শ্রীলঙ্কার দুঃখের নাম ‘ডলার সভরেন বন্ড’
গৌতম দাস
১৬ মে ২০২২, ০০:০৫ সোমবার
Sri Lanka To Default on Dollar Bonds.
GOTA GOTA YOU FAILED! GOTA GOTA YOU FAILED!
উপরের প্রথম ছবিটা বিবিসির এক ভিডিওও ক্লিপ রিপোর্ট থেকে নেয়া। যেখানে নারী বিক্ষোভকারিরা শ্লোগান তুলছে GOTA মানে “প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া – তুমি ব্যর্থ!” শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া, তাঁর সরকার পরিচালনা বা ম্যানেজমেন্ট চরমভাবে ফেল করেছে। এক কথায় বললে তা মূলত ‘ইকোনমিক মিসম্যানেজমেন্ট’-এর কারণে। বাংলায় বলা যায়, অর্থনীতি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক দ্রুটি ও ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে এখানে। আর এতে এর ইমপ্যাক্ট মানে সাধারণ মানুষের জীবনের ওপর এর যা প্রভাব সেটা কড়া মানসিক আঘাতের পর্যায়ের! কিন্তু কেন মানসিক অবস্থার দিকটা এত গুরুত্ব দিচ্ছি?
সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন মানেই সবসময় তা একটি স্ট্রাগল; এক নিরন্তর লড়াইয়ের মধ্যে থাকে এমন জীবন। সমাজের যত নিচের বর্গে মানুষে লড়াই ততই যেন নির্মম সে লড়াই! কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে এটাই এক প্রধান ও মারাত্মক প্রসঙ্গ! কেন?
মানুষ তার জীবন-সংগ্রামের লড়াইগুলো কী হাসিমুখেই লড়তে পারে?? এটাই হচ্ছে মূখ্য প্রশ্ন! মানুষ অবশ্যই হাসিমুখেই তা লড়তের পারে কিন্তু কেবল এক শর্তে; সেটা হল এই যে, তাঁর এই লড়াকু জীবনের একটি শেষ আছে, এর অবসান আছে এবং তাহতে পারে এমন আশা আছে, ভবিষ্যৎ আছে – এই ইঙ্গিত চলতি লড়াকু জীবনে স্পষ্টভাবে থাকতে হবে। অর্থাৎ কষ্টকর জীবন-সংগ্রামে আশা আছে কোন ভবিষ্যৎ আছে কিনা? নাকি কোন শেষ নাই ফলে ভবিষ্যতই নাই – এমন নয় তো!!! একদিন এই কষ্টকর জীবন শেষ হবে এক নয়া ভোর আসবে – এটুকু দেখতে পেলেও কেবল মানুষ সব কষ্টের জীবন বাইতে রাজি থেকে যায় – না থাকলে অবশ্যই আত্মহত্যার কথা ভাববে! এমনকি চরম কষ্টের জীবন যার আরেক বটম লাইন হল, নিজ প্রজন্ম তো গেছেই – লড়তে লড়তেই এটা শেষ হয়ে যাবে দেখা যাচ্ছে; মানুষ নিজের সেই জীবন ও প্রজন্মও বাজি ধরে লড়তে লড়তেই শেষ করে ফেলতেও রাজি হয় – কিন্তু কেবল এক শর্তে। সেটা হল, এই নিজ প্রজন্ম বিলিয়ে দেয়ার বিনিময়ে হলেও যেন তার পরের প্রজন্ম থেকে, মানে নিজ সন্তানদের প্রজন্ম থেকে তাদের যেন আর অন্তত আর না খেয়ে থাকতে হয়। এই হলো সেই ন্যূনতম আশা; আর এটাকেই সে নিজ লড়াকু জীবনের ভবিষ্যৎ আছে বলে মানে। ইংরেজিতে এটাকে সাবসিস্টেন্স লেভেল [subsistence level] মানে কেবল বেঁচে থাকা ও অস্তিত্ব ধরে রাখার লড়াই হিসেবে দেখা হয়; অর্থাৎ ন্যূনতম অস্তিত্ব ধরে থাকতে পারবে, এ নিশ্চয়তা থাকতে হবে। আর অন্তত এটা ক্রমশ ভালর দিকে পরিবর্তিত হতেই হবে – এটাই সেই প্রণোদনা বা এই বোঝাবুঝির মৌলিক-বুঝ। নিম্নবর্গের মানুষকে এ নিশ্চয়তাটুকু দিতে হয়, এই আশার বাতিটুকু যেন না নিভিয়ে দেয়া হয় সে দিকে রাজনীতি ও সরকারকে খেয়াল রাখতে হয় – এটাই সাধারণ মানুষের এজীবন সমাপ্ত করে এথেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ। সেটাই একটা ন্যূনতম বুদ্ধিমান সরকারের লক্ষণ যে এদিকটা সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল এবং বাস্তব বোধবুদ্ধিসম্পন্ন! তাই নিচের ছবিতে আমরা দেখব এই মেয়েতা বলছে আজ আমার জীবনের আর কোন কোন ভবিষ্যত নাই [……at this point I don’t see any future]। অর্থাৎ যেন আত্মহত্যার পুর্বাবস্থায় পৌছে গিয়েছে তরুণী মেয়েটা! তাঁর পুরা বক্তব্য হল,
“As a young person may be about seven months ago, I would have said I have a future here but at this point I don’t see any future here” – নিচের ছবির তরুণী মেয়েটার বক্তব্য এটা। যারা ভিডিওও লিঙ্ক চান, এখানে খুলে দেখতে পারেন।
দুঃখের বিষয়, শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার সরকার এই ন্যূনতম যোগ্যতা দেখাতে পারে নাই। তাই নিজেই হেরে গেছেন। আর এতে স্বভাবতই ফলাফলে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষকেও তাদের নিজ নিজ জীবন সম্পর্কে পুরোপুরি হতাশ করে দিয়েছে। বেঁচে থেকে জীবন সংগ্রামের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। এ নিয়ে বিবিসির এই শিরোনাম এক টিনএজ তরুণী বলছে, ‘আমি অল্পবয়সী তবু এখন এখানে আমি আমার ভবিষ্যৎ দেখি না।’ অথবা রান্নার গ্যাসের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়ানো মানুষ হঠাৎ আর্তনাদ করে বলছে, ‘একমাত্র আল্লাহই আমাদের চাইলে বাঁচাতে পারে।’ এসবই হল – জীবনের আশার বাতি নিভিয়ে দেয়ায় কঠিন সব খেদোক্তি!!
এই হলো এখনকার শ্রীলঙ্কান জীবনের সাধারণ ও কঠোর বাস্তবতা! গত সোমবার ৯ মে এর সারা দিনে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত গণসন্তোষ-বিক্ষোভে এক সিটিং সরকারি এমপিসহ মোট আটজন নিহত হলেন। সিএনএনের ভাষ্যমতে, ৩৮ জন রাজনীতিবিদের বাড়ি তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। আর স্থানীয় লাইভ টেলিভিশনে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে যে, ‘সরকারি দলের সংগঠিত গুণ্ডারা লাঠিসোটা আর বুলেটের অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর রাজধানীর কয়েকটি স্থানে প্রথমে চড়াও হয়েছিল। সরকারের অনুমান ছিল, এসব বিক্ষোভ শক্তহাতে দমন না করে সামলালে তাদের জন্য বিপদ হবে। কিন্তু এতেই ঘটনা ঘটে উল্টা অর্থাৎ সরকার যে মানুষের জীবনের সব আশা কেড়ে নিয়েছে, এসব দিকে সরকারের খেয়াল ছিল না। আর এতেই আরো বিক্ষোভে ফেটে পড়া মানুষেরা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে হামলা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজ বাসা ছেড়ে এক নৌঘাঁটিতে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। আর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে জনগণের ক্ষোভ প্রশমনের করার চেষ্টা করেন।
তামিল-সিংহলি দ্বন্দ্বঃ
শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে এক বড় দীর্ঘ দিনের অসন্তোষের ইস্যু হল, দেশের প্রধান এথনিক জনগোষ্ঠী সিংহলিদের সাথে জনসংখ্যার প্রায় ১৮% [২০১২ সালের সরকারি গণনার হিসাবে, যা বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে তবে ১৯৮১ সালের হিসাবে যা ১৫% ছিল]। এই তামিল এথনিক জনগোষ্ঠী যাদের প্রায় ১১% শ্রীলঙ্কার স্থানিয় আর বাকিরা ভারত থেকে মাইগ্রেটেড তামিল। স্থানীয়ভাবে তামিলেরা মূলত শ্রীলঙ্কার উত্তরে ও পুবে বসবাস করে। মনে করা হয়, যারা মাইগ্রেটেড ব্রিটিশ আমলে এরা চাবাগান ইত্যাদিতে অগ্রসর ও দক্ষ শ্রমিক বলে তাদের ভারতের তামিলনাড় (পুরানা মাদ্রাজ) – থেকে শ্রীলঙ্কায় নিয়ে আসা হয়েছিল। আর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগ করলেও তামিলনাড়–র থেকে আসা তামিলরা স্থায়ী হয়ে শ্রীলঙ্কায় থেকে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে সিংহলিদের সাথে চেয়ে তামিলদের সাথে নাগরিকবৈষম্য বেড়ে গেলে সশস্ত্র রাজনীতির এলটিটিই [LTTE] গোষ্ঠীর জন্ম হয়। কিন্তু লম্বা ২৬ বছরেও কোনো আপস-সমাধান না আসায় বা অনেকের চোখে এ আন্দোলন সশস্ত্রতাতেই থেকে যাওয়ার আগ্রহ সীমাহীন ছিল বলে এটা কোনো সমাধানের চেয়ে যেন আজীবন সঙ্ঘাত চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত তৈরি করেছিল। ফলাফলে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী সশস্ত্র বলপ্রয়োগে আক্রমণ শুরু করলে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী ছারখার হয়ে যায়। আর সেটা ছিল মাহিন্দা রাজাপাকসের সরকারের আমল। তাই অনেক মনে করেন, সেই থেকে জাতিবাদী বীরের অহং তৈরি হয়েছিল মহেন্দ্র রাজাপাকসের পরিবারকে কেন্দ্র করে। যেমন এখন যিনি শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে তিনি পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র-এর আপন ছোট ভাই। এই পরিবারের মহেন্দ্র-ই প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ২০০৯ সালে, যার বাবা কেবল একজন এমপি ছিলেন। আর পরে এভাবে ২০১৯ সাল থেকে নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হন মাহিন্দার ছোটভাই গোটাবায়া। আর এরপর থেকে আস্তে আস্তে তাঁর সরকারে রাজাপাকসে পরিবারের অন্তত ২০ জন সদস্য মন্ত্রী বা এমপি হয়ে নানা পদে জড়িয়ে ছিলেন। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কান রাজনীতিতে রাজাপাকসে পরিবারের প্রভাব অনেক বেশি, তা অনুমান করা কঠিন নয়; যদিও এদিকটা বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবিসির এক রিপোর্টের শিরোনাম হলঃ শ্রীলঙ্কার সঙ্কট : যুদ্ধবিজয়ী বীরেরা কী করে ভিলেন হয়ে গেলেন [Sri Lanka crisis: How war heroes became villains]??
এখান থেকে আরেকটু অনুসিদ্ধান্ত টানা যাক। গত ৯ মে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা গণ-বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করার পরে আগেই উঠা প্রেসিডেন্ট ও ছোট ভাই গোটাবায়ার পদত্যাগের পাবলিক ডিম্যান্ড বা দাবি এখন আরো জোরদার হয়েছে। এরই মধ্যে গোটাবায়া তাদের দলীয়, আগে পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। যদিও তিনি বিরোধী দলীয় এখন এক এমপি মাত্র ছিলেন কিন্তু তাকে রাজাপক্ষে পরিবারের ঘনিষ্ট মনে করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হয়েই বিবিসিকে তিনি বলেছেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে গেছে [……PM described the Sri Lankan economy as “broken]। তাই তিনি পাবলিকের কাছে আহবান রেখেছেন “ধৈর্য ধরতে, তিনি সব কিছু ভালো জায়গায় ফিরিয়ে আনবেন” [“be patient, I will bring things back”.]”। কিন্তু তিনি কি সেই সুযোগ পাবেন?
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি কোনো আশা জাগাতে পারেননি। নিজেই এমন শঙ্কা ব্যক্তও করেছেন। বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক অবস্থা আবার ভালো হওয়ার সুযোগ পাওয়ার আগেই না আরো বেশি খারাপ হয়ে যায়” […… misery and unrest is “going to get worse before it gets better”.]”। এরই প্রতিধ্বনি যেন পাবলিক ডিম্যান্ডে যে গোটাবায়াকেও পদত্যাগ করতে হবে।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির বাস্তব অবস্থাটা কীঃ
এক কথায় এর জবাব, এই অর্থনীতির এক ব্যাপক সংস্কার করতে হবে এবং কমবেশি সবাই মানেন যে, আইএমএফের [IMF] হাতেই এই সংস্কার হলেই ভাল। অনেক এটাকে নয়া ঋণ গ্রহণের সাথে পরিশোধেরও কাঠামোতে বদল আনা বলছেন। এক পেছনে মূল কারণ হল, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (প্রধান পণ্য উৎপাদন চা-সহ) কোম্পানিগুলোর বড় একটা অংশ বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানির মালিকানায়। মানে পুরানা দিন থেকেই স্থানীয় ব্যবসায় বিদেশী নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি। সোজা কথায় এতে অর্থনীতির বৈশিষ্ঠ হবে – শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে প্রডাকটিভ ক্যাপিটালের (উতপাদক পুঁজি) চেয়ে বিনিয়োগ ক্যাপিটালের ()ইনভেস্টমেন্ট বা সুদী পুঁজির) ভুমিকা ও এর প্রভাব অনেক বেশি ও তা ডমিনেটিং হয়ে আছে। এছাড়া এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরেক বড় ফ্যাক্টর – সভরেন বন্ড [Sovereign Bond] !!
সভরেন বন্ড কীঃ
ইংরেজি সভরেন [sovereign] শব্দের আক্ষরিক অর্থ সার্বভৌম। কিন্তু অর্থনীতিতে সভরেন শব্দ ব্যবহার হয় একটু ভিন্ন অর্থে। এখানে সভরেন মানে ‘রাষ্ট্র নিজে গ্যারান্টি দিচ্ছে’ এ ধরনের। কিন্তু ঠিক কিসের গ্যারান্টি? সে প্রসঙ্গে যাবো।
সাধারণত ‘বন্ড’ বলতে তা সরকারি সিল-ছাপ্পড় মারা এবং যা এক কাগুজে “নোট” [note] লিখে দেয়া ছাড়া কিছুই নয়। আর এই শব্দের মূল অর্থ একটা নোট লিখে দিয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়া। কিন্তু সভরেন বন্ড, একসাথে শব্দদুটা কথার মানে হল, কেউ নিজ অর্থ দিয়ে কোনো রাষ্ট্রের সভরেন বন্ড কিনতে পারে। এর বিশেষত্ব হলো এর ম্যাচুরিটি মানে পাঁচ বছরের বন্ড হলে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়া শেষে এর সুদসহ আসল অর্থটা ঐ রাষ্ট্র বন্ড ক্রেতাকে ফেরত দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আর স্বভাবতই এই সভরেন বন্ডের বেলায়, এটা কোনো ব্যক্তি বা প্রাইভেট কোম্পানির ইস্যুকৃত ও বিক্রি করা কোন বন্ডে দেয়া গ্যারান্টির চেয়ে খোদ রাষ্ট্রের নিজের দেয়া গ্যারান্টির ওজন ও আস্থা পাবলিকের কাছে অনেক বেশিই হবে।
এই বিচারে কোনো সরকারের ইস্যু করা ‘ডলার সভরেন বন্ড’ (International Sovereign Bond – ISB) মানে, বৈধ আমেরিকান ডলার খরচ করে যে বন্ড কিনতে হবে – এমন বন্ড (ইস্যু করে) ছেড়ে সরকার নিজ প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা জোগাড়ের এক সহজ উপায় বলে একালে মনে করা হয়। যদিও এটা অনেক রিস্কি একটা পদক্ষেপ। তবে এটা আমেরিকার মত বড় ও প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতির দেশের বেলায় গ্লোবাল পুঁজিবাজারে আমেরিকান সভরেন বন্ড যথেষ্ট আস্থাবাচক – এক বন্ড কেনা ও বেচার ব্যবস্থা – তা বুঝা যায়। যেমন জাপান ও চীন এদের একেক দেশ, এখন আমেরিকার এমন এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের সভরেন বন্ড এখনো কিনে রেখেছে। কিন্তু বলাবাহুল্য বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার সরকার যদি অমন সভরেন বন্ড ইস্যু করে থাকে তবে তা একই মাত্রার আস্থাবাচক বা ওজনদার হবে না।
তবে বাস্তবে বাংলাদেশ কখনোই এমন সভরেন বন্ড ইস্যু বা চালু করেছে বলে জানা নেই যদিও চলতি সরকারের আমলেই সময়ে এমন কিছু বিক্ষিপ্ত আলোচনা উঠেছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকারের ইস্যু করা সভরেন বন্ড আছে। আর শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রধান কারণ এই বন্ডের উপর প্রতিশ্রুত সুদাসল পরিশোধে শ্রীলঙ্কা সরকারের অপারগতা। বলে, অনেক ইন্ডিপেনডেন্ট রিপোর্ট অথবা সিএনএন, বিবিসিসহ শ্রীলঙ্কার স্থানীয় মিডিয়াতেই মানা হয় যে, শ্রীলঙ্কান সভরেন বন্ডের সর্বশেষ সুদ ফেরত দেয়ার তারিখ ছিল গত ১২ এপ্রিল ২০২২।
কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকারের ইস্যু করা সভরেন বন্ড আছে। আর শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রধান কারণ এই বন্ডের উপর দেয়া প্রতিশ্রুত সুদাসল পরিশোধে শ্রীলঙ্কান অর্থনীতির অপারগতা!
সরকার নিজেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে তারা এই অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছে; পারছে না – রেডি নয় বলে অপারগতা জানায়। আর তখন থেকে গ্লোবাল পুঁজি বাজারে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ও সরকার ডুবে যাচ্ছে এখবর আর লুকানো না থেকে চাউর হয়ে যায়। তবে এসব কথা কেবল গত এপ্রিল ২০২২ এর নয়। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসেও একইভাবে (ISB) এর পাওনা পরিশোধ করতে শ্রীলঙ্কা সরকার ব্যর্থ হয়েছিল। যদিও তখন শ্রীলঙ্কান অর্থনীতি যে সংকটের কথা স্বীকার করা হয় নাই।এনিয়ে তখনকার আলজাজিরার রিপোর্ট এখানে।
The government is due to make a $36 million interest payment on a 2023 dollar bond April 18, as well as $42.2 million on a 2028 note, Bloomberg-compiled data show. A $1 billion sovereign bond was maturing July 25.
এটা ছিল ভারতের এক মিডিয়া বিজনেস স্টান্ডার্ড এর রিপোর্ট থেকে নেয়া কিছু অংশ।
আর সেবার এপ্রিলের ব্যর্থতায় আরো বলা হয়েছিল জরুরি খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধ ইত্যাদি আমদানির অর্থ না থাকাতে তারা তখনই আর নিজ বৈদেশিক মুদ্রাভাণ্ডার খালি করতে চাইছেন না। কিন্তু কার্যত এটা দাঁড়িয়ে যায় যে, সরকার একদিকে আইএসবি বন্ডের পাওনা শোধ করেনি আবার প্রয়োজনীয় জরুরি দ্রব্যাদিও সব আমদানি করতে পারেনি। ফলে জ্বালানি তেল, জ্বালানি গ্যাস ও খাদ্যশস্য এমনকি স্কুলের পড়ালেখার কাগজ ও ওষুধও পর্যাপ্ত আমদানি করতে পারেনি বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে। মুল কারণ চাহিদার তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রা ছিল অনেক কম। আর একবার এমন সাপ্লাইয়ের অভাবের কথা বাজারে রটে গেলে আমদানি-সাপ্লাই দ্বিগুণ করেও বাজার থিতুতে আনা যায় না। কালোবাজারি-মজুতদারি হয়ে যায় বাজারের মূল ফেনোমেনা। আর এথেকেই সেটাই শ্রীলঙ্কার সমাজ ও অর্থনীতিতে স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠার অবস্থা সৃষ্টি করেছিল।
বৈদেশিক বন্ড বা ISB প্রসঙ্গে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা। আমাদের মত দেশে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংক বা চীনা বা অন্য কোনো দেশের ঋণ নেয়ার চেয়ে ISB ইস্যু করে গ্লোবাল পুঁজিবাজার থেকে ডলার জোগাড় করা – এদুটার মধ্যে কোনটা ভাল? অথবা দুটোর ভালো-মন্দ কী? বিশেষজ্ঞরা আমাদের মত দেশের বেলায় বন্ড বা ISB ইস্যু করাকে নিরুৎসাহিত করে থাকেন, তুলনায় অবকাঠামো (বিশ্বব্যাংক বা চীনের মতো দেশ থেকে) ঋণ নেয়াকে ভাল মনে করে। এর পিছনের কারণ বলা হয়, অবকাঠামো প্রকল্প বাজেটে বরাদ্দ (ডলার মুল্যে) যেসব অর্থ অন্তত স্থানীয়ভাবে কিনতে বা ব্যয় করতে হবে; যেমন, স্থানীয় শ্রম কিনতে হবে হয়ত অথবা সিমেন্ট বা রড ধরনের কাঁচামাল ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য বা প্রকল্পের জন্য একোয়ার [acquire] করা জমির মূল্য পরিশোধ – এসবের তুল্য সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা যা বাজেটে বরাদ্দ থাকে তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে প্রাপ্ত স্থানীয় মুদ্রা ওই প্রকল্প নিজ অ্যাকাউন্টে তা জমা করে নেয়। এরপর সেখান থেকে ঐ টাকা স্থনীয় ক্রয়ে ব্যয় করা হয়। এতে ব্যয়িত ঐ বৈদেশিক মুদ্রাকে রাষ্ট্রের অর্থনীতি রাষ্ট্রের বৈদেশিক মুদ্আরা আয় হিসেবে গণ্য করার সুযোগ থাকে। আর তুলনায় বন্ড- ISB ইস্যু করে বৈদেশিক মুদ্রা জোগাড় করলে তা সুদসহ আসল এর সবটাই আবার ডলারে ফিরে পরিশোধ করতে হয়। এ কারণে বন্ড- ISB ইস্যুর চেয়ে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে প্রকল্প উৎসাহের বিষয় বলে গণ্য করা হয়। দেখা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কা এসব বাছবিচার বিবেচনাকে আমল না করে এগিয়ে চলতে গিয়ে বন্ড- ISB ইস্যু করা অনেক সহজ কাজ মনে করতে গিয়ে আজ বিপদে পড়েছে! এটা অবশ্যই বেপরোয়া আচরণ!
আসলে যারা বন্ড- ISB কিনেছিলেন তাদেরকে প্রদেয় এপ্রিল ২০২২ এর কিস্তির অর্থ দিতে ব্যর্থতা ছিল সবচেয়ে বড় ঘন্টা বেজে যাওয়া যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি বিশাল সংকটে পড়ে গেছে। অথচ এথেকে দেশকে বের করার মত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে গোটাবায়া সরকার ছিল ততোধিক উদাসীন। যেন সরকার আরামে অপেক্ষা করছিল যেন এক মিরাকল ঘটবে আর অর্থনীতির এই মারাত্মক সংকট মুহুর্তেই সমাধান হয়ে যাবে। অথচ ব্যাপারটা মোটেই তা ছিল না। ফলে সরকার এসব সংকটকে ঠিকঠাক বুঝতে পারে নাই বা সংকটটারই গুরুত্ব আমল করতে সক্ষম ও যোগ্যতা দেখাতে পারে নাই। আর এটাই মূল ব্যর্থতা।
সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতিতে এথেকে উদ্ধার পেতে গেলে সেই সমাধানের ব্যাপারে ওই রাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর গ্লোবাল বাজারের আস্থা থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি মনে করা হয়। যেমন গত ফেব্রুয়ারি থেকেই শ্রীলঙ্কান অর্থনৈতিক রেটিংয়ের ইন্ডিপেন্ডেন্ট, এমন অন্তত দু’টি প্রতিষ্ঠান শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে খারাপ রেটিং দেয় বা রেটিং নামিয়ে দিয়েছিল। এর সোজা ফলাফল হল, বিদেশীরা এই রেটিং দেখেই কিন্তু বন্ড-ISB বা কোনো দেশীয় প্রাইভেট কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করতে আসে। এসব কারণে, যখন গ্লোবাল বাজার দেখে যে, একটা দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটে ফাইনালি আইএমএফ এসে ঐ দেশকে উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করছে কীনা??? এটাই গ্লোবাল পুঁজি বাজারে সবার কাছে এক আস্থার চিহ্ন ছড়িয়ে দেয়। অতএব, সে কারণেই সবাই এখন তাকিয়ে আছে আইএমএফের সাথে শ্রীলঙ্কা সরকারের যে কথা-নেগোশিয়েশন চলছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে, তা কবে এথেকে তা একটা চুক্তিতে তা পরিণতি ও সম্পন্ন হতে সমর্থ হয়!! যার ব্যবহারিক অর্থ, শ্রীলঙ্কান অর্থনীতি উদ্ধারে আইএমএফ তার কাজ শুরু করে!
উপরে যে সভরেন বন্ডের কথা বললাম, যা পরিশোধে শ্রীলঙ্কা সরকার এখন বিনিয়োগকারিদের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারি [defaulter] হয়ে আছে – এই অর্থ পরিশোধ করবে কী করে? কার থেকে আবার অর্থ ঋণ করে এনে? এই বাস্তবতাটা এতই কঠিন যে একমাত্র আইএমএফ-ই [IMF] হতে পারে সেই সম্ভাব্য উতস। এক রিপোর্ট ধারণা দিচ্ছে যে শ্রীলঙ্কাকে এক্ষণি পরিশোধ করতে হবে এমন অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার [……Sri Lanka’s external debt servicing obligations were thought to be over USD 6 billion.]। আর এত বিশাল পরিমাণ অর্থ একমাত্র আইএমএফ-ই যোগাতে পারে এবং সবচেয়ে বড় কথা বাজারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে!
যদিও এসবের মধ্যে আরেক বড় জটিলতা হল, ঐ দেশের চলতি রাজনৈতিক অবস্থা দেখে বুঝাই যাচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া, তাঁরও পদত্যাগ বিনা কোন নুন্যতম রাজনৈতিক স্থিরতা আসছে না। যার অর্থ আইএমএফ তা হলে কি পরবর্তি নতুন নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করবে? সোজা কথা, গোতাবায়া যতই নিজের পদত্যাগে দেরি করবেন ততই আইএমএফ সংস্কার কাজে নামতেই দেরি করবে! বলাবাহুল্য এর মানে শ্রীলঙ্কা আরো দীর্ঘসময় ধরে চলবে চরম বিশৃঙ্খলা!! অথচ ঘটনা সে দিকেই যাচ্ছে। একদিকে বাজারে খবর হল, নতুন শপথ নেয়া প্রধানমন্ত্রী রনিলকে গোতাবায়ার লোক মনে করা হয়। অর্থাৎ তাই দেশের মানুষেরই আস্থা নাই। ফলে এদের সবার পদত্যাগ না দেখলে নয়া রাজনৈতিক ঐক্য আনা ও সংস্কার কার্যকর করতে এগিয়ে আসা সব পিছিয়ে অনিশ্চিত হয়ে যেতে থাকবে!!!।
চীনবিরোধী প্রপাগান্ডার কী খবরঃ
শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা নিয়ে যেসব সিরিয়াস মিডিয়া রিপোর্ট করছে এদের মধ্যে যেমন ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বা বিজনেস স্টান্ডার্ড ইত্যাদি আছে – সব মিলিয়ে এরা কেউই এই অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য শ্রীলঙ্কা ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ পড়েছে বলে কোন কারণ দেখায় নাই। মানে এসব মিথ্যা তথ্যের প্রপাগান্ডা করেনি। বরং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একটা ব্যাখ্যামূলক [Explained] রিপোর্ট করেছে। এখানে দেখেন,……Explained: What led to Sri Lanka’s economic crisis, and who’s is helping?। তাতে স্পষ্ট করে জানাচ্ছে, শ্রীলঙ্কার নেয়া মোট বৈদেশিক ঋণের (সেটা নাকি ৫১ বিলিয়ন ডলার বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে – Sri Lanka announces default on all of its $51 billion external debt )। কিন্তু এই কথাটা সবটা সত্য না। ৫১ বিলিয়ন ডলার – এটা সবটাই প্রতিশ্রুতি ফেল করা ঋণ যেটাক্বে ডিফল্টার (default) বলে টঝিক তা না। একটা দেশের নেয়া মোট বৈদেশিক ঋণ আর সভরেন বন্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডলার যোগাড় একই জিনিষ নয়। মূলত সভরেন বন্ড জিনিষটা ঋণ নেয়াই নয়। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক বা চীন জাপান থেকে নেয়া ঋণের বেলায় সময়ে কিস্তি পরিশোধ করতে পারার পরিণতি হল – পুনরায় পরিশোধের সময় দেয়া [রিসিডিউল বা reshedule] তবে সাথে আরো কিছু কড়া শর্তে। কিন্তু ডিফল্টার করে বাজারে খবর রটিয়ে ঐদেশের রেটিং বা অর্থনীতির মান ফেলে দিয়ে নয়। আর সভরেন বন্ডের প্রতিশ্রুতি ফেল করা অন্য জিনিষ। এখানে রিসিডিউলের কিছু নাই। যতদ্রুত সম্ভব সব পাওনা দেরির সুদ-সহ পরিশোধ করা। নইলে গ্লোবাল পুঁজি বাজারের বদনামে রেটিং আরো নিচে নেমে না দেউলিয়া ঘোষণা করে দেয়।
কিন্তু এই ৫১ বিলিয়ন ঋণ দেখানো এটা সবটাই সভরেন বন্ডের ডিফল্টার বা প্রতিশ্রুতির অর্থ নয়। এটা শ্রীলঙ্কার পরিশোধযোগ্য মোট বৈদেশিক দায়। দায় মানেই তা ঋণ নয়। আর এই মোট ৫১ বিলিয়নের মধ্যে মাত্র ১২.৫৫ বিলিয়ন ডলারের হল সভরেন বন্ড-ISB ইস্যু করে নেয়া বৈদেশিক দায়। তাই টাইমস অব ইন্ডিয়া পরোক্ষে এমন মানে করে রেখেছে (যেটা আসলে একটা প্রপাগান্ডা) যেন এই ৫১ বিলিয়ন ডলারের পুরোটার ওপর ডিফল্টার হওয়াতেই যেন শ্রীলঙ্কার ক্রাইসিস। এ কথা সত্য নয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, বন্ডের ক্রেতার দায় মাত্র ১২.৫৫ বিলিয়ন ডলারের আর এসব বন্ড যারা কিনেছে এরা হলো প্রধানত জাপান, চীন ও এডিবি সাথে কিছু খুচরা বিনিয়োগকারী [ISBs make up the largest share of Sri Lanka’s foreign debt at $12.55 billion, with the Asian Development Bank, Japan and China among the other major lenders.]।
এর সোজা মানে হল, চীনের কোনো ঋণ-গছিয়ে দেয়ার ফাঁদে পড়ার গল্প এটি নয়। এটা সোজাসাপ্টা বন্ড-আইএসবি ইস্যু করার বাজার থেকে অর্থ তুলে আনার বোকামি, এটাই মিস-ম্যানেজমেন্ট এবং বন্ড ক্রেতাদের কিস্তির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতায় বাজারে খারাপ ইমেজ আর খারাপ অর্থনীতি আর তা মিস-ম্যানেজ বা ভুল পরিচালনাজনিত সমস্যা।
কিন্তু তবুও ভারতেরই আরেক দল মিডিয়া (যেমন টাইমস অব ইন্ডিয়া ছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম আলো বা নিউএজ যারা হয়ত না বুঝে প্রপাগান্ডার শিকার) – এরা শ্রীলঙ্কার বর্তমান সংকটকে চীনের ঋণ-গছিয়ে দেয়ার ফাঁদ বলে পুরোনা স্টাইলের প্রপাগান্ডার মধ্যে এখনো আছে ও চালিয়ে যাচ্ছে। আর এদের মিথ্যা প্রপাগান্ডার ভিত্তি এএফপির নামে চালানো এক রিপোর্ট। যে একই রিপোর্ট টাইমস অব ইন্ডিয়া, ভারতের এনডিটিভি, আমাদের প্রথম আলোর অনুবাদ আর নিউ এজ সহ আরো অনেকে তুলে এনেছে। মজার কথা হল শিরোনাম এবং খবরের একই সোর্স হলেও তাতে ভিতরে বডিতে কনটেন্ট সবার এক না। আর এদের সবার মধ্যে কেবল এনডিটিভি একটা ডিসক্লেমার জুড়ে দিয়ে শেষে জানিয়েছে (This story has not been edited by NDTV staff and is auto-generated from a syndicated feed.)।অর্থাৎ তারা কোন শব্দও এতে ঢুকায় নাই।
এ ছাড়া একই প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে ভারতের আইপি টিভি (প্রথম কলকাতা) বা সোশ্যাল মিডিয়া টিভি অথবা ফেসবুক ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি, এসব জায়গায় গেঁথে বসা প্রপাগান্ডা ধারণাটা হল, সেই পুরানা গল্প – চীনা ঋণের কারণেই শ্রীলঙ্কা অর্থনীতির আজ এ দুর্গতি। অথচ এটা ভিত্তিহীন।
আর সবচেয়ে বড় কথা, ওই হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দরের মালিকই এখন আর শ্রীলঙ্কা সরকার নয়। তাই ওটা নির্মাণের ব্যয় পরিশোধের কোনো দায় বা ঋণের বোঝা শ্রীলঙ্কান সরকারের নয় ও নাই। সোজা কথায়, এখন বন্দরের মালিক শ্রীলঙ্কা সরকার নয়। ওর মালিক এখন চীনের এক প্রাইভেট কোম্পানি যারা বন্দর চালিয়ে নিজের আয় থেকে দায় তুলে নেবে ও নিচ্ছে। ফলে ওই বন্দর নির্মাণ খাতের কোনো ঋণ শ্রীলঙ্কা সরকারকে বইতে হচ্ছে না ও নাই; ওই বালাই-ই নেই এই হলো বাস্তবতা!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
[এই লেখাটা দৈনিক “নয়াদিগন্ত” পত্রিকার ১৪ মে ২০২২ ওয়েবে আর পরদিন প্রিন্টে “জীবনের ভবিষ্যৎ আছে, এ আশা কেড়ে নিতে নেই“– এই শিরোনামে ছাপা হয়েছিল। ঐ ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়। আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন। আসলে পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]
–