লীগ বা তার সরকার, আরএসএস-এর পাশে বসতে পারে না


লীগ বা তার সরকার, আরএসএস-এর পাশে বসতে পারে না

গৌতম দাস

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২২, ০৫:৩০ ভোর

https://wp.me/p1sCvy-3XW

 

Tenth round of the Indo-Bangladesh friendship dialogue

 

‘কানেক্টিভিটি’ [connectivity] শব্দটার অর্থ করা যায় সংযোগ বা সংযোগ-প্রাপ্যতা। ভারতের কারণে বাংলাদেশের কাছে এই শব্দটার অর্থই বদলে গেছে। এখন এর অর্থ হয়ে গেছে, বিনা পয়সায় বিনা ক্ষতিপোষণে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত করিডোর নেবে। এমনকি রাস্তাঘাট এমনকি পোর্ট সুবিধা নিবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে। ভারতের দুই অংশকে আরামে কানেক্ট করে নিবে। বাংলাদেশের বাজার নষ্ট করবে। তাই এটা হয়ে গেছে  প্রায় জবরদস্তিতে এবং একপক্ষীয় (ওয়ানওয়ে) এককস্বার্থ আদায়ের এক শব্দ। ফলে এর সঙ্গে মিলে আবার কোথাও এটাকে  ‘বাংলাদেশ-ভারত ডায়ালগ’ জাতীয় কথার আড়ালে রেখে ততপরতা জারি রাখতেও দেখা গেছে। তাই “বাংলাদেশ-ভারত ডায়ালগ’ জাতীয় কথা কানে আসলেই মন সতর্ক হয়ে যায়!

বাংলাদেশের স্বার্থের দিক থেকে তাই ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ডায়ালগ বা কানেক্টিভিটি ধরনের শব্দগুলো পাক্কা ছলচাতুরির শব্দই। বাংলাদেশের ঘাড়ে চড়ে চাপ দিয়ে বিনা পয়সায় ভারতের একচেটিয়া বাণিজ্যিক স্বার্থ আদায়ই এর লক্ষ্য।

পররাষ্ট্রনীতি মানেই যেন যা কলোনি সম্পর্কের দাঁড়ানোঃ
এমনিতে নেহেরু আমল মানে ভারতের জন্ম থেকেই ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূল বৈশিষ্ট্য হল বৈদেশিক সম্পর্ক বলতে তা ‘কলোনি সম্পর্ক’, এই বুঝের উপর এটা কাজ করা। যেন পররাষ্ট্রনীতিতে দুই দেশের মধ্যে  রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক বা অন্য যে কোন সম্পর্ক মানেই তা কলোনি সম্পর্ক। বিশেষ করে ছোট দেশ হলেই তাকে ভারতের অধস্তন করে নিয়ে বা ধরে নিয়ে এই ভিত্তিতে সম্পর্ক করা। মানে এসবের বিপরীতে উভয়ের জন্য লাভজনক হয় এমন স্বার্থের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বলে যেন কিছু নাই, হতেই পারে না। অর্থাৎ কে কত চালাক ও অপরের  উপর প্রতারণায় দক্ষ, পররাষ্ট্রনীতি যেন এরই কারবার।

আসলে কলোনি আমলে অধীনতা বা অধস্তন সম্পর্ক বলতে যা বুঝাত, তাই ভারতের পররাষ্ট্রনীতির বুঝ। একই ধারণা অনুসারে, একালেও ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক হতে পারে যেন একটাই- সেটা হল পুরনো স্টাইলের এক কলোনিদখল সম্পর্ক; আর যেখানে ভারত হবে কলোনি মাস্টার। আর যাকে দখল করা সে হবে স্লেভ [slave] বা দাস।

এর সবচেয়ে ভাল বা আদর্শ উদাহরণ হল, নেপালের সঙ্গে ভারতের ১৯৫০ সালে করা চুক্তি,এখনও তা সংশোধন না করেই চালাতে চাওয়া ভারতের গড়িমসিরও শেষ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি একালে ভুটানের সঙ্গে ভারতের পুনঃলিখিত নতুন চুক্তিটাও কমবেশি তাই। যেমন নেপালের সঙ্গে ১৯৫০ সালের চুক্তির একটি বৈশিষ্ট্য হল, পাহাড়ি বলে নেপালে হাইড্রোপাওয়ার বা জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা অনেক; কিন্তু সেই নিজ-উৎপাদিত বিদ্যুৎ নেপাল ভারত বাদে তৃতীয় দেশকে (সরাসরি) বিক্রি করতে পারবে না। নেপাল এক ল্যান্ডলকড দেশ; তাই সেটাকে চাপ দিবার হাতিয়ার করে এমন কথাই ঐ চুক্তির অংশ। তাহলে নেপালকে কী করতে বাধ্য?  নেপাল বরং ভারতেরই কোনো কোম্পানিকে এজেন্সি দিতে হবে আগে, এরপর সে নেপালের বিদ্যুৎ (ধরা যাক বাংলাদেশকে) বিক্রি করে কমিশন খাবে। পুরানা রাজতান্ত্রিক নেপালে, সশস্ত্র ও গণবিক্ষোভের রাজনৈতিক আন্দোলনের শেষে পরিণতিতে ২০১৫ সালে রাজতন্ত্র ভেঙে জনপ্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে রিপাবলিক রাষ্ট্র ও কনষ্টিটিউশনে রূপান্তরের পেছনের প্রধান কারণ ছিল এমন চুক্তির বিরোধিতা ও নাগপাশ ভেঙ্গে বের হওয়া।

সেকালের (১৯৫০) নেপালকে এমন কলোনি চুক্তি করাতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে নেহেরুর অবস্থান ছিল আরও কড়া। ব্রিটিশ ভাইসরয় ভারত ত্যাগের আগে কলোনিদখলদার ব্রিটিশদের প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা যেন নেহেরুকেই হস্তান্তর করে গেছিলেন; ১৯৪৭ সালের পর থেকেই নেহেরু এই ভাব দেখাতেন। এই ভাব ও ভিত্তিহীন অনুমানের উপরে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রনীতি দাঁড় করিয়েছিলেন। আর নেপালকে অধীনস্ত বানিয়ে ভারতকে এজেন্সি না দিলে নেপাল কোনো উৎপাদন বা বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যকর করতে পারবে না-  এমন শর্ত ঐ চুক্তিতে আরোপ করেছিলেন। আর ঠিক এমন অজস্র অসম সুবিধা গায়ের জোরে বড়ভাই ভাব ধরে সেখানে ঢুকিয়ে রাখা হয়ে আছে।

এখন একটা মজার তামসার কথা তুলে ধরা যায়!  যেমন, ভারত বলতে চায় নেপাল ল্যান্ডলকড দেশ। চারদিকের ভারতবেষ্টিত বলে ভারত পেরিয়ে তবেই নেপাল বহিঃবাণিজ্যের জন্য কোন নৌবন্দরের দেখা পেতে পারে। কাজেই নেপালকে এজন্য কাফফারা তো দিতেই হবে। ভারতকে কমিশন অথবা অগ্রাধিকার মানে মাখন অংশটা দিয়ে দিতেই হবে নেপালকে।  এই হল ভারতের সাফাই। এখন আসি  তাহলে একই যুক্তিতে আসামসহ নর্থ-ইস্টকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে সব ধরনের করিডোর দিতে আমরা বাংলাদেশ বাধ্য হব কেন? আমরা কেন একই যুক্তিতে আসামের উপরে  আমাদের কমিশন অথবা অগ্রাধিকার পাওয়া ন্যায্য হবেনা??  বিশেষত যেখানে আবার নর্থ-ইস্ট কিন্তু ঠিক  নেপালের মত একই অর্থে ল্যান্ডলকড ভূখণ্ড নয়। বাংলাদেশের বাইরে দিয়েই, মানে নিজ শিলিগুড়ি করিডোর দিয়েও কলকাতার সঙ্গে নর্থ-ইস্ট সংযুক্ত। তবু ভারতকে আমাদের নিজ রাজস্বের পয়সায় অবকাঠামো রাস্তা গড়ে সেটা আবার বিনা পয়সায় ভারতকেই দিতে হবে কেন ও কীভাবে?।এই হল ভারতের আবদার; আর এরই নাম তারা দিয়েছে ‘কানেক্টিভিটি’ আর সঙ্গে ‘বাংলাদেশ-ভারত ডায়লগ’ জাতীয় প্রতারণামূলক শব্দ তো আছেই!

সিমলায় ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ডায়ালগঃ
এমন প্রতারণামূলক ডায়লগ আবার এবছর শুরু হয়ে গেল ভারতের সিমলায় ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি । আর এটার নাকি ফরমাল নাম ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ডায়ালগ’। নাম যাই থাক মুল উদ্দেশ্য, বিনা পয়সায় করিডোর নেয়াসহ বাংলাদেশের বাজারে অবাধ প্রবেশ ও আরো কী কী নেয়া যায় এরই ফাঁক ফোকর বের করে ডিল করা।

তবে এখানেও কিছুটা অলক্ষ্যে এক তামাসা আছে! সবার আগে সেকথায়; এবছর বাংলাদেশের দিক থেকে এই কথিত ‘ডায়লগ’ করতে রাজি হওয়া ভারতকে আমাদের বাঁ হাতে ফুল দেবার মত ঘটনা হিসাবে দেখার সুযোগ আছে। কেন? বাংলাদেশ থেকে প্রতিমন্ত্রী পাঠানো হয়েছে এবার। এর পক্ষে কাভারেজ সাফাই যাই দেয়া হোক এমন হবার সম্ভাব্য অনুমিত কারণ মনে করা হচ্ছে, একালে আমাদের পিরিতি-সম্পর্কে গোলমাল শুরু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের টিকা বিপর্যয়ে ফেলে দেয়া থেকে। এই বিপর্যয় থেকে উদ্ধার পেতেই আর অবকাঠামো বিনিয়োগের আরো অর্থ পেতে চীনের সঙ্গে গভীর কমিটমেন্টে জড়িয়ে যাওয়া ছাড়া সরকার পথ ছিল না। কাজেই সরকার এখন ভারতের দিকে ন্যূনতম তাকানো বা আমল করার অবস্থাতেই নাই। এরপরেও পূর্ণমন্ত্রীর বদলে একজন প্রতিমন্ত্রীকে পাঠাতে রাজি হয়েছে এ জন্য ভারতেরই শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কিন্তু ভারত এতে আবার পালটা মোচড় দিয়েছে যে দুই ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিও এখানে পাঠানো হবে। আর এসব তুচ্ছ বিষয় মনে করে বাংলাদেশ সরকার আর সম্ভবত আপত্তি চালিয়ে যেতে চায় নাই।  কিন্তু ভারতের চাতুরিটা হল, এখানে দল বলতে বিজেপির বদলে তারা খোদ আরএসএস-কে ঢুকিয়ে দিয়েছে। দুদেশের ক্ষমতাসীন দল বলতে আওয়ামি লীগ আর বিজেপি বুঝার কথা, স্বাভাবিকভাবেই। এই প্রটোকল-টাই মানা হয় নাই এখানে। ভঙ্গ করা হয়েছে। কিন্তু তারা বিজেপির বদলে আরএসএস-কে টেনে এনেছে।   ইসলাম বিদ্বেষ আর ঘৃণা যে দলের প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা, যা বেচে মোদির ভোট জোগাড়- সেই আরএসএস এভাবে নিজেকে এই সুযোগে জাতে তুলে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের পাসে বসার জায়গা করে নিয়েছে। এজায়গায় ছাড় দেয়া একেবারেই অনুচিত ও বিরাট ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে এজন্য আমাদের খেসারত দিতে হতে পারে।

এটা খুবই খারাপ ইঙ্গিত তৈরি করে দিয়েছে। প্রথম কথা দল হিসাবে আওয়ামী লীগ চাইলেই অন্তত নিজেকে আরএসএসের সঙ্গে এক কাতারে বসাতেই পারে না। মূলত এক সভায় বসতে পারে না। আওয়ামী লীগ যত খারাপই হোক, আরএসএস এর তুল্য দল নয়।  ভারতের সমাজ থেকে যে দল ইসলাম ও মুসলমানদের অবলীলায় এথনিক ক্লিনজিং করতে চায়, বা অনুমোদন দেয় আওয়ামী লীগ সে দলের কাতারে নিজেকে বসাতে পারে না। এথনিক ক্লিনজিং আর আধুনিক রাষ্ট্র একসঙ্গে চলতে বা কাজ করতে পারে না। তাতে বাংলাদেশের মানুষের চোখে আওয়ামী লীগের যত দোষ-ত্রুটি বা খামতিই থাকুক না কেন!

দ্বিতীয় অপরাধ হল, সিমলা সভার আগে থেকেই হুমকি দেয়া হয়েছিল গত বছর অক্টোবরে কুমিল্লায় দুর্গাপূজার ঘটনাকে তারা আলোচনার বিষয়বস্ত বানাবে; যেন জবাবদিহিতা! মানে যেন বাংলাদেশের হিন্দুদের গার্ডিয়ান হলো ভারত! আবার মজার কথা হলো এনিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধিদের মধ্যেই ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। এমজি আকবর এটাকে ‘এও হয় ও-ও’ হয় বলে পাশ কাটাতে চেয়েছেন।

বিবিসিকে তিনি ঢাকার দুর্গাপুজা ইস্যুতে  সিমলায় কথা হবে কিনা এনিয়ে বলেছেন,
ওটা তো, ওটা তো … আসলে যে কোনও ইভেন্ট বা ঘটনাই তো কন্ডিশনস বা শর্ত তৈরি করে। আমাদের দেশেও একই ব্যাপার হয়, কেউ একটা কিছু ভাষণ দিল বা কিছু বলল – অন্য পারে তার অভিঘাত হয়, বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আর তাছাড়া আমরা দুটো কাছাকাছি ও ঘনিষ্ঠ দেশ – দুটোই স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ – ফলে কিছু-না-কিছু (আলোচনা) হওয়াই তো স্বাভাবিক।”

এছাড়া আরএসএস-এর মুখপাত্র পত্রিকা দ্য অর্গানাইজার’ এর প্রধান সম্পাদক প্রফুল্ল কেতকারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিবিসি লিখছে, কুমিল্লা বা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা নিয়ে গত বছর তীব্র প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল আরএসএসের মুখপত্র ‘দ্য অর্গানাইজার’।  আর ক্ষুব্ধ অবস্থান ব্যক্ত করেছিলেন তিনি।

“আরএসএস-এর থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণঃ”
আবার ওদিকে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্তের মত শ্রীরাধা দত্ত, যিনি বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন” -যেট আরএসএস-এর নিজের সাথে যুক্ত এক থিঙ্কট্যাঙ্ক; আর শ্রীরাধা এরই সিনিয়র ফেলো। তিনি বিবিসিকে বলেন, সংলাপে “আরএসএসের থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”, বিশেষ করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কিছু ঘটনার পটভূমিতে। তাঁর কথায়, এই তো দেখলাম গতকালও বোধহয় বরিশালে একটি মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিচ্ছিন্নভাবে এদিক-ওদিক এরকম ঘটেই চলেছে – যদিও আমাদের সবারই ধারণা বাইরে থেকে সরকার-বিরোধী শক্তিরাই এগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে করাচ্ছে”।

     শ্রীরাধা দত্ত, বিবিসি বাংলা থেকে নেয়া

এই নারী সম্ভবত এক চোখে দেখেন, অপর চোখে দেখেন না। দেখলে উনি পরিস্কার দেখতেন, উত্তর প্রদেশে নির্বাচন উপলক্ষ্যে কিভাবে প্রকাশ্যে মুসলমান গণহত্যার আহবান জানিয়ে  আরএসএস-সংশ্লিষ্ট কথিত সাধুরা হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হুঙ্কার দিচ্ছেন। এখন শ্রীরাধা দত্তরা যেভাবে বাংলাদেশের হিন্দুদের গার্জিয়ান সাজতে চাইছেন তাহলে তো আমাদেরকেও ভারতের মুসলমানদের ত্রাতা সাজতে হয়। আর সাথে ঐ সিমলা ডায়লগ অনুষ্ঠানে  ভারতের মুসলমানদের দুরবস্থা নিয়ে কথা বলতে ওরকম কিছু বাংলাদেশি দলকে পাঠাতে হত – শ্রীরাধা দত্তের দু’চোখ কাজ করলে নিশ্চয় ইনি  আমাদেরকে ওরকম কিছু বাংলাদেশি দলকে পাঠাতে নিজেই বলতেন!

কিন্তু হায়? শ্রীরাধা দত্ত খেয়াল করেন নাই যে সেরের উপর সবসময় একটা ‘সোয়া সেরের’ বাটখারা সেখানে থাকে। ওখানেও তাই ঘটেছিল।  তাদের সকলের উপর ওজনের দিক থেকে এগিয়ে থাকা ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাম মাধব।  যিনি আরএসএস এর কোন এক কমিটির নেতা ও জাতীয় কর্মসমিতির (ওয়ার্কিং কমিটি) সদস্য। এই কিছুদিন আগেও তিনি আরএসএস থেকে ডেপুটেশনে গিয়ে  বিজেপির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি পদে ছিলেন। তিনি পুরা আলোচনায় পানি ঢেলে দেন দলের মূল অবস্থান ব্যক্ত করে। তিনি সেখানে বিবিসিকে বলেছেন, “এই প্ল্যাটফর্মে দুই দেশের একান্ত নিজস্ব বা অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। কাজেই কুমিল্লার ঘটনা সিমলাতে কোনো ছায়াপাত করবে বলে তিনি মনে করেন না”।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে ভারতীয়দের মধ্যেও কোনো ‘সমন্বয়ই’ নাই। আর এই সুযোগে শ্রীরাধা ওভার-এক্ট বা আলগা-মাতবরির সুযোগ নিয়েছিলেন। সবাই জানে বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন থিঙ্কট্যাঙ্ক খোদ আসএসএসেরই প্রতিষ্ঠান; আর মোদির বর্তমান সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এই প্রতিষ্ঠানেরই মূল কর্তা ও নেতা।

তাহলে ভারত যদি সিমলাতে কুমিল্লা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে পারে তাহলে আমরা ভারতের হিজাব ইস্যু নিয়ে ওই একই আসরে কথা বলতে পারব না কেন? এসব দিকে বাংলাদেশ সরকারের কড়া দৃষ্টি থাকা উচিত ছিল। আমাদের নিজেকে অপমানিত হতে দেওয়ার তো কিছু নাই। আর আওয়ামি লীগ যতদিন ক্ষমতায় আছে এসব এমন মিটিংয়ে এমন গা-ছেড়ে দিবার কিছুই হয় নাই।

তবে একটা বড় লক্ষ্যণীয় দিক হল আমাদের কোন মিডিয়াই এই ডায়লগ অনুষ্ঠান মানে ১৮ ফেব্রুয়ারির আগে এনিয়ে তেমন রিপোর্ট দেখা যায় নাই, কেবল একা বিবিসি বাংলাতেই যা সব মাত করেছিল। বুঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা একটা দায় ঠেলা ধরণের হয়ে গেছিল। কিন্তু তবু উচিত ছিল বিবিসির রিপোর্টের পরে হলেও বাংলাদেশের মিডিয়ার জন্য মেটেরিয়াল সরবরাহ করা। অন্তত কাউন্টার ইনফরমেশনগুলো যেন তারা হয়ত বাসসের অথবা কয়েকটা দেশি মিডিয়াকে কাছে ডেকে নিয়ে দেয়া ব্রিফিং সরবরাহ করা।

আর বলাই বাহুল্য এই কথিত ডায়লগও বিবিসি কানেকক্টিভিটি দিয়েই শেষ করেছিল। তাই বিবিসির রিপোর্টও শেষ হয়েছিল “বাণিজ্য ও কানেক্টিভিটি আলোচনা” এই উপ-শিরোনামে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা  সাপ্তাহিক  “সাম্প্রতিক দেশকাল” পত্রিকার  ০৮ মার্চ  ২০২২ ওয়েবে আর  ০৩ মার্চ প্রিন্টে   ক্ষমতার লিগ্যাসিতেও আরএসএসের পাশে বসা ন– এই শিরোনামে  ছাপা হয়েছিল।   ঐ ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়।  আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং  থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন।  আসলে পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s