ভারত-রাষ্ট্রের ভেঙ্গে পড়া ও রবি কান্তের হতাশা


ভারত-রাষ্ট্রের ভেঙ্গে পড়া ও রবি কান্তের হতাশা

গৌতম দাস

২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০৬ সোমবার

https://wp.me/p1sCvy-3jP

India’s Prime Minister Narendra Modi addresses party workers during the celebrations after the victory in Bihar assembly election BJP headquarters on November 11, 2020 in New Delhi, India. (Photo by Mayank Makhija/NurPhoto)

ইভিএম মেশিন বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে বিতর্ক শুধু বাংলাদেশে না, ভারতেও খুবই ব্যাপক। আর ভারতে এর ব্যবহার প্রায় শতভাগ আসনে, মানে ভারতের নির্বাচন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি ইভিএম নির্ভরশীল। এই মেশিনের বিরুদ্ধের ব্যাপক অভিযোগগুলো আসলে ওর প্রোগ্রামিংকে বাইরে থেকে ম্যানিপুলেট করে কারচুপি করার সুযোগ নেওয়ার জন্য।  এসব অভিযোগগুলোর মধ্যে  গত ২০১৯ সালের মে মাসের কেন্দ্রের নির্বাচনের ফলাফল থেকে সর্বশেষ এই বছর গত অক্টোবর মাসে বিহারের রাজ্যনির্বাচন পর্যন্ত প্রায় ভারতের সব নির্বাচনেই মেশিন কারচুপির অভিযোগ অনেক জোরদার হয়ে উঠেছে।
বিশেষত ২০১৯ সালের নির্বাচনে যা সেসময় অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাত পর্বে। এর শেষ পর্বের নির্বাচনের আগের দিন অমিত শাহ আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। হিমালয়ের এক হিন্দু তীর্থস্থানে মোদী ধ্যানে বসেছিলেন, শেষ নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের আগে। সেটা শেষ করে এসেছেন- এই অজুহাতে মোদী ঐ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও সৌজন্যমূলক কিছু কথা ছাড়া আর কিছুই বলেননি। পুরো অনুষ্ঠানে অমিত শাহ একাই কথা বলেছিলেন। অমিতের কথার মূল ফোকাস ছিল কত আসনে বিজেপি জিতবে, এর আগাম অনুমান দেয়া। তিনি দাবি করেছিলেন, মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে বিজেপি একাই তিনশ-এর বেশি আসন পাবে। হয়েছিলও তাই, পেয়েছিল ৩০৩ আসন; যেটা গত ২০১৪ সালের নির্বাচনের চেয়ে আবার ৩৬ আসন বেশি। বিজেপি জোট হিসাবে পরের ২০১৯ সালে মোট পেয়েছিল ৩৫৩ আসন। আর এখান থেকেই কারচুপি বা সফটওয়ার প্রোগ্রাম ম্যানিপুলেশন করার অনুমান জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে যায় যা এখন ক্রমশ বাড়ছে। সে সময় মূলত দুটি কারণে অভিযোগ, সন্দেহ জোরদার হয়েছিল, এক. অমিত শাহের মোট আসনের প্রেডিকশন বা অনুমিত প্রাপ্ত আসন সংখ্যা আর ২০১৪ সালের চেয়ে বেশি আসন পেয়ে বিজয়ী হওয়া, যেটা অস্বাভাবিক ঠেকেছিল। কারণ, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় আগের কংগ্রেস সরকারের সময় অর্থনীতির দশা প্রবল খারাপ হওয়াতে তরুণেরা ব্যাপক চাকরি হারা হচ্ছিল। আর সেই হতাশায় আর সেটা মোদী এড্রেস করাতে তারা মোদীর উপর আশায় বুক বাঁধতে ঝুকেছিল। তাই মোদী বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু পরে ২০১৯ সালের সময় ফেলে আসা পাঁচ বছরের মোদী শাসনে ইতোমধ্যে আরো তিতা হয়ে গেছিল। কারণ ভারতের অর্থনীতি ডুবেছিল এবার অনেক বেশি; যা আবার মোদীর দীর্ঘদিনের পরিসংখ্যান লুকানোর প্রবল চেষ্টার পরেও তা উন্মোচিত হয়ে পড়েছিল। আর এই পতন মূলত শুরু হয়েছিল মোদীর ২০১৬ সালের নভেম্বরে পাঁচশ ও এক হাজার রুপির নোট হঠাৎ বাতিল ঘোষণার ধাক্কায়। ভারতের অর্থনীতির বড় অংশটাই হল ইনফরমাল অর্থনীতি। অর্থাৎ মূল কারখানা উতপাদনের “কাজ সৃষ্টি” নয়। বরং সীমিত কিছু এমন মুল কাজ সৃষ্টির ফলে এবার তাকে সহায়তা করতে যেয়ে আধপেটে খাওয়া কিছু শ্রমিক-ফেরিওয়ালার (বা কারখানা শ্রমিকদের জন্য ভাত রেধে দেয়া বুয়ার কাজ টাইপের) জন্য যে কাজ সৃষ্টি হয় – এটাই ইনফরমাল অর্থনীতি বা কাজ সৃষ্টি।  আর এই অংশের উপরেই নোট বাতিলের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি পড়াতে তাও তখন একেবারে গুটিয়ে যাওয়া; এটা ঘটেছিল মারাত্মকভাবে। তাই পরের ২০১৯ নির্বাচনে বিজেপির আসন কমে হেরে যেত অথবা কম মার্জিনে বিজেপি জিতলে হয়ত এসব সামঞ্জস্তপুর্ণ হত, কিন্তু হয়েছিল এর উল্টা। উল্টা আসন বেড়ে গেছিল। সন্দেহ-অবিশ্বাসের শুরু সেই থেকে।

একজন রবি কান্তের দুঃখ ও হতাশাঃ
একজন রবি কান্তের দুঃখ ও হতাশার শুরু এখান থেকেই। কিন্তু এই রবি কান্ত [Ravi Kant] আসলে কে?
রবি কান্ত ভারতের একজন কলামিস্ট, জার্নালিস্টও বলা যায়। তার লেখার মূল আগ্রহের বিষয় অর্থনীতি। আর মূলত ভারতের বাইরের পত্রিকায় তিনি লেখেন যদিও তাঁর নিজেরই ভাষ্যমতে তিনি টেকনোলজি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বা সাইবার-সিকিউরিটি নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন। এই লেখায় তাঁর এবারের উদ্বেগ এই সাইবার সিকিউরিটির প্রশ্নে।

এদিকে “এশিয়ান টাইমস” [Asian Times] হংকং থেকে প্রকাশিত ওয়েব ভিত্তিক একটা দৈনিক; সাম্প্রতিককালে যার আরেকটা সিস্টার কনসার্ন আরেক ওয়েবভিত্তিক দৈনিক প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়েছে – ‘এশিয়ান টাইমস ফাইন্যান্সিয়াল’ নামে। রবি কান্ত ভারতের মিডিয়ায় বিশেষত ভারতের “ইকোনমিক টাইমস” ধরনের অর্থনীতিভিত্তিক পত্রিকায়ও বেশি সময়ে লিখে থাকেন। তিনি এশিয়ান টাইমসেও একটা আর্টিকেল লিখেছেন যেখানে তার লেখার বিষয় “ভারত-রাষ্ট্র ভেঙে পড়ছে” [Systematic collapse of the world’s largest democracy] বলে তাঁর হতাশা আর দুঃখ!

ভেঙে পড়ছে’ মানে কী অর্থে?
একটা রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে থাকে ও দীর্ঘস্থায়ী হয় স্থায়ী ও সুগঠিত কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কারণে। সে হিসেবে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগ আর সংসদীয় (জনপ্রতিনিধিদের) ক্ষমতা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোর পেশাদার ও প্রাতিষ্ঠাকীকরণ রূপে হাজির হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বলে মানা হয়। যেখানে বিভিন্ন মতামতকে জায়গা করে দিয়ে একটা সমন্বিত ব্যবস্থা ও আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে একে অভ্যাস ও চর্চাকে সবল করা ও নিয়মিত রেওয়াজে নিয়ে যাওয়া হয় ইত্যাদি।

গায়ের জোর খাটানোর অথবা কখনো চাতুরীর সুযোগ পেয়ে বা বের করে আপনি যখন রাজনৈতিক বিরোধীদের দাবড়িয়ে কোণঠাসা করে রাখবেন আর সেটিই মূলধারার প্রাকটিস বানিয়ে ফেলবেন – এটাই হল এর উল্টা কাজ। গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ধারক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এবার দুর্বল ও অসংগঠিতভাবেই বেড়ে উঠবে। এতে দুর্বল ও অসংগঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো আপাতত ও খুবই সাময়িক আপনার বিরাট বিজয় এনে দিচ্ছে মনে হলেও নিশ্চিত থাকতে পারেন, অচিরেই আপনি আপনার রাষ্ট্রকে ক্রমেই ভেঙে পড়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন; সেদিকে নিয়ে যাচ্ছেন এবং যাবেনই। সেটা তখন কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে যাবে যে, আপনার রাষ্ট্রটা কখন ভেঙে পড়বে! অকেজো হয়ে যাবে!  আবার যেমন ধরেন ক্ষমতাসীন আপনারই সংসদীয় বিরোধী দলের নেতা – তাঁকে আপনি খুন করানোর সুযোগ পেলেন। আর সেটা আপনি না, অন্য কেউ তার নিজের স্বার্থে বাস্তবায়ন করে ফেলবে জেনে তাতে আপনি বেজায় খুশি হয়েছেন। এখন আপনি কী করবেন?  ক্ষমতাসীন আপনি মনে করলেন আমি তো হত্যাকান্ড করছিনা তাই  অন্যের হাতে  বিরোধীনেতার মৃত্যুর সুবিধা পেতে ও নিতে অসুবিধা কী? না, আপনি বিরাট ভুল করবেন। তাই এটা উলটা বিরাট অসুবিধা তৈরি করবে। এমনিতেই ক্ষমতাসীন সরকারে আপনি বলে বিরোধীনেতার নিরাপত্তা দেওয়ার দায় সরাসরি মূলত আপনার। তবু সেটা যদি বাদও রাখি তবে আপনি এতে নিজের  ও রাষ্ট্রের যে ক্ষতিটা করবেন তা হল, এখানে এরপর থেকে ক্ষমতাসীন ও বিরোধিরা পরস্পর পরস্পরকে খুন করার রেওয়াজ চালু করে ফেলবে, আর সেটার শুরুও আপনিই করলেন। ফলে এখন প্রতি মুহুর্তে বিরোধীদের হাতে নিজে খুন হয়ে যেতে পারেন সে আশঙ্কায় বসবাস করতে থাকেন। আর এর ব্যাপক মানেটা হবে যে – ক্ষমতায় থাকার সময়সীমা শেষে আইনমাফিক পরবর্তি নির্বাচিত ক্ষমতাসীনের হাতে নিরুপদ্রব ক্ষমতা-হস্তান্তরের রেওয়াজ চালু হতে আপনি আর দিলেন না। ফলে আপনার বেলাতেও তা হবার নিশ্চয়তা নষ্ট করে দিলেন। এগুলো কাজেরই নিট ফলাফল  দুর্বল ও অসংগঠিতভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে খাড়া করা। ফলে ধীরে ধীরে এই রাষ্ট্র ভেঙ্গে পড়ার দিকেই যাবে।
এসব দিক থেকে দেখে বিবেচনা করে তাই রবি কান্তের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর অনুষঙ্গ হিসেবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টও – এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আর এ নিয়েই তার যত আশঙ্কা ও যেটা তাঁর হতাশার মূল প্রসঙ্গ!

তাঁর লেখার শুরুতে প্রথম-অর্ধে তিনি ভারতের “গণতন্ত্র” কত মহান, তা নিয়ে প্রায় অর্ধেক জায়গাই ব্যবহার করে ফেলেছেন। যেমন তাঁর লেখার মূল শিরোনাম দিয়েছেন, ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ ডেমোক্র্যাসিকে সিস্টেমেটিকভাবে ভেঙে ফেলা” হচ্ছে। এখানে যদিও আমরা বড় খারাপ চিহ্ন হিসাবে মনে রাখতে পারি যে, কেউ যখন “গণতন্ত্র” এই শব্দ ও ধারণা দিয়ে কোন রাষ্ট্ ও ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করে বা তুলে ধরে তবে এই মানে হল, ঐ লেখক রাষ্ট্র ও ক্ষমতা সম্পর্কে বা  রাষ্ট্রের গঠন প্রকৃতি-বৈশিষ্ট প্রসঙ্গে জানাশুনা তার জানাশুনা খুবই কম ও দুর্বল। আর ঠিক সেকারণে,  অনেক পাঠক এই ‘সর্ববৃহৎ ডেমোক্র্যাসি’ ধরনের ফাঁকা ও খামোখা প্রশংসা শুনেই বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারেন এবং সেটাই উচিত সম্ভবত। কারণ শব্দটা বাগাড়ম্বর ধরনের। এমনিতেই, শুধু ‘ডেমোক্র্যাসি’ শব্দ ব্যবহার করে কেউ ফাঁপা গর্ব করা কথা বললে সেটা বাকচাতুরীতে প্রতারণা ও ফাঁকির আয়োজন হচ্ছে বলে সন্দেহ হতে শুরু হয়। কারণ একটা দেশে নির্বাচন হলেই সেখানে ডেমোক্রাসির জয়জয়কার চলছে বলা বা মনে করা ভিত্তিহীন ও তা চাতুরি। ফলে সেখান থেকে অসততার ইঙ্গিতের শুরু। এটা এক বাগাড়ম্বর আর প্রপাগান্ডা। অথচ ওর ভিতরে খুঁজে দেখলে হয়ত, মানে পাওয়া যাবে যে, সবচেয়ে জঘন্য নাগরিক বৈষম্যের রাষ্ট্র হয়ত সেটাই; অথচ সেদিকটার খবর নাই।  আবার কেউ যখন মহান বা শ্রেষ্ঠত্ব ধরণের শব্দ ব্যবহার করে নিজের রাষ্ট্র সম্পর্কে কথা বলে যেমন “মেরা ভারত মহান হ্যায়” – তাহলে বুঝতে হবে তিনি যে বর্ণবাদী এবং রাষ্ট্র সম্পর্কে বিশাল ক্ষতিকর চিন্তার ধারক তা তিনি নিজেই বুঝেন না। এমনই ডাম্ব বা ভোতা চিন্তার লোক তিনি।  এ ছাড়াও ‘ডেমোক্র্যাসি’ শব্দ ব্যবহার করে যারা নিজেকে প্রকাশ করতে ভালোবাসেন এদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সবল অভিযোগ হল, রাষ্ট্রের আসল গুণ-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এদের ন্যূনতম জ্ঞান ও ধারণা নাই বা থাকে না। কারণ রাষ্ট্রের মুখ্য গুণ-বৈশিষ্ট্য সংশ্লিষ্ট অরিজিনাল শব্দ ও ধারণাটা “গণতন্ত্র” নয় বরং শব্দটা হল  “রিপাবলিক” রাষ্ট্র।
এর প্রমাণ একমাত্র রাজা-বাদশাদের রাজতান্ত্রিক দেশ ছাড়া, বাকি প্রায় সব রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক নামের মধ্যে কমন যে শব্দটা সবাই বয়ে বেড়ায়, তা হল ‘রিপাবলিক’। তাতে সেই রাষ্ট্র কমিউনিস্ট কী ইসলামিস্ট কিংবা আধুনিক রাষ্ট্র যাই হোক না কেন! এসব রাষ্ট্র যখন প্রথম কায়েম হয়েছিল – এমন সবখানেই নামের মধ্যে রিপাবলিক শব্দ থাকতে দেখা যায়, এটা এমনই কমন। তাহলে এই ডেমোক্রেসি শব্দটার উদয় হল কোথা থেকে?
আসলে ডেমোক্রেসি শব্দটার পেছনে বড় সক্রিয়তা ছিল আমেরিকার – তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে বেকায়দায় ফেলার আমেরিকার “দরকারি” স্বার্থে। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়নও নিজেকেও জন্ম থেকেই এক ‘রিপাবলিক’ রাষ্ট্র মনে করে ও দাবি করে এবং শব্দটা তার রাষ্ট্রের নামের  মধ্যেই জন্ম থেকে দেয়া হয়েছিল। ওর পুরা নাম ছিল ইউএসএসআর এবং এই ‘আর’ মানে হল রিপাবলিক। কিন্তু কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্ম থেকেই ওপেন সার্বজনীন অবাধ নির্বাচন অথবা পাবলিক রিপ্রেজেন্টেশন (জনপ্রতিনিধি নির্বাচন) বলতে কিছুই ছিল না। রাখা হয় নাই। জন্মের পর দেওয়া গণভোটের ফলাফল বিপ্লবের পক্ষে তা আসাতে ঐ ফ্লাফল আর কোনদিন সরকারি স্বীকৃতির আলো দেখে নাই। আর নির্ধাচন ধারণাটাই উঠে যায়। আর সেটাকেই পুঁজি করে একে নেতিবাচক হাইলাইট করতে আমেরিকার গণতন্ত্র শব্দটাকে সামনে আনা যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের মতোই এক রিপাবলিক রাষ্ট্র বলে দাবি করতে পারে; কিন্তু এখানে তথাকথিত ‘গণতন্ত্র’ নেই – মানে নির্বাচন নাই; দেখ! অর্থাৎ আমেরিকার দাবি হল রাষ্ট্রের নামে রিপাবলিক শব্দ থাকলেও এদের রাষ্ট্রে তথাকথিত ‘গণতন্ত্র’ নাই।
এ কারণে, জেনে না জেনে ভারত মুল কনসেপ্ট রিপাবলিক বা রিপ্রেজেন্টেশন ইত্যাদি ধারণা থুয়ে “গণতন্ত্রঃ শব্দটা দিয়ে সব ঢেকে ফেলা আর এইশব্দটাকে  পপুলার করার দিকে যাওয়ার শুরু। আর তা থেকে ভারত  ‘সর্ববৃহৎ ডেমোক্রাসির’ দেশ বলে গর্ব করা – এটা হচ্ছে ভারতে নাগরিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয় কি না, এটা নাগরিক নির্বিশেষে সকলে সমান মর্যাদা ও অধিকারের রিপাবলিক কি না এসব দিক বাদ দেয় ও অগুরুত্বপূর্ণ মনে করে ফেলে দেওয়া। আর ভারতে কেবল একটা নির্বাচন হয় কি না এটাই একমাত্র বিবেচ্য করাই হচ্ছে এই ‘সর্ববৃহৎ ডেমোক্র্যাসি’ বলার না-বুঝ বা অবুঝদের বলাবলি। অথচ স্বাধীন ভারত জন্ম থেকে তো বটেই, এমনকি অখণ্ড ভারতের রাষ্ট্রবিষয়ক চিন্তার প্রথম উন্মেষের সময় (১৮১৫) থেকেই রাষ্ট্র বলতে বুঝা হয়েছিল কেবল এক হিন্দু জাতি-রাষ্ট্র ধারণাকেই। অর্থাৎ শুধু জাতি-রাষ্ট্র নয়, বরং এখানে ‘জাতি’ বলতে মনে করা হয়েছে একটা ধর্মীয় জাতি, একটা হিন্দু-জাতির রাষ্ট্র – এভাবে । ফলে এরপর এই রাষ্ট্রের নাগরিকের তো আর সার্বজনীনভাবে এবং সমান নাগরিক-অধিকারের নাগরিক হওয়ার আর সুযোগ থাকেনি। বরং এটা বৈষম্যমূলকই হবে, এবং তা হয়েছিল এবং আজও হয়েই আছে। এক কথায়, ভারত জন্ম থেকেই সম-নাগরিক অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। কারণ হিন্দু জাতি-রাষ্ট্র করে গড়ে তোলা রাষ্ট্র মানে, তা আর নাগরিক অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র হবার সুযোগ নাই। এ কারণে সেই হিন্দু জাতি-রাষ্ট্র ধারণাকেই আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে সেকালে হবু পাকিস্তানকেও যেন ঠেলে দেয়া হয়েছিল আরেক ধর্মভিত্তিক জাতি-রাষ্ট্র হতে; বাধ্য করা হয়েছিল। আর একারণের আমার আবেদন থাকবে গণতন্ত্র শব্দটার ব্যবহার এড়িয়ে চলা। এটা পাবলিকের বা গণ-ক্ষমতার রাষ্ট্র, রিপাবলিক রাষ্ট্র বা জনপ[রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র ইত্যাদি শব্দ ও ধারণা ব্যহার করা যেতে পারে।

অথচ এই চরম বৈষম্যমূলক অসম-নাগরিকের এই রাষ্ট্রেও যেহেতু নিয়মিত নির্বাচন হয় কাজের এটা দুনিয়ার ‘সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের’ বলে মিথ্যা ঢোল পেটানোর সুযোগ নেয়া চলছেই সেই থেকে। আরএসএস বা বিজেপির মত দল ভারতে চালু করে ফেলা যাচ্ছে সহজেই, বিনা বাধায়। ভারতের কনস্টিটিউশন, আদালত অথবা নির্বাচন কমিশনের কোনো আইনি বাধা ছাড়াই গুজরাটের মুসলমান গণহত্যাকারি মোদীর মত লোক দল খুলছেন, প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। অথচ কেউ মুসলমান নাগরিক হলে তাকে রাস্তায় ফেলে মাটিতে শুইয়ে বুকের খাঁচার ওপর লাফ দিয়ে উঠে তাকে নির্যাতন-জবরদস্তিতে ‘জয় শ্রীরাম’ বলাতে চেষ্টা করছে বিজেপি-আরএসএস। এই হল ‘সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের’ ভারত।

তবু এত সমালোচনার পরও –  আমরা এখানে এখন রবি কান্তের দুনিয়ার ‘সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের’ রাষ্ট্র বলে করা অন্ধ প্রশংসাকে পাশ কাটিয়ে যাবো, মূল প্রসঙ্গে প্রবেশ করার খাতিরে। রবির মূল অভিযোগ হল, কোনো রাষ্ট্র মুখ্য যেসব প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত প্রতিষ্ঠানের উপরে ও কারণে টিকে থাকে, যেমন বিচার বিভাগ বা নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি; ভারতে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর আর পাবলিক বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, শেষ হয়ে গেছে (বলেছেন, ডেথ অব ইন্ডিয়াস ক্রেডিবল ইনস্টিটিউশন্স, The death of India’s credible institutions)। কেন?

ইভিএম রেজিমঃ
ভারত এখন ইভিএম রেজিম এর যুগে এসে পড়েছে।  ভারতে নির্বাচন কমিশনের শতভাগ ভোট নেয়ার পদ্ধতি ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনভিত্তিক। এই মেশিন নিয়ে কারচুপির অভিযোগ অনেক দিনের, বিশেষ করে মোদী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকে বেশি করে এই সন্দেহ-অভিযোগ আরো সুনির্দিষ্ট। তাই আগামীতে হঠাৎ কোন একদিন যদি গত ২০১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সাধারণ নির্বাচনে মোদী ইভিএম মেশিন ম্যানিপুলেট করে ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে প্রমাণ সামনে হাজির হয়ে যায়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আগামীতে হঠাৎ কোনো একদিন যদি গত ২০১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সাধারণ নির্বাচনে মোদি ইভিএম মেশিন ম্যানিপুলেট করে ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে প্রমাণ সামনে হাজির হয়ে যায়, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

‘মোদির নির্বাচনী সফলতার গোপন দিক’ এই উপ-শিরোনামে রবি কান্ত লিখছেন, “সাম্প্রতিককালে নির্বাচন কমিশন ও ইভিএমের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ কমিশন কেবল ভিত্তিহীন বলেই ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে। কোন আমল করেন নাই, পদক্ষেপ নেয়নি”। এতে সর্বশেষ বিহারের নির্বাচনে (অনুষ্ঠিত হয় গত অক্টোবর শেষে, যার ফলাফল আসে ১০ নভেম্বর) কমিশনের ওপর মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কমিশন আর নিরপেক্ষ কোন প্রতিষ্ঠান কিনা সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এই নির্বাচনে বিজেপি ও তার জোট ছাড়া প্রায় সবাই ব্যাপক ভোটবাক্স কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল। এখানে আগে ক্ষমতাসীন ছিল মুখ্যমন্ত্রী নীতিশের স্থানীয় বা আঞ্চলিক ‘জনতা দল’ তবে এর সাথে বিজেপির জোট মিলে তারা বিহারে ক্ষমতায় ছিল। আর এবার কারচুপির অভিযোগ নিয়ে নীতিশের দলের জোট জিতেছে বলে দেখানো হয়েছে এভাবে যে, নীতিশের দলে হারের ঢল নেমেছে কিন্তু একা বিজেপি এবার ঐ আসন হারের চেয়েও একাই বেশি সংখ্যক আসন পেয়েছে। তাই জোট হিসেবে নীতিশ  আবার মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছেন। এদেখে এবার রবি কান্ত প্রশ্ন তুলেছেন, নীতিশের দল ভোট না পেয়ে গোহারা হারলে সেই ভোট কিভাবে একই জোটসঙ্গী কেবল বিজেপি একাই ততোধিক আসন পেয়ে যায়? [If the people of Bihar were openly opposing Nitish, then why would they vote for his coalition partner the Bharatiya Janata Party (BJP), which would again make him the chief minister? ]

তাই রবি কান্ত ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে বলছেন, “ভোটিং মেশিনের সবচেয়ে অস্বচ্ছ অংশটা হল ওর সফটওয়্যার যা টেকনিক্যাল, জটিল ও প্রায়ই যাচাই পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ নেই”।  কিন্তু সদিচ্ছা থাকলে উপায় বের হয়।  কারণ এরপরেও এর স্বচ্ছতা নিয়ে বহু কিছু করার আছে যা ভারতের নির্বাচন কমিশনের [এখন থেকে  একে শুধু ‘কমিশন’ লিখব]। আসলে প্রত্যেকটা সফটওয়্যার মানে, ওর সোর্স কোড থাকবেই। আর সোর্স কোডে কে কে ঢুকেছে, হাত ঢুকিয়েছে (এর অটো রেকর্ড থেকে যায় তাই) [… source-code audit reports] তা দিয়ে জানা যাবে কে কে এ মেশিনে হাত ঢুকিয়েছে। এ কারণে রবি এক তুলনা টেনে বলছেন, “উন্নত দেশে নির্বাচনী মেশিনের সফটওয়্যারের সোর্স কোড কে কে হাতিয়েছে, মানে  একসেস নিয়েছে এর নিরপেক্ষ বিশ্বাসযোগ্য একটা অডিট করা হয় কোন থার্ড পার্টিকে দিয়ে। আর সেই ইন্সপেকশন করিয়ে এরপর ঐ থার্ড পার্টি তাঁদের ইস্যু করা যে  রিপোর্ট ইস্যু করে থাকে সেই রিপোর্টটাই  এবার কমিশনের সাইটের প্রথম পাতায় লটকে দেয়া থাকে। এর সোজা মানে হল, পাবলিক কেউ না চাইতেই কমিশন নিজেই দায়িত্ব অনুভব করে নিজের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার প্রমাণ প্রকাশ্যে হাজির করে রেখেছে। আর ঠিক একাজটাই ভারতের কমিশন করতে দায়ীত্ব অনুভব করে নাই। এরা এমনই স্বঘোষিত অসৎ!

রবি কান্তের তাই দাবি, “ভারতের ইভিএম প্রচণ্ড মাত্রায় এক অস্বচ্ছ ব্যবস্থা” [Indian electronic voting system is highly opaque]। এ কারণে ‘এখানে এসব অডিট রিপোর্টের কোনো হদিসই নেই, পাবলিককে কোনো তথ্যও দেয়া হয় না’- এটা চলতে পারে না। ভারতের নির্বাচন কমিশন এটা করতেই পারে না।

সুপ্রিম কোর্টে একটা মামলার পরিণতিঃ
“সম্প্রতি এ নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটা মামলা হয়েছিল যে, এসব ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য কোনো থার্ড পার্টিকে দিয়ে ইন্সপেকশনের ব্যবস্থা করানো ও সেই রিপোর্ট প্রকাশ না করাতে কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করা হচ্ছে – এই হল মূল অভিযোগ কারণ এতে নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। আর এটা না করাতেই ইচ্ছামত নির্বাচনী ফলাফল বের করার সুযোগ রেখে দেয়া হয়েছে”।

রবি বলছেন, “অথচ এত শক্ত যুক্তি তুলে ধরার পরও সুপ্রিম কোর্ট ঐ আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আর এরপর, নির্বাচন কমিশনের  উপর “করণীয় বলে” কোনো আদেশ না দিয়েই বরং উল্টা ঐ মামলার আবেদনকারীকে আবার নির্বাচন কমিশনের কাছে ফিরে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবেদনকারীকে কোর্ট পরামর্শ দিয়েছিল, কমিশনকে নিরপেক্ষ অডিট করানোর আর ফলাফল পাবলিক করতে যেন তিনি (মামলার আবেদনকারী) কমিশনের কাছে আবেদন করেন। সারকথায়, কোর্ট বাদীকেই ফিরিয়ে দিয়েছে এই বলে যে, বাদি যেন কমিশনের কাছে আবার আবেদন জানায়। আর এতে কমিশনের ব্যবস্থা নিলে আর তা থেকে নতুন যে ফলাফল প্রকাশিত হবে এর তিন সপ্তাহের পরে আবেদনকারী চাইলে আবার আদালতে এসে কোনো আবেদন করতে পারবে”। তাই এবার রবি কান্ত পিনপয়েন্ট করে অভিযোগ করেছেন, কিন্তু সেই থেকে বাদি কমিশনে আবেদন করলেও ‘আজ পর্যন্ত কমিশনই এ নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এতে কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে”।

এখানে ভারতের সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কেমন লোক, কেমন ব্যক্তিত্বের – এরকিছু আলামত নিয়ে কথা বলা যাক। তিনি শরদ অরবিন্দ ববদে (Sharad Arvind Bobde)। যার আপন বাবা চাচারা হাইকোর্টের উকিল বা এটর্নি জেনারেল ছিলেন; মানে তারা ল প্রফেশনের এক ফ্যামিলি। তবু শরদ ববদে-এর আচরণ  খুবই অস্বচ্ছ। মানুষের অনেক কিছুরই শখ বা প্রচন্ড আগ্রহ বা স্বপ্ন থাকতেই পারে। তবু একজন জাস্টিসের আচার আচরণ আপোষের জীবন হতে পারে না।  তাঁর শখ হল, বিশেষ ধরণের মটর সাইকেল চালানো বা চালিয়ে দেখা। এমনিতেই বিচারকেরা কী ধরণের সামাজিক জমায়েতে যাবেন বা যাবেন না – আর কোন সংসর্গ এড়িয়ে চলবেন এর গাইড লাইন আছে। অথচ তিনি এক বিজেপি এমপির এমনই এক বিশেষ মটর সাইকেল চড়ে শখ মিটানোর জন্য তার মটর সাইকেল চেয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে শহরে চড়ে বেড়িয়েছেন।  শুধু তাই না। এরপর এই প্রসঙ্গে জনস্বার্থের দিক থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে আদালত ও জনগণকে সচেতনতা বাড়াতে যিনি কাজ করে যান স্বেচ্ছায় এবং নিজ খরচে মামলা করে থাকেন এমন সুপ্রীম কোর্টের এক উকিল হলেন প্রশান্ত ভূষণ। তিনি এনিয়ে আপত্তিকর পয়েন্টগুলো তুলে এক আর্টিকেল লিখলে তার বিরুদ্ধে চীফ জাস্টিস ববদে আদালত অবমাননার মামলা করে দেন।   আর ঐ মামলায় রায়ে তিনি তাঁকে এক রুপীর টোকেন ফাইন করে রায় দিয়ে দেন। যাতে তার উকিলি সার্টিফিকেট প্রশ্ন বা বাতিলের মুখে পড়ে যায়। যদিও তিনি এখন কোনমতে ঐ ফাইন-শাস্তির আদেশের বিরুদ্ধে একটা আপিল করে শাস্তির কার্যকারিতা সাময়িক স্থগিত করাতে পেরে টিকে আছেন। এ’থেকে এখন পাঠকেরা যা বুঝার বুঝে নেন!

এ দিকে আরেক ঘটনা হল, গত প্রায় তিন-চার বছর ধরে বিশেষ করে গত ২০১৯ সালের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের একমাত্র এক কমিশনার অশোক লাভাসা তিনি বাকি কমিশনারের সাথে দ্বিমত পোষণ করে প্রায় সব সিদ্ধান্তে “নোট অব ডিসেন্ট” দিয়ে নিজের আপত্তির রেকর্ড রেখে যাচ্ছিলেন। ইস্যুটা ছিল, ২০১৯ সালের নির্বাচনে মোদী-শাহের বিরুদ্ধে উঠা নানান নির্বাচনী আইন ভঙ্গের কমপ্লেন যার বেশির ভাগের উপর বাকি কমিশনাররা মোদি-শাহকে ক্লিনচিট দিলেও লাভাসা তাদের এসব কাজের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে চলছিলেন, উপনির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা। আর এতেই ক্ষুব্দ মোদী সরকার লাভাসার স্ত্রীর যিনি সরকারি স্টেট ব্যাংকের কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে ভারতের সিবিআই (আমাদের দুদকের মত তবে অনেক বড় ক্ষমতার ও সিরিয়াস ভার্সান বলা চলে) লাগিয়ে হেনস্তা করতে থাকেন। এছাড়া আয়কর বিভাগ তাকে নোটিশ পাঠিয়ে নাস্তানাবুদ করে চলেছেন। এখন এ বছর জানা যাচ্ছে শেষে  নিজেকে বাঁচাতে নির্বাচন কমিশনার লাভাসা এবার কমিশন ছেড়ে অন্য সমতুল্য সরকারি পোস্টে ট্রান্সফার নিয়েছেন। মানে আর বাঁশ বলে কিছুই থাকল না, নাই; তাই বাসুরিয়া বলেও আর কেউ থাকল না!

আর এখান থেকেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, আগামী বছর (সম্ভবত এপ্রিলে) পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে কারচুপি হবে এবং মোদীর বিজেপি জিতেছে এমন ফলাফলই প্রকাশিত হবে। কারণ এই অবস্থায় একই কারচুপির কায়দায় এরপর আগামী বছরের সম্ভবত এপ্রিলে কলকাতায় রাজ্য নির্বাচনে যদি মোদী রাজ্য সরকারে নিজ দলকে বিজয়ী দেখান তাতে অবাক হওয়ার কিছু কি থাকবে?

দেখা যাচ্ছে, রবি কান্তের ভারত, যেটা ‘সর্ববৃহৎ ডেমোক্র্যাসির’- এমন ফুটা গর্ব যা-ই থাক সেই গৌরবের ভারত নিয়ে তিনি এখন কী করবেন সে এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে উঠে আসছে!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা  গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ওয়েবে ও  প্রিন্টেও  “রবি কান্তের হতাশা” – এই শিরোনামে  ছাপা হয়েছিল।  পরবর্তিতে ঐ লেখাটাকে এখানে আরও নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s