রেনেসাঁ থেকে এনলাইটেনমেন্টঃ
বিজ্ঞান বা র্যাশনালিটির সীমা কোথায়?
গৌতম দাস
০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০০ঃ০২ সোমবার
What is Enlightenment and Perpetual Peace by Immanuel Kant – Book Review
এই লেখা শুরুতে এর শিরোনাম সম্পর্কে আগাম পরিচয় করিয়ে দিতে এই শিরোনাম কেন ও কী ধরণের এনিয়ে কিছু বাক্য দিয়ে শুরু করব।
এই লেখার মূল বিষয়বস্তু “এনলাইটেনমেন্ট” (enlightenment)। আর শব্দটা দেখাই যাচ্ছে এক ইংরাজি শব্দ। “এনলাইটেনমেন্ট” শব্দটা ও এই ধারণার খুবই ইতিবাচক অনুসারি এমন অনেকে সম্ভবত এর বাংলা করবেন যে “এনলাইটেনমেন্ট” মানে, মানুষ বা জনগোষ্ঠিকে “অজ্ঞতামুক্ত” করা বা “আলোকপ্রাপ্ত” করা। তবে পরিস্কার থাকার দরকার যে এই অর্থ আমার করা নয় বরং “এনলাইটেনমেন্ট” এর অনুসারিদের করা; মানে বলতে চাচ্ছি যে, আমি এনলাইটেনমেন্ট-এর অনুসারি নই। বরং বলা যায় আমি ক্রিটিক্যাল বা পর্যালোচক অবস্থানের। আমি বরং এই শব্দটার যা অর্থ নয় অথচ অনুসারিরা দাবি করে এদিকটা সামনে তুলে ধরতে চাইব এখানে। সরাসরি বললে, এই শব্দের অর্থ-সীমা কোথায় সেদিক থেকে শব্দটাকে বরং সবাইকে পুরাপুরি ও খুটিয়ে জেনে ও চিনে নিতে আহবান জানাবো।
এনলাইটেনমেন্ট শব্দটার প্রায় সমার্থক [synonymous] বা সহ-শব্দ হিসাবে উঠে আসে – বিজ্ঞান (science) বা র্যাশনালিটি (rationality) – এসব শব্দ। যে শব্দগুলোর অর্থ যদি সম্যক জানি তবে এসব শব্দের অর্থের সীমা জানা থাকবে। শব্দের অর্থসীমা জানা মানে কোন শব্দ কতদুর কী শব্দার্থ বহন করে ও কার পরে আর করে না সে সম্পর্কে সচেতন থাকা। এই অর্থে এই লেখার একটা উদ্দেশ্য বিজ্ঞান বা র্যাশনালিটি শব্দের অর্থের সীমাবদ্ধতাগুলো স্পষ্ট করা, পাঠককে সচেতন করা। বিজ্ঞান বা র্যাশনালিটি শব্দগুলো আমরা মূলত ব্যবহৃত হতে দেখি যে ধর্ম-কে (বিশেষ করে ইসলাম) কোপানো বা ধর্মকে তুচ্ছ, নাকচ ইত্যাদি করার কাজে।
যেমন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কথিত “বিজ্ঞান চর্চাবাদিদের” কার্যত মুল উদ্দেশ্য হল ধর্ম বা মূলত ইসলাম সম্পর্কে ঘৃণা বা অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিচা ধারণা প্রচার করা। অথচ বিজ্ঞান ও ধর্ম ধারণা দুটো একে অপরের সমতুল্য ক্যাটাগরি বা প্রসঙ্গই নয়। এছাড়া এরা মুখে বলে থাকে তারা সমাজে ইসলাম ধর্মের প্রভাব কমাতেই বিজ্ঞানচর্চা করতে বা বাড়াতে চায়; এতে যা কার্যত এক গভীর ইসলামবিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোই হয়ে দাড়ায়। শেষে ব্যাপারটা দাড়ায় সুনির্দিষ্টভাবে একটা ধর্ম ইসলাম – ইসলাম কোপাতে চাওয়া এর উদ্দেশ্য। এই রাজনৈতিক লক্ষ্যটা আসলে উগ্র হিন্দুত্ববাদ বা বিজেপি-আরএসএসের মত এক উগ্র হিন্দু জাতিরাষ্ট্রীয় ধারণা। এটাই ভারত রাষ্ট্রের জন্ম থেকেই চলে আসা হিন্দুত্ববাদ – উগ্র বা নরম “হিন্দু জাতিবাদই শ্রেষ্ঠ” এমন ধারণা। অর্থাৎ কার্যত বাংলাদেশের কথিত বিজ্ঞানচর্চাগুলো আসলে হয়ে দাড়ায় হিন্দুত্ববাদের সমর্থক ও হিন্দুত্ববাদের প্রচার-প্রসার ঘটানো; বা বাংলাদেশে প্রগতিবাদের নামে হিন্দুত্ববাদকে সহনশীল করে হাজির করার ততপরতা। এটাই ফলাফলে বাংলাদেশের উপর ভারতের আধিপত্য জন্মানোর সাফাই বয়ান তৈরি করে। সারকথায় এনিয়ে বাংলাদেশে প্রগতিবাদী বয়ানটা হল, মুসলমান মানেই যেহেতু জঙ্গী তাই, যেন জঙ্গীবাদকে দুর্বল করতে চাওয়ার কর্মী তারা? তাই যেন বাংলাদেশকে কথিত জঙ্গীবাদের কবল থেকে মুক্ত থাকতে আমাদেরকে ভারতীয় আধিপত্যের আড়াল আশ্রয়ে যেতেই হবে – এই হল তাদের প্রচ্ছন্ন সাজেশন……!
জাত বা জাতি ধারণায় পরিচয়-আইডেনটিটি খাড়া করতে চেয়ে যেকোন ধর্ম বা বর্ণ, কালচারাল ভিন্নতা অথবা সাধারণভাবে যেকোন এথনিসিটি [ethnicity] বা জাতপরিচয় এর পক্ষে দাঁড়িয়ে – “এটাই শ্রেষ্ঠ ” – ধরণের প্রচার করতে আমরা সকল ধারাকেই করতে দেখি যা খুবই কমন ফেনোমেনা; এটাই যেকোন রাষ্ট্র বা সমাজের কোন-না-কোন জাতির পরিচয় আঁকড়ে দাঁড়ানো – এটাই দেশের অস্থিতিশীলতার উতস হয়ে দাড়ায় আছে যা প্রকারন্তরে সমাজের জন্য গভীর ক্ষত ও বড় ক্ষতিকর ততপরতাতা। এটা মূলত যা আমার জাত-পরিচয়ের প্রেক্ষিতে “অপর” [others] এমন সকল এথনিক চিহ্ন-পরিচয়ের জনগোষ্ঠিকে জাত-নির্মুলের আকাঙ্খা রূপেই শেষে হাজির হয়ে যায়। যাকে আমরা “সব অপরকে” নির্মুলের এক এথনিক ক্লিনজিং [ethnic cleansing] এর আকাঙ্খা বা পোড়ামাটির নীতি বলেও চিনি! কারণ, শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা মাত্রই এর মৌলিক স্বভাব হল নিজের সকল “অপরকে” এই উদগ্র নির্মুলের আকাঙ্খা; যার সবচেয়ে বড় ও এক প্রভাবশালী প্রকাশ আমরা দেখেছিলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইউরোপ-জুড়ে হিটলার বা হিটলারিজমে। আবার ঐসময়ের হিটলারের হাতে নির্মুলের শিকার হওয়া জর্মান ইহুদি জনগোষ্ঠি, তারাও এখন পালটা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল নামে এক “হিটলারী” রাষ্ট্র বানিয়ে নিজেই হয়ে গেছে মোদী-আরএসএসের মতই আরেক শ্রেষ্ঠত্ববাদী – ইহুদিবাদ যার নাম। অর্থাৎ মনে সেই একই শ্রেষ্ঠত্ববোধ আর ‘অপর’ সকল এথনিক জনগোষ্ঠিকে উদগ্র নির্মুলের আকাঙ্খা মনে পুষে রেখে এরাও বড় হচ্ছে, এগিয়ে চলেছে। অথচ কারো শ্রেষ্ঠত্ববাদিতা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে – নিজে আরেক শ্রেষ্ঠত্ববাদিতা খাড়া করা এটা কোন প্রতিকার নয় – কারও শ্রেষ্ঠত্ববাদিতা নিজেও আরেক শ্রেষ্ঠত্ববোধ বা শ্রেষ্ঠত্ববাদিতা খাঁড়া করার মানে হয় না; হতে পারে না।
দুনিয়ার কোন রাষ্ট্র বা সমাজ এককাট্টা শতভাগ একই এথনিক আইডেনটিটির হয়না। নুন্যতম এক থেকে দশভাগ ভিন্ন এথনিক আইডেনটিটির জনগোষ্ঠি সে সমাজে থেকে যায়। ফলে এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের শ্রেষ্ঠত্ববাদিতার উদ্ভব ও অত্যাচার শুরু হতে দেখা যায়। অথবা কখনও হয়ত দেখা যায় মোটামুটি একই আইডেনটিটির জনগোষ্ঠির কিন্তু একদল চায় ভাষাভিত্তিক জাতিবাদের শ্রেষ্ঠত্ব, তো অন্যদল চায় ধর্মভিত্তিক আরেক জাতিবাদী শ্রেষ্ঠত্ব। এরাই নিজ নিজ শ্রেষ্ঠত্ববাদের সবচেয়ে বড় সংকট ও স্থায়ী তৈরি করে। অথচ একই সমাজে থাকতে হলে সবার আগে নির্মুল আকাঙ্খা ত্যাগ করতে হবে; “আমার অপর” যাকে মনে করছি তাকেও পাশাপাশি সমান অধিকার ও মর্যাদায় স্বীকার করে নিতে হবে। তবে সবার আগের প্রধান কাজ হতে হবে যেকোন ধরণের শ্রেষ্ঠত্ববোধ ত্যাগ করতেহবে। ধর্ম-নির্বিশেষে জনগোষ্ঠির সকলকে বাইরে জুতা খুলে ঘরে প্রবেশের মত করে নিজ নিজ সবধরণের শ্রেষ্ঠত্ববোধকে সমাজ-ঘরে প্রবেশের আগে বাইরে খুলে রেখে আসতে হবে। আমরা নাগরিক মাত্রই সকলেই সমান রাজনৈতিক অধিকারের – এই নীতিতে দাঁড়ালে শক্ত ও স্থায়ী ভিত্তির এক রাষ্ট্র কায়েম সম্ভব।
যদিও আরেক মুলকথায়, বিজ্ঞানবাদিতা বা রেশনালিটি শব্দগুলো ব্যবহার করে আজীব এক কথিত সেকুলার নামের প্রগতিবাদ এই আড়ালে তারা এথনিক ঘৃণায় তারা “ইসলাম কোপাতে” চাইছে। ইসলাম ঘৃণায় সব ছেয়ে ফেলতে চাচ্ছে; কার্যত যা হিন্দুত্ববাদ। এবং ভারতীয় আধিপত্যের বিস্তারের সহায়ক। ‘জঙ্গীবাদের’ কথা তুলে ভয় দেখিয়ে এরাও হিন্দুত্ববাদের শ্রেষ্ঠত্ব – যা আরেকভাবে আরেক শ্রেষ্ঠত্ববোধের ধারক, তাই কায়েম করতে চায়। যার সোজা অর্থ বাংলাদেশের উপর ভারতের আধিপত্য কায়েম ও বাংলাদেশকে তার বাজারে পরিণত করার আরেক কলোনি-চিন্তা!!। বিজ্ঞানবাদিতা বা রেশনালিটির নামে প্রগতিবাদের এভাবে শব্দ ব্যবহার বা এমন মানে করা যে মারাত্মক ভুল ও অন্যায় সেদিকটাই তুলে ধরা এলেখার উদ্দেশ্য।
র্যাশনাল[rational] বা যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন চিন্তাঃ
এখানে এখন প্রাথমিকভাবে র্যাশনাল [rational] শব্দের অর্থ কিছুটা বলে রাখা যাক। এই শব্দটাও ইংরাজি দেখাই যাচ্ছে। এর খাস বা সার অর্থ হল – “বুদ্ধি”। মানে বুদ্ধি বলতে বা এমন ধারণাকে কেন্দ্র করে যা বুঝি, তাই! যেমন রেশনাল শব্দের একটা অর্থ করা হয় – বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন বা যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন বিচার বা বিচারকারি মানুষ। অর্থাৎ দুটাতেই “বুদ্ধি” ব্যবহার করে যে “বিচারটা” করা হয় তাই বলা হয়েছে। সেই সুত্রে তাহলে এখানে এতে ‘কী’ বলা হয় নাই? বা বাদ রাখা হয়েছে?? সেদিকে যাওয়া যাক, তাহলে র্যাশনাল শব্দের অর্থ আরেকটু খুলবে!
যেমন বললাম, মন আর মগজের লড়াই চলছে! এখানে মগজ মানে আসলে বুঝানো হয়েছে বুদ্ধি। মগজের ব্যবহার মানে বুদ্ধির ব্যবহার। আর বুদ্ধির বিপরীতে তাহলে কী ধারণা থেকে গেল? বা কী সংশ্লিষ্ট নয়, বাদ পড়ল?? সে প্রশ্নের দিকে আগানো যাক! এখানে, বুদ্ধির বিপরীতে যা বাদ পড়ে থাকে তা হল মন বা মানুষের আবেগ অনুভুতি। মানে মানুষের অন্য মানুষের সাথে অথবা মানুষে-মানুষের মধ্যে সম্পর্ক – এই মৌলিক দিক যাকে অনেক সময় বলি আমাদের মানবিক সম্পর্ক। মানুষের রিলেশনাল দিক বা বোধের দিক এটা। এটা বাদ বা বুদ্ধির বাইরে থেকে গেল। এদিকটা আর রেশনাল শব্দটা কাভার করে না বা অন্তর্ভুক্ত নয়। মানুষের আবেগ অনুভুতি বা “সম্পর্কিত বোধ” যেকারণে বুদ্ধির আমলই করে না; করতে পারে না। মানে এটা বুদ্ধি দিয়ে বুঝার বাইরে!
তাই, শুধুই লজিক, যুক্তি বা বুদ্ধি দিয়ে মানবিক সম্পর্ক [human relation] বা মন-কে বুঝতে চাওয়া ভুল হবে। আর বাস্তবে আমরা তা করিও না। তাহলে সারকথায়, র্যাশনাল মানে যা কেবল লজিক [logic], রিজন [reason], যুক্তি বা বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে চলে। মন বা মনের ফিলিং [Feeling] অনুভব ইত্যাদি এসব একদিকে সরিয়ে রেখে এই বিচার করা হয়। [Reason বা রিজন বলতে form judgements logically বুঝতে হবে। মানে “যুক্তিবুদ্ধিতে ভর করে পৌছানো রায়” বুঝলেই আপাতত চলবে।] একারণেই যা লজিক্যাল মানে র্যাশনাল তা রিলেশনাল (মন বা মানবিক সম্পর্ক) দিককে সাথে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়ে করা কোন বিচার নয়। মানে হিউম্যান বা রিলেশনাল দিক এখানে বাদ থেকে যায়। যেমন যদি বলি, সাধারণত এটাই মানুষের স্পিরিচুয়াল [spiritual] দিক আমলে না নেয়া বা বাদ রেখে চিন্তা করা। স্পিরিচুয়াল মানে মানুষের স্পিরিচুয়াল চাহিদা আছে; বস্তগত নানা কিছু ভোগের চাহিদার মত এবং বস্তুগত ভোগের চাহিদা থাকা সত্বেও। অন্যভাবেও বলা যায়, মানুষের অন্য সকল মানুষ ও প্রকৃতির (কসমিক বা গ্রহ-নক্ষত্র সহ) সবকিছুর সাথে কিভাবে সম্পর্কিত সেই সম্পর্ককে জানা ও অনুভব করার আকাঙ্খাও আছে যা স্পিরিচুয়াল আকাঙ্খা! কারণ মানুষ দুনিয়ার তাঁর আগমন-আবির্ভাবেই কারণ উদ্দেশ্য কী আর এরপরে তাঁর জীবনের করণীয় কর্তব্য কী তাও এখান থেকেই সে সংগ্রহ (derive) করে বুঝে নিতে চায়! এভাবে নিজ জীবনকে সামঞ্জস্যপুর্ণ করে সাজিয়ে নিতে চায়। আর এখান থেকেই এই আকাঙ্খা, যা স্পিরিচুয়াল আকাঙ্খা!! অর্থাৎ এটা বৈষয়িক বা বস্তুগত আকাঙ্খা নয় বরং বস্তগতগুলোকে ছাড়িয়ে বা transcend করে গেলে তবেই এই আকাঙ্খার হদিস জানা যায়। এর কারণ সে লক্ষ্য করেছে সম্ভবত এভাবে জীবন না সাজিয়ে নিলে এক গভীর “একাকিত্ববোধ” বা উদ্দেশ্যহীনতাবোধ জীবনকে গ্রাস করে থাকে। এসরের সমাধান পাওয়া থেকেই স্পিরিচুয়াল চাহিদা্কের উদ্ভব ও তা জাগিয়ে রাখা। এথেকেই মানুষের উপলব্দি যে মানুষ মাত্রই রিলেশনাল [relational] বা অজস্র আরো প্রাণ-অপ্রাণ ও প্রকৃতির সাথে সে রিলেশনে আছে সে বা গভীরভাবে সম্পর্কিত হয়ে আছে – এই বোধ তাকে এমন ইঙ্গিত দেয়। এটাকেই আমি বলছি মানুষ “রিলেশনাল” বা relational element। মানুষ মাত্রই সম্পর্কিত বোধে [relational] এর মানুষ। কিন্তু লজিক বা রেশনালিটি এই রিলেশনাল দিকটা ধরতে পারে না, ছুতে পারে না।
অন্যভাষায়, তাই আমাদেরকে লজিক বা র্যাশনালিটির বিচার ছাড়িয়ে ছাপিয়ে বা ইংরাজিতে ট্রানসেন্ড [transcend] করতে পারলে তবেই মানুষের রিলেশনাল দিক সম্পর্কে জানা যায়, চর্চা করা সম্ভব।
কিন্তু ষোল শতকে নতুন কী ঘটেছিলঃ
আবার যেমন নিউটনের গতিসুত্র বুঝতে বসে সেখানে মন বা মনের ফিলিং বা অনুভব-কেও খাটাতে চাওয়া তা কোন কাজে আসে না। মানে রিলেশনাল দিকটা সংযুক্ত রাখা বা না-রেখে গতিসুত্রকে বুঝতে গেলে দুই ফলাফলে কোন ভিন্নতা আসে না। তাতে রেজাল্ট ভিন্ন হবে না। তবে এটা কেবল বস্তগত ফেনোমেনাকে বুঝার ক্ষেত্রে খাটবে। তাই কথা ছিল যে কেবল বস্তগত ফেনোমেনাকে ব্যাখ্যা বা বুঝবার ক্ষেত্রেই কেবল র্যাশনাল বা বিজ্ঞানবুদ্ধিতা, এই চিন্তা পদ্ধতি সীমাবদ্ধ থাকবে। যদিও তা তারা থাকে নাই। কাজেই সংক্ষেপে বললে, র্যাশনাল [rational] মানে হল, মগজ বা বুদ্ধি দিয়ে বিচার। রিলেশনাল দিক থেকেও বিচার নয় এটা। যার সবকিছু “বুদ্ধি” এই কেন্দ্রিয় ধারণার উপর দাঁড়ানো! এই অর্থে যা র্যাশনাল তা আসলে কেবল বুদ্ধি দিয়ে বুঝাবুঝির পথ ও প্রসঙ্গ!
দুনিয়াতে মানুষের আগমন শুরু থেকেই সে ছিল যাযাবর, মানে দুনিয়ার কোথাও শুরু থেকে কোন ভুমিতে সে থিতু হয়ে বাস করেনি, করে নাই। আর মূলত, খাবার সংগ্রহ ও শিকারের তাগিদে যে এভাবে একেবারেই যাযাবর (Pastoral) ছিল। আর কয়েক দশ-লাখ বছরের সেই যাযাবর জীবন শেষে এক সময় মানুষের জীবন থিতু হয়ে এসেছিল। আরেক ভাষায় এটাকেই বলে মানুষের প্রথম কৃষিকাজের জীবনের শুরু বা বলা যায় মাটি কামড়ে কোন ভুমিতে থিতু হয়ে কৃষিকাজভিত্তিক বসবাসের শুরু হয়েছিল যেখান থেকে। একারণেই যাযাবর আর কৃষিকাজ পরস্পর ভিন্ন বা বিপরীত ধারণা! আর শেষের এই থিতু হয়ে বসবাস – এটাকেই মোটামুটি গত ছয় হাজার বছরের মানুষের ইতিহাস বলা হয়। এটাকেই মানুষ এথনিক জীবন-যাপনের ইতিহাস বলে। জাত-পরিচয় বোধের শুরু এমনকি তাই শ্রেষ্ঠত্ববোধ ধারণার শুরুও একই – এই এথনিক জীবনের শেষের দিক থেকে। আমরা এখন যার বর্তমান প্রান্তে।
এবার আসেন, এই ছয়হাজার বছরের মানুষ-জীবনের সফরে প্রায় পুরাটা পথই আমরা হেঁটেছি ধর্মতত্বের [theology] হাত ধরে। অর্থাৎ আমাদের জীবনকে পুরাপুরি গাইড করে গেছে-হেঁটেছে নানা ধর্ম বা ধর্মবোধ থিওলজি। [ইংরাজি থি বা [ The] এর অর্থ হল দ্যা গড বা সমতুল্য আল্লাহ বা ঈশ্বর ধরণের ধারণা। তাই থিওলজি মানে গড বা আল্লাহ-বিষয়ক তত্ত্ব বা জ্ঞান।] তবে এই থিওলজিতে জীবন চলতে চলতে কেবল গত প্রায় পাঁচশ বছর আগের নয়া ঘটনা আসে; যখন নতুন করে এক বিজ্ঞান ও টেকনোলজির চর্চার রূপ দেখা গিয়েছিল – বিজ্ঞানের যুগ বলে! যে যুগে নয়া এক চিন্তার পদ্ধতির রূপ দেখেছিলাম আমরা। সারাংশে বললে সেটা একটা এজাম্পশন (assumption) এর উপর দাঁড়ানো বা আগাম ধরে নেয়া এক ভিত্তিতে যে কিছু ফেনোমেনা বা ঘটনা যা একেবারেই বস্তুগত বা ফিজিক্যাল ফেনোমেনা; আর এনিয়ে চিন্তা চর্চার পদ্ধতি ও এর ভিত্তি লজিক্যাল বা রেশনাল পদ্ধতিতে করা হবে। যেহেতু এগুলো ফিজিক্যাল ফেনোমেনা মানে নিউটনের গতির গতিসুত্র বুঝতে চাওয়ার মত ঘটনা তাই, মানুষের রিলেশনাল দিক বিচার এখানে স্থগিত বা বাদ দিয়ে আগানো যাক। বা নিউটনের মোশন থিওরি (Laws of motion) বা গতিসুত্রের মত ফিজিক্যাল ফেনোমেনা; মানে যার উপর হিউম্যান ফেনোমেনার প্রভাব নাই (তা স্পিরিচুয়ালও নয়) বা এর প্রভাব প্রায় নাই বলে উপেক্ষাযোগ্য। অন্যভাষায় এটাই বিজ্ঞানের যুগ বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিন্তার যুগ। সেই থেকে রেশনাল পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হওয়া এই চিন্তা পদ্ধতিই সাইন্টিফিক, লজিক্যাল বা রেশনাল ইত্যাদি নানান নামে শনাক্ত হতে থাকে। কারণ পরবর্তিতে ইম্মানুয়াল কান্ট [Immanuel Kant] এই চিন্তা পদ্ধতি-কেই তত্বায়িত করেন। মানে আগে ব্যবহার শুরু হয়ে যাওয়া আর পরে কী হয়েছিল তাকে তত্বায়িত (Theorized) করে বলা। মানে এখানে চর্চা থেকে তত্ব এসেছিল, তত্ব থেকে চর্চা নয়। আর শেষে তার লেখা বিখ্যাত আর্টিকেল What is Enlightenment যা ১৭৮৪ সালে লেখা।
Immanuel Kant: What is Enlightenment?, 1784
যদিও অর্ধ-শিক্ষিত ও মুসলমান-কোপানিতে ও ঘৃণা ছড়াতে আগ্রহীদের মাঝে এটা বেশ গেথে বসা অনুমান এবং তা ভুল অনুমান যে এনলাইটেনমেন্ট এর ধারণা – এটা নাকি জোঁকের মুখে নুনের মত; যা ধর্ম-কে নাকচ করতে হাজির হয়েছে। তাই যেকোন ধর্ম বা ধর্মতত্বের সামনে এনলাইটেনমেন্ট অথবা বিজ্ঞান-কে তুলে ধরলেই যেন ধর্ম নাকচ হয়ে যায় তাতে। একারণেই জাফর ইকবালেরা বিজ্ঞানবাদি। বলা বাহুল্য বলাই বাহুল্য বিজ্ঞানবাদিতা একটা নেতি ধারণা। বুঝে-না-বুঝে ও সীমাবদ্ধতা না জেনে যারা অসৎ উদ্দেশ্যে যত্রতত্র “বিজ্ঞান” মারাতে যায় এরাই “বিজ্ঞানবাদি”। চিন্তার যে পদ্ধতি আছে; পদ্ধতি মেনে চিন্তা চর্চা করতে হয়। এরা তা জানে কখনও শুনেছে মনে হয় না। বিজ্ঞান মূলত একটা চিন্তা পদ্ধতি; এটাকে র্যাশনাল চিন্তা পদ্ধতিও বলা হয়। আর গুরুত্বপুর্ণ কথা হল থিওলজির উপর র্যাশনাল চিন্তা-পদ্ধতি প্রযোজ্য নয়। কারণ থিওলজি মূলত মানুষের সম্পর্ক (যাকে উপরে রিলেশনাল বলে বুঝিয়েছি) বিষয়ক জ্ঞানচর্চা। এই অনুমান ভিত্তিহীন হলেও এটা গভীরে গেথে বসা সেই ভুল অনুমান। এসব নিয়েই এখানে কথা বলব।
এই ভুল অনুমানের শুরু হয়েছিল রেনেঁসা আন্দোলন থেকে। এটা আজকের ইটালি তখন যা রোম-কেন্দ্রিক এবং প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের (-৭৫৮ খ্রীষ্টপুর্ব থেকে ৪৭৬ খ্রীষ্টাব্দ) লেজ ছাড়ার পরের ঘটনা এবং সেকালে ফ্লোরেন্স ও রোমে বিস্তৃত হওয়া ১৩০০-১৬০০ এই সময়কালের ঘটনাবলী। ততদিনে (৩১৩ খ্রীষ্টাব্দে) প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্য এর সম্রাটসহ সকলেই ক্যাথলিক খ্রীশ্চান হয়ে গিয়েছে। আর পরে প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্য ৪৭৬ সাল থেকে ধবংসও হয়ে গেছিল। তবে পরবর্তিতে, হলি রোমান এম্পায়ার (Holy Roman Empire) নামে তবে আজকের ফ্রান্স-জর্মানের মাঝের শার্মেগেলন [Charlemagne] এর সম্রাটের নেতৃত্বে ৮০০ সালের শেষ সপ্তাহে এই নয়া সাম্রাজ্যের শুরু বা পত্তন হয়। কালক্রমে সারা ইউরোপ যার অধীনস্ত হয়, টিকেছিল (কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে) ১৮০৬ সাল পর্যন্ত। যদিও প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের সাসথে এর কোনই সম্পর্ক নাই। তবে সেকালে রেনেসাঁ [Renaissance] আন্দোলন ফ্লোরেন্স ও রোম থেকে শুরু হওয়া হলেও তা ছিল আসলে হলি রোমান এম্পায়ারের আমলে; মানে যেটা কোনভাবেই প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের আমলে নয়। কিন্তু মানুষে দুটা সাম্রাজ্যের মধ্যে বিভ্রান্ত সাধারণত হয়ে থাকে বলে পুরা ব্যাপারটা একটু বিস্তারিত করলাম। সারকথায়, রেনেঁসা আন্দোলন যা ১৩০০ থেকে ১৬০০ সালের মাঝের ঘটনাবলী এবং যার সাথে প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের কোন সম্পর্ক নাই। যে রোমের অধীনে ছিল স্রা ইউরোপ। কিন্তু রেনেঁসা আন্দোলন প্রাচীন ফ্লোরেন্স ও রোম শহরে শুরু হলেও পরে ১৪৯৯ সাল থেকে ফ্রান্সের ভিতর দিয়ে সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পরেছিল। আর ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক সামাজিক কালচারাল সহ সব ধরণের পরিবর্তন আবর্তিত হয়েছিল এই আন্দোলনের কারনে। একারণে অনেকের মনে এটাকে প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যেরই কোন ঘটনা মনে করে ভুল করে থাকে। কিন্তু ফ্যাক্টস হল, এর বহু আগেই ৪৭৬ সালেই প্রাচীন রোম সাম্রাজ্য ধবংস হয়ে গেছিল।
এখন রেনেঁসা আন্দোলন এর বিচারে ইউরোপে এক “ধর্মের যুগ” ছিল। যেটাকে মোটাদাগে ৫০০-১৫০০ খ্রীষ্টাব্দ বলে তারা মনে করে আর এটাকেই তাদের কোন কোন ধারা কালো যুগ (Dark age) অথবা মধ্যযুগ বলে (Middle Ages or medieval period) পরিচিত করায়, এটাকে তারা অতিউতসাহীরা অন্ধকার যুগ (dark age period) বলেও মানে করে থাকে। আমরা এই আলোচনায় দেখব কেন তাদের এই ভুল অনুমান; এছাড়া এই অনুমিত ভুল ধারণার কোন ভিত্তির উপর দাঁড়ানো! যদিও ৫০০-১৫০০ খ্রীষ্টাব্দ এই হাজার বছর সময়কাল এটা সারা দুনিয়াব্যাপী কোন অন্ধকারের সময়কাল ধারণা নয়; বরং পুরানা রোম-কেন্দ্রিক শাসিত (বা পরের হলি রোমান এম্পায়ার শাসিত) যে ইউরোপ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ একটা ধারণা। এবং এর চেয়েও বড় কথা এটা সব ধর্মের বেলায় নয় বরং কেবল খ্রীশ্চান ধর্মের – মানে সেকালে রোম-শাসিত ইউরোপের ও যা কেবল খ্রীশ্চান ধর্মের বেলায় এই অর্থে এটা ৫০০-১৫০০ খ্রীষ্টাব্দ এই হাজার বছর সময়কাল বুঝানো হয়েছে। তবু ইউরোপ পরে এটা সব ধর্মের বেলাতেই যেন প্রযোজ্য এমন অর্থ করে থাকে। এমনকি পুর্ব-ইউরোপ যার বেশিরভাগ অংশ শাসিত হয়েছিল রাশিয়ান জার (১৫৪৭-১৯১৭ সাল) এর অধীনে, এরা থেকে গেছিল অর্থডক্স ক্রিশ্চান। অন্ধকার যুগ-ওয়ালারা এদেরকেও গোনায় ধরে নাই। আমরা এশিয়ার মুসলমানেরা তো আরো দূরে…।
আর এই অন্ধকারের ধারণা – এরই বিপরীতে আলোর ধারণা এনে মানে অন্ধকার কারও উপর “আলো ঢেলে” যেন কিছুকে আলোকিত করে তোলা – এই অর্থেই এর নামকরণ হয়েছে এনলাইটমেন্ট বা en-light-en-ment ।
এনলাইটমেন্ট ধারণাটা মূলত রিজন (reason) এই ধারণার উপরে দাঁড়ানোঃ
ওদিকে আবার এনলাইটমেন্ট ধারণাটা মূলত রিজন (reason) এই ধারণার উপরে দাঁড়ানো। এমনকি বিজ্ঞান ধারণাটারও সারকথা হচ্ছে লজিক (logic) আর সেই অর্থে এর আরেক শব্দ হল র্যাশনাল (rational) বা বাংলা করে একে যুক্তিবুদ্ধি-সম্মত, এভাবেও বলা যায়। এনিয়ে আলাপ বিস্তারে নিয়ে যেতে হবে। তবে মনে রাখা ভাল যে বিজ্ঞান নিজে কোন জ্ঞানের শাখা নয় বরং মানুষের এক চিন্তা পদ্ধতি বা ম্যাথডলজি (methodology)। আর এই চিন্তা পদ্ধতিটাইকেই (বৈশিষ্ট হিসাবে) বলে লজিক্যাল বা র্যাশনাল। তবে এই আলোচনার মূল ফোকাস হল বিজ্ঞান ও র্যাশনালিটি এই ধারণাগুলোর ব্যবহার সীমা কোথায় সে সম্পর্কে পাঠককে জানানো। কোথায় কতদুর যাবার পরে বিজ্ঞান ও র্যাশনালিটি ধারণা দিয়ে সেই প্রসঙ্গ আর ব্যাখ্যা করতে যাওয়া ভুল হবে সেই সীমাকে বুঝা ও বুঝে নেওয়া। যেমন বিজ্ঞান ও র্যাশনালিটির জ্ঞান দিয়ে ধর্ম ব্যাখ্যা করতে যাওয়া ভুল হবে।
অষ্টাদশ শতকে যুক্তি (reason) ও বিজ্ঞানের বিকাশের সেকালে ইউরোপীয় ইতিহাস যে নয়া রূপ-পদ্ধতিতে হেঁটেছিল একেই এনলাইটেনমেন্ট (আলোকপ্রাপ্ত ) বলে চেনানো হয়েছিল। ইম্মানুয়েল কান্ট (Immanuel Kant (1724-1804)) তিনি এক জর্মান দার্শনিক তিনিই এনলাইটেনমেন্ট ধারণাকে তত্বায়িত করে সামনে নিয়ে আনেন। এখান থেকেই কান্ট শব্দটা থেকে কানশিয়ান (Kantian মানে যেমন, ইম্মানুয়াল কান্টের লজিক অর্থে) কানশিয়ান লজিক (logic); বা র্যাশনালিটি (rationality) ধারণাগুলো প্রচলিত বা ব্যাপারটা সামনে নিয়ে এসেছিল। তবে এভাবে “তত্বায়িত করেন” বললাম এজন্য যে “থিওরি ও প্রাকটিস” এদুইয়ের সম্পর্ক মানে তত্ব ও তার চর্চা নিয়ে এদুইয়ের সম্পর্ক নিয়ে একটা কথা চালু আছে সেটা এরকম যে কোন তত্ব আগে না ওর ব্যবহার বা চর্চা আগে ঘটেছিল। এই তর্কের সমাধান হল, দার্শনিকেরা আগে তত্ব তৈরি করেন, এরপর ওর ব্যবহারিক রূপ তৈরি হয় ঠিকই। এরপরে আবার ঐ চর্চিত রূপ থেকে পুনরায় নয়া তত্ব-ও তৈরি হতে পারে। কান্টের ক্ষেত্রে তাঁর তত্বের আগেই এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল। পরে কান্ট সেসব ব্যবহারিক ধারণা থেকে সেগুলোকে তত্বায়িত করে সাজিয়ে যা এনেছিলেন সেটাই কানশিয়ান লজিক ও রাশন্যালিটি ধারণা।
“বিজ্ঞান” কী কোন জ্ঞানের শাখাঃ
এদিকে বিজ্ঞান ধারণাটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আবার এটা সবরোগের ওষুধ যেন এমন ধারণা আছে। বিশেষ করে আপনি যদি ধর্ম কোপানোর বা নাকচ করার হাতিয়ার বুঝা ও ফেরি করা লোক হয়ে থাকেন। তাদের ধারণা হয়ে থাকে বিজ্ঞান দিয়ে ধর্ম বা ধর্মতত্ব-কে (Theology) পরাস্ত করা সম্ভব। কিন্তু আসলেই কী তাই???
দুঃখিত, তা অবশ্যই না।
এমনিতেই থিওলজি ও বিজ্ঞান দুটা সমতুল্য ক্যাটাগরি নয়। থিওলজিকে যে অর্থে জ্ঞানের একটা ব্রাঞ্চ বা শাখা বলা যায়। তাহলে বিজ্ঞান কী কোন জ্ঞানের শাখা??? আমরা যেমন ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বাইলজি বা ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন জ্ঞানের শাখা সম্পর্কে সম্পর্কে জানি; তাহলে বিজ্ঞানও কি তেমন আরেক জ্ঞানের শাখা? অবশ্যই না। আবার সাইন্স, আর্টিস, কমার্স সমাজ-বিজ্ঞান কিংবা শিল্পকলার কোন শাখায় পড়াশুনা করি তেমনই আর্টস বা শিল্পকলাতেও কী বিজ্ঞান থাকে? এর জবাব কি হবে??
আপাতত দ্রুত জবাবে চলে যাব, কারণ কম কথা বা মূল কথায় এর জবাব হল – বিজ্ঞান নিজে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বা ইতিহাস এর মত কোন জ্ঞানের শাখা নয়। তাহলে বিজ্ঞান কী? বিজ্ঞান হল জ্ঞানের পদ্ধতি বা এক চিন্তা পদ্ধতি। আর সেকারণে শিল্পকলাতেও বিজ্ঞান থাকা সম্ভব আর তা সত্যিই আছে। মানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে। সব জ্ঞানের শাখাই বৈজ্ঞানিক চিন্তা পদ্ধতিতে অগ্রসর হওয়া বা জানা হয়ে থাকে। মানুষ মাত্রই আবার রাশনাল এন্ড বিয়ন্ড (rational & beyond) । মানুষ রাশনাল অবশ্যই কিন্তু একই সাথে একে ছাড়িয়েও (Beyond) আরও অনেক কিছু। এই ছাপিয়ে যাওয়া বা ট্রান্সশিয়েন্ট (transient) – এটাও র্যাশনালিটির উপরে মানুষের আরেক স্বভাব বৈশিষ্ট।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
অসমাপ্ত, বাকিটা দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে দেখুন।
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক এখানে https://wp.me/p1sCvy-4lO
[এই লেখার একটা প্রথম ভার্সান আগে একটা ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল। পুরানা সেই লেখার লিঙ্ক দেখেন এখানে। আর তা ছাপা হয়েছিল গতমাসে মানে গতবছর, ৩ ডিসেম্বর ২০২২ ও তা হয়েছিল ইসলামি ছাত্র আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় সম্মেলনের স্মারকে প্রকাশিত প্রকাশনায়। স্বভাবতই সেটা প্রথম ভার্সান বলে তা এখানে এই সর্বশেষ ফাইনাল ভার্সান এর চেয়ে আকারে অনেক ছোট ছিল। আমার নিজের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত বর্তমান এই রচনা ফাইনাল ভার্সান বলে বিবেচিত হবে। যদিও দু ভার্সানের লেখার নামে অনেক ফারাক করে দিয়েছি, গুহুবহু একই নাম রাখি নাই। আশা করি লেখাটা উপভোগ্য হবে। এই ই-মেল ঠিকানায় প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন।]
দাদা, খুব সুন্দর বুদ্ধি দীপ্ত লেখা, আবার ও ধন্যবাদ, কিছু শিখানর জন্য
With Regards
Nazrul
Sent from Outlookhttp://aka.ms/weboutlook
LikeLike