আইপিএস-এর অংশ হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ


আইপিএস-এর অংশ হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ

গৌতম দাস

২৬ জানুয়ারি ২০২৩

https://wp.me/p1sCvy-4mg

 

 

Fact Sheet: Indo-Pacific Strategy of the United States – U.S. Embassy in the Philippines

বাইডেনের আমেরিকা সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। বেচারা হয়ে গেছে! তাঁর কোন নীতি-পলিসিই কাজের না, ফলে আনতে পারছে না। তাতে সেটা হোক ইউক্রেন ইস্যু অথবা বাংলাদেশের মত ছোটদেশের উপর আমেরিকান প্রভাবের ক্ষেত্রে; সব অকার্যকর। ফলে শেষে কেবল বকোয়াজ আর বোলচালে ভরপুর এক আড়াল তুলে দাঁড়িয়ে থাকছে তাঁর প্রশাসন। ব্যাপারটা হল কেবল ফাঁকা দাবি না,  ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় তিনি ভাল বিকল্প – সেটা নিজ আমেরিকান জনগণের কাছে তো  অন্তত প্রমাণ করতে হত; এখন এশিয়ায় বা বাংলাদেশের মত দেশের ক্ষেত্রেও তিনি নিজেকে  মূলত যেন এক ‘খামোখা’ বলেই পরিচিতি তুলে ধরছেন। বাংলাদেশের যারা হাসিনার শাসন এই ফ্যাসিজম থেকে মুক্ত হবার স্বপ্ন দেখছিলেন যেখানে আমেরিকার একটা ভুমিকা থাকার সম্ভাবনা দেখছিলেন অনেকে, তারাও সমুলে হতাশ হয়েছেন।

যেমন ধরা যাক, বাইডেন তাঁর শাসনের শুরুতেই বলেছিলেন, ‘হিউম্যান রাইট’ বা মানবাধিকার নাকি তাঁর পররাষ্ট্রনীতির অঙ্গ। যারা পোড় খাওয়া ‘আমেরিকা অবজারভার’ তারা বিশ্বাস করেন নাই; কিন্তু এটাই পরিণতি তা দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি ছিলেন। যেমন বাইডেনের শাসনকে বলা যায় “স্যাংশনের রেজিম’ বলা যায়। যা কিছুই বাইডেনের অপছন্দের বা আমেরিকান স্বার্থের বিরোধী বলে তিনি মনে করেছেন তাতে সেখানেই তিনি যেন এক স্যাংশন আরোপের রাজা বনে গিয়ে অবিরাম সেসবের উপর স্যাংশন আরোপ করে গেছেন। এসবের মধ্যে কোথাও সত্যিই হিউম্যান রাইট ভায়োলেশনের ঘটনাবলীও মাখামাখি করে আছে, অবশ্যই। যেমন বাংলাদেশের গুম, খুন হত্যা, অপহরণ, গায়েব, ‘ক্রশফায়ারের’ নামে হত্যা ইত্যাদি যতধরণের অপরাধ আছে তা গত পনেরো বছরে ঘটে চলেছে। নিঃসন্দেহে এগুলো হিউম্যান রাইট চরম ভায়োলেশনের ঘটনা। যেসবের উপর আমেরিকা স্যাংশন আরোপ করেছে। আবার একই নিঃশ্বাসে যেমন, রাশিয়া তার জ্বালানি তেল বিদেশে বেচতে পারবে না – এজন্য সে একই স্যাংশনও যথেচ্ছাচারে আরোপ করে চলেছে। যা মানবাধিকারের ইস্যুওই নয়; বরং খাসা একান্তই আমেরিকান ব্যবসা-বাণিজ্যিক স্বার্থ বৈ আর কিছু না – এমনটাও আছে।

ঠিক যেমনি বাংলাদেশে হাসিনা রেজিমের তার রাজনৈতিকবিরোধীদের নির্বিচার দমনকে জঙ্গীবাদ দমনের নামে চালিয়ে দেয়াতে –  এর বিরুদ্ধে হাসিনার র‍্যাবসহ নানা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের উপর স্যাংশন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ইতিবাচক বলে দেখে বিশ্বাস করতে চেয়েছিল। কিন্তু না – পরিশেষে আমেরিকা সবকিছুকেই তার চীনবিরোধী বাণিজ্যিক-স্ট্রাটেজিক স্বার্থ বলে যে মনে করে সেকথা আর লুকায়ে রাখল না বা পারল না!

এককথায় বললে, ঢাকার শাহীনবাগে গুন-খুনের ভিকটিমদের সাথে দেখা করতে রাষ্ট্রদুত পিটারহাস উপস্থিতের সাথে সাথে হাসিনা যে মৃদ্যু পরোক্ষ বাধার পালটা অবস্থান দেখিয়েছিল তাতেই আমেরিকার নিজের আগানোর পথ নিয়ে রিভিউ-এ বসেছিল। এই আদ্যোপ্রান্ত পর্যালোচনা থেকেই আমেরিকার পথ চলায় গিয়ার বদল! মানে যেটারই পরিণতি আমরা দেখলাম ডোনাল্ড ল্যু এর বাংলাদেশ সফর। আর সেখান থেকে বাইডেনের মতিগতির ল্যাংটা হয়ে পড়া! কেমন সেটা?
সেটা হল ‘মানবাধিকার-স্যাংশন’ এসব বাইডেন প্রশাসনের কাছে কিছু না! তারা এসবের আসল ভক্ত না। সিনসিয়ার বা সিরিয়াস কোনটাই না! বকোয়াজ মাত্র!! বাইডেনের আসল স্বার্থ সারা দুনিয়ায় যেমন, তেমন এশিয়াতেও তার প্রতিযোগী ও প্রতিদ্বন্দ্বি নয়া উত্থিত হতে থাকা চীন; এই চীনবিরোধীতায় নিজ স্বার্থ উদ্ধার এটাই বাইডেনের মুখ্য নীতি-পলিসি। আর সেকাজ তার বাকি সব ততপরতা বিক্রিযোগ্য! যেমন এসময়ের এশিয়ায় বাইডেনের স্বার্থ সোজা  ভাষায় যা ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি (আইপিএস) নামে পরিচিত।

একালের “যেকোন জোট গঠনের” মুল সমস্যাঃ
এই ফাঁকে বলে নেয়া যাক, এই আইপিএস (IPS) বা আগের কোয়াড (QUAD) গঠন – এদুইয়ের সম্পর্কই বা কী? প্রথম সমস্যা আমাদের মিডিয়া রিপোর্টার লেবেলেই ব্যাপারটা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। এর উপর আবার ইন্দো-প্যাসেফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (IPEF) বলে আরেক ফেকড়া বা বাড়তি দিক (এক্সটেনশন) বা নয়া খাতা আছে।
খুবই অল্প কথায় বললে, কোয়াড [QUAD] বা চারদেশীয় জোট (আমেরিকা, ভারত, জাপান ও অষ্ট্রেলিয়া)  যেটা ছিল তা কার্যত অকেজো। হাত লাগলেই ভেঙ্গে যাবে, সম্ভবত ভারত বেরিয়ে যাবে; এরকম! মূলত, একালের “যেকোন জোট গঠনের” মুল সমস্যাকে না বুঝা থেকে এই সমস্যা। আমেরিকা বরাবর এব্যাপারে ফেল করছে এজন্য যে তাদের মাথায় জোট বলতে সবসময় কোল্ডওয়ার কালের (১৯৫৩-৯১) সোভিয়েত (ব্লক) বনাম আমেরিকা (পশ্চিমা জোট) এর স্বপ্ন মাথায় ঘুরে থাকে। এই স্বপ্নকল্পনার কারণে আমেরিকার মনে ইচ্ছা করে আগের সোভিয়েতের মত যদি একালে চীনবিরোধী এক পশ্চিমাজোট (মূলত আমেরিকা ও ইইউ এর সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী জোট) গড়তে পারা যায়।
অথচ এই স্বপ্নটা একেবারেই অবাস্তব, অথচ সেটা আমেরিকার ডেমোক্রাট বা রিপাবলিক দুদলের কোন প্রেসিডেন্ট যারা হয়ে আসছেন তাদের  নীতি-পলিসিতে এটা প্রতিফলিত নাই। কিন্তু কেন অবাস্তব বলছি? সেকথা বললেই বাকি সব কথা পরিস্কার হয়ে যাবে। যাকে সোভিয়েত ব্লক বলছি এদের মূল ও কমন পরিচয় এটা না যে তারা কমিউনিস্ট অর্থনীতির চক্করে আটকে থাকা দেশ ছিল তাই। তাদের মুল পরিচয় আসলে তারা কেউই আইএমএফের [IMF] সদস্য ছিল না; তবে সেটা দু’এক রাষ্ট্র হতে চেয়েও সদস্যপদ পায় নাই বলে, আর বাদ বাকিরা, বেশির ভাগই রাশিয়ার স্টালিনের  অবস্থানের কারণে নিজেরাও সদস্য হতেও চায় নাই, একারণে। কিন্তু সোভিয়েত ব্লকের রাষ্ট্রগুলো আইএমএফের সদস্য ছিল না তাতে কী?

এর এককথায় উত্তর হল, আইএমএফের সদসদ্য নয় একথার ব্যবহারিক মানে হল এসব রাষ্ট্র অন্যকোন রাষ্ট্রের সাথে কোন আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য সম্পর্কে যুক্ত হতে পারবে না বা পারত না। এই কারণে তখনকার মানে কোল্ডওয়ারের  [Cold War]আমলে যেকোন জোট মানে কার্যত তা সামরিক-স্ট্রাটেজি অথবা রাজনীতিক আদর্শ কেন্দ্রিক জোট হত।  এর চেয়েও বড় কথা সেকালের ‘জোট ধারণা’ একালের ‘জোট ধারণা’ একেবারেই এক নয়। মানে কী?

মানে হল একালের জোটে যার সাথে সামরিক-স্ট্রাটেজিক অথবা এমনকি অর্থনৈতিক স্বার্থের গভীর বিরোধ আছে তারই সাথে আবার একালে গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঘটে আছে। ফলে সামরিক-স্ট্রাটেজিক স্বার্থ গভীরবিরোধ থাকলেও তারই সাথে আবার গভীর বাণিজ্যিক লেনদেন ও পরস্পর গভীর নির্ভরতা তা শুধু সম্ভবই নয় একেবারে প্রধান বাস্তবতা। চীনের সাথে আমেরিকা, চীনের সাথে ভারত, চীনের সাথে জাপান, চীনের সাথে অষ্ট্রেলিয়া এমন প্রায় সকলের সাথেই চীনের যে  গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং এতে পণ্য-পুঁজির গভীরতম বিনিময় ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা – এটাই বাস্তবতা। এই নির্ভরশীলতার সম্পর্ক এতই প্রধান যে একই সাথে চীনবিরোধী কোন সামরিক-স্ট্রটেজিক বা রাজনৈতিক জোট গড়া তা প্রায় অসম্ভব হয়ে আছে; এতে হয়ত তা গড়া হয়েছে ঠিকই, কার্যত যা অকেজো! যেমন সর্বশেষটা হল, অষ্ট্রেলিয়া বা জাপান। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় স্কট মরিসনকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন অ্যান্থনি আলবানিজ। স্কট মরিসনের দল লিবারেল পার্টি। আর নয়া প্রধানমন্ত্রী হলেন লেবার পার্টির অ্যান্থনি আলবানিজ। অষ্ট্রলিয়া-চীন বিরোধে চীনে অষ্ট্রেলিয়ার সব রপ্তানি সুবিধা  প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছিল।  অষ্ট্রেলিয়ায় নতুন দলের প্রধানমন্ত্রী এখন আগের দলের উপর দোষচাপিয়ে আগের মতই চীনে রপ্তানির সুযোগ কতটা পুনরুদ্ধার করা যায়, চীনের সাথে সেসব সম্পর্ক ও চুক্তি নিয়ে আলোচনায় গভীরভাবে ব্যস্ত।  আবার ওদিকে জাপান; চীনে কোভিডের কারণে চীনের অর্থনীতির অনেক খাত ঝুলে পড়াতে জাপানের র্অথনীতি সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত ও এর ধাক্কার শিকার দেশ হয়ে উঠেছে। আবার কোয়াডকে আমেরিকা সামরিক অভিমুখী করে ঘুড়িয়ে দিতে চাইলে সবার আগে পিছটান দিয়েছে ভারত; ভারত কারও সাথে সামরিক জোট করতে চায় না, তাই। তাই বাইডেন আর কোয়াড নিয়ে সমস্ত নাড়াচাড়া স্তব্দ করে রেখেছেন।

আর তাতেই আইপিএস (IPS) নামে আমেরিকা নয়া এক খাতা খুলেছেন বা এদিকে জোর দিয়েছেন। কিন্তু আইপিএস কী কেন? বলা হচ্ছে এটা কোয়াড থেকে আলাদা। জিজ্ঞাসা করলে বলে এটা কোন রাষ্ট্রজোট নয়, ডোনাল্ড ল্যু এবারের বাংলাদেশ সফরে যেমন পাবলিকলি বলেছেন। তাহলে এটা কী? বলছেন এতে নাকি সবদেশই ইন্দো-প্যাসেজিক জোন প্রসঙ্গে নিজের নিজের স্ট্রাটেজি জানাবে। কিন্তু কেন বা কী উদ্দদেশ্য? এখানেই কবি একটু নিরব! মানে প্রথমত এটা কী কোন একটা দেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্য স্ট্রাটেজি বা কৌশল? নাকি যুদ্ধ কৌশল, না সামরিক স্বার্থের কৌশল, নাকি রাজনৈতিক, না অর্থনৈতিক – এসব এই প্রশ্ন আছে। তা কেউই প্রকাশ্যে পরিস্কার করছে না। দ্বিতীয়ত, এখানে শত্রুদেশটা কে? এটা সবচেয়ে নির্ধারক প্রশ্ন! এটা লিখিত ভাষায় বা রেকর্ডে না বলে চর্চায় তারা বলে থাকে; ফলে মনে মনে ধরে নেয়া সেই শত্রুদেশ হল চীন!

তাহলে কী দাড়ালো এটা?  যেখানে আমেরিকাসহ সকল দেশই চীনের সাথে বাণিজ্য- অর্থনীতিতে পুঁজি-পণ্য বিনিময়ে গভীরভাবে সম্পর্কিত সেখানে একই সাথে চীনবিরোধী আইপিএস (!) এটা কেমন স্ট্রাটেজিক জোটের কল্পনা???  আমেরিকা ঠিক চাইছেটা কী???  এর বাস্তব দিকটা তো খোদ আমেরিকার কাছেই অপরিস্কার!! তবু আমেরিকা চাইছে এশিয়ার সবদেশ তো বটেই কানাডাকেও কার্ড দেখাতে হবে! বা কানাডার কাম্য ইন্দো-প্যাসেজিক স্ট্রাটেজি কী তা লিখে জানাতে হবে। মানে হল কতটা সে চীনবিরোধী তা দেখাতে বলতে হবে! আর ঠিক এর মতই হাসিনার বাংলাদেশেকেও মূলত সেকথা বলতেই এসেছিলেন ডোনাল্ড ল্যু। তিনমাস মানে মার্চ মাসের মধ্যেই তা আমেরিকাকে জানাতে হবে। এদিকে আরও প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি।

 

ওদিকে আইপিএস, এর আরেক বাড়তি ঝালড় আছে – সেটা হল, ইন্দো-প্যাসেফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (IPEF)। মানে এটাই আসল অর্থনৈতিক জোটের কল্পনা। কিন্তু সমস্যা হল, এটা টু লেট (too late)!! কেন?

কারণ ইতোমধ্যেই চীনা আগ্রহের আরেক এবং আরো গুছানো এক অর্থনৈতিক জোটের জন্ম ও ততপরতা গত ২০২০ সাল থেকে শুরু হয়েই আছে যার নাম RCEP। বাংলা লিখলে, রিজিওনাল কম্প্রিহেন্সশীপ ইকোনমিক পার্টনারশীপ [RCEP]। যেটা আসলে কালজয়ী; কারণ এটা জোটদেশগুলোর যেকোন উতপাদিত পণ্যে সদস্য সবদেশেরই শ্রম যুক্ত করার সুযোগ (shared value addition) রাখা হয় ও তাতে সকলেই এই পণ্যের ভোক্তা-ক্রেতা। যেমন জাপান, অষ্ট্রেলিয়া দুই কোয়াড সদস্য এমনকি আমেরিকা প্রভাবিত দক্ষিণ কোরিয়াও এই জোটের সদস্য হতে মিস করে নাই। জন্ম থেকে এরা সবাই সদস্য, তাতে কোয়াড বা IPS বলে কিছু গঠিত থাকুক আর নাই থাকুক!

তাহলে এতদিনে  IPEF খাড়া করার আমেরিকান নয়া বাসনা কেন আর কতটুকু এটা নতুন কিছু করতে পারবে? যদিও এটা RCEP এর নকল করে তার চার বৈশিষ্টের একটা হিশাবে supply chains বলে একটা ধারণা রেখেছে যেটা shared value addition ধারণার ধারেকাছের নয় বলেই অনুমান। কারণ, shared value addition এটা আমেরিকান কনসেপ্ট নয়। বরং উঠতি অর্থনীতি বা ‘প্রাক্তন কমিউনিস্ট’ দেশ হলে এনিয়ে তাদের নিরীক্ষায় আগ্রহী দেশ হতে দেখা যায়। কারণ এখানে লেবার মানে ভ্যালু এডিশন“ভাগাভাগির” প্রশ্ন জড়িয়ে আছে।
কিন্তু সেটাই মূল ইস্যু বা প্রধান বাধার দিক নয়। প্রধান বাধার দিক হল, আমরা যদি IPEF-এ যোগ দেই তবে আমাদের  কারখানা পুঁজি (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ) এবং  অবকাঠামো পুঁজির উতস কে হবে?

একাজে আমেরিকা বুড়া সিংহ, আর বিপরীতে চীনকে উঠতি বাঘ বলা যায়। উদাহরণ, এই বুড়া বয়সে বাইডেনের আমেরিকা উঠে দাড়ানোর সখ করেছিলেন। বর্তমানের চীন দুনিয়ার আমাদের মত সবদেশের জন্যই অবকাঠামো পুঁজির ঋণদাতা ভুমিকায় একছত্র হয়ে উঠে আছে। এমন এক অর্থনীতিকে আমেরিকার বাইডেন এই বুড়া বয়সে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। দেখা গেলে এতে তারা সবাই মিলে মাত্র ৬০০ বিলিয়ন ডলারের কমিটমেন্টের জোগাড় করতেই তাদের হিসশিম। এছাড়া এখনও এই সংগ্রহ হাতে আসা ও কাজে নেমে পড়ার ততপরতার কোন কিছুই শুরু করতে পারেন নাই। তাই খুব সম্ভবত ২০২৪ সালে বাইডেন ক্ষমতা ত্যাগের পরে এই উদ্যোগ্রটারও মৃত্য সংবাদ আমরা পাব!!!  তাহলে IPEF-এ যোগদানে আমাদের কী হবে????

আসলে, কোয়াড বা ইন্দো-প্যাসেফিক এসব শব্দ দিয়ে এপর্যন্ত আমেরিকান পেসিডেন্টেরা পিসমিল একমুঠো করে যা কিছু করে যাচ্ছেন এসবের কিছুই টিকবে না, শুরুতে কার্যকরই হতে পারবে না। তবুও  RCEP এর সমান্তরাল আরেকটা IPEF বলে জোট অবশ্যই খাড়াতে পারে তবে এর অন্যতম শর্ত হতে হবে যে এসব কোন অর্থনৈতিক জোটই বিশেষে দেশের (যেমন চীন অথবা আমেরিকা্র বিরোধী হতে পারবে না। ফলে একই দেশ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সাপেক্ষে ইচ্ছা মত একই সাথে দুইটা জোটের মধ্যেই থাকতে ও সদস্য হতে পারবে, এমন জট হতে হবে। একটা জোটের মধ্যে সবাই থাকবে তাও হতে পারবে। কিন্তু কোন ভাবেই প্রকাশ্যে বা গোপনে আমরা চীনবিরোধী স্ট্রাটেজিক জোট করতে চাই, এমন করা যাবে না – এসব চিন্তা অবাস্তব, অকেজো। ঘৃণা ছড়াতে পারবে কিন্তু নিজে কার্যকর কিছুই হতে পারবে না। মুল কারণ আমরা সবাই একই [IMF] আইএমএফের সদস্য। মানে আমরা সকল রাষ্ট্র একই গ্লোবাল বাণিজ্য ব্যবস্থার অংশ ফলত আমরা মূলত একই গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের অংশ।  ক্যাপিটালিজমে “কোটারি” হয় না; সব ক্যাপিটালিজমই পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে  যাবেই; এভাবেই সে টিকে থাকে যা এর মৌল স্বভাব!

চীন একারণের এটাকে নিন্দা করতে বলে, বাইডেনের ‘কোল্ডওয়ার মানসিকতা’।  এমনকি বাংলাদেশের চীনা নয়া রাষ্ট্রদুতই এসব ধারণা আড়াল নিয়ে বলেছেন “কোনো দেশের বিরুদ্ধে জোটের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে: চীনের রাষ্ট্রদূত”। ওথবা “কোনো দেশকে বাদ দিয়ে গড়া জোটে যোগদানে সতর্ক থাকতে হবে”।

এখনও তিনটা কথাঃ
প্রথমত, আমেরিকা ল্যু এর সফরে মার্চের মধ্যে হাসিনা সরকারকে নিজদেশের ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি তৈরি করে তাদের জানাতে বলে গেছে বলে জানা যায়। কিন্তু এটা কেন?
ল্যু যেটা বলতে চাইছেন এর সারকথা হল, বাংলাদেশ যেন চীনের সাথে সম্পর্ক বিশেষত অর্থনৈতিক যেটা যেমন প্রধানত, চীনা অবকাঠামো ঋণ ও চীনের উপর নির্ভরশীলতা না করে চলা। এছাড়া চীনা অস্ত্র বা সামরিক সরঞ্জামও মানে করে থাকতে পারে। এছাড়া সাউথ চায়না সি নিয়ে আমেরিকা যে গায়ে পড়া ঝগড়া-বিরোধ বানিয়ে রেখেছে তাতে আমেরিকার পক্ষ নেয়। বাংলাদেশ যেন এমন অবস্থান নেয়!

আমরা উপরে দেখেছি, আমেরিকান এই আকাঙ্খাটা আনরিয়েলিস্টিক; বাস্তবে তা সংঘটন বা করে দেখানোর কারও কোন সম্ভাবনা নাই বা সম্ভাবনাচ্যুত! তাহল এটা নিয়ে এই জিদ ধরার অর্থ কী?

দ্বিতীয়ত, আমেরিকা বা এমনকি সে বগলে জাপানকে নিয়েও যে আমেরিকা সে আমাদের অবকাঠামো ঋণের চাহিদা মিটানোর যোগ্য কোন দেশ নয়। যদিও এটা ঠিক ওয়ার্ল্ডব্যাংকের যেকোন ঋণপ্রকল্পে ওপেন টেন্ডার হতেই হয়।  যমুনা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের তরফে সিংহভাগ লোন দিয়েছিল জাপান। অথচ ১৯৯৭ সালে এই সেতু নির্মানে জাপান কোন অংশের কাজই পায় নাই। আর একালে, বাংলাদেশে চীনাঋণের প্রকল্পের কমিশন সরাসরি সিঙ্গাপুরে জমা হয়ে যায়, এটা এক বিরাট সমস্যা হয়ে আছে। কাজেই তরুণ উঠতি আকাঙ্খার ঋণ আকাঙ্খার বাংলাদেশকে আমেরিকা নিজ বাহুডোরে আটকে রাখার খায়েস; অর্থহীন!  তবে বাংলাদেশে নয়া এক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ভিত্তিক নুন্যতম কিছু সংস্কার করতে পারলে এর অনুষঙ্গ হিশাবে চীনাঋণের কমিশন সমস্যার সমাধান সম্ভব। কারণ, চীনা সরকার আমাদের মত দেশে নুন্যতম সাধু বা সীমাহীন চরম চোর নির্বিশেষে সব ধরণের সরকারের সাথে কাজ করে থাকে।

তৃতীয়ত,
আমেরিকা কেন ডোনাল্ড ল্যু পাঠিয়ে এখন ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি (আইপিএস) যোগদানের জন্য হাসিনা সরকারকে জোরাজুড়ি করছে?
প্রায় ছয় মাস আগে থেকে বিএনপির এবারের আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বলাই বাহুল্য এবারের আন্দোলন শুরুর পিছনে গত ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ১০ তারিখে সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আমেরিকান স্যাংশন আরোপের একটা সরাসরি সম্পর্ক আছে।  কারণ এবারের আন্দোলন শুরুর প্রথম দিকে সরকার আগের মত অভ্যাসে গুম-খুনের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝতে পারে যে এতে আগে থেকেই দেয়া স্যাংশনের চাপ আরো বাড়ছে ও বাড়বে। আর সরকারের এমন ততপরতা সব মনিটরিংয়ের অধীনে। তাই বলা যায় আমেরিকান অপ্রত্যক্ষ ইঙ্গিত ছিল এই আন্দোলন শুরু করার। শুধু তাই না, গত ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ঢাকায় গোলাপবাগে বিএনপির লাখো সমাবেশের পরে প্রথম দেশে-বিদেশে বিশ্বাসযোগ্যতা পায়  যে হাসিনা সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে এবার সত্যিই গণভিত্তি পেয়ে এক আন্দোলন উঠে দাড়িয়েছে। এরপর আসে পিটার হাসের আরেক স্টেপ আগানো। তিনি হিউম্যান রাইট ভায়োলেশনের ভিমটিমদের ভিজিট করতে শুরু করে সরকারের দিক থেকে কিছু পরোক্ষ বাধার সম্মুখীন হন। আর এরপরেই আমরা দেখি পরিস্থিতি ক্রমশ আমেরিকার সাথে সরকারের “বাতচিত, ঝুলাঝুলি ঢাকা সফর” ইত্যাদির দিকে যাচ্ছে। স্যাংশন আরোপের দিক থেকে বললে এটা নিঃসন্দেহে আমেরিকার পিছনে হাটা। কারণ, হাসিনা সরকারের সাথে যা যা ডায়লগ প্রয়োজন আমেরিকা মনে করে সেরকম  “বাতচিত ঝুলাঝুলি ঢাকা সফর ইত্যাদি শেষ হবার পরই তা থেকে আমেরিকার প্তেরাপ্তি মনে করা যায় এমন  “কোন রফা” বা ভদ্র ভাষায় কোন অগ্রগতি না হলে এরপরই তো আমেরিকার স্যাংশন আরোপের দিকে যাবার কথা! এটাই অনুমান করা যায়!
তার মানে আমেরিকা এই উলটাপালটা করে আগে-পিছে মানে এক-পা আগে পরে দুই-পা পিছের কূটনীতি করতে গিয়েছে! কেন? অনুমান করা যায় তাদের ধারণা এতে হাসিনার উপর  চাপের প্রভাবটা বেশি হবে!!

কিন্তু আসলেই কী এটা আমেরিকাকে বেশি চাপের সুবিধা দিবেঃ
প্রশ্নই আসে না। কিন্তু সেকথায় যাবার আগে অন্য কিছু কথা।
তাহলো এর মানে বাইডেনের মানবাধিকার ও স্যাংশন তার পররাষ্ট্রনীতির কোন পলিসি তা একেবারেই নয়। বাইডেন মূলত মানবাধিকার ব্যবসায়ী হিশাবে নিজেকে হাজির করেছেন।
এর মূল কারণ,  হাসিনা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি পেশ করবেন কিনা বা আমেরিকার নেতৃত্বে চীনবিরোধী কোন এক কমন ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজির অংশ হবেন কিনা অথবা ক্রমশ  ইন্দো-প্যাসেফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক(IPEF) এ যোগ দিবেন কিনা অথবা চীনের সাথে অবকাঠামো ঋণসহ অন্যান্য প্রকল্প সুবিধা ও সম্পর্ক করা সব গুটিয়ে নিবেন কিনা ইত্যাদি এসবের সাথে  সমান্তরালে হাসিনার মানবাধিকার ভায়োলেশনের রেকর্ডের কী সম্পর্ক??? মানে হাসিনা চীনের থেকে সরে আসলে তার সব মানবাধিকার অপরাধ আর অপরাধ মনে করা হবে না???? তাই কী?
ধরা যাক হাসিনা-সরকারের কাছে আমেরিকার যা কিছু খায়েস এর প্রায় সবকিছুতেই হাসিনা একমত হলেন। তাহলে  মানবাধিকার ভায়োলেশনের  অভিযোগ এর রেকর্ড কী সব তখন থেকে ইতিবাচক বলে বিবেচিত হবে??? আমাদের জানা মতে, ভায়োলেশনের অভিযোগ নিস্পত্তি হতে পারে একমাত্র উপযুক্ত আদালতে এর বিচারের পরে। এরপরেই কেবল অভিযোগ বা স্যাংশন উঠিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন!  তাহলে???

তাহলে এই পরিস্থিতিতে এখন সরকারের সাথে ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি ইস্যুতে আমেরিকার কথা বলা, সময় দেয়া কেন? আবার আমেরিকান সব প্রস্তাবে যদি সরকার একমত হয় তবে তাতে দেশে একটা বিশ্বাসযোগ্য জনপ্রতিনিধিত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং সেই সাথে সেই নির্বাচনে এই সরকারকে পুনরায় জিতবার নুন্যতম নিশ্চয়তাও তাতে ব্যবস্থা কী থাকবে?? আমেরিকা কীভাবে হাজির করবে তা? নাকি তা সম্ভব? আর এসব নিশ্চয়তা না থাকলে সরকার কেন আমেরিকার এত কথা শুনবে, বা মান্য করবে? এমনিতেই হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে একটা বিশ্বাসযোগ্য জনপ্রতিনিধিত্ব নির্বাচন ঘটানো – এমন সমীকরণ অসম্ভব। এর উপর হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোন নির্বাচনে বিএনপিকে সামিল করা আরেক  অসম্ভব।

অর্থাৎ বাংলাদেশের এক্ষণকার বাস্তবতা হল আগামি নির্বাচন পার হবে কীকরে আর  সাথে  মানবাধিকার ভায়োলেশনের অভিযোগ নিস্পত্তি এদুইয়ের কোনটাকে বগলে নিয়ে আমেরিকার ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি-তে বাংলাদেশের এলাইনমেন্ট করে নেয়া নিয়ে কথা তোলা – এটা একদিকে আন-এথিক্যাল অন্যদিকে এমনটা ঘটবার কোন বাস্তবতাই নাই। আর সবার উপরে এসব ডিল বা সমঝোতা-অযোগ্য আইটেম। সেটা আমেরিকা বা হাসিনা সরকার দুদিক থেকে এটা ডিল অযোগ্য ইস্যু।
যেমন গত পনেরো বছর ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার ভায়োলেশন চরমে উঠে আছে।  আর ওদিকে এই লম্বা সময়কালগুলোতে অভিযোগ সবকিছু জানা সত্বেও আমেরিকা এনিয়ে নিঃশ্চুপই ছিল। তাই বাইডেন ক্ষমতার শপথ নিবার পরেও যদি এনিয়ে ধারাবাহিক নিশ্চুপ থাকত তাহলে একরকমের পরিস্থিতি হত। কিন্তু ঢাকঢোল পিটিয়ে “মানবাধিকার ও স্যাংশন” নিজের পররাষ্ট্রনীতির নীতি-পলিসি বানানোর ঘোষণার সাথে সামঞ্জস্য আচরনের পথে আর বাইডেন প্রশাসন যে নাই তাই তো উন্মোচিত!!  এককথায় “মানবাধিকার ও স্যাংশন”  এর পলিসি ঘোষণা ও স্যাংশন আরোপের পরে এটা  ডিল অযোগ্য ইস্যু হয়ে গেছে।
আবার একটা মজার তথ্য হল, এখন ভারতও চায় না যে হাসিনা ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি তে সামিল হয়। প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদুত একথা বলেছেন বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে!

আবার হাসিনার দিক থেকে যদি দেখি, কোন কিছু পাবার বিনিময়েও হাসিনার চীনের হাত ছেড়ে দেওয়ার যোগ্য থাকবে না। কারণ, সরকারের উন্নয়নের ঢোল পিটানোর সঙ্গে সামনজস্যপুর্ণ কাজ হল এই ধরণের ঋণপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতা ও তা থেকে চুরির অব্যবস্থাপনা জারি রাখতে হবে। কারণ নাহলে দলের যারা এর বেনিফিসিয়ারী এরা কেউ আর দলের সাথে থাকবে না। অথচ সরকার চীনের হাত ছেড়ে দিলে  আমেরিকা-জাপানের পক্ষে হাসিনা সরকারকে ঋণপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতা একই লেভেলে জারি রাখা অসম্ভব।
মূলত এই প্রধান কারণেই আমেরিকার পক্ষে দাঁড়িয়ে হাসিনা সরকারের চীনবিরোধী কোন ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি তৈরির ততপরতায় সামিল হওয়ার বাস্তবতা নাই। এছাড়া আবার এটাই ছিল ২০২১ সালে হাসিনা সরকারের চীনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি; আর সেই সৌজন্যেই আমরা সে সময় বিনা পয়সায় আমাদের সমস্ত চীনা টিকা প্রাপ্তি ঘটেছিল!

কাজেই সব ব্যাপারেই অবজেক্টিভিটি বা কঠিন বাস্তবতাই হয়ে উঠেছে একমাত্র নির্ধারক! আমেরিকা বা হাসিনা সরকার ডিল অযোগ্য বা সমঝোতায় আসা অযোগ্য এসব বাস্তবতার উপর দাঁড়িয়ে আছে!
তাই, আইপিএস (ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি) বা এর সংশ্লিষ্ট কোনও ততপরতায় হাসিনা সরকারের যোগদানের সম্ভাবনা ক্ষীণ! এছাড়া, বাংলাদেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে আছে; এতে একমাত্র রাস্তার আন্দোলনের দিকেই এই পরিস্থিতি থেকে বের হবার অভিমুখ রাস্তা!

 

লেখকঃ রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s