প্রিজুডিস বা অযোগ্যতায় ডুবে গেছে পাকিস্তানের বিচারকরা


প্রিজুডিস বা অযোগ্যতায় ডুবে গেছে পাকিস্তানের বিচারকরা

গৌতম দাস

১৮ এপ্রিল ২০২২, ০০:০৬  সোমবার

https://wp.me/p1sCvy-42L


প্রিজুডিস [prejudice] মানে হল আগাম প্রভাবিত হয়ে থাকা। বিচারকদের বেলায়, কোন আসামি সম্পর্কে এজলাসে আনীত যেসব ডকুমেন্ট তাঁর নজরে আনা হবে আর বাদি-বিবাদি পক্ষ যেসব আর্গুমেন্ট দিবেন ইত্যাদি এসবের ভিত্তিতেই কেবল বিচারক আসামি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিবেন। এটাই আদর্শ ও স্বাভাবিক। সেটা না করে ধরা যাক আসামি দেখতে খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় কিংবা ইনোসেন্ট ফেসের বলে বিচারকের বিচার শুরুর আগেই যদি মনে হতে থাকে যে আসামি নির্দোষ তবে বিচারকের এই আচরন-মনোভাব এটাকে প্রিযুডিস বলে। অর্থাৎ বিচার শুরুর আগেই তিনি বিচার-বহির্ভুতভাবে কোন ধারণায় আচ্ছন্ন বা প্রভাবিত হয়ে গেছেন।  কোন বিচারকের বেলায় প্রিযুডিস হয়ে যাওয়া তাঁর জন্য মারাত্মক অপরাধ ও অযোগ্যতা।  এমন ‘ডিস-কোয়ালিফিকেশন’  বা যোগ্যতায় ত্রুটির কারণে তার বিচার করার এক্তিয়ারই কেড়ে নেয়া যেতে পারে। তাই এটাকে প্রি মানে আগাম; আর “যুডিস” মানে নিশ্চিত না হয়ে অনুমানে বিচার করে ফেলার ঘটনা হিসাবে দেখা হয়। আমরা এখানে দেখব পাকিস্তানের উচ্চ-আদালতের বিচারকেরা কিছু বিশেষ মামলায় একালে কী প্রি-যুডিস হয়ে গেছেন!!  ,

শেষে পাকিস্তানে এখন কী দাঁড়াল? একটা বাংলা প্রবাদ আছে “ভিক্ষার চালের আবার কাঁড়া আর আকাঁড়া’। মানে, ভিক্ষা করে পাওয়া চালের গুণ বিচার অনর্থক। কাঁড়া মানে সযত্নে ছাঁটা, তুষ নেই, খুদ-কুঁড়া বা ভাঙা নেই। আর এরই ইংরেজি ভাষ্য হল – ‘বেগারস ক্যান নট বি চুজারস’ [beggars can not be choosers”]। আক্ষরিক বাংলায় বললে ‘ভিক্ষুকের বাছাবাছির ক্ষমতা থাকতে নেই বা থাকে না’।
আমেরিকার সাথে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তানের যে বর্তমান বিতর্ক সেটা নিয়ে চলতি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ প্রসঙ্গ ঠিকই ধরেছেন। কিন্তু এনিয়ে নিজের মনের কথা বলতে গিয়ে সারা পাকিস্তানবাসীকেই তিনি ভিক্ষুক গণ্য করেছেন। শাহবাজ বলতে চেয়েছিলেন ইমরানের আমেরিকার সাথে বাদানুবাদে যাওয়া ঠিক না কারণ পাকিস্তান একটা গরীব দেশ। ফলে ভিক্ষুক পাকিস্তানের কোন বাছবিচারের ক্ষমতা থাকতে নাই। শাহবাজের এই মন্তব্যের প্রবল বিরোধিতা করে এগিয়ে আসেন ইমরান খান। আর তাতে আরেক দফা শাহবাজ নিজের বক্তব্যের সাফাই দিতে গিয়ে আরো অপমান ডেকে এনে তিনি বলেন, “……আমাদেরকে আমাদের মানুষকে খাওয়াতে হয়, আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে হয় তাই আমরা এমন ওদের সাথে লড়তে যেতে পারি না। তাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে পারি না”।  “……আমরা আর কারাই বা…। আমরা সেই দেশ যাদের নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতেই দিন যাচ্ছে…”। সারকথায় এভাবেই শাহবাজ আমেরিকান হস্তক্ষেপ-মূলক হুমকি ও বক্তব্যের বিরুদ্ধে ইমরানকে  প্রতিবাদ না করতে বা আমেরিকার সাথে লাগতে না যেতে উপদেশ দিয়েছেন।  শাহবাজ বলছেন, আমরা গরীব ভিক্ষুকের মত, আমাদের আমেরিকার বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠানো ঠিক না। আসলে এসব কথা বলে তিনি নিজের আমেরিকার দালালির পক্ষে পোক্ত সাফাই দিতে গেছিলেন।

“We have to feed our nation […] we have to send our children to school, we can’t fight with someone, can’t raise slogans against others,” he was quoted as saying by ARY News. “Who are we, we are the country which is fighting for its survival.”
Defending his previous remarks, Shahbaz Sharif said that.

কম করে হলেও গত ৪০ বছরে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা যা প্রধানত নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) আর ভুট্টোর বংশধরদের দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) – এ দুই পার্টি ও তাদের সহযোগী ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী আরো কিছু ছোট দল – এরাই পাকিস্তানকে বিদেশী বিশেষত আমেরিকার খেয়াল ও ইচ্ছার লীলাভুমি করে রেখেছে। এর সাথে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী। আর এদের প্রত্যেকের বক্তব্য হচ্ছে, আমরা তো ভিক্ষুক! আমরা গরিব। তাই আমেরিকা আমাদের তো এমন করবেই! আমাদের কিছু বলার নাই , কিছু বাছবিচারের ক্ষমতা নাই। কাজেই ক্ষমতাধর আমেরিকা পাকিস্তানকে যেভাবে রাখছে, যা দিচ্ছে, আমাদের সাথে যা করছে এটা মেনে নাও! এতদিন ধরে এমন কথাগুলোই উচ্চারিত হয়ে আসছিল; তবে এদের সবার মনে মনে। আর এখন, আরেক ক্রাইসিসে পড়ে মনের কথাটাই প্রকাশ্যে উচ্চারণে নিয়ে এসেছে শাহবাজ শরিফ, যিনি মাত্র দু’দিন হল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন। শাহবাজ শরিফের নিজ বড়ভাই নওয়াজ শরিফ বর্তমানে বড় দুর্নীতির দায়ে ও বিচারে জেল-জরিমানায় ডুবে আছেন; সাথে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হয়ে গেছেন। তাই ছোট ভাই শাহবাজ এখন দল পিএমএল-এনের প্রধান নেতা। শাহবাজ নিজেও বর্তমানেই দুর্নীতি মামলার আসামি; আর বর্তমানে তার মামলার চার্জ গঠনের শুনানি চলছে!

বিপরীতে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (ইনসাফের জন্য আন্দোলন) বা সংক্ষেপে পিটিআই দলের মুলনেতা ইমরান খান। তার রাজনৈতিক জীবন ও দলের শুরু থেকেই – পাকিস্তান ভিক্ষুক ফলে আমেরিকান খেয়াল-অত্যাচার মেনে নাও – এধরণের বয়ান ইমরান মানতে অস্বীকার করেন। বিশেষ করে ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে যে দলীয় মেনিফেস্টো তিনি প্রকাশ করেন তাতে সরাসরি আমেরিকান ‘ওয়ার অন টেরর’ পলিসিকেই তিনি চ্যালেঞ্জ করেন এবং আমেরিকার এই নীতিতে পাকিস্তানের কত মানুষ বলি হয়ে গেছে আর কত কোটি টাকা অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে এ নিয়ে কিছু পরিসংখ্যানও প্রচার করা শুরু করেছিলেন। গত ২০১৩ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ইমরানের দল এই “নয়া বয়ানের” উপর দাঁড়িয়ে অংশ নিয়েছিল।

এভাবে একসময় ২০১৮ সালের নির্বাচনও এসে যায়। ততদিনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমলে এসে তিনি আগের প্রতিশ্রুতি দেয়া আমেরিকান অর্থ সাহায্য পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে না দেয়া আর ট্রাম্প উল্টা ভারতের প্ররোচনায় টেররিজমের জন্য পাকিস্তান ও তার সেনাবাহিনীকে দায়ী করাতে, সেবার প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দূরত্ব এক উল্লেখযোগ্য বিভেদ হিসেবে হাজির হয়েছিল। আর এ’থেকে, পাকিস্তানের এতদিনের পুরানা দুই রাজনৈতিক দলের কোনো একটা আর সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আমেরিকা – এই ত্রিপক্ষীয় যে শক্তি পাকিস্তানকে এতদিন ছিঁড়ে খেয়ে আসছিল, ‘ভিক্ষুক তত্ব’ জারি রেখে আসছিল; আর এই সুযোগে দুর্নীতিতে বান ডেকে এনেছিল – এই গোষ্ঠীতন্ত্রে এক ব্যাপক ভাঙন তৈরি হয়; অসংগঠিত হয়ে পড়ে তারা। এই ভাঙনকে ব্যবহার করে, শক্তি-ভারসাম্যের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান নিজ দলকে ক্ষমতাসীন করতে সমর্থ হন। ফলে কার্যত এই প্রথম ইমরান তাদের ‘ভিক্ষুক তত্বকে’ চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেন। মানে, আমেরিকা ভিক্ষা-দাতা (পাকিস্তানে যা খুশি করার ভিক্ষাদাতা) আর পাকিস্তান গ্রহীতা-ভিক্ষুক; ফলে সব মেনে নেবে – এই সম্পর্ক মানতে অস্বীকার করে চলতে থাকেন।

অবশ্য কিছু দিনের মধ্যেই ট্রাম্প বুঝে যান যে, ইমরানের পাকিস্তানকে আমেরিকা নিজের স্বার্থেই দরকার। কারণ আফগানিস্তানে আমেরিকার তখন প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ; এভাবে সম্পদ ড্রেনে ফেলা চলছিল যা বন্ধ ও ছাঁটাই করতে ট্রাম্প মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাই আবার তিনি ট্রাম্পের সাথে কাজের সম্পর্ক মানে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।

অবশ্য সেকালে কিছুদিনের মধ্যেই ট্রাম্প বুঝে যান, আমেরিকাকে আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ ছেড়ে উঠে আসতে গেলে নিজ স্বার্থেই ঐ ইমরানের পাকিস্তানকে আমেরিকা নিজেরই দরকার। কারণ আফগানিস্তানে তখন আমেরিকার প্রতিদিন গড়ে ৩০০ মিলিয়ন ডলার করে খরচ হয়ে যাচ্ছে, এভাবে আমেরিকার সম্পদ ড্রেনে ফেলা তাকে বন্ধ করতে হবে। ফলে এই ড্রেনেজ বন্ধ করতে ট্রাম্প মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাই আবার ট্রাম্প পাকিস্তানের সাথে এক কাজের সম্পর্ক মানে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারে পাকিস্তানের সাহায্য চাইতে এগিয়ে আসেন।

কিন্তু পুরান খাসলত অনুসারে ট্রাম্প ধরে নেন তারা ইমরানের পাকিস্তানকেও – ভিক্ষুক বলে – আগের মতো যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারবেন। তাই তারা ইমরান সরকারকে প্রস্তাব দেন, ‘আফগানিস্তানে যে প্রাতিষ্ঠানিকতার ওপর ভর করে তারা আফগানিস্তানকে পরিচালনা করতেন এখন সেটার আদলে তেমন একটা সামরিক-ঘাটি [military base] তারা পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠা করতে চান। আর এই আবেদনে পাকিস্তান কোন কিছু না দিলেও যেন আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা করার একটা বেজ স্টেশন আমেরিকাকে করতে দেয়।’ কিন্তু ইমরান সব প্রস্তাবই নাকচ করে দেন।

এ নিয়ে এখন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পাকিস্তান সেনা-আইএসপিআরের [ISPR] ডিজি মেজর জেনারেল বাবর ইফতেকার খামোখা অস্বীকার করতে চাইছেন [“And in reality, they did not even ask for bases and there was no mention of it on any level.”] যেটাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছেলেমানুষি ছাড়া আর কী-ই-বা বলা যায়! তারা ধরে নিয়েছে যে, লুকাতে চাইলেই তারা একালে ইন্টারনেটের যুগে সবকিছু লুকাতে পারবে। অথচ ২০২১ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহ আর পরে জুনের প্রথম সপ্তাহে- এই দুই সপ্তাহজুড়ে অনলাইন নিউজ খুললেই, এখনই সব বেরিয়ে পড়বে, কিছুই লুকানো যাবে না।  আমেরিকান প্রতিরক্ষামন্ত্রী জ্যাক সুলেভানের [Jake Sullivan] ৩৬ পৃষ্ঠার প্রেস ব্রিফিং (৭ জুন ২০২১) তো পাবলিক ডকুমেন্ট যা এখনও হোয়াইট হাউজের ব্রিফিং সাইটে লটকানো আছে। জাপানি ডিপ্লোম্যাট [Don’t Expect Pakistan to Host US Military Bases] বা পাকিস্তানের ডন (কয়েকটা রিপোর্ট) পত্রিকা সেকালে এর রিপোর্টগুলো জ্বলজ্বল করছে।   এমনকি এ নিয়ে সিআইএ চিফের এক সিনেট শুনানিতে [CIA chief told drone bases won’t be hosted] পাকিস্তানে তার গোপন ভিজিট ও আমেরিকা ড্রোনের জন্য পাকিস্তানে বেইজ স্টেশন পাচ্ছে না; এ নিয়ে দেয়া বক্তব্যও পাওয়া যাবে। অথচ ঐ আইএসপিআরের ডিজি জেনারেল বাবর কী লুকাতে চাইলেন? তিনি দাবি করেছেন, আমেরিকা ঘাঁটি বানানোর প্রস্তাব নিয়ে আসেইনি [“And in reality, they did not even ask for bases and there was no mention of it on any level.”]। এই আইএসপিআর এরা কী কৌশল নিয়ে কাজ করে কথা বলে?? সব অর্থহীন, চোখ উলটানো মিথ্যার বেসাতি!!  এটা কার কাজে লাগে??? আমেরিকান বাজে ততপরতাকে আড়াল করা কী পাকিস্তান সেনাদের কাজ???

এতে আসলে দাড়িয়েছে এখন এই যে ইমরান যে, পাকিস্তানজুড়ে আমেরিকান হস্তক্ষেপের কথা ছড়িয়ে দিয়েছেন সেই আমেরিকার সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেন নেই, ছিল না – এটা প্রমাণে সেনারা হাত-পা ধুয়ে নেমে পড়েছে। আর ফল হয়েছে উল্টা। পাক সেনাবাহিনী এর আগে এমন বেচাইন হতে কেউ দেখেনি।

বরং এতে তাদেরকে বলা যায়, আমেরিকা ও পাক-সেনাবাহিনীর ‘আন্ডারহ্যান্ড সম্পর্ক’ বিশেষ করে যা এখন রাজনীতিবিদ ইমরান এই সম্পর্ককে অনুমোদন না দিয়ে বরং খোলাখুলি পাবলিকের সামনে এর বিচার দেয়াতে এখন পাকিস্তান সেনাদের টনক নড়েছে। আর তা থেকেই তারা তওবা পড়ে বের হয়ে আসতে চাইছে যেন। আর এটা এমনই ছ্যাঁকা খাওয়া যে সেনাপ্রধান বাজওয়া এখন সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে ভালো মানুষ হয়ে যেতে চান, যিনি অনেক বদনাম কামিয়েছেন। তাই এখন আগামী ঠিক ২৯ নভেম্বরেই এ বছরে তিনি অবসরে চলে যাবেন, কোনো এক্সটেনশন দিলেও নাকি নেবেন না- তা আগ বাড়িয়ে ওই জেনারেল বাবরকে দিয়ে রটিয়ে দিয়ে পার পেতে চাইছেন। তার মানে হলো- ‘ঠাকুর ঘরে কে রে? না আমি কলা খাই নাই, দেখিই নাই এবং আমি আর জীবনে কলা খাবো না’ দশা!

“Let me put this to rest. The chief of army staff is neither seeking an extension nor will he accept an extension. No matter what, he will be retiring on the 29th of November 2022.”  – says Maj Gen Babar

তাতে এখন সারকথা দাঁড়াল যে, ইমরান এদেরকে এই ছ্যাঁচা দেয়াতে এই কুচক্রী ত্রিশক্তি – এদেরকে একেবারে এই প্রথম ইমরান ল্যাংটা করে ছেড়েছেন। সোস্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, ইমরান এই ত্রিশক্তির কুচক্রীপনা বিশেষত, আমেরিকান তৎপরতা একেবারে উদাম করে দিয়েছেন। আজ পাকিস্তানের গৃহবধূরাও নিজ বাচ্চাদের সাথে নিয়ে রাতে রাস্তায় প্রতিবাদে শামিল।
ইমরানকে সরিয়ে দেওয়ার পর তাঁর এত জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে ছবি : রয়টার্স

এমনিতেই ইমরানের সবচেয়ে বড় সমর্থক গোষ্ঠী হল এক ব্যাপক সংখ্যক সব বয়সের নারী। কয়েকটা সোস্যাল মিডিয়া স্ট্যাটাসে দেখা যাচ্ছে, এই নারী-পুরুষেরা ইমরানের পক্ষে দাঁড়িয়ে আমেরিকার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এর সাথে কিছু ইন্টারভিউও দেখা গেল; তারা শামিল হয়েছে [clip] অর্থাৎ ওই তিন কুচক্রী শক্তি যারা এতদিন রাজত্ব করে গেছে ‘ভিক্ষুক তত্ব” দিয়ে, এরা যে একদিন পাকিস্তানের গৃহবধূদের হাতে নাকানি-চুবানি খাবেন, তাদের অকাম সব উদাম হয়ে যাবে তা তারা কখনো অনুমানই করেননি মনে হচ্ছে। কিন্তু এটাই পাকিস্তানে এখন হচ্ছে এবং তা বাস্তব। সম্ভবত সে কারণে সেনাবাহিনী সবার আগে সব ছেড়ে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে। জেনারেল বাবরের প্রেসের সামনে নিজে যেচে সেসব প্রসঙ্গ তুলে কথা বলা তাই প্রমাণ করে। আসলে শাহবাজের “ভিক্ষুক তত্ব”- এই ত্রিশক্তি মানে সেনা-আমেরিকাসহ পুরোনো রাজনীতিবিদ সবাইকেই পাবলিকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে! এটাই ইমরানের এক বিরাট রাজনৈতিক সাফল্য।

এমনকি এনিয়ে সাম্প্রতিকালের আমেরিকান প্রতিক্রিয়াও দেখার মতো। ঘটনাটা হলো, পেন্টাগন মানে, আমেরিকান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা দেখাশোনা যাদের কাজ, সেই ডিপার্টমেন্ট পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি গত ১৩ এপ্রিল এক প্রেস ব্রিফিং ডেকে বসেন। উদ্দেশ্য ইমরানের দল সারা পাকিস্তানের সব বড় শহর যেভাবে তোলপাড় করে আমেরিকার হস্তক্ষেপ করে বিরোধী দল লেলিয়ে দেয়ার কাহিনী উন্মোচন করে দিয়েছে তাতে ব্যাপকভাবে ইমেজ হারানো আমেরিকা তা পুনরুদ্ধার করা, কমপক্ষে বলা যে, আমরা এত খারাপ না – যেন সে জন্যই এই প্রেস ব্রিফিং। ইমরানের অভিযোগের জবাবে এটুকু তিনি বলতে এসেছিলেন যে, ইমরানের অভিযোগ সত্যি নয়। অবশ্য এটা একই কথা; যেটা পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি অনুমোদিত যে কড়া প্রতিবাদ (ডিমারসে demarche) চিঠি সেটা ইমরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট পৌঁছে দেয়ার পরও [Pakistan Sends US Demarche Over Alleged Political Meddling] তারা এভাবেই অস্বীকার করেছিল।

কিন্তু জন কিরবির একটা বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, “ঐ অঞ্চলে পাকিস্তান (আমাদের জন্য) এক নির্ধারক ভুমিকা পালন করেছিল। আমরা পাকিস্তান ও পাকিস্তানের জনগণের এই ভুমিকা স্বীকার করি। সেটা এমন ছিল যে [আমাদের সাহায্য করতে গিয়ে] পাকিস্তানিরা যে, নিজ দেশের ভেতরেই টেররিস্ট আক্রমণের শিকার হয়েছেন সেটাও আমরা স্বীকার করি।’ ফলে সেখান থেকে আমাদের একটা স্বার্থ-শেয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান সেনাদের সাথে আমাদের সেনাদের একটা ভাল (healthy) সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।’ অর্থাৎ যেন বলতে চাইলেন, বিশ্বাস করেন ভাই – আমরা ঐ “তিন কুচক্রী শক্তি” হিসেবে পাকিস্তান সেনাদের কোনো খারাপ পথে নেইনি।

এছাড়া আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতায় তারা দূরেও “কোনো আমেরিকান সেনার ভুমিকা দেখেন না”। এ কথা বলেই তিনি সাথে সাথে জিহবায় কামড় দিয়ে বলেন, ‘ভাই, আমাকে আবার পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলে ফেলার দিকে টেনে নিয়েন না, মাফ চাই”!

সার কথায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর আমেরিকা প্রশাসন, তাদের গোমর পাকিস্তানি জনগণের সামনে ইমরান নিয়ে যাওয়াতেই এসব ঘটছে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সবাই এখন নিজের গা-হাতপা ধুয়ে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে গেছে।

ওদিকে সেনা আইএসপিআরের ডিজি জেনারেল বাবর সেনাপ্রধান বাজওয়ার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে গিয়ে ফেঁসেছেন। তিনি দাবি করছেন, আমেরিকার বিরুদ্ধে পাঠানো পাকিস্তানের কড়া প্রতিবাদ-পত্রে ‘কনস্পিরেসি’ শব্দটা ছিল না [Conspiracy not mentioned’, demarche was given on ‘interference’…]। কিন্তু তাতে কী এসে গেছে? দুদেশের  ফরমাল কূটনৈতিক কথাবার্তায় অনেক শব্দই থাকে না কারণ তা কূটনীতিতে অনুমোদিত ভাষা নয়। কিন্তু এরপর আবার নিজেই বলছেন, আমেরিকাকে দেয়া আমাদের প্রতিবাদলিপি (demarche) যেটা গেছে সেখানে মূল কথাটা ছিল মূলত ‘আমেরিকার অকূটনীতি-সুলভ শব্দ ব্যবহারের বিরুদ্ধে যে শব্দগুলো পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সমান”।
তাহলে এটা আমেরিকান ‘কনস্পিরেসি’ হতে বাকি থাকল কী? তবুও ‘কনস্পিরেসি’ শব্দটা পাকিস্তান ব্যবহার করেনি ইচ্ছা করেই এ জন্য যে, তাতে পাকিস্তানেরও ‘অকূটনীতি-সুলভ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়ে যেত।
তাহলে যেটা আসল কথা এটা নিয়ে পাকিস্তান সেনাদের এখন কথা বলার কী আছে? তারা কি আমেরিকাকে সার্ভিস দিতে চাচ্ছে, আমেরিকান কনসার্নটা তারা নিজেই হাজির করতে চাইছে? কিন্তু কেন?  এটা কি পাকিস্তান সেনাদের কাজ? তাদের আনুগত্যের জায়গাটা কোথায়? আমেরিকান প্রশাসন, ওরাই কী সেনাদের বাপ-মা? তাহলে দেখা যাচ্ছে  ভিক্ষুক তত্বের বিরুদ্ধে আসলে ইমরান দেশের স্বার্থরক্ষার প্রশ্ন আর আমেরিকান হস্তক্ষেপ ইস্যুটাকে পাকিস্তানের সাধারণ্যে একেবারে গৃহবধূর পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে সঠিক পদক্ষেপ ও কাজটাই করেছেন! এখন মনে হচ্ছে পেন্টাগনের জন কিরবি আর পাক সেনাবাহিনী একটা ভালো শিক্ষাই পেয়েছে এ থেকে!

পাকিস্তানের বিচার বিভাগঃ
আসলে ঐ গণবিরোধী তিন কুচক্রী শক্তির ‘ভিখারি তত্ব’, এই বয়ান এর সবচেয়ে খারাপ প্রভাবটা হল, এটা মূলত সারা পাকিস্তানকেই সব সেক্টরে মেরুদণ্ড ভাঙা করে রেখে দিয়েছিল। সেটাই এখন বোঝা যাচ্ছে। এ থেকে এমনকি আদালতও বাইরেনয়। মানে, তারাও প্রভাবিত হয়নি, তা বলা যাচ্ছে না। এমনকি গত ৯ এপ্রিল দিন-শেষের রাতদুপুরে যেদিন সংসদে ইমরানের ওপর অনাস্থা ভোট পাশ হয়েছিল; সে দিনের আদালতের ভূমিকা মারাত্মক রকমের প্রশ্নবিদ্ধ এবং তারাও যে ভিখারি তত্বে  আপ্লুত ও প্রভাবিত হয়ে ওই তিন কুচক্রীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিল এই ইঙ্গিত ও প্রমাণ থেকে গেছে। সারকথায় আমেরিকা বা পাক-সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু করতে যেন বিচারকদের ভিখারি মন সায় দেয়নি। অথচ ইমরান বা তার দলের আদালতের নির্দেশ অমান্য করা, এমন কোনো অভিপ্রায়ই যে ছিল না এটা এখন প্রমাণিত।

ঘটনা হল, ৭ এপ্রিল সন্ধ্যাসাড়ে সাতটায় আদালতে বসে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে, সংসদ যা  আগে ভেঙে দিয়েছিল ইমরানের সরকার তা পুনর্বার জাগিয়ে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব নিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আর সুনির্দিষ্ট করে বলেছিল ৯ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় পুনরায় সংসদ বসিয়ে অনাস্থা ভোট নিয়ে কার্যক্রম শুরু করতেই হবে। আর এতে ইমরান সরকার ও স্পিকার ঠিক সে মোতাবেক সবকিছুই করেছিল। আর ঐ রায়ে অবশ্যই এমনটা বলা ছিল না যে, কতক্ষণের মধ্যে এই অনাস্থা প্রস্তাবে পাস করতে হবে। কারণ এটা বলা বেকুবি হত এবং সেটা বলা অবশ্যই বিচারকদের এখতিয়ার-বহির্ভুতও হত।

এদিকে এটা পরিষ্কার হয়ে পড়ছিল যে, আদালতের রায়ে ইমরান অসন্তুষ্ট ও হতাশ হলেও তিনি রায় মেনে নিয়েছেন। ফলে এমন আচরণ ইঙ্গিত তিনি দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি আগের রাতে (৮ এপ্রিল) ছিল ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেষ পাবলিক বক্তৃতা। তিনি সেখানে পরোক্ষে বলেই দেন যে, কাল থেকে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী থাকছেন না।

কিন্তু ওই তিন-কুচক্রী-শক্তি তবু আস্থা রাখতে পারেনি। যেন তারা তাদের স্বভাব দিয়ে ইমরানকে ব্যাখ্যা করতে গেছে। কিন্তু এরা যা খুশি করুক তাতে আদালতেরই এতে প্রভাবিত হয়ে পড়ার তো কোন কারণ নাই, থাকতেই পারে না। অথচ তাই ঘটেছিল! সুপ্রিম কোর্ট (যেটা সারা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত) আর ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (পাঞ্জাব প্রদেশের সর্বোচ্চ আদালত) এ দুটোই রাত ১২টার আশপাশের সময় আগাম আদালত খুলে বসে গেছিল। কেন? কেন তারাীকাজ করেছিল এর কোন সদুত্তর দেননি?

এটা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ও  প্রধান বিচারপতির জন্য চরমতম লজ্জার। এতে বিচারকরা যে আর নিরপেক্ষ নন এই দাগ লেগে গেছে তাঁদের গায়ে। প্রধান বিচারপতি একটা রায় দিয়েছেন ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় যে, সংসদকে আবার বসে অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা করতে হবে। আর এনিয়ে সমাজের কোনো কর্নারে তো অমান্য করার ইঙ্গিত নেই। আর সেটা থাকার কোনো কারণ ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা রায়ে সংসদ ৯ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় বসার কথা বলা আছে আর ঠিক তাই-ই ঘটেছে। এখন কতক্ষণে অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা হবে এর কোন সময়সীমা বাস্তবত আদালতের দেয়া সাজে না, বিচারকরা তাই, অনুমান করি, সঠিকভাবেই তা দেননি। আর তা দেয়ারও তার সুযোগ ছিল না। তবুও সে দিন প্রায় মধ্য রাতেও সংসদ চলমান। কাজেই ওই সংসদ কিভাবে শেষ হয় অন্তত সে দিন রাত ১২টা পর্যন্ত তো তাকে সময় দিতেই হবে এবং সারা বিচারক গোষ্ঠীকে এ জন্য অপেক্ষা করতেই হত। সবচেয়ে বড় কথা, দুনিয়ার কোন বিচারকই  কোন অনুমান করে নিতে পারে না একটা অপরাধ হবেই!!!
যেকারণে “হবু অপরাধী” বলে কোন ধারণা বিচারকের ডিকশনারি থাকতে পারে না। পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট পুর্ব-অনুমানে ধরে নিতে পারেই না (এটাই প্রিযুডিস)  যে, ইমরান বা তার দল “বিচারের রায় অমান্য করবেই”। কোন বিচার অপরাধ ঘটার পরেই একমাত্র শুরু হতে পারে। ঘটতে পারে অনুমানে বিচারক অপেক্ষা করতে পারে না।  অমান্য করেছে কিনা সেটা দেখার পরেই কোনো আদালত তার কাজ শুরু করতে পারে। এর আগে একেবারেই নয়। কারণ সেটা অবশ্যই প্রিজুডিস হবে। অথচ তাকে কেন আগাম রাত ১২টায় আদালত খুলে বসতে হল? আদালত আজও এর কোন ব্যাখ্যা দেয় নাই। কেন???

এর মানে বিচারকদেরকেও কি বিরোধী জোট এবং আমেরিকা ও সেনাবাহিনীকে খুশি করতে হবে – এই ভিক্ষুকের স্বভাব পেয়ে বসেছিল? ধরা যাক আগের রাত ১২টাতেও সংসদ অনাস্থার সুরাহা করেনি এবং পরদিন সকালে আবার সংসদ বসেছে ইত্যাদি যেটাই হোক সেটা ঘটতে দেখার পরেই তো বিচারকেরা পরদিন বসে ব্যবস্থা নিতে পারতেন? অর্থাৎ তিনি আগাম ইমরান ও তার দল সম্পর্কে এক চরম মিথ্যা ধারণা ও এক আগাম ধারণা যে, ইমরানের দল ‘রায় ভায়োলেটর’ বলে আগাম সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছিলেন- কেন? এমন আগাম অনুমান, একেই আদালতের ভাষায় বলে প্রিজুডিস – মানে বিচারপ্রার্থী সম্পর্কে পক্ষ-বিপক্ষ শোনা আদালতের এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই বিচারপ্রার্থী সম্পর্কে বিচারকের নেতি ধারণা পোষণ করা। আর এ জন্যই প্রিজুডিস যেকোনো বিচারকের জন্য সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা! যার সোজা মানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ পাঁচ বিচারক প্রিজুডিস রোগে আক্রান্ত।  এর অর্থ তারা অযোগ্য প্রমাণিত!!!

যেমন আজো বাস্তবতা হল, ওই ৯ এপ্রিলের পরে ১০ এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত কেন সুপ্রিম আদালত আর এই ইস্যুটাকে আর আদালতে তোলেনি? এর মানে কী? এর সোজা অর্থ, সংসদেই শেষে ঐ রাতেই অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়েছে এবং ইমরান ও তার দলের কেউ এতে কোনো বাধা সৃষ্টি করেইনি। এটাই ফ্যাক্টস! এর অর্থ আদালতের আগাম শঙ্কা প্রকাশ পুরাটাই অমূলক তা প্রমাণিত। আর যে আদালত আগাম শঙ্কা প্রকাশ করে সেটা আর আদালতই নয়। থাকে না। আদালত তো আইনশৃঙ্খলাবাহিনী একেবারেই নয়। তাই কোন আগাম অনুমানে সিদ্ধান্ত নেয়া তার কাজ নয়, হতে পারে না। অপরাধ ঘটার পরেই  কেবল বিচার শুরু হতে পারে। তাহলে এখন প্রশ্ন ইমরান ও তার দল কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার আগেই তাদের সন্দেহের খাতায় বিচারকরা ফেলেছিলেন? কেন? এটাতে তো বিচারকরাই বড় অপরাধী। অপরাধ করতে পারে মনে করে আদালত খুলে বসে থাকা বিচারক তারা! এই কি তাহলে তাদের পরিচয়?

আর সোজা অর্থ এই বিচারক গোষ্ঠী আসলে ভিখারি তত্বে নিজেরা আপ্লুত ও খুবই খারাপভাবে প্রভাবিত!!! নিজ বিচারকাজ বা নিজ দায়দায়িত্ব কী সেসব কিছু ভুলে তারা আমেরিকা বা সেনাবাহিনীকে খেদমত করতে নিজ মর্যাদা বিসর্জন দিয়েছে এমন বিচারপতি তারা। এক কথায় তারা অযোগ্য ডিস-কোয়ালিফায়েড বিচারপতি।

এখন উল্টা দিকে আসি। তাহলে ইমরান ও তার দল সংসদকে অত রাত পর্যন্ত নিয়ে গেছেন কেন? বিচারকদের অবিচারকসুলভ টেনশন বাড়িয়েছেন কেন?
প্রথমত কারো টেনশন বাড়ানো তাদের উদ্দেশ্য মনে হয়নি। তাদের মূল অবস্থান হল, বিরোধী জোট যে আমেরিকান পাপেট (ইমরানের ভাষায় ইম্পোর্টেড বা আমদানিকৃত সরকার) সেটা তুলে ধরা। সে কারণে তারা কৌশল নিয়েছিল রাত ১১টার পরে তাদের পিটিআই দলের স্পিকার পদত্যাগ করবেন আর সংসদ সদস্যরা পরে অনাস্থার ভোট শুরু হলে সংসদ ত্যাগ করবেন। অর্থাৎ এক. ইমরানের দলের স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি কার্যক্রম পরিচালনাই করবেন না। কিন্তু তা বলে সংসদের কার্যক্রমে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে বরং বিরোধী জোটের পছন্দের এক স্পিকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে পদত্যাগ করে চলে যাবেন। যা কোনো যুক্তিতেই কোনো বাধা দেয়া হবে না। আবার ইমরানের দলের বাকি এমপিরা, এরাও অনাস্থা প্রস্তাবের কার্যক্রমের সময় সংসদে উপস্থিত থাকবেন না। এটা তো তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত। তারা এটা নিতেই পারেন। আর সে্টি অবশ্যই অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে কোনো বাধা সৃষ্টি কোনোভাবেই নয়। তা-ই হয়েছিল। অর্থাৎ ভোটাভুটির সময় সংসদে কেবল বিরোধী জোটের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এক কথায়, আসলে “ইম্পোর্টেড” সরকার গঠনের সময় এর সাথে কোনো সংসর্গ ইমরান রাখতে চাননি। এটাই তাদের কৌশল ছিল আর সেটাই তারা বাস্তবায়ন করেছেন এবং তা সংসদে ভোটাভুটি কার্যক্রমে কোন বাধা না দিয়েই। সবচেয়ে বড় কথা, ইমরান বা তার দল সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে সারা দিন কোথাও বাধাসৃষ্টিমূলক কোনো কাজ করেননি এবং ইমরানের দল পরিকল্পিতভাবেই ৯ এপ্রিলের দিনটা শেষ হওয়ার আগেই সংসদ ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। তাই এটা কোনো যুক্তিতেই আদালতের উদ্বেগের কোনো ঘটনাই নয়। বরং আদালত অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আগাম ও মিথ্যা অনুমান করে আদালত খুলে বসে থেকেই সবচেয়ে বড় অপরাধটা করেছেন। এখান থেকেই সিদ্ধান্ত যে, আদালত আসলে আত্মসম্মান খোয়ানো বায়াসড [biased], প্রিজুডিস (ঘটনা ঘটার আগেই ওর বিচার করা, পক্ষ নিয়ে ফেলা) হয়ে গেছেন! তাই এরা আদালতে বসারই যোগ্যতা হারিয়েছেন।

এখান থেকে আরো বড় প্রশ্ন উঠে আসে। তা হল, আমেরিকার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ- সুপ্রিম আদালতের এই পয়েন্টটাকে আমলে না নিয়ে এটা ছাড়াই সংসদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তকে ভুল বলে রায় দেয়া – এটাও তো আসলে ছিল বিচারকদের পক্ষপাতিত্ব ও প্রিজুুডিস চোখে ঘটনাকে দেখা ও বিচার করা, যা এক বিরাট অবিচারের নজির!!! তা এখন নির্দ্বিধায় বলা যায়!!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

[এই লেখাটা  দৈনিক  “নয়াদিগন্ত” পত্রিকার  ৯ এপ্রিল ২০২২ ওয়েবে আর পরদিন প্রিন্টে   প্রিজুডিসে ভুগছেন পাকিস্তানের বিচারকরা? – এই শিরোনামে  ছাপা হয়েছিল।   ঐ ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়।  আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং  থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন।  আসলে পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s