গতকালের মোদির চীনের কোলে উঠে যাওয়া প্রসঙ্গে আরো দুইটা পয়েন্ট
গৌতম দাস
২৯ অক্টোবর ২০২৪
https://wp.me/p1sCvy-5MU
BRICS summit: China and India should manage differences, Xi tells Modi
গতকালের একটা বড় পয়েন্ট বাদ পড়েছে। সেটা এখানে বলব। সাথে আমার লেখা পাঠ করার একটা গাইড লাইনও বলব এখানে।
[আমি সরি, লিখতে চাইলে আমার অনেক এনার্জি লাগে যা আমার শরীর এখনও অত সবল হয় নাই। তাই আরো অনেক পয়েন্ট জানা থাকলেও বাদ পড়ে যায়; ফাঁকিবাজি করে ফেলি।]
গ্লোবাল পাঁচটা টপ নিউজ এজেন্সির কথা যদি বলি তো এর মধ্যে আমার কাছে বেস্ট হল রয়টার্স। আমি তাদের অনেক পুরানা পাঠক, সেই ২০১০-১১ সাল থেকে; এটা তারা জানে। আমার ইমেইল জানে তারা। প্রায়ই কোয়েশ্চেনায়ার পাঠিয়ে আমার মতামত নেয় আর এই সুযোগ তাদের যেকোন নিউজ আমি তাদের সাইটে একেবারে নিজ ইমেইল দিয়ে অবাধে লগ-ইন করে পাঠ করতে পারি।
তো এই রয়টার্সের যেকোন রিপোর্টের শুরুতে, একটা সাম-আপ বা সংক্ষিপ্তসার দেয়া থাকে। আমার প্রথম পয়েন্টটা সহজে হাজির করার জন্য এমনই একটা সাম-আপ হাজির করব এখানে।
২১ অক্টোবরের এমন এই নিউজ এর সাম-আপ হল এরকমঃ
• Deal would help defuse four-year conflict, India says
• Pact follows rounds of military, diplomatic talks
• Modi, Xi could meet on sidelines of this week’s BRICS summit
• Border stand-off strained ties, hit business interactions
https://www.reuters.com/world/asia-pacific/india-china-have-arrived-border-patrolling-pact-indias-top-diplomat-says-2024-10-21/
আমাদের প্রসঙ্গের জন্য গুরুত্বপুর্ণ হল চতুর্থ পয়েন্ট টা। যার বাংলা অর্থ হল, “(চীন-ভারতের) সীমান্তে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা ব্যবসায়িক লেনদেনকেও খুব ক্ষতি করছে” –
তার মানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আমেরিকা মোদির হাতে আগের মত করে বাংলাদেশ তুলে দেয়া থেকে বিরত থাকাতে মোদি চীনের কোলে গিয়ে উঠেছে শুধু সীমান্ত সমস্যা কিছুটা স্বাভাবিক করতেই নয়। বরং মোদির আসল লক্ষ্য বাংলাদেশের মাখন খেতে গিয়ে সে চীনের কাছ থেকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ না পেয়ে মেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা এবার পুষিয়ে নিতে চায়। শুধু সীমান্ত নয়, চীনা বিনিয়োগ পাওয়া তার আসল লক্ষ্য।
একইভাবে এবার ২৩ অক্টোবরের আরেক নিউজ এর সাম-আপ হল এরকমঃ
• Summary
• Xi and Modi hold first formal talks in five years
• Two leaders meet on the sidelines of the BRICS summit
• Comes after deal to resolve stand-off over disputed frontier
• Talks expected to result in more Chinese investment into India
https://www.reuters.com/world/asia-pacific/modi-meets-xi-india-china-ties-recover-2020-military-clash-2024-10-23/
এবার এই পঞ্চম বা শেষের পয়েন্টটা লক্ষ্য করেন এটা এই ২৩ অক্টোবর মানে যেদিন রাশিয়ার কাজানে মোদি-সি প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল; তা নিয়ে রয়টার্সের পরেকার রিপোর্ট। বলা হচ্ছে – বাংলা করলে হয়, “এরপরে ভারতে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে আরো কথা চলবে; লক্ষ্য ভারতের চীনা বিনিয়োগ পাওয়া”।
আমেরিকা বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে কংগ্রেসের প্রণবের আমলে যেটা ২০১৪ সাল থেকে মোদির ১০+ বছর ক্ষমতামলেও একইভাবে কন্টিনিউ করেছিল। যা এই প্রথম বেশ কড়া ভাবে ছাড়াছাড়িতে।
মানে হল এতদিন বাংলাদেশ চুষে খেতে গিয়ে ভারত চীনা বিনিয়োগ পেতে পারে নাই।
আর মোদি এখন সেই ঘাটতি পোষায় নিতে ছুটছে; মানে কী?
মানে হল, ভারত বা মোদি সহসাই আবার (বাংলাদেশকে পেতে) আমেরিকার কাছে যেতে সহজেই চীন ছেড়ে আসবে না। কারণ মোদির এখনকার মুল লক্ষ্য শুধু চীনের সাথে সম্পর্ক ভাল করা না বা সীমান্তে টেনশন কমানো না বরং আরো গভীরে যাতে চীনা বিনিয়োগ না পেয়ে বুভুক্ষ ভারতের চাহিদার একটা সুরাহা করা।
যার সোজা মানে যারা গত দুদিন ধরে ডনাল্ড ল্যু এর যে গল্প ছড়ানো হয়েছে হিট বাড়িয়ে অর্থ কামানোর লক্ষ্যে এমন খবরের কোন উতস কেউ দেখায় নাই। শুধু তাই না, মোদির এসব লক্ষ্য ও পদক্ষেপ বলছে তিনিও আমেরিকার কাছে ফেরার সুযোগ দেখছেন না। একারণে, লম্বা দাও মারতে – চীনা বিনিয়োগ হাসিলের লক্ষ্যে আগিয়ে যাওয়ার পথে আছেন!
অনেকের এখন মনে হতে পারে চীন কী একা বিনিয়োগদাতা?
জবাব হল, না অবশ্যই নয়। তবে চীন একা ঋণদাতা না হলেও সবচেয়ে সুবিধাজনক শর্তের ঋণদাতা অবশ্যই। সাথে মনে রাখতে হবে আমেরিকার কোন ধরণের ঋণ দিবার মুরোদটাই এখন চলে গেছে। যেটা এখন চলে গেছে চীনের হাতে। আর তা হয়েছে বলেই চীন আমেরিকার মুল প্রতিদ্বন্দ্বি; আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গ্লোবাল অর্থনীতির (কেবল অর্থনীতি বলেছি) মূল কান্ডারি হতে চলেছে। অনেকের মনে জাপানের কথা আসতে পারে। কিন্তু সুদের হার ও শর্তের দিক থেকে তা চীনের দেয়া সুবিধার সাথে তুলনীয় নয়। যেমন কোন ঋণ নেওয়ার পরে সুদ দেয়া শুরু করার সময় হয়ে গেলে, চীন ভারতকে অবলীলায় ছাড় দিয়ে দিবে – আচ্ছা, আপনাদের অসুবিধা হচ্ছে তাহলে ২-৫ বছর পর থেকে পরিশোধ শুরু করেন। এযুগে এই মুরোদ কেবল চীনের আছে। মানে চীন নিজ স্ট্রাটেজিক সুবিধা দেখলে সুদ দেরিতে ফেরত নেয়া, সুদ কমানো বা মাফ করে দেয়া এমন বহু সুবিধাই অফার করার মুরোদ রাখে।
চীন অথবা আমেরিকা পন্থি কোনটাই হওয়া যাবে নাঃ
উপরের যেকথাগুলো বললাম তাতে অনেকের মনে হতে পারে এসব আমার চীন পন্থি কথা!
এখানে আপনার ভুল হল বা হবে যে আপনি পন্থির [পন্থি-পনার] পাল্লায় পড়েছেন! মানে একটা ফেনোমেনাকে আপনি কোল্ড ওয়ারের সোভিয়েত না আমেরিকান ব্লক বা পন্থি দিয়ে ব্যাখ্যার খপ্পরে পড়ছেন। এর কোনই প্রয়োজন নাই শুধু না। এটা বাস্তবেও নাই।
আপনি ঠিকমত নীতি-পলসি ঠিক করতে জানলে আপনাকে না চীন-পন্থি বা আমেরিকা-পন্থি হবার দরকার হবে।
যেমন ইউনুস সরকার যতদুর উঠে এসেছে এখন পর্যন্ত তাতে এটা কী এখন এক আমেরিকা পন্থি সরকার হয়ে গেছে? বিশেষ করে মোদি আমেরিকা প্রত্যাখ্যাত হবার পরে চীন কোলে উঠে যাওয়াতে?
অনেকে এরাই লিখতেও শুরু করে দিয়েছেন যে হা আমাদেরকে আমেরিকা পন্থিই হতে হবে – আর চীন থেকে দূরে থাকতে হবে। এরাই ভাল ইত্যাদি……।
সরি এরা ঠিক বলছে না; ঠিক বুঝছেও না। উলটা ‘পন্থি’পনা দেখাতে বলছেন!
যেমন ইউনুস সরকারের সাথে চীনাদের সাথে সম্পর্ক কত গভীরে চলে গেছে এরা এর কিছুই জানে না। কেবল সারফেসে একটু এসেছে বাংলাদেশের চীনা সাবমেরিন প্রসঙ্গে যেখানে চীনা এক সামরিক জাহাজ বাংলাদেশ সফরে এসেছে। এখানে দেখেনঃ
As China’s navy docks in Bangladesh, India watches with ‘growing concern’
এতে ভারতের চোখ বড় বড় করা উপেক্ষা করে এবং এর সাথে সাথে আরো নানান চীনা অর্থনৈতিক প্রকল্প ও ঋণের ইস্যুতে আলাপও সমানে চলছে বলে আমি জানি যা পরিপক্ক হয়ে গেলে সবার সামনে আসবে।
যার সোজা মানে হল, ইউনুস সরকার আমেরিকা এবং চীনের দুটোর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখছে, করেছে এবং এটা সম্ভব। আবার আমেরিকা-চীন দুপক্ষই ওয়াকেবহাল বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে।
আসলে এটাই আমার দ্বিতীয় পয়েন্ট। যে পন্থি হয়েন না, দরকার নাই। নিজ স্বার্থ বজায় রেখেই আবার আমেরিকা-চীন দুপক্ষ এদের সাথেও ঘনিষ্ট সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। নিজ বুদ্ধির যোগ্যতা ও মুরোদ দেখাতে পারলে, পররাষ্ট্রনীতি সাজাতে পারলে – এটা অবশ্যই সম্ভব। কাজেই পন্থি-পনা ত্যাগ করেন। এই পন্থা-পদ্ধতিতে কোন কিছুকে বুঝতে যেয়েন না, ব্যাখ্যা করতে যেয়েন না। নিশ্চিত থাকেন এটা এক ভুল পথ পরিক্রমা। সামনে তাকান!
লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
আপডেটঃ ২০২৪
শেষ আপডেটঃ ২০২৪
[ এখানে নিচে এই প্রসঙ্গ আমার প্রথম দিনের লেখাটাও জুড়ে দিলাম (সংরক্ষণের জন্য), যেটা কেবল আমার ফেসবুকেই ছিল।]
সাইফুল ইসলাম, Hemayetuddin Ahmed and 111 others
3d
-
Like
-
Reply
-
Edited
-
Like
-
Reply

