নাসিরুদ্দিন শাহ’রা “কথিত সেকুলার” ভাঁড়ে পরিণত
গৌতম দাস
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫ পিএম
Had great faith when Modi ascended to power in 2014: Naseeruddin Shah
[সার-সংক্ষেপঃ ভারতের নাসিরুদ্দিন শাহরা অবুঝের মত কথা বলছেন। তারা ভারতের রাজনীতি নাকি নিজের ধর্ম – কোনটার সংস্কার চান, সেটাই পরিষ্কার নন বা পরিস্কার করছেন না। তিনি যে ধারণার উপর ফিরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন তা কংগ্রেসের কথিত-‘প্রগতিবাদী’ রাজনীতি; যা এখন নিজগুণেই পরাজিত ও মৃত। আমরা তিন দেশ ভারত, পাকিস্তান আর বাংলাদেশকে এটাই জন্ম থেকেই আজও অশান্ত ও দুর্বল করে রেখেছে। এবং এখনও সমাধান করতে সক্ষম না হলে আগামিতেও আরও অশান্ত থাকতে বাধ্য হবে। অথচ নাসিরুদ্দিন শাহরা তা বুঝতে পারছেন মনে হয় না।]
কংগ্রেস-প্রগতিবাদীদের রাজনীতি ভারতেই আজ মৃত। কংগ্রেসের ক্রমে নিঃশেষ, মুছে যাওয়া আর বিজেপির দু’বার বিজয়ই এর প্রমাণ। হিন্দুত্ববাদের বিজেপি হয়ত আবার জিতবে বা জিতবে না, কিন্তু কংগ্রেসের রাজনীতি শেষ ও বিলুপ্ত, এটা আর ফিরে আসবে না, তা আমার কথা নয়। গত নির্বাচনে রাহুল গান্ধী নিজেই “সফট হিন্দুত্ববাদের” ভিত্তিতে ও পক্ষে ভোট চেয়ে তা প্রমাণ করেছেন। অর্থাৎ ভারতে প্রধান দুই দলের এখন একটাই রাজনীতি – হিন্দুত্ববাদ। সাথে এখানে বলে রাখা ভাল অনেকের হয়ত খেয়াল করে দেখাই হয় নাই যে “হিন্দুত্ববাদ” জিনিষটা কী!
আগে বলে নেয়া যাক হিন্দুত্ববাদ কী নয়! এর মানে, কেউ হিন্দু (বা সনাতন) হলে সে হিন্দুত্ববাদী বা খারাপ তা এখানে বলা হচ্ছে না, হয় না। হিন্দু হওয়া খারাপ তাও না। এককথায়, হিন্দুত্ববাদ আর হিন্দু মানে একই কথা একেবারেই নয়। কেউ হিন্দু হয়েও হিন্দুত্ববাদি নাও হতে পারেন। তবে হিন্দুত্ববাদি সকলেই হিন্দুও। ব্যাপারটা হল আজও কংগ্রেস এবং বিজেপি – প্রথমটা সফট [soft] আর পরেরটা ভারি হিন্দুত্ববাদী হলেও এদুই দলের বাইরে এখনও অনেকেই হিন্দু থাকতে পারেন এবং তারা আছেনও।
আবার, কেউ হিন্দুত্ববাদী হলে সেটা খারাপ এজন্য যে এটা উগ্র হিন্দু জাতিবাদ বা ন্যাশনালিজম। তবে উগ্র বা নরম যেটাই হোক এটা খারাপ। চিন্তা হিসাবে বিপদজনক। কারণ এগুলো “আমার জাতি শ্রেষ্ঠ” ফলে অন্যদের উপরে আমার স্থান – এধরণের জাত শ্রেষ্ঠত্ব এর ধারণা; বলাই বাহুল্য সব জাত শ্রেষ্ঠত্ব ধারণাই বিপদজনক ও ক্ষতিকর। হিটলারের মত অন্য-সব জাতিগোষ্ঠিকে পুড়িয়ে মারার মত ধারণা – এথনিক ক্লিনজিং ধারণা। কোন ধর্ম বা কোন জনগোষ্ঠির মনের গহীনে “নিজ-জাত-শ্রেষ্ঠত্ববোধ – এটা দুনিয়ার বাকি সব জাতিগোষ্ঠির জন্য বিপদজনক এবং পাশাপাশি অন্য কোন জাতিগোষ্ঠির সাথে বসবাস-অযোগ্য এক “জাতিবোধ। তাতে এই জাত বলতে তা ইংরাজিতে race অথবা ethnic যাই বুঝাক বা যে অর্থেই জাত বা জাতি বুঝাক না কেন। সবার বেলাতেই সত্য। হিন্দুত্ববাদ একটা জাত-শ্রেষ্ঠত্ববাদের ধারণা।
আসলে, যেকোন ধরণের জাতি-ধারণা মধ্যেই নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবা – এই শ্রেষ্ঠত্ববোধ ধারণা সুপ্ত বা লুকানো থাকেই। আর তাই যেকোন সময় তা বের হয়ে এসে আমরাও একেকটা জাতি হিটলার হয়ে উঠতে পারি। হিটলার হয়ে উঠতে পারি। হিটলারের মত “আমরা দেহে নীল চোখের এরিয়ান রক্ত বা ব্লাড, আমরা হলাম দুনিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ; আমরা জাত-শ্রেষ্ঠ। এই ছিল হিটলারের মুখ্য বয়ান। আর এটাই সব রেসিস্ট (বর্ণবাদী racist) – এদের কমন ডায়লগ আর চরম ক্ষতিকর বয়ান। দুটা শব্দ দিয়ে এদের চিনা বা চিনানো সম্ভব। আমরা চেক করতে পারি তারা রক্ত অথবা শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলছে কিনা! অথবা আমরা মহান বা আমরা মহান জাতি; আমার ভারত মহান বা আমার জর্মানি মহান ইত্যাদি ধরণের বয়ান দেয় কিনা! আর এখানে রক্ত মানে তাদের রক্ত নাকি সর্বোচ্চ পরিশুদ্ধ, এই তাদের দাবি। একারণে কংগ্রেস বা বিজেপির “হিন্দুজাতি রাষ্ট্র” গড়তে চাওয়া বা হিন্দুত্ববাদ গড়া একই কথা। অনেক সময় আমরা অজানায় আরেকটা জনগোষ্ঠিকে নিচা দেখানো যায় এভাবে শব্দ ব্যবহার করে কথা বলে ফেলি – তাই এটা অবশ্যই রেসিজম এবং ক্ষতিকর । [যেমন পাকিস্তানিদের আমরা ‘পাকি’ বললাম।] আর এভাবে সবচেয়ে ক্ষতিকারক দিক হল, এতে একটা রাষ্ট্রের ভিতরে আর সকলেই সম-নাগরিক অধিকারের নাগরিক হওয়ার আর সুযোগ বা সম্ভাবনা থাকে না। নাই হয়ে যায়। কাজেই মূলকথা কারও হিন্দু নাগরিক হওয়া (যেটা কোন সমস্যা নয়) আর হিন্দুত্ববাদী নাগরিক হওয়া এক কথা নয়।
ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রভাব অর্থে বা ট্রেন্ড অর্থে বলতে পারি কংগ্রেসের রাজনীতির পতন হয়েছে। অর্থাৎ উগ্র-হিন্দুবাদকে লুকানো রেখে আড়াল নেয়া হিন্দুত্ববাদ পরাজিত হয়েছে। আর এতে খোলাখুলি হিন্দুত্ববাদ বা হিন্দুজাতিবাদ উদাম হয়ে বিজেপি নামে ক্ষমতাসীন। অথচ নাসিরুদ্দিনরা যা নাই, যা মৃত, সেই কংগ্রেস-প্রগতিবাদীদের অলীক সেক্যুলার ভারতে ফেরার দাবি করছেন! গত বছর (২০২১) সেপ্টেম্বরে তার ফেসবুক ইউটিউবে একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে কিছু বক্তব্য প্রচার করছেন সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আজকের লেখার প্রসঙ্গ।
মনে রাখতে হবে, রামমোহনের ব্রাহ্ম সমাজেরই পরিণতি হল – এক হিন্দুজাতি রাষ্ট্র, হিন্দু নেশন স্টেটের ধারণা-কল্পনা। আর শেষে এরই বাস্তব রূপ হল ১৮৮৫ সালে জন্ম নেয়া ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া অনুমোদিত প্রথম রাজনৈতিক দল ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ বা সংক্ষেপে কংগ্রেস। হিন্দু জাতি-রাষ্ট্র কায়েম যার লক্ষ্য। বলাই বাহুল্য অবিভক্ত ভারতে হিন্দুদের যদি হিন্দুজাতি রাষ্ট্র বা হিন্দুত্ববাদ গড়ার দিকে উস্কে দেয়া হয়, তবে এটাই আসলে পরিণতিতে মুসলমানদেরকেও তাদের জাতিবাদের আরেক রাষ্ট্র গড়ার দিকে ঠেলে দেয়া হবে। তাই হয়েছে …
নাসিরউদ্দিন শাহ এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ
নাসির উদ্দিন শাহ এর মূল পাবলিক পরিচয় তিনি দক্ষ শক্তিমান অভিনেতা ও পরিচালক তো বটেই; তিনি তিনবারের “ফিল্মফেয়ার” পুরস্কার প্রাপ্ত, তিনবার ভারতীয় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং একজন “পদ্মভূষণ” পুরস্কারপ্রাপ্ত। দিল্লির স্বনামে পরিচিত, “ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা” [NSD] এই ইন্সটিটিউটের ১৯৭৩ সালের গ্রাজুয়েট। আমার ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতায় বললে, আমাদের তরুণ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আশির দশকে আমরা তাঁর বিখ্যাত অভিনয় ও সিনেমাগুলো দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। নিঃসন্দেহে তিনি একজন ভাল পারফর্মার। হাতে গোনা কিছু সফল লোকেদের একজন একজন তিনি। যদিও সেকালের এক অর্থহীন আবেগী ভাষ্য অনুসারে বললে, আমরা “পুঁজিবাদবিরোধী সিনেমা” দেখতে চাই এমন ভাষ্যের কথা চালু হয়েছিল। এরই অধীন কথিত “প্যারালাল সিনেমা” আন্দোলন এক ব্যর্থ অভিজ্ঞতা ছিল সেগুলা, তা অবশ্যই। কিন্তু এখানে আমাদের আলোচনার বিষয় এসবের একেবারেই বাইরে। তাই এখন আর সেদিকে যাচ্ছি না।
বলা যায় মোদির আমলের ভারত (২০১৪-এখনও) এইকালে চরম অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ নাসিরউদ্দিন শাহ এর ক্ষোভ আর তা থেকে তোলা হিন্দুত্ববাদী বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ে নাই। বিশেষ করে গত বছর থেকে। যার মূল কারণ হল, চরমতম মুসলমানবিদ্বেষ ছড়ানো শুরু করেছেন মোদি বিজেপি ও তার দলবল। যার পিছনে আছে ভারতের কোভিড দুরবস্থায় মোদি প্রশাসনের ম্যানেজমেন্ট ফেল করা থেকে। সেখান থেকে অর্থনৈতিক সংকট, কাজ হারানো, চিকিতসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া ইত্যাদি। আর এত হারিয়ে ফেলা জনমত যা মোদিকে কোনঠাসা করে তুলেছে আর এই সংকট মোকাবিলায় মোদি নিয়মিত চলমান মুসলমানবিদ্বেষকে আরো চরমে তুলে এথেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় হিসাবে একে হাজির করেছেন।
যেমন, আফগানিস্থানে তালেবান-উত্থানে ভারতীয় মুসলমানদের উচ্ছাস প্রকাশ – এর বিরুদ্ধে নাসিরউদ্দিন শাহ নিজের কথিত “সেকুলার অবস্থান” দিয়ে মোকাবিলা করতে গেছিলেন। আর এতে পরিণতিতে তিনি না ঘরের না ঘাটের অবস্থান পড়েছেন। এতে না ভারতীয় মুসলমানদের আম প্রধানধারা তাকে আপন করতে পেরেছে না এখনকার হিন্দুত্ববাদ প্রভাবিত ভারতের প্রধানধারা তাদেরঅও অন্তত এলিট বা সেলিব্রেটি বলে নাসিরউদ্দিনকে জায়গা করে দিয়ে পেরেছে। অথচ সবখানেই নাসিরউদ্দিন শাহ তার কাম্য তবে মৃত ও কথিত সেকুলারিজম খুজে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।
কাশ্মীরের মুসলমান হত্যা-নিপীড়ন এর পক্ষে হিন্দুত্ববাদী সাফাই বয়ান তৈরির সিনেমা “কাশ্মীর ফাইলস নিয়েও নাসিরউদ্দিন শাহ কড়া প্রতিবাদ করেছেন। করেছেন তার কথিত সেকুলারিজম এর উপর দাঁড়িয়ে। অথচ এই কংগ্রেসি সেকুলারিজম (১৯৪৭-৯০ এর দশক) সেকালেও কিছুর সমাধান করতে পারে নাই। গান্ধী নিজেই খুন হয়ে গেছেন তাও না! আর নব্বই এর দশক থেকে ভারতে কথিত সেকুলারিজম ক্রমেই শেষ প্রভাবটুকুও হারিয়ে ফেলেছিল। আর এখন খোলাখুলি হিন্দুত্ববাদের জমানা।
মূলকথাটা হল, স্বাধীন ভারত জন্মের আগে থেকেই “কংগ্রেসি সেকুলারিজম” – এটা ছিল এক মিথ্যা অবলম্বন। অকেজো রাষ্ট্রনীতি। কারণ খোদ কংগ্রেসের জন্মই হয়েছে খোদ হিন্দু জাতিরাষ্ট্র গড়ার খায়েসে। যার সুপ্ত ও মৌলিক লক্ষ্য হল “হিন্দু আধিপত্য” কায়েম। এর ভিত্তিতে রাষ্ট্র-সমাজ গড়তে হবে।
অথচ কোন আধুনিক রাষ্ট্র গড়ার চিন্তার মধ্যে যেকোন জনগোষ্ঠির যদি অন্যের উপর “আধিপত্য” কায়েমের স্বপ্ন-কল্পনা থেকে যায় তবে নিয়মিত সামাজিক সংঘাত তো চলারই কথা! এবং তাই ঘটে চলেছে। সারা কংগ্রেসি আমল এটা এভাবেই চলেছে। আর এই নোংরা চেহারা ঢাকতেই মিথ্যা-প্রলেপ হিসাবে আনা হয়েছিল কথিত ও অর্থহীন সেকুলারিজম ধারণা। অথচ সারা কংগ্রেসি আমলে হিন্দু “আধিপত্য” কায়েমের স্বপ্ন-কল্পনায় কোন বদল আনা হয় নাই। তাই, এই সেকুলারিজম ধারণাটাই প্রতারণা। তা সত্বেও নাসিরউদ্দিন শাহ এর মত ভারতীয় মুসলমানেরা নিজের সাথেই প্রতারণা করে নিজেকে বুঝ দিয়েছে যে না – কংগ্রেসি সেকুলারিজম ভাল ও তাদের কাম্য। তাদের সুরক্ষা দিবে!! এটা দিতে পারবে না। কারণ, হিন্দু “আধিপত্য” কায়েম কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য – তাই এটা জারি রেখে এরপর আর মুসলমানদের জন্য এটা আর রক্ষাকবজ হতে পারতে না।
এই সেকুলারিজম ধারণাটাই প্রতারণাঃ
অথচ এই সেকুলারিজম ধারণাটাই প্রতারণা। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল এর সাথে আরেকটা শব্দ আছে “অসাম্প্রদায়িক”। মুল শব্দটা তারা বানিয়েছে – সাম্প্রদায়িক বা কমুনাল (communal)। এখন কমুনাল বা সাম্প্রদায়িক শব্দের মানে কী?
সাম্প্রদায়িক শব্দটা আসলে “হিন্দু আধিপত্য” কায়েমের যে বাসনা তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এরই এক্সটেনশন বা বিস্তার করতে গিয়ে তৈরি এক ধারণা। যেমন এই প্রশ্নের জবাব কী যে, “হিন্দু আধিপত্যের সমাজ গড়ার যে বাসনা তাহলে মুসলমান বা অন্যধর্মের লোকেরা সেখানে কীভাবে বসবাস করবে? এর জবাবে “হিন্দু আধিপত্য” আগ্রহিরা বলবে, আমার সমাজে তুমি মুসলমান থাকতে চাইলে আমি কিছু শর্ত দিব যা তোমাকে মেনে চলতে হবে বা সে অনুযায়ী তোমার নিজেকে সাজিয়ে নিতে হবে। আর সেসব শর্তগুলো মানলে তোমাকে আমি যে খেতাব দিব তার নামই হল “অসাম্প্রদায়য়িক”। মানে হল আমি হিন্দু আমি আমার আধিপত্যের সমাজ কায়েম করব, আমার ধর্মিয় আধিপত্য বা শ্রেষ্ঠত্বের চিহ্নগুলো প্রদর্শন করব। কিন্তু তুমি মুসলমান তোমার চিহ্ন – টুপি বা পাঞ্জাবি ধরণের ইসলামি চিহ্ন প্রদর্শন করতে পারবা না। বরং আমার নির্দেশিত কালচারাল আইকন বা চিহ্নে নিজেকে সাজিয়ে নিবা। একমাত্র তাহলেই আমি তোমাকে আমার পাশে বসতে দিব। আমার স্কুল-কলেজে আমার পাশে বা একই সুবিধায় চাকরি-কাজের স্থলেও আমার পাশে তোমাকে বসতে দিব। যাতে তুমি যে আমার অধীনে তা জ্বলজ্বল করে প্রকাশ্য থাকে। সারকথায় বললে, অসাম্প্রদায়িক হলে মানে নিজেকে ভুলে আমার শর্তে নিজেকে সাজালে কেবল তবেই আমি তোমাকে আমার সমাজে জায়গা দিব।
এই কারণে বলা যায়, সাম্প্রদায়িক শব্দটার উপস্থিতি আর ধারণা থেকেই বুঝা যায় “হিন্দু আধিপত্য” কায়েমের মুল বাসনার বাস্তবায়ক শর্ত হল “অসাম্প্রদায়িকতা”।
ভারতীয় মুসলমানদের উপর এই “অসাম্প্রদায়িকতার” শর্ত আজও চাপিয়ে রাখা আছে। আর নাসিরুদ্দিন শা বা কবি গীতিকার জাভেদ আখতার এর মত ভারতের কালচারাল জগতের লোকেরা এই ভিত্তিতে নিজেদেরকে সেকুলার বলে পরিচয় দিয়ে বেদম খুশি ছিল। তারা মানতেই চায় নাই যে এট অধীনস্ততা!
তারা এটাও মানতে চায় নাই যে কংগ্রেসের সেকুলারিজম আসলে ইসলাম কোপানোর আর ইসলামবিদ্বেষের সেকুলারিজম!যারা হিন্দুত্ববাদ বিরুদ্ধে লড়তে চান তাদের উচিত অসাম্প্রদায়িকতা বা কমুনাল শব্দগুলো একেবারে পরিত্যাগ করা।
এগুলো হিন্দু আধিপত্য কায়েমের শব্দ ও চিহ্ন। আমাদের যেকোন আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে।
আর সবচেয়ে বড় কথা এটা কোন সেকুলারিজমই নয়। তাহলে এখন মুল সমস্যাটা কী? সেটা হল, না তারা হিন্দুত্ববাদের প্রতিবাদকারি না তারা অন্য মূসলমানদের সাথে একাত্ম। বরং তারা আজ একা! আর সর্বপরি তাদের পেয়ারের কংগ্রেস নিজেই আজ নিজেকে সফট হিন্দুত্ববাদী বলে নিজেদেরকে তুলে ধরছে।
বলাই বাহুল্য অবিভক্ত ভারতে হিন্দুদের যদি হিন্দুজাতি রাষ্ট্র বা হিন্দুত্ববাদ গড়ার দিকে ঠেলে দেয়া হয়, তবে এটাই আসলে মুসলমানদেরকেও তাদের জাতিবাদের দিকে ঠেলে দেয়া হবে। হয়েছেও তাই। কংগ্রেসের জন্মের ২০ বছরের মধ্যে মুসলিম লীগ বলে আলাদা দল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। যা পরে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করেছিল। পববর্তীতে কংগ্রেস তো বটেই বিশেষত কমিউনিস্টরা ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র গড়ার জন্য জিন্নাহ ও মুসলিম লীগের ওপর সবদোষ চাপিয়ে প্রপাগান্ডা করে চলেছে। অথচ সবার আগে হিন্দুজাতি রাষ্ট্রের ভারতের কল্পনা ও এর ভিত্তিতে কংগ্রেসের জন্ম তারা দিয়েছে, এই খবর তারা লুকিয়ে রাখে।
তাহলে একালে নাসিরুদ্দিনরা কী চাইছেন? তারা বলছেন তাদেরকে ওই হিন্দুজাতিবাদের কংগ্রেসের সরকার বা জমানাটা ফিরে এনে দিতে, যে হিন্দুজাতিবাদের কংগ্রেস চেহারা লুকাতে ‘সেক্যুলার’ ও ‘অসাম্প্রদায়িক’ জামা গায়ে দিয়ে ঘুরত। আমরা নাসিরুদ্দিনদের খুশি করতে এখন চাইলেও সেই কংগ্রেসকে ফিরে আনতে পারব না। কারণ সে মৃত আর সে জায়গায় স্বরূপে আরএসএস-বিজেপির হিন্দুত্ববাদ কায়েম হয়েছে। কংগ্রেস আর জাগবে না। সে ইতিমধ্যে সফট হিন্দুত্ববাদে চলে গেছে।
আসলে নাসিরুদ্দিনদের খেয়াল করলে দেখতেন তারা আসলে কংগ্রেসের হিন্দুজাতি ধারণার ভেতরে যে মার্জিনালাইজও চাপা পরে থাকা (কথিত সেক্যুলার) ‘মুসলমান’ ধারণা তৈরি হয়েছিল সেখানে ফেরত যেতে চাইছেন। কিন্তু সেটা তো নিজগুণেই এখন মৃত!
নাসিরুদ্দিন শাহদের অনেক আগেই বুঝে নেওয়া দরকার ছিল যে রাষ্ট্র থেকে ধর্ম আলাদা করতে হবে টাইপের বৃটিশ শয়তানি ব্যাখ্যার সেকুলারিজম যা ভারতীয় কথিত সেকুলারিজম – এর সাথে ক্লাসিক সেকুলারিজমের কোন সম্পর্ক নাই। ক্লাসিক সেকুলারিজমের মুল বৈশিষ্ট ও তাতপর্য হল ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে সকল নাগরিকই সম- অধিকারের নাগরিক। ফলে এর ভিতরে “রাষ্ট্র থেকে ধর্ম আলাদা করতে হবে বলাটাই শয়তানি”, হিন্দু আধিপত্য নিশ্চিত করার ছুপা খায়েস।
নাসিরুদ্দিন শাহ’রা এসব মৌলিক ধারণা থেকে বহুগুণ দূরে…।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
[এই লেখাটা গত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, সাপ্তাহিক দেশকাল পত্রিকার ওয়েবে ও প্রিন্টে “নাসিরুদ্দিন শাহরা ভাঁড়ে পরিণত হবেন“– এই শিরোনামে ছাপা হয়েছিল।
সাপ্তাহিক দেশকালে ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়। আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন। পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]
আপনার সমন্ধে অবগত হই একটি ইউটিউব আলোচনার মাধ্যমে যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কোলোনিয়াল যুগের অবসানকল্পে আমেরিকার ভূমিকা এবং চায়নার উত্থান। গ্লোবাল পারস্পেকটিভ নিয়ে আপনার নির্মোহ বিশ্লেষন চমৎকার লেগেছে। বলতে গেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় কতিপয় রাজতন্ত্রের ইতি ঘটলেও আরও বেশকিছু দেশে/অঞ্চলে রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বন্দোবস্ত হয় যার মূল চাবিকাঠি রেখে দেয় আমেরিকার হাতে। রাজতন্ত্র থেকে পুঁজিবাজার বা পুঁজিতন্ত্রের উত্থান এটাকে আমেরিকা সার্থকভাবে কাজে লাগাতে পারলেও আমজনতা তা বুঝতে অনেক সময় নিয়েছে। ততদিনে আমেরিকা নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। এখনও আমেরিকার হাতে যেসব ম্যাকানিজম রয়েছে তার কোন বিকল্প পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ গড়তে পারেনি। গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার সংস্থাগুলো আমেরিকান বলায়ে। ইউএন, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ এর সিংহভাগ তহবিল আমেরিকার। টেকদুনিয়ার বড় বড় সার্চ ইঞ্জিন যেমন গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট ইত্যাদি আমেরিকান কোম্পানী।…
LikeLike