মোদিকে হুশ করে পা ফেলতে হবে, নইলে নিজ মরণ ডেকে আনবেন
গৌতম দাস
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
https://wp.me/p1sCvy-5JW
রাজনাথ সিং, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
শিরোনামের কথাগুলো ঠিক কোন হুমকি নয়, তাই মোদিকে দেয়া হুমকি হিসাবে না পড়ে বরং সবকিছুকেই “লড়কে লেঙ্গে” মনে করে থাকে যে উগ্র জাতিবাদ মানে ভারতীয় “হিন্দুত্ববাদী মন” আর এভাবেই সে সবকিছু এভাবে দেখে থাকতে অভস্ত হয়ে আছে সেই মনটাকে উদ্দেশ্য করে বলা। যদিও এই বক্তব্য তাদের কানে ঢুকবে, তাঁরা আমল করবে সে সম্ভাবনা খুবই কম; আশা রাখা যায় না এমন। তবু ইতিহাসে লিখে রাখা, একটা রেকর্ড রাখা আর এখনও যদি কিঞ্চিত হুশ-ওয়ালা মানুষ ভারতে থেকে থাকে তাদের কাছে পৌছানোর জন্য এই লেখা।
কথা যদি শুরু করি রাজনাথ সিং থেকে তিনি বলছেন, “ভারতের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ স্থানীয় কমান্ডারদের বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
‘ভারত একটি শান্তিপ্রিয় দেশ’ দাবি করে একই সঙ্গে ‘অপ্রত্যাশিত’ ঘটনার মুখোমুখি হলে শান্তি রক্ষার স্বার্থে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।”
কারো যেন এতে সন্দেহ না থাকে তাই তিনি মিডিয়ার সামনে আরো পরিস্কার করে বলেছেন – ভারতের সংবাদমাধ্যম জানতে চাইলে রাজনাথ তার বক্তব্যের পক্ষে অনঢ় থেকেই বলেছেন, “ভারতীয় সামরিক বাহিনীর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।”
তো থাকেন! আমরা আর কী বলব? আপনার ঘোড়ার উপরে আপনি খাঁজ কেটে দিয়ে চড়তে চাইলে যদি আপনার সুখ সুখ মনে হয় তো করবেন! আমাদের এতে বলার কী আছে?
তাতে কী দাড়ালো? রাজনাথ বাংলাদেশে আমাদেরকে সামরিক হুমকি দিলেন।
প্রথমত এতটুকুই বলব যা বলবেন – হা মোদি-রাজনাথ আপনারা হুমকি দিলেন। আর উত্তর আমরা এতটুকুই বলবঃ মহাশয়, মোদিসহ আপনি বুঝেশুনে কথা বলবেন যাতে পরে আপনাদেরকে আপশোষ না করতে হয় অথচ বলা কথা আবার বদলানোরও সুযোগ নাই দশায় পরে যান।
আর এযুগেও যাদের এখনও চোখ ফুটে নাই নাবালক থেকে গেছেন তাই কলোনি আমলের (১৯৪৫ সালের আগের) মত উগ্র জাতিবাদীই হয়ে আছেন; আবার বৃটিশদের মত যদি এযুগেও কলোনি-দখলদার হতে পারতেন বলে মনে বাসনা পুষে রাখেন – এমন আপনাদের সকলেরই মূল সমস্যা হল আপনাদের দেশের সাধারণ মানুষ সহ জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আপনারা কেউ এখনও দুনিয়া চিনেন নাই! আপসোস! এর ট্রেন্ড অভিমুখ কী, এটা কোন দিকে পরিবর্তিত হয়ে গেছে ও যাচ্ছে এর সবটাতেই আপনারা বেখবর!
একটা কথা মনে রাখতে পারেন আপনারা, যে রাষ্ট্র একালে অপর দেশে পণ্য রপ্তানি করা শুরু করেছে সে রাষ্ট্র আর আপনাদের উদ্ভট অবাস্তব কল্পনায় কল্পিত ইকোনমিক জাতিবাদী ভারত আর নাই। আপনাদের সমস্যা হল যে এটা যে আর নাই তা বুঝতেও পারেন না; অযোগ্য। একালে এটা যে আপনাদের কারো পছন্দ-অপছন্দ নির্বিশেষে এক গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম আর সব রাষ্ট্র গ্লোবাল এক উতপাদন ও পণ্যবিনিময়ের জগতে তা এমন শক্তভাবে প্রবেশ করে গেছে যে এটা ইরিভারসিব্যাল [ir-reversible] মানে যে গাড়ির ব্যাক-গিয়ার নাই এমন অবস্থা হয়ে গেছে তা আপনাদের হুশ নাই। বিশেষ করে ভারতের সকল রাজনৈতিক নেতৃত্বের। অথচ ভারতের উগ্র জাতিবাদ এর খবর তো রাখেই না আর মনে করে উগ্রতা জবরদস্তি আর এযুগেও কলোনিদখলের চিন্তা প্রয়োগ তারা করতে পারবেন যেহেতু তারা খুব বুদ্ধিমান – আর এসব দিয়েই সে কেবল অন্যের দেশে রপ্তানি চালিয়ে যেতে পারবে। ভারতের এই চালাকির পররাষ্ট্রনীতি কেউ টের পাবে না – কারণ ভারত তো মহান! আর যেহেতু তারা শয়তান-বুদ্ধিমান তাই তারা অন্যদেশকে তাদের দেশে রপ্তানি করতে দিবে না ঠেকায় রাখবে বা রাখতে পারবে! না হলে যুদ্ধের ভয় দেখাবে। এই বোকা-স্টুপিড চিন্তারই বহিপ্রকাশ হল, আরএসএস-বিজেপির এক সংগঠন আছে নাম জাগরণ চক্র যারা এমন প্রপাগান্ডা চালায়ে থাকে।
এনিয়ে এককথায় এটুকুই বলা যায় এধরণের স্টুপিড চিন্তার কোন ভবিষ্যত নাই; বিশেষ করে যারা গ্লোবাল দুনিয়াদারি কিভাবে আছে কাজ করছে তা আমল করতে শিখেই নাই! এসবকিছুর শুরু হল নেহেরুর এক বোকা ও নাদান চিন্তা! যে ভারতকে তিনি বৃটিশদের মত কলোনিদখলদার রাষ্ট্র বানাবেন, পড়শি দেশের উপর কলোনি কায়দায় সম্পর্ক করতে বাধ্য করবেন ইত্যাদি। এর মানে তিনি জানেননই না যে জাতিসংঘ কী?কেমন সংগঠন-প্রতিষ্ঠান? অথচ ১৯৪২ সালের ১ জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত জাতিসংঘের জন্ম ঘোষণায় লেখা আছে সারকথায় যে কলোনিদখল রাখা হারাম ও শাস্তিযোগ্য! তাতে, লেখা আছে কোন ভুখন্ড বা দেশের একমাত্র বাসিন্দারাই ঠিক করবে তারা কীভাবে শাসিত হবে; দুনিয়ার অন্য কেউ না। এমনকি তাদের নিজ ভুখন্ডের কোন পুরানা রাজাও যদি থেকে থাকেন তিনিও না! অথচ অজ্ঞ নেহেরু সেসব নিয়ে একটু পড়াশুনা বা পড়েও দেখলেন না। বৃটিশ কলোনি দখলদারদের নকল করে পড়শিদেশের সাথে কলোনি আচরণ করবেন আর এভাবেই শুরু হয়েছিল ভারতের প্রথম পররাষ্ট্রনীতি। বলাই বাহুল্য এটা উগ্র জাতিবাদি বা হিন্দুত্ববাদি আর সেতাই একালে মোদি আরো পালিশ লাগিয়ে চকচকে করে মোদি-রাজনাথের হুঙ্কার হয়ে আমাদের সামনে আসছে! এর সারকথাটা হল, হয় আমরা আরেকবার বা আরেকটা পাপেট হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে দিব; নইলে ভারত আমাদের সামরিক হুমকি দিবে!
হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও ভারতে পলায়নের পরে ভারতের কেন্দ্রিয় সংসদ এক সর্বদলীয় বৈঠিক ডেকেছিল। যেন বাংলাদেশে কে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকবে সেটা ভারতকে জানিয়ে ঠিক করতে হবে; স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য এসব কোন ধারণা যেন দুনিয়াতেনাই! এটাই জলজ্যান্ত প্রমাণ যে ভারতের রাজনীতিবিদেরা পড়াশুনা না করা স্টুপিড আর না হয় মফস্বলিয়া গোয়াড় – যাদের গ্লোবাল পলিটিক্যাল প্রতিষ্ঠান (জাতিসংঘ) ও এর নর্মস সম্পর্ক যাদের কোন ধারণাই নাই। এজন্যই তারা এখনও নেহেরুর কলোনিদখলের খায়েস রাখা পররাষ্ট্রনীতি এখনও চর্চা করতে চায়!
আমাদের বর্তমান সরকারের নির্বাহী ক্ষমতার [প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা] প্রধান ইউনুস সাহেব। এপিয়ারেন্স মানে প্রাথমিকভাবে একটা মানুষের মুখ দেখে যে রিডিং তাতে তিনি খুবই নরম সরম। মারবো-ধরবো ভাষায় কথা বলেন না এমন ইমেজের। এটা সময়ে আমাদের জন্য খুব কাজে লাগবে অবশ্যই। তিনি গত ৮ আগষ্ট ২০২৪ শপথ নিবার দিনেই এক সাক্ষাতকারে খুবই নরম ভাষায় একটা কথা বলেছিলেন, [এখানে আমাদের কালের কন্ঠের অনুবাদ রিপোর্টটা পাবেন] যেটা আসলে তিনি বলেছিলেন ভারতের মোদির গোদি মিডিয়া বলে খ্যাত ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। কিন্তু খুবই নরম ভাষায় আর নিজ নরম ইমেজে বলেছিলেন বলে উনার ঐ বক্তব্যের শক্ত দিকটা অনেকেই বিশেষ করে ভারত উপেক্ষা করার সুযোগ নিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, “দেশ অস্থিতিশীল হলে মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বেও ছড়াবে : ড. মুহাম্মদ ইউনূস”।
(বাংলা)দেশ অস্থিতিশীল হলে তা মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বেও ছড়াবে : ড. মুহাম্মদ ইউনূস
আসলে এটাই ছিল ছিল তার নরম ভাষায় ভারতকে বলা আগাম হুশিয়ারি। বলা যায় এটাই গত দুদিন আগে (৬ সেপ্টেম্বর) দেয়া রাজনাথ যা বলেছেন এর প্রতি আগাম হুশিয়ারি। যার সারকথাটা হল, ভারত আপনারা হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে তাকে দিয়ে নুইসেন্স-হুমকি দেওয়াবেন কিংবা আপনাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথকে দিয়ে সামরিক হামলার হুমকি দেওয়াবেন না। এককথায় বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইবেন তো এর সোজা পরিণতি হবে ভারতের উত্তর-পুর্ব আসামসহ সাত রাজ্যেও সেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়বে।
এছাড়াও গতকাল ও পড়শুদিন আরো দুটি ভারি বক্তব্য দিয়েছেন ভারতকে।
এক. শেখ হাসিনাকে ফেরানোর অনুরোধ না জানানো পর্যন্ত তাঁকে চুপ থাকতে হবে: ড. ইউনূস
দুই. তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান হতে হবে: পিটিআইকে প্রধান উপদেষ্টা
প্রথমত, দুটাই ক্যাটাগরিক্যালি সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট দাবি। কোন দুরকম মানের সুযোগ এখানে নাই। শুধু তাই না। আমাদের দ্বিতীয় বিবৃতিটার ভাষার দিকে নজর দিতে হবে।
তিনি বলছেন, দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর অধিকার সমুন্নত রাখার সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে।
“দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হতে হবে উল্লেখ করে তিনি
বলেন, বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর অধিকার সমুন্নত রাখার সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে।”
এটা অবশ্যই খুবিই সঠিক ও স্ট্রং এক নতুন ভাষায় বলা বাংলাদেশের অধিকারকে মুখ্য করে বলা চোখে চোখ রেখে বলা কথা!
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অভিন্ন (shared) নদীতে ভাটির দেশের সম-অধিকার – এই কথাগুলোই এই প্রথম কোন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকা “শাসক উচ্চারণে” ভারতকে জানিয়ে দিয়েছে। যা হয়ত ভারত কোনদিন চিন্তাও করে নাই; ফলে হজম হচ্ছে না! এমন বাংলাদেশের জন্যই আমি এতদিন কথা বলেছি। বিএনপি বিগত সরকারের সময় এভাবে বলতে না পারলেও এখন যে তা মির্জা ফকরুল বিবৃতিতে এখন এটাই উচ্চারণ করেছে, এর তাতপর্য অনেক। এটা শুধু এখন বিএনপি নয় বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক সামাজিক দলকে একযোগে ভয়েজ তুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা এভাবে অনেক দূর যেতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।
আবার ঘটনা হল, এতে আরেক কাজ হয়ে গেছে যে, এর মাধ্যমে আমরা যে আর হাসিনাকে যেভাবে ভারত আমাদের কাঁধে বসিয়ে দিয়েছিল এখনকার আমরা যে আর তা নয় এক অন্তত একটা প্রমাণ আমরা হাজির করতে পেরেছি।
অনেকে খেয়াল করেছেন আমি আমার ঐ লেখায় দাবি করেছি, এনিয়ে ফরমাল দুদেশের আলোচনা উঠলে যদি ভারত দাবি করে যে আন্তর্জাতিক আইন-কনভেনশনে তারা সেটা [ratify] বা অনুসমর্থন করে নাই তাই ভারতের দায় নাই সেক্ষাত্রে আমাদের দিক থেকে জবাব হবে যে ভারত আমাদের সাথে তাদের অভিন্ন নদীতে ভাটির দেশেরও সম-অধিকার মান্য করে না তেমন ভারতের সাথে আমাদের কোন ধরণের সম্পর্ক (বাণিজ্যিক-মানবিকসহ) থাকবে না।
সবচেয়ে বড় কথা, এই বক্তব্যের উপর দাঁড়িয়ে একদল উতসাহী যোদ্ধা-কর্মী দশ-ট্রাকের উপর মানুষ নিয়ে এই ইস্যুটাকে ক্যাম্পেইনে নিয়ে ত্রিপুরার ডুম্বুর বাধ অভিমুখে প্রতীকী প্রতিবাদে নেমে পড়েছে। এমন অনেক প্রচারে আমাদের বের হতে হবে সারা বাংলাদেশ জুড়ে যাতে এই ইস্যুতে আমাদের সবার গলায় এক স্বরে আওয়াজ উঠে।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলা দরকার। অনেকে বলেছেন, এই ট্রাক মিছিল যারা আয়োজক তারা ইসলামিস্ট বা কেউ কেউ বলছেন তারা আমেরিকান সালাফিস্ট ইসলামি।
আমি তাদের সকলকে উদ্দেশ্য করে একটা কথা সবাইকে বলব।
কথাটা হল, আপনারা কমবেশি সকলেই হাজী শরীয়তুল্লাহ এর নাম শুনেছেন। বৃটিশ আমলে ১৭৯৩ সালে বাংলায় জমিদারি বন্দোবস্ত আইন চালু হয়েছিল। এর ছয় বছরের মধ্যে ১৭৯৯ সালে হাজি শরীয়তুল্লাহ হ্বজে গিয়েছিলেন। সেকালের হ্বজ; যাতাযাত খুব কঠিন। যে কারণেই হোক তিনি দেশে ফিরেন দির্ঘ ১৮ বছর পরে। আমি যতটুকু পড়েছি বুঝেছি তিনিওই প্রথম বাঙালি মুসলমানকে ধর্মপালনের বিস্তারিত শিখিয়েছিলেন, সাদা পগড়ি বেধে চিল্লায় বের হবার মত তার দল বের হত।
সবচেয়ে মজার কথাটা হল, তিনি সৌদি থেকে ফিরেছিলেন অনেকেই দাবি করেন তিনি সৌদি সালাফি হয়ে ফিরেছিলেন। ইতিহাস বলে, সৌদি সালাফিজম আগেও থাকলেও অটোমান অধীনে থাকার কারণে এই ফেকড়া বা ধারা তত প্রকাশ্য ছিল না তবে ভাল্ভাবেই ছিল। যেটা ১৯১৮ সালের দিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে অটোমান সাম্রাজ্যের দুঃখজনক হারের পরে সৌদি সালাফিজম তুলনায় অনেক হাত-পা ছেড়ে চর্চা শুরু করতে পেরেছিল। তবে আমি দাবি করার কেউ নই যে হাজি শরীয়তুল্লাহ সৌদি সালাফিস্ট ছিলেন অথবা কতটা ছিলেন। বরং আমি প্রকাশ্যেই বলব এটা সত্যি বা পুরাটাই মিথ্যা আমার চোখে হাজি শরীয়তুল্লাহ-র কর্ম ও জীবন এবং এর মহিমা এবং বাঙালি মুসলমানসহ (হিন্দু প্রজাদের জীবনেও) এর সুদুর প্রসারী অবদান আমরা ধর্ম-নির্বিশেষে পুর্ববঙ্গের যারা এমন সকলের সম্মানযোগ্য ও মাথায় তুলে রাখার মত ঘটনা। কারণ তিনিই আমাদের ইতিহাসের প্রধান নায়ক, প্রথম বীর যিনি জমিদারি মালিকানা ও জমিদার-হিন্দুর অন্যায় অত্যাচার, বারোমাসে তের পার্বনের অবৈধ চাঁদা দাবি এবং তা মুসলমানদের উপরে পথবা আজ জমিদারের অমুখের মুখে ভাত তো তমুকের বিয়ে তার অবৈধ চাদা দাবি এসব কিছুর বিরুদ্ধে জমিদারি শাসনের বিরুদ্ধে প্রজা-মুসলমানকে প্রথম সংগঠিত করেছিলেন তিনি।
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন হতে পারে যে আমি কেন আমাদের জনগোষ্ঠির প্রথম বীর হাজী শরীয়তুল্লাহ এর প্রসঙ্গ এখানে তুললাম কেন?
সোজাসাপ্টা বললে, আই সত্যিই ডোন্ট কেয়ার তিনি সৌদি সালাফিজমে আপ্লুত হয়ে পুর্ববঙ্গে ফিরেছিলেন কিনা। কারণ আমি তার আইডিয়া বা ধর্মীয় মতাদর্শ কী এটা দিয়ে তাকে বিচারের চেয়ে তার কর্ম দিয়ে বিচারের পক্ষপাতি।
আইডোলজি হিসাবে আমি ইসলামের কোন এক ফেকড়া বা কমিনিজম দিয়ে আসতেই পারেন। কিন্তু যখন আপনি আর আইডিয়া বা আইডিয়াল না বাস্তবের মানুষ; বাস্তবের মানুষের সাথে বাস্তব সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন তখন আইডিয়ার চেয়ে এর উপরে বাস্তব কাজ ও প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এতে হয়ত আইডিয়ার থেকে (আইডিয়া তো আইডিয়াই যা বাস্তব না; কিন্তু মানুষ, মানুষের হাহাকার আর জুলুমবাজের হাতে অত্যাচারিত মজলুম ইত্যাদি এগুলোই একমাত্র বাস্তব) আপনই একটু দুরে চলে যেতেও পারেন কিন্তু মানুষের “জালিম মুক্তি” এই লক্ষ্যই আপনার গাইডিং ফোর্স হয়ে থাকতেই হবে। তাই এদিক দিয়েই আমার চোখে হাজী শরীয়তুল্লাহ (এবং তার ছেলে) আমার চোখে “দ্যা হিরো” বাংলার প্রথম হিরো! কাজেই ঠিক আইডিওলজি না, আম মানুষের জন্য তাদের “জালিম মুক্তি” এই লক্ষ্যই আপনি বা আশেপাশে যারা আছেন তাদের গাইডিং ফোর্স কিনা এটাই তাদেরকেও বিচার্চের মাপকাঠি। এখানে আদর্শকে একটু দূরে রাখেন। আইডিয়াল মানুষ না বাস্তবের রক্ত-মাংসের মানুষ থাকেন, তাহলেই ঐক্যের পথ বের হবে।
আর ঐক্য মানে জনগণের ঐক্য, নানান রাজনীতির মত ও পথের নুন্যতম ঐক্য এটা খুবই জরুরী। এই ঐক্যটা হলে পারে যেসব ভিত্তিতে যেমন এক. জনগণই সব ক্ষমতার উতস কোন রাজা বাদশা, কোন শেখ মুজিব বা কোন সম্রাট বা খলিফা নয়; দুই. ধর্ম, বা কোন এথনিক জাত বৈশিষ্ঠ পরিচয় নির্বিশেষে দেশের বাসিন্দা সকলেই বৈষন্যহীন ভাবে সমান অধিকারের নাগরিক এই ভিত্তিতে গঠিত রাষ্ট্র যাকে রিপাবলিক রাষ্ট্র বলে তা হতে পারে আমাদের ঐক্যের ভিত্তি।
আবার একটু প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথের আমাদেরকে সামরিক হুঙ্কারের কথায় ফিরিঃ
প্রথম কথা দুনিয়া এখন গ্লোবাল স্বার্থ বা গ্লোবাল এলায়েন্সের যুগে প্রবেশ করেছে। যার সোজা মানে বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় সামরিকভাবে কত ক্ষুদ্র এটা একালে অত বিবেচ্য আর নয়। এজন্যই আমি সের এর উপরে সোয়া সেরের গল্প বলি। ইন্ডিয়া যদি এলায়েন্স করে শক্তি দেখায় আমাদেরকেই পালটা এলায়েন্সে যেতেই হবে। মানে, আমাদেরকে ভারত হুমকি দিয়ে যদি কোন বিদেশি শক্তির সাথে এলায়েন্স গড়ার দিকে ঠেলে দেয় এর দায় হবে ভারতের; কারণ আমরা এখন শান্ত-শিষ্ট, ডায়লগে বিবাদ শেষ করতে চাওয়া দেশ। এজন্যই বলেছি মোদিকে হুশ করে পা ফেলতে হবে, নইলে নিজ মরণ ডেকে আনা হবে। আবার আমাদের পররাষ্ট্রনীতি না কেবল আমেরিকাপন্থি না কেবল চীনপন্থি – এরকম কোনটাই হবে না, করব না আমরা। এখন ভারত যদি আমাদের অন্যথা হতে বাধ্য করে এর দায় ভারতকেই নিতে হবে। আমরা তো আমাদের স্বার্থ আদায় করতে সর্বচ্চ প্রচেষ্টা নিবই! ভারতের সকল রাজনৈতিক দলকে বুঝতে হবে যে একটা পাপেট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে এরপর করিডোর, পোর্ট, বাণিজ্যের বাজার, অকেজো করে রাখা সেনাবাহিনী, বর্ডার কিলিং এসব কিছুতে ভারতের রামরাজত্ব চলবে সেই দিন ফুরিয়েছে। এমনকি এখন থেকে আমেরিকাও যদি ২০০৭ সালে ভারতের হাতে বাংলাদেশকে তুলে দিয়ে আবার নীতি নেই তো সেটাও আমরা প্রতিরোধ করব। এটা আর ২০০৭ সাল না!
এই প্রসণ্নগে একটা কথা ভারত বা রাজনাথ বা মোদিকে মনে করিয়ে দিয়ে রাখি। একদিকে ভারতের নর্থ-ইস্ট ভারতের জন্য দুস্থ ও দুর্বলতার অঞ্চল। এরচেয়ে বড় কথা এর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দখল পেতে চীন ও আমেরিকা উভয়েই আগ্রহী!
কিন্তু কোন চীন ও আমেরিকা? এখালে আমি বলি এটা পালাবদলের যুগ। মানে গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতৃত্বে পালাবদলের যুগ এটা আমেরিকা দুর্বল বা ক্রমশ অপসারণ হচ্ছে আর ক্রমশ চীন সেজায়গাটা নিয়তে চাইছে। এই সেই চীন-আমেরিকা। তাই সারকথাটা বললে, ভারতের নর্থ-ইস্টের জন্য বা চীন না আমেরিকা কোন রাষ্ট্রই ভারতের বন্ধু এলায়েন্স বা পক্ষের লোক হওয়ার সুযোগ নাই। এটাই বাস্তবতা। কাজেই বাংলাদেশে অশান্তি করলে আমরা চীন বা আমেরিকা যেদিকেই একটু কান্নি মারি না কেন নাভিশ্বা উঠবে কিন্তু ভারতের। কাজেই নিরপেক্ষ বাংলাদেশকে তার নিজের মত থাকতে দেওয়াই ভারতের জন্য সবচেয়ে ভাল স্বার্থ! হাসিনা যুগ আর ফিরিবে না! বাংলাদেশের মানুষ রক্তবিন্দু থাকতে এটা হতে দিবে না।
এই প্রসঙ্গে কলকাতার মুখ্যমন্ত্রীর কথাও রাজনাথ-মোদি মনে রাখতে পারেন, তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ অস্থির করলে অন্য রাজ্যো সুস্থিত থাকবে না। এতে প্রবল ও ভয় মিশালো তবে কড়া সাড়া দিয়েছেন বিজেপির আসারের মুখ্যমন্ত্রী। আমি বিশ্বাস করি মমতার হুমকি জেনুইন! যতটুকু ইনটেলিজেন্স আমার একসেস নাগালে এসেছে তা থেকে! পশ্চিমবঙ্গে ২৯% মুসলমান ভোটার মমতার পক্ষে ভোট দিয়েছে। কাজেই আবার সেই কথা – মোদিকে হুশ করে পা ফেলতে হবে, নইলে নিজ মরণ ডেকে আনা হবে। ঢিল মারলেই পাটকেল খেতে হবে। কোন মাফ নাই!
সবশেষে একটা নিউজ দেখেন,
মণিপুরে ড্রোনের পর এবার রকেট হামলা, সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে একজন নিহত, সংবাদদাতা কলকাতা প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩: ৩১
এসব আমাদের এই অঞ্চলের কারও জন্যই শুভ ইঙ্গিত না। আবার বিপরীতে একথাও সত্য যে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদ নর্থ-ইস্টের সাথ ছোট ও ট্রাইবাল রাজ্যে কোন শাস্ত আনতে পারবেই না। কারণ, হিন্দুত্ববাদে এর সমাধান নাই। সেটা কংগ্রেসের সফট হিন্দুত্ববাদেও নাই। ভারতের নাম করা দশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদেমিকদের নিয়ে কোন কমিটি গড়লেও তারা সমাধান বলতে পারবে না। কারণ, দুনিয়া কোথায় চলে গেছে আর ওরা এখনও সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদ বলে হিন্দুত্ববাদী গালির চর্চা করছে আর নিজেদেরকে অচল একটা আইডিয়া কমিউনিস্ট-প্রগতিবাদে আটকে রেখেছে! ফলে ভারতকে ফাংশনাল রাখার মত আইডিয়া নীতি চিন্তার যে ঘাটতি ও ইসমালবিদ্বেষ এর ছড়াছড়ি এত মুল্য এখন সারা ভারতকে চুকাতে হবে। তাই আমাদের ইউনুস সাহেব ঠিকই বলেছে আওয়ামী বাদে সবাইকে ইসলামিস্ট বলে সবখানে ট্যাগ লাগানো বন্ধ করেন। এগুলা ছাড়ান দেন। আখিরাতে ফল পাবেন! কাজেই রাজনাথ সিং সাব ভয় দেখাবেন না! চোখ রাঙায়েন না – নিজের দিকে তাকান; দেখেন কার উপরে বসে আছেন!!
লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
আপডেটঃ রাত ১১ঃ০৯ ০৭ আগষ্ট ২০২৪
শেষ আপডেটঃ সকাল ০৯ঃ২৫ ০৮ আগষ্ট ২০২৪

