। যেন মোদী ও তাঁর দল এনিয়ে কোন নির্বাচনী বীরত্বগাথা গল্প তৈরি না করতে পারে সেজন্য। যেমন লাদাখে যারা মার খেয়েছে তারা ভারতের বিহার রেজিমেন্টের। তাই ভারতের অন্তত একজন পত্রিকা সম্পাদক ইতোমধ্যে টুইটে বলে বসেছেন আগামি বছর বিহারে রাজ্য নির্বাচন – তাই সেখানে যেন ঐ বিহার রেজিমেন্টের ‘উগ্র জাতিবাদী মিছা বীরত্বের গল্প” নির্বাচনে ভোট পাবার ইস্যু না করা হয়।
ঘটনা হল, মোদীও জানেন চীনের বিরক্ত হওয়ার বিষয়টা। সম্ভবত এজন্যই মোদী স্বীকার করে নিয়ে বলেছিলেন যে, “ভারতীয় ভূখণ্ডে কেউ ঢুকেনি”। এর উদ্দেশ্য ছিল চীনকে ঠাণ্ডা ও খুশি করা। বরং এতে সম্ভবত চীনের মনে এখন ধারণা এই যে মোদী উগ্র জাতিবাদী রাজনীতির লোক হিসেবে ভোটের লোভে যেকোনো গল্প বানাতে মিছা মিছা যুদ্ধ লাগিয়ে এই সেই জয় নিয়ে আসছেন বলে কোনো মকারি-যুদ্ধ খাড়া করে ফেলতে পারেন। অতএব এবার তাই সত্যিকার ভয় দেখাতে চীন সেনা সমাবেশ করেছে। এর পালটা ভারতও করেছে। তাই সত্যিকার যুদ্ধের মুডে কেউ নেই বলেই মনে হয়। যদিও একটা ভয় থেকেই যায় মোদী কখন না আবার “নেশনকে দেখানোর মুডে” বা মোডে চলে যান। বিশেষত এই কোভিড ভাইরাসে কাবু হয়ে থাকার কালে।
মোদী লাদাখ সফরেঃ
সম্প্রতি মোদী লাদাখ সফরে গিয়েছিলেন; সেখানে গিয়ে আবারও হম্বিতম্বি। কড়া কথার মধ্যে তিনি চীনকে পরোক্ষে “আগ্রাসনবাদী” বলেছেন। অর্থাৎ নাম না নিয়ে বলেছেন। যেটা নিয়ে ভারতেরই কিছু বুদ্ধিমান সম্পাদক তা নাকচ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে আবার চীনও এর পালটা প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, চীনের ১৪ প্রতিবেশি রাষ্ট্রের মধ্যে ১২টার ক্ষেত্রেই আপোষে সীমানা চিহ্নিতকরণ সুষ্টভাবে সমাপ্ত হয়ে গেছে। তাই মোদীর দাবি মিছা কথা, প্রপাগান্ডা। কিন্তু তাতে বাকী ঐ দুই রাষ্ট্র কারা? ভারতেরই আরেক সম্পাদক [এখানে তার কথার[এখানে ভিডিও ক্লিপ আছে ইউটিউবের] তিনিও মোদীর “চীন আগ্রাসনবাদী” – এই মন্তব্য পছন্দ করেন নাই। তিনি বলেছেন ঐ দুই রাষ্ট্র হল এক ভারত। আর দুই হল, ভারতেরই প্রভাবের কারণে ভুটান। এখন পাঠক বুঝে নেন আগ্রাসনবাদী তাহলে কে দাঁড়ালো!
আবার সেনাদের সামনে মোদীর গরম জাতিবাদী বক্তৃতা – “ভারত কখনো মাথা নত করেনি। এখানেও করবে না”। ধরনের গা গরম করা কথা বলেছেন। সেনাদের উত্তপ্ত করতে আর মনোবল ধরে রাখতে এমন কথা রাজনৈতিক নেতারা বলেই থাকেন বা বলতেই হয়। তবে সাবধান! মোদী এরপর কিভাবে পদক্ষেপ-আচরণ করেন তা দিয়ে তার এই কথার অর্থ তৈরি হবে।
কিন্তু চীন ইতোমধ্যেই একটা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ভারত যেন কোনো স্ট্র্যাটেজিক মিস-ক্যালকুলেশন [Avoid miscalculation, says China ] বা ভুল হিসাব না করে বসে। এই কথাকে কলকাতার এক বাংলা নিউজ এর বাংলা করেছে। সেটা এই রচনা শুরুতে যেটা টাঙানো হয়েছে। অর্থাৎ মোদীর কথা নেহায়েত কথার কথা হিসাবে থাকাটা ভাল হবে, চীনা সম্পাদক এটাই বুঝিয়েছেন।
মোদীর আরেক জাতিবাদী তত্ত্ব কথায় বলেছেন, “দুর্বলরা নাকি শান্তি স্থাপন করতে পারে না”। তাই তিনি “সাহসী” হতে বলছেন। কিন্তু কথা হল, দুর্বল শব্দের উল্টা হল সবল হওয়া; কিন্তু মোদী খামোখা উল্টাপাল্টা সাহস দেখাতে গিয়ে না ডুবে যান, সে শঙ্কাও হাজির হচ্ছে দেখা যাচ্ছে।
আগামী দিনে মোদী আবার “আমাকে কেউ মারে নাই” ধরনের মেসেজ দিয়ে নিজেকে কারেক্ট করেন কিনা কিংবা কী বলে বসেন তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। “উগ্র জাতিবাদ” এই হিন্দুত্ব আসলেই এক গভীর সমস্যা!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
[এই লেখাটা গত ০৪ জুলাই ২০২০, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ওয়েবে ও পরদিনই প্রিন্টেও “চীন-ভারত কি যুদ্ধ বাধার দিকে হাঁটছে”– এই শিরোনামে উপ-সম্পাদকীয়তে ছাপা হয়েছিল। পরবর্তিতে সে লেখাটাই এখানে আরও নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে এখানে আজ ছাপা হল। ]