সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ


সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ
গৌতম দাস
২১ নভেম্বর ২০২৪
https://wp.me/p1sCvy-5Oo

 

মানবজমিন থেকে নেওয়া

আজ ২১ নভেম্বর ২০২৪, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী দিবস।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করেছিল এই দিন থেকে। সেই থেকে এদিনটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের “সশস্ত্র বাহিনী দিবস” – হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।

একই সঙ্গে এই দিন বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমাদের সকলের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য প্রদর্শনের দিন।   যেন, আমাদের মধ্যে শত ভিন্ন মতামত, অবস্থান থাকলেও রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বা রাষ্ট্রস্বার্থবোধের প্রশ্নে – আমরা বিদেশি রাষ্ট্রস্বার্থের বিরুদ্ধে সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি; সম্মিলিত ভাবে প্রতিরোধে উঠে দাড়াতে পারি। প্রতিবছর সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন আমাদের কাছে সেই সুযোগ নিয়ে আসে।

এবারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস এর প্রধান তাতপর্যঃ
এবারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস এর প্রধান তাতপর্যের দিকটা হল, এটা গত ১৬ বছরের হাসিনার ফ্যাসিজম ও ভারতের আধিপত্যবাদের ততপরতা উচ্ছেদ করে আজ আবার আমাদের সমবেত হবার দিন।
এবারের সমাবেশে আরেক তাতপর্য হল, ১৬ বছর পরে এবারই প্রথম ভারতের তল্পিবাহক ফ্যাসিজমের বাস্তবায়ক রাজনীতিকদের বাদে সমাজের বাকি সকল দল,  রাজনীতিক, অন্তর্বর্তি সরকার, সরকারী / রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তা এবং সশস্ত্র বাহিনী নেতৃত্ব অংশসহ সকলেই একত্রিত হব। এক রেয়ার (কম দেখা যায় এমন) মহামিলন হবে সেটা!  আর সেই সাথে এর মধ্যমনি হবেন খালেদা জিয়া (কামনা করছি তিনি শারিরিকভাবে সবল থেকে অংশ নিতে পারুন)।

ম্যাডাম খালেদা জিয়াঃ
ম্যাডাম খালেদা জিয়া আমাদের দেশ সমাজ থেকে এখানে দুইটা পরিচয় নিয়ে আসবেন। এক, তিনি রাজনীতিক –  দুবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি দলের প্রধান। আর অন্যদিকে তিনি আবার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী।
সাথে যদি মনে রাখি, প্রেসিডেন্ট জিয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী দিবস-এ খুবই স্মরণীয় এক ব্যক্তিত্ব।

১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল আমাদের সেনাবাহিনীর কেটেছে মূলত আবেগ ডমিনেটেড ও মুক্তিযুদ্ধের সুখস্মৃতিতে। বিপরীতে বাস্তবে এক সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলা জিনিষটা কী, তা আবেগের দিন পর্যায় শেষে সেকাজ কত জরুরি এর উপলব্দি শুরু হয়েছিল – সেটা বলা যায় মোটামুটি ১৯৭৬ সাল থেকে। আর বাস্তবে সশস্ত্রবাহিনীকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলা – এই গুরুত্বপুর্ণ কাজের উপলব্দি ও পরিকল্পনা-বাস্তবায়নে নেমে আকার দেওয়ার কাজটা করেছিলেন তখনকার সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যার চিহ্ন সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটা ট্রেনিংসহ কাঠামোগত বৈশিষ্ঠের মধ্যে আজও বর্তমান।
অনেকে জানেন আমি জীবনের একটা বড় সময় জাতিসংঘ মিশনে (জাতিসংঘের সিভিলিয়ান স্টাফ হিসাবে) আফ্রিকায় কাটিয়েছি। আর সেসময়টাই আমার জীবন বাংলাদেশের সেনা-নৌ বা বিমান বাহিনীর সৈনিক-অফিসারদের সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্টভাবে কেটেছে। সেই প্রথম আমি প্রথম অনুভব করি প্রত্যেকটা সৈনিক-অফিসার এর মনে জিয়াউর রহমান কে এবং কেন বসে আছেন আর তা কিভাবে! এককথায় সেনা প্রতিষ্ঠানের গঠন কাঠামোর মধ্যেই জিয়াউর রহমান বসে আছেন সর্বত্র!
আমার উপলব্দি হয়েছে, ১৯৭৬ এর ঐ সময় থেকেই (সেই প্রথম আমরা টের পেয়েছিলাম) “আধিপত্যবাদকে” এবার আমাদের স্বাধীন দেশেও  মোকাবিলা করেই টিকতে হবে তাতে আমাদের রাষ্ট্রের ফান্ড ও সীমিত সম্পদ যত কমই হোক না কেন ব্যক্তির দক্ষতা, ট্রেনিং ও চিন্তা করার সক্ষমতা দিয়ে তা যতদুর সম্ভব আমাদেরকে পূরণ করতেই হবে।  আর সেকাজের হাল-ধরা প্রথম লোকটা ছিলেন জিয়াউর রহমান!

গত ১৬ বছরের অনেক খারাপ স্মৃতি আমাদের সকলেরই কমবেশি আছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপুর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ রাষ্ট্রস্বার্থ পিছনে ফেলে – বিদেশি শক্তির একেকটা হেজিমনি সেন্টার হয়ে উঠেছিল – এর চরম খারাপ প্রভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা যেন হয়ে উঠেছিল – কেবল গুম-খুন-হত্যা-গায়েব ইত্যাদিতে খুবই দক্ষ এক প্রতিষ্ঠান। অথচ এর সাথে কোন সশস্ত্র বাহিনীর দুরতম সম্পর্ক থাকার কথা না!  আবার ওদিকে তাই পতিত সরকারেরও আম জনগণের সাথে যার দুরতম সম্পর্কও ছিল না একেবারে বিচ্ছিন্ন! আর সরকারের সবাই ব্যক্তি লাভালাভ, অর্থপাচার ঠিক্মত হচ্ছে কীনা এটাই সাকসেসের প্রধান নির্ণায়ক!
এই বিচারে  -সেনাবাহিনী – এই শব্দটার সাথে সারা সমাজের অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতই এতেও অনেক কালিমা লেগে গিয়েছিল, বাইরে থাকতে পারে নাই। তাই এখন তাতে সাফ সুতারাই  লড়াইও চলতেছে। বট্ম লাইনটা হল,  এই বাহিনী ছাড়া -আমরা কোথায় যাবো – ফলে একে আবার সাফ সুতারা করে খাড়া করাটাই তো স্বাভাবিক ও ঠান্ডা মাথার বুদ্ধিমানের কাজ!
কিন্তু সেসব খারাপ স্মৃতিকে পিছনে ফেলে আজ বিকেলে জড়ো হবেন নতুন বা বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারক হবু কান্ডারিরা!

একটাই কামনাঃ
আমার মনে প্রাণে কামনা হল, খালেদা জিয়া সেখানে মধ্যমনি হয়ে উঠুন! আমাদের অন্তত একজন মুরুব্বি ও শক্ত ব্যক্তিত্বের মুরুব্বি দরকার!  আমাদের মতভেদ ভিন্নতা অনেক। আর শকুনের চোখ মেলে আধিপত্যবাদ এই মতভেদ ভিন্নতাগুলোকেই নিজের অসৎ কাজে লাগানোর জন্য নানান প্রলোভন হাজির করে দাঁড়িয়ে!
এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া যার আর কোন পার্টিজান পরিচয় দরকার নাই! তিনি এসব পরিচয়ের উর্ধে উঠুন!  তিনি কেবল আমাদের নিজ রাষ্ট্রস্বার্থবোধের উপরে দাঁড়িয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করা ও থাকার ক্ষেত্রে ভুমিকা রেখে মধ্যমনি হয়ে উঠুন! আমাদের বহু কাজ সামনে!
তাই আজ সন্ধ্যায় সমস্ত ক্যামেরার ফোকাস হয়ে উঠুন খালেদা জিয়া!
পারবেন না? না পারার কোনই কারণ নাই!

এক নয়া ব্যক্তিত্বের খালেদা জিয়া হয়ে উঠেন! সৈনিক এক খুব গভীর অর্থবোধক শব্দ! নিঃসন্দেহে! আপনি তো এক সৈনিকেরই স্ত্রী!
তাই মধ্যমনি মুরুব্বি হয়ে উঠুন! কামনায়……

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

আপডেটঃ    ২১ নভেম্বর  ২০২৪
শেষ আপডেটঃ      ২০২৪

Leave a comment