আমেরিকা সাথেও কাজের সম্পর্ক হবে! তাই কী??


চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সত্ত্বে,
আমেরিকা সাথেও কাজের সম্পর্ক হবে! তাই কী??

গৌতম দাস

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০৫ সোমবার

https://wp.me/p1sCvy-3Up

 

At a time when hostality between China and USA has intensified

 

সেটা ছিল আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট মানে আমাদের ভাষায় আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস [Ned Price] এর এক রেগুলার রুটিন প্রেস ব্রিফিং। কিন্তু ব্যাপারটা আর রুটিন থাকেনি। মনে হয়েছে তা “বিশেষ” হয়ে গেছে। প্রাইস অন্য এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলে বসেন, পাকিস্তান আমেরিকার স্ট্রাটেজিক পার্টনার – Pakistan is a strategic partner of the United States.”’।

পাকিস্তান অবশ্যই আমেরিকার স্ট্রাটেজিক পার্টনার – কিন্তু একালে কোন কথা প্রসঙ্গে সে কথা উঠে গেলেও সাথে বলে দেয়া হয় ওটা পাস্ট টেনস; যেন বলা মানে ওটা এককালে সত্যি ছিল। মানে চলতি একুশ শতকের শুরুতে ২০০১ সালে আমেরিকার আফগানিস্তান দখল শুরু থেকে ঐ দখল বাস্তবায়নের প্রয়োজনে সেই থেকে আমেরিকা পাকিস্তানকে ‘স্ট্রাটেজিক পার্টনার’ করে রেখেছিল, সেটা জোর জবরদস্তি করে হলেও!

আর সেটা টিকে ছিল এবং অত্যন্ত সরবভাবে অন্তত ওবামা আমল মানে, ২০১৬ সালের শেষ পর্যন্ত। যা এরপর থেকে ট্রাম্পের আমলে এসে অনুচ্চারিত হতে হতে “নাই” হয়ে যায়। আর ট্রাম্পের আমলের আমেরিকার ব্যবহারিক আচরণ ও তৎপরতা দেখেই সবাই বুঝে গিয়েছিল “দিন বদলে গেছে”। কারণ আমেরিকা ততদিনে আফগানিস্তানে যুদ্ধের খরচ বইবার মুরোদহীন হতে হতে ভারে কাত হওয়া শুরু করেছে। কারণ তখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার আমেরিকার ব্যয় হাসিঠাট্টার ইস্যু নয় নিশ্চয়। আমেরিকার এই আচরণ যে আমেরিকার – ‘আফগানিস্তানকে ফেলে পালাতে পারলে বাঁচি’, এমন জায়গায় পৌঁছেছে তা তখন সবাই বুঝে গিয়েছিল। ফলে ‘পাকিস্তান আর আমেরিকার স্ট্রাটেজিক পার্টনার’ তখনো কি না, সেটা অনুচ্চারিত থাকাকেই সবার কাছে স্বাভাবিক ঠেকেছিল বা সয়ে গেছিল।

কিন্তু এখন মানে, প্রায় পাঁচ বছর পরে ২০২২ সালের শুরুতে আবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র যিনি সাধারণত তা^র বিভাগের স্থায়ী কিছু অবস্থান-সিদ্ধান্তগুলোর উপরে দাঁড়িয়ে প্রেসের সাথে কথা বলে থাকেন, তিনি যখন আবার সে কথা ফিরে উচ্চারণ করে বলেন যে “পাকিস্তান আমেরিকার স্ট্রাটেজিক পার্টনার”, তখন তা আমাদের জন্য একটা নড়েচড়ে বসে নজর করার মত ঘটনা তো বটেই। শুধু তা-ই নয়, মানে এটা বিচ্ছিন্ন একটা বাক্য নয়। কারণ তিনি শুধু ঐ বাক্যটাই নয়। এর পরে তিনি ওই বাক্যকে ফিরে আরো শক্তপোক্ত করতে আরো কয়েকটি বাক্যও যোগ করেছেন।

ঘটনার শুরু যদিও ইন্ডিয়া থেকেঃ
ঘটনার শুরু ইন্ডিয়া থেকে। কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করে বলেছিলেন, ‘তার ভুল ও অবিবেচক কূটনীতির কারণে , ‘‘পাকিস্তান ও চীনকে একত্র হতে সাহায্য করেছেন মোদি৷’’ অর্থাৎ চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক আগের চেয়ে এত বেশি ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে গেছে। এদিকে ভারতে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তরপ্রদেশসহ পাঁচ রাজ্যে প্রাদেশিক বা বিধানসভা নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে। প্রায় এক মাস ধরে পাঁচ-সাত পর্বের এই নির্বাচন মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে চলবে, পরে্র মাসে ১০ মার্চ একসাথে সব ফল প্রকাশ করা হবে। এই নির্বাচনের ফলাফল ভারতের রাজনীতি এলোমেলো করে দেয়ার মত এক মুখ্য ঘটনাও হয়ে যেতে পারে। কারণ বিজেপি নিজেই প্রকাশ্যে নিজের মনের কথা বলেছে যে, এবারের উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে যদি বিজেপি হেরে যায় সেটা ২০২৪ সালের মোদির কেন্দ্রীয় নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে বিরাট বাধা ও প্রভাব ফেলবে; মানে সে নির্বাচনে জেতা কঠিন হয়ে যাবে।

তবু এখনো এ’ঘটনা ভারতের জন্য যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক, গ্লোবাল পরিপ্রেক্ষিতে তা এখনো এক স্থানীয় ঘটনাই। বিরোধী রাহুল গান্ধী মোদি ও বিজেপিকে ঘায়েল করতে এমন মন্তব্য করেছেন – যেমনটা ইলেকশনের আগে এমন কিছু কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েই থাকে। কিন্তু মোদির পক্ষের লোক সেই ইস্যুটাকে আমেরিকান প্রেস ব্রিফিংয়ে পর্যন্ত তুলে সেখান থেকে জবাব এনে রাহুলের  উপর আপার-হ্যান্ড নিতে চেয়েছিলেন সম্ভবত; আর তা থেকেই ঘটনা শুরু..।

আমেরিকান মুখপাত্র নেড প্রাইস ব্যাপারটাকে ভারতের এক স্থানীয় ঘটনাই করে রেখে পাশ কাটিয়ে যেতে পারতেন। কিছুটা করেও ছিলেন। বলেছিলেন তিনি চীন-পাকিস্তানের সম্পর্ককে তাদের উপরই ছেড়ে দিয়ে রাখতে চান, এতে নিজে ঢুকতে চান না। তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তাই বলে রাহুলের বক্তব্যকে অনুমোদন দিয়ে তিনি এর পক্ষেও দাঁড়াচ্ছেন না।
কিন্তু তা থেকেই আরো উসকানিমূলক প্রশ্ন করার সুযোগ করে নেন প্রশ্নকর্তা; যেটাকে অনেকে ‘অ্যারেঞ্জড’[arranged] মানে আগে থেকে আগাম-আঁতাত-বোঝাবুঝিতে থাকা উভয়ের এক সওয়াল-জবাব পরিস্থিতি তৈরি করে কথাবলা বলে অনেকে মনে করতে পারেন। এটা খুব আন-কমন ব্যাপার নয়; যদিও তা মূলত খুবই সীমিত পর্যায়ে  রেখে এমনটা অনেক সময় হয়েই থাকে। তবে সেটা আবার আমাদের  সাংবাদিকের একেবারে “তেলের ভাণ্ড” নিয়ে তেল মেরে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন (নাকি তোয়াজ) করতে বসার মতও নয় অবশ্যই। তেমন মনে করা মারাত্মক ভুল হবে।
যা হোক সে প্রশ্নটা ছিল, পাকিস্তানের এমন আমেরিকা থেকে দূরে চলে যাওয়া অথবা খুবই চীন-ঘনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া কেন? এটা কী  আমেরিকার তাদেরকে (বিশেষত পাকিস্তানকে) পরিত্যাগ করে ফেলে পালানোর জন্য ঘটছে কি না – এ প্রশ্ন তুলে বসেন [do you think they’re – they feel abandoned by the U.S.?]।
আর এমন প্রশ্নের জবাব দেয়ার সুযোগ নিয়ে এবার যেন নেড প্রাইস তার নয়া বিস্তারিত মেসেজ হাজির করার সুযোগ নিলেন। আর তাতে তিনি মূলত আরো দু’টি প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।

এক. প্রাইস বলছেন, আমরা অনেক দিন থেকেই বলছি, ‘যেকোনো একটা দেশের জন্য তারা আমেরিকা না হলে চীনকে বেছে নিতে হবে, ব্যাপারটা একেবারেই এমন প্রয়োজনীয় নয়” [We’ve made the point all along that it is not a requirement for any country around the world to choose between the United States and China. ] ।’ তবে এরপরই প্রাইস চীনের চেয়ে আমেরিকা কেন অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে ভালো এবং তাদের অনেক বাড়তি সুবিধা ও সে দেশকে মুক্ত থাকতে দেয় – এসব দিক নিয়ে নিজের কিছু বিজ্ঞাপনও প্রচার করে নেন।

দুই. এরপর প্রাইসের সেই উক্তি যে “পাকিস্তান আমেরিকার স্ট্রাটেজিক পার্টনার”। আর এ’কথা বলার পরে তাঁর আরো দুই বাক্য হল, “ইসলামাবাদের সাথে আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক সম্পর্ক আছে। আর আমরা এই সম্পর্ককে বিভিন্ন পরিসরে খুবই মূল্য দিয়ে থাকি” [We have an important relationship with the government in Islamabad, and it’s a relationship that we value across a number of fronts.]। অর্থাৎ তিনি যেন বলতে চাইছেন আমরা যেন এগুলোকে কথার কথা হিসেবে না, সিরিয়াস কথা বলে দেখি।

“We’ve made the point all along that it is not a requirement for any country around the world to choose between the United States and China. It is our intention to provide choices to countries when it comes to what the relationship with the United States looks like. And we think partnership with the United States conveys a series of advantages that countries typically would not find when it comes to the sorts of partnerships that – “partnerships” may be the wrong term; the sorts of relationships that the PRC has seeked to – has sought to have around the world.”

নেড প্রাইস কেন এখন এ কথাগুলো বলছেনঃ
এখানে একটা ব্যাকগ্রাউন্ড বা যে পটভুমিতে এ কথাগুলো উঠেছে তা পাঠককে মনে করিয়ে দেই। সেই পটভুমিটা হল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান এখন ইতোমধ্যেই চার দিনের (৩-৬ ফেব্রুয়ারি) চীন সফরে আছেন। যদিও সফরের মুখ্য কারণ চীনে আয়োজিত এবারের অলিম্পিক, এই গ্লোবাল স্পোর্টসে অন্যান্য সরকারপ্রধানের সাথে ইমরান খানের যোগ দিতেই চীন সফর। আবার বিশেষত এই অলিম্পিককে বাইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে বয়কটের ডাক দিয়েছেন […White House confirmed reports that it was instituting a diplomatic boycott on the Beijing 2022 Winter Olympics.]। আর কারণ দেখিয়েছে সেই পুরনো উইঘুর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং তিনিও জানেন যে, এমন বারবার একই কারণ দেখানোটা মানুষ ভালো মনে করছে না আর তিনি নিজেও এতে সিরিয়াস নন ও মন শক্ত না করে অস্পষ্টভাবে উইঘুরের কথা তুলছেন। তাই এমন মনে করার কারণ আছে। যার কারণ হল, উইঘুর সশস্ত্র গ্রুপ [ইস্টার্ন টার্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ETIM) ] এখন আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধবাদী আইএস-খোরশান এর সাথে মিলে সশস্ত্র তৎপরতায় জড়িত হয়েছে। এমনকি পাকিস্তানে এরা যে বোমা হামলায় জড়িত হয়েছে তাতে ভারত-আমেরিকার সাহায্য সমর্থনের অভিযোগ উঠেছে। ফলে উইঘুর কি নিজে ভিকটিম না আইএসের সহযোগী সন্ত্রাসী – এ প্রশ্ন এখন বাইডেনের সামনে ঝুলছে। কেন ট্রাম্প এই সংগঠনকে আমেরিকান সন্ত্রাসী তালিকা থেকে নাম উঠিয়ে নিয়েছে আর বাইডেন প্রশাসন তাদেরকে বোমা হামলার কাজে ব্যবহারে সম্মতি দিচ্ছে?  এসব প্রশ্ন যেখানে উঠে আছে শেখানে বাইডেনের “উইঘুর মানবাধিকার লঙ্ঘন” এর জন্য চীনা অলিম্পিক বয়কটের ডাক – এটা একটা “দাগী” আচরণ। আর স্বভাবতই এটা দায়ীত্বশীল রাষ্ট্রপ্রধানের কাজ হয় নাই!

আমরা ইমরান খানের চীন সফরে ফিরে আসি। ইমরানের এবারের চীন সফরের মুখ্য দিক অলিম্পিক অবশ্যই নয়। এটা বরং রথ দেখার সাথে কলা বেচার অংশ। সেই মূল কাজে, তিনি এবার চীনা সরকারি অবকাঠামো বিনিয়োগ নিয়ে নয়, বরং এবার বিপুল চীনা ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই বা FDI) মানে ব্যবসায় বিনিয়োগ নিয়ে ফিরবেন। সে কারণে পাকিস্তানের মিডিয়াগুলোতে একটাই নিউজ, ‘চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক এতে আরেক উচ্চতায় যাচ্ছে [….most likely take the Sino-Pakistan relations to new levels.]। আমাদের মত অর্থনীতির দেশে এফডিআইকে বাড়তি আকর্ষণীয় সুবিধা হিসেবে দেখা হয় এ’জন্য যে, অবকাঠামো নির্মাণে কোনো দেশের সরকার মূলত বিদেশী সরকারি ঋণ নেয়। কিন্তু এই এফডিআই বিনিয়োগ নেয়া – এটাও এক ঋণ নেয়া হলেও সরকার তা নেয় না। ফলে  তা সরকারের উপর ঋণের বোঝা বাড়ায় না তো বটেই, উল্টো ঋণের বোঝা কমাতে বা পরিশোধে এই বৈদেশিক মুদ্রা সেখানে সাহায্য করে। কারণ ওই বিনিয়োগ বিদেশী মুদ্রায় বলে এই অর্থ ছাড় করতে সরকারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে তা হতে গিয়ে সেই বিদেশী মুদ্রা সরকারি কোষাগারে চলে যায় আর বিনিয়োগ আনা প্রাইভেট কোম্পানি বিনিময়ে স্থানীয় মুদ্রা হাতে পায়।

আসলে  ক’দিন আগেই খুব কড়া শর্ত চাপিয়ে আইএমএফ পাকিস্তানকে এক বিলিয়ন ডলার লোন ছাড় করেছে। আইএমএফ জানত তাদের দেয়া এই ঋণের খবর পাকিস্তানকে  গ্লোবাল পুঁজি বাজারে আস্থার আসনে নিয়ে যাবে। তাই সুযোগ বুঝে এই কড়া শর্ত। আর তা করতে গিয়ে ইমরানকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে [SBI] বিশেষ অনুমতি দিতে নয়া আইন পাশ করাতে হয়েছে। যেটাকে ইমরানের বিরোধিরা এতে দেশের সার্বভৌমত্বের উপরে আঘাত বলে প্রচার করেছে।  তাই ভাল ইমেজের আসনে বসা এই পাকিস্তান তাই এখন অনুমান করা হচ্ছে চীন সেই ঋণ কিস্তি নিয়মিত যেন পরিশোধে পাকিস্তানকে এফডিআই জোগাড় করে দিয়ে সাহায্য করতে যাচ্ছে। সারকথায় পাকিস্তান তাহলে ইমরানের এ সফরের মাধ্যমে আরো গভীর সম্পর্কে চীনের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। আর এটাই ভারত ও আমেরিকার জন্য আরো অস্বস্তিকর ঘটনা হয়ে হাজির হয়েছে। এই ইস্যুতে তাদের স্ব স্ব মিডিয়া রিপোর্টিংয়ে সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে।

অতএব সে জন্যই কি নেড প্রাইস ঐ প্রেস ব্রিফিং থেকে নতুন সম্পর্ক সূচনার ইঙ্গিত দিচ্ছে?

কেন আমেরিকার পাকিস্তানকে এখনও খুবই দরকারঃ
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ রয়টার্সের এনিয়ে এক নিউজ
[Blinken says U.S. will assess Pakistan ties over Afghanistan’s future] বলছে, আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিঙ্কেন তাদের সংসদ বা কংগ্রেসের শুনানিতে কেন আমেরিকার পাকিস্তানকে জরুরি দরকার তা ব্যাখ্যা করেছেন। তবে তিনি পরিষ্কার করে রাখেন যে, আফগানিস্তানে “পাকিস্তানের বহুবিধ স্বার্থ আছে যেগুলোর অনেকটাই আফগানিস্তানে আমেরিকার স্বার্থের সাথে মিলে [Pakistan has a “multiplicity of interests some that are in conflict with ours.”]। যেমন আমেরিকা চাইবে অন্তত তালেবানদের গাইড করা এবং তালেবানের প্রতিদ্বন্দ্বি যেসব আরো রেডিক্যাল ইসলামী সশস্ত্র গ্রুপ আছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদিতে পাকিস্তান তাদের সহায়তা করুক। এ কারণে পাকিস্তান আমেরিকার কাছে খুবই প্রয়োজনীয় এবং তাই পাকিস্তান আমেরিকার চোখে পার্টনার হতে পারে।
কিন্তু ব্যবহারিক জায়গায় আপাত যে সমস্যা দেখা যাচ্ছে যে পাকিস্তান-আমেরিকা সম্পর্ক থমকে দাঁড়িয়ে আছে। সেই অক্টোবর ২০২১ সালে আমেরিকান উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানের সফরের পর থেকে কিছুই যেন নড়েনি। সেটা কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত না থাকা মানে, সে কাজ এক অস্থায়ী রাষ্ট্রদূত দিয়ে চালানোতেই প্রকাশ পায় [Islamabad has been without a full-time ambassador since Richard Olson left. ] – এমন মনোভাব প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের এক থিংকট্যাংক গবেষক। তিনি আরো ঘটনা তুলে ধরে বলছেন, গত ৯-১০ ডিসেম্বর বাইডেনের অবরোধ আরোপের সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে যার নাম ডেমোক্রাসি সামিট – সেখানে এক অগুরুত্বপুর্ণ গ্রুপে ইমরানকে মাত্র তিন মিনিটের এক রেকর্ডেড অনলাইন বক্তব্য দিতে বলা হয়েছিল। ফলে ইমরান খুব বিনয়ের সাথে ঐ সম্মেলনে যোগ দিতে বাইডেনকে অপারগতা জানিয়ে দেন। খুব সম্ভবত তখন ইন্ডিয়াকে তোয়াজ করতে বাইডেন পাকিস্তানকে তারা ভারতের সমান মনে করছে না, বা তাদের মধ্যে দুরত্ব আছে এটা প্রদর্শন করা মুখ্য বিবেচনা করেছিল। কিনতি ফাইনালি আমরা দেখলাম উলটা ভারতই বাইডেনকে ছেড়ে রাশিয়ার সাথে তাল দেয়া শো করেছে। এসব দিক যেমনই হোক, মূলকথা হল – আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্ক আসলে একটা খাদে পড়ে আছে। আমেরিকা সম্ভবত সেখান থেকে নিজেদের তুলতে চায় – সেকারণেই কী নেড প্রাইস???

আসলে সোজাসাপ্টা বললে এখন, বাইডেন প্রশাসন সম্ভবত ইমরানের এই লম্বা চীন সফর নিয়ে খুবই অস্বস্তি ও বিরূপ অবস্থায় পড়েছেন। যেমন যদি পাকিস্তানকে তাদের এত দরকারি মনেই হয় তবে গত অক্টোবরের পর থেকে আমেরিকার আগ্রহ অগ্রগতিতে এর প্রকাশ নাই কেন? আসলে এ নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা নাই বাইডেন প্রশাসনের হাতে। তাই খুব সম্ভবত কিছু শুভ-ইঙ্গিত বা বন্ধুত্বের ইঙ্গিত পাঠিয়ে সুচনা করতে চাইছে আমেরিকা!! আর সেটা করতেই হয়ত নেড প্রাইসের এই “আমরা এখনো স্ট্রাটেজিক পার্টনার” বক্তব্য! তবে প্রাইসের আচরণের এই ব্যাখ্যা কী তানিয়ে আমাদের আরো নিশ্চিত হতে হবে। মানে, এখনো নিশ্চিত বলে ধরে নেয়া ঠিক হবে না এবং তাই আরো মনিটর করতে হবে।

কিন্তু যেটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হল, নেড প্রাইস একটা ইঙ্গিতে যেন বলে ফেলেছেন যে, আমাদের মতো দেশ চীনের সাথে বিনিয়োগ পাওয়ার সূত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার পরও সমান্তরালে আমেরিকার সাথেও আমরা একসাথে কাজের সম্পর্ক করতে পারি। আর বলা বাহুল্য তা হতে অন্য ইস্যুতে তবে উভয়ের অভিন্ন স্বার্থের ইস্যুতে!!!

এমন অনুমানের ভিত্তি হল, আফগানিস্তান বা অন্য কোনো ইস্যুতে আমেরিকার কাছে এখনো যদি পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক জরুরি হয়ে থাকে তবে আমেরিকা সেই স্বার্থ হাসিল করার একমাত্র খোলা থাকা উপায় হল , চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হলেও সমান্তরালে পাকিস্তান-আমেরিকা সম্পর্ক যতটুকু এগিয়ে নেয়ার বা করে নেয়ার সুযোগ আছে তা কাজে লাগানো।
তা না হলে   – ইসলামাবাদের আমেরিকার সাথেও সম্পর্ক করতে চীনের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে টান টান উত্তেজনা ও চাপ অনুভব করার কিছু নেই। নেড প্রাইসের এই নতুন তথ্য পেশ করার কোন মানে হয় না [For the first time in years, the United States emphasised its strategic partnership with Pakistan, clarifying that Islamabad does not need to strain its relations with China to maintain ties with Washington.]।  প্রাইসের এমন  রাস্তা ধরে আগানোর কোন কারণ খুজে মেলেনা।

“State Department’s spokesperson says
Islamabad does not need to strain its
ties with Beijing”

তাহলে আমরা কি আসলে পাকিস্তান-আমেরিকার সম্পর্ক বুঝার জন্য এতক্ষণ এত কথা বলছি? না, মোটেও তা নয়। বাংলাদেশের আমেরিকার সাথেও সম্পর্কিত হতে হলে আগে থেকেই চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক থাকা নিয়ে টান টান উত্তেজনা ও চাপ অনুভব করার কিছুই নেই – সেটা কী আমাদের বেলাতেও সত্যি হবে??? সেটা বুঝা দরকার!
ব্যাপারটা এমন কি না বা কতটুকু- সেটা জানাই আমাদের মূল আগ্রহ এবং এত কথা!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা  দৈনিক  “নয়াদিগন্ত” পত্রিকার  ০৫ ফেব্রুয়ারি  ২০২২ ওয়েবে আর পরদিন প্রিন্টে    চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সত্ত্বে আমেরিকা!! – এই শিরোনামে  ছাপা হয়েছিল।   ঐ ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়।  আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং  থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন।  আসলে পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s