বাইডেনের অবরোধঃ
অন্ধকারের প্রদীপ নয়, আরো অন্ধকারে ফেলতে পারে
১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭ঃ১৮ মঙ্গলবার
US President Joe Biden’s Summit for Democracy
ঘোর ঘনঘটা। অন্ধকার ছেয়ে আসছে!
যদিও এই অন্ধকার মানে এটা নয় যে এখন বাইডেন হাতে আলোর প্রদীপ আছে অথবা হাতে প্রদীপ নিয়ে তিনি মঞ্চে আসছেনই! না ব্যাপারটা একেবারেই এবার ২০০৭ সালের মত এত সরল নয়। বরং উল্টা-পালটা বহু কিছুরই সম্ভাবনা। সবচেয়ে বড় কথা এক প্রচন্ড বিশৃঙ্খলা আর গভীর অনিশ্চয়তা ছেয়ে আসতে যাচ্ছে! সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর সে “আমেরিকান অথরিটি” আর নাই। অথচ ভিত্তিমূলক গ্লোবাল রাজনৈতিক ধারণাগুলোতে একমত নাই। যেটুকু গত ৭৫ বছরে তোইরি হয়েছিল তা সংকীর্ণ রাষ্ট্রস্বার্থে আমেরিকা অপব্যবহার করাতে সবকিছু এখন অন্ধকারে। সারকথায় পুরান ওস্তাদের অথরিটি দুর্বল এমনকি চ্যালেঞ্জড হয়ে যাচ্ছে অথচ ভিত্তিমূলক গ্লোবাল রাজনৈতিক ধারণাগুলোতে যেটুকু ঐক্যমত্য ছিল তাই ভেঙ্গে পড়তেছে। ইউক্রেন নিয়ে হুঙ্কার পালটা হুঙ্কার এর প্রমাণ। তবে আমাদের প্রসঙ্গ বাইডেনের অবরোধ আরোপ।
বাইডেন বাংলাদেশের উপর অবরোধ আরোপ করেছেন। আর এটা ২০০৭ নয়, ২০২১ সাল। যখন আমেরিকার গ্লোবাল কর্তৃত্ব ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে গেছে; অর্থাৎ সিংহ এবার আরও বুড়া ও বেশি উত্থান-রহিত হয়ে গেছে। অথচ বাইডেন সেদিকটা আমল না করে উলটা বুড়া সিংহ আমেরিকাকে ওভার স্ট্রেস মানে আরও ভারের বোঝা চাপিয়ে দিলেন এই অবরোধ আরোপ করে। আর তাতে এটা মোটেই অসম্ভব নয় যে এতে বুড়া সিংহের ঘারে সবকিছু হুরমুর করে ভেঙ্গেচুড়ে পড়ল। ফলাফল আরো এক গভীর নিম্নচাপ!
উপরে এসব কথার অর্থ আবার কোনমতেই এটা নয় যে এখানে আমাদের সরকার সেফ থাকবে এমন কোন ইঙ্গিত দিচ্ছি। সেটা নয় তবে বহুকিছুই অনিশ্চিত বলছি ফলে স্বভাবতই এর মধ্যে সরকারের টিকে যাওয়াটাও অনিশ্চয়তা থেকে বাইরে থাকবে কী করে! মোট কথা যাদের হাতে যা কিছু নিয়ন্ত্রিত থাকতে দেখতে অভ্যস্ত ছিলাম সেসব সম্ভবত আর তেমন থাকছে না। ফলে সবার আগে ভেঙ্গে পড়তে যাচ্ছে পুরাতন ভারসাম্যটা।
তবে একটা সারকথা একেবারে আঙুলে গুনে আমরা মনে রাখতে পারি যে, এবারের কথিত “ডেমোক্রেসি সামিট” বা সেখান থেকে ঘোষিত অবরোধের নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশের পর থেকে দুনিয়াটা আর আগের মত নাই, আগের জায়গায় তা আর স্থির নাই হয়ে গেছে। যদিও ক্রমশ ঘটনা গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন ঘটনায় সেদিকেই যাচ্ছিল। তাতে বাইডেনের সামিট আর নিষেধাজ্ঞা হল এসবের ‘ফাইনাল এলার্ম’ বাজানো।
কিন্তু মজার কথাটা হল যদি প্রশ্ন জাগে বাইডেন কী জানতেন যে তিনি একটা “ফাইনাল এলার্ম” বাজিয়ে দিচ্ছেন! এর জবাবটা হবে খুব সম্ভবত না। তিনি বরং আমেরিকান সক্ষমতা আগের মত আছে মনে করে স্বাভাবিক মনে করেই একাজ করেছেন। হয়ত এখন ক্রমশ বুঝতেছেন বা বুঝবেন। এর একটা লক্ষণ হল থিঙ্কট্যাংক ফেলো কুগেলম্যান এর মন্তব্য যেটা প্রথম আলোতে অনুবাদে ছাপা হয়েছে। আর যার শিরোনাম “এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য খারাপও হতে পারে”। অর্থাৎ তিনি আমেরিকার জন্য খারাপ কথাগুলো সবটা উচ্চারণ করলেন না। কেবল কিছু ইঙ্গিত দিলেন।
দুনিয়ার পুরানা পোলারাইজেশন ভেঙ্গে গেছেঃ
আসলে আমাদের বেশির ভাগের অলক্ষ্যেই দুনিয়ার পুরানা পোলারাইজেশন ভেঙ্গে গেছে। পোলারাইজেশন বা বাংলায় মেরুকরণ মানে কে কার দলে বা পক্ষে; সেই পক্ষা-পক্ষির ব্যাপারটা বাইডেনের সামিট আর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগে যেভাবে সাজানো থেকে কাজ করত তা ভেঙ্গে গেছে। যেমন ভারতের কথাই যদি ধরি, বাইডেনের সামিট আর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগের দিনে, ভারত আমেরিকার খুবই ঘনিষ্ট একথা মানতে কারও অসুবিধা হত না। এমনকি অকাসের না হোক অন্তত কোয়াডের প্রসঙ্গ উঠলে ভারত অবশ্যই চীনবিরোধী প্রথম সারির আমেরিকা ঘনিষ্ট, তা বলা যেত। কিন্তু এখন এটা পুরাটাই আবছা অস্পষ্ট! কিন্তু এটাকে “বদলে গেছে” না বলে ভেঙ্গে গেছে বললাম কেন? বললাম এজন্য যে ভাঙ্গার পরে এটা এখন কোনদিকে যাবে থিতু হবে সেই নিশ্চয়তা এখানে এখনও নাই। এজন্যই বলছি পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত।
যেমন এখন দশাটা এমন যে না চাইতেও একটা আপনাআপনি বা অবজেকটিভ পোলারাইজেশন এখানে তৈরি হয়ে আছে। তা হল, কে কে এখন বাইডেনের ‘ডেমোক্রেসি সামিট’ বা কথিত গণতন্ত্রের ছড়ি ঘুরানোর পক্ষে আর কে নয়। তাতে একেবারেই একা বাইডেন একদিকে এমনকি ইউরোপও সেখানে বাইডেনের সাথে নয়, সম্ভবত এর মধ্যে বিপদ আঁচ করে দূরে থাকতে চাইছে। আর অন্যদিকে, শুধু চীন না, এখনকার গুরুত্বপুর্ণরা হল রাশিয়া, চীন এবং ভারত ইত্যাদি। হা ভারত! এবং এই নব সংযোজন ভারত এটা ১৩৫ কোটির দেশ তবে মোদির ভারত। অথচ গত টানা বিশ বছর ধরে আগে কখনও দেখা যায় নাই এমনভাবে আমেরিকা-ভারত গাঁটছাড়া বেধে চলে আসছিল। সবাই এটাই জানত তারা ঘনিষ্ট বন্ধু – যেহেতু ভারত আমেরিকার চীন ঠেকানো [containment] এর বন্ধু অতএব এই সম্পর্ক এক লম্বা পথ হাটবে; অবশ্যই সহসা ভাঙবে না। এটাই ছিল সবার অনুমান!
কিন্তু না। সবাইকে হতাশ করে দিয়ে এবার এক পুরান সত্যঃ রাষ্ট্র মানেই তা কেবল একান্তই নিজ নিজ স্বার্থ – সে কথাটাই ভেসে সামনে এলো। সেকথার ভাষ্যটা অনেকে এভাবে ঠাট্টা করে বলছেন, ভারত ‘বাবা’ বদলিয়েছে। আমেরিকার বদলে ভারতের বাবা এখন রাশিয়া। গত সপ্তাহে ৬ ডিসেম্বর রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন ভারত সফরে এসেছিলেন। আর সেটাকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় প্রচন্ড হাইপ তুলে প্রপাগান্ডা করেছে [এটা নাকি ডিফাইনিং মোমেন্ট] যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের নজরে পরে এই এলান। স্বভাবতই এর প্রধান টার্গেট শ্রোতা হোক বাইডেনের আমেরিকা এই ছিল ভারতের আকাঙ্খা! আর এসব প্রচন্ড হাইপ তোলা এটাকেই অনেকে ভারতের বাবা বদল বলছেন!
এমনিতেই বাইডেনের প্রেসিডেন্ট জিতে যাওয়া মোদির জন্য কাম্য ছিল না। তা অপ্রকাশ্য ছিল না। মূল কারণ, বাইডেন নিজ নির্বাচনের এক ক্যাম্পেইন-করণীয় বানিয়েছিলেন কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুকে। বলেছিলেন তিনি এই ইস্যুতে প্রশ্ন তুলবেন। তাই মোদির দিক থেকে তার অপছন্দের কিছুই লুকানো ছিল না বা ক্ষমতায় এলে পরে দেখা যাবে – এমন ইস্যু ছিল না। তাই মোদি নিজ অবস্থান ভেবে রেখেছিলেন যে বাইডেনের কাছাকাছি মুখোমুখি না হবার বা এড়িয়ে চলার। আর কামনা করতেন, চীন-আমেরিকার ট্রেড সংঘাত তীব্র হোক যাতে কাস্মীর ইস্যু নিয়ে তিনি এর আড়ালে প্রথম দুয়েক বছর কাটাতে পারেন। কিন্তু এমন কামনা পূরণ করনে-ওয়ালার কাছে ভিত্তি পায় নাই।
অন্যদিকে আরও জটিল সমস্যা। বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা মানে নাগরিকের ধর্মপালনের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হলে তা বিস্তারে নোট করা আর তা নিয়ে মামলা সাজানোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমেরিকায় এক স্বাধীন কমিশন আছে। যারা আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কাছে বার্ষিক রিপোর্ট পাঠায়। এর নাম USCIRF (United States Commission on International Religious Freedom)।
ভারত সম্পর্কে এই প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট খুবই খারাপ। এমন খারাপদেরকে তারা সিপিসি ক্যাটাগরিতে ফেলে চিহ্নিত করে থাকে। “কান্টি অফ পার্টিকুলার কনগার্ণ (CPC) বা “বিশেষ উদ্বেগজনক দেশ’ এই ক্যাটাগরিতে। ভারতে মুসলমানদের উপরে নিপীড়ন প্রশ্নে ভারত এখন সিপিসি তালিকার দেশ। গত কয়েকমাসে মোদির সরকারের উপর এবার যুক্ত হয়েছে চার্চেও হামলার অভিযোগ।
অতএব এ’দুই উদ্বেগের বিচারে বাইডেনের কথিত “ডেমোক্রেসি সামিট” এর দিন যত ঘনায়ে আসছিল তাতে বাইডেন এবার ভারতের উপর কোন অবরোধ আরোপ দিতে পারে এই ছিল মোদি সরকারের অনুমান। কারণ ২০২১ সালের সিপিসি রিপোর্টে এটাই সুপারিশ করা ছিল। যেটা ট্রাম্পের আমল থেকেই এমন রিপোর্টগুলো উপেক্ষা করে চলছিল। আবার মোদির দিক থেকে দেখলে এই ধর্মীয় নিপীড়নই তার শেষ ভরসা। মোদির ধারণা আগামি বছর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে তাতে পাবলিক রেটিং খারাপ অবস্থাতেও তার জিতে আসবার একমাত্র উপায়। ফর্মুলা সেই পুরানা; গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীত্বের আমল থেকে গত আট বছরের মোদির প্রধানমন্ত্রীত্ব পর্যন্ত যে – যত মুসলমান নিপীড়ন ততই ভোটার পোলারাইজেশন এবং ততই বেশির ভাগ হিন্দুভোটার মোদির দলের বাক্সে। এই অনুমানে যে মোদি হল বাঘের বাচ্চা যে অন্য ধর্মের লোকেদের দাবড়িয়ে বেড়াতে সক্ষম; “হিন্দুধর্মই শ্রেষ্ঠ যা ধরে রাখার নায়ক মোদি”! কাজেই মোদির পক্ষে মুসলমান কোপানো একটু আপাতত কমানোও অসম্ভব! কাজেই মোদির পক্ষে বাইডেনের অবরোধ নিয়ে ভাববার সুযোগ নাই।
আবার অবরোধের ঘটনার এখানেই শেষ নয়। আরো আছে। অন্যের (আমেরিকান) বোমারু বিমান ঠেকানোর মিসাইল রাশিয়ার তৈরি S-400 । কিন্তু এই মিসাইল ক্রয়কারি রাষ্ট্রকে ঠেকাতে বা এক ধরণের অপরাধী বলে চিহ্নিত করার আইন আমেরিকা সাজিয়েছে যার নাম (Countering America’s Adversaries Through Sanctions Act, CAATSA) । অর্থাৎ যে রাশিয়ান এই মিশাইল কিনবে সে আমেরিকার ঘোষিত শত্রু হবে তাই তার উপর আমেরিকান অবরোধ আরোপ করা হবে। ভারতের এমন ক্রয়াদেশের পাবার পরে রাশিয়ান মিসাইল পাঠানো রাশিয়া শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এখনও বাইডেন অবরোধ দিবেন নাকি ভারতকে এই আইন থেকে ছাড় দিবেন এসবের কোনটাই এখনও ঘোষণা করেন নাই। অর্থাৎ সব এখনও বকেয়া বা পেন্ডিং হয়ে পড়ে আছে।
এবার বাস্তবে কী ঘটেছে? এরই মধ্যে এবার বাইডেনের ডেমোক্রেসি সামিটে ভারত গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় দাওয়াত প্রাপ্ত দল ছিল। কিন্তু ঐ সামিট থেকে যেসব দেশের উপর অবরোধ আরোপ করা হয়েছে সে তালিকায় ভারত নাই। এককথায় ভারতের উপরে আমেরিকার কোন অবরোধই আরোপ করা হয় নাই।
আসলে এর মানে, উলটা বাইডেনই মোদির ভারতের হাতে বাঘবন্দি হয়ে গেছেন যেন। কেন এমন হল?
কারণ মোদির উলটা চাল, তিনি পুতিনকে ভারতে ডেকে এনেছেন, প্রতিরক্ষা বিষয়ক নানা কথা আর সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জয়েন্ট ভেনচার নিয়ে আলাপ করেছেন। আর তাতেই বাইডেনের যেন বলতি বন্ধ! ভারত এরপরে আর বাইডেনের চীন ঠেকানোর কাজে নাই লাগুক তবু ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার ভারতীয় বাজার যার লোভ দেখিয়ে ভারত সবসময় তার অপনেন্টকে এভাবেই শায়েস্তা করেছে। এটাই আরেকবার প্রমাণ করেছে যে পচাত্তর বছর আগের যে আমেরিকা ছিল, বাইডেনের আমেরিকা সেটা আর নয়। বাইডেনের আমেরিকাই উলটা ভারতের কাছে কেঁচো হয়েছে – নত হয়েছে, অকেজো হয়ে গেছে। অন্তত এখন আমরা এটাই দেখছি!
তাই বাইডেন ভারতকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সার্টিফিকেট দিয়ে দাওয়াত করেছেন আর যত পেন্ডিং অবরোধ-করার কথা ছিল এর একটাও প্রকাশ করতে পারেন নাই উলটা সবগুলোকে নিজের মুখের মধ্যে আটকে রেখে তা নিজেকেই গিলে খেতে হয়েছে – এটা কোন আমেরিকা???
ফলাফল কী? এর নেতি ফলাফলও আছে। আগে হলে আমেরিকান চাপে মোদির ভারত ইসলামবিদ্বেষ কিছুটা আড়াল করে হয়ত সরাসরি ইসলাম কোপানো অন্তত কিছুদিন বন্ধ রাখত। যেমন বেশিদিন আগের কথা নয়। মোদির ক্ষমতায় আসার পরের বছর (২০১৫) ওবামা ভারত সফরে এসে (সেসময় মুসলমান ও খ্রীশ্চান নিপীড়ন, চার্চে হামলা শুরু হয়েছিল) মোদিকে চাপ দেওয়াতে শেষে মোদি বিজেপির নীতি-রাজনীতি আর তার সরকারের নীতি আলাদা বলে ঘোষণা করেছিলেন। সরকারের নীতি হিসাবে সব ধর্মাবলম্বির ধর্মপালনের স্বাধীনতাকে মোদি স্বীকার করে প্রটেক করার দায় কবুল নিয়েছিলেন। দিল্লির এক চার্চের বার্ষিক অনুষ্ঠানে গিয়ে এসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। [আগ্রহিরা এই প্রসঙ্গে আরো বিস্তারিত জানতে আমার পুরামা ২০১৫ সালের মে মাসের এই আর্টিকেলটা পড়তে পারেন। ওখানে সেকালে চার্চের অনুষ্ঠানে দেয়া মোদির ভাষণটাও সংযোজিত আছে।] অথচ এবার উলটা, ভারতই বাইডেনকে চ্যালেঞ্জ করে গেল! আমেরিকা কিভাবে ক্রমশ কর্তৃত্ব হারাচ্ছে এর এক জলজ্যান্ত প্রমাণ এটা।
রাজনাথের কারিগরিঃ
এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের ৫০ বছর স্মরণে এক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল, সেখানে ছিলেন। এতদিন এধরণের অনুষ্ঠানে ভারত বড়জোর দাবি করত যে তারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। কিন্তু এবার তিনি দাবি করেন ভারত বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে। আবার দেখা যাচ্ছে, ভারতের এক নামী সম্পাদক- কলামিস্ট লিখেছেন বাংলাদেশে আমেরিকান অবরোধে ভারতের নিশ্চুপ থাকার বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে অনেকেরই অনুমান-কল্পনা হল আবার কী তাহলে আমেরিকার হাত থেকে প্রটেকশন পেতে বা হুজুর ধরতে মোদী-হাসিনা গভীর সম্পর্ক হতে যাচ্ছে, তাই কী ?
দিন সবসময় একরকম থাকে না। না, এটা এখন বাস্তবতাতেই অসম্ভব। ভারতের সাথে হাসিনা সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের কথা অবশ্যই আমরা কেউ বলছি না। ফলে কথাটা হচ্ছে রুটিন কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যের। এমন রুটিন সম্পর্কের (আমরা ১৯৭১ সালে এটা সেটা ছিলাম টাইপের) বাইরে অন্য কোনদিকে এখন আর আগাবার সম্ভাবনা নাই। আর এদিকে হাসিনা সরকার কখনও যদি ফেল না করে তাহলে চীনের সাথে তার সম্পর্ক একটুও ঢিলা হবার কোন সম্ভাবনা নাই।
তবে সরকারের জন্য এখনকার চ্যালেঞ্জ হল – অবরোধ আরোপের ফলে আমলা আর দলীয় কর্মি-নেতাদের যাদের সক্রিয়তা সরকার টিকাতে ম্যাটার করে এদের মনোবল নিঃসন্দেহে চাপ খাবে – সেটা কতদুর সামলাতে পারে তা দেখতে হবে। অবরোধের পাল্লায় পড়া যাবে না যা “অর্জন” তা সামলাতে হবে – তাদের এই পালাই পালাই মনোভাব ডমিনেট করবে। সরকারের পাবলিক রেটিং থাকলেই একমাত্র যা দিয়ে এমন চাপ মোকাবিলা সহজেই সম্ভব হত হয়ত।
আপাতত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে!