বাইডেনকে স্যাংশন আরোপের ক্ষমতা কোন মহাপ্রভু দিয়েছে!


বাইডেনকে স্যাংশন আরোপের ক্ষমতা কোন মহাপ্রভু দিয়েছে!

গৌতম দাস

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

https://wp.me/p1sCvy-3Wm

 

শিরোনামটা আমার না বাইডেনের থেকে ধার করা। এক তামাসার নিউজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

Who in the Lord’s name gives him the right to declare new so-called countries on territory that belongs to his neighbors?” – Joe Biden tackles Putin

ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আর আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বাইডেন এর বাকযুদ্ধ এখন প্রতিদিনের ঘটনা। যেন প্রতিদিনের সন্ধ্যায় মিডিয়ায় হানিফ সংকেত মার্কা এক নম্বর সোপ অপেরা [soap opera] চালু হয়েছে এটা।  ম্যাপের দিকে তাকালে দেখব ইউরোপ (মানে যা আসলে পশ্চিম ইউরোপের মাতবর দেশগুলোর ভুমি। এদেরকে আমরা বুঝাই) সেই পশ্চিম ইউরোপ আর রাশিয়ার মাঝের রাষ্ট্র মানে বাফার রাষ্ট্রটাই হল ইউক্রেন।  সম্প্রতি বাইডেন একটা বাণী দিয়েছেনঃ  পুতিনকে তার প্রতিবেশীদের অন্তর্ভুক্ত ভূখণ্ডে নতুন তথাকথিত দেশ ঘোষণার অধিকার কে দিয়েছে?

প্রসঙ্গটা অরিজিনালি হোয়াইট হাউজে এক সাংবাদিক সম্মেলনের। আবার সেখানের প্রসঙ্গটাকে সময় দিয়ে সিএনএন-ই একমাত্র তুলে এনেছে। আর বাংলাদেশে  এর একটা অনুবাদ  রিপোর্ট করেছে টিভি ‘চ্যানেল ২৪’। ওটা একমাত্র বাংলায় বলে আমি ওটাই রেফারেন্স হিসাবে এনেছি। বাইডেন প্রশ্ন তুলেছেন, “পুতিনকে তার প্রতিবেশীদের অন্তর্ভুক্ত ভূখণ্ডে নতুন তথাকথিত দেশ ঘোষণার অধিকার কে দিয়েছে? এটি ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’।” অর্থাৎ তিনি পুতিনের অথরিটি বা কর্তৃত্বকে লিগাল চ্যালেঞ্জ করতে চাইছেন।

এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হবে উলটা বাইডেনকেই সাবধান হতে বলা। এটা তার জন্যই ভাল হবে। নইলে এনিয়ে বেশি আগালে হৈচৈ করলে নিজেরই কাপড় খুলে যেতে পারে। কেন?

সরাসরি ও শর্টকাটে বললে,  আমেরিকা বিভিন্ন দেশের উপর ইচ্ছামত যখন ইচ্ছা স্যাংশন [sanction] আরোপ করে থাকে।  এই ক্ষমতা আমেরিকাকে কোন মহাপ্রভু দান করেছে??? কোন আন্তর্জাতিক আইনই আমেরিকাকে এই ক্ষমতা দেয় নাই। তাহলে  ২০১৪ সাল থেকে লাগাতর নানা অজুহাতে রাশিয়ার উপর আমেরিকাকে  স্যাংশন আরোপের ক্ষমতা-কর্তৃত্ব আমেরিকাকে দিয়েছে?? একইভাবে প্রায় ইরানের বিপ্লব (১৯৭৯), এই জন্মের পর থেকে  আমেরিকাকে  স্যাংশন আরোপ করে চলছে। আমেরিকাকে এই ক্ষমতা-কর্তৃত্ব কে দিয়েছে?

আপাতত আর আরও  প্রমাণ-উদাহরণ না দিয়ে  এখানেই থামলাম!  কাজেই বাইডেনের উচিত হবে না ক্ষমতা-কর্তৃত্ব বিষয়ক কথা আর বাড়ানো। একেবারে কাপড় খুলে যাবে…।

আমেরিকাকে অর্থনৈতিক  স্যাংশন এর মানে কী?
আমেরিকাকে অর্থনৈতিক  স্যাংশন দেয়ার সোজা মানে হল, যেকোন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে পণ্য কেনাবেচায় যে ইনভয়েস (বা রশিদ) মানে পণ্যের দামাদাম লিখা হবে তা কোন দেশের মুদ্রায় লেখা হবে – এই হল প্রশ্ন! সবাই বেশি প্রফার করে আমেরিকান ডলারে তা লিখতে। এর সুবিধা হল বিক্রেতা এরপরে পণ্য বেচা অর্থ দিয়ে ডলারে অন্য যেকোন দেশের পণ্য সহজেই সে আবার কিনতে পারে। কারণ ডলার গ্রহণ করতে সব বিক্রেতাই প্রেফার করে। আবার দুপক্ষের জন্যই অসুবিধা হল, ঐ ইনভয়েসে লেখা ডলারের অর্থ ছাড় করতে একটা না একটা আমেরিকান ব্যাংকের মাধ্যমেই তা করতেই হবে। এখন কোন আমেরিকান ব্যাংক একাজে আপনাকে সাহায্য করলে ঐ ব্যাংক-কে  আমেরিকান রাজস্ব-বিভাগ বিলিয়ন ডলার ফাইন করে থাকে – এটাই হল অবরোধ আরোপ সোজা পরিণতি।  তাই অবরোধ আরোপ মানে হল, আপনাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা থেকে বের করে দেওয়া।

তাহলে ইউক্রেন ইস্যু এটা কিসের লক্ষণ?
চীন-রাশিয়া মিলে এখন আমেরিকার এই যত্রতত্র কোন আন্তর্জাতিক আইনী নিয়ন্ত্রণ ছাড়া স্যাংশন  আরোপ করা্র যুগের সমাপ্তি চিরদিনের মত শেষ করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। ডলার বাদে বাকি সব কারেন্সিতে লেনদেনের এক নয়া গ্লোবাল বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়তে চাচ্ছে। অন্তত “ডলার রেজিম” সমাপ্ত করতে হবে এই তাদের মূল লক্ষ্য। [সেটা কতদুর কী পারবে সে অন্য আলাপ।] তবে এর  সাথে তাদের বন্ধুরাও যোগ দিয়েছে যেমন ইরান ও চীন-রাশিয়ার প্রভাবাধীন রাষ্ট্রগুলো। আর এতে বেদিশা হয়ে ততই আমেরিকা অবরোধ-আরোপে অপব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। যেটা অনেকটা “জন্মের খাওয়ার” মত!  যেখানে খাদক খাইতে খাইতেই শেষে মারা যায়!

তাই সম্ভবত বাইডেনই হবেন শেষ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যার আমল পর্যন্ত তৃতীয় দেশে হস্তক্ষেপ, সরকার বদলানো এমনকি সিআইএ পাঠিয়ে ক্ষমতা দখলদারি করার চর্চা জারি ছিল, এটাই আগামি ইতিহাসে লিখা থাকবে।  মানে এরপরেও আমেরিকা থাকবে অবশ্যই তবে অন্যের সরকার বদলানোর ক্ষমতা বদলানোতে ঠুঠো হয়ে থেকে।

অন্য দেশে খোদ সরকারই উপরে ফেলার ক্ষমতা সিআইএ বা আমেরিকার কোন মহাপ্রভু দিয়েছে???
আমরা অনেক সময় চুপ থাকি নিরুপায় হয়ে বা আমাদের সাময়িক স্বার্থের জন্য বা কৌশলগত কারণে। কিন্তু কখনই আমরা মন থেকে আমেরিকার এই অবাধ ও নিয়ন্ত্রণহীন [unruly] ক্ষমতা পছন্দ করি না। করতে পারি না!

কাজেই বাইডেনের আমেরিকার প্রতি আমাদের পরামর্শ হবেঃ “ডলার-রেজিম এই ক্ষমতার” অপব্যবহারকারি হয়েন না। ছাড়ান দেন। আর পুতিন বা বাইডেন আপনারা কারোই আরেক দেশে সেনা পাঠানোর আগে এই ইস্যু বিষয়ক গ্লোবাল কনভেনশন-আইন করেন; পরস্পর দোষারোপ করে কতদুর যাবেন! নইলে এসব চাতুরিপুর্ণ বয়ান আপনার পক্ষে কাজ করবে না…। বৃটিশ সাম্রাজ্যের সুর্য এভাবেই একদিন অস্তে ডুবে গেছিল!

 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s