ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি কী এই শীতের আগে-পরেই!
গৌতম দাস
২৫ জুলাই ২০২২, ০০:০৬ সোমবার
How Will the Ukraine War End? 10 Experts Weigh In
ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি আর বাইডেনের অপ্রয়োজনীয় বাহাদুরি দেখানোর নীতি-পলিসির পতন – এসব ব্যর্থতা কি আসন্ন? অবস্থা যেন ক্রমেই সেই অভিমুখেই হাঁটছে! ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি স্টেজে নাটক করতে করতে স্বপ্ন-কল্পনা দেখিয়ে তাদের পপুলার ভোটে ক্ষমতায় এসে পড়েছেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে এখনও নাটক করছেন। ভেবে নিয়েছেন মানুষের জীবন রক্ত-মাংসের বাস্তব মানুষের নয়। এদিকে সাতাশ রাষ্ট্রের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), তাদেরকেও সাদা এথনিক-জাতের দুনিয়া শাসনের “শ্রেষ্ঠত্ববাদ” পেয়ে বসেছে। জেলেনেস্কি আর ইইউ-কে বাস্তবতা ফেলে চটকদার স্বপ্ন-কল্পনা দেখানোর নায়ক যাদুগর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সকলেই এক ব্রেকডাইন পয়েন্টের দিকে চলেছেন যেটা সম্ভবত চলতি বছরের শেষভাগে!! গ্লোবাল নেতৃত্বে বদল আসন্ন, কঠিন ভাবেই আসন্ন!! বাইডেনের “ওয়েস্টার্ণ ফোর্স” তা স্বীকার করুক আর নাই করুক কিছু যায় আসে না! বাস্তবতা অস্বীকার করে কেউ টিকে নাই। আপনার-আমার পছন্দ-অপছন্দের উর্ধে থাকে যেটা সেটাই বাস্তবতা!
Biden’s Dangerous New Ukraine Endgame: No Endgame – Foreign Policy
ওয়্যার অন টেরর কুখ্যাত বুশের সাগরেদ টনি ব্লেয়ার সবার আগেই ভেঙ্গে পড়েছেনঃ
ইউক্রেন যুদ্ধকে, ইইউ-এর নেতারা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এটা শুরু হওয়ার পর থেকে একে “রাশিয়ান আগ্রাসনের যুদ্ধ” বলে আসছেন। কিন্তু টনি ব্লেয়ারের কথা আমরা নিশ্চয় ভুলে যাইনি। এককালে যার প্রধান পরিচয় হয়ে উঠেছিল আমেরিকান প্রেসিডেন্ট (২০০১-৮) জুনিয়র বুশের কুখ্যাত ওয়্যার অন টেররের কালে ইনি তার ঘনিষ্ঠতম সাগরেদ; সহযোগী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী (১৯৯৭-২০০৭) ছিলেন এই টনি ব্লেয়ার। তারা যৌথভাবে ইরাকে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে মিথ্যা অস্ত্র মজুদের কথা বলে “রেজিম চেঞ্জ” তত্ত্বে ইরাকে হামলা ও দখল করেন; পরে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করেন ও ফাঁসিতে ঝোলান।
“After Ukraine, What Lessons Now for Western Leadership?” – Tony Blair
পশ্চিমা আধিপত্যের দিন শেষ হওয়ার পথেঃ
সম্প্রতি সেই টনি ব্লেয়ার এবার আবার রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। তাঁর এক নয়া বক্তৃতামালার “‘ইউক্রেনের পরে, পশ্চিমা নেতৃত্বের জন্য কী শিক্ষা হলো?’ [“After Ukraine, What Lessons Now for Western Leadership?” ]; এই শিরোনামে ব্রিটেনে আহূত এক সভার বক্তৃতায় টনি ব্লেয়ার বলেছেন, “ইউক্রেন যুদ্ধ দেখাল দুনিয়ার ওপর পশ্চিমা আধিপত্যের দিন শেষ হওয়ার পথে যেহেতু দুনিয়াতে নয়া সুপার পাওয়ার হিসেবে চীনের উত্থান ও আসীন হওয়া ঘটছে; এই চীনের পার্টনার হলো রাশিয়া। তবে এই শতাব্দীর এটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মোড় পরিবর্তন” [ “The Ukraine war shows that the West’s dominance is coming to an end as China rises to superpower status in partnership with Russia at one of the most significant inflection points in centuries”, former British Prime Minister Tony Blair said.]।
টনি ব্লেয়ারের বক্তৃতার ইউটিউব লিঙ্ক এখানে।
তিনি যেন সব খোলাখুলি বলে ফেলতে চাইছেন, আর মিথ্যার টেনশন নিতে পারছেন না। তাই স্বীকার করে বলছেন, “দুনিয়ার ইতিহাস এক মোড় পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে পৌঁছে গেছে যা একমাত্র তুলনা করা সম্ভব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ বা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে পড়ার সাথে। শুধু ফারাকটা এই যে, পশ্চিম আর এবার উপরে উঠছে না, বরং পরিষ্কারভাবেই পতিত, নিচে নামছে। পরিষ্কারভাবেই আমরা পশ্চিমারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পতনের প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছি” [The world, Blair said, was at a turning point in history comparable with the end of World War Two or the collapse of the Soviet Union: but this time the West is clearly not in the ascendant.]।
সেই ২০১৪ সাল থেকে এই কথাগুলোই আমি এতদিন আমার লেখায় বলে আসছি। আর বলেছি, ‘এই মোড় পরিবর্তন ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী হিসেবে আমেরিকার গ্লোবাল নেতৃত্বে উত্থান যেমন ঘটেছিল কেবল তার সাথেই তুলনীয়। তবে টনি ব্লেয়ার একে বাড়তি ভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে পড়ার সাথেও তুলনা টেনেছেন। এই তুলনা ভুল, সমতুল্য ঘটনা নয় বলে। তাই এটা তিনি না তুললে তাঁর জ্ঞানবদ্ধি সম্পর্কে পাঠকের ধারণা ভাল থাকত। যাই হোক, আজ আমেরিকান নেতৃত্ব লাভের ৭৫ বছর পরের এঘটনা; এর সাথে পার্থক্য কেবল আমেরিকার জায়গায় এবারে চীনের উত্থান ঘটছে। সাথে এটাও বলেছিলাম, এসবের মূল কথাগুলো আমার কথা একেবারেই নয়। বরং আমেরিকান নিজস্ব সার্ভে-স্টাডি রিপোর্টের ফাইন্ডিংস থেকে পাওয়া।
লক্ষণীয়, এখানে আমি ‘চীনের ফাইন্ডিংস’ বলিনি। তবু আমেরিকান-প্রীতিতে থাকা লোকেরা এর অর্থ করেছিল যে, আমি নিশ্চয় আমেরিকাকে দেখতে পারি না আর ওদিকে, কমিউনিস্ট বলে চীনকে পছন্দ করি, তাই আমি এসব বলেছি।
তাই আমি আবার এও বলেছিলাম, কোনো রাষ্ট্রের এমন গ্লোবাল নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নতি; এটা একেবারেই অবজেকটিভ (objective) ঘটনা। মানে, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা ভূমিকম্প যেমন অবজেকটিভ ঘটনা, এগুলো কর্তা-মানুষের ইচ্ছায় ঘটে না। যুদ্ধ লাগাব বা লড়ব বলে ঝাঁপিয়ে পড়া যেমন সাবজেকটিভ বা কর্তা মানুষের কাজের ঘটনা- এটা তেমন নয়। কোনো দেশের শাসককুল আগ্রহ করে যুদ্ধ লাগাতে পারে কিন্তু বাস্তব সুযোগ থাকাসহ অনেক কিছুই আলোচ্য ঘটনাবলিতে অবজেকটিভ বাস্তবতা হয়ে থেকে যায়। তাই সবকিছুই মানুষের ইচ্ছাধীন নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা, গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতা হওয়া এটা কোন মানুষের ইচ্ছায় তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপার নয় বরং ‘বাস্তব করে দেখানোর’ ব্যাপার মানে কষ্ট করে বাস্তবে গ্লোবাল অর্থনীতিতে নেতা হয়ে দেখানোর ব্যাপার।
সে যাই হোক, আমরা দেখছি বুশের সহযোগী ব্লেয়ার, এখন আগেভাগেই সব স্বীকার করে নিলেন (তার পুরা বক্তৃতা এখানে)। বিশেষত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যখন এখনও তাঁর জিদ আর সাদা শাসন চালিয়ে যাবার স্বপ্নে বিভোর আছেন! ওদিকে পরিচিত আর বড় নেতাদের মধ্যে যারা এর আগে ব্লেয়ারের মতই স্বীকার করে নিয়েছিলেন তিনি হলেন – জিমি কার্টারের আমলের আমেরিকান এক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা সেক্রেটারি অব স্টেট (১৯৭৭-৮১) ব্রেজনেস্কি (Zbigniew Brzezinski)। আমার জানা মতে তিনিও প্রথম এমন স্বীকারোক্তি করেছিলেন। কারণ তাঁর জমানাতেই চীন-আমেরিকার পারস্পরিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান ঘটেছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে পরস্পরের দেশে অফিস চালু হয়েছিল ১ জানুয়ারি ১৯৭৮ থেকে। আগ্রহিরা দেখতে পারেন Surveying a Global Power Shift নামে তাঁর বইতে, নিউইয়র্ক টাইমস এর রিভিউ দেখা যাবে এখানে।
মনে হচ্ছে, টনি ব্লেয়ার এক্ষেত্রে সমসাময়িকদের চেয়ে এগিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন? তিনি ব্লেয়ারের উল্টা! জিদ ধরলেন; আর যদিও ইতিহাস বলে এগুলো একেবারেই জেদাজেদি বা প্রতিহিংসার বিষয়ই নয়। বাইডেনের ক্ষমতায় আসার আগের তাঁর বোকা ও অবাস্তব সাফাই-যুক্তি ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প (তাঁর চেয়েও) বোকা, গোঁয়ার ও আরেক জেদি, তাই ট্রাম্প নাকি চীনসহ অন্যান্যদের শায়েস্তা করতে এখনো আমেরিকার হাতে কী কী অস্ত্র মজুদ আছে তাই-ই জানেন না। বিপরীতে, বাইডেন যেন তা জানেন। আর সেগুলো ব্যবহার করে বাইডেন দুনিয়াকে দেখিয়ে দিতে চান ও পারবেন যে, আমেরিকার দিন শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু আমেরিকার হাতের কী বিশেষ অস্ত্র যা তাকে এখনো গ্লোবাল নেতৃত্বে আসীন করে রাখবেই বলে তার নিজের অনুমান?
বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে (যদিও মনে খায়েশ ছিল যদি রাশিয়াকে বাঁচাতে চেয়ে চীনও সাথে নেমে যায়) নামিয়ে এরপর আমাদের দেখালেন তার চোখে আমেরিকার সঞ্চয়ে থাকা বিশেষ অস্ত্রগুলো কী কী? তিনি খুলে দেখালেন ‘ডলার অবরোধ’ আর মানবাধিকার– এই দুটো আমেরিকার হাতের অস্ত্র বলে মনে করেন বাইডেন; যা আমেরিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর (অবশ্যই তা অপব্যবহার, তাহলেও) তিনি তা প্রয়োগ করে তাদের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কাবু করে ফেলে, সারেন্ডার করতে বাধ্য করে জিতে যাবেন। মোটামুটি এই হল তার মূল তত্ব!!!
এখানে ‘ডলার অবরোধ’ মানে হল, বাইডেন মনে করেন তিনি ‘প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিপক্ষ দেশকে মার্কিন ডলারে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে না দেয়া বা ওসব দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগতভাবেও ডলারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ওই রাষ্ট্রের অর্থনীতিকেই বাইডেন সহজেই ধসিয়ে দিতে পারেন। যেহেতু ডলার গ্লোবাল বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও চালু মুদ্রা, তাই তিনিই সফল হবেন।’ এই ছিল বাইডেনের মূল অনুমান!
অন্য দিকে, মানবাধিকার বলতে, বাইডেন আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বি রাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলবেন। ভিন্ন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেউ কারো জেনুইন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলতেই পারে। এর উপযুক্ত ফোরামও আছে, সেটা হল জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিস। কিন্তু এখানে বাইডেন তা তুলবেন নিজ রাষ্ট্রের তরফে আর মানবাধিকারকে নিজ পররাষ্ট্রনীতির অংশ করে নিয়ে, আর এর শাস্তিও দেবেন নিজেই। তাই সত্যিই ওই রাষ্ট্র মানবাধিকার চরম লঙ্ঘনের দেশ হলেও- আমেরিকার এই অভিযোগ তোলার স্বচ্ছতায় সমস্যা তাতে থেকেই যায়। মানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জেনুইন হলেও এই অভিযোগ তুলে একে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে ফায়দা তোলা – বাইডেন এই অপব্যবহারের দিকটাই এখানে প্রধান।
এছাড়া বাইডেন তো পরিষ্কার করেই জানাচ্ছেন, চীনের অর্থনৈতিক উত্থান ও গ্লোবাল লিডারশিপ ক্রমেই আসন্ন হয়ে উঠলেও তিনি তা মানবেন না। উল্টা, চীনা উত্থান ঠেকানোর জন্য লড়বেন।
অর্থাৎ তিনি অপব্যবহার করবেন। কিন্তু লক্ষণীয় যে, এই চীনের অর্থনৈতিক উত্থান ও গ্লোবাল লিডারশিপে বদল আসন্ন হয়ে উঠা – এই বিষয়গুলো কী কোন আমেরিকার সরকারি দলিলে স্বীকার করা হয়েছে? কোনো আমেরিকান সরকারই বা কি এটি স্বীকার করেছে?
বাস্তবতা হল, হ্যা অবশ্যই স্বীকার করেছে। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে সার্ভে-স্টাডি রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে গত ২০০৮ সাল থেকে নিয়মিতভাবে। গ্লোবাল ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস নামে যেমন শুরু হয়েছিল গ্লোবাল ট্রেন্ড ২০০৮ নামে ২০২৫ [Global Trends 2025: A Transformed World] সালের দুনিয়া কেমন দেখতে হবে এ নিয়ে, এটা আমেরিকান প্রথম সরকারি দলিল। আবার, গ্লোবাল ট্রেন্ড ২০১২ নামে ২০৩০ সালের দুনিয়া কেমন, গ্লোবাল ট্রেন্ড ২০১৭ নামে ২০৩৫ সালের দুনিয়া কেমন এভাবে নিয়মিত রিপোর্ট বের হয়ে এসেছে। আর মজার কথা হল, এসব কোনো রিপোর্টেই, এই ট্রেন্ড বা গ্লোবাল অভিমুখগুলোকে গায়ের জোরে কোন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কি রোধ করতে বা ঠেকাতে যাওয়া উচিত অথবা যাওয়া সম্ভব?
না, তা একেবারেই ওসব রিপোর্টে উৎসাহিত করা হয়নি। বরং অবজেকটিভ ঘটনা হিসেবে সেগুলো উপস্থাপিত হয়েছে। যদিও বুশের আমল থেকে শুরু করে শেষে ট্রাম্প এবং বাইডেন পর্যন্ত এই আসন্ন বদল বা চীনা উত্থানকে উল্টে দিতে সব প্রেসিডেন্টেই চেষ্টা-পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছেন, আমরা দেখছি। যেমন বুশের আমল ২০০৬ সাল থেকে চীনের উত্থান ঠেকাতে ভারতকে সুবিধা, পিঠ চাপড়ানি দিয়ে ভারতকে ব্যবহার করার পলিসি বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। চীন ঠেকাতে ভারতকে ঠিকা দাও, এই নীতিকে বুশসহ পরবর্তী সব আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অনুসরণ করে চলে এসেছেন। কিন্তু তাতে আবার কোন ফলাফল না দেখে ভারতকে সুবিধাদি দেয়া বন্ধ করেছিলেন (২০১৭) একমাত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পই। আর বাইডেন এসে ভারতের বিরুদ্ধে নানাবিধ মানবাধিকারের লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। যদিও তা মুখেই কিন্তু কোন অবরোধ আরোপ কখনোই করেননি এখনও।
সারকথায়, চীনা অর্থনৈতিক উত্থান কোন কিছুতেই ঠেকবে না- তা জেনেও সব মার্কিন প্রেসিডেন্টই কমবেশি ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে লেলানো-সহ নিজেই চীনের বিরুদ্ধে নানা কিছুই করে গেছেন, যাচ্ছেন যার আবার বিশেষ একটা হল, বাংলাদেশকেও ভারতের হাতে তুলে দেয়া যাতে ভারত আরামে আমাদের ছিঁড়ে খেতে পারে এমন সরকারও বসিয়ে দিয়েছে। আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে নামিয়ে এরপর আমাদের দেখাতে চেয়েছিলেন রাশিয়ার ওপর ইউরোপের ইউরো আর আমেরিকান ডলার অবরোধ করে কত সহজেই তিনি রাশিয়াকে পরাস্ত করে ও মাফ চাওয়াতে বাধ্য, তারা ঘটাতে পারেন। কিন্তু হায়! রাশিয়ান অর্থনীতি সস্তায় সহজেই ডুবে যাওয়ার বদলে রাশিয়ান মুদ্রা রুবল এখন উল্টা শক্তিশালী হয়েছে। অর্থাৎ ইইউ-আমেরিকা এদের মিলিতভাবে, বাইডেনের ভাষায় তারা ‘ওয়েস্টার্ন ফোর্স’, বিজয়ের বেশে হাজির হবেন- এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন দূরে থাক এখন নিজেদের ইজ্জত বাঁচানোই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
ইইউর এই ব্যর্থতার মূল কারণ হল – সারা ইউরোপের রাশিয়ার উপর তেল-গ্যাসের জ্বালানিনির্ভরতা, যা সীমাহীন এবং অন্তত আপাতত বিকল্প-হীন এক দশায় তারা । এটা এক কঠিন বাস্তবতা। আর এটাই তারা স্বীকার না করে গায়ের জোর দেখাতে গেছেন। এই কঠোর বাস্তবতার কারণেই বাইডেনের সব বাহাদুরি এক ফাজলামিতে পরিণত হয়েছে। বহুবার বহুভাবে ইইউ নিজে এই নির্ভরতার দিকটা বাইডেনের সামনে তুলে ধরে দেখিয়েছেন। বলেছেন, এখন এই নির্ভরতা কাটাতে উদ্যোগ নেয়া শুরু করলেও ২০২৭ এর শেষেই একমাত্র ফল পাওয়া মানে ইইউর রাশিয়ানির্ভরতা কাটতে পারে। যদিও তেল-গ্যাস জ্বালানি জিনিষটা এমন প্রাচুর্যের না যে “আরেক দোকান থেকে কিনলাম”। কিন্তু বাইডেনের জিদের কাছে ইইউও হার মেনেছে, অসহায় হয়ে থেকেছে। ইইউ জোটের ২৭টা রাষ্ট্র ঠিক কী কারণে কোন জাদুতে বাইডেনের কথার উপরে কথা বলার ‘ভয়েজ নাই’ হয়ে গিয়েছিল ও আছে তা সত্যিই বিস্ময়কর লাগে!!!
অনুমান করা হয়, চীন গ্লোবাল নেতা হয়ে গেলে দুনিয়া থেকে গত পাঁচ-ছয় শ’ বছরের টানা সাদা চামড়ার শাসন আধিপত্য ও দখল এবং অন্যদিকে যা এক সাদা ককেশীয় শাসন, এমন এথনিক বর্ণবাদের আধিপত্য লোপ যাতে না পায় এই লোভ দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছেন বাইডেন। ফলে ইইউকে বাইডেনের আমেরিকার সাথে বেঁধে নিয়ে জিদের ঝড় তোলেন – মানে ইইউর এসব রাষ্ট্র এথনিক বর্ণবাদ (তাদের সাদা ককেশীয় জাত শ্রেষ্ঠত্ব) এই আধিপত্য দেখানোর লকলকে লোভে পড়েছিলেন! আর এটা এতই তীব্র যে, ২৭ রাষ্ট্রের ইইউর সবাই লোভে পড়ে বোকা আর বোবা হয়ে গেল – এটা ভাবতেও হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়! অথচ এরাই এই কথিত ‘ওয়েস্টার্ন ফোর্স’ গত মাসেও তাদের মূল্যবোধ নাকি শ্রেষ্ঠ; (আর চীন-সহ আমরা বাকি এথনিক দুনিয়ার বাসিন্দারা যেন নিচা) এই বলে খুব গর্ব দেখিয়েছে! অথচ আগামী শীতে ইউরোপ জ্বালানি কোথা থেকে পাবে এর কোনো সংস্থান কথিত ‘ওয়েস্টার্ন ফোর্স’ এখনো করতে পারেনি। অর্থাৎ আগামী উইন্টারে [Winter] প্রতিটা ইউরোপবাসীকে ঘর গরম রাখার সংস্থান হয়নি বলে ঠাণ্ডায় ঠকঠকিয়ে কাঁপতে হবে নয়তো ঘরবাড়ি ছেড়ে গরমের সন্ধানে ভেগে যেতে হবে।
বাইডেনের গত সপ্তাহের মধ্যপ্রাচ্য সফর থেকে শুণ্য হাতে ফেরাঃ
বড় হামবড়া মুখের বাইডেন তাই জ্বালানি যোগাড়ে নিজেই মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়েছিলেন গত ১৬ জুলাই। সৌদি আরবের জেদ্দাতে আরব দেশসহ মোট দশ দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ছিল বাইডেনের সেই বৈঠক। ১০ আরব দেশ বলতে সৌদি, ইউএই [UAE]সহ ছয় গালফ স্টেট আর সাথে মিসর, জর্দান ও ইরাক এবং বাইডেনের আমেরিকা তো ছিলই যার আবার সাথে ফেউ এর মত দ্বিপাক্ষিকভাবে আমেরিকা-ইসরাইল আলাপ হয়েছে।
বাইডেনের মুল উদ্দেশ্য ছিল দুটা। এক. মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপের জন্য বাড়তি তেল-গ্যাস জ্বালানির ব্যবস্থা করা যায় কি না! আর সাথে দুই. গ্লোবাল জ্বালানি তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম দেয়া যাতে দুনিয়াব্যাপী যে মুদ্রাস্ফীতি জাগিয়ে বাইডেন ‘কৃতিত্ব’ রেখেছেন এর দায়দায়িত্ব তিনি এখন কিছু লাঘব করতে পারেন কিনা; যাতে তাঁর জিদ্দি অবিবেচক সিদ্ধান্তের দায়ভার কিছুটা কমে। কিন্তু হায়, সেটাই ব্যাক-ফায়ার করেছে। সৌদি আরবের বর্তমান বাদশা বেঁচে থাকলেও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (সংক্ষেপে এমবিএস বা MBS ডাকা হয়) কার্যত তিনিই সৌদি আরবকে এখন নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এখানে নিচে সেই সভায় এমবিএস যে জবাবটা দিয়েছিলেন সেই বক্তৃতার সারাংশ নিয়ে রয়টার্সের রিপোর্টের, আমার নিজের করা অনুবাদ তুলে এনেছি। ভুল অনুবাদের দায় আমার তবে পাঠকের কোনখানে সন্দেহ হলে মূল টেক্সট দেখে নিতে পারেন।
গত ১৬ জুলাইয়ে রয়টার্স লিখছে : “সৌদি যুবরাজ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান শনিবার বলেছেন, ফসিল ফুয়েল (মাটির নিচের তেল) খাতে আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন ও গ্লোবাল চাহিদা মেটানোর মত শুদ্ধ (clean) জ্বালানি টেকনোলজি দরকার এবং বলাই বাহুল্য কোন, অবাস্তব জ্বালানি নিঃসরণ পলিসি নিলে তা আমাদের অকল্পনীয় পর্যায়ের মুদ্রাস্ফীতির দিকে নিবে; জ্বালানির মূল্য বাড়িয়ে দিবে, বেকারত্ব বাড়াবে এবং সমাজ ও নিরাপত্তার প্রশ্নকে আরো দুর্বল (vulnerable) করে ছাড়বে”।
এরপর ” সৌদি যুবরাজ তাঁর দেশের তেল উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলেন, এটা ২০২৭ সালের মধ্যে দৈনিক ১৩ মিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত বাড়বে যা এখন ১২ বিলিয়ন সক্ষমতায় আছে। আর এরপর আমাদের কিংডমের আর বাড়ানোর কোনো সক্ষমতা অবশিষ্ট থাকবে না”।
তিনি এসব কথা বলছিলেন জেদ্দায় আমেরিকা ও আরবদের নিয়ে এক শীর্ষ সম্মেলনে যেখানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উপস্থিত ছিলেন। বাইডেন আসলে আশা করে এসেছিলেন, সৌদি আরব ও তার ওপেক পার্টনাররা বাজারে আরো বেশি তেল ছাড়ুক যাতে জ্বালানি তেলের মূল্য নেমে আসে, যাতে এর প্রতিক্রিয়ায় চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে উপরে উঠে যাওয়া আমেরিকান-সহ সারা দুনিয়ার মুদ্রাস্ফীতি নেমে আসে, জীবন সহজ হয়। এমবিএস স্পষ্টতই দুনিয়াব্যাপী চরম মুদ্রাস্ফীতির জন্য বাইডেনকেই দায়ী করেছেন। আর তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, আপনাদের সেই ভুল নীতির দায় আপনারা কেন আরবদের ওপর চাপাতে এসেছেন?
এক কথায় বললে, এই রিপোর্টের মূলকথা হল, খুবই নরম উপস্থাপনায় কিন্তু কঠোর কূটনৈতিক ভাষায় তিনি বাইডেনের পলিসিকে বোকা জিদ্দি বলেছেন। বলেছেন, বাইডেনের চিন্তা-পলিসি অবাস্তব ফলে অকেজো! অর্থাৎ, আসলে একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের এটাও দেখতে বাকি ছিল!!!
সেকালে ১৯৪৫ সালের বিচারে গ্লোবাল নেতা আমেরিকা আর সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, ৭৫ বছর আগে বাদশাহ আবদুল আজিজের সাথে সাক্ষাৎ দিয়ে। আর সেই সাক্ষাৎটা ঘটেছিল মিসরে। আজ যেমন মিসর সৌদিতে এসে দেখা করেছে বাইডেনের সাথে। সেকালে ১৯৪৫ সালে বাদশাহ আজিজ উজিয়ে মিসর গিয়ে রুজভেল্টের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন । সে বছরই রুজভেল্ট গ্লোবাল নেতা হিসেবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত হন। আর আজ প্রেসিডেন্ট বাইডেন সৌদি সফর করে আমেরিকান মুকুট ধুলায় লুটিয়ে দিয়ে গেলেন। কারণ, সব আলাপ শেষে, এমবিএস বাইডেনকে কোনো কিছুরই প্রতিশ্রুতি দেয়নি ।
রয়টার্স তাই শেষে লিখছে, বাইডেনের ওই সফর শেষে “কোনো আশ্বাস বা সৌদি প্রতিশ্রুতির কোনো যৌথ ঘোষণা ছাড়াই আলাপ শেষ’ হয়েছে […but there was unlikely to be any bilateral announcements from the talks.] । তাতে সারা দুনিয়া দেখেছে এমবিএসের যেটুকু বাস্তবতা জ্ঞান আছে এই বিচারে বয়োবৃদ্ধ বাইডেন হেরে গেছেন; জিদ্দি গোঁয়ার বয়স্ক মানুষ কেউ দেখতে পছন্দ করে না। বরং আশা করে, আমাদের মুরুব্বিরা অবশ্যই আমাদের চেয়ে ধৈর্যশীল স্থির এবং অভিজ্ঞতাব্ধতায় আমাদের ছাড়িয়ে যাবেন, সর্বোপরি আমাদের সবার চেয়ে বড় বিবেচক হবেন। কিন্তু হায়! বাইডেন সবাইকেই হতাশ করেছেন! একারণে বেশির ভাগ মিডিয়ার এ নিয়ে রিপোর্টের শিরোনামের সাধারণ সুরটা হলঃ “আরব শীর্ষ সম্মেলনে তেল চুক্তিতে ব্যর্থ বাইডেন, ফিরলেন ‘শূন্য হাতে’।”
তাহলে কি আগামী নভেম্বরে আমেরিকান মিড টার্ম নির্বাচনে বাইডেনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি শুধু গো-হারা হারবে? তাই নয়। আরো অনেক ব্যর্থতাও বাইডেনকে সম্ভবত আঁকড়ে ধরবে, পিষে ফেলবে!! ফলে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সাথে আপস করার মুখে ফেলে কী বাইডেন হয়ত পালিয়ে যাবেন? আর সব দিকের বিপদ টের পেয়ে সবার আগে ইইউ কী বাইডেনের হাত ছেড়ে এবারের শীতকাল শুরুর আগেই রাশিয়ার দিকে হাত বাড়াবেন? সবাইকেই বাস্তবতার সামনে মাথা নামাতেই হয়, এই বাণী দিতে দিতে?
এদিকে ইতোমধ্যেই বাইডেনের ইউক্রেন যুদ্ধ লাগানো এটাকে মিসক্যালকুলেশনে ব্যর্থ উচ্চাশা বলা শুরু হয়েছে; ওয়াল স্ট্রিট এর দিক থেকে [President Joe Biden’s administration faces a double disaster after its Ukraine miscalculation, namely a US recession and a second strategic humiliation……] । এমনকি এটা তার স্ট্রাটেজিক মানহানিকর নাকানি বলছে।
কেন এমন কড়া কথা বলছিঃ
গত ১৯ জুলাইয়ের খবর হল ইইউ ইতোমধ্যেই ‘অধোমুখ’ মানে মাথা নিচু করে ফেলেছে। অর্থাৎ ‘রাশিয়ার সাতটি ব্যাংকের উপর অবরোধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ইইউ’– এই হল সংবাদ শিরোনাম। এটাও রয়টার্সের খবর যে এক ‘ বৈঠকে রাশিয়ার সাতটি ব্যাংকের ফ্রিজ করা অর্থ ছাড় দেয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তারা। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিটিবি, সোভকোম ব্যাংক, নোভিকোম ব্যাংক, অটক্রিটি ব্যাংক, প্রমসভায়াস ব্যাংক ও ব্যাংক রাশিয়া। তবে রুশ বৃহত্তম ব্যাংক সেবার ব্যাংকের সম্পদ ছাড়ের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন এক ইইউ কর্মকর্তা।
আবার আরেক হট নিউজ দিচ্ছে রয়টার্স। সৌদি আরব নিজের তেলের বিশাল রফতানিকারক হওয়া সত্ত্বেও উল্টা রাশিয়ান তেল আমদানি শুরু করেছে কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেল। কেন?
কারণ, রাশিয়া সৌদি আরবকে ডিসকাউন্ট মূল্যে তেল বিক্রি করছে [Russia has been selling fuel at discounted prices after international sanctions over its invasion of Ukraine left it with fewer buyers. ] বলে সৌদি আরব এই তেল আমদানি দ্বিগুণ করেছে যে তেল দিয়ে সে আসন্ন শীতে নিজের পাওয়ার স্টেশনের জ্বালানি চাহিদা মিটাবে। এতে তার নিজের বেঁচে যাওয়া জ্বালানি তেলও যার দাম বেশি তা তাকে বাড়তি সুবিধা দেবে।
এসব খবর বাইডেনের দিক থেকে দেখলে তার জন্য আত্মহত্যামূলক বলতেই হয়! গত দুই বছরে তার নেয়া সব সিদ্ধান্ত, সব পলিসিই কি তাহলে মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে? ইউক্রেন যুদ্ধ কী তবে থেমে যাচ্ছে!!!
সর্বশেষ, গতদিনের খবর হল, বাইডেন ইউক্রেনের উপর কড়া শর্ত আরোপ করে রেখেছেন এই বলে যে, তারা যেন রাশিয়ার সাথে কোনো বিষয়ে আপসের কোনো আলাপই না করে। অথচ ইউক্রেন খাদ্য রফতানির দেশ হওয়া সত্বেও যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ান বাধায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য গুদামে আটকে আছে। গত এক মাস ধরে জাতিসঙ্ঘ আর তুরস্কের মধ্যস্থতায় এবং ফাইনালি এবার সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের উপস্থিতিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে যাতে আটকে থাকা খাদ্য ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর দিয়ে বের হতে পারে। এটাও কি বাইডেনের জন্য ভালো লক্ষণ? সম্ভবত তার কপালই ভালো জানে!
আর আজকের খবর হল, যুদ্ধে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে রাশিয়ান এক গোলা গিয়ে পড়েছে (যদিও রাশিয়া আজ তা অস্বীকার করেছে)। ফলে কার্যত রপ্তানি কার্যক্রম থমকে দাড়িয়েছে। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি মন্তব্য করেছে তারা জানতেন পুতিন এমন একটা অজুহাত বের করবেন!!! যুদ্ধে কোনপক্ষই এথিক্যাল যুদ্ধ করে না, বরং সুযোগ পেলেই ভাঙ্গে। তবে কষ্ট করে যুদ্ধের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে চেষ্টা করে। আসলে কেউই প্রতিপক্ষের উপর সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। কাজেই জেলেনেস্কির উচিত হবে বাইডেনের পুতুল হয়ে থাকার দিন শেষ করা। কারণ, শেষে বাইডেন তাকে ফেলে পালাবেই!!! তাই, বেটার আগেই নিজের ভাগ্য গুছানো!! ওদিকে ইউরোপিও ইউনিয়নও মুচরানো শুরু করেছে [নিজেদের আর্থিক সংকটের অজুহাতে ইউক্রেনকে সাহায্য পাঠানো বন্ধ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন]।
সবশেষে লেটেস্ট বিদ্রোহের খবরঃ বিদ্রোহীর নাম ইটালি সাথে আছে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি যারা ইইউ এর গ্যাস ব্যবহার ১৫% কমানোর বিপক্ষে। ওদিকে পর্তুগাল ও স্পেন পাবলিকলি এই পরিকল্পনার বিরোধিতা শুরু করেছে। ইটালির প্রেসিডেন্ট বক্তৃতা দিয়ে বিরোধীতা করছে। যেটা দুদিন আগে আমাদের সময় টিভিতে দেখানো একটা নিউজ ক্লিপে প্রচারিত হয়েছে। এদিকে আজ আমাদের এনটিভি এই একই নিউজ টেলপে প্রচার করেছে। এখনই হাতের কাছে নাই তাই লিঙ্ক দিতে পারলাম না। পরে পারব। আর বিদ্রোহের মূল খবরটা আছে ব্লুমবার্গ নিউজে এখানে শিরোনাম Italy, Poland Raise Concerns About EU Proposal to Cut Gas Use.।
।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
[এই লেখাটা দৈনিক “নয়াদিগন্ত” পত্রিকার ২৩ জুলাই ২০২২ ওয়েবে আর পরদিন প্রিন্টে “ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটছে?” এই শিরোনামে ছাপা হয়েছিল। ঐ ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়। আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন। আসলে পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল।]
সালাম
লেখাটা গতকালকে নয়া দিগন্তে পড়েছি। এই লেখার প্রক্ষিতে আমার জানার আগ্রহ : রাশিয়ান জনগনের দিক থেকে এই যুদ্ধটা কেমন। আপনি বলেছেন ‘বাইডেন রাশিয়াকে যুদ্ধে নামিয়ে. . .’ – অর্থাৎ বাইডেন পুতিনকে বাধ্য করেছেন ইউক্রেন আক্রমন করতে! এই বাধ্য করাটা কি রাশিয়ার জনগনের দিক থেকে ছিল, না কি সাবেক কেজিবি এজেন্ট পুতিনের ব্যাক্তিগত ইগোকে আহত করার মাধ্যমে ছিল?
রাশিয়ার জনগনের দিক থেকে আমি প্রশ্ন করতে চাই : ২৪ ফেব্রুয়ারীর আগে রাশিয়ার জনগন কি কি সমস্যা/বিপদ/সংকটে ছিল যা থেকে তাদেরকে রক্ষার জন্য পুতিন ইউক্রেন আক্রমন করতে বাধ্য হলেন? আর আপনি যেভাবে বলছেন – বাইডেন তথা পশ্চিমাদের পরাজয় প্রকারান্তরে পুতিনের বিজয় নিশ্চিত – সেই বিজয়ের মাধ্যমে রাশিয়ার জনগন কি কি অর্জন করতে যাচ্ছে? নেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে এ’বছর রাশিয়ার জিডিপি ৮% হ্রাস পেতে পারে, ইনফ্লেশন ইতিমধ্যেই ২০% ছাড়িয়েছে – যুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে এ’সব অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিপরিতে রাশিয়ার জনগনের ল্যান্ড মার্ক এ্যচিভমেন্ট কি কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে একটা বিস্তারিত লেখা আশা করছি॥
ধন্যবাদ
LikeLike