“আমেরিকান শান্তি ও নেতৃত্ব শেষ, যেমন ন্যাটো”-গার্ডিয়ান
গৌতম দাস
২৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০৬
AFTER AFGANISTAN,THE PAX AMERICA IS OVER
PAX AMERICA IS OVER
AMERICANA PEACE IS OVER
সব ভেঙে গেছে, ভেঙে পড়ছে। খসে খসে পড়ছে, এক এক করে! আমেরিকান ক্ষমতার সাজানো বাগান। আর লুকানো যাচ্ছে না। শুধু আমার কথা নয় এটা। দেখা যাচ্ছে যারা এতদিন শুধু আমেরিকান সমর্থক না আমেরিকা তাদের জীবন, ভরণপোষণ, পেশা ইত্যাদিতে ডেইলি-লাইফের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল এমন ব্যক্তিরাও এখন আমেরিকার সাথে নিজের দুরত্ব তৈরি করছে। এরাও আমেরিকার কোন দায় আর নিতে চাইছে না। দুনিয়া এখন এমন নতুন চেহারায় পৌছেছে।
কোনো পরাশক্তি এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে দেখা যায়নি। এটা ওর জন্য বিশাল সঙ্কটের একটা যুগে প্রবেশ। এর গভীর সংকটের বড় লক্ষণ ও প্রধান প্রমাণ হল যখন, এই দেশের অভ্যন্তরীণ সব বিরোধ-মতান্তর খোলাখুলি উদাম হয়ে যায়। আমেরিকান সমাজে অসংখ্য বিভক্তি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আরেক বড় লক্ষণ হাজির হয়েছে, সবার গভীরভাবে হতাশ হয়ে পড়া। তাই এখন আফগান-রিলেটেড প্রায় সবাই হতাশায় হাত-পা ছুড়ছে। কে যে কাকে গালাগাল করছে তার কোনো তাল-ঠিকানা নেই। অনেক সময় রাগে ক্ষোভে বা গভীর হতাশায় অথবা নিজেদের আর ভবিষ্যৎ নেই দেখে ফেললে – বড় মানুষও শিশুদের মতো আচরণ শুরু করে; নিজের বাবা-মাকেই গালাগালি শুরু করে; এটা তেমন অবস্থা যেন! কিন্তু কোন ঘটনাটা এমন এত বড় প্রভাব ফেলতে পারল? আফগানিস্তানে তালেবান ২.০ এর উত্থান ঘটেছে! এরই প্রতিক্রিয়া এগুলো!
প্রতীকীভাবে কিছু ব্যক্তিত্বের প্রতিক্রিয়া এখানে জড়ো করব। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বুশ (২০০১-০৯) থেকে শুরু করি। তিনি আফগানিস্তান ও ইরাকে মিথ্যা অভিযোগে হানাদার দখলদারি ঘটানোর প্রধান নায়ক। এবার তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বকাবকি শুরু করছিলেন গত মাস (জুলাই) থেকেই যে বকাবকিটা ১৫ আগস্টের ( আমেরিকান কাবুলের পতনের দিন ) পরে আবার শুরু করেছেন। বুশের অবস্থান হল, তিনি আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের একেবারেই বিপক্ষে। তিনি আফগানিস্তান ছাড়তে চান না। বেচারা! কেন? কী যুক্তি তার? তিনি গত মাসে ১৪ জুলাইয়ে জার্মান ডয়েচে ভেলে’কে বলেছেন, সেনা প্রত্যাহার এক ‘ভুল কাজ’ [George W. Bush: Afghanistan troop withdrawal ‘a mistake‘]। তিনি আরো বলেন, ‘আফগান নারী ও মেয়েদের বর্ণনাতীত কষ্টের কথা ভেবে আমি উদ্বিগ্ন” [I’m afraid Afghan women and girls are going to suffer unspeakable harm,” Bush said.(২০ জুলাই)]।’ আচ্ছা, তার মানে কি তিনি আফগান নারীদের দুর্দশামুক্তির নায়ক হতেই আফগানিস্তান দখল করেছিলেন? তাই কী? না, তা কেউ বলছে না, তিনিও তা দাবি করছেন না। তা হলে, এমন ভুয়া উদ্বিগ্ন কেন তিনি?
পিছনের বিশাল কারণটা হল, আফগানিস্তানে ও ইরাকে জাতিসঙ্ঘের চোখেই আমেরিকা হানাদার ও দখলদার বাহিনী, আর এই কাজের প্রধান নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ও কর্তা তিনি নিজেই। বুশের এই একচুয়াল লিগ্যাল স্ট্যাটাস লজ্জাজনক, এটা তিনি জানেন। একবার জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান তা পাবলিকলি উচ্চারণ করেছিলেন। তাই বুশ জানেন, বাইডেনের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে আমেরিকান সমাজে এখন প্রশ্ন উঠবে যে আমেরিকার তাহলে লাভ হলো কী? ২০ বছরে মার খেয়ে? দুই ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে? এবং সবাই প্রেসিডেন্ট বুশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলবে? তাই অন্য কারো তাকে বিব্রত করে ফেলার আগেই তার ভান হল, নারীর জন্য ‘প্রাণ কান্দা’। এজন্যই তার মুখরক্ষার বয়ান-দর্শন এখন একটাই, ‘নারীর-দুর্দশামুক্তি’। ভাবখানা এমন যেন নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে দেখে তিনি আর চুপ থাকতে পারেন নাই। তা রক্ষা করতে বুশ বা আমেরিকা আফগানিস্তান দখলে এসে ২০ বছর কাটিয়ে গেল! কী তামশা!
আমেরিকার এক পপুলার মিডিয়া হল ‘এনপিআর’ [NPR, National Public Radio] রেডিও। এরই ওয়েবসাইট লিখছে, আমেরিকা নাকি ‘আফগানিস্তানে গণতন্ত্র এনে দিতে গিয়েছিল []। তবে এটা করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত খোদ আমেরিকাতেই গণতন্ত্রের অভাব ঘটিয়ে ফেলেছিল, [The U.S. involvement in Afghanistan is a story of democracy and its shortcomings. ]।’ এদেখি বিরাট এক আঁতলামো! ইদানীং আমেরিকান মিডিয়ার এমন লেখা দেখে মনে হয় তাদের দিন ফুরিয়ে আসছে, তাই কথার আর সেই ওজন থাকছে না। কখন কী বলে ঠিক থাকছে না।
এ ছাড়া এ কথাটাও সত্য নয়। যেমন, বুশ দুই টার্মে ক্ষমতায় ছিলেন। প্রথম টার্মে যদি ধরে নেই পাবলিক জোশে তিনি আফগানদের কড়া শাস্তি দেয়ার জন্য বোমা ফেলতে গিয়েছিলেন, মানে নাইন-ইলেভেনে টুইনটাওয়ারে হামলার শাস্তি দিচ্ছিলেন। কিন্তু এরপরে কী? প্রশ্ন উঠবে, তাহলে এর পরও যুদ্ধ চালু রাখতে ভোটাররা তাকে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত করলেন কেন? এর দায় তো তখন অবশ্যই (লোভী) ভোটারদেরও নয় কি? আসলে এসব ভোটারেরা কখনই দায়িত্ব নিতে চায়নি, বুশ বা তাদের প্রেসিডেন্ট কী করে বিদেশ থেকে দেশে টাকা আনছেন? আর বুশের পদক্ষেপ তাদের পক্ষে যাচ্ছে বলে তারা মেপেছিলেন ও আর উৎসাহ দিতে বুশকে আবার নির্বাচিত করে দিয়েছিলেন তাদের ওসব বৈষয়িক লাভ দিয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে। তাদের বিচারে আমেরিকান সমাজে “কাজ-কাম” আর ‘মানি সার্কুলেশন’ বাড়া দেখেই তো তারা সিদ্ধান্তে গিয়েছিলেন… “কাজেই বুশকেই আবার জিতিয়ে দাও”। তাতে আফগানিস্তানে কী হচ্ছে তাতে ভোটারদের কী – এভাবেই তারা জিতিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো যুদ্ধে আমেরিকান জনগোষ্ঠী ও অর্থনীতিকে জড়ানোর কারণে এই মানি সার্কুলেশন বৃদ্ধি পেয়েছিল- যেটা ছিল এক জবরদস্তি বৃদ্ধি। আর যুদ্ধ তো ঠিক কোনো ব্যবসা বা বাণিজ্য নয়। তাই যুদ্ধ শেষে কিছু রিটার্ন এলে আসতেও পারে, এই রিটার্ণের উপর ভরসা করে কেউ যুদ্ধে যেতে পারে না।
যুদ্ধ দেশকে বিশেষ কোনো সুবিধা (অ-মানিটারি সুবিধা) কখনো কখনো এনে দিতে পারে। যেমনটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে তা আমেরিকাকে গ্লোবাল নেতা বানিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সবার উপরে সাবধান থাকতে হয়, কারণ, কোনো যুদ্ধের খরচ যেন দেশের বইবার সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি দাবি না করে বসে। সে কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা যুদ্ধ করেও টিকে গিয়েছিল। আমেরিকা ইউরোপ (এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নসহ) ও এশিয়া-আফ্রিকা-ল্যাটিন
আমেরিকার উপর একই গ্লোবাল কর্তৃত্ব সুযোগ এনে দিয়েছিল। কিন্তু আফগানিস্তান-ইরাকের যুদ্ধের ব্যয় ছিল লাগামছাড়া আর বিপুল খরচের তুলনায় রিটার্ন এমন বড় কিছু নয়। ততদিনে যুদ্ধের সাত বছর পেরোতেই বেহিসাবি খরচের ভারে শুধু ‘আমেরিকান ইকোনমি’ নয় এর নেতৃত্বে ও সাথে থাকা ইউরোপসহ সারা গ্লোবাল ইকোনমিও মহামন্দার (২০০৮) কবলে পড়ে যায়। এভাবে এঘটনাই আমেরিকান কর্পোরেট হাউজ, ব্যবসাদার ও ভোটার সবপক্ষেরই যুদ্ধের শখ মিটিয়ে দিয়েছিল। কারণ, গ্লোবাল মন্দার মধ্যে আর আফগান-ইরাক যুদ্ধও তো এক সাথে দুনিয়াতে কখনো চলতে পারেনি।
এরপরের ওবামা দু-টার্ম বা পরে ট্রাম্প- দু’জনেই তাদের কালের যুদ্ধের উল্টা এরা – যুদ্ধের খরচ কমানোর নায়ক সাজতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সুখকর খুব কিছু হয়নি। তবে দায়ীত্ব ও বিবেচনাহীনভাবে যুদ্ধের দায় ফেলে পালিয়ে যাবেন – এই সস্তা শর্টকাট বেকুবির পথ নিয়েছিলেন ট্রাম্প। এমনকি তালেবানদের সাথে আমেরিকানদের চুক্তিও সম্পন্ন করেছিলেন একা ট্রাম্প নিজেই। ফলে তালেবান-চুক্তি করার মূল দায়ভার এককভাবে ট্রাম্পের। কিন্তু বাইডেন তা বাস্তবায়নে গেছেন বলে সব দায় এখন তিনি বাইডেনের ওপর চাপাচ্ছেন। এটাই বড় তামাশার।
আবার বাইডেন আসলে তালেবানদের ক্ষমতায় এনে নিজের সেনা-প্রত্যাহার নিশ্চিত করবেন এমন বাস্তবায়ক প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছেন। যদিও এই দায় নেয়া যে খুবই রিস্কি তা তাঁরও অজানা ছিল না। কিন্তু তবু তিনি রাজি হয়েছিলেন; কারণ সেনা প্রত্যাহার তার সরকারের পরিচালনা খরচ কমাবে, এই ছিল লোভ। কারণ, আফগানিস্তানে প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রের খরচ ৩০ কোটি ডলারের বেশি – । এখনকার আমেরিকা মানে অর্থনৈতিক সক্ষমতার অভাব, সেই প্রাচুর্যের আমেরিকা আজ আর নেই। কিন্তু তার অর্থ দরকার। কারণ, এদিকে অর্থের সংস্থান ও সোর্সের খবর না রেখে বাইডেন সারা ইউরোপ আর জাপানের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন [বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড (B3W)] যে, চীনের পাল্টা ব্যাপক বিনিয়োগ সক্ষমতা, পাল্টা বেল্ট-রোড খাড়া করার সক্ষমতা হাজির করবেনই। এখন আফগান ফ্রন্ট থেকে সেনা প্রত্যাহার যদি বাইডেনকে কিছু খরচ সেভ করাতে সে অর্থই বিনিয়োগ সক্ষমতার উৎস হয়ে দেখায় – যদিও শেষে এসবই সুখের গল্প হয়েই থেকে যাবে! সে সম্ভাবনাই প্রবল!
কিন্তু এর আগেই (বাইডেনের উপর দিয়ে) ট্রাম্প দান মারার চেষ্টা করেছেন। তিনিও আগামী নির্বাচনের হিসাব মোতাবেক এখন উল্টা বাইডেনের ওপর নিজেরই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের সব দায় চাপিয়ে নিজে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছেন। তাই বলা যায়, সাবেক প্রেসিডেন্টরা মাত্রই আসলে দায়দায়িত্ব নিতে না চাওয়া অপরচুনিস্ট, সুবিধাবাদী। তাই শেষে সব ভার বাইডেনের উপর। যেমন, বাইডেন ইতোমধ্যেই তালেবান ক্ষমতা দখল নিয়ে নেয়ায় নৈতিক দিক থেকে ঘায়েল হয়ে গেছেন; আমেরিকানদের মানসিক-নৈতিক দিক দুর্বল করে ফেলেছেন।
এদিকে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের একগুঁয়ে নীতিটাই বাইডেন চুপেচাপে অনুসরণ করে যেতে চেয়েছিলেন। চীনা পণ্যের আমেরিকায় আমদানিতে বাধা দিতে ট্রাম্প ওসব পণ্যের উপর বাড়তি ২৫ শতাংশ ট্যাক্স আরোপ করেছিলেন। সেটা সযত্নে চালু রেখেছেন বাইডেন। আর সেটাই এখন বাইডেনের উপরই শাস্তি হিসেবে আসা শুরু করেছে। ঐ ট্যাক্স আরোপ বাইডেন আগে বদল করতে যাননি, ‘কম দেশপ্রেমী’ হতে চাননি বলে হয়ত। কিন্তু সেটাই বাইডেনকে আমেরিকার আগামী মিডটার্ম নির্বাচনে পরাজয়ের স্বাদ দিতে উদ্যত হচ্ছে বলে খবর চাউর হয়েছে। একই কায়দায় এটাও ট্রাম্পের আরেক ফায়দা।
তালেবান-ক্ষমতারকালে বাইডেনের ভারতঃ
ওদিকে বাইডেনের তালেবান উত্থান পলিসি ভারতের জন্য একেবারেই অসহ্য হয়ে উঠেছে। ভারত আর নিতে পারছে না কিন্তু পালানোর পথ নাই। আর সবচেয়ে অসহ্য হয়েছে মূলত, পাকিস্তানের কাছে ভারতের নৈতিক পরাজয়। পাকিস্তানকে আর ‘জঙ্গি দেশ’ প্রচার করে ভারতের সুবিধা হচ্ছে না, জমছে না। (যদিও ভারত তাতে ক্ষান্ত দেয় নাই।) গত ২০ বছর ধরে প্রপাগান্ডায় – যেন পাকিস্তানই আফগানিস্তানের মা-বাপ; সব ইসলামী রাজনীতিক বা সশস্ত্র ধারার উৎস। এই ছিল ভারতের মুখ্য প্রপাগান্ডা বয়ান। গত ২০ বছর আমেরিকার ওয়ার-অন-টেরর যেন আফগানিস্তানের তালেবানসহ অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে ছিল না, যেন আমেরিকার যুদ্ধ চলছিল (জঙ্গি) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আমেরিকা যেন পাকিস্তানি ইসলামী জঙ্গি থেকে ভারতকে মুক্ত করতে লড়ছিল। বিশেষ করে এত দিনের আফগানিস্তান যেন ছিল এক নারীমুক্তির ঘাঁটি – এমন এক বিরাট কারখানা। আর এখন যা হয়েছে তা যেন, তালেবানদের আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল নয় – বরং “পাকিস্তানের কারণেই” এই নারীমুক্তির কারখানা -টা এখন যেন বন্ধ হয়ে যাবে। আফগান নারীরা বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমেরিকান স্কলারশিপে পড়তে গিয়েছে। ফ্যাক্টস হল, কাবুলে আমেরিকান পুতুল গণি সরকার পালানোর কারণে এখন এসব নারীদের পড়াশুনা অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। কিছু না হলেও তা একটা সাময়িক ধাক্কা খাবে। কিন্তু আমেরিকান প্রশাসন সতর্ক ব্যবস্থা নিলে কোন সমস্যাই হবার কথা নয়। মূল কারণ, পড়াশুনার কেন্দ্রটা আফগানের বাইরে আর, সেসব দেশেই স্কলারশীপের অর্থ পাঠাতে কোন সমস্যা নাই। তবে উদ্বিগ্নতা থাকবে আর নতুন করে ছাত্রীরা এই সুযোগ পাবে না, এটা অনিশ্চিত। কিন্তু ভারত ইতোমধ্যেই প্রচার চালিয়েছে যে তা তালেবানদের দ্বারা নয়, পাকিস্তানের কারণে যেন বন্ধ হয়ে যাবে। এই ক্যাম্পেইন এতদিন কানে কানে বলার মতো করে চালিয়েছিল ভারত। বিশেষ করে ইউরোপের স্কানডিনেভিয়ান দেশগুলোর কথা বেশি করে ঢাকায় আমাদের কানে পর্যন্ত পৌছিয়েছে।
ভারত এই ভিত্তিহীন প্রপাগান্ডার কাজ হাতে নিয়েছিল আরেক কারণে। রাশিয়া, চীন ও আমেরিকাকে সাথে নিয়ে তালেবানের ওপর শক্ত গ্লোবাল রাজনৈতিক সিস্টেমের মধ্যে তাদেরকে আসতে বাধ্য করার জন্য ত্রয়কা গঠন [দেখুন ট্রয়কা নিয়ে আমার আগের লেখায়] করেছিল যাতে এই তিন দেশের বিরল কমন ও শক্ত অবস্থান তালেবানদের দেখানো এবং মানতে চাপ দেয়া যে তাদের কমন অবস্থান ও বক্তব্য আবার নিরাপত্তা পরিষদেরই প্রস্তাব। এর বাইরের কারো বা কোনো প্রস্তাব নয়। আর এ কাজ বাস্তবায়ন করতেই তারা পাকিস্তানকে ট্রয়কার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিল, যার নয়া নাম দিয়েছিল ‘ট্রয়কা প্লাস’। আর এতেই ভারতের সব পাকিস্তানবিরোধী প্রপাগান্ডা পানি হয়ে গিয়েছিল। এসবেরই প্রতিশোধ হিসেবে ভারত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আফগান নারীদের মধ্যে প্রপাগান্ডা চালিয়েছে যে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মূল কারণ পাকিস্তান। পাকিস্তানই তালেবানদের পরিচালক। অতএব আফগান নারীরা যেন পাকিস্তানের ওপর অবরোধ আরোপের জন্য জাতিসঙ্ঘে “পিটিশন” লিখে আবেদন জানায়। অথচ বাস্তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুনিয়ার কোনো সরকারের এমন কোনো অভিযোগই নাই। জাতিসঙ্ঘসহ কোনো ফোরামেই এমন কিছু নাই। কিন্তু ভারত ইউরোপের ক্যাম্পাসগুলোতে আফগান নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন পিটিশন স্বাক্ষর ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেই।
গতকালের আনন্দবাজার পত্রিকা এক মজার খবর দিয়েছে, ভারতীয় অ্যাম্বাসির সর্বশেষ দেড় শ’ জনের যে দলটা কাবুল থেকে ফেরত এসেছেন তারা ফিরে এসেছেন তালেবানের দেয়া সহযোগিতা ও নিরাপত্তা সহায়তায়। ঘটনা হল, তারা দেশে নিরাপদে ফিরতে চান বলে স্থানীয় তালেবান কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করলে কমান্ডার ভারতীয় অ্যাম্বাসির ২২টি গাড়ির কনভয়-বহর পাহারা দিয়ে এয়ারপোর্টে নিরাপদে পৌঁছে দেন। আনন্দবাজার লিজেই লিখছে, “সকলকে তাজ্জব করে ভারতীয় দূতাবাসের ১৫০ কর্মীকে বিমানবন্দরের পৌঁছে দিল ওই তালিবান বাহিনীই”। যার মানে ভারতের নিজের ছড়ানো তালেবানদের নেগেটিভ ইমেজ তারা নিজেরাই পরিস্কার করে তবেই ভারতে ফিরে আসতে পেরেছে।
‘কাউন্টার হিরো’ ব্রহ্ম চেলানিঃ
ব্রহ্ম চেলানি (Brahma Chellaney) একজন ভারতীয়; তিনি অনেক বাংলাদেশীর মতই আমেরিকান থিংকট্যাংক ফেলো। তিনি দিল্লিতে বসে আমেরিকান ফান্ডে এক এনজিও / থিংকট্যাংক চালান, নাম সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ [Centre for Policy Research ]। তিনি প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে [Project Syndicate] কলাম লেখেন আর সে লেখা বাংলাদেশের ‘প্রো-আমেরিকান’ পত্রিকাগুলো অনুবাদ করে ছাপে। কিন্তু তিনি বাইডেনের তালেবানদের সাথে রফা-ডিল করা নিয়ে ক্ষিপ্ত এবং পরে তালেবানরা নিজ মুরোদে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করলে, এরপর তিনি একেবারে ক্ষেপে আগুন হয়ে যান। এতে তিনি এমনই হতাশ আর ক্ষুব্ধ হয়ে গেছেন, যাকে বলে ‘রাগে অন্ধ’। এর আগে তিনি কখনও আমেরিকার উপরে এমন পরিপুর্ণ হতাশ হয়ে পড়েন নাই, অন্তত আমরা দেখিনি। যেমন তার একেবারে ভেঙ্গে পড়া বুঝা যাবে যদি দেখি তার এবারের লেখার শিরোনাম – ‘কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বনেতৃত্বের অবসান হলো’ [Pax Americana Died in Kabul]। এটাই এর প্রমাণ। এই লেখার শুরুতে তার কথা মনে করেই লিখছিলাম।
স্যার, বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে যে, আফগানিস্তানে ১-৩ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের মূল্যবান খনিজ সম্পদ যেমন লিথিয়াম, কোবাল্ট ইত্যাদি মজুদ আছে। এই হিসাবে বাংলাদেশের কি আফগানিস্তানের সরকারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে এই বিষয়ে কোনো সুবিধা নিতে পারবে? আপনার মতামত জানতে চাই। ধন্যবাদ
LikeLike
দাদার লেখা তো লেখা না, রীতিমতো মর্টার শেল!
LikeLike
ji
LikeLike