নেতাজীকে নিয়ে মোদি-মমতার বিবাদে


নেতাজীকে নিয়ে মোদি-মমতার বিবাদে

গৌতম দাস  ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০৬

https://wp.me/p1sCvy-3TZ

 

[সার-সংক্ষেপঃ রাজনৈতিক আন্দোলনে সশস্ত্র ধারায় অথবা নিরস্ত্র গণ-আন্দোলনের ধারা হতে পারে।  কিন্তু সশস্ত্র ধারা হলেই সেটাকে উচ্চমার্গের আন্দোলন মনে করা অর্থহীন ও ভুল মাপকাঠির জ্ঞান। এর উপর যদি সে সশস্ত্রতা আবার হিটলারের ধারার যুদ্ধের ক্যাম্পের সাথে যুক্ত হয়ে করার চেষ্টা হয় অর্থাৎ যার অর্থ হল স্বাধীনতা বা ‘ফ্রিডম’ নিয়ে কথা বলা অথচ রাজনীতির ঠিক নাই। কী রাষ্ট্র তারা গড়বে সেটাও শেখানে বেখবর-ই থাকে! ভারতের নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ঠিক এরই প্রতীক।  তিনি জাপানের সামরিক সহায়তায় বৃটিশ শাসন উচ্ছেদ করতে মন-কামনা করেছিলেন যা ব্যর্থ হয়।  ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি এদেরও হিটলারের আদর্শী ও অনুসারী। আরএসএস লেবেলে হিটলারের কাজ-ততপরতা নিয়ে তাদের উচ্ছাসমূলক অবস্থান দেখা যায়। কারণ তারা চরম জাতিবাদি – এথনিক ক্লিনজিং বা এথনিক জাতিকে নির্মুল করা জায়েজ মনে করার রাজনীতি করে। যদিও এখানে আমরা দেখব, ভারতের মোদি ও মমতা দুই রাজনীতি করলেও একই ‘নেতাজীকে’ দখল নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে তারা লড়ছে।]

          Taiwan offers to open national archive to ‘rediscover legacy’ of Netaji Subhas Chandra Bose

সুভাষচন্দ্র বসু (১৮৯৭-১৯৪৫) [Subhas Chandra Bose], বৃটিশ আমলে কলকাতার বাঙালি রাজনীতিবিদ এবং একসময়ে কংগ্রেসের সভাপতি;  যাকে কথিত পাবলিকের দেয়া খেতাব-নাম হল ‘নেতাজী’।  এখনকার কলকাতায় তাকে মূলত নেতাজী নামেই সবাই ডাকে ও পরিচিত।
এই নেতাজী কিভাবে তিনি মারা গেছেন তা অবিশ্বাস করে এনিয়ে তাঁর কথিত “অন্তর্ধান রহস্য” বলে আলোচনা সেই পঞ্চাশের দশক থেকে প্রায়ই উঠেছে। কিন্তু একালে তৃণমূল কংগ্রেস দলের নেতা মমতা ব্যানার্জি এই নেতাজী ইস্যুকে মোদির বিরুদ্ধে মানে আরএসএস-বিজেপির হিন্দি-বলয়ের আক্রমণের বিরুদ্ধে একটা বড় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছেন। আর  কলকাতা বিজেপিকে কোণঠাসা করতে এটাকে হাতিয়ার করেছেন। কলকাতা বলতে এখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রতীক হিসাবে দেখে বলা হচ্ছে এবং এই কলকাতা যা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানীও বটে।
যদিও মমতার মূল তর্ক এখানে আসলে  – কলকাতা কী আরএসএস-বিজেপির হিন্দুত্ববাদের হিন্দু-বাঙালি অংশ? নাকি কলকাতার নেতা নেতাজীর বাঙালি, এই বাঙালি-হিন্দু এরা আলাদা এথনিক জাতি এবং এরা রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদের কোন অংশই নয়? এই তর্ক সামনে এনেই হিন্দুত্ব পরিচয়ের বাইরে হিন্দিবিরোধী বাঙালি-হিন্দু জাতিবাদের জোয়ার পশ্চিমবঙ্গে সফলভাবে তুলতে পেরেছিলেন তৃণমুল দলের সভাপতি মমতা বন্দোপাধ্যায়। আর তা পেরেছিলেন বলেই গত ২০২১ সালের রাজ্য নির্বাচনে বিজেপি-মোদিকে ঠেকিয়ে দিয়ে বিপুল বিজয়ী হয় তৃণমুল এবং তা থেকে তৃণমূলের মমতা এখন ক্রমেই মোদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ফিগার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। সম্প্রতি এক জনমত জরিপ সমীক্ষাতে মমতা কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর চেয়েও পপুলার রেটিংয়ে এগিয়ে থাকা নেতা এবং মোদির প্রতিদ্বন্দ্বি কেন্দ্রীয় রাজনীতিবিদ। ওই রিপোর্ট লিখেছে– “১৭ শতাংশ মানুষ বিরোধী দলের প্রধান মুখ হিসেবে দেখছেন মমতাকে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দেখছেন ১১ শতাংশ”। কাজেই নেতাজী হলেন কলকাতার বাঙালি-হিন্দুর নেতা, আর হিন্দি-বলয়ের যারা এই নেতাজীকে নেতা মানে না তারাই বিজেপি – এই হল মমতার ডিফারেন্সিয়াল পয়েন্ট। আর মমতার এই “ভাগ দেখানো” বয়ানের সামনে কলকাতা বিজেপি পুরাপুরি অপ্রস্তুত ও বোকা! মূলত নেতাজী সুভাষকে নিয়ে তারা দ্বিধাগ্রস্ত; ছুড়ে ফেলবেন নাকি কোলে তুলে নিবেন তা জানেন না! কারণ এনিয়ে তাদের কেন্দ্রীয় বিজেপির থেকে কোনো দিকনির্দেশনা তারা কখনো পায়নি, সে রকম কোন ইঙ্গিত অবস্থানই নাই।

ইন্ডিয়া টুডের জানুয়ারি সংখ্যার ‘মুড অফ দ্য নেশন’ সমীক্ষায় এই চিত্র ফুটে উঠেছে। সমীক্ষায় যোগ দেওয়া ১৭ শতাংশ মানুষ বিরোধী দলের প্রধান মুখ হিসেবে দেখছেন মমতাকে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিকে দেখছেন ১১ শতাংশ মানুষ।

এখন বিজেপি তার হিন্দুত্বের চোখে দেখা ভারতের নেতাজীকে কোনো নেতা মানবে কী? এর উত্তর দেয়া ছাড়া কলকাতা বিজেপিকে কলকাতার-বাংলায় “বাইরের লোক” হিসেবেই থাকতে হবে। মমতার এই ইঙ্গিতপূর্ণ বয়ান এজন্য মোদির জন্যও কণ্টকময়!

গত তিন বছরে এনিয়ে বহু ধাক্কা খাবার পরে মোদি তাই এবার ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছেন। তিনি মমতার চ্যালেঞ্জের মুখে নিজে বাঁচতে নেতাজীকে ‘আপন” করে নেয়ার সিদ্ধান্ত-পরিকল্পনা এঁটে নিয়েছেন। গত ২৩ জানুয়ারি ছিল নেতাজী সুভাষের জন্মদিন। মোদি  ঐদিন দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে নেতাজীর হলোগ্রাম মূর্তির উদ্বোধন করেছেন। অর্থাৎ মোদিও এবার প্রতিযোগিতায় নেমে  মমতার কাছে নেতাজীর শেয়ার নিতে চাইছেন! কিন্তু এই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু কে; কী তাঁর রাজনীতি?

নেতাজী সুভাষের রাজনৈতিক জীবনঃ
জওয়াহেরলাল নেহরু নেতাজীর চেয়ে বয়সে কিছুটা বড় হলেও নেহরুর আগেই নেতাজী কংগ্রেস দলের সভাপতি হয়েছিলেন ১৯৩৮-৩৯ সালের সময়কালে। নেতাজী পড়াশোনা শেষে লন্ডন থেকে ফিরে ১৯২১ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে গান্ধীর কংগ্রেস দলে যোগ দিয়েছিলেন। যখন মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর বয়স ৫১ বছর। আর তখন নেতাজীর রাজনৈতিক গুরু বা মেন্টর [mentor] ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস। এই চিত্তরঞ্জন দাস ছিলেন কলকাতার মেয়র, নামকরা ব্যারিস্টার আর এছাড়া কিছুটা আগ্রাসী জাতিবাদী। কিন্তু পরবর্তীতে গান্ধী আর নেতাজীর মধ্যে প্রায় প্রতিনিয়ত বড় রাজনৈতিক মতপার্থক্য দেখা দিতে শুরু করেছিল। তাদের মূল মতপার্থক্যকে ব্যাখ্যা করা যায় সম্ভবত এভাবে যে, গান্ধী রাজনৈতিক গণ-আন্দোলন করবেন, কিন্তু অহিংসভাবে। আর এর বিপরীতে সুভাষও রাজনৈতিক গণ-আন্দোলন করবেন কিন্তু রাজনৈতিক বলপ্রয়োগে, যতটা পরিস্থিতি অনুমোদন করে এবং সময় সুযোগ হলে সশস্ত্রভাবেও। গান্ধীর রাজনৈতিক চিন্তার চেয়ে সুভাষের রাজনীতি অনেক রেডিক্যাল এভাবেও সম্ভবত বলা যায়।
এথেকে দীর্ঘ সময় দলের অভ্যন্তরীণ লড়াই সঙ্ঘাতে গান্ধী নেতাজীকে কোণায় বা আড়ালে ফেলে রাখার চেষ্টা করে গেছেন। আর এসবের পরিণতিতে নেতাজী দ্বিতীয়বার কংগ্রেস দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৩৯ সালে ঠিকই কিন্তু গান্ধীর প্রবল বিরোধিতায় গ্রুপিংয়ের চাপে বেশি দিন টিকতে পারেননি; একপর্যায়ে সভাপতির পদ তিনি ত্যাগ করেন। এরই  আরেক পর্যায়ে ইনি কংগ্রেস দলও ত্যাগ করেন। পরে ঐ ১৯৩৯ সালেই তিনি ‘ফরওয়ার্ড ব্লক” নামে নতুন দল গড়েন। কিন্তু ওই বছরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি বৃটিশদের বিরোধী জোটপক্ষ হিটলারের জার্মানি-জাপান জোটের সাথে বিশেষ করে জাপানের সহযোগিতায় ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র যুদ্ধের লড়াইয়ে নামেন। যদিও খুব বড় কোনো সফলতার ঘটনা সেটা ছিল না। এদিকে বিশ্বযুদ্ধ প্রায় শেষের কালে ১৯৪৫ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে বিধ্বস্থ বিমান থেকে তার শরীর আগুনে ঝলসে যায়। পরে এখনকার তাইওয়ান যার এক অংশ সেকালে জাপান কলোনি ছিল, সেখানকার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার সমর্থকরা তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে “রহস্যজনক” বিমান হামলায় নিখোঁজ হয়ে যান ধরনের এক ফ্যান্টাসির বর্ণনায় বিশ্বাস করেন। এটাই তাদের চোখে নেতাজীর কথিত “অন্তর্ধান রহস্য”!  এই হল একেবারে সারাংশে সুভাষের জীবনী।

কলকাতার বীর নেতাজীঃ
কিন্তু সেই থেকে কলকাতায় ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসন প্রত্যাহার ও কলোনি প্রশাসন গুটিয়ে চলে যাবার পরে বিশেষত কংগ্রেসবিরোধী মহলে নেতাজীকে এক বীর বানানোর তৎপরতা দেখা যায়। তারা নতুন করে গান্ধীর কংগ্রেসবিরোধী হয়ে নয়া বয়ান খাড়া করতে তৎপর হন। মূলত তরুণ ও পেটি মধ্যবিত্ত মহলে যা কথিত ‘অন্তর্ধান রহস্য’ এমন ‘রহস্যময়’; তাই নিশ্চয় আরো অনেক কিছু অজানা এ’ধরনের প্রপাগান্ডা যেটা সারবত্তায় এক গভীর কিন্তু ফাঁপা আবেগ তৈরি হয়েছিল। যদিও গান্ধী-নেহেরুরা বাংলার নেতাজীকে জায়গা দেয় নাই, মুল্যায়ন করে নাই ধরণের বঞ্চিতবোধ থেকে অভিমান গোসসা কলকাতায় সেই থেকে সবকালেই বেশ  সরব। বিশেষত তরুণদের আক্ষেপ হল, তাদের ভারত ‘স্বাধীন’ হয়েছে তারা জানছে; ‘স্বরাজ’ বা কথিত ব্রিটিশবিরোধী “স্বাধীনতার আন্দোলন” হয়েছে তাদের জানানো হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে এটা তো টেবিলে বসে আপস আলোচনায় স্বাধীনতা পাওয়া বলেই তারা দেখছে। তাই এতে জোশ নাই!!!

আর তাই  উত্তেজনাহীন স্বাধীনতা আন্দোলনের ঘটনা-বর্ণনার বিপরীতে এর বিরুদ্ধে তাদের সুভাষ বা নেতাজী (কলকাতায় তার সমর্থকদের দেয়া নাম) হলেন তাদের আসল সশস্ত্র যোদ্ধা – এই হল সেই বয়ান। আর যেহেতু হিন্দু-বলয়ে ভারতের প্রথম প্রতিভূ হল কংগ্রেস আর এর নেতা নেহেরু-গান্ধী যারা কলকাতার নেতাজীকে কোণঠাসা করেছিলেন, কাজেই কলকাতা বাঙালি-জাতিবাদের নেতা হিসেবে মমতা মোদিকেও দায়ী ও বিজেপিও  বাংলায়  বহিরাগত – এই ইঙ্গিত খাড়া করে চলছিলেন। আর সেটাই এবার মোদি সংশোধিত করে নিলেন।

নেতাজীকে আমরা কী চোখে দেখবঃ
প্রথমত কলকাতা শুরু (১৭৮৯) থেকেই আমাদেরকে গোনায় না ধরা আলাদা ভেবে এসেছে। বিশেষত পুর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ট জনগোষ্ঠি মুসলমান এরা আদৌ বাঙালি কিনা  বা বাঙালির অংশ কিনা এসব প্রশ্ন তুলেছে। তবে আমরা অবশ্যই সেকালের হিসেবে পূর্ববঙ্গ বা একালের বাংলাদেশের লোক। আমরা আমাদের মতই অবশ্যই বাঙালি, রক্ত দিয়ে স্বাধীন করে বাংলাদেশ পেয়েছি। তাহলে এখন আমরা কলকাতার ‘নেতাজী’কে কিভাবে দেখব? তৃণমূলের মমতার চোখে? নাকি কোনো প্রগতিবাদী চোখে?  এর জবাব হল – বস্তুতঃ  দুটোর কোনোটাই না। আসলে আমাদের চোখ মানে দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থ আলাদা হয়ে গেছে বহু আগে থেকেই।

সে স্বার্থ দিয়ে চিনতে চাইলে – বাংলাদেশের মূল স্বার্থ হল, জমিদারি মালিকানা ব্যবস্থার উচ্ছেদ, তাই বরাবর সেকালের জমিদারি ব্যবস্থা ও শাসনের বিরোধিতা ছিলাম এবং তা করে গেছি আমরা। ফলে এই সূত্রে জমিদার হিন্দুরা যে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপর মুসলমানবিরোধী ও বিদ্বেষী আধিপত্য কায়েম করে নিয়েছিল; আর মুসলমানরা বাঙালি নয় বা বাঙালি স্বীকার করত না, আজও সেসবের কালচারাল প্রভাব ও জের অনেক ক্ষেত্রেই বর্তমান দেখা যায়। সেই থেকে মুসলমানবিদ্বেষের প্রচলন শুরু হয়েছিল; যে কারণে আজও প্রগতিবাদ ও মুসলমানবিদ্বেষ প্রায় সমার্থক!
তাই আমরা দেখেছিলাম, আমাদের পূর্ববঙ্গ বা একালের বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১৯৪৭ সালে একমাত্র বাংলার ভাগ হওয়াই ছিল আমাদের স্বার্থ। কারণ বাংলা ভাগ ছাড়া জমিদারি মালিকানা ব্যবস্থার উচ্ছেদ সম্ভব ছিল না। তাই বাংলা ভাগ মানেই হয়ে যায়, সেকালের পূর্ববঙ্গ বা একালের বাংলাদেশের স্বার্থ।

এর বাইরে আমাদের জন্য অন্য কোন অপশন খোলা ছিল না। তাই ১৯০৫ অথবা ১৯৪৭ সালে দু’বারই যারাই বাংলা ভাগের বিরোধিতা করেছে দেখা গেছে তারা জমিদার হিন্দুস্বার্থের লোক; প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ তাদের স্বার্থের লোক। এজন্য আমাদের স্বার্থ কী তা বুঝবার সোজা ফর্মুলা হল, যারাই ১৯০৫ অথবা ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগের বিরোধিতা করেছে এরাই আমাদের বিরোধী জমিদার-হিন্দু স্বার্থের লোক, আর এরাই প্রগতিশীল। আর প্রগতিশীলতাই তো শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ নিয়ে আন্দোলন পর্যন্ত আমাদের বিরক্ত করে চলেছে, পিছু ছাড়েনি। যেমন দেখেন, ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন; অতএব বাস্তব ভিসির মুখে দাড়ি থাক আর না থাক ভিসি-ব্যঙ্গ করা ছবিতে ভিসির মুখে মুসলমানি দাড়ি লাগিয়ে তারা দিবেই! আর ভিসি অবশ্যই এবার ‘তালেবান’ হয়ে যাবেন! কারণ তাদের ভিসি তো কথিত ‘প্রগতিশীলতা’র বিরোধিতা করেছেন!
তা হলে এত কথার সাথে এখানকার প্রসঙ্গ নেতাজী সুভাষের সম্পর্ক কী? প্রথমত, একটা রেফারেন্স জানিয়ে রাখি। গত ২০১৯ সালের আমার একটা লেখার শিরোনাম ছিল- কলকাতার ‘নেতাজী’ কেন বাংলাদেশের কেউ না“। অর্থাৎ আমাদের অবস্থানটা কী, এর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এখন দরকার এর একটা আপডেট জানা।

পুর্ববঙ্গের স্বার্থে নেতাজী কখনও অবস্থান দেখান নাইঃ
এটা ঠিক নেতাজীকে পুর্ববঙ্গের স্বার্থের পক্ষে কখনও অবস্থান দেখাতে হয় নাই। একটা সুবিধা তিনি পেয়েছিলেন।  আসলে নেতাজী রাজনীতিতে এসেছিলেন ১৯২১ সালে, অর্থাৎ ১৯০৫ সালে তিনি রাজনীতিতে কেউ নন, মাত্র আট বছর বয়সী তিনি। আবার কার্যত ১৯৩৯ থেকেই তিনি মূলধারা রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন বা দূরে। আর ১৯৪৭ সালের দেশ বা বাংলাভাগের আগেই মানে ১৯৪৫ সালেই তিনি মৃত। এ ছাড়া পূর্ববঙ্গের কোনো সময়ে কোনো ইস্যুতে পক্ষ-বিপক্ষে  কোনো অবস্থান তার ছিল কী, জানা যায় না। তা হলে কী দিয়ে তাকে সুনির্দিষ্টভাবে বিচার মূল্যায়ন করতে পারি?
তার জাপানের সহায়তা নিয়ে সশস্ত্র লড়াইয়ের তাৎপর্য কী? প্রথমত ব্রিটিশবিরোধী তার সশস্ত্র তৎপরতা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা ছিল না, হয়ে উঠতে পারে নাই। প্রশ্নটা আর একটু এগিয়ে স্বচ্ছ করে করতে পারি এভাবে যে, ব্রিটিশ শাসকরা কলোনি ভারত ত্যাগ করে চলে যাওয়ার পেছনে নেতাজীর গঠিত সেনাবাহিনী ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর তেমন কোনো অবদানই নেই, ছিল না।

মূলত ঘটনা হিসেবে জাপানের সহায়তায় নেতাজীর ব্রিটিশ-ভারতের সশস্ত্র বিরোধিতা ছিল খুবই সীমিত। সেই আক্রমণ ছিল ভারতের নর্থ-ইস্টের এখনকার রাজ্য নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমায়; ব্রিটিশ-ভারতের কোহিমা সীমান্তে এক-দুইটা বর্ডার-পোস্টে আক্রমণ মাত্র। যা ঘটনা হিসেবে খুবই নগণ্য, যেখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমি দখলের কথাও জানা যায় না। তাহলে?

বৃটিশ কলোনি-শাসকেরা কখনও কলোনির নিয়ন্ত্রণ হারান নাইঃ
এবার সাধারণভাবে বলা যাক। ভারতে ব্রিটিশ শাসন ছিল মোট প্রায় ২০০ বছর (১৭৫৭-১৯৪৭)। এসময়ের মধ্যে কখনই কলোনি শাসকরা নিয়ন্ত্রণ হারায়নি। তাদের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জড হয়ে যায়নি। তবু তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হামলা আক্রমণের ঘটনা হল ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ, সেটাও নিয়ন্ত্রণ হারানোর মত কোন ঘটনা হয়ে উঠতে পারে নাই। এর সবচেয়ে ভাল প্রমাণ হল আমরা এই ঘটনাকে ডাকি সিপাই বিদ্রোহ বলে – সিপাই বিপ্লব বলি না।
বিদ্রোহ মানে হল উপস্থিত শাসন অসহ্য হয়ে গেছে তাই মানছি না বলে উত্থান। কিন্তু এর পরে কোথায় যাব সেই পরিনতি পরিকল্পনা নিয়ে কোন ভাবনা নাই, এখনও দানা বাধে নাই। অর্থাৎ কোন রাজনৈতিক হুশ-জ্জান বোধ তখনও নাই। একারণে ওটা বিদ্রোহ অবশ্যই  কিন্তু পরে ক করব এই রাজনীতিক প্রস্তুতি নাই বলে তা আর কোন বিপ্লব নয়। 

আর তাই শেষে বৃটিশ শাসক ঐ বিদ্রোহকে “ওভার-পাওয়ার” করে বিদ্রোহ দমন করে ফেলতে সক্ষম হয়। পরে বিদ্রোহীদের ওপর ভয়ার্ত নৃশংসতা ঘটিয়ে এর শেষ হয়েছিল। ফলে তাদের শাসন ফিরে নিজেকে সংহত করে নেয় যদিও সেই থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কলোনি দখল শাসনের বদলে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের শাসনাধীন হই আমরা।
অন্যদিকে, এছাড়া ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক আন্দোলন হয়েছে ১৯০০ সালের পর থেকে কলোনি ত্যাগের আগে পর্যন্ত সময়ে।  যেখানে ১৯০০ সালের আগে অনেক বিদ্রোহই হয়েছে – ইতিহাস এর সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই ব্রিটিশ শাসকের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারানো তো নয়ই; বেগ পেতে হয় এমন কোনো উচ্চতার আন্দোলন সেগুলোর কোনোটাই ছিল না। কাজেই নেটিভ বা ভারতীয়দের কোনো আন্দোলনের কারণে কলোনি শাসকরা অখণ্ড ভারত ছেড়ে যায়নি।  আর অখন্ড ভারতে প্রথম রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের জন্মই যেখানে ১৮৮৫ সালে। তাই কথাটাকে আরো বড় প্রেক্ষিত থেকে বললে, এশিয়া, আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকা মহাদেশের কোনো কলোনি হয়ে থাকা দেশের স্থানীয়দের আন্দোলনের ঠেলায় কলোনি শাসকরা তাদের মুক্ত করে দিয়ে পলায়ে যায় নাই। এমন উদাহরণ জানা নাই।
বরং আমরা চোখ আরো বড় করে তাকাতে পারি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫) পরে কেবল ব্রিটিশ কলোনি দখলদার নয়; এর সাথে ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসসহ সব কলোনি দখলদারেরাই দখলদারি ছেড়ে সব দেশকেই কলোনিমুক্ত করে দিয়ে গিয়েছিল স্বেচ্ছায়। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা হলো, কোনো দখলী দেশের স্থানীয় আন্দোলন-সংগ্রামের কারণেই তারা সেই কলোনি ত্যাগ করে যায়নি। কলোনি মুক্তি ঘটেছিল কার্যত স্বেচ্ছায়। অর্থাৎ মামলাটা কেবল বৃটিশদের বেলায় নয়, সকল কলোনিদখলদারেরাই স্বেচ্ছায় ছেড়ে চলে গেছিল। কিন্তু কেন?

হ্যাঁ, একটা ‘তবে’ অবশ্যই ছিল। সেটা হলো আটলান্টিক চার্টার চুক্তি যা স্বাক্ষরিত হয়েছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল আর আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের মধ্যে ১৯৪১ সালের ১৪ আগস্টে। ওই চুক্তিকে একটা দাসখত বলা যায় যেখানে চার্চিল রুজভেল্টকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হিটলারের পরাজয়ের ওই বিশ্বযুদ্ধে বিজয় ঘটলে দুনিয়া থেকে সব কলোনি শাসনের সমাপ্তি টানা হবে। যুদ্ধ-পরবর্তী দুনিয়াতে আর কোন কলোনি শাসন থাকবে না। আর এই শর্তেই আমেরিকা বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, নেতৃত্বে বড় ভূমিকা নেয়া যুদ্ধের খরচের বেশির ভাগ একা বয়েছিল ইত্যাদি। আর এখান থেকে আমেরিকার গ্লোবাল নেতৃত্ব শুরু হয়েছিল।

কাজেই নেতাজী সুভাষও অখণ্ড ভারত বা কলকাতার বিরাট ভূমিকা রাখা কোন রাজনীতিক হতেই পারেননি, ছিলেন না।

তবে দ্বিতীয় আরেক প্রসঙ্গঃ
নেতাজী সুভাষ আরেক বিরাট অবিবেচক কাজ করেছিলেন। তাঁর রাজনীতির বোধ-বুদ্ধির খামতি এখানে ধরা পড়ে। তিনি আসলে প্রথমে গিয়েছিলেন জার্মানিতে, সরাসরি হিটলারের সাথে দেখা করতে। কিন্তু হিটলার এশিয়ায় তাঁর সামর্থ্য নিয়ে আসতে ছড়িয়ে পরতে চাননি। ফলে অপারগতা প্রকাশ করে তিনিই  এশিয়ায় হিটলারের র্জামানির বন্ধু ও পক্ষশক্তি  জাপানের কাছে যেতে বলেন। আর সেখান থেকেই নেতাজীর জাপানের সাথে সম্পর্কের শুরু। ‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’ এই ফর্মুলা অনুসারে এটা হয়ত জায়েজ বা  অন্যায় মনে হচ্ছে না। কিন্তু আসলে এটা অন্যায় এবং বিরাট ভুল-ও। কেন?

প্রথমত ১৯৪২ সালের পয়সা জানুয়ারি থেকেই বিশ্বযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ একদম স্বচ্ছ হয়ে যায়। এমনকি মনে রাখতে হবে ঐ পয়লা জানুয়ারি জাতিসংঘের জন্ম ঘোষণা করার দিন।  যারা ঘোষণা করে দিয়েছিল যুদ্ধে জিতলে সেই নতুন দুনিয়াতে সব কলোনি শাসন নিষিদ্ধ থাকবে। অথচ নেতাজী নামে কথিত নেতা সেটার খবর রাখেন নাই। তার রিডিং বা ইতিহাস-পাঠই ভুল, ডাহা মিথ্যার উপর দাঁড়ানো। তাই তিনি অবলীলায় যাচ্ছেন হিটলারের কাছে??????? যারা এর বিপরীত পক্ষ!!!

আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান বিজয়ী হলে, নেতাজীও হয়ত বিজয়ী হতেন! কিন্তু সেই ভারত অথবা বেঙ্গলের এই বিজয়ী নেতাজী আমাদের জন্য নিজেই এক হিটলার হতেন! রোহিঙ্গাদের শাসক বার্মিজ শাসক জেনারেলরা যেমন, ঠিক সেরকম!। কেন এমন কথা বলছি? জাপানিরা ১৯৪২ সালেই বার্মাকে ব্রিটিশ কলোনি শাসন থেকে বের করে নিজের অধীনে নিয়েছিল। এই অর্থে স্বাধীন করে দিয়েছিল। অং সান সু চির বাবাসহ ত্রিশজন বার্মিজকে জাপানিজ আর্মি বিশেষ ট্রেনিং দিয়েছিল। পরে তাদের নেতৃত্বেই এক সেনাবাহিনী গড়ে দিয়েছিল জাপানিরা যারা ব্রিটিশদের হাত থেকে বার্মাকে ‘মুক্ত’ করেছিল।
আবার লক্ষ্য করা যাক,  ভারতের এত জায়গা থাকতে নেতাজী কোহিমায় গেছিলেন কেন? সেটা এজন্য যে, কোহিমা সীমান্তের ওপারেই ছিল জাপান সমর্থিত ঐ বার্মিজ বাহিনী। তাদের সাহায্যেই নেতাজী দুই একটা বর্ডারপোস্ট সাময়িক দখল নিতে পেরেছিলেন, যা টেকেনি।

এখন আসেন কেন এখনকার বার্মার কথা তুললাম?
আমার একটা লেখার শিরোনাম হল, মিয়ানমার কোন রাষ্ট্র নয়, একটা সামরিক ক্লাব। সেখানে দেখিয়েছি বার্মা কোনো রাজনৈতিক রাষ্ট্রই নয়। এর মূল তাতপর্য হল যেহেতু বার্মাকে ব্রিটিশমুক্ত করে দিচ্ছে জাপানিজ আর্মি। খুবই ভালো কথা হয়ত! মনে হতে পারে। কিন্তু ঐ জাপানের নিজের রাজনীতিক ব্যবস্থা কী ধরনের? জাপান তখন সরাসরি একটা রাজতন্ত্র। তাও আবার কিছু নৃশংস জেনারেলের এক সেনাবাহিনী সহায়তায় ওটা একটা সেনা-রাজতন্ত্রী দেশ; এবং এক এশিয়ান কলোনি শাসক। পুরা কোরিয়া (তখন দুই কোরিয়া এক অখন্ড) এবং চীনের প্রায় ২৫% তখন জাপান কলোনিদখল করে রেখেছে। অর্থাৎ সোজাসাপ্টা বললে, জাপান তখন বৃটিশের মতই কলোনিদখলদার কিন্তু রাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্য। মানে  কোনো রাজনৈতিক রাষ্ট্রই নয়; কোনো জন-রাষ্ট্র বা রিপাবলিক নয়। আর যা রিপাবলিক নয়, তা কোন রাষ্ট্রই নয় এবং রাজনৈতিকও নয়। জনগণ বা পাবলিক বলে কোন শব্দ বা ধারণা প্রচলিত নাই। আছে রাজা-আমির আর এর বিপরীতে সবাই প্রজা।

রাজনৈতিক রাষ্ট্র হওয়ার পূর্বশর্ত হল, দেশ-রাষ্ট্রের ক্ষমতার উৎস সেখানে থাকে জনগণ। জনস্বার্থে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে বলে স্বীকার করার প্রশ্ন তখন আসে। রাজা-শাসক বলে শেখানে কেউ থাকে না। আগে জনপ্রতিনিধি হতে হয়, তবেই সে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি।

এমনকি এখনো জাপান কোনো রিপাবলিক রাষ্ট্র নয়। জাপানের ফর্মাল নাম ইউনিয়ন অব জাপান। নামের সাথে কোথাও ‘রিপাবলিক’ শব্দটা নেই যদিও সেখানে নির্বাচন হয়, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকে।অর্থাৎ তারা “গণতন্ত্রী” হয়ত কিন্তু কোন জনরাষ্ট্র, জনপ্রতিনিধিশীল রিপাবলিক রাষ্ট্র সেটা এখনও নয়।  আর এ কারণে সেকালে জাপানিজদের দেয়া সব ট্রেনিংয়ে বলাই বাহুল্য কোন রাজনীতি, পাবলিক, জনস্বার্থ, পিপলস রাইট ধারণাগুলো থাকে নাই; কাজ করে নাই। এ কারণে বলেছি, সেকালের বার্মা বা কলকাতার নেতাজী এরা রাজনীতি কী তাই জানতেন না, গুরুত্ব দেন নাই। অথচ স্বাধীনতা ফ্রিডম বলে চিল্লাইতেন! একারণে  বর্তমানেও বার্মা বা মিয়ানমার কোনো রাষ্ট্র নয়, একটা সামরিক ক্লাব যারা ওর ক্ষমতায় আছে, শাসন করছে মাত্র।

সারকথাঃ যে নিজেই এক সেনা-রাজতন্ত্রী দেশ, সেই শাসক আমাকে স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার ট্রেনিং দিতে পারেই না।

আর  একারণেই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু কোন রিপাবলিক জনরাষ্ট্র গড়ার সৈনিক ছিলেন না। “রাজনীতি” বা পাবলিক শব্দের অর্থ না বুঝা নেতাজী কেবল সশস্ত্রতা আর সাথে স্বাধীনতা ফ্রিডম বলে চিল্লাইতেন। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার কথা বলে আবেগী করে তুলতেন। অতএব তার জাপানের বিজয়ের পরিণতিতে এশিয়ার দেশগুলো হত একেকটা বার্মা – নেতাজীর  সেই পরিণতি হত একটা ‘গর্ভস্রাব’।  কাজেই এই নেতাজী আমাদের কেউ নন। যার মাথায় কোনো রাষ্ট্র চিন্তা, রিপাবলিক ধারণা নেই। আছে বরং হিটলারের দাগ লাগা কিছু দায় ও চিহ্ন!

কাজেই এই নেতাজী আমাদের কেউ নন। যার মাথায় কোনো রাষ্ট্র চিন্তা, রিপাবলিক ধারণাই নেই। আছে বরং হিটলারের দাগ লাগা কিছু দায় ও চিহ্ন!

কিন্তু তবু সাবধান! তৃণমূলের মমতাকে মোদির সাথে তার নেতাজী নিয়ে লড়াই করতে দিতে হবে; এটা আমরা নাকচ করব না। কারণ এটা ঠিক ‘নেতাজীকে’ নিয়ে কোনো লড়াই নয়। নেতাজীর আড়ালে এটা মোদির হিন্দুত্বে ভারতের অধীনের কলকাতা নাকি বাঙালি হিন্দুর কলকাতা থাকবে, এর লড়াই এটা।  এটাই কলকাতা বা মমতার নিজস্ব লড়াই – নিজি মামলা – যেখানে আমরা কেবল কামনা করতে পারি হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতা বিজয়ী হোক! টিকে থাকুক!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা  দৈনিক  “নয়াদিগন্ত” পত্রিকার  ২৯ জানুয়ারি  ২০২২ ওয়েবে আর পরদিন প্রিন্টে    মোদি-মমতার ‘নেতাজী’ বিবাদ – এই শিরোনামে  ছাপা হয়েছিল।   ঐ ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়।  আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং  থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন।  আসলে পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s