প্রথম আলোর এমেরিকার গ্লোবাল ভুমিকা বুঝবার তরিকা


প্রথম আলোর এমেরিকার গ্লোবাল ভুমিকা বুঝবার তরিকা

গৌতম দাস

১৯ মে ২০২১

https://wp.me/p1sCvy-3y8

সোমবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে বৈঠকে টিকা নিয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ছবি: পিআইডি

 

“গ্লোবাল এম্পায়ারঃ কোয়াড বা টিকার ভালো-মন্দ বিচার” – এই শিরোনামে আমি আমার গত লেখায় – “এম্পায়ার” [empire] বলে একটা ধারণা এনেছিলাম। পাঠকের বুঝাবুঝিতে তা ছুতে কতদুর পেরেছি জানি না। তবে ধারণাটা গুরুত্বপুর্ণ। বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে আমি আমার প্রায় সব লেখাতেই “গ্লোবাল নেতা” বলে একটা ধারণা ব্যবহার করেছি। তা বুঝাতে কখনও “গ্লোবাল অর্থনীতির নেতা” বা কখনও “গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের নেতা” বলে শব্দ ব্যবহার করেছি। “গ্লোবাল এম্পায়ার” ধারণাটা সেই সংশ্লিষ্ট তবে আরেক অফসুট ধারণা।

নিউইয়র্ক থেকে পাঠানো প্রথম আলো গত পরশু একটা রিপোর্ট ছেপেছে শিরোনাম, “টিকা কূটনীতিতে পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র”। আসেন একটু সে খবর পাঠ করতেও শিখি।

রিপোর্ট শুরুতেই কয়েকটা বাক্য লিখেছে, “টিকায় সহযোগিতার মাধ্যমে রাশিয়া ও চীন আন্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে টিকা সরবরাহ নিয়ে মার্কিন সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ফলে কূটনৈতিক মহলে হতাশা বিরাজ করছে।
৪৮টির বেশি দেশ টিকা পেতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জরুরি আবেদন জানিয়েছে। বাইডেন প্রশাসন কীভাবে টিকা সরবরাহ করবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি”।

আসলে এটাই সাত কথার এক কথা যে আমেরিকা আর “গ্লোবাল এম্পায়ার” নাই, ঢলে পড়ছে। মূলত সেকারণেই কারও টিকার চাহিদা মিটানোতে দান-অনুদান দেয়া দূরে থাক একটা সেন্টাল ম্যানেজমেন্টে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর টিকা পাবার ব্যবস্থা করার মুরোদও বাইডেনের নাই, তাই তিনি লেস বা নট ইন্টারেস্টেড।  এখন উলটা করে বললে, এই সেন্টাল ম্যানেজমেন্টে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর টিকা পাবার ব্যবস্থা করার মুরোদ যার থাকে সেই ঐকালের ‘গ্লোবাল এম্পায়ার’। অর্থাৎ মূলত এক গ্লোবাল বাণিজ্য (বাণিজ্য মানেই সেই সুত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, স্ট্রাটেজিক সবকিছু) ব্যবস্থাপনার যিনি নেতা তারই বেনোভোলেন্ট (গরীব প্রজা দেখেশুনে রাখার মত) বা লিল্লাহ-দাতব্য কাজ এগুলো। এটাকেই আমি বলেছি, ইতিবাচক এম্পায়ার ভুমিকা।

আরেকটা উদাহরণ দেই। গত পরশু ঢাকার আমেরিকান রাষ্টদুত আমাদের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। মূলত রোহিঙ্গা ইস্যুতে অ্যামেরিকার যা বার্ষিক চাঁদাদান করার কথা সেই প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের ফরেন মিনিস্ট্রির ফেসবুক পেজ থেকে জানা যাচ্ছে রাষ্ট্রদুত মিলার জানিয়েছেন্‌, “He also informed that the US Government is exploring the possibilities to produce US vaccines in Bangladeshi pharmaceutical companies”.

নিঃসন্দেহে খুবই ক্যালকুলেটিভ কথাবার্তা। মানে আমেরিকান প্রাইভেট টিকা উতপাদক কোম্পানির সাথে ্কথা বলে দেখবেন, বাংলাদেশে টিকা উতপাদন নিয়ে কথা বলায় দেয়া যায় কিনা। আবার আসলে ঠিক সেটাও না বরং এর সম্ভাবনা যাচাই করে দেখবেন তিনি।

যদিও এখানে বলে রাখা ভাল আমেরিকান টিকা – এদের দাম ২০ থেকে ৩৩ ডলারের মধ্যে। আর সংরক্ষণ তাপমাত্রা (-১৫) থেকে (-৮০) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে। যেখানে গরিব গোত্রের টিকাগুলোর প্রায় সবই ৪ ডলারের নিচে আর সংরক্ষণ তাপমাত্রা ২-৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ফলে যেখানে নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা বিচারে বাংলাদেশে টিকা বিতরণ করতে হবে বিনা পয়সায় সেখানে ৪ ডলারের উপর প্রতিটা ডলারের মুল্যের পীড়ন সইতে সরকারের অবস্থা খারাপ হবে তা বলাই বাহুল্য। আর ঐ তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণ যখন দেশের তাপমাত্রা এখন ৪০ ডিগ্রী ছুতে চায় তখন ঐ টিকা বহন করে গ্রাম-মফস্বলে ঘুরে বেড়ানো এটা প্রায় অবাস্তব।

তবু এটাকে একটা বিরাট সম্ভাবনা যেন এই ভাব ধরে মিলারের ঐদুই কথা নিয়ে প্রথম আলো একটা রিপোর্ট করেছে, “যুক্তরাষ্ট্রের টিকা নিয়ে ‘দু–এক দিনের মধ্যে’ জবাব আসছে”। অর্থাত যেন এই এলো বলে আর চিন্তা নাই। অথচ টিকা আসবে না, কথা আগানো সম্ভব কিনা সেই খবর আসবে।

গত প্রায় ১৫ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে আমেরিকান ফরেন পলিসির এজেন্ট অবস্থান নিয়ে চলতে চাইছে প্রথম আলো।  এখন কেউ এমন নিতে চাইলে আর আমাদের কী করার আছে। ফলে টিকা ইস্যুতে প্রথম আলোর এমন অবস্থান হয়ত অসংগত না, হবেই। কিন্তু নিশ্চয় জবরদস্তিতে আমেরিকাকে একটা বিকল্প উতস বলে চালায় দেয়া এটা কোন কাজের কথা নয়। যা সম্ভব নয়, অবাস্তব এবং আমেরিকাও ইঙ্গিত দিচ্ছে না আগ্রহী নয় তা নিয়ে আগাম আশাবাদ তৈরি করা কী ঠিক! এই বিবেচনাবোধের অভাব লক্ষ্য করছি যেন এখানে আমরা।

এখন কথা আসলে আরেকটু আগায়ে যেতে পারি আমরা।
প্রথম আলোর নিউইয়র্কের রিপোর্টারের সিদ্ধান্ত হল, “আমেরিকা টিকা কূটনীতিতেই পিছিয়ে” পড়েছে। মানে আর  তারা এম্পায়ার নাই। লিখেছে, “শুধু বাংলাদেশই না আরো প্রায় ৪৮ টা রাষ্ট্রের অবস্থা এরকম যাদের আমেরিকা হতাশ করেছে”।  বলেছে, যেখানে “রাশিয়া ও চীন আন্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে”।

এই কথাগুলো বুঝবার জন্য যথেষ্ট যদি আপনি মানে করতে জানেন। এগুলোই আসলে গ্লোবাল এম্পায়ার ভুমিকা কী তা নিয়ে কথা বলা। এদিকে যেমন আমরা আমেরিকার গ্লোবাল অযোগ্যতা অপারগতা তৈরি হতে ও হেরে যেতে দেখছি। আর  পালটা চীন যে (এটা কেবল টিকা উতপাদনের ক্ষেত্রে) রাশিয়াকে সাথে নিয়ে গ্লোবাল এম্পায়ার ভুমিকায় তৈরি হওয়া গ্যাপটা পূরণ করতে ধেয়ে আসছে, নিজেকে তৈরি করে নিয়ে – এই হল গ্লোবাল নেতৃত্বের পালাবদল।

গ্লোবাল নেতৃত্বের পালাবদল মানেই তাই গ্লোবাল এম্পায়ারের ভুমিকাতেও পালাবদল ঘটে যাওয়া। একদিকে ক্রমশ অপারগ আমেরিকা আর অন্যদিকে উত্থিত ও তৈরি চীন, এই ফেনোমেনা।

এখানে প্রথম আলো চীন না আমেরিকা কাকে পছন্দ করে এটা সেই বিষয়ই না একেবারেই। বরং যে যোগ্য মুরোদ আছে সেই উঠে আসতেছে, এটাই অবজেকটিভ ঘটনা।

অর্থাৎ প্রথম আলো আমেরিকান এজেন্সি নিবে কেন কারণ সে তাকে ভালবাসে। অর্থাৎ বুদ্ধি খাটিয়ে বুঝে নেয়া সিদ্ধান্ত না এটা। একটা অবজেকটিভ ফেনমেনাকে আমল করে নেয়া নয়।কর্তা হিসাবে তার ভাল লেগেছে তাই।

এমনকি নিউইয়র্কের ইর্বাহীম চৌধুরি যা বুঝে খবরটা দিয়েছেন। পরিস্কার করে বলছেন যে আমেরিকা “টিকা কূটনীতিতেই” নাই। এই টিকা কূটনীতি এটা যদিও ভুল শব্দ। কিন্তু এরই আসল অর্থ হল, গ্লোবাল এম্পায়রের ভুমিকা পালন করে যাওয়ার মুরোদ। ইর্বাহীম বাস্তবতা দেখে যে রায় দিচ্ছে  প্রথম আলোই সেই রিপোর্ট ছেপে দিচ্ছে কিন্তু নিজেই এর অর্থ তাতপর্য বুঝতে পারছে না। এই হল প্রথম আলোর বুঝার মুরোদের সমস্যা বা শর্টেজ। এজন্যই আমেরিকা সম্পর্কে তার সিদ্ধান্ত ভালবাসা দিয়ে, বুদ্ধি-চিন্তার যেখানে ভুমিকা নাই।
অর্থাৎ গ্লোবাল এম্পায়ার বুঝলে অনেক কিছু বুঝা সহজ হয়ে যায়।

আর এখানেই পরিস্কার কেন চীনা টিকা আমাদের গন্তব্য হয়ে যাচ্ছে।  আমাদের দেশে টিকা উতপাদনের ব্যবস্থা করে দেয়া চীনের জন্য  সেটা বিনিয়োগ ও টেকনিক্যালিটি সহ সব অর্থেই – এই ভুমিকা নেওয়ার জন্য সে তৈরি। এজন্য চীন আসন্ন গ্লোবাল এম্পায়ার!

One thought on “প্রথম আলোর এমেরিকার গ্লোবাল ভুমিকা বুঝবার তরিকা

  1. Protom is carry the mentality of india. They are very radical in avoid the rule of humanity. So,protom alo is very dangerous in media sector.

    Like

Leave a comment