বাইডেনের ‘কোয়াড’ ট্রাম্পের চেয়েও বেপথে


বাইডেনের ‘কোয়াড’ ট্রাম্পের চেয়েও বেপথে

গৌতম দাস

১৫ মার্চ ২০২১, ০০:০৬ সোমবার

https://wp.me/p1sCvy-3pO

First Quad summit, ছবিতে পরপর  আমেরিকার বাইডেন, ভারতের মোদী, অষ্ট্রেলিয়ার মরিসন ও জাপানের সুগা

বাইডেনের কোয়াড [QUAD] মানে ট্রাম্পের বদলে বাইডেন প্রশাসনের আমলে বাইডেন কোয়াডকে কি চোখে দেখবেন বা কি রূপে খাড়া করবেন সেটা ছিল বিশাল কৌতুহলের ব্যাপার। গত ১২ মার্চ বাইডেন প্রশাসন এই প্রথম কোয়াড জোটের চার রাষ্ট্রসদস্য আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া আর ভারত মিলে এক ভার্চুয়াল বৈঠক মানে অনলাইন সামিটে মিলিত হয়েছিলেন। অনলাইন সামিট হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছিল আমেরিকা হল এই সামিটের হোস্ট। এবং দাবি করা হয়েছিল যে এই প্রথম চার রাষ্ট্রের সরকার / রাষ্ট্র প্রধানেরা একসাথে মিলিত হয়ে কোয়াডের বৈঠক করছেন। বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে এমনকি ২০২০ সালের নির্বাচনের মাসখানেক আগে অক্টোবরেও ট্রাম্পের যুদ্ধংদেহী মনোভাব আর যখন তখন হুমকি দিবার হাতিয়ার হিসাবে কোয়াডকে ব্যবহার করেছিলেন; অর্থাৎ এতে কোয়াডের মানে যেন হয়ে গেছিল এটা একটা সামরিক জোট। যদিও সাধারণভাবে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাইডেনের শপথ নিবার পরে সবাই ধরেই নিয়েছেন যে, সেসব দিনের অবসান ঘটেছে। যদিও এমন মনে করা হয় নাই যে, এখন কোয়াড সদস্যরা কেউ আগ বাড়িয়ে ধরে নিবে, যে কোয়াড মৃত। না তাও নয়। তাহলে ফাইনালি বাস্তবে গত ১২ মার্চের সামিটে কোয়াডকে কী পরিচয়ে সাজাতে চান বলে বাইডেন ধারণা দিলেন?

আগেই জানা যাচ্ছিল, বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে সম্ভাব্য অবস্থান হবে ‘কোয়াড’ (এবং সাথে “ইন্দো-প্যাসেফিক” [Indo-Pacific] শব্দটাও) থাকবে কিন্তু এর সামরিক বা নিরাপত্তাবিষয়ক কোনো অর্থ আর থাকবে না। এমনকি তা প্রকাশ্য টার্গেট করে চীনবিরোধিতা করা হবে না। (হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি মিস জেন সাকি ইতোমধ্যে সাংবাদিকদেরকে পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ‘কোয়াড মিটিংয়ের ফোকাস চীন নয়’ […’It’s not focused on China…’ ]) তাতে মনে হয়েছিল কোয়াড বলতে (সমমনাদের) অর্থনৈতিক স্বার্থজোট ধরণের  এক অবস্থান দাড়াবে এর। যেমন বলা হয়েছিল এবারের এই অনলাইন সামিটের মূল উদ্দেশ্য হলো দুটো – “আমেরিকানদের ভাষায়”, “কোভিড ভ্যাকসিন প্রাপ্যতার ইস্যু […plans to announce financing agreements…for vaccines in India] ও চীনের প্রভাব”। মানে চীনের ক্রমেই বেড়ে চলা সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবকে ব্যালেন্স করতে তারা কী করতে পারেন [….to balance China’s growing military and economic power.], এ নিয়ে আলোচনা।

কোয়াড [QUAD] কী?
কোয়াড [QUAD] মূলত ইংরেজি শব্দ। তবে সাবধান এটা চারদেশের নামের আদ্যক্ষর নয়। বরং সংস্কৃত ঘেঁষা এক বাংলায় এর অর্থ হল ‘চতুষ্টয়’ [quadrilateral]. আর সেখান থেকে সংক্ষেপে QUAD। এর মুল আক্ষরিক অর্থ একসাথে জন্ম নেয়া চারজন, অনেকটা যমজের মত যেখানে একসাথে দু’জনের জন্ম নেয়া বুঝানো হয়। এখানে কোয়াড মানে চীনবিরোধী চার দেশীয় এক জোটের নাম; আর দেশগুলো হল আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। কিন্তু শুরু থেকেই এটা কেমন ধরনের ‘জোট’? মানে এটা স্ট্র্যাটেজিক জোট হলেও তবে কি মূলত সামরিক নাকি অর্থনৈতিক জোট?
আমাদের অবজারভেশন বলে, কে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে আছেন তার ওপর নির্ভর করে জবাবটা। এমনকি তার মুড কেমন – এর উপরও নির্ভর করবে। যেমন আনুষ্ঠানিক অর্থে কোয়াডের জন্ম এবারের সামিটি দাবি করা হচ্ছে যে, ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরে যে ভয়াবহ সুনামি হয়েছিল ও কোস্টাল সবদেশগুলো থেকে মিলিয়ে প্রায় ২.৩ লাখ লোক মারা গেছিল; সেই ব্যাপক প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর থেকেই কোয়াডের আলাপ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মূলত এর আনুষ্ঠানিক জন্ম  ২০০৭ সালে জাপানের উৎসাহে। জাপানের খুব ইচ্ছা চীনবিরোধী একটা জোট বানায়, তাই। এর পেছনের চিন্তা অনেকটা এরকম যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫) ‘হারুপার্টি’ জাপান, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার দুঃখ বুকে চেপে রেখে –  যুদ্ধের পরে বিপরীতে আমেরিকার বিপুল বিনিয়োগ ও পুনর্বাসন ঋণ পাওয়াতে এটাকেই এটাকেই সহজে লজ্জা ভুলে যাওয়ার উপায় হিসেবে নিয়েছিল। আর সেটাকে কাজে লাগিয়ে ‘কাজপাগল’ [workaholic] একটা জনগোষ্ঠী এই নতুন পরিচয় গ্রহণ করে পালিয়ে বেঁচে ছিল জাপান। এতে ফলাফল খারাপ হয়নি। আর তাতে অচিরেই অন্তত অর্থনীতিতে এত বিপুল উন্নতি লাভ করে যে, জাপান তার “আমেরিকা ভাইকে” সাথে করে আরেকটা ‘বিশ্বব্যাংক’ বা “অবকাঠামো উন্নতিতে সমতুল্য এক বিনিয়োগ ব্যাংক” খুলে বসেছিল, ১৯৬৬ সালেই। এরই নাম এডিবি [ADB] বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। আজ দু’দেশ মিলে তারা প্রায় ১৬% করে এর শেয়ারহোল্ডার ও সবচেয়ে বড় দুই মালিক। এভাবে চলছিল ভালোই। কিন্তু চলতি শতকে এসে ক্রমেই দৃশ্যমানভাবে এবং ২০০৯ সাল থেকে চীন – উদ্বৃত্ত অর্থনীতির রাষ্ট্র হিসেবে এর উত্থান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটেছিল। অনেকটা যেন, ক্রমেই এর আগমন হচ্ছিল সেটা টের পাচ্ছিল সবাই আর এর প্রতিক্রিয়ায় জাপান সমমনা বন্ধুদের নিয়ে এই ‘কোয়াড’ জোট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল।
কিন্তু জাপানের (সাথে আমেরিকারও) ক্যালকুলেশনে বড় একটা ভুল ছিল। সেটা এই যে, চলতি শতক আর কোল্ড ওয়ারের যুগ নয়। ফলে চীনা নবশক্তি উত্থান ঘটেও এতে চীন-আমেরিকার কোন নতুন “কোল্ড ওয়ার সম্পর্ক” এখানে হবেই না। তাই কোল্ড ওয়ার উঠে যাওয়ার একালে কোয়াড জোটই ঠিকমত কাজ করবে কিনা, এমনকি জোটটা খাড়া করাই খুব কঠিনই হবে। সংক্ষেপে এর কারণ বলতে গেলে – কোল্ড ওয়ারের আমলজুড়ে (১৯৫৩-৯১) কখনোই আমেরিকা ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কোন লেনদেন-বিনিময় বাণিজ্য ছিল না। এটাই ফান্ডামেন্টাল কারণ। ফলে এরা দুরাষ্টড় সহজেই একে-অপরকে নির্মুলভাবে ধ্বংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত-পরিকল্পনা করতে পারত। কারণ কোন দেয়ানেয়া বাণিজ্য-সম্পর্ক নাই বলে অপরে ধ্বংস হয়ে গেলে তাতে নিজের ক্ষতি নাই মনে করতে পারত।  আমরা যদি ১৯৯২ সালের পরের পরিস্থিতিতে এর সাথে উত্থিত চীনের তুলনা করি বড় ফারাকটা হল, একালে কোয়াডের চার সদস্যই চীনের সাথে ঘোরতরভাবে বাণিজ্যিক স্বার্থ ও সম্পর্কে জড়িত। এছাড়াও দুনিয়ায় আমরা প্রায় সব রাষ্ট্রই একই গ্লোবাল বাণিজ্য ব্যবস্থায় [Global Order] অংশগ্রহণ করে অবিচ্ছেদ্দভাবে পরস্পর সরাসরি সম্পর্কিত। তাই এখান সবাই চীনের সাথে স্বার্থ লড়াই করে আবার গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্কও বজায় রাখে।
মূলত এ কারণেই চীনবিরোধী স্বার্থ যতই থাক; আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া আর ভারত – এদের সবার গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকার কারণেই বলা যায় ১০ বছর (২০০৭-১৭), কোয়াড জন্মের পরও এটা ততপরতাহীন অকেজো হয়ে ছিল। পরে ২০১৭ সালে ট্রাম্পের আমলের তাও কেবল প্রথম বছরেই এটাকে আবার চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হয়। তাও এর প্রথম সভা তারা করেছিলেন এক সাইড লাইনে বসে। মানে ট্রাম্পসহ নেতারা ফিলিপাইনে এসেছিলেন আসিয়ানের বৈঠকে, এরই সাইড লাইনে বসে সেই মিটিং করা হয়। ঘর পোড়ায় আলু পোড়া দেয়ার মত করে নামেই এক বৈঠক করেছিলেন। ট্রাম্প আবার সেবার ফিলিপাইনে এসেছিলেন, এর আগে তাঁর চীন সফর শেষ করে ফেরার পথে এবং সেবারের সফরে ট্রাম্প চীনের কাছ থেকে বাণিজ্যে বহুবিধ ছাড় পেয়েছিলেন। ট্রাম্পের প্রথম বছরে তিনি অতটা মারাত্মক জাতিবাদি হয়ে উঠেন নাই, তাই। কিন্তু তাতেও দেখা যায়, সে কারণেই কোয়াড জোটের তৎপরতা চালুর ঘোষণা দিলেও একসাথে একই ভাষায় কোয়াডের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি তারা দিতে পারেনি। চার দেশই মূল বিবৃতিকে কাটছাঁট করে নিজের বক্তব্য ঢুকিয়ে এরপর প্রেসে দিয়েছিল। এর মূল কারণ সবাই কোন না কোনভাবে চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কে জড়িত ও সুবিধাভোগী ছিল। ফলে সবাই চেয়েছিল, সেই সম্পর্ক অটুট রেখে কোয়াড জোট খাড়া করতে। ফলে বাস্তবে এটা কখনো দাঁড়াতেই পারেনি। তবে সেই  ট্রাম্পেরই কেবল ২০১৮ সালের শেষে চীনের সাথে আমেরিকার বাণিজ্যবিরোধ মিটতে ব্যর্থ হলে, মানে এটা ফেল করতে যাচ্ছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরই কোয়াডের গুরুত্ব আবার বেড়েছিল। এমনকি সামরিক দিকে ঝোঁক যেমন, জোটের সামরিক মহড়া ধরনের বিষয়ের দিকে, এ জোট ঘুরতে উদ্যত হচ্ছিল। আবার ট্রাম্পের গত নির্বাচনে এটা সামরিক প্রোপাগান্ডা হিসেবে ট্রাম্প কোয়াডের তৎপরতা বাড়িয়ে ছিলেন ২০২০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত।
নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়ের পরে আমরা বলেছিলাম, বাইডেন প্রশাসনের নীতি হবে কোয়াড ভেঙে দেয়া বা অকেজো করা নয়। তবে এটা অর্থনৈতিকভাবে সমমনাদের স্বার্থজোট এমন পরিচয়ে কেবল সীমাবদ্ধ থাকতে চাইবে। আর তাই অনুমান করা হয়েছিল গত ১২ মার্চের অনলাইন বৈঠকে সস্তায় ভ্যাকসিন উৎপাদনের সুরাহা ছাড়া দ্বিতীয় ইস্যু হয়েছিল, চীনের ক্রমেই বেড়ে চলা সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব এই কোয়াড জোট স্তব্ধ-ঠেকাতে পারবে না হয়ত। তবু একে কিছুটা ব্যালেন্স করতে তাদের জোট কী করতে পারে তা নিয়ে কিছু আলোচনা তারা করবেন।
এছাড়া  বাইডেনের দিক থেকে আরো কিছু সাবধানতাও থাকার কথা। বহু আকাঙ্খিত, ট্রাম্পের ফেলে যাওয়া ‘চীন-আমেরিকা বাণিজ্যবিরোধ’ এর জট ছুটানো নিয়ে আলোচনায় বসার তারিখ এরই মধ্যে ঠিক হয়ে গেছে এবং সেটা হবে আগামী সপ্তাহেই ১৮-১৯ মার্চ এবং আমেরিকার আলাস্কা রাজ্যে; আর এ স্থান সম্পর্কে বলা হচ্ছে এটি নাকি চীন ও আমেরিকা রাষ্ট্র থেকে সমদূরত্বে। কিন্তু তাতে কোয়াডের সমস্যা কী? সমস্যা হল ১২ মার্চের কোয়াড সামিট থেকে এমন কোনো চীনবিরোধী ভাষ্য বাইডেন প্রশাসন আনবে না বলেই অনুমান যেটা চীন-আমেরিকার আলাস্কা বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা খুঁজে পাওয়ার আগেই বাইরের কারণে ‘তিতা’ হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, আমেরিকার কাছে কোয়াড জোটের থাকা না থাকার চেয়ে চীন-আমেরিকা বাণিজ্যবিরোধের সমাধান নিয়ে আলোচনা অনেক বেশি গুরুত্বের।

এবার কোয়াড বৈঠকের ইস্যু কী?
মিডিয়া রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, এ বৈঠকের মূল ইস্যু কী। তবে এ নিয়ে অন্তত দু’টি মতামত বা অনুমান আছে। রয়টার্স এ নিয়ে গত দুই দিনে তিনটি রিপোর্ট ছেপেছে। সেখানে আমেরিকান প্রশাসন পরিষ্কার করে বলছে, সস্তায় করোনা ভ্যাকসিনের যোগাড় ও চীনের প্রভাব ব্যালেন্স করতে সম্ভাব্য করণীয় – এই হল দুই আলোচ্য ইস্যু। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর মনে করেন, “ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিয়নে ফ্রি ও ওপেন সমুদ্র চলাচলও’ এখানে আলোচ্য ইস্যু [ on practical areas of cooperation towards maintaining a free, open and inclusive Indo-Pacific region.”]। এর সাথে তিনি আরও দাবি করেছেন ‘মেরিটাইম সিকিউরিটিও’ [summit would also cover supply chains, emerging and critical technologies, maritime security... ] এখানে আলোচ্য ইস্যু। আবার অস্ট্র্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও ‘রিজিওনাল সিকিউরিটি’ এবং “সভরেন ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্দো-প্যাসিফিক” রাখার কথা এজেন্ডায় আছে বলে উল্লেখ করেছেন [Morrison said the meeting would focus on regional security and climate change…….about our support for a sovereign, independent Indo-Pacific,”]- ভারতের মতই। কিন্তু এ ব্যাপারে সবার চেয়ে জাপান একদম মুখবন্ধ; মানে জাপান যেন ওস্তাদ আমেরিকার সাথেই আছে এবং তা ভারত বা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি করে। এমন হওয়ার পেছনে সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যেমন, ভারতের হিসাবটা সোজা। বাইডেনের আমেরিকা মোদীর জন্য ট্রাম্পের আমলের মত ‘ইজি-গোয়িং’ নয়। কারণ বাইডেন ঘোষণা দিয়েই এসেছেন যে, মোদীর কাশ্মির দখল আর মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন ও নির্যাতনের অভিযোগ – এসব প্রসঙ্গে তিনি মোদীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন ও কথা বলবেন। তাই এথেকে রেহাই পেতে ভারতের মনষ্কামনা হল, যেন চীন-আমেরিকা দ্বন্দ্ব জোরদার হয়, শিগগির মিটে না যায়। তা হলে এটা যত জোরদার হবে ততই ঐ দ্বন্দ্বের আড়ালেই চার বছর ভারতের কাটিয়ে দেয়া বা টিকে যাওয়া সহজ হবে। এ জায়গায় এসে মোদী আর বাইডেনের পথ দুটো দুই দিকে চলে গেছে।

করোনা ভ্যাকসিন কোয়াড বৈঠকের প্রধান ইস্যু কেন?
প্রথমত, যেসব দেশ গবেষণা করে  ল্যাব থেকে ভ্যাকসিন বের করেছে ভারত তাদের অন্তর্গত কেউ নয়। নিজ “ল্যাব থেকে আবিস্কার করা” টিকার দেশ ভারত নয়। তাহলে? এর পরও একটা ‘কিন্তু’ আছে। অনেকটা যেমন,  ডাটাবেজ বা ডিজিটালাইজেশন অথবা ব্রডলি কম্পিউটারাইজেশন করা দুনিয়া এসে যাওয়ায় শিল্পোৎপাদনসহ জীবনযাপন এখন তুলনায় সবখানে এখন সহজ হয়ে গেছে। আর  এ ব্যাপারটা চালু করার নেতা হল আমেরিকা। কিন্তু ল্যাবে মূল আইডিয়া ও পরিকল্পনাটা অর্জন করে নিবার পরে এর বাস্তবায়নে আমেরিকার এতে প্রোগ্রামিং বা কোড বসানোর জন্য যে বিপুল হিউম্যান রিসোর্স লাগবে, তা সাপ্লাইয়ের জন্য নুন্যতমযোগ্য ও একেবারে সস্তা শ্রমদাতা হল ভারত। কারণ কাজের এই অংশটাও করাতে সে আমেরিকায় বসবাসকারী সিটিজেন কেউ হলে ভারতের চেয়ে তার শ্রমমজুরি কয়েক গুণ বেশি গুনতে হবে। অর্থাৎ এটা এড়াতেই সস্তা শ্রমে কাজটা করে নিতেই পুরো শিল্পের বড় শ্রমনিয়োগের অংশটা আউটসোর্সিং করা এবং ভারত থেকে করিয়ে আনা শুরু হয়েছে। ঠিক তেমনই এটাই ঘটতে যাচ্ছে ভ্যাকসিনের বাণিজ্যিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে। তা হল ভারত ভ্যাকসিন উৎপাদনের লাইসেন্স নিয়েছে ও নিবে পশ্চিমাদেশের কোম্পানির থেকে।  এরপর এর বাল্ক প্রডাকশন বা গণ-উৎপাদনে নেমে পড়েছে। এটাই বাইডেন আরো করাতে চায়। এমন উতপাদন সক্ষমতা ভারতের আছে।
এমনিতেই ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে পুরোই আলাদা এবং সক্রিয় ও তৎপর। ট্রাম্প করোনাকে তেমন রোগই মনে করতেন না। আর বাইডেন তিনি দ্রুত আমেরিকার সবাইকে করোনার ভ্যাকসিনের অধীনে আনতে চান। কারণ যতই দেরি, ততই বিভিন্ন এলাকায় ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইনের জন্ম [virus stain, মানে ভাইরাসের নানান রকম-ফের] বা উপস্থিতির সম্ভাবনা বাড়বে। তাতে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও এমনিতেই বলা হচ্ছে যে, ভ্যাকসিন গ্রহিতাদের দুটো ক্লাস তৈরি হয়ে গেছে, গরিব আর বড়লোক বলে। আমেরিকার যে টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে তা এখনো আমাদের দেশের চেয়ে অনেক দামি। আর এমন ভ্যাকসিনের ব্যবহার দিয়েই এর শুরু ও বর্তমান। এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণও ব্যয়বহুল। তাই আমেরিকা ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিতরণ আরও ত্বরান্বিত  ও সস্তায় [affordable] করার উদ্যোগ নিতে চান বাইডেন। এ ছাড়া সেটা চায় নিরাপদ টিকা, সবাই যেন পায় আর দাম সীমার মধ্যে যেন থাকে এমন শর্তে। এদিকে আবার আমেরিকারই আরো অন্তত দুটো (নোভাভ্যাক্স ও জনসন অ্যান্ড জনসন Novavax Inc and Johnson & Johnson] ) ভ্যাকসিন আছে যাদের বাণিজ্যিক উৎপাদনও তেমন শুরুই হয়নি বা অস্পষ্ট। সব মিলিয়ে বাইডেন ভারতকে দিয়েই ভ্যাকসিন উৎপাদন করিয়ে নিতে চান। তাই এই সামিটের সবচেয়ে বড় ‘নগদ’ উদ্দেশ্য হল, ভারতের সাথে ‘প্লানস টু অ্যানাউন্স ফিন্যান্সিয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট’ […..plans to announce financing agreements to support an increase in manufacturing capacity for coronavirus vaccines in India]-এর গ্রাউন্ড তৈরি করে দেয়া। এতে আমেরিকার ওসব কোম্পানির লাইসেন্স নিয়ে ভারতের উৎপাদনে যেতে যে বিনিয়োগ লাগবে, সেটিও আমেরিকা ও জাপান দিতে চায়। সারকথা ভারতকে দিয়ে ব্যাপক ভ্যাকসিন উৎপাদন করিয়ে নেয়া – এটিই কোয়াডের প্রথম আলোচ্য ইস্যু।
তবে এখানেও একটা কথা পরিষ্কার করা দরকার। আমেরিকার প্রশাসন রয়টার্সকে জানিয়েছে বাইডেনের টার্গেট আমেরিকান জনগণকে ভ্যাকসিন দেয়া আর সাথে অল্প কিছু ভ্যাকসিন, যা ইউএসএইড ফান্ডেড এনজিওদের দেয়ার জন্য আমেরিকা কমিটেড, কেবল ততটুকু। কিন্তু ভারত চেষ্টা করেছে কথাটা ‘ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি’ শব্দের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে। ভারতের কাছে এর মানে হল, অন্য দেশে ভ্যাকসিন দেয়া মানে ‘প্রভাব বিস্তার’ করা। তাতে আমাদের মতো দেশগুলোতে চীন যদি ফ্রি সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের অফার দেয়, তবে এর বিরুদ্ধে ভারত লড়বে ওই দেশেই নিজের ভ্যাকসিন বিক্রি করে। আর তা করবে ওদেশের সরকারকে কমিশন দেয়ার লোভ দেখিয়ে নিজের ভ্যাকসিন বিক্রি করে। এটিই ভারতের ভ্যাকসিন আবিষ্কারক না হয়েও চীনের পাল্টা ভ্যাকসিন লড়াই জারি করা- চীনের বিরুদ্ধে ‘প্রভাব বিস্তার’ করার লড়াই বলে যেটা ভারত বুঝেছে। এই কথিত প্রভাব বিস্তারের লড়াই, এটিই ভারতের চোখে ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি, অন্যের তেলে মাছ ভেজে নেয়া। ভারত এভাবেই তার অন্য কোয়াড বন্ধুদের ভারতে বিনিয়োগ করে চীনের বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান রেখেছে।

কিন্তু বাইডেন প্রশাসন এ দিকে তেমন আগ্রহী নয়। যেমন রয়টার্স নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়েছে। তিনি বলছেন, ‘আমেরিকা আপাতত নিজের ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্যই কোয়াড নিয়ে তৎপরতায় নেমেছে, এটিই তাদের ফোকাস। কাজেই আমরা ঠিক এ মুহূর্তে অন্যদের সাথে ভ্যাকসিন শেয়ারের প্রসঙ্গে কথা বলছি না।[United States’ focus was foremost on getting vaccines to Americans…….“We will not be talking about sharing vaccines right now,” she said.]।  অর্থাৎ ভারত যতই আমেরিকাকে চীনের বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার কৌশল নিতে চাইছে আমেরিকান ডিপ্লোম্যাটরা ততই আপাতত ব্যাপারটা পাস কাটিয়ে যেতে চাইছেন।

মিটিংয়ে পরিস্থিতি পল্টি খেয়ে গেছেঃ
উপরে এখন পর্যন্ত যা লিখেছিলাম এটাই ১২ তারিখে অনলাইন সামিট বৈঠক শুরুর আগের ভাষ্য।  বৈঠক শুর পর আসলে চার সরকার প্রধানের বক্তৃতার মূল সময় লেগেছিল মোট মাত্র ১২ মিনিট (সকাল ৮:৩২ থেকে সকাল ৮:৪৪), আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভাষ্য তাই বলছে। অর্থাৎ প্রচারিত বক্তৃতায় তেমন কথা নাই। কিন্তু এই প্রথম কোয়াডের চারদেশীয় এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে যেখানে মাত্র পাঁচটা পয়েন্টে সবকথা আনা হয়েছে। আর এই বিবৃতির ভাষ্য ১১ মার্চ পর্যন্ত সরকারি নানান স্টাফেরা মিডিয়ায় যেসব ধারণা দিয়েছেন এর উলটা। বিশেষত স্টাফদের ভাষ্য ছিল চীনবিরোধী ইন্দো-প্যাসিফিক জোট বা ওর নিরাপত্তা স্বার্থের প্রসঙ্গকে খাটো করে, কেবল সস্তায় ভ্যাকসিন নিশ্চিত ও তাও কেবল আমেরিকানদের জন্য – এই ব্যাখ্যার মধ্যে ব্যাপারটার সীমাবদ্ধ রেখে।  কিন্তু যৌথ বিবৃতিতে মুল ফোকাস সারা ইন্দো-প্যাসিফিক [for the global benefit — and strengthen vaccinations to benefit the entire Indo-Pacific.]।  এটা বাইডেনের মূল বক্তৃতা থেকে নেওয়া।
কিন্তু যৌথ বিবৃতির পাঁচ পয়েন্টের প্রথম পয়েন্টে এসেই এবার বাইডেন এজেন্ডা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কভিড ভ্যাকসিন, ক্লাইমেট চেঞ্জের কথা বলার পরেই বলে বসেন “নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের” [security challenges facing the region summon us with renewed purpose] কথা লেখা হয়েছে।  এখানে নিরাপত্তা মানে ইন্দো-প্যাসেফিকে চীন পিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে – এই হল এর পিছনের বলতে চাওয়া ভাষ্য।  অথচ অনলাইন বৈঠকে বসার আগেরদিন পর্যন্ত মিডিয়া রিপোর্টে আমেরিকার কর্তারা “নিরাপত্তা” নিয়ে কোন কথাই বলেই নাই।
আবার বিবৃতির দ্বিতীয় পয়েন্টে গিয়ে এটা  পুরাটাই চীনবিরোধী ইন্দো-প্যাসেফিক জোট কেন্দ্রিক। যার সারকথা হল চীনবিরোধী এবং সাউথ চীন সাহরের কথা মাথায় রেখে লেখা। বলতে চায় তারা সমুদ্রপথ উন্মুক্ত ও অবাধ রাখতে চায়, আইনের শাসন চায়, আন্তর্জাতিক আইন মানে, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে এভাবে ইন্দো-প্যাসেফিক ও বাইরেরও হুমকি মোকাবিলা করে। তারা আইনের শাসন মানে, সমুদ্র চলাচলের স্বাধীনতা, ও উপর দিয়ে উড়ে চলাচল এলাও করে, বিরোধের শান্তিপুর্ণ সমাধান করে গণতান্ত্রিক মুল্যবোধ নিয়ে চলে ও অন্যের ভুখন্ডগত সংহতিকে সম্মান করে চলে ইত্যাদি। একেবারে সর্বগুণে গুণান্বিতা। আর বিপরীত চীন কেবল দুষ্ট! এভাবেই বাকি তিনটা পয়েন্টও একই রকম সারকথায় চীনবিরোধিতা। আর তারা সবাই ভাল!
অর্থাৎ চীনবিরোধিতার ইঙ্গিত বা প্রত্যক্ষভাবে কিছু বলব না বলে আমেরিকান প্রশাসনের কর্তারা যে প্রমিজ বা সাধুতা দেখানোর চেষ্টা করেছিল বৈঠক শুরুর আগে তা অনলাইন বৈঠকের শুরু থেকেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। বাইডেন প্রশাসন সারেন্ডার করেছে। বুঝা যাচ্ছে তা মূলত ভারত ও অষ্ট্রেলিয়ার চাপে।

এদিকে এসব দেখে ট্রাম্পের আমলের এক জাতীয় নিরাপত্তা দপ্তরের উপসহাকারি মন্ত্রী লিসা কার্টিস এক মন্তব্য-আর্টিকেন লিখেছেন সিএনএনে। যার সারকথা ও শিরোনাম হল, “বাইডেন যা ফরেন পলিসি দাড় করিয়েছেন তা ট্রাম্পের দেখানো পথেই আর তারই উপরে দাঁড়িয়েই”। তাহলে এখন আগামি সপ্তাহে চীনের সাথে আমেরিকার বাণিজ্যবিরোধসহ সব আলোচনা যা শুরু হতে যাচ্ছে তা কী বিঘ্নিত হবে না। মনে হচ্ছে অবশ্যই হবে। সেকথার আগে কোয়াডের এই সভা নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়া দেখে নেয়া যাক।

চীনের প্রতিক্রিয়া কী?
হ্যাঁ, চীনের প্রতিক্রিয়াও আছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিন্ন প্রসঙ্গে প্রেসের সাথে কথা বলতে গিয়ে কোয়াডের নাম না ধরে বলেছেন, ‘বহুরাষ্ট্রীয় তৎপরতার নামে ছোট এক সার্কেল গড়া এটি তো আসলে গ্রুপ পলিটিক্স করা।’… ‘বহুরাষ্ট্রীয় তৎপরতার নামে খোদ নিজস্বার্থে কাজ করা এটি তো একপক্ষীয় স্বার্থচিন্তার কারবার। কাজেই বেছে বেছে বহুরাষ্ট্রীয় তৎপরতার আওয়াজ তোলা সঠিক রাস্তা নয়” [“building small circles in the name of multilateralism”, which was “in fact ‘group politics”………. “Multilateralism with one’s own interests taking precedence is still unilateral thinking,” he said. “’Selective multilateralism’ is not the right choice.”]।
এ ছাড়াও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রেগুলার ব্রিফিংয়ের মুখপাত্র সাবধান করে ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, কোয়াডের ‘মিটিং যেন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য সহায়ক হয় এবং এর বিপরীত কিছু না হয় “…… do things that are conducive to regional peace stability and prosperity, rather than the opposite,” ।

এদিকে ভারত এক আজিব দেশ। সে সাপ হয়ে কামড় দেয় আবার ওঝা হয়েও হাজির হতে চায়। তাই চীনের গ্লোবাল টাইমস কোয়াডকে নিয়ে কার্টুন এঁকেছে। নিচে দেখেন।

গ্লোবাল টাইমস স্যাটায়ার করে এক লেখা ছাপিয়েছে ভারতকে নিয়ে।

উপরের ছবিতে লক্ষ্যণীয় যে বাইডেন গাড়ি চালাচ্ছে বটে কিন্তু গাড়ির বাকি তিন যাত্রী তাদের প্রত্যেকের কাছেই একেকটা করে গাড়ির স্টায়েরিং আছে! এটা এমনই গাড়ী। মানে কোয়াড এমনই প্রতিষ্ঠান বা গাড়ী যার মধ্যে চার সদস্যেরই ইচ্ছামত দিকে গাড়ি হাকানোর সুযোগ আছে। তাহলে গাড়ীটা কোনদিকে যাবে? পাঠকেরা বুঝে নেন। আবার ভারত যে একই সাথে গ্লোবাল আগের নেতা আমেরিকা ও এর সংশ্লিষ্ট সিস্টেমের পালটা নতুন সিস্টেম (আইএমএফ) ব্রিকস [BRICS] এর সক্রিয় সদস্য। যে এই বছরই ব্রিকস সম্মেলনের হোস্ট, মানে সেটা ভারতে অনুষ্ঠিত হবে। তার মানে সেই ভারত তাহলে আমেরিকার পিছনে লেজ ধরে হাটে কী করে?  যার সোজা মানে ভারত আমেরিকার সাথে আছে আবার চীনের সাথেও আছে! কী তামসা! এই স্ববিরোধীতাগুলোকেই দেখিয়েছে কার্টুনটা।

তাহলে চীন-আমেরিকা বাণিজ্যবিরোধের আলোচনায় কোয়াডের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?
প্রথম কথা কোয়াড বৈঠকে বাইডেন কোয়াড কে যতই চীনবিরোধী অভিমুখি করে তুলবেন ততই তা তাঁর বিরুদ্ধে যাবে। সারকথায়, যতক্ষণ বাইডেন চীনবিরোধী সক্রিয় বলে কোন কিছু জোটের নেতা হয়ে থাকতে চাইবেন ততই চীনের সাথে বাণিজ্যবিরোধ আলোচানায় চীন আমেরিকাকে কোন ছাড় দিবে না। এককথায় চীন কোয়াডের চার দেশ সবার সাথেই আলাদা করে সুবিধা দিয়ে রফা করতে চাইবে। এবং এটা সম্ভব। সেকারণে, এতদিন এটাই চলে আসতে পেরেছে এভাবেই। আবার লক্ষ্যণীয়, সারা ইউরোপ চীনবিরোধী অবস্থান নিয়ে বাইডেনের পাশে দাড়ায় নাই। আবার RCEP বাণিজ্য জোটের চীনের সাথে গুরুত্বপুর্ণ সদস্য হয়ে আছে জাপান ও অষ্ট্রেলিয়া। সেটা তো সে উপেক্ষা করতে পারে নাই। যা প্রমাণ করে এরা চীনেরবিরোধী নয়। তাহলে, কোয়াড নিয়ে এত চিৎকার এর প্রয়োজন কোথায়? কাল জাপান ও অষ্ট্রেলিয়া চীনের থেকে বাণিজ্য সুবিধা পেলে কোয়াড আবার অকেজো করে রাখবে। যেটা এতদিন ছিল। কাজেই বাইডেন এই প্রথম কোয়াডকে রাষ্ট্রপ্রধানদের পর্যায়ের বৈঠকে আনতে পেরেছে আর এই প্রথম এক সম্মিলিত যৌথ বিবৃতি দেওয়াতে পেরেছে? কিন্তু কতদিন এরা একসাথে সক্রিয় থাকবে তা এই চারসদস্যের কেউ জানে না। কাজেই আমেরিকান থিঙ্কট্যাঙ্ক ব্রুকিংসের [Brookings Institution] ভারতীয় ডিরেক্টর তানভি মদন যতই জোর দিকে বলুক যে এবারের কোয়াড থাকতেই এসেছে ……a declaration that the Quad is here to stay,”] তাতে কিছুই এসে যায় না; তা কাজ করবে না। আর  যদি করে তাহলে বুঝতে হবে দুনিয়া কোন যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা  গত ১৩ মার্চ  ২০২১, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ওয়েবে ও  পরদিন প্রিন্টেও  “বাইডেনের ‘কোয়াড’ যুদ্ধে নয়, টিকা বানাবে” – এই শিরোনামে  ছাপা হয়েছিল।  নয়াদিগন্তে ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়। পত্রিকার কলাম লেখার সুবিধা অসুবিধা দুটোই আছে। প্রথম অসুবিধা লেখার সাইজ মোটামুটি সর্বোচ্চ ২০০০ অক্ষরের মধ্যে রাখতেই হয়। কারণ এটাই কাগজে ছাপা হয় বলে জায়গা সীমিত। আবার সুবিধার দিক হল, এই প্রথম ভার্সানে যেভাবে চিন্তা করে লিখেছিলাম তা নিজেই আবার পরে রিভিউ করে নিয়ে নতুন ফোকাসে এখানে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে তা লেখাও যায়।  ফলে আমার এই নিজস্ব সাইটের সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে লেখাটাকে পাঠক থিতু ভাষ্য বলে গণ্য করতে পারেন।
সেভাবেইপরবর্তিতে ঐ লেখাকে এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]

2 thoughts on “বাইডেনের ‘কোয়াড’ ট্রাম্পের চেয়েও বেপথে

  1. I think your assumption on USA/Joe Biden questioning human rights issues in Bangladesh’s will be proven wrong as the recent attitude of Joe Biden towards Hasina has been flattering.
    I think there would be a compromise between human rights and China containment.
    The way Biden praised Hasina on Rohingya issue on 50th Independence day seems that Washington do not care about human rights issues in Bangladesh.
    Hasina needs legitimacy of her throne in front of the world and USA needs to tackle China.
    It not impossible or a wild imagination that USA might offer Nobel peace prize to Hasina for Rohingya refugee accommodation.In exchange Hasina will become a part in Indo Pacific military alliance.
    From the perspective of Hasina, Jayshankar’s idea of taking loan from Japan will be an advantage regardless of higher interest rate.
    Human rights are not the weak point of Hasina. It will be a weak point if she does not comply with aforementioned situations.

    Like

    1. আমি মনে করি না হাসিনা-বাইডেন একসাথে কোন কাজ করতে পারে। বিষয়টা মূলত আমেরিকান প্রশাসনের প্রতি হাসিনার অনাস্থা ও গভীর অবিশ্বাস। কথাটা গভীর সত্য বটে। আমি মনে করি ২০০৮ সালের যে আমেরিকা সে বিশ্বাস-আস্থা ভঙ্গ করেছে ২০১২ সালে। এমনিতেই এখন সারা বাংলাদেশেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আমেরিকার উপর এক ধরণের গভীর অনাস্থা আছে। যার বড় কারণ আমেরিকা ২০০৭-৮ সালে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল, সেই থেকে। কাজেই যতই নোবেল প্রাইজ বা হেনতেনের লোভ দেখানো হোক, তাদের একসাথে কোন কাজ করার সুযোগ দেখি না। বরং এমন প্রচেষ্টা নিলে সন্দেহ আরো গভীর হতে পারে।
      এমনিতেই পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি মামলা তারা বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে করালোই যদি তাহলে শেষে তা প্রমাণ না করে উলটা প্রত্যাহার করল কেন? ফেলে পালালো কেন? এতে আমেরিকান প্রশাসন যে ভেবে কাজ করে না, অদক্ষ-অযোগ্য আর একালে মারাত্মক কেয়ারলেস , এমন এর উদাহরণ হয়ে আছে। আর সেই সুযোগেই তো চীনের সাথে হাসিনার সম্পর্কের সুত্রপাত ঘটলো। সেই ভুল আমেরিকা পরে বুঝলেও আর কোন লাভ নাই।
      তাই, হাসিনা-বাইডেন এর মধ্যে সম্ভবত একটা সম্পর্কই বাকি থেকে গেছে – উতখাত প্রচেষ্টা। যার সম্ভাবনাও দিনকে দিন আপনাতেই নাকচ হয়ে যাচ্ছে ও যাবে। বাইডেনের প্রথম বছরের পর ততদিনে দুনিয়া অন্যরকম হয়ে যাবে সে দুনিয়াকে বাইডেনেরই চিনতে কষ্ট হবে……

      Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s