গৌতম দাস
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০.৫৬ সকাল
প্রথম আলো চরমতম বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আমাদের জানামতে এর অফিস কাওরানবাজারেই ছিল। কিন্তু গত দুমাসের রিপোর্টিং মান, ধরণ ও ততপরতায় তাতে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। মনে হচ্ছে এটা বোধহয় কোন ভারতীয় পত্রিকা। যার অফিস ভারতের কোন শহরে!
এমনিতেই ভারতীয় পত্রিকায় জার্নালিজম থাকে না। থাকে জাতিবাদ-দেশপ্রেমিকতা। মানে খবর যেভাবে পেশ করলে ভারত রাষ্ট্রের প্রতি দেশপ্রেম প্রকাশ পাবে সেটাই করতে হবে। তাতে নিউজ মিথ্যা হলেও অসুবিধা নাই। অর্থাৎ জার্নালিজমের নীতি ও সততা এর গাইডলাইন নয়, বড়জোর সেকেন্ডারি। অর্থাৎ দেশপ্রেমের নামে খাড়া মিথ্যা প্রপাগান্ডাও জায়েজ। আর কথিত এই দেশপ্রেমের নিচে যদি কিছু জায়গা ত্থাকে তো সেখানে জার্নালিজমকে ফেলে রাখা যেতে পারে। এককথায় কথিত তাদের ‘ন্যাশনাল ইন্টারে্স্টটের’ সাংবাদিকতা। ফলে এরপর আর খবরের সত্য-মিথ্যা জাহান্নামে!
কথা এখানেই শেষ না। দল বিজেপি যেহেতু এখন ক্ষমতায়। তাই মোদীর
আরএসএস –বিজেপির রাজনীতি এবং স্বার্থটাই ভারত দেশপ্রেমের মাপকাঠি এবং তাদের কথা-ই ভারতের ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’। তাই শেষে এটাই প্রথম আলোরও খবর প্রকাশের গাইড লাইন হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ প্রথম আলোর খবরের সোর্স বলা হচ্ছে ভারতে প্রকাশিত কোন পত্রিকার খবর।
আগেও বলেছিলাম “ডেস্ক নিউজের” নামে প্রথম আলোতে আরেক চাতুরি চলে। তা হল, খবরের উতস-এর পরোয়া না করে অনুবাদের নামে যা ইচ্ছা তাই রিপোর্ট করা। যেন ‘অনুবাদক’ বলে আরেক ক্যাটাগরির কর্মী প্রথম আলো নিয়োগ দিয়েছে বা দেখতে পাওয়া যাবে। যারা সাংবাদিকতার সব দায় কর্তব্যের উর্ধে। খবরের উৎসে কোন কথা বা শব্দ থাক আর নাই থাক তিনি যেকোন শব্দ খবরের মধ্যে ঢুকাতে পারেন, বেপরোয়া। কারণ ওটা নাকি ‘ডেস্ক নিউজ’। ফলে যেন খবরের সত্যতার দায় প্রথম আলোর নাই।
এর উপর আবার গতমাস থেকে এখন শুরু হয়েছে ‘বান-তালে’ (শব্দ উলটে নিয়ে পড়তে হবে) জার্নালিজম’। মানে যারা কা=বু=লে ক্ষমতা দখল করেছে। তাদের নিয়ে ভারতের জার্নালিজম। খবরের সোর্স না থাকলেও বানিয়ে এই নতুন শাসকদের বিরুদ্ধে লিখতে হবে ও সেটাই জার্নালিজম বলে মানতে হবে। নয়া শাসক আসাতে ভারতের স্বার্থের ক্ষতি হয়েছে। তাই এই ইস্যুতে ভারতের জার্নানিজম বাপ-মা হারা বেপরোয়া হয়ে গেছে। বেঁচে আছে কেবল কথিত ভারতীয় জাতীয় স্বার্থের সাংবাদিকতা, তাই দেশপ্রেমের ভারে, উৎস না থাকলেও যা খুশি লিখে দিবার স্বাধীনতা।
আর এতে প্রথম আলো হয়েছে আরো স্বাধীন বেপরোয়া। ভারতের যেকোন মিডিয়ায় প্রকাশিত এসব প্রপাগান্ডা গারবেজকে প্রথম আলো তার প্রকাশিত নিজ খবরের সোর্স বলে দাবি করছে। পেগাসাস এই ইসরায়েলি আড়িপাতা সফটওয়ার মোদী কিনেছে, ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে, আর বিরোধী রাজনীতিক এমনকি নিজ সরকারের সচিব ইত্যাদির উপর তিনি তা ব্যবহার করে আসছেন। এটা নিয়ে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে মামলা চলছে। সংসদে হৈ চৈ চলছে। অথচ এখনও না সরকার বা সফটওয়ার কোম্পানী (এনএসও) স্বীকার করেছে যে মোদী এই সফটওয়ার কিনেছে। আদালতে দেওয়া সরকারের এফিডেফিট ইতোমধ্যে দুবার বদলিয়েছে। এমনকি কিনে নাই সেটাও বলছে না। পিছলে বেড়াচ্ছে। অথচ এনিয়ে যে রিপোর্ট প্রথম আলো ২৪ জুলাই ছেপেছে তা আসলে কোম্পানী এনএসও এর পক্ষের এক সাফাই। সেজন্য শিরোনাম হল এই আড়িপাতা সফটওয়ারের কারণে নাকি “লাখ লাখ মানুষ রাতে ভালো ঘুমাতে পারে”।
এএনআই – এটা নিজেকে ভারতের এক প্রাইভেট নিউজ এজেন্সী বলে দাবি করে। বস্তুত এটা ফেক নিউজের একটা আড়ত। ইইউ এর এক গবেষণাালব্দ ফল থেকে পাওয়া অভিযোগ এটা। (EU DisinfoLab report) গুগল সার্চ দিয়ে আগ্রহিরা খুজে নিতে পারেন। আর এই কথিত এজেন্সীর উপরে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের হয়ে যেসব ফেক নিউজ করার দরকার হয় তা করে দেওয়ার বা হালাল করে দেওয়াই এই এজেন্সীর কাজ। অথচ এই এএনআই এর নিউজকেই উৎস মেনে পিআলো তা ছেপে চলেছে।
যেটা গত পরশু একেবারেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে সেটা হল, একটা কথিত নিউজ;
শিরোনাম, “ঢাকায় পাকিস্তানি অপতৎপরতা”।
এতে উল্লেখিত খবরের সোর্সগুলো এরকমঃ
১। ……বলে সরকারি সংস্থাগুলো মনে করছে
২।…… বিভিন্ন সূত্রের খবরে জানা গেছে।
৩……… বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
৪।……… বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী,
৫। ……… পাকিস্তানের নাম জড়িয়ে পড়ার কথা শোনা যায়।
৬।………… পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রচার রয়েছে।
৭।………… ঢাকার বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী
৭৫০ অক্ষরের এই কথিত নিউজে খবরের সোর্স এই সাতভাবে বলা আছে। এটা কী জার্নালিজম? তাও প্রথম আলোর?
প্রথম আলো এভাবে নিজেকে নিচা করে নামিয়ে কথিত খবর ছাপছে কেন?
অর্থ সংকট? পাকিস্তান আমাদের কারও অপছন্দের দেশ হতেও পারে। কিন্তু সেজন্য এর বিরুদ্ধে এমন প্রপাগান্ডা ছাপিয়ে নিজের অর্থ সংকট মিটাতে হবে? ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ বা নয়াদিল্লির অর্থ নিয়ে? তাই কী?
এমন গারবেজ অসততার জিনিষগুলো প্রথম আলোতে ছাপার আগে এই পত্রিকার সম্পাদকের আত্মহত্যা করাই অনেক সম্মানের হত!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
One thought on “প্রথম আলো কী নিজেই নিজেকে মৃত ঘোষণা করতে চাইছে?”