মুচকুন্দ দুবে দুকূল হারানো এক “বেচারা”!


মুচকুন্দ দুবে দুকূল হারানো এক “বেচারা”!

গৌতম দাস
৩১ মে ২০২১, ২০:০৫ সোমবার

Muchkund-Dubey

বিবিসি বাংলা গতকালকে একটা রিপোর্ট করেছে “প্রেসিডেন্ট জিয়া ভারতকে গ্যাস বেচতেও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন: ভারতীয় কূটনীতিক” – এই শিরোনামে। গত কয়েকদিন ধরে “ঢাকা-দিল্লির বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্কে ফাটল বাড়ছে’ টাইপের নিউজ – অনেক মিডিয়ায় হতে দেখা গেছে। এমনিতেই গত ২০১৮ সালের প্রথমদিকের সময় থেকে “ভারতকে যেটা দিয়েছি তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে’ বলে হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার পর থেকে স্বামী-স্ত্রী বা বন্ধুত্বের সম্পর্কে ফাটলের যে সন্দেহ শুরু হয়েছিল তা আর কখন মিটে নাই। যদিও তা কখনও প্রবল হয়েছে কখনও ভাটার টানে আছে মনে হয়েছে।

কিন্তু বিবিসির এই নিউজটা সম্ভবত একটা চিহ্ন যে, এবার সত্যিই আমাদের আপা এই বিরাট ভারতকে কয়েকটা চড়-থাপ্পড় না হলেও একটা বড় দাগা বা ধাক্কা দিয়েছেন মনে হচ্ছে। আর এরই চিহ্ন হল সর্বশেষ বিবিসির এই নিউজ।  বর্তমান দিলীপ ঘোষের আগে বিজেপি-আরএসএসের তহবিল আগলে কলকাতায় বসে থাকতেন তথাগত রায়। তাঁর আমল থেকে লক্ষ্য করা গেছিল বিবিসির এই শুভজ্যোতি ঘোষ রিপোর্টকে। যা পড়ে মনে হত তিনি বিবিসি না, আরএসএসের কোন ক্যাডার হয়ে বিবিসিতে লিখেছেন সেটা। পরবর্তিতে তথাগত রায়কে নর্থ-ইস্ট রাজ্যের গভর্ণর করে সরিয়ে নিলে শুভজ্যোতি ঘোষ এর অত্যাচার থেকে পাঠকেরা সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে সেদিন আবার ফিরে এসেছে। এবং খুব সম্ভবত শুভজ্যোতি ঘোষের এবারের এসাইনমেন্ট আর স্থানীয় নেতা হিসাবে নয়,বিজেপির কেন্দ্র বা সরকার থেকে উতসারিত। অতএব বিবিসির প্রশাসক / সম্পাদক বলে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের সচেতন হবার এটা হাই-টাইম যে বাংলাদেশের আম-পাবলিক থেকে বিবিসির বিচ্ছিন্ন হওয়া বা দূরে চলে যাওয়া এসব ঘটা শুরু হয় সাধারণত এখান থেকেই।

কূটনীতিক মুচকুন্দ দুবে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার শেষ জমানায় (১৯৭৯-৮২) ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রদুত ছিলেন। আর পরে ১৯৯০-৯১ সালের দিক ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন, এরপরে অবসরে যান। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই মিডিয়াগুলো যাদের মন্তব্য তাতে সংযোজন করে রিপোর্ট পুর্ণ করে থাকেন দুবে তাদের একজন। আবার ভারতের যারা ঢাকায় যোগাযোগ-সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপুর্ণ সেন্টার হিসাবে প্রথম আলোকে গোনায় শীর্ষে রাখেন মুচকুন্দ দুবে তাদের একজন। বছর দেড়েক আগে রেহমান সোবহানকে সাথে নিয়ে তাঁকে প্রথম আলোর অফিস ঘুরতে আসতে দেখেছিলাম আমরা। কিন্তু কখনই তাঁকে বিজেপি-আরএসএসের ধব্জা বহনকারী মনে হয় নাই; আর এবার তার চেয়েও নিকৃষ্ট কিছু মনে হয়েছে।

বিবিসির উল্লেখিত ঐ নিউজের একটা অংশ এমনঃ
“মি. দুবে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘বাস্তববাদী জিয়াউর রহমানকে ভারতও কিন্তু বিশ্বাস করত’।
‘পরের দিকে ভারত সরকার মনে করতো তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছিলেন। কিন্তু জিয়া কোনওদিন তা করেননি বলেই ভারতের ধারণা ছিল।”

ক্যাডার কুটনীতিক দুবের বয়স এখন ৮৭ বছরের কম নয়। এখন এই বয়সে কেউ যদি তাকে কূটনীতির ভাষা শিখাতে আসে সেটা দুবের জন্যই উপাদেয় হবে না বলাই বাহুল্য। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি ভাষা ব্যবহারে তিনি কত নিচে নামতে পারেন; নেমে একেবারে তলিয়ে যাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করছেন “খালেদা জিয়া পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছিলেন”, তাই তিনি খারাপ বা ভারত তাকে বিশ্বাস করত না ইত্যাদি। মিঃ দুবে খালেদা জিয়াকে অপছন্দ করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে তিনি সে সময়কালের এক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কথা বলছেন। খালেদা জিয়া কেন পাকিস্তান সরকার নয়,প্রধানমন্ত্রী নয়, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রদুত নয়……দুবে বলছেন,খালেদা জিয়া পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছিলেন।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোন কূটনীতিক কী বলবেন যে “হাসিনা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছিলেন” – এটাই হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ!নাকি শুধু এটা বলাই যথেষ্টের চেয়েও বেশি হবে যে যদি তিনি বলেন হাসিনা “ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছিলেন”। এটাই কী কোন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্মানের সাথে তুলে ধরার উপযুক্ত পথ নয়? মিঃ দুবে আপনি খালেদা জিয়াকে অপমান করতে চাইছেন কেন?

তাহলে মিঃ দুবে, খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পর্যায়ের প্রটোকলে নামাচ্ছেন। কেন? নাকি তাঁকে নিচা দেখাতেই হবে এটাই আপনার এসাইনমেন্ট? তাই কী?
এতে একজন সাবেক কূটনীতিক হিসাবে কুটনীতিক দুবের কী সম্মান বেড়েছে? নাকি তিনি মরিয়া, অর্থকষ্টে আছেন কী? এত নিচে নিজেকে নামান কীভাবে?

দুবে-রা এমন ডেসপারেট হয়ে উঠছেন কেন? সেজন্য এখন মনে হচ্ছে হাসিনার বাংলাদেশ ভারতকে আসলেই বড় ধাক্কা দিয়েছে। কাদায় ফেলে দিয়েছেন! সেজন্যই কী মোদীর সরকার শুভজ্যোতি ঘোষ, বিবিসি আর মিঃ দুবে ইত্যাদি যাদেরকেই পেয়েছেন সবাইকে খেপ মারতে কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন হাসিনার মন পাওয়া বা মন গলানোর জন্য? ভেবেছে জিয়া ও খালেদা জিয়া কত খারাপ সে বন্দনাগুলো তুলে ধরলে হাসিনার মন পাবে ভারত? এদেরকে আর কী বলব? বেচারা!

কোন কাজ করতে গেলে আগে কিছু হোমওয়ার্ক করে নিতে জানতে হয়। মিঃ দুবে এসবেরও যোগ্য নয়। গত ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে অনেক সময়ই হাসিনা আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক “কথার লড়াইয়ে” অভিযোগ করা শুরু করেছিলেন যে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানেরা (মানে খালেদা জিয়া বা বিএনপি) ভারতকে গ্যাস বিক্রি করতে মুচলেকার বিনিময়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আর সেই থেকে হাসিনা প্রায়ই এমন অভিযোগ করে থাকেন। কিন্তু মিঃ দুবে মনে হচ্ছে একেবারেই বেখবর আছেন। এই খবরটাই রাখেন নাই। এখন বলেন, মিঃ দুবে আপনি একই মুরগি কয়বার জবহ দিবেন? নাকি দেওয়া যায়? হাসিনা বলে আসছেন এটা খালেদা জিয়া আর আপনি এখন দাবি করছেন এটা জিয়াউর রহমান! কী তামশা!
আবার মিঃ দুবের খেয়াল রাখা উচিত হাসিনার অভিযোগটা ছিল উলটা ভারত ও আমেরিকার উপরে।শিরোনামটাই লক্ষ্য করেন। হাসিনা বলেছিলেন,  আ.লীগকে হারাতে একজোট হয়েছিল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র।  কাজেই মিঃ দুবে এখন কোথায় পালাবেন? এজন্যই বলছিলাম হোমওয়ার্ক না করে কোন কুটনীতিক দূরে থাকে কোন বুদ্ধিমান মানুষই কাজে নামে না।  মিঃ দুবে এখন বলেন যে অভিযোগ আপনার দেশের বিরুদ্ধে হাসিনা তুলেছেন সেই অভিযোগ এখন খোদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার বিরুদ্ধে আপনিও তুলতেছেন!  এজন্যই আপনি বেচারা হবেন!

আগে বাংলাদেশের বেড়ে উঠার ইতিহাস জেনে নেনঃ
আর মিঃ দুবে আপনি দু-এক বছর রাষ্ট্রদুত থাকলেও সত্তরের দশকের বাংলাদেশ সম্পর্কে ওর সমসাময়িক পটভুমি সম্পর্কে আপনার নুন্যতম ধারণাও নাই। প্রথমত সে সময়ে গ্যাস যে বিদেশে বেচা যায় সেটাই রাজনীতির পাড়ায় জানা ছিল না। আর ওদিকে আমাদের গ্যাসের চাহিদা ছিল খুবই কম আর আমরা তখন ডাঙ্গা মাটির নিচের গ্যাসই ব্যবহার করে কখন তা শেষ হতে পারে তা আমাদের মনে হত না। কারণ এরশাদের আমলে বিশ্বব্যাংকের সংস্কারের ফলেই আমাদের অর্থনীতির আকার প্রথম বড় হয়। তাই গ্যাসের চাহিদা বাড়ে, একমাত্র তখনই উপকুলে সাঙ্গুর গ্যাস তুলবার প্রসঙ্গ প্রথম সামনে আসে।

আর সবচেয়ে বড় কথা ১৯৮০ এর দশকের আগে মানে এরশাদের ক্ষমতাদখল নিবার আগের রাজনৈতিক পরিবেশ আর পরের মধ্যে ্প্রথম আমরা আকাশ-পাতাল ফারাক হয়ে যেতে দেখি। সাধারণভাবে সেকালের রাজনীতিতে আর বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতিতে অসততা বা কোন আদর্শ মেনে না চলার ঝোঁক – এমন দেখতে পাওয়া সম্ভব ছিল না। রাজনীতি তখনও সমাজে অনেক পবিত্র জ্ঞান আর মর্যাদা পেত। সেটা খুব সম্ভবত একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের অল্প-পরবর্তিকালের কারণে। আর এটাকেই পরিকল্পিতভাবে এরশাদকে ভাঙতে হয় কারণ তিনি প্রথমত সামরিক সরকার বলে গণবিচ্ছিন্ন ছিলেন। আবার এর চেয়েও বড় কথা বিশ্বব্যাংকও চায় নাই তার নেতৃত্বের ঐ অর্থনৈতিক সংস্কারে “পাবলিক সংশ্লিষ্ট” হোক – এসব মিলিয়ে নিজেকে সারভাইভ করাতেই শাসক এরশাদ অর্থলাভের লোভে বা বিনিময়ে ছাত্র রাজনীতির সুচনা করেন। এছাড়া এসব থেকেই দুর্নীতি ক্রমশ সমাজে চোখে পড়ার মত জেঁকে বসতে থাকে। আর এর আরেক সবচেয়ে বড় কারণ খারাপ আমলারা আর “নির্বাচিতদের জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দেও” – এনজিও-সুশীলেরা এই ভুয়া অবুঝ শ্লোগানটা ভুল ভাবে দেওয়ায় বিশেষ করে “পারটিসিপেটরি গণতন্ত্র” নামে সোনার পাথরের বাটি বুঝের ততপরতায় পুরা প্রশাসনকে দুর্নীতিতে ভরপুর করে তোলা হয়েছিল।

কাজেই ৭৯-৮০ সালের জিয়ার যুগে বাংলাদেশের রাজনীতি পকেট ভর্তি করার কালে প্রবেশই করে নাই। আবার তখন কমিউনিস্টরাও সমাজে যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিল, বিশেষত নৈতিক রাজনীতির ব্যাপারে। আর তাতে সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক কমান্ডে কমিউনিস্ট কতৃত্ব তখনও খুবই শক্তিশালী ছিল। বলা যায় ১৯৮৫ সালের পর থেকে এটা হেরে-ম্লান হয়ে যেতে শুরু করেছিল।

আবার মূল কথা যারা জিয়াউর রহমানের রাজনীতির ও শাসনকালের বহু দোষত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে নুন্যতম যিনি জানেন না তারা জিয়া সম্পর্কে এসব লুজ-টক অবলীলায় বলতে পারেন। এর পিছনের মূল কারণ সম্ভবত, তখনও বাংলাদেশে সমাজে বৃটিশ আমল থেকে কাজ করে আসা ভ্যালুজ যা রাষ্ট্র সরকারে পাবলিক স্বার্থ প্রসঙ্গে সেই মূল্যবোধ তখনও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। বড় ভাবে ভেঙ্গে পরে নাই। আমলারা অদক্ষ হতে পারে কিন্তু কিছু মূল্যবোধ তাদের উপর তখনও কাজ করত। জিয়াউর রহমানকে আমরা  “সেই মুল্যবোধের আদর্শ রাজ-কর্মচারি” টাইপ ভাবতে পারি বা বলতে পারি। এটাকেই এরশাদের হাতে প্রশাসনিক সংস্কারের নামে আর পারটিসিপেটরির নামে পুরাপুরি দুর্নিতিতে ডুবিয়ে দেওয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল। বাস্তবে তাই কাগজ কলমে প্রশাসনিক বিজনেস রুল বদলে যায় পুরা আশির দশকের মধ্যেই। আর এর সবর্ত্র প্রয়োগে দুর্নীতি ছড়ায় ৯১ সালের পরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে ও প্রশাসন ও রাজনীতিকের যৌথ উদ্যোগে। মূল কারণ, কেউ নির্বাচিত হলেই যেন সব মাফ তিনি সব দুর্নীতির নায়ক হতে পারেন, সরকারের স্টান্ডিং রুল বলে কিছু থাকার আর দরকার নাই। সেগুলো নাকি আমলাতন্ত্র। আমলাতন্ত্র অরিজিনালি একটা পজিটিভ শব্দ সেটাই এসব পেটিমধ্যবিত্ত কমিউনিষ্ট জানে নাই – এদিকটা অর্ধশিক্ষিত সুশীলেরা কেউ বুঝে নাই।

কাজেই প্রেসিডেন্ট  জিয়া সম্পর্কে মিঃ দুবে যা বলেছেন এসব হাল্কা প্রপাগান্ডা এগুলো কোন সাবেক কূটনীতিকের বক্তব্য বলে ভাবা কঠিন। আবার সেগুলো এমন উদ্দেশ্যমূলক গীবত যে মনে হয় না যে সরকারও সেটা গ্রহণে আগ্রহ দেখাবে বা তার আকাজে লাগবে।

ওদিকে জিয়ার আমলের ভারতের সঙ্গে হওয়া বিভিন্ন চুক্তি প্রসঙ্গেঃ নেহেরুর কংগ্রেস মূলত একটা কলোনিদখলদারি মনোভাবের দল ও সরকার ছিল। এর মূল কারণ সম্ভবত নেহেরুর ভয় যে দাবড়ে রেখে শাসন করলেই একমাত্র পাবলিককে একসাথে ধরে যাখা যায়। নইলে ভারতের ২৮/২৯ রাজ্যকে একসাথে ভারতে ধরে রাখা যাবে না। ভারত ভেঙ্গে যাবে। এই ছিল নেহেরুর সবচেয়ে করুণ রাজনৈতিক অনুমান বা বিশ্বাস। আর ততই তিনি ছিলেন সমকালীন আন্তর্জাতিক আইন, নীতি কনভেনশন সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই নেহেরুর ভারত কখনই পড়শি কাউকে তার ন্যায্য আইনগত পাওনা দেয় নাই। ইতিবাচক ডিল করা যায় কিভাবে তাই তিনি জানতেন না। ডিল বলতে কেবল রাজা-প্রজার ডিলই বুঝতেন। সেকারণেই ভাটির দেশ হিসাবে আমাদের ন্যায্য পাওনার পানি, সেটা আমরা দুবারই পেয়েছি বিশেষত যখন কংগ্রেস সরকারে ছিল না। জিয়ার আমলটা ছিল মোরারজি দেশাইয়ের আমল,তাই পানি পেয়েছিলাম। এটাই মূল সুত্র। কাজেই মিঃ দুবের মনে করার কোন কারণ নাই যে আমরা ভারত সম্পর্কে বুঝা জানাশুনা রাখি না।

আর গ্যাস নিয়ে আরেকটা আসল কথা বলা যাক। বাংলাদেশে কখনই এমন প্রমাণিত গ্যাস রিজার্ভ ছিল না যা নিয়ে রপ্তানির কথা ভাবা যায়। এই হল বটম অব দা ফ্যাক্টস। এখন ধরা যাক জিয়া এবং খালেদা দুজনই খালি গ্যাস বিক্রি করে দিতে চান এমন খারাপ মানুষ ছিলেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, তাহলে ভারত সেসব কথা বিশ্বাস করেছিল কেন? তার মানে ভারতের নিজের ইন্টেলিজেন্স ছিল না? সে জানতই না যে বাংলাদেশের রিজার্ভের অবস্থা কী? তাহলে এই ভারত লইয়া দুবে-রা কী করিবে? কতদুর যাইবে?

তবে আগামিতে ভারতের পররাষ্ট্র বা গোয়েন্দা বিভাগ মিঃ দুবেদেরকে দিয়ে ঠিক এর উলটা কথা বলাতেও পারে যে, “হাসিনাকে ভারত সরকার কখনও বিশ্বাস করে নাই”। সেটা কী খুব অমূলক হবে? মনে হচ্ছে না! তবে সেটা অন্য আরেকটা মি.দুবে নিয়ে এসে এরপর তাকে দিয়ে বলাতে পারে। ভারত-বাংলাদেশের “সম্পর্কে ফাটল দেখা” দেক আর নাই দেক, সবকিছু হঠাত চিতপট হয়ে উলটে যাওয়া মোটেও অবিশ্বাস্য নয়। কারণ, সময়টাই অস্থির…।

তবে মিঃ দুবে, আপনার এই ভুয়া সাফাই বা খালেদা জিয়াকে নিয়ে অশোভন কটু কথা বলা, এর ফল একদিন তাকে ভোগ করতে হতে পারে। সেদিন এটা তিনিসহ পুরা ভারতেরই বিরুদ্ধে চলে যাবে। কোন পেশাদার কূটনীতিক তাই এমন আচরণ কখনও করেন। রাষ্ট্রস্বার্থ মূলত খুবই ডেলিকেট জিনিষ। কূটনীতিক আচরণ তাই ঠাট্টা নয়। মানানসই কূটনীতিক আচরণের ব্যাপারে তাদেরকে সেকারণে সবসময় সতর্ক থাকতেই হয়। তবে জিয়া বা খালেদার বিরুদ্ধে বলতে পেরেছেন বলেই হাসিনা তাঁদেরকে পছন্দ করবেন এই অনুমানের ভিত্তি নাই। মিঃ দুবে সেক্ষেত্রে দুকূল হারানো এক “বেচারা” হয়ে যেতে পারেন!

 

গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
৩১ মে ২০২১
goutamdas1958@hotmail.com

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s