আগামি সেপ্টেম্বরে মোদির পঁচাত্তরে পা দেয়া; এর তাতপর্য আর আমাদের লাভ কী?


আগামি সেপ্টেম্বরে মোদির পঁচাত্তরে পা দেয়া; এর তাতপর্য আর আমাদের লাভ কী?
গৌতম দাস
১১ জুলাই ২০২৫
https://wp.me/p1sCvy-6ur

 

 

 

 

 

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক ; শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫ ১৬:২৯

 

বুঝতে পারছিলাম বাংলাদেশের জন্য ভাল দিন আসতে শুরু করেছে; গত চার মাস থেকে যা প্রেডিক্ট করেছিলাম, তাই!
কথাটা ছিল, ইন্ডিয়ান আধিপত্য বা হেজিমনিতে অতিষ্ট বাংলাদেশের পাবলিক ক্রমান্বয়ে ফুঁসে উঠতেছে। মোদির পুতুল হাসিনাকে ২০২৪, ৫ আগষ্ট উতখাত করে ফেলে দেওয়ার পরেও সেই পুরানা অত্যাচার ফিরে পাবার জন্য মোদি আরও মরিয়া হয়েছে যা চিন্ময়-ইসকন পর্ব দিয়ে শুরু হয়েছিল।
তাই “বলেছিলাম চলতি ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইন্ডিয়ায় আরএসএস-বিজেপি এর মধ্যে গভীর সংঘাত শুরু হয়ে যাবে”।
কারণ মোদির ৭৫ বছর পুর্ণ করবেন সেপ্টেম্বরেই, তাই তখন! মনে হচ্ছে সেটা শুরু হতে যাচ্ছে!

আমি ফেসবুকে গত ২ এপ্রিল ২০২৫, লিখেছিলামঃ
Faruk Sobhan
“পিছনের পটভুমি হল, মোদি ২০১৪ সালে যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন তখন থেকে তিনি একটা নিয়ম চালু করেছিলেন যে দলে নেতৃত্বের বয়স লিমিট থাকতে হবে, যার পরে সে আর মূল নেতা থাকতে পারবে না। এটা তিনি করেছিলেন মূলত আদবানী, যোশী ইত্যাদি সিনিয়র নেতাদের অবসরে পাঠিয়ে নিজেই সব নেতা হবেন। সেসময় মোদি-ই উদ্যোগ নিয়ে এভাবে নেতাদের বয়স লিমিট করে দেয়া হয়েছিল – ৭৫ বছরে। ফলে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দাবিদার আদবানী একেবারেই ম্লান হয়ে সরে পড়েন।

এতে মূল নেতা হয়ে যায় মোদি আর তাঁর সহযোগী (ইঙ্গিতে পরের নেতা) অমিত শাহ।
সেই আইনটাই এখন মোদির উপর প্রয়োগ হতে যাচ্ছে।” –

এই হিসাবে আর দুমাসের মধ্যেই সেপ্টেম্বরেই নরেন্দ্র মোদি ৭৫ বছর পুর্ণ করতে যাচ্ছেন।
ইতোমধ্যেই আল্লাহ’র ইশারা বা ধর্মের কলের ঘন্টা যেন বেজে উঠা শুরু করেছে।
নিচের এই মন্তব্য আরএসএস নেতা ভগতের, তিনি মোদিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে

“৭৫-এর শাল গায়ে পড়লে সরে দাঁড়ানো উচিত!
আরএসএস প্রধানের মন্তব্যে কি ৭৪-এর মোদীকেই ইঙ্গিত? জল্পনা শুরু

নাগপুরের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে অবসরের বয়স নিয়ে মন্তব্য করেছেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত। জানিয়েছেন, ৭৫ বছরের পর সরে দাঁড়ানো উচিত। তবে তিনি কারও নাম করেননি।”

উপরের এই উদ্বৃতি গতকাল আনন্দবাজারের শিরোনাম থেকে নেয়া আর ফটোকার্ড করে এই লেখায় ছবি হিসাবে যুক্ত করেছি।

এরপর ঐ এপ্রিল ২০২৫ সালের আরেকটা লেখা দিয়েছিলাম আমিঃ

[আরএসএস-বিজেপি দ্বন্দ্ব চরমে,
বাংলাদেশে ১৯৭১-এর মত একটি অপারেশন না চালানো ও হাসিনাকে রক্ষার ব্যর্থতা নিয়ে
গৌতম দাস
০৯ এপ্রিল ২০২৫  দুপুর ০২ঃ ৩২
https://wp.me/p1sCvy-6oZ]

এতে পরিস্কার হয়ে উঠেছিল তাদের এই দ্বন্দ্ব কত মারাত্মক হয়ে উঠছে যা সহজেই মিটোতেছে না।

সোজা মূল তথ্য হিসাবে বলেছিলেম একালে ঘটনার শুরু গত ২০২৪ মে মাসে ইন্ডিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচনের সময় থেকে। আরো সুনির্দিষত করে বললে প্রার্থী ঠিক করতে গিয়ে আরএসএস অরিজিন যাদের তাদেককে পিছনে ঠেলে দেয়া থেকে। আর এর শীর্ষে ছিল সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ (যার কেন্দ্র সংসদে আসন ৮০টা; তুলনায় আর কেউ নাই। বরং এর পরের বড় আসন সংখ্যার রাজ্যগুলো ৪০-৪২ এর মধ্যেই )। এর কুখ্যাত মুখ্যমন্ত্রী হলেন যোগী আদিত্যনাথ। তিনি আবার অরিজিন হিসাবে না বিজেপির, না আরএসএস এর কেউ। আদিত্যনাথের গুরুই ছিলেন বিজেপি-আরএসএস এর বাইরের। কিন্তু এটা সত্বেও আরএসএস যোগীকে তাদের লোক হিসাবে আপন করে নেয় জায়গা দিয়েছিল। আর তা থেকে ২০১৪ সালের পরে তিনিই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ও বিজয়ী হয়ে উঠেছিলেন। আর তা থেকেই বিজেপি-আরএসএস দ্বন্দ্ব বড় হতে শুরু করে। মোদি ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথম একা বিজেপির ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া থেকেই মোদির এক নম্বর সাগরেদ বা ডুপলিকেট ছিলেন অমিত শাহ। যিনি এর আগে গুজরাটের তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সঙ্গী ও স্বরাষ্টমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়ে মুসলমানদেরকে গুম-খুন-হত্যার উতসর শুরু করেছিলেন। তিনিওই আবার ২০১৪ সালের মে মাসে মোদি প্রধানমন্ত্রী হবার পরে কোন মন্ত্রীত্ব না নিয়ে ছিলেন বিজেপির সেক্রেটারি। তা এই ক্ষমতাতেই পরের উওত্তর প্রদেশ রাজ্য নির্বাচনে বিজেপিকে মোত ৮০ আসনের মধ্যে ৭২ আসনে জয়লাভ করিয়ে আনেন মুসলমান হত্যা ও ভয় দিয়ে আর সাথে নিচা-জাতের হিন্দুদের সাথে এলায়েন্স করে। কিন্তু মুকগ্যমন্ত্রী হয়ে যায় যোগী আদিত্যনাথ। এখান থেকেই দ্বন্দ্ব চরমে উঠতে উঠতে এই দশা!

মোদি-অমিত জানতেন ২০২৫ সালে তিনি পচাত্তরে পা দিবেন মানে তিনি নিজের তৈরি নিয়ম অনুসারে দলের বড় বা শীর্ষ পদ ছেড়ে চলে য্বেতে হবে। তাই তার পছন্দের প্রার্থী হলেন অমিত শাহ! কিন্তু ততদিনে আরএসএস এর প্রিয় মোদির পরের প্রার্থী হয়ে উঠেন যোগী!

একারণের গত বছরের কেন্দ্রীয় নির্বাচনে কে কত প্রভাবশালী ফলে অমিত না যোগী কার প্রার্থী প্রাধান্য পাবে এনিয়ে ঝগড়া এমত তুওঙ্গে উঠেছিল যে সেটার আপাত সমাধান তারা করিছিল আরেকএক এর সমর্থন ছাড়াই বিজেপি ২০২৪ এর কেন্দ্রীয় নির্বাচন লড়বে। সাথে এথেকে যাতে বুঝা যায় আরএসএস এর অবদান কতখানি। যার সারকথা হল বিজেপির আর আরএসএস কে দরকার নাই ।  আর একারণে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপি নিজ দলের জোটের ভোট বা আসন একসাথে করেন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাই নাই; ৩০ এর মত আসনের ঘাটতি ছিল। যা তারা তাদের জোটের বাইরের দুইটা দলের সাথে চিক্তি করে জোটে ভিড়িয়ে এখনকার কোয়ালিশন সরকার চালাচ্ছে। যে কোয়ালিশনের প্রধানমন্ত্রী মোদি-ই!

এসব ঘটনা মিলিয়ে এখন আগামি সেপ্টেম্বর (মোদির পচাত্তরে পাদেতা কে কেন্দ্র করে) কে হবেন মোদির উত্তরসুরি  অমিত শাহ না যোগী আদিত্যনাথ? এই হলো এবারেই চরমতম লড়াইয়ের মাস এর মূল ইস্যু। আর এটাকেই উস্কে দিয়ে বা মনে করিয়ে দিয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত মোদিকে চ্যালেঞ্জ দিলেন বা মনে করিয়ে দিলেন। এটাই আনন্দবাজার এর রিপোর্টের সারকথা!

এতে আমাদের কী লাভ হতে পারেঃ
স্বভাবতই ইন্ডিয়ান হেজিমনি উতখাতে উন্মুখ আমরা আম বাংলাদেশি। (যদিও ওদিকে আবার তারেক আউট, ইউনুস ইন ঘটেছে আর তা পোক্ত হবার পথে)।
সেটা যাই হোক বিজেপি-আরএসএস এর এই লড়াই এর সারপরিণতি হবে ইন্ডিয়ার আর নির্বাচনে শক্ত একক সরকার গড়াস্র দিন শেষ হতে শুরু করবে আগামি সেপ্টেম্বর ২০২৫ এর পর থেকে। তাতে বিজেপি-আরএসএস এর যুদ্ধ যেখানে গিয়েই শেষ হোক! থিতু হোক না কেন!

অর্থাৎ যেই প্তধানমন্ত্রী হয়ে আসুক তিনি হবেন এক দুর্বল কোয়ালিশনের ক্রেন্দ্রীয় সরকার, দুর্বল কেন্দ্রীয় ক্ষমতা। কারণ, প্রত্যেকটা কোয়ালিশন বা রাজ পার্টনার এটা সেটা পেতে যখন তখন ডিমান্ড বাড়াতেই থাকবে। পরিণতিতে কোয়ালিশন প্রধানমন্ত্রী বেশিরভাগ সময় সিদ্ধান্তহীন হয়ে বসে থাকবেন। কারণ, তার সিদ্ধান্ত একটা কোয়ালিশন পার্টনারকে ফেবার করলে অন্য পার্টনার গোসসা করবে, চাপ দিতে থাকবে।

এরই সারকথা হল, সবচেয়ে দুর্বলতম প্রতিষ্ঠান হতে যাচ্ছে ‘র’ [RAW] কারণ প্রযোজন ও সময়মত সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকবেন সবচেয়ে বড় দুর্বল!!!  আর এর কারণে, ইন্ডিয়ার হেজিমনি চালানো টিকিয়ে রাখার ক্ষমতা এখন দিন কে দিন কমতে থাকবে!!! জাস্ট মনে করে দেখেন সালাহউদ্দিনের অপহরণ সেটা ছিল আন্তঃরাষ্ট্রীয় এক গুম ও অপহরণ; যা গত ১৫ বছর হয়ে উঠেছিল দাল-ভাত (বর্তমান গুম কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের রিপোর্ট দেখেন। বা এটা ইয়্বে মিডিয়া রিপোর্টে দেখেন)। আন্তঃরাষ্ট্রীয় এক গুম ও অপহরণ – এই কাজে দুই প্রধানমন্ত্রীরই স্বাক্ষর লাগে এটুকু কেবল মনে করে রাখেন!!!!!

বাকি কত কী আপনারা নিজে চিন্তা করতে থাকেন!!!!!
আর সেই সাথ যারা “ইউনুস এর মোদির কোলে উঠা “ইন ঘটেছে” বলে আহ্লাদিত তাদের জন্যও এটা অশনি সংকেত! ইউনুস-সহ  তাদের অবস্থা এখন হবে মোদির দালাল হয়ে কোন লাভ তো হলই না উলটা জাত-সুনাম যেটুকু ছিল তাও গেল!  

 

লেখকঃ
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com


আপডেটঃ  দুপুর  ,    ২০২৫
সবশেষ আপডেটঃ  বিকাল ০৫ঃ ১৪,   

 

 

 

Leave a comment