করাচি নাকি গৃহযুদ্ধে, ভারতের পরিকল্পিত ফেক নিউজ


করাচি নাকি গৃহযুদ্ধে, ভারতের পরিকল্পিত ফেক নিউজ

গৌতম দাস

 ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০০:০৬

https://wp.me/p1sCvy-3eu

প্রথম ছবিটা ভারতের scroll.in মিডিয়া ওয়েব সাইট থেকে নেয়া। ভারতের CNN-News18  টিভির অফিসিয়াল টুইটার পেজ থেকে নেয়া স্ক্রিন শর্ট। যেখানে লেখা আছেঃ
#ImranUnderSeige – Civil War breaks out in Pakistan.
Clashes between Sindh Police and Pakistan Army.
Chorus for Imran Khan’s ouster grows.
Massive explosion in Karachi kills 5
@Arunima24 reports from New Delhi.

আর দ্বিতীয় ছবিটাও নেওয়া হয়েছে একই উৎস থেকেঃ তবে এটা পাকিস্তান থেকে পালটা ঠাট্টা করে দেয়া এক টুইট বার্তা। বলা হয়েছেঃ ব্রেকিং নিঊজ। করাচির গুলশান-ই-বাগের এই সাহসী নওজওয়ান পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের এই বিমানটা থামিয়ে দিয়েছে। নাগরিকেরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেমেছে।
ছবির ক্যাপশন শেষ এখানে।


জন্ম থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে একটা পারস্পরিক টেনশন অস্বস্তি সবচেয়ে ঠান্ডা সময়েও বর্তমান থাকে। কিন্তু এরও কিছু নিয়ম ও সীমার মধ্যে তা থাকে। কিন্তু এবার সেসব সীমাও ছাড়িয়ে গেছে। গত ২০ অক্টোবরের ঘটনা।  ভারতের লিডিং মিডিয়াগুলো আর সোশাল মিডিয়ায় ভুয়া একাউন্ট থেকে যে ফেক নিউজ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে তা হল, করাচীর গুলশান-ই-বাগ এলাকায় পাক আর্মি ও সিন্ধ পুলিশের মধ্যে বন্ধুক যুদ্ধ (ফায়ার ফাইটিং) থেকে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে, পুলিশের আইজিপিকে অপহরণ করা হয়েছে ইত্যাদি। আমাদের মত যেকোন দেশের মত পাকিস্তানেও আভ্যন্তরীণ রাজনীতিক সংঘাত হয় অথবা তা থেকে সময়ে অনেক ধরণের উত্তেজনা তৈরি হয়। আর অনেক সময়ই সেসব বিষয় নিয়ে পড়শি ভারত বা পাকিস্তানে চুইয়ে পড়া ধরণের যেটুক কিছু কিছু খবর তারা স্থানীয় মিডিয়া থেকে সংগ্রহ করতে পারে তাই ছাপা হয়। কিন্তু কখনই উৎস দেশের মিডিয়ার চেয়েও পড়শি দেশে ছাপানো তথ্য বেশি বা বানানো ফেক নিউজ হয়না কখনও। কিন্তু এবার করাচীতে – আর্মি-পুলিশ, পরস্পরের ফায়ার ফাইটিং, গৃহযুদ্ধ, আইজিপি অপহরণ ইত্যাদি – ধরণের শব্দ ব্যবহার করে ভারতে এই ফেক নিউজ ছেয়ে ফেলা  হয়েছে। এটা মারাত্মক এবং সীমা ছাড়ানো ঘটনা নজিরবিহীন। সবচেয়ে মারাত্মক হল এই ফেক এমনই যে করাচীতে “গুলশান-ই-বাগ” বলে কোন পারা বা এলাকাই নাই। এটা এমনই অর্গানাইজড মিথ্যা। ঘটনা অনুসন্ধানে এটা ভারতের গোয়েন্দা, মিডিয়া ও সরকারের যোগসাজশে ঘটানো ঘটনা বলে অনুমান করার কারণ আছে যা নওয়াজ শরীফসহ বিরোধীদলীয় জোটের সাথে ভারতের আঁতাতের ইঙ্গিত বহন করে। বিবিসির চোখে এটা সংগঠিত ও “সমন্বিতভাবে” মিথ্যা বলার ঘটনা। কিন্তু কেন?

পাকিস্তানে কথিত সেনা-পুলিশ সঙ্ঘাতের ফেক নিউজ করে ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া ভারত ছেয়ে ফেলেছে; অনেক সেলিব্রেটি যাদের অ্যাকাউন্ট ভেরিফাইড চিহ্ন লাগানো তারাও সোশ্যাল মিডিয়ায় সেসব ফেক নিউজ কপি করে ছেয়ে ফেলেছেন। এ অবস্থায় ওই ফেক নিউজ প্রসঙ্গে এর বিরুদ্ধে বিবিসি বাংলা ও তুরস্কের ‘টিআরটি ওয়ার্ল্ড এজেন্সি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আলাদা রিপোর্ট ছেপেছে।

টিআরটির রিপোর্টের শিরোনাম হল, ভারতীয় মিডিয়া নির্দয়ভাবে গণউন্মাদনা জাগিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কাল্পনিক গৃহযুদ্ধের খবর প্রচার করছে’ [Mass hysteria as Indian media relentlessly covers imaginary war in Pakistan]আর বিবিসি বাংলার শিরোনামটা হল করাচিতে গৃহযুদ্ধের ভুয়া খবর নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মাতামাতি।
তবে পরবর্তিতে ভারতের এই ফেক নিউজ করা নিয়ে পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায় যেমন ঠাট্টা তামাশা বা টিটকারি করা হচ্ছে বলে পাকিস্তানেই পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে তেমনি বিবিসিও কোথায় কিভাবে কারা এই নানান ফেক নিউজ তৈরি করেছে
, আর কিভাবে কারা কারা তা প্রচার করেছে এরই এক লম্বা অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছে। এটি মূলত বিবিসিরই নিজের যেটা ফেক নিউজ ধরা বা চেক করার বিভাগ আছে, বিবিসির রিয়েলিটি চেক বিবিসি মনিটরিং নামে, এদেরই মুখ্য তৎপরতা ও সহায়তায় তৈরি করা এক রিপোর্ট। যেমন বিবিসি ঠাট্টা টিটকারি প্রসঙ্গে বলেছে, সিভিলওয়ারকরাচি, ফেইক নিউজ এবং ইন্ডিয়ানমিডিয়া‘ হ্যাশট্যাগে তারা অনেক রঙ্গ রসিকতামূলক পোস্ট এবং মিম শেয়ার করেছে টুইটারে

করাচীতে “গুলশান-ই-বাগ” নামে কোন এলাকার অস্থিত্বই নাই; অথচঃ
করাচিতে যে নামে কোন পাড়াও নাই, সেখানে “সেনাবাহিনী এবং সিন্ধু পুলিশের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে” বলে টুইট করা হয়েছে।  বিবিসি লিখেছে, “প্রথম এই টুইট কে করেছিলেন তা স্পষ্ট নয়। বিবিসি অনেক খোঁজখবর নিয়েও @drapr007 নামের এই টুইটার অ্যাকাউন্টটি কে চালায় সে সম্পর্কে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি। (তবে) এই টুইটের এক ঘন্টা পর একই অ্যাকাউন্ট থেকে আরেকটি টুইট করা হয়। এবারের টুইটে ব্রেকিং নিউজ হ্যাশট্যাগ দিয়ে বলা হয়, করাচীর গুলশান-ই-বাগ এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং সিন্ধু পুলিশের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। যারা করাচী শহর চেনেন, তারা জানেন যে সেখানে গুলশান-ই-বাগ নামে কোন এলাকার অস্থিত্বই নেই। কিন্তু বেশিরভাগ পাঠক তো আর সেটি জানেননা”।

“…টুইটে ব্রেকিং নিউজ হ্যাশট্যাগ দিয়ে বলা হয়, করাচীর গুলশান-ই-বাগ এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং সিন্ধু পুলিশের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। যারা করাচী শহর চেনেন,তারা জানেন যে সেখানে গুলশান-ই-বাগ নামে কোন এলাকার অস্থিত্বই নেই”।

অথচ এই ফেক তৎপরতায় ভারতীয় মিডিয়ায় এমন ব্যক্তিত্বও আছেন যাদের অবস্থান এমন কোন হালকা কিছু নয়, বরং সিরিয়াস ও রাষ্ট্রীয় পদকজয়ী সম্পাদকও আছেন। অথচ এদেরও ফেক নিউজের প্রতি আগ্রহ এখন খুবই তীব্র মনে হচ্ছে, যার কারণ সম্ভবত তারা চীনা সীমান্ত সঙ্ঘাত দেখে নিজেদের মানে ভারতের ভবিষ্যত নিয়েই হতাশ ও যেন অনিরাপদ বোধ করছে! তাই তারা কোন ধরণের চেক না করে নেয়া ফেক নিউজ প্রচারে অংশ নিয়েছেন, আর নিজেদের পত্রিকার এমন শিরোনাম করেছেন ও ধরা খেয়েছেন। যেমন- বিবিসির এমন তালিকায় আছে সিএনএন-নিউজএইটিন (CNN-NEWS18), জি নিউজ (ZEE NEWS) ও ইন্ডিয়া টুডে (IndiaTODAY) পর্যন্ত’ – এমন মিডিয়াঅর্থাৎ এরা বিজেপি দলীয় প্রপাগান্ডা করা কোন পেড মিডিয়া বা পারসন নয়, এর বাইরের। এর আগেও ভারতের এই ফেকপ্রীতির দশা দেখে আগে যেটা মনে হত এটা বোধহয় কেবল বিজেপি-আরএসএস এর সমস্যা। (দেখুন বিবিসির রিপোর্টে ভারতের ফেক নিউজ ফ্যাক্টরির ততপরতা নিয়ে )। কিন্তু এখন এটা প্রমাণ করে যে ভারত রাষ্ট্র ও সমাজে কতটা নিচে নেমেছে। আর এই ফেক নিউজ ছড়ানো আসলে ভারতীয় গোয়েন্দা, মিডিয়া ও সরকারের এক যোগসাজশ ততপরতা।
যেমন – এরা অর্ণব গোস্বামী বা রিপাবলিক টিভিসহ হিন্দি বা মারাঠি ভাষায় প্রচারিত বিজেপি দলীয় মিডিয়া প্রপাগান্ডিস্ট যারা আছেন
, এদের মত কেউ নয়। যেমন ইন্ডিয়া টুডের সম্পাদক রাজদ্বীপ সরদেশাই; তিনি এটা ছাড়াও আরো অনেক মিডিয়া গ্রুপের সাথে জড়িত সম্পাদক-সমতুল্য নানান পর্যায়ে। তিনি এত খারাপ রেপুটেড কোন লোক নন, বরং ভারতের বিচারে নতুন ধরনের মিডিয়াব্যক্তিত্ব (সে সময় নতুন উদ্যোগ এনডিটিভির সাথেই শুরু থেকেই রাজদ্বীপের উত্থান হয়েছিল ) হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত। অথচ তার নিজের পত্রিকার হেডলাইনেও একই রকম ফেক নিউজ। শিরোনামে লিখেছেন, “করাচিতে সিন্ধু-পুলিশ প্রধানকে অপহরণ করা হয়েছে” –ধরণের ফেক রিপোর্ট। বিবিসি সেটারও এক স্ন্যাপ শট তুলে এনে ছাপিয়েছে  প্রকাশিত ঐ রিপোর্টে।তবু আমাদের আজকের লেখার প্রসঙ্গ ঠিক পাকিস্তান নয়; বরং কেন ভারত সরকার ও তার প্রভাবে তার মিডিয়া এমন প্রচারণা চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে? এটা কিসের ইঙ্গিত? আর মূলত কেন এই ইঙ্গিত আমাদের জন্যও ভয়ঙ্কর? আমাদের বেলাতেও এটা ঘটতে পারে কেন? এনিয়ে কথা বলব।

বিরোধী জোট পিডিএম (পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট)
পাকিস্তানে এক বিরোধী জোট তৈরি হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে। এই জোটের আলাদা নামও দেয়া হয়েছে – পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)। এর চেয়েও মজার দিকটা হল এই জোটের প্রধান বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে মওলানা ফজলুর রহমানকে। আর খুব দ্রুত চলতি মাসজুড়ে চলছে তাদের সিরিজ জনসভা। তাদের এবারকার জনসভার স্টেজে দেখা যাচ্ছে বয়স্ক মওলানা ফজলুর দুই পাশে জোটের প্রধান দুই দলের দুই তরুণ প্রতিনিধি – মরিয়ম নওয়াজ শরিফ আর বিলওয়াল ভুট্টো।  দুই জেনারেশনের মিলন বা জংশন-মূলক এই চিত্রটা ইতিবাচক মনে করা যেত কিন্তু সমস্যা হল, এসব নিউ জেনারেশনের নেতাদের পিতারা দুর্নীতির দায়ে বিচারে অভিযুক্ত বলে সর্বোচ্চ আদালতের রা কাঁধে নিয়ে এখন জেলের বাসিন্দা; সে কারণেই তারা এখানে। আর এই দুর্নীতির অভিযোগ দু-এক কোটি রুপির নয়, মিলিয়ন ডলার তো বটেই, বিলিয়নেও মাপতে হতে পারে। অনুমান করা হয় তা দুই বিলিয়নের বেশি ডলারের। নওয়াজ শরিফ আরো শ্রেষ্ঠতিনি নাম তুলেছেন মানে তা প্রকাশিত হয়েছে পানামা পেপারস নামে পরিচিত এক অর্থপাচার কেলেঙ্কারির ডকুমেন্টে। যেটা অফশোর অ্যাকাউন্টে যারা টাকা পাচার করে রেখে দিয়েছেন দুনিয়ার এমন প্রায় দুই লাখ লোকের ডকুমেন্টের তালিকা যা এক ভুলের কারণে ফাঁস হয়ে যায়। আগ্রহীরা লন্ডন গার্ডিয়ানের এর রিপোর্টটা দেখতে পারেন – What are the Panama Papers? A guide to history’s biggest data leak.।  আর এই পানামা পেপারস এর কেলেঙ্কারিতেই পাকিস্তানের দুর্নীতিবিরোধী কোর্ট তাকে দশ বছরে সাজা  ও সাথে ফাইন হিসাবে আরও $10.6 million শোধ করতে নির্দেশ দিয়েছে। এর সাথে “রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ” করে রায় দেয়।

“The Panama Papers (Spanish: Papeles de Panamá) are 11.5 million leaked documents that detail financial and attorney–client information for more than 214,488 offshore entities. … The documents contain personal financial information about wealthy individuals and public officials that had previously been kept private.”

মওলানা ফজলুর নেতৃত্বে পিডিএম, এটা নওয়াজ ও ভুট্টোর দলসহ ছোট-বড় ১১ দলের জোট, যা জন্ম নিয়েছে গত সেপ্টেম্বর ২০২০ মাসে আর এ’মাসের ৩ অক্টোবর  মওলানা ফজলুকে এর প্রধান বানিয়েছে। এর প্রথম সমাবেশ ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালায় আর দ্বিতীয়টা ছিল করাচিতে ১৮ অক্টোবর। এখান থেকেই ভারতীয় সংশ্লিষ্টতার ঘটনা সামনে আসতে থাকে।

তবে এর আগেও, মানে গত বছর নভেম্বরে একই রকম সমাবেশ করেছিলেন মওলানা ফজলু। নওয়াজ ও ভুট্টোর দল বাইরে দাঁড়িয়ে সেসময় তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে জানালেও কেউই তাতে অংশগ্রহণ করেনি। রাজধানীতে তখন সেখানে মওলানা ফজলু জমায়েত নিয়ে ১৩ দিনের অবস্থান করে  বসেছিলেন। কিন্তু কোনো দাবি কিছু আদায় করা ছাড়াই তা প্রত্যাহার করতে হয়েছিল সে সময়ে। ইমরান খান ২০১৮ সালের আগস্টের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। আর তাতে খাইবার-পাখতুন প্রদেশের এক কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে ফজলু হেরে যান, ইমরানেরই দলের প্রার্থীর কাছে।
বলা হয়ে থাকে সেই জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে (পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ১৯৭৮-৮৮) তাঁর উত্থানের সময় তাঁর সাথে মওলানা ফজলুর প্রভাবশালী উত্থান ঘটেছিল
; বিশেষত বিতর্কিত ব্লাসফেমি আইন ও দুর্নীতিবিরোধী ইসলামী আইন ইত্যাদি প্রসঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ও প্রভাব খুবই মুখ্য ছিল বলে। সেই থেকে তিনি প্রভাবশালী ইসলামী নেতা হিসেবে রাজনীতি করে এসেছেন। ভোটে দাঁড়িয়েছেন পাখতুন প্রদেশ থেকে। সেই জিয়াউল হকের আমল মানে সেটা মূলত গ্লোবাল ইতিহাসের এক গুরুত্বপুর্ণ টার্নিং পয়েন্ট “সেকালের সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগান দখল” এরই কালপর্ব পাকিস্তানের সমকালীন শাসন পর্বকাল; যাকে আমেরিকা পেলেপুষে পাকিস্তানের ক্ষমতায় বড় করেছিল, সোভিয়েত মোকাবিলা করতে। সেই জিয়াউল হক, মওলানা ফজলুর মাধ্যমে অসংখ্য মাদরাসা খুলে তারই মাধ্যমেই পরিচালনা করেছেন।  তাই মাদ্রাসা ফান্ড মওলানা ফজলুর রহমানের প্রভাব ও উত্থানের পিছনে এক বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে থেকেছিল মনে করা হয়। এছাড়াও আরও বাড়তি দিকটা হল, তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে সৌদি রাজ-প্রভাব রাখা বা ফেলার এক বড় উপায় হয়ে ওঠেন। অথচ সেই তিনিই ২০১৮ নির্বাচনে নিজ রেগুলার কনস্টিটুয়েন্সি থেকেই পরাজিত হয়ে যান। এই ফলাফল দেখে তিনি অপমানিত। তাই তিনি মেনে নিতে পারেননি। সে কারণে এক বছর না যেতেই তিনি ইমরানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন, এমনটা মনে করা হয়। তবুও মওলানা ফজলুর ২০১৯ এর ঐ একক আন্দোলন আর এবার ২০২০ সালের  নওয়াজ মুসলিম লীগ ও পিপলস পার্টিকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ফারাক আছে।

এবারে বিরোধীদের আন্দোলনের মূল দাবি কী?
কম কথায় বললে, তাদের মূল দাবি ২০১৮ নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে অথবা তাদের অভিযোগ আর্মি সেখানে নির্বাচনের পরিবর্তে সিলেকশন করেছে; তাই এটা বাতিল করতে হবে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট [Brookings Institution]
, বহু পুরানা (১৯১৬) এক আমেরিকান থিংকট্যাংক ও গবেষণা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরই এক গবেষক ফেলো হলেন ড. মাদিহা আফজাল [Madiha Afzal]। মাদিহা পাকিস্তানি অরিজিনের; লাহোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও ল-এর গ্র্যাজুয়েট। পরে আমেরিকান ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি; আর পরে আমেরিকার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু দিন অধ্যাপনার পর তিনি এখন ব্রুকিংসের ফেলো। তিনি নিয়মিত পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় বা ব্রুকিংসের নিজ সাইটেই লিখে থাকেন। সেখানের এক আর্টিকেলে তার বক্তব্য হল, এখনকার আর্মির অনেকেই নওয়াজকে অপছন্দ করে সত্য কিন্তু আশির দশকের মাঝামাঝির নির্বাচনে নওয়াজ শরিফের ক্ষমতাসীন হওয়াতেও এই আর্মিই তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া একালে নওয়াজের মধ্যে প্রায় খোলাখুলিই প্রো-ইন্ডিয়ান হয়ে ওঠার ঝোঁক প্রবল হয়ে উঠেছে – আমরা দেখছি।

খুবই কম কথায় বললে  ঘটনাটা হল, ১৯৯১ এর পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকা দুনিয়ার একক নেতা হয়ে যায়। এতে আমেরিকান থিংকট্যাংকগুলো তাদের রাজনৈতিক দল ও নেতাদের চেপে ধরে যে, দুনিয়ার একলাই নেতা এখন আমেরিকা বলে এবার তৃতীয় বিশ্বে আমেরিকাকে সামরিক শাসন জারি বা সমর্থন করা আর চলবে না, তখন থেকে বন্ধ করে দিতে হবে। ক্লিনটন (প্রেসিডেন্ট ১৯৯৩-২০০১) সে সময়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন। আর এখান থেকেই নতুন চক্রে পড়ে নওয়াজ মূলত প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ব্যবসায়ী হিসেবে বেশি সক্রিয় হওয়াতে ভারতের ফাঁদে আটকা পড়েন। ক্লিনটন যেখানে স্বীকার করে নিয়েই শুরু করছেন যে, আমেরিকার ইচ্ছা ও কারণে এত দিন সামরিক শাসন এশিয়া চলেছে সেখানে ভারত, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীই পাকিস্তানের সামরিক শাসনের মূল কারণ ও সমস্যা বলে এক ধারণা প্রচার করতে থাকে। এতে ক্লিনটন ব্যাপারটা পাশ কাটিয়ে গেলেও নওয়াজ শরিফ ভারতের এউ লাইনে পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর ওপর রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ এসেছে বলে প্রচার করতে থাকেন। একই সময় ভারত-পাকিস্তান কারগিল যুদ্ধ সীমিত হয়ে শেষ হয়েছিল। কিন্তু এবার নওয়াজ এই যুদ্ধের জন্য ভারতের সহযোগী অবস্থান নিয়ে প্রচার ও প্ররোচনা করতে থাকেন যে, ততকালীন আর্মি চীফ জেনারেল মোশাররফের কারণে কারগিল যুদ্ধ ঘটেছে বলে সব দায় আর্মির উপর চাপায় দেন। আর এই দাবি করে তাকে সরাতে এক পরিকল্পনা করেন নওয়াজ। শ্রীলঙ্কা থেকে জেনারেল মোশাররফ দেশে ফিরিতে রওনা করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাকে বহনকারী সেই বাণিজ্যিক প্যাসেঞ্জার বিমান পাকিস্তানের কোথাও নামতে দেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই ফাঁকে নওয়াজ আর্মি চিফ পরিবর্তন করে দেন। এই ঘটনাটা জেনারেল মোশাররফের নিজের দেয়া বর্ণনায় তারই  “লাইন অফ ফায়ার” বইতে বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায়।  কিন্তু মোশাররফকে আকাশে ঝুলিয়ে রেখে চিফ পরিবর্তন এই ব্যাপারটার প্রতিক্রিয়া আর্মির ভিতরে ভাল হয় নাই। বিশেষত কারগিল যুদ্ধের জন্য পুরা সেনাদের দায়ী করা আবার আকাশে একটা প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটকে এক-দেড়শ নিরীহ নাগরিককে মৃত্যুর মুখে নিরাপত্তাহীন করে ফেলে রাখা যেটা ফৌজদারি খুনের অপরাধ এর দায়  সেনারা শেয়ার নিতে চায় নাই । তাই এতে উলটা আর্মির মধ্যে নওয়াজবিরোধী ক্ষোভ জেগে উঠাতে আধা ঘণ্টার মধ্যে পালটা ক্ষমতা দখল ও বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয় প্রো-মোশাররফ মেজরিটির সেনা গ্রুপ। তারা ঐ প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটের তেল ফুরানোর প্রায় পাঁচ মিনিট আগেই নিরাপদে মোশাররফের ঐ ফ্লাইটকে আবার পাকিস্তানের রাজধানীতেই অবতরণে সক্ষম হয়। মোশাররফ ক্ষমতাসীন হন আর নওয়াজ বন্দী হন। এটাই ১৯৯৯ সালের প্রথম অমেরিকার অনিচ্ছায় পাকিস্তানের সামরিক ক্ষমতা দখল। তাই প্রতিক্রিয়ায়  আমেরিকা মোশাররফের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। এভাবেই চলতে থাকে। পরে ২০০১ সালের নাইন-ইলেভেন হামলার পর সেদিনই নিরুপায় আমেরিকার পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল বিবিসি-সিএনএনকে জানায় যে আমেরিকা সেদিন প্রথমেই পাকিস্তানকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে জানায়। কিন্তু ভারতের পক্ষে সেনাদের বিরুদ্ধে যাবার ঐ ঘটনায় নওয়াজের আসলে স্বার্থ ছিল, ভারতীয়দের সাথে ব্যবসা করা। নওয়াজ  নিজে তিনি তার মূল ইত্তেফাক গ্রুপের মালিক ও ব্যবসায়ী। তিনি ও তাঁর মত ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ছিল ভারতের সাথে আরও নতুন ব্যবসায় যুক্ত হতে। সেকাজে তারা চেয়েছিলেন – ভারতীয় পণ্য পাকিস্তানে এনে বিক্রি করে কমিশন খাওয়া্র ব্যবসা করবে। যেমন একটা দিক উল্লেখ করা যায় বাংলাদেশের মত পাকিস্তানেও একই আইনে একই সময় থেকে, ভারতীয় সিনেমা অবিভক্ত পাকিস্তানেই আমদানি নিষিদ্ধ ছিল। নওয়াজ এটা প্রথম খুলে দিয়েছিলেন। আর ভারতীয় সিনেমা প্রডিউসার-মালিকরা নগদ খদ্দের পেয়েছিলেন। আসলে এমন ব্যবসাপাতির বিরুদ্ধে আর্মিই নওয়াজের ক্ষমতার জন্য প্রধান বাধা বলে অনুভব করাতেই পুরো ব্যাপারটা আর রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে থাকেনি। নওয়াজ গংয়ের পেটি ব্যবসায়িক স্বার্থ মুখ্য হয়ে হাজির হওয়াতেই ভারতের তাঁবেদারিটাই মুখ্য হয়ে উঠেছিল; অথচ এই স্বার্থটাই যা পাকিস্তানে সে সময় রাজনীতিবিদ (ব্যবসায়ী) বনাম আর্মি এই ভুয়া নামে হাজির হয়েছিল। তবু পাকিস্তান আর্মি আমেরিকার ইচ্ছা মেনে সেই থেকে আর কখনো ক্ষমতা দখল করতে যায়নি। তবে তা আর না করেও রাজনীতিতে যতটুকু প্রভাব রাখা যায় সে চেষ্টা করে অবশ্যই। বলাবাহুল্য, নওয়াজদের মত রাজনীতিবিদ থাকলে পাকিস্তানে এ সমস্যার কোনো দিন কোনো সমাধান নাই।

তবে পরিস্থিতিকে ভারতের আধিপত্যে নেয়ার জন্য উপযুক্ত করে সেদিকে ঠেলে দেয়ার জন্য আমেরিকানদের লোভের স্বার্থ মূলত দায়ী। কারণ মূলত আমেরিকার আগ্রহ ভারতের বাণিজ্য, বাজার, অস্ত্র বিক্রি ইত্যাদির ওপর। যেটা ভারত পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলার পর (১৯৭৪) থেকে ভারত-আমেরিকা প্রায় বাণিজ্য সম্পর্কহীন হয়ে পড়েছিল। তাই ১৯৯৯ সালে ভারত নিজ বাজার বাণিজ্য সুবিধা আমেরিকাকে দেয়ার এক পূর্বশর্ত হিসেবে উল্টো পাকিস্তানের বাজার ভারতকে পাইয়ে দিতে যেন আমেরিকা সাহায্য করে এই শর্ত দিয়েছিল। আর এই ভারত-আমেরিকান স্বার্থের মধ্যে পড়ে পাকিস্তানের নিজভাগ্য হারিয়ে গিয়েছিল। কারণ ভারতের প্ররোচনায় ব্যবসায়ী নওয়াজেরা পাকিস্তান আর্মিকেই নিজ স্বার্থ হাসিলের পথের বাধা হিসাবে উপলব্দি করতে থাকে। আজ সেসব পুরনো পাকিস্তানবিরোধী পরিকল্পনা আবার সামনে আসছে, একটু একটু করে। তার আগে মাদিহার বাকি কথা শেষ করে নেই।

মাদিহা এবার তার কথা শেষ করতে সরাসরি ২০১৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে চলে যান। তার ঐ আর্টিকেলের শিরোনাম হল, পাকিস্তানের ইমরান খান কী নোংরা নির্বাচনে বা না প্রকৃত ম্যান্ডেটে জিতেছেন [Did Pakistan’s Imran Khan win a “dirty” election or a real mandate?] ২০১৮ জুলাই ২৭ তারিখে সেটা ছাপা হয়েছিল, যেখানে ঐ নির্বাচন হয়েছিল ২৫ জুলাই।  মাদিহা ঐ লেখায় বলেন, এখানে অস্বীকার করা কঠিন এমন দুটো ফ্যাক্টস আছে। প্রথমত, নির্বাচন কমিশনের ম্যানেজমেন্ট ফেইলিওর বা অযোগ্যতাটা ছিল মারাত্মক। সারা দিন ভোট প্রদানের সময় কোথাও কোনো বড় অভিযোগ ছিল না, উঠেনি। কিন্তু ভোট গণনার শুরুতে তাতে আরো দেরি হওয়ায় মানুষের সন্দেহ বাড়তে থাকে। অথচ এর কারণ হল কমিশনের সফটওয়ার ফেল করেছিল। এবং এই ফেল করা কমিশনের অযোগ্যতা অবশ্যই। মাদিহার দ্বিতীয় পয়েন্টটা অনেক শক্ত। তিনি বলছেন, বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসেবে সেখানে ছিল ইইউর অবজারভা্রের, এক বড় টিম। কিন্তু তাদের রিপোর্ট হল, নির্বাচন মোটা দাগে ইতিবাচক হয়েছে।

এ ছাড়া কিছু প্রসঙ্গ যা মাদিহা আনেননি তা হল, আসলে যেখানে আর্মির প্রভাব কার্যকর ছিল, সেখানে নওয়াজের দলের পুরনো এমপিকে দুর্নীতির দায়ে আদালতের মাধ্যমে অযোগ্য ঘোষণা করে দেয়া হয়েছিল। এই কাজে পরোক্ষে আর্মির হাত ছিল মনে করা হয়। এ কথা অবজারভাররাও বলেছিল। তবে তারা এটা সরাসরি নির্বাচনের দিনের ঘটনা নয় পুর্ব প্রভাব বলে কম গুরুত্ব দিয়েছিল তারা। এর মূল কারণ, ঐ  জেনারেল জিয়ার আমলের ইসলামী দুর্নীতির আইন। বিচারকদের এটা প্রয়োগ ও ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আদালতকে যথেচ্ছ অধিকার দেয়া আছে এতে। সেকারণে এক রায়ের শেষে বিচারকের এমন মন্তব্য আছে যে, তিনি মন্তব্যে বলেছেন, আমাদের এমন ক্ষমতা দিলে তো এটা অপব্যবহার হবেই। আর সেটা ব্যবহার করাতেই নওয়াজের দলের বহু প্রার্থী অযোগ্য হয়ে যায়। তবে মূলত কমিশন তাদের সফটওয়ার ফেল করার কারণে ফলাফল দিতে দেরি হয়েছে। আর এ থেকেই প্রচারণার শুরু।

 এবার এপ্রসঙ্গে শেষের মূল যে কথাটা তা হল, বিরোধী দলের এখনকার এই আন্দোলন শুরু হলে পরে কেন ইমরান সরাসরি আলজাজিরাকে বলছেন যে, এই আন্দোলনে নওয়াজ শরিফ ভারতের খেলা খেলতে নেমেছেন”! [Pakistan’s Khan accuses rival Sharif of “playing India’s game”] প্রথমত এটা কথার কথা কোন অভিযোগ নয় বা কমন রাজনৈতিক দল একে অপরকে যেভাবে ও অর্থে যেমন বলে থাকে সেই সাধারণ অর্থ বলা কোনো কথা নয়। এর সুদূরপ্রসারী অর্থ আছে। কী সেটা?

দুনিয়ার এই সময়টা এখন পালাবদলের। এটা গ্লোবাল নেতা বা নেতৃত্বের পালাবদল – আমেরিকার বদলে চীনের নেতৃত্ব নেয়ার পালাবদল। আমেরিকা জানে, এই পরিবর্তন অনিবার্য। তা জেনেও যত তাতে দেরি করিয়ে দেয়া যায় এই লক্ষ্যে আমেরিকা খড়কুটোও আঁকড়ে ধরতে চাইছে। আর তা থেকেই এখন চারদিকে যাবতীয় নতুন সমস্যা।

আর এ কাজে আমেরিকার চেয়েও অনুসারী সাগরেদ ভারত আরো কূটাশ্রয়ী হতে চাইছে। তাই ভারত চাইছে, একটা গ্লোবাল পোলারাইজেশনের মধ্যে পাকিস্তানকে ফেলে দিতে। মওলানা ফজলু মানে সৌদি লবি বা প্রভাব। ভারত এটার উপরে আমেরিকা, মাঝে সৌদি আর নিচে ভারত এভাবে চায়না বিরোধী এক পোলারাইজেশন টানতে চাইছে। যেন পাকিস্তানে আমেরিকা-চায়না পোলারাইজেশনটা পাকিস্তানের দলভিত্তিক হয়ে যাক। যেমন ইমরান এক দিকে আর তিনটি দল অন্য দিকে;  ভারত-চীন পোলারাইজেশনের দুই ভাগ এমন হোক। এতে ভারত যেন নওয়াজকে নিজের নৌকায় সামিল করে নিতে পারে। আর নওয়াজকে পুরনো ১৯৯৯ সালের কথা ও অ্যালায়েন্সের কথা, ব্যবসায়িক সুবিধার কথা মনে করিয়ে ভারত সেই সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আর নওয়াজের অবস্থা হল – যিনি দুর্নীতির দায়ে বাকি জীবন জেলে থাকার জন্য শাস্তির রায়প্রাপ্ত; কারণ তাঁর তো দুর্নীতিতে সাজার রায় হয়ে গেছে তাই, তার কাছে পুরা পাকিস্তান ভারতের অধীনে চলে গেলেইবা কী? যদি তাতে নওয়াজ খালাস পেয়ে যাওয়ার উপায় পাওয়া যায়? এ কারণেই ভারতের গৃহযুদ্ধের প্রপাগান্ডা নওয়াজের সাথে ভারতের আঁতাত কত গভীরে চলে গেছে এরই প্রকাশ। ভারত প্রকাশ্যে পাকিস্তান নিয়ে, পাকিস্তানের একটা দলের পক্ষ নিয়ে ফেক নিউজ প্রপাগান্ডা শুরু করেছে – এই ফেনোমেনা এটা গত পচাত্তর বছরের ইতিহাসে কেউ দেখেনি!

কিন্তু মূল কথা- একটা দেশের জন্য এটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের হবে যদি ক্ষমতাসীন ও বিরোধীরা এরা এভাবে চীন বা আমেরিকান এই ভিত্তিতে দেশের দলগুলো একেকটার এজেন্ট হয়ে ভাগ হয়ে যায়। পাকিস্তানের ভাগ্যে সেই বিপদ ঘটতে যাচ্ছে।

আর এটাই আমাদের জন্যও কী কোনো ইঙ্গিত যে, আমাদের ভাগ্যেও না এমন পরিণতি কোনো ফাঁক-ফুটা দিয়ে এসে যায়!

সর্বশেষ, ভারতের এক খুবই সিনিয়র সম্পাদক হলেন শেখর গুপ্তা। যিনি ভারতের প্রধান সব পত্রিকার সম্পাদক হওয়া শেষে এখন বয়স্ক হয়ে এখন নিজের দ্যাপ্রিন্ট নামে মিডিয়ার সম্পাদকমন্ডলীর প্রধান। তিনি প্রায়ই ভিডিও ক্লিপ রিপোর্ট করেন। তিনি স্বীকার করেছেন, করাচী নিয়ে ভারতের মিডিয়ার রিপোর্টিং ভিত্তিহীন মিথ্যা। বিশেষত গৃহযুদ্ধ বা পাকিস্তানি সেনাদের আইজিপির অপহরণ এর খবর প্রসঙ্গে বলছেন ইনি নিজের সোর্সের মাধ্যমে খবর নিয়েছেন ও জেনেছেন এগুলা ফেক। যদিও তিনি কারা তাহলে ফেক একাউন্ট থেকে ফেক এমন টুইট তথ্য ও রিপোর্ট  ছড়ালো, ফেক গৃহযুদ্ধের ছবি  ছড়ালো – এসব নিয়ে কোন টুশব্দ তিনি  করেন নাই। কিন্তু এরপরের রাজদ্বীপ তার ইন্ডিয়া টুডে প্রিন্ট পত্রিকা থেকে অপহরণের শিরোনাম দেয়া ফেক রিপোর্ট এখন সরায় নেন নাই বা দুঃখ প্রকাশ করেন নাই। ইতোমধ্যে ইমরান খান এই ইন্টারভিউয়ে প্রতিজ্ঞা করে জানান, তিনি নওয়াজ শরীফকে যিনি সুপ্রীমকোর্টের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাকে বৃটেন থেকে ফেরত আনবেনই। এছাড়াও বলেন যে তিনি ক্ষমতায় থাকেন আর না, এই দুর্নীতিবাজেরা যেন ক্ষমতায় না ফিরতে পারেন এটা নিশ্চিত করবেন। [He said whether he remained in power or not, he would make sure that leaders of the protesting opposition parties never came back to power.]।

 

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

[এই লেখাটা  গত  ২৪  অক্টোবর ২০২০, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ওয়েবে ও  পরদিনই প্রিন্টেও  “ভারতের ফেক নিউজ, করাচি নাকি গৃহযুদ্ধে?” – এই শিরোনামে উপ-সম্পাদকীয়তে ছাপা হয়েছিল।  পরবর্তিতে ঐ লেখাটাকে এখানে আরও নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]

 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s