সব এথনিক ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর সমমর্যাদা ও সমঅধিকার


অপর এথনিক-ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো অপরাধ;
দরকার সমমর্যাদা ও সমঅধিকারের প্রতিশ্রুতি

গৌতম দাস

১৯ জুন ২০২২, ০০:০৬ সোমবার

https://wp.me/p1sCvy-48J

      Prophet Muhammad comments, by Nupur Sharma

গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভারত মানে এখন তা “নূপুর শর্মা” ইস্যু। গত ২০১৪ সালে বিজেপির মোদি ভারতের ক্ষমতায় আসার পর থেকে এত খারাপভাবে ‘হিন্দুত্ববাদী’ এ’রাজনীতি মুসলমানবিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়াতে গিয়ে উলটা পরাজয় ও পশ্চাদপসরণ করেনি। অথচ চলতি বছরের মার্চের মধ্যেও উত্তরপ্রদেশসহ অন্য পাঁচ রাজ্যে [Uttar Pradesh, Uttarakhand, Punjab, Manipur and Goa] নির্বাচনে সরাসরি ও প্রকাশ্যে মুসলমান কোপানোর (দমন, পীড়ন ও নিগ্রহ) কথা বলে ভারতের হিন্দু ভোট সব বিজেপির বাক্সে জোগাড়ের এমন তৎপরতা এর আগে কেউ দেখেনি। অর্থাৎ যেটাকে মনে হচ্ছিল, যেন কোনো বিজেপি নেতা মুসলমান কোপানোতে কে কত নৃশংস হতে পারে এই হিন্দুত্ববাদই ভারতের একমাত্র রাজনীতি, সেই রাজনীতিও নুপুর শর্মা ইস্যুতে এসে হঠাৎ প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে যায়। ভারতের দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় এখন এ নিয়ে অন্তত এমন সাব-হেডিং দেখতে পাওয়া যাবে যে ‘বিজেপি বা মোদি শক খেয়েছে’!

মানুষের সমাজ ও হাটবাজারঃ
মানুষের সমাজের হাটবাজার মানুষের সমাজের মতোই সমান বহু পুরানা। আর হাটবাজার-গঞ্জ এগুলো হলো সেই জায়গা, যেখানে সমাজের আমরা আসলে সবাই একে অপরকে পরস্পরকে স্বীকৃতি দেই, তাতে সেটা সচেতন থেকে বা না থেকে যেভাবেই করি। আর তাতে যথোপযুক্ত সম্মান-মর্যাদাসহই আমরা পরস্পরকে স্বীকৃতি দিয়েই তা করি। কিন্তু সেটি কিভাবে? যখন আমরা হাটে পরস্পরের সাথে পণ্য-বিনিময় সম্পর্ক করি। তাই একটা হাট মানে এর মূলকথা হল, নিজ পণ্য বা অর্থের বিনিময়ে অনের কাছ থেকে পণ্য বা অর্থ নেয়া, এর এক লেনদেন। যেটা একদিক থেকে দেখলে পরস্পরের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত হওয়াও বলা যায়। আবার অন্যদিক থেকে দেখলে পণ্য বিনিময়কারী আমরা এর মাধ্যমে পরস্পরকে স্বীকার করে নিয়ে থাকি যে অন্য-আপনি সমাজে আছেন  ও অবদান রাখছেন। এটাই আসলে উপযুক্ত সম্মানসহ পরস্পরকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া-নেয়া করা। এককথায় তাই, হাটবাজার মানে আসলে যেখানে মানুষ পরস্পরকে সামাজিক সম্মান ও স্বীকৃতি আদান-প্রদান করে নেই। সমাজে পারস্পরিক উপস্থিতি ও অব্দান রাখাকে স্বীকার করে নেই।

আবার  গ্রামগঞ্জের এই প্রত্যন্ত হাটবাজারগুলোরই বৃহত্তম অর্থে এর রূপটাই হল এক ‘গ্লোবাল বাণিজ্য ব্যবস্থা’ বা সিস্টেম [Global Commerce & Exchange System]। এক গ্লোবাল স্বীকৃতির আদান-প্রদান ব্যবস্থার এক গ্লোবাল বাণিজ্য যেটা দুনিয়াজুড়ে এখন সব রাষ্ট্রেরই প্রাণভোমরা। সব রাষ্ট্রের জন্যই এটা এখন খুবই জরুরি যে, এই গ্লোবাল ব্যবস্থার অংশ হয়ে এতে অবস্থান নিয়েই তাকে থাকতেই হবে। সোজা কথা, এই ‘গ্লোবাল বাণিজ্যে’ আপনার রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ও সক্রিয়তা নাই; আপনি এর কেউ নন; আপনাকে ছাড়াই এই ব্যবস্থাটা চলছে অথবা এর মধ্যে ন্যূনতম কিছু ঢিলেঢালা দেখা যাচ্ছে – এটা টের পেলেই সেই সরকার ও দেশের মানুষ বুঝে যায় সামনে খারাপ দিন আসছে, এখন কষ্ট করতে হবে। খেয়ে না-খেয়ে মরার দশায় পড়াসহ যেকোনো কিছু্ইর বিপদ এখন আসন্ন হতে পারে।
পুরনো গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত হাটবাজারগুলোর কথায় যদি আবার ফিরি আর এবার যদি কল্পনা করি যে, ঐ হাটবাজারে মানুষ পারস্পরিক স্বীকৃতির আদান-প্রদানও করব বা পণ্য বেচাকেনাও করব কিন্তু একইসাথে হাটে কিছু কিছু ব্যক্তির বাবা-মা নাম ধরে গালাগালি ও নিচা দেখানোর রেওয়াজও আমরা চালু রাখতে চাই – তাহলে কী সেটা করা যাবে?

আসলে সে ঘটনাটাই ঘটেছে মোদির ভারতের ক্ষেত্রে। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলমান-প্রধান রাষ্ট্রগুলো সেসব দেশে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রকারান্তরে এই হুমকিটাই তৈরি করেছে যে, তারা ভারতের সাথে গ্লোবাল বাণিজ্য সম্পর্ক আর করবে না যদি ভারত ক্ষমা না চায়। কারণ তুমি আমার নবীকে অপমান করেছ। এর ফলে মোদির ভারত গ্লোবাল বাণিজ্যে পারস্পরিক পণ্যবিনিময় ও স্বীকৃতির চাওয়ার সাধারণ তৎপরতা এবং একই সাথে নবীর অপমান ও ইসলামবিদ্বেষ – এদুটো একসাথে চাইতে পারে না।  মোদির ভারতের রাষ্ট্রদুত-দেরকে তলব করার অর্থ-তাতপর্য হয়েছে এটাই। মুলত এই ম্যাসেজটাই মুসলমান-জনগোষ্ঠিপ্রধান রাষ্ট্রগুলো ঐ রাষ্ট্রদুত তলবের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে।

এক কথায় বললে, এ’দুটো আসলে একেবারেই পরস্পরবিরোধী।  হাটবাজার বা গ্লোবাল বাণিজ্য সেটা যাই হোক  সেক্ষেত্রে তখন হয় তা সম্মানের সাথে পরস্পরকে স্বীকৃতি দিয়ে আগের মতোই হাটবাজারটা চলবে আর নয়ত এই হাটবাজারকে উঠে বা ভেঙে যেতেই হবে। এছাড়া কথা আরো আছে। যেমন – আবার মানুষ তো কেউ একা নয়। এমনকি কেউই কেবল সে আর তার মা-বাবাই আছে, এমন হয় না। বরং সব মানুষের সাথে ও কাছেই অজস্র তাঁর সম্মানিত অন্যান্য অনেক ব্যক্তিত্বরাও থাকেন। আর সেটা আরো ছাড়িয়ে একেবারে তার স্ব স্ব ধর্মীয়জগতের সর্বোচ্চ সম্মানীয় স্থানে অধিষ্ঠিত ও অবস্থিত ব্যক্তিত্বরাসহ আরো অনেকেই থাকেন! সে কারণেই হাটবাজারে ব্যক্তিদের পরস্পরকে স্বীকৃতি দেয়া-নেয়া কথাটার ব্যবহারিক মানে হল, এখানে ব্যক্তি বলতে সবারই স্ব স্ব সংশ্লিষ্ট এমন ধর্মীয় জগতের সর্বোচ্চ সম্মানীয় ব্যক্তিত্বের সম্মান করাসহ-ই বুঝায়।  আমরা প্রত্যেকে একে-অপর মানুষের প্রিয় ও সর্বোচ্চ সম্মানীয় ব্যক্তিত্বের সম্মান করতে বাধ্য। কারণ তা নইলে আমাদের লোকাল বা গ্লোবাল কোন বাজার-বিনিময় ব্যবস্থা ফাংশনাল থাকতে পারে না।

একমাত্র পথ সব এথনিক ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর সমান মর্যাদা ও সমঅধিকারের এক দুনিয়া:
আমরা সবাই নিজের একেকটা সভ্যতাগত (সিভিলাইজেশন) পরিচয় বহন করি, যা আমাদের স্ব স্ব এথনিক [ethnic] বা নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের উতস। আর এথনিক পরিচয়ের মধ্যে অনেকগুলো উপাদানে তা পুর্ণ থাকে; যার মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হল থিওলজিক্যাল [Theological] পরিচয় বা ধর্মীয় পরিচয়। মানুষের বৈষয়িক চাহিদার মতই থিওলজি যা আমাদের আরেক ধরনের চাহিদার মিটিয়ে থাকে এর নাম। থিওলজি, এটাই আমাদের স্পিরিচুয়াল চাহিদা মিটিয়ে এসেছে পুরনো সেই যুগ থেকে। কাজেই মানুষমাত্রই তাঁর আরেক থিওলজিক্যাল গ্রুপ ও ট্রাডিশন-সহ পরিচয়ও থাকে। তাতে আপনি ধর্ম মানা বা চর্চায় কতটা সিরিয়াস বা সক্রিয় সেটা কোন বিষয়ই নয়। কিন্তু কেউ আমাকে আমার থিওলজিক্যাল পরিচয় তুলে ধরে আমাকে নিচা দেখানোর চেষ্টা করলে সেই আমিই সম্ভবত নিজ ধর্মীয় আইডেনটিটির পক্ষে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে কঠিন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাব! এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক!  মানুষের এসব অপমানবোধের প্রতিক্রিয়া খুবই মারাত্মক-ই হয় এবং তা সবচেয়ে স্বাভাবিক!  কাজেই এগুলো হাল্কা করে দেখার কোন সুযোগ-ই নাই!

মধ্যপ্রাচ্যের কাতারের কাছে কাতারীয় গ্যাস-বিক্রির ক্রেতা হল ভারত; এক বিরাট বাজার। কিন্তু কাতার ভারতের কাছে নিজ গ্যাস বিক্রির লোভে ভারতকে তার ঘাড়ে পা রেখে হাঁটতে দেয়নি। বরং সোজা তাঁর নবীর অপমানের বিরুদ্ধে রুখে উঠেছে। ব্যবসা অনেক পরে; আগে আত্মসম্মান, নিজ মহানবীর মর্যাদা, এই চিন্তা অনুসরণে!

ভারতে হিন্দুত্ববাদের নষ্টামি:
ভারতে হিন্দুত্ববাদের নষ্টামির উৎস অনেক পুরনো; ব্রিটিশ আমলের প্রায় শুরু থেকেই। জেনে না জেনে রামমোহনের আমল থেকে (১৮১৫) তাঁর হাত ধরে ও তাঁর অবাস্তব ও কিছু ভুল চিন্তার কারণে। এরই পরিণতি হল এক হিন্দুত্ববাদ। সবাইকেই কথিত এক ‘হিন্দুজাতির অংশ’ – জবরদস্তিতে তা কল্পনা করে নিয়ে ‘কংগ্রেস’ হল সেই ‘হিন্দুজাতির’ ভারত গড়ার প্রথম রাজনৈতিক দল। আর এর প্রায় শত বছর পরে আরো বড় ভুল ও কট্টর রেসিজম হল ‘সাভারকারদের’ [Vinayak Damodar Savarkar] হিন্দু মহাসভা দলের জন্ম ও ততপরতা। যেটা আবার কংগ্রেসের মত ঠিক রাখঢাক করে থাকা বা চলে না এমন বেপরোয়া এক কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি। তার উত্তরসূরি হল এখনকার আরএসএস-বিজেপি সংগঠন। গত আট বছর মোদির বিজেপি ক্ষমতায়, সামনে তৃতীয়বারও (২০২৪) আবার ক্ষমতায় আসা তাঁর স্বপ্ন। কিন্তু মোদির অর্থনীতি বারবার তার হাত ছেড়ে দিয়ে বিগড়ে যেতে চেয়েছে। তাই গত বছর থেকে মোদির রাস্তা হয়েছে এখন সরাসরি মুসলমান কোপানো এমনকি প্রকাশ্যে সংসদেসহ সবখানে বসে বেপরোয়াভাবে ইসলামবিদ্বেষী হয়ে কথা বলা, ঘৃণা ছড়ানো। এতে অবস্থা এমন যে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বা নির্বাচন কমিশন – এসব প্রতিষ্ঠান নিজেই এখন মোদির নির্বাহি ক্ষমতার সামনে নিজেকে গুটিয়ে সরে থাকাটাই করণীয় মনে করছে। ভারত-রাষ্ট্রকে আরো দুস্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। সর্বশেষ যেমন, ভারতের তিন নির্বাচন কমিশনারের একজন [Ashok Lavasa] যিনি কমিশনকে আইনমাফিক পরিচালিত করতে চাইতেন তিনি এখন আর মোদির চাপ সহ্য করতে না পেরে আপসের রাস্তায় নিজ চাকরি বদলে নিয়েছেন। তিনি এখন নির্বাচন কমিশন ছেড়ে ম্যানিলায় এডিবির (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ADB) হেড অফিসে মোদির প্রতিনিধি হয়ে নিজ চাকরি বদলে নিয়েছেন!

বিজেপি দলীয় প্রধান মুখপাত্রঃ
একটা দলের প্রকৃত অবস্থান ঠিক কার মাধ্যমে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে মনে করতে হবে তা বুঝানোর জন্য যখন কাউকে দলের ‘মুখপাত্র’ বলে ঘোষণা করে, তা বলতে বুঝানো হয় তিনি দলের ফরমাল বক্তা ও মুল প্রতিনিধি। অর্থাৎ ‘মুখপাত্র’ ছাড়া অন্য কারো বক্তব্যই বরং দলের বক্তব্য নয় মনে করতে হবে, এই হল এর অন্তর্নিহিত অর্থ। এই বিচারে নূপুর শর্মা-কে [Nupur Sharma] দলের মুখপাত্রই করা হয়। যদিও নূপুর শর্মা সিরিয়াস বিশ্বাসী বলতে যা বোঝায় তেমন আরএসএস-বিজেপির কেউ নন। বরং একজন ‘কেরিয়ারিস্ট’ [Careerist] বললে আমরা যা বুঝি তাই বুঝায়। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট থাকার সময় সংসদের ভিপি ছিলেন ও পরে তার লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে একটা  ল’এর ডিগ্রি আছে অর্থাৎ তিনি চিন্তায় মডার্ন ওরিয়েন্টেশনের। অন্যভাবে বললে, তিনি প্রজ্ঞা ঠাকুর নন। তুলনায় নূপুর শর্মা, তিনি যেমন সরাসরি আরএসএস কর্মী ও এমপি ‘প্রজ্ঞা সাধ্বী ঠাকুর’-এর মত কেউ নন। বরং নুপুর শর্মা হলেন দিল্লি রাজ্য নির্বাচনে এক পরাজিত প্রার্থী। তিনি আসলে “টেবিল টক” এর বক্তা হিসেবে ভাল পারফরম্যান্সের বলে বিজেপি তাঁকে উপস্থাপক হিসেবে ভাড়া করেছিল এই অর্থে তিনি বিজেপির সাথে সম্পর্কের।

এদিকে গত বছর থেকে মোদির রাস্তা এখন সরাসরি মুসলমান কোপানোর পথে, যেভাবেই হোক – ‘হিন্দু ভোট বিজেপির বাক্সে আনতেই হবে’ – এই লাইনের। আসলে এই নীতি-পলিসির কারণে ভারতে টিভি টকশোতে নূপুর শর্মার মতো বক্তা-পারফরমারের প্রয়োজন বিজেপির কাছে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তাতে মোদি চিন্তাও করেননি, এখানে মুসলমান-কোপানো তৎপরতায় ‘কোন সীমারেখা’ বলে দেয়ার দরকার আছে বা হবে। কারণ মোদির ভারতে মুসলমানরা নয়, বরং উল্টো হিন্দু নাগরিকই যেন মুসলমানের হাতে ভিকটিম – এই ইমেজ, এই রেসিজম ইসলামবিদ্বেষ-ঘৃণা অবলীলায় মোদি খাড়া করে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। যা আসলে ভারতের ‘হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ব’ এই নিকৃষ্ট বর্ণবাদী চিন্তার প্রাবল্যের তলে ফেলেছিল সবাইকে। অবস্থা এমন করা হয়ে আছে যেন হিন্দু জনগোষ্ঠির কেউ এচিন্তা  থেকে ন্যূনতম দূরত্ব তৈরি করতে চাইলে বা সমর্থন না করা দেখাতে চাইলেই এর যেন একটাই অর্থ হয় যে ‘সে হিন্দু দেশদ্রোহী’। তাই এমন ইমেজ তৈরি হতে পারে, এই ভয়ে তটস্থ থাকে – তাই করে রাখা হয়েছিল।
এমনকি মধ্যপ্রাচ্যও যেন ব্যবসার লোভে ক্রমেই ‘মুসলমান কোপানো মোদি’ পরিচয় ও তৎপরতা দেখেও যেন এদিকে আর তারা দেখছিল না। এসব মিলিয়ে মোদি দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু মহানবী সম্পর্কে নূপুর শর্মার অসম্মানজনক মন্তব্য করা এবং তা ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় এই সীমা ছাড়ানো তৎপরতা যাতে আর কেউ-ই মানিয়ে চলা বা সহ্য করতে পারেনি। ভারতীয় মিডিয়ার থেকে জানা গেছে যে এপর্যন্ত কমপক্ষে প্রায় ২০টা মুসলমানপ্রধান দেশ নিজ নিজ ওসব দেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া আপত্তি জানানো, ব্যাখ্যা চাওয়া, মাফ চাইতে বলা ইত্যাদি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিল। এরপরেরও টানা সাত দিন নূপুর শর্মা (ও এর সমর্থকরা) নিজেদের পক্ষে ভোকাল ছিলেন। কিন্তু প্রথমে মূলত কাতার, কুয়েত ও ইরানের একশন; এতে বাকি সবার তৎপর হয়ে উঠতে এটাই মোদির বিরুদ্ধে আপত্তি ঝড়ের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠেছিল।

তাতে কী দাঁড়াল এখনঃ
প্রজাতি হিসাবে মানুষ শুরু থেকে যাযাবর হয়ে জীবন যাপন করত। আর শেষের দিক থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর ধরে মানুষ যাযাবর জীবন ছেড়ে একেক গ্রুপ একেকটা অঞ্চলের ভুমির সাথে লেপ্টে স্থায়ী জীবনযাপন শুরু করেছিল। তবু তাতেও  সারা দুনিয়ার ভূগোলের সবখানেই এবং একইসাথে মানুষ-প্রজাতির কৃষিকাজভিত্তিক নতুন থিতু জীবনযাপন শুরু হয়নি। এই নয়া জীবনযাপন যাকে আমরা সভ্যতার জীবন [Civilization] এর শুরু বলে থাকি। এভাবে নানান সভ্যতার শুরু হয়েছিল দুনিয়াতে। এটাকেই আমরা কালক্রমে এখন বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক ভিন্নতার জীবন বলে গণ্য করি যে অর্থে আমরা বৃহত্তর সিন্ধু সভ্যতার বাঙালি এথনিক জনগোষ্ঠি। অথবা আরো সুনির্দিষ্ট করে আরেকভাবে বলা যায় এই বাঙালি এথনিক গোষ্ঠির মুসলমান ধর্মীয়-এথনিক অংশ। এভাবে পরিণতিতে দুনিয়ায় বিভিন্ন জাতির এথনিক (এথনিক-জাতির) জীবনের শুরু বলে মনে করা হয়। দুনিয়ায় এখন অসংখ্য এথনিক জাতিগত জনগোষ্ঠীর দেখা পাওয়া যায়। তবে এরও আবার শেষ প্রায় ছয়শ’ বছর ধরে মূলত ইউরোপীয় কলোনি দখলদারেরা এই এথনিক জাতিগত জনগোষ্ঠী অন্য সব এথনিক জনগোষ্ঠীকে নিজ অধীনস্থ করে শাসন করে এসেছিল। এখান থেকে অন্য এথনিক জাতিগত জনগোষ্ঠীকে নিচা দেখানো – এই রেসিয়াল-এথনিক বর্ণবাদ তখন থেকে এখনো প্রায়ই ছড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিটলার ছিলেন তেমনই এক এথনিক রেসিজমের প্রবল প্রকাশ। এটা বুঝার এক সহজ প্রকাশ হল, যখনই আমরা দেখব কেউ নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলছে বা নিজ এথনিক জাতিগত জনগোষ্ঠীকে শ্রেষ্ঠ বলছে – সোজা কথায় নিজের যেকোনো কিছু আইডেনটিটির ভিত্তিতে সেটার শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করছে যার আসল উদ্দেশ্য অন্য এথনিক-ধর্মীয় জনগোষ্ঠিকে  দমিয়ে রাখতে চায় আর বিপরীতে তাকে নিচা দেখানো – এমন রেসিজমেরই একটি হলো ‘হিন্দুত্ববাদ’।

এখন আমাদের এই একটাই দুনিয়াতে যদি সব এথনিক জাতিগত বা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীগুলোকে পাশাপাশি ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে একসাথে বসবাস করতে পারতে হয় তবে একটাই নীতিতে তা সম্ভব হতে পারে। তা হল কোনো এথনিক পরিচয়ই শ্রেষ্ঠ বলে কিছু নেই, বরং বৈষম্যহীনভাবে সবার সমমর্যাদা ও সমঅধিকার সম্পন্ন সকলেই – এই নীতির ভিত্তিতেই তা একমাত্র তা হতে পারে।

কিন্তু মোদির হিন্দুত্ববাদ এর দাবি হল সেই রেসিজম বা শ্রেষ্ঠত্বের দাবি, যা সব এথনিক জাতিগত বা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে সমাধান চায় না। যেমন ভারতে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে ভারতকে হিন্দুত্বের আধিপত্য এর ভারত হতে হবে। এর এক শাসনব্যবস্থার ভারত কায়েম করতে চায় বিজেপি-আরএসএস। কারণ বিজেপি-আরএসএসের বিচারে ভারতে হিন্দু জনগোষ্ঠী ৮০ ভাগের বেশি বলে হিন্দুত্ববাদ, এই শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে আরামে হিন্দু ভোট ভোটের বাক্স ভরে শাসন ক্ষমতায় আসা ও থাকা সোজা বলে তাদের বিশ্বাস। অথচ শ্রেষ্ঠত্ব মানেই রেসিজম। অপর এথনিক-ধর্মীয় জনগোষ্ঠিকে দমিয়ে নিজ অধীনে আনার সাফাই। এই রেসিজমই এবার আবার রুখে দেয়া হল। অবশেষে এই প্রথম মুসলিম মধ্যপ্রাচ্য গ্লোবাল বাণিজ্যে এসে মোদির হিন্দুত্ববাদের এই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিকে তারা আটকে দিয়েছে, তা সাময়িক হলেও। ধর্মীয় এথনিক জনগোষ্ঠি ভারতের মুসলমানেরা কারও চেয়ে নিচা নয়, সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু জনগোষ্ঠির সমান্তরাল তারাও সম-মর্যাদার ও সম-অধিকারের। তাই এই ভিত্তিতেই ভারত-রাষ্ট্র গড়ে উঠতেই হবে। এটাই সমাধান!

আর এর ফলাফলেই আমরা দেখছি, মোদির সাময়িক পিছু হটা। কিন্তু অচিরেই যত তাড়াতাড়ি পারা যায় মোদি আবার মুসলমান কোপানো রাজনীতিতে ফেরত আসতে চাইবেন, আমরা অনুমান করি। খুব সম্ভবত কেবল নবী-পয়গম্বর প্রশ্নে হয়ত সংযত থাকার চেষ্টা করবেন। বাকিসব প্রশ্নে হিন্দুত্ববাদ এই রেসিজম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। এপথে তাদের সম্ভাব্য ফিরে আসার মূল কারণ, এ’ভিন্ন তাদের অন্য রাজনীতি নাই। আবার ভারতের অর্থনৈতিক ন্যূনতম সমৃদ্ধির আশু সম্ভাবনা নেই। বাইডেন প্রশাসন নিজের মুখেই এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধে ডেকে আনাতে তা তাদেরকে ২০০৮ সালের মতই আরেকবার নয়া গ্লোবাল মহামন্দার দিকে নিচ্ছে কি না এনিয়ে কথা বলা শুরু হয়ে গেছে। এসব কারণে মোদির কাছে হিন্দুত্ববাদ ও মুসলমান কোপানোর নীতিভিন্ন অন্য কিছুতেই নিজ-ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনা তারা দেখে না। একারণেই সেসব ইঙ্গিত ভারতে বিজেপি দেয়া শুরু করে দিয়েছে। ভারতের মুসলমানেরা হচ্ছে মোদির কাছে সেই বুটি বা বলির পশু যেন যাকে বলি দিয়ে হিন্দু-উন্মাদনা তুলে সেই ভোটে তারা নিজ ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চায়।

বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াঃ
এর মধ্যে আমরা দেখছি বাংলাদেশের সরকার মোদির নূপুর ইস্যুতে কোনো আপত্তি দর্জ করা দূরে থাক কোন সমালোচনাও করেনি। বরং উলটা, আমাদের তথ্যমন্ত্রী ভারতীয় সাংবাদিক দাওয়াত দিয়ে ডেকে এনে একাজকে বাংলাদেশ সরকারের ক্রেডিট – এই হিসেবে তুলে ধরাচ্ছে। এখানে পাবেন – “Why Bangladesh is absolutely quiet when it comes to anti-Prophet remarks by BJP leaders” তাদের দেশে প্রকাশিত সেসব রিপোর্ট এভাবেই প্রকাশিত হয়েছে।  আবার মোদি সরকারও বাংলাদেশের এ’আচরণকে তার সরকারের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছে [ (Hasan – Bangladesh information minister Hasan Mahmud ) “Mahmud’s fulsome praise of Prime Minister Narendra Modi is certainly unusual.”

অথচ এককথায় বললে, ভারতে মহানবীর অপমান বা নুপুর শর্মা ইস্যুতে ভারতের কাছে বাংলাদেশের আপত্তি না তুলে উলটা মোদি সরকারের প্রশংসা করে আমাদের মন্ত্রীর বলা – “……But the government of India has taken action and we thank them for it. We congratulate them. Now the law will take its own course,” – এটা খুবই গর্হিত ও বোকার কাজ হয়েছে। এটা এদুই দেশের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে। বিশেষত বাংলাদেশের জন্য।
সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশ – এটা এখন আমেরিকান অবরোধের মুখে। তাই এটা বাংলাদেশের সরকারের একটা মিস-ক্যালকুলেশন। এসময় এটা প্রো-ইন্ডিয়ান (তাও আবার এই সময়ের) ও এর  এন্টি মুসলমান অবস্থানের পক্ষেই বাংলাদেশকে দাঁড় করাবে। এতে ঘরে হাসিনা সরকারের কর্তৃত্ব ও ইমেজ আরো নেতি হবে। হয়ত এসবের পেছনে সরকারের এমন অনুমান থাকতে পারে যার কল্পনাটা হল, – এটা এন্টি আমেরিকান এক বাংলাদেশ-ভারত এলায়েন্সের সুবিধা দিবে। আর তাতে আরও ওদিকে রাশিয়া এবং সাথে চীনের সমর্থনে কিছু একটা দাঁড়িয়ে যেতেও পারে।
তবে এটা হাসিনা সরকারের খুব বোকা কল্পনা যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাফল্যে দেখাতে প্রমাণ করতে ভারতের সাংবাদিক গোষ্ঠি (এমনকি ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইয়েরও সাহায্যে) নিয়ে তাদেরকে প্রপাগান্ডা শুরু করতে দাওয়াত দিয়ে আনা – এটা সরকারকে কোন মাইলেজ দিবে না উলটা নেতি ইমেজ আনবে।

আমেরিকান চাপ কাটাতেও বাংলাদেশের চলতি ভারতের সাথে খাতিরদারি ও বিশেষ সখ্যতা এটা সাহায্য তো করবেই না। উলটা ক্ষতি করবে। কারণ এটা একেবারেই এক ভিত্তিহীন কল্পনা। মূল কারণ নুপুর শর্মা ইস্যুর প্রেক্ষিতে  মোদির ভারত এখন যার পক্ষেই অবস্থান নিবে সেই পক্ষটাই হেরে ধংস হয়ে যাবে। বরং নুপুর শর্মা ইস্যুর পরে,  ভারতে আগামী ২০২৪ সালের মে এর কেন্দ্রীয় নির্বাচন তো মোদির জন্য এক অনিশ্চিত হয়ে হাজির হল। সেটা বটেই, এমনকি এবছর দ্বিতীয়ার্ধে ও আগামী বছর ভারতের রাজ্য নির্বাচনগুলোও মোদির জন্য অনিশ্চিত হয়ে গেছে। এসব অনিশ্চয়তার মধ্যে মোদির ভারত বাংলাদেশের যেকোনো রাজনৈতিক শক্তির জন্য কারও পিঠে হাত রাখলে তা এক মারাত্মক লায়াবিলিটি হয়ে উঠেছে। মোদির এটা অজানা থাকার কারণ নাই, তিনি জানেন। তবে মোদি বরং এখানে এখন চেষ্টা করছেন বাংলাদেশকে কী করে নিজের ইমেজ পুনরুদ্ধারে ব্যবহার করবেন। এ কথাটাই প্রকাশ পেয়েছে ভারতে দ্য প্রিন্ট পত্রিকার জ্যোতি মালহোত্রার লেখায়, যিনি আমাদের তথ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। জ্যোতি মালহোত্রা তাঁর লেখায় মুসলমান-জনসংখ্যা প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও আরো প্রায় ২০টি রাষ্ট্রের মতো তাদের স্ব স্ব দেশে তারা যেমন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করতে আপত্তি ও ক্ষমা দাবি করেছে বাংলাদেশ তেমন করেনি [” ……but Bangladesh has remained absolutely quiet.” ] বলে হাসিনা সরকারের প্রশংসা করেছেন। তিনি এমনও লিখেছেন, বাংলাদেশের কাছে মোদিভিন্ন ভালো বিকল্প নেই, এটি নাকি আমাদের সরকার বুঝে গেছে। [liberation war 50 years ago, but that party today mostly manifests its angst by tweeting and fulminating on social media. Other regional parties are powerful in their own right, but the fact remains that there is no national alternative to Narendra Modi today.] জ্যোতি মালহোত্রার এবক্তব্য মোদির দেশে অভ্যন্তরীণ ইমেজ বাড়াতে কাজে লাগলেও এটা ঠিক ততটাই বা এর বেশি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে এর মধ্যে চলে গেছে। মানে লাভের গুড় খেয়েছে মোদি সরকার আর এতে পয়সা ঢেলেছে আমাদের সরকার নিজেরই যেন ক্ষতি করতে – ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে!

মানে পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে প্রায় দু-এক দিন পরপরই ভারতের প্রতি আমাদের সরকারের অবস্থান অদলবদল হয়ে যাচ্ছে এবং তা কোনো কার্যকর লাভালাভ ছাড়াই। লাভালাভ হচ্ছে না টের পেলে আবার মন খারাপ করছে। কটু কথা বলছে…। এ’এক চলমান দিকবদলের সার্কাস যেন…। আমাদের মানবজমিন লিখছে,  “বিজেপির মুখপাত্রের অবমাননাকর বক্তব্যের পর বাংলাদেশ এ ইস্যুতে কোনো বিবৃতি দেয়নি। এমনকি ভারতীয় দূতকে তলবও করেনি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাদের এমন অবস্থানের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ”।

নুপুর শর্মা ইস্যুতে, ইউরোপ অপরাধীর মত নিশ্চুপঃ
আরেক তাৎপর্যপূর্ণ লক্ষণ হল, ভারতে মহানবীকে অপমান ও ইসলামবিদ্বেষ-ঘৃণা ইস্যুতে দুনিয়ার যে অঞ্চল অপরাধীর মতো প্রায় নিশ্চুপ, সেটা হল ইউরোপ – ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের এনিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই। যেখানে জাতিসঙ্ঘের সেক্রেটারি জেনারেলও ‘হেট স্পিচের’ দায়ে ভারতকে অভিযুক্ত ও সাবধান করেছেন [UN Secretary General Calls For India To Respect All Religions, Condemns Hate Speech]। আবার ওদিকে পশ্চিমা শক্তি বলতে বাইডেন প্রশাসন – এর স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, তারা বিজেপির সাবেক কর্তার (নূপুরের) মন্তব্যের নিন্দা জানান [ US condemns remarks on Prophet]।

অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের (১৯১৮) পর থেকে ব্রিটিশ-ফরাসি শক্তির অটোমান সাম্রাজ্য দখল করে নেয়া এবং তুরস্কে কামাল-কিয়ার শাসনের আড়ালে নিজ প্রভাব কায়েম আর ওদিকে “রাষ্ট্র থেকে ধর্ম আলাদা করার’ অসৎ ও ভুয়া তত্ত্ব হাজির করা– এসবই ছিল এক কথায় পরিকল্পিতভাবে ইসলামবিদ্বেষ ও ঘৃণাচর্চার শুরু, যা এখনো চলছে। যা এবার ভারতের ঘটনায় সম্ভবত সবচেয়ে প্রবলভাবে প্রকাশিত।

সারকথায়ঃ
কোন ধর্মীয়-এথনিক জনগোষ্ঠি অপর ধর্মীয়-এথনিক জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে অপরকে নিচা দেখানো অথবা বিদ্বেষ ও ঘৃণার চর্চা করতে পারে না। সব ধর্মীয়-এথনিক জনগোষ্ঠিই সম-মর্যাদার ও সম-অধিকারের। এই প্রতিশ্রুতি দিতে হবে সকল ধর্মীয়-এথনিক জনগোষ্ঠির রাষ্ট্রকে। এটাই হতে পারে দুনিয়ায় শান্তির রক্ষাকবচ; এক পারস্পরিক সহ-অবস্থানের প্রধান শর্ত!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা  দৈনিক  “নয়াদিগন্ত” পত্রিকার  ১৮ জুন  ২০২২ ওয়েবে আর পরদিন প্রিন্টে   সব এথনিক ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর সমমর্যাদা ও সমঅধিকার– এই শিরোনামে  ছাপা হয়েছিল।   ঐ ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়।  আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং  থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন।  আসলে পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল।]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s