চীন “একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী” – প্রথম আলো
০২ মে ২০২১
প্রথম আলোর কথা অবশ্যই সত্য। কিন্তু আমেরিকা কী? পক্ষের শক্তি? এটা প্রথম আলোকে বলতে পারতে হবে!
বঙ্গোপসাগরে আমেরিকা, চীন ও ভারত এই তিন দেশের প্রভাব বাড়ানো লড়াই অল্পদিনের না বলে বছরের বলাই ভাল। যদিও বাইডেন ক্ষমতায়া সার পরে এটা বড় মোড় নিয়েছে। এতদিন আমেরিকা চীনবিরোধী জোটে ভারতকে টানতে চেয়ে তার সপ্তম নৌবহর স্থায়ী মোতায়েন ও মনিটরিং করার আগ্রহটা লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সেই সুপ্ত ইচ্ছা উদাম হয়ে যাওয়াতে এখন দিনকে দিন আমেরিকা আর ভারত একসাথে চীনবিরোধী একপক্ষ হয়ে থাকার সম্ভাবনা ও বাস্তবতা নাই হয়ে যাচ্ছে। অন্যভাষায় বললে, আমেরিকা,চীন ও ভারত তিনদেশই তিন আলাদা পক্ষ, সকলেই একা হয়ে বঙ্গোপসাগরে নিজ নিজ স্বার্থে লড়বার বাস্তবতা প্রকট হয়ে উঠছে।
এপ্রসঙ্গে দুটা সারকথা আমি বলে আসছি।বাংলাদেশকে ব্যলেন্স করতে জানতে হবে। সময়টা খারাপ। আমাদের সরকার কোন এই তিনদেশের একটার পক্ষের কোলে গিয়ে বসতে পারে না, কোন এক রাষ্ট্রের এজেন্সি নিতে পারে না। এতে ব্যর্থ হলে, তাতে বাংলাদেশের ভুমি ঐতিনের পারস্পরিক লড়াইয়ের যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠবে। তাই বরং সরকার যাকিছুতে এই তিন দেশের সাথে ভুমিকা পদক্ষেপ বা সম্পর্কে জড়াবে তাতে যেন বাংলাদেশের স্বার্থ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইচ্ছা ও প্রধান থাকে – এবং সবার উপরে নিজকর্তৃত্ব অবস্থানে তা রেখে দেয়, হাতছাড়া না করে। কোনভাবেই অন্যের স্বার্থে কোন অবস্থান নেয়া যাবে না। সেটা এমনকি নিজের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত ও স্থায়ী হবে এই লোভে পড়ে অবস্থান নিবে এমন চিন্তা ও কর্ম হবে আত্মঘাতি। কারণ তা কাজ করবে না। সেটা শুধু ঐ ক্ষমতাসীন দল না সারা দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে। এই অর্থে এখনকার সময়ে বাংলাদেশ সরকারের লড়াইটা হল, এই তিনদেশের স্বার্থ থেকে দুরত্ব রচনা করে একান্তই বাংলাদেশের স্বার্থ শক্ত করে ধরে টিকে থাকা।
দ্বিতীয় বলেছিলাম সরকার বা আমাদের কোন একটা দল যদি কোন একটা দেশের কোলে গিয়ে বসে এতেই পরিণতিতে বাংলাদেশ তিনপক্ষে বিভক্ত হয়ে যাবে। আমরা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে ভাগ হয়ে যাব। আমরা কেউ ঐ তিনদেশের একটার পক্ষে অবস্থান নিলে এতে সেটা আমাদের সব রাজনৈতিক দলগুলো ঐতিন দেশের পক্ষে ভাগ হয়ে অবস্থান নেয়া শুরু করে দিবে। ফলে সরকার বা কোন রাজনৈতিক দলের ঐ তিনদেশের কোন একটার পক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়া শুরু করা হবে প্রথম ট্রিগার পয়েন্ট। এতেই দেশের মানুষ ও ভুগোল ভাগ হওয়া শুরু করে দিতে পারে যেখানে দেখা যাবে কোন একটা ভাগও বাংলাদেশের পক্ষে আর নাই।
গত ২৭ এপ্রিল চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের সফরে এসেছিলেন। এই সফরকে নিয়ে প্রথম আলো গতকাল ১মে একটা রিপোর্ট করেছে তাদের কূটনৈতিক রিপোর্টার। এই রিপোর্ট টা খুবই অবিবেচক আগুন নিয়ে খেলার মত একটা কাজ হয়েছে।
উপরে যেকথাটা বলেছি, আমাদের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর একেকটা ঐতিনদেশের একেকটার এজেন্ট হয়ে বসে যেতে পারে না, এটা আত্মঘাতি। এখন প্রথম আলো যদি মনে করে ঐ একই কাজ মিডিয়া হিসাবে প্রথম আলো শুরু করে দিবে; আমেরিকান এজেন্সি নিয়ে সবার আগে বসে পড়বে সেক্ষেত্রেও এর পরিণতি হবে একই ।
প্রথম আলোর এটা মনে করার কারণ নাই যে এতে বাকি মিডিয়াগুলো বাকি দুইদেশের পক্ষে তারই দেখানো পথে না গিয়ে বসে থাকবে। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে প্রথম আলোই বাংলাদেশের সব মিডিয়াগুলো ঐতিন দেশের একেকটার এজেন্সি নিয়ে তিনভাগে বসে পড়ার কাড়াকাড়িটা শুরু করে দেওয়ার নায়ক হতে চাচ্ছে। তাই মানে হবে। এতে স্বভাবতই মিডিয়াগুলোর এই প্রকাশ্য তিনভাগে এজেন্সি-দালালি নেয়ার জন্য লড়া হবে আর তাতে এই দুই/তিন মিডিয়া পক্ষ এরা একটাও বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষের কেউ হবে না। থাকবে না। প্রথমালোর এই রিপোর্টটা খুবই নিম্নমানের ফলে নিম্নরুচি ও বুদ্ধির। সে চীনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মানুষ্কে উস্কে তোলার কাজে নেমে পড়েছে। যেখানে উস্কানি তুলেছে যে চীন “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী” এই কথা বলে।
লিখেছে “সফরের শুরুতে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এই প্রথম চীনের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে শ্রদ্ধা জানাতে গেলেন। এমনকি ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এলেও তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে যাননি। এবার সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী চীনের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রীর প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা”।
গত ওয়ান-ইলেভেন-এর ক্ষমতা দখলের সময় থেকেই (আসলে ২০০৪ সাল থেকে) প্রথম আলো হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে বসে আমেরিকার স্বার্থ ও বিদেশনীতির পাহারাদার। পরে যেখান থেকে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া শুরু হয়েছিল আর আজও আমরা সেখান থেকে মুক্ত বের হতে পারিনি। প্রথম আলো মিডিয়াও এই দায়ে দায়ী। প্রথম আলো আবার আমেরিকার পক্ষে মাঠে নেমেছে।
তর্কের খাতিরে সেসব হিসাবকিতাব আপাতত যদি তুলেও রাখি – এখন প্রথম আলো-ই আমাদের বলুক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী কী কেবল চীন? আর একাত্তরের আমেরিকা কোন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছিল? এটা প্রথম আলো ও ঐ রিপোর্টারকে বলতে হবে!
প্রথম আলোর উচিত হবে সততার সাথে আমাদেরকে সেটা জানানো! প্রথম আলোর এই অসততা অগ্রহণযোগ্য। সোজা করে বললে প্রথম আলোর এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোকে ঐতিনদেশের স্বার্থের এজেন্ট হয়ে ভাগ হয়ে যাবার দিকে ঠেলে দেওয়ার ট্রিগার পদক্ষেপ। প্রথম আলো কী এতই মরিয়া বা দেউলিয়া যে বাংলাদেশকে ঐতিনদেশের যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে ধবংস করে হলেও নিজ পেটি স্বার্থ উদ্ধারে নামতে চাইছে!
আমেরিকা ভিয়েৎনামে ১৯৭৫ সালে এজেন্ট অরেঞ্জ ছিটিয়ে মানুষ মেরে ছিল যার প্রভাবে এখনও সেখানে বিকলাঙ্গ (জন্ম থেকেই শরীরের কোন একটা অঙ্গ নাই, বিকশিত হয় নাই) এমন বাচ্চা জন্ম নেয়। বিপরীতে একাত্তর সালের আমেরিকা বাংলাদেশে অন্তত নিজে কোন বোমা মারে নাই। অর্থাৎ আমাদের শোক ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি নয়। অথচ এখন আমেরিকায় পণ্য রপ্তানিতে ভিয়েতনাম আমাদের চেয়ে এগিয়ে এবং প্রতিদ্বন্দ্বি।
আসলে যুদ্ধের শোক আবেগ বিক্রির জিনিষ না। তবে এনিয়ে কী করতে হয় আর কী করা যায় না এবিষয়টা আমাদের ভিয়েতনামের কাছে শিখার আছে। আর আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা দেখছি এই প্রথম আলো আমাদের কাছেই মুক্তিযুদ্ধ ও এনিয়ে আবেগ বেচতে এসেছে! অথচ এরকম আর দুদিন চললে অচিরেই প্রথম আলোকে গণবিক্ষোভ সামলানোর মুখোমুখি হতে হতেপারে! এটুকু বুঝবার মত কেউ কী প্রথম আলোতে নাই! এটা খুবই হতাশজনক চিত্র!