সভ্যতা মানে কী
সিন্ধু সভ্যতাঃ এই প্রেক্ষিতে [দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব]
গৌতম দাস
১২ মে, ২০২২ ১৪ঃ৫২ বৃহস্পতিবার
এই লেখাটা ফাইনালি আজ ১২ আগষ্ট ২০২৩ লোড/ প্রকাশ করলাম। বিকাল ১৭ঃ০৯
https://wp.me/p1sCvy-47s
প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ https://wp.me/p1sCvy-44A
ছবিটা নেয়া হয়েছে আলজাজিরার এক রিপোর্ট থেকে
দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব শুরু করছি এখান থেকে।
দুনিয়াতে এক প্রজাতি [species] হিশাবে মানুষ, উদ্ভবের শুরু থেকে কেমন ছিল আর পরে রূপান্তরিত হতে হতে সেখান থেকে সভ্যতা [civilization] মানে মানব সভ্যতা হয়ে উঠেছিল কী করে – এই ছিল প্রথম পর্বে আলোচনার প্রসঙ্গ। যেটা শুরুতে মিলিয়ন বছরের দীর্ঘ এক মনুষ্য জীবন ছিল আর সেটা অপর প্রান্তে এসে এখন থেকে শেষের মোটামুটি প্রায় ছয়হাজার বছর আগের জীবনকালকে মানূষের সভ্যতার জীবনের শুরু বলে চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ যখন এর আগের ভরঘুরে যাযাবর [NOMAD life] , PASTURAL] জীবন ছেড়ে মানুষের কৃষিকাজ-ভিত্তিক জীবন [ AGRARIAN life] শুরু করেছিল। তা হওয়াতে এটাকেই থিতু জীবন এর শুরু বলা হয়। থিতু জীবন এর মূলকথাটা হল, মানুষ যখন দুনিয়ার কোন সুনির্দিষ্ট ভুগোলের জমিজমার সাথে ঐ অঞ্চলের জমি-ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট-সহ, ঐ জমির সাথে নিজ জীবনকে একাকার অনুভব ও একাকার করে বেঁধে ফেলেছিল; সেকথা বলা হচ্ছে। এভাবেই প্রকৃতিকে মানুষের আরেকভাবে আরও ঘনিষ্টভাবে সচেতনে চেনার শুরু হয়েছিল। এটাই সভ্য হওয়া, যখন আপনি দুনিয়াতে মানুষের আবির্ভাবের অর্থ-তাতপর্য ও শর্ত প্রথম কিছু বুঝাবুঝি শুরু ও সক্ষমতা দেখাতে শুরু করে দিয়েছেন। । আর এটাকেই আমরা মানুষের সভ্যতার [Human Civilization] শুরু, সভ্যতার জীবনের শুরু বলে বিবেচনা করি।
কিন্তু সভ্য মানে গভীরের কথাটা কীঃ
বাংলায় সভ্য কথাটা মূলত আমরা সচেতন বা আমাদের এওয়ারনেস [awareness] বুঝাতে ব্যবহার করি। এখানে সচেতনতা মানে রিলেশনাল (relational Awareness) সচেতনতা। কিন্তু কিসের রিলেশন বা সম্পর্ক? প্রকৃতিতে মানুষ-প্রকৃতির সম্পর্ক, এনিয়ে আমরা সচেতনতা শুরু হয়েছে কিনা! এই সম্পর্ককেই আমরা বুঝতে বা সচেতন হতে শুরু করেছিলাম; তা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও। এটাই সভ্যতা আর এর শুরু। আর সংক্ষেপে আপাতত একটা বাক্য খরচ করে বলি, মানুষের ‘জাত বা জাতি”- এর ধারণার শুরু এখান থেকে। কিন্তু বাংলায় “জাত” মানে কী?
ইংরাজি রেস [Race] এর বাংলা আমরা করি জাতি। আবার একই সাথে ইংরাজি এথনিক [Ethnic] এর বাংলাও করি জাতি। প্রথমটা মূলত রক্ত-সম্পর্কিত বা পরম্পরা যে কারণে এটা রক্তের ডিএনএ [DNA] সংশ্লিষ্ট ধারণা। অর্থাৎ কেউ রেসিয়াল বাঙালি হলে তার রক্তে ডিএনএ-গত ভাবে অন্য বাঙালির সাথে মিল পাওয়া যাবে। আর পরেরটা যেটা এথনিক জাতি মানে এটা হল নৃ-বৈশিষ্ঠগত বা নৃতাত্বিক মি্লের দিক থেকে জাতি। রেস বলতে মাথার চুলের ধরণ, চুলের রঙ অথবা কোকড়া নাকি সোজা – এসব কেমন; এছাড়া গায়ের চামড়ার রঙ (যেমন সাদা না কালো) অথবা নাকের বৈশিষ্ট (চেপটা বা উঁচা শার্প) অথবা চোখের উপরের ঢাকনা (lead) সেটা চোখ অর্ধেক ঢেকে ফেলা না পুরা খুলে রাখা কোন টাইপের; অথবা নাক ও ঠোটের মাঝের অংশ – যেখানে মোঁচ হয় – তা কত চওড়া ইত্যাদি বৈশিষ্টগুলো রেসিয়াল বৈশিষ্টগিত মিল। অন্যদিকে এথনিক বৈশিষ্টের মধ্যে পড়বে – কী কী খায়, প্রধান (staple food) খাদ্য কী। কী করে খায় মানে প্রক্রিয়া বা রন্ধন-প্রণালি। কোন বা কেমন ধর্মপালন চর্চা করে বৈশিষ্ট কী তার। সাংস্কৃতিক চর্চায় আচার আচরণ বৈশিষ্ট কেমন, মূল্যবোধ ইত্যাদি এগুলো এথনিক অর্থে জাত-বৈশিষ্ট। মানুষের এথনিক-জাতিগত পরিচয়টা – এটা কেবল সভ্যতার শুরু থেকে প্রথম এর শুরু।
এখানে এখন একটা বাড়তি কথা বলার সুযোগ নিব, প্রসঙ্গ উঠে গেছে তাই। কোন ভুখন্ডের জনগোষ্ঠির পরিচয় কী – এই অর্থে আমরা এর তিন রকম পরিচয় যাকে ইংরাজিতে আইডেনটিটি [Identity] বলা হয় তা দেখতে পাই। এগুলো হল রেসিয়াল, এথনিক আর পলিটি[Polity]। শেষটা পলিটিক্যাল কমিউনিটি অর্থে। আর প্রথম দুটার সাথে তৃতীয়টার সাগর পরিমাণ ফারাক আছে বা বলা যায় কোন মিল নাই। সেই ফারাক হল এই যে রেসিয়াল এবং এথনিক পরিচয়টা মানে সব ধরণের জাত-পরিচয়টা, এটা “আগেই দেয়া থাকে”। মানে কী? এখন আগেই দেয়া থাকে মানে কি? মানে হল যা [GIVEN]। যেটা যে কোন মানুষ জন্মানোর আগে দেওয়া থাকে বা নির্ধারিত থাকে। মানুষের জন্মের আগে থেকেই তাঁর রেসিয়াল ও এথনিক পরিচয়টা কী হবে তা নির্ধারিত থাকে। যেমন মানুষ যে ঘরে জন্মাবে সেটাই তাঁর রেসিয়াল ও এথনিক পরিচয় হবে তাই,এটা পুর্ব-নির্ধারিত [GIVEN]। বাবা-মার ধর্ম তার ধর্ম পরিচয়। বাবা-মা বাঙালি হলে সন্তানের জাত-পরিচয় বাঙালি বলে বুঝতে হবে। অর্থাৎ এখানে মূলকথাটা হল, মানুষ নিজে জন্মাবার আগে নিজে ঠিক কোন রেসিয়াল ও এথনিক পরিচয়ের হতে চায় তা বেছে নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। এজন্য বলছি এটা “আগেই দেয়া থাকে” [GIVEN] গিভেন বা বাংলায় ‘প্রদত্ত’ পরিচয়। তাই আমাদের রেসিয়াল-এথনিক পরিচয় আমরা বদলাতেই পারি না। তাহলে আসলে আইডেনটিটি বা মানুষের পরিচয়নামা বলতে বাকি থাকল কেবল, পলিটিক্যাল পরিচয়। এটা আমরা সাবালক হয় নিজের বোধবুদ্ধির বলে নিজেই নির্ধারণ করতে পারি আমার রাজনৈতিক পরিচয় কী হবে।
তাহলে উপনীত সিদ্ধান্তটা হল, (রেসিয়াল ও এথনিক দুটাই) জাতি ধারণার সাথে রাজনীতি ধারনার মূলত কোন সম্পর্ক নাই। অথচ তাজ্জব ও অবুঝ বিষয়টা হল তবু “জাতিবাদের” নামে রাজনীতিও ভালই চলে!!! বাঙালী জাতিবাদের চেতনা বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হুঙ্কারে আমাদের এখন জান যায় অবস্থা।
মুসলমানেরা কী বাঙালিঃ
এখানে প্রসঙ্গের গোড়াটা উঠে গেছে তাই এই সুযোগে কম কথায় বলার সুযোগ নিতে চাই।
কেউ বাঙালি কিনা প্রশ্নটা এথনিক-জাতি ধারণার মামলা; অর্থাৎ সভ্যতা যখন কৃষিকাজ শুরু করা দিয়ে শুরু হয়েছিল সেই সিভিলাইজেশন ধারণার অন্তর্গত ধারণা এটা।
উপরে বলেছি এটা পুর্ব-নির্ধারিত [GIVEN]। মানে হল যে মানুষ জন্মায় তার জন্মের আগেই এটা নির্ধারিত হয়ে থাকে। অর্থাট কেউ বাঙালি কিনা সেটা কী বৃটিশ আমলের (১৭৯৩ সালের জমিদারি আইন চালু হবার পরের) নয়া তবে আলগা মোড়ল জমিদার হিন্দু, এরা ঠিক করে দিবে বা দিতে পারে যে “মুসলমানেরা বাঙালি কিনা”????? কাজেই তাদের ফতোয়া মুসলমানেরা বাঙালি নয়” – এটা আলগা মাতবরি, ঐতিহাসিকভাবে ও নৃতাত্বিকভাবে তা কলকাতার জমিদার হিন্দুর এক্তিয়ার বহির্ভুত এবং তা নিকৃষ্ট ইসলামবিদ্বেষ। আসলে নিট ব্যাপারটা হল, রেসিয়াল বা এথনিক অর্থে জাতি পরিচয়ের কোন বাঙালি পরবর্তিতে ইসলাম গ্রহণ করলে তাতে ধর্মীয় পরিচয়ই বদল হয়ে যায়, কিন্তু এতে তার বাঙালি বলে জাত পরিচয় বদল হয়ে যায় না। কেউ বাঙালি কিনা এটা “জমিদার হিন্দু” এই উপ-শাসকের হাতে ও ইচ্ছা-ফতোয়ায় নির্ধারিত হবে না। এই এক্তিয়ার তাকে কেউ দেয় নাই। অথচ এখনও কলকাতায় মুসলমানেরা বাঙালি নয়” এমন ফতোয়া দেওয়ার লোক বাড়ছে, বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদ এর নয়া উত্থান কর্তা বিজেপি-আরএসএস এর প্ররোচনার কারণে।
আবার আগের প্রসঙ্গে ফিরে কথা বলব একটু।
সচেতন বা এওয়ারনেস [awareness] এর কথা বলছিলাম। এই সচেতনতা বলতে আবার অনেক সময় আমরা consciousness বা সজ্ঞানতা শব্দটাও ব্যবহার করি। দুটারই মুলকথা বা রূট-শব্দ চেতনা বা সেন্স [Sense]। প্রথমটা মানুষের বাইরের বিষয়াদি মানে মানুষ যে কন্টেক্সট [context] -এ বা প্রাকৃতিক পরিবেশে মানে মানুষের বাইরের পরিবেশে বাস করে সে সম্পর্কে মানুষ প্রজাতির জন্ম থেকেই সে বংশ-পরম্পরায় দিন-কে-দিন তাঁর (awareness ও consciousness) দুটাই বাড়তে থাকে। প্রজাতি হিসাবে মানুষ কতটা এদিক থেকে আগিয়েছে এর একটা বিশাল মাইলস্টোন বা পথচিহ্ন হল সভ্যতার শুরু। মানে যেটাকে উপরে বলেছি, যাযাবর-গিরির জীবন ত্যাগ করে থিতু হয়ে কৃষিকাজের জীবনে প্রবেশ করা।
আসলে এই মাইলস্টোনটা মূলত মানুষের বোধবুদ্ধি বা জ্ঞানগম্যি কতটা বেড়েছে এর অগ্রগতিরই এক পরিমাপক। নজর করতে হবে শন্দটা বোধ-বুদ্ধি মানে বোধ যেটা সেনসুয়াসনেস [Sensuousness] আর সেই সাথে বুদ্ধিও [rationality or Science]। কাজেই বিজ্ঞান-মারানিরা যেন ঝাপায় না পড়েন; তাদের সাবধান হতে হবে।
সম্পর্ক বলতে প্রকৃতি আর মানুষের [Nature & Human] সম্পর্ক বুঝতে হবেঃ
আরও লক্ষ্যণীয় এখানে সম্পর্ক বলতে প্রকৃতি আর মানুষের [Nature & Human] সম্পর্ক বুঝতে অনুরোধ করি। তবে এখানে এর অভ্যন্তরের দুইটা দিক বা পর্যায় আছে। এখানে প্রথমটা অনেকটাই নিজের সম্পর্কে নিজে জানা – মানে নিজেকে জানা বা এওয়ার হওয়া অর্থে – এ’সম্পর্কে সচেতনতা। আর দ্বিতীয়টা আভ্যন্তরীণভাবে মানুষের সেন্স বা বোধসম্পন্ন হওয়া শুধু না বরং এর সাথে ‘আমার যে বোধ হয়েছে” সে বোধও যে আমার হয়েছে; মানে আমি কর্তা তা জানি-ও। এই হল মানে পরেরটা হল, কনসাসনেস (consciousness) অর্থে সচেতনতা। এটাকে আমরা তাই সজ্ঞানতাও বলি- এই পরম দিকটাকে অনেকে পরম প্রজ্ঞা [Spirit or Spirituality]।
তাহলে এবার সারকথায় আবার বলি – রূটশব্দে সভ্য শব্দের মূল অর্থ হল সজ্ঞানতা। মানুষের জনগোষ্ঠিগত জীবন বিকাশের এক পর্যায়ে এসে সে সজ্ঞান-সচেতন হলে, যেটাকে আমরা কৃষিজীবন দিয়ে এর শুরু বলি – এটাই “সভ্য” হয়ে জীবন শুরু। তাই মানুষের সভ্যতার জীবনের শুরু।
একটা গুরুত্বপুর্ণ সাবধানবাণীঃ এখানে যদিও প্রকৃতি আর মানুষ কে আলাদা দেখতে বলছে; সেটা বলেছি প্রসঙ্গ দুইটার সম্পর্ক বুঝতে গেলে যতটুকু এরা আলাদা এমন অনুমান করে নিতেই হয় সেই অর্থে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আবার আমাদের ভুলে যাওয়া যাবে না যে খোদ মানুষও মূলত প্রকৃতিরই এক অংশ; তবে এক গুরুত্বপুর্ণ অংশ। এবং অন্তর্গত [integral] বা অবিচ্ছিন্ন অংশ। যেন সারা প্রকৃতির সচেতন অংশটাই হল মানুষ বা সচেতনতা নিয়ে যেখানে চর্চা হয়। এটাই তার ভুমিকা ও এসাইন্ড কাজ। এর সাথে ধর্মতত্বের সম্পর্ক নিয়ে পরে আসছি।]
সভ্যতা ধারণার নেতি ব্যবহারঃ
উপরে এতক্ষণ সবসময়ই সভ্যতা ধারণাটা খুবই ইতিবাচক এবং কাম্য ও কদর করা এক ধারণা এই অর্থে শব্দটার ব্যবহার ও আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু একালে মানে মাত্র বড়জোর গত ছয়শত বছর থেকে [দুনিয়ায় কলোনিদখল শুরু হওয়ার পর থেকে] সভ্যতা ধারণার একটা বিশাল নেতি ব্যবহার শুরু হয়েছিল যেটা এখনও প্রায়ই হাজির হতে দেখা যায়।
আমাদের একটা প্রসঙ্গে এখনও আসে নাই তবে পরে আছে – সেটা হল, উপরে অনেকবার ‘সভ্যতা’ ধারণাটা পরিচয় করিয়েছি কিন্তু বলি নাই আমরা দুনিয়ার সভ্যতাগুলোর মধ্যে কোন সভ্যতার অংশ। আমরা সিন্ধু সভ্যতার অংশ। এটা Indus Valley civilization বলে পরিচিত। এখানকার ভুগোল বিচারে এটার মূল অংশ পাকিস্তানে। সাথে অল্প কিছু অংশ ভারতে ও আরো উপরে কিছু অংশ আফগানিস্তানে পড়েছে। বলা হয়ে থাকে অরিজিনালি পাকিস্তানের সিন্দু নদের তীরে এক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তাই এটার নিজস্ব নাম সিন্ধু সভ্যতা। কিন্তু বিদেশি মানে পশ্চিমা এংলোফোন [anglophone] মানে যেমন বৃটিশ ইংরাজি ভাষ্যে সিন্ধু শব্দটা উচ্চারণে “ইনডাস” [Indus] হয়ে যায়। আবার বাণিজ্য সম্পর্কে যাতায়াত থাকা আরবেরা ‘স’ এর জায়গায় ‘হ’ উচ্চারণ করাতে এটা তাদের উচ্চারণে সিন্ধু হয়ে যায় হিন্দু। অথবা সিন্দের জায়গায় হিন্দ – এভাবে এখান থেকে হিন্দু যেটা এখন ধর্মের নাম করা হয়েছে যেটা শুরুতে ছিল কেবল নিজ সভ্যতার নাম – সিন্ধু ( আরবের উচ্চারণে হিন্দু) সভ্যতা এভাবে। এই সিন্ধু সভ্যতার সময়কালীন আরও অনেক সভ্যতা ছিল বলে [পরে] আমরা জানতে পাই। এভাবে সারা দুনিয়াতেই বলা হয়ে থাকে পুরানা অন্তত দশটা সভ্যতার কথা জানা যায়। যাদের মধ্যে আবার আটটা বেশি পুরানা। যদিও গড়পরতা এগুলো ছয়হাজার বছরের পুরানা ধরা হয়। এখানে আমি ছয়হাজার বছর ধরেই কথা বলেছি। কিন্তু যেটা হয় হয়ত একালে ওসব সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় বহু পুরানা একটা কোন নিদর্শন পাওয়া গেল। যার অনুমিত বয়স আবিস্কার হল হয়ত ছয়হাজার বছরের বেশি…। এভাবে নতুন তর্ক উঠেছে হয়ত। এজন্য ছয়হাজার বলাটা বেশি গ্রহণযোগ্য এই অর্থে এটাকে নেয়া।
নিচে এমন আটটা সভ্যতার নাম দেয়া হলঃ
১। The Roman Civilization. … ২। The Persian Civilization. … ৩। The Ancient Greek Civilization. … ৪। The Chinese Civilization. … ৫। The Maya Civilization. … ৬। The Ancient Egyptian Civilization. … ৭। The Indus Valley Civilization. Civilization Name: Indus Valley civilization. … ৮। The Mesopotamian Civilization. Civilization Name: Mesopotamian civilization.
এর আগে সভ্যতাগুলোর মধ্যে একে অন্যকে দখল পালটা দখল মারামারি হয় নাই। তা নয়। তবে এর আগে নিজে ছাড়াও “অন্য আরো সভ্যতা” বলতে যে কেউ আছে সেটা তাদের জানতে হয়েছিল। যদিও অনুমান করা হয় প্রথম পাঁচহাজার বছর পর্যন্ত সভ্যতাগুলো কেউ কাউকে চিনত-জানত না। আর তা মূলত পরস্পরের মধ্যে অনুপস্থিত যোগাযোগ ব্যবস্থা বা এর দুর্দশা ও বেহালের কারণে অথবা এনিয়ে সম্পর্কিত টেকনোলজি তখনো আবিস্কার হয় নাই বলে। এমন দখলদার মধ্যে আমাদের এদিকে মঙ্গোলীয় হালাকু খান [halagu Khan] এর কথা আমরা বেশি জানি। কারণ প্রায় পাঁচশ বছরের পুরানা আব্বাসীয় শাসন আমল [Abbasid caliphate (750–1258)] ধ্বংস ও শেষ হয়েছিল ১২৫৮ সালে এই মঙ্গোলীয় আক্রমণে।
এছাড়াও আরেক ধরণের আক্রমণও হয়েছিল [১৬০৭ সালের পর থেকে]। যেমন, পশ্চিমা শক্তি বিশেষত ইউরোপের (বৃটিশ-ফ্রেঞ্চ-ডাচ-পর্তুগীজ-স্পানিজ) কলোনিদখল ব্যবসাকারিরা অন্যের দেশ দখল করে নিয়ে এশিয়া, আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকায় শাসন চালানো – এর সময়কালটা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় ১৬০৭-১৯৪৫ এই প্রায় সাড়ে তিনশ বছর সময়কাল। ততদিনে অন্যের ভুমি-ভুখন্ড দখলের পরে আবার এর পক্ষে সাফাই দিবার যুগ হিসাবেই সেটা এসেছিল – সেটা এভাবে বলা যায়। অর্থাৎ অন্যের দেশ-ভুখন্ড দখলের পরে এর পক্ষে সাফাই দেওয়া – এটা এর আগে দেখা যায় নাই। কিন্তু ইউরোপের (বৃটিশ-ফ্রেঞ্চ-ডাচ-পর্তুগীজ-স্পানিজ) কলোনিদখল এর পরে কলোনিদখলের পক্ষে এমন সাফাই দেওয়া শুরু হতে দেখা গিয়েছিল। আর সেখান থেকেই সভ্যতা ধারণাটা নষ্টাভাবে নষ্টা বৃটিশ-ফ্রেঞ্চ-ডাচ-পর্তুগীজ-স্পানিজ কলোনিদখলদার হাতে ব্যবহার শুরু হয়েছিল। যেমন বৃটিশদের সেই নষ্টা ব্যাখ্যাটা হল, বৃটিশ নৃ-জনগোষ্ঠি আমাদের (অখন্ড ভারতের) চেয়ে নাকি বেশি সভ্য – অতএব দখলদারেরা বেশি-সভ্য বলে নাকি তাদের হাতে ভারতের দখল হয়ে যাওয়াটা জায়েজ। এই হল সভ্যতা শব্দটার সবচেয়ে শয়তানি ও নেতি-ব্যবহার। নৃতাত্বিক স্টাডিতে অবশ্য এমন সব শয়তানি বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
ক্লদ লেভিস স্ট্রাস [Claude Lévi–Strauss] একজন নামকরা নৃতত্ববিদ (anthropologist and ethnologist। তিনি তাঁর স্ট্রাকচারালিজম (structuralism and structural anthropology) তত্বের জন্য বেশি পরিচিত। তাঁরই আরেক স্পষ্ট দাবি হল, আমরা বিভিন্ন সভ্যতার মানুষগুলো কেউ কারও চেয়ে বেশি সভ্য বা বেশি সম্ভাবনাময় এমন দাবি ভিত্তিহীন। বরং যেমন কলোনিদখলের মত ঘটনাগুলোর জন্যই মানে এক সভ্যতা আরেক সভ্যতার হারে দখল হয়ে যাওয়াতেই সভ্যতাগুলোর মধ্যে অসম বিকাশ বা অসম সম্ভাবনার সৃষ্ট হয়েছে। সবাই বাধাহীন আপন পটেনশিয়ালে বিকশিত হয়ে সুযোগ পেলে কেউ কারও চেয়ে কম সভ্য হবার কারণ নাই।
অর্থাৎ আমাদের ভারতে বৃটিশদের সভ্যতা শিখানোর দাবি আসলে কলোনিদখল ব্যবসাকে জায়েজ করা সাফাই দেওয়ারই অপচেষ্টা। শুধু তাই না, এটা মূলত একটা গভীর রেসিজম এক নিকৃষ্ট জাত-শ্রেষ্ঠত্ব দাবি!!
চলতি শতকে গত বিশ বছর আগে ২০০১ সালে আমরা জর্জ বুশের আরেক জাত-শ্রেষ্ঠত্ববাদি দাবি দেখেছিলাম। যেটা আরেক গভীর বর্ণবাদ বা রেসিজম। তিনি রেজিম চেঞ্জের তত্ব এনেছিলেন। তার রেজিম চেঞ্জের তত্ব বলত যে তিনি বলপ্রয়োগের অন্যদেশের বিশেষত মুসলমান প্রধান জনগোষ্ঠির দেশে ইচ্ছামত সরকার বদলে পছন্দের সরকার বসাবেন। কারণ, এটা নাকি অসভ্য দেশকে সভ্য বানানোর তার মিশন! তিনি ফ্রিডমের কথা খুব বেশি বলতেন। আর এই ফ্রিডমের কথা বলেই তিনি অন্যদেশে অবাধ হস্তক্ষেপ করতেন। একাজগুলো নিরেট এক রেসিজম এক জাত-শ্রেষ্ঠত্ববাদি কাজ ছাড়া কিছুই না।
এভাবেই পশ্চিম উদাম হয়ে পড়েছিল তাদের দগদগে বর্ণবাদ বা রেসিজম সবাই দেখেছিল। এতে একটা বড় ক্ষতি হয়েছে যে এখন আর মানুষ সহজে কোথায় সভ্যতা বা সিভিলাইজেশন শব্দটার ব্যবহার দেখলেই সতর্ক হয়ে যায়। এই ভয়ে যে এটা নেতি ব্যবহারের পশ্চিমা রেসিজম কিনা আগে তাকে নিশ্চিত হতে হবে। এইভাবেই খুবই ইতিবাচক “সভ্য ধারণাটা” একটু চোট খেয়ে গেছে। তাই আগেই শব্দটাকে চেক বা পরীক্ষা না করে কেউ আর শব্দটাকে একালে সহজে গ্রহণ করতে চায় না।
এই হল প্রথম পর্বের আরেকবার করা সারৎসার! এবার আমরা দ্বিতীয় ও শেষ পর্রবের অন্যান্য প্রসঙ্গ আমরা শুরু করব। যদিও তা কিছু আগের কথা থেকে তবে তা করব থিওলজি (Thelogy) এর পরিভাষা ব্যবহার করে।
থিওলজি (Thelogy) বা ধর্মতত্ব-এর পরিভাষাঃ
থিওলজির প্রিজাম্পশন [presumption] বা পুর্ব-অনুমানে সারকথাটা হল কানেকটেড[connected] বা সংযুক্তবোধ। সৃষ্টির সবকিছুর সাথে সংযুক্ত-বোধ। যে মানুষ নিজ সংযুক্তবোধ ও সে সংক্রান্ত নিজ অনুভব আমল করে কথা বলা বা চর্চা করবেন না – বা কখনই এদিকটা প্রবেশ করেন নাই সিদ্ধান্ত নিয়েই বা কোন কারণে, সাধারণত দেখা যায় এরাই আসলে তথাকথিত “বিজ্ঞানবাদিতার” [scientism] মানুষ।
দুনিয়ার সব সৃষ্টি বস্তু-অবস্তু অথবা প্রাণ-অপ্রাণ সকলেই সবার সাথে কানেকটেড বা সংযুক্ত এই বোধ এখানে এক মৌলিক ভিত্তিমূলক ধারণা। তবে এসব সংযুক্তগুলো হয়ে আছে কেবল মাঝখানে এক আল্লাহ (ভগবান, ঈশ্বর, গড ইত্যাদি যার যেটাকে উপাষ্য মনে হয়) এমন এক ধারণার মাধ্যমে ও মধ্যস্ততায়। অর্থাৎ আল্লার মাধ্যমে আমরা সবাই অন্যের সাথে কানেকটেড বা যুক্ত। ফলে সবার সাথে এই সংযোগের কারণে একটা নিয়ম ও প্রতিষ্ঠিত ভারসাম্যে সৃষ্টিগুলো প্রতিপালিত ও সংরক্ষণ বা সংরক্ষিত হয়ে আসছে ও আছে। আল্লাহ’র প্রতিপালন গুণ (সম্ভবত সিফাত) সংরক্ষণ ও বজায় রাখার দায়ীত্ব আমাদেরও। প্রকৃতির এই স্বভাব ও গুণাবলী সম্পর্কে বেখেয়াল থেকে বেপরোয়াভাবে মাত্রায় আমরা প্রকৃতিকে বদল করতে বা অন্যকে তা করতে দিতে পারি না। থিওলজির এই ভাষ্য – এমনই এক সীমার মধ্যে আমাদের থাকতে হবে এটাকেই অন্যভাষায় বা বিজ্ঞানের ভাষায় পরিবেশসম্মত বসবাস বলা হচ্ছে।
এই যে সীমার মধ্য থাকা বা ভারসাম্যের কথা বলছি এর মানে কী?
প্রকৃতিতে আমরা দেখব অনেক কিছুর একটা করে চক্র আছে। বা চক্রের কথা বলা হচ্ছে। যেমন কার্বন চক্র, নাইট্রোজেন চক্র, বা নানান জৈবপ্রাণপ্রজাতিরও অসংখ্য চক্র আছে। মূলকথা হল ক্ষয়-সৃষ্টি দুটাই এমন ভারসাম্য রেখে যেন চলে যেমন যাতে দুনিয়া কার্বন বা নাইট্রোজেন এর মত কোন কিছু যেন শুণ্য না হয়ে যায়। অথবা একটা জৈবপ্রাণপ্রজাতির চক্রের মধ্যে অনেকগুলো প্রজাতি ক্রিয়াশীল থাকে। যদি এর একটা প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন হয় তবে এরপর ঐ চক্রের বাকি সব প্রাণ বিলুপ্তির দিকে চলে যাবে। তাই এমন কিছু করা যাবে না যাতে চক্রের একটা প্রাণও বিলুপ্ত না হয়ে যায়। এজন্য নূহ-নবীর মত প্রাণ-প্রজাতি সংরক্ষণ জরুরি। প্রকৃতি মিলিয়ন বছর ধরে চলতে চলতে প্রাকৃতিকভাবেই এই ভারসাম্য তৈরি করেছে বা একটা ভারসাম্যে এসেছে। এমন এভাবে অসংখ্য প্রাণ চক্র তৈরি করেছে। আর তা দিয়ে প্রকৃতিকে স্টেবল বা এক স্থায়ী রূপ দিয়েছে বলে এটা মিলিয়ন বছরেও বিলুপ্ত হয় নাই। ফলে মানুষ হিসাবে এটাকে এই ভারসাম্যকে এর রুল-গুলোকে বুঝাবুঝি শেষ করে এগুলোকে টিকানোই আমাদের স্বার্থ। থিওলজির ভাষায় এটাই একটা সীমার মধ্যে থাকে। আর এভাবে প্রতিপালকের প্রতিপালন সংরক্ষণের থিওলজিক্যাল অর্থ উপলব্দি করা।
এভাবে কারা পুরানা প্রাচীন সভ্যতা হিসাবে আজও পুরান ভুগোলের জায়গাতেই ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি দেখিয়ে টিকে গেছে বা এখনও আছে এই হিসাবে চারটা সভ্যতার কথা বলা হয়ে থাকে। এগুলো হল, সুমের বা মেসোপটেমিয়া সভ্যতা (4500 –1900 BC) , সিন্ধুনদের সভ্যতা (3300 –1300 BC) প্রাচীন ঈজিপ্ট সভ্যতা (3150 – 31 BC). প্রাচীন চীন সভ্যতা (2100 – 221 BC)। তথ্য এখান থেকে নেয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে সুমের বা মেসোপটেমিয়া সভ্যতাকে সবার সুতিকাগার বলার পিছনের কারণ হল, যে ভৌগলিক অবস্থানে এর শুরু তা হল -টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস এই দু-দুটা নদীর মাঝখানের উর্বর ভুমি, পলিমাটির স্তরে গঠিত নরম মাটির ভুমি যাকে একটা সভ্যতা (কৃষিকাজ) গড়ে উঠার জন্য সবচেয়ে আদর্শ ভুমি মানা হয়। এছাড়া এমনিতেই সভ্যতা মাত্র আমরা লক্ষ্য করলে দেখব তা শুরু বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোন না কোন বড় নদীর পাড়ে। এর কারণ, মানুষের বসবাসের জন্য দরকার মোটামুটি শক্ত উচু ভুমি আর ততধিক যেন দরকার পানি যার বেস্ট উৎস হতে পারে কোন প্রবাহমান বড় নদী। এটা চাষাবাদের জন্য পানি আর মানুষের মৌলিক প্রাণধারণ দুটার জন্যই অপরিহার্য। এছাড়া যতদুর নদী বিস্তৃত ততদুর মামামাল পরিবহণ সবচেয়ে উপযোগী, কম শ্রমের উপায় হল নদী। একারণে, নদনদীর তীরে ছাড়া কোন সভ্যতা কখনও গড়ে উঠেনি। এমনকি একালের শহর নগর বা গঞ্জও।
এতক্ষণ,সাধারণভাবে সব সভ্যতা প্রসঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এবার আমরা সুনির্দিষ্ট করে সিন্ধু সভ্যতা প্রসঙ্গে কথা বলব। এই ফাঁকে বলে রাখি নদ আর নদী নিয়ে আমরা যেন কোন বিভ্রান্ত না হই। কোন কোন ভাষায় শব্দে লিঙ্গান্তর রূপ থাকে। যেগুলোকে ঐ ভাষায় পুংলিঙ্গ গণ্য করা হয়েছে সেসব নামে নদ; আর স্ত্রীলিঙ্গ গণ্যকরাগুলোকে নদী বলা হয়েছে। ফর্মুলা হল, নারীবাচক অর্থাৎ আ-কারান্ত বা ঈ, ই-কারান্ত যেগুলা তারা নদী। আবার ইংরাজিতে তাই নদ ও নদীর দুটারই ইংরাজি একই; সেই বিচারে তাই নদ-নদী দুটাই হল ইংরাজিতে রিভার (river)।
সিন্ধুনদঃ
অনেকে শুনে থাকবেন আমরা ‘সিন্ধু সভ্যতার’ অংশ। সেখান থেকে এসেছি। এসেছি বলছি কেন? কারণ সিন্ধু নদ (Indus) এখনকার বাংলাদেশের আশেপাশের নয়। বাংলাদেশ পেরিয়ে কেবল পশ্চিমেই যেতে থাকলে প্রথমে ভারত পড়বে। সেই ভারতও পার হয়ে গেলে আরও পশ্চিমে আমরা পাকিস্তানে পড়ব। এবার সিন্ধু প্রদেশের (ম্যাপে) উপরে মানে এই প্রদেশের সর্ব-উত্তরে – এখানে এসে পাব আমরা পাঁচ নদীর মোহনা। যারা একে একে মিলেছে। সবচেয়ে উপরের যেটা সেটাই এখানে মূল যে সিন্ধুনদ (Indus) যার সাথে অন্য নদী এসে পড়ছে বা মিলছে সেই মুলনদ হল সিন্ধুনদ। যার উৎস আরো উপরে পাকিস্তানের বাইরে এবং আগে চীনের তিব্বত সুউচ্চ মালভুমি থেকে যেটা আবার আরো অনেক উত্তরে।
সিন্ধুনদ প্রধানত এটা হিমালয়ের এক হিমবাহ থেকে প্রধান উদ্ভব ঘটে,পরে যেটা চীনা ভুখন্ডের তিব্বত প্রদেশে আর পরে তা ভারতের মানস সরোবর। ওদিকে আরেক অংশ চীনের তিব্বতের গাড় সাংপো (Gar Tsangpo) নদীর সাথে মিলে শেষে সিন্ধুনদ নামে প্রবাহিত। সিন্ধুনদ পরে এখনকার পাকিস্তানের উপর দিয়ে প্রবাহিত।
উপরে সে কথাই বলছিলাম যে মূল তিব্বত থেকে আসা সিন্দুনদ সবার আগে ভারতের ও পাকিস্তানের দখলে থাকা কাশ্মীরের অংশ হয়ে প্রবাহিত হবার পরে শেষে সিন্ধুপ্রদেশে এসে পড়েছে। এদিকে উত্তর-পুর্ব দিক থেকে পাঞ্জাবের পাঁচ নদী এসেও এবার ঐ সিন্ধুনদে মিলেছে। পাঞ্জাবের পাঁচ নদী ঝিলম,চেনব,রবি,বিয়াস ও সৎলুজ সকলেই আগেপিছে সিন্ধুনদে মিলিত হবার পরে সকলেই শেষে এক সিন্ধুনদ নামে এবার সর্বদক্ষিণে সমুদ্র, আরব সাগরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে।
তবে পাকিস্তানে যেখানে এসে অন্যান্য নদীর সাথে মিলেছে আইনত তা তখনও সিন্ধু প্রদেশ শুরু হয় নাই। একটু উপরে,মানে পাঞ্জাবের মিঠঠানকোট জেলায় সিন্ধুনদ অন্যান্য নদীর সাথে মিলেছে। সেটা আরো প্রবাহিত হয়ে সিন্ধুপ্রদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর এই মিলিত সিন্দুনদের উপর ‘গুড্ডু ব্যারেজ’ নামে পানিবিদ্যুতের বাধ নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৫৭ সালে অর্থাৎ পাকিস্তানের জন্মের পরেই যা শেষ হয়েছিল ১৯৬২ সালে। যদিও সিন্ধুনদের নামে সিন্ধু প্রদেশ পাকিস্তানের একটা প্রদেশ মাত্র, আবার রাজনৈতিক ক্ষমতার দিক থেকেও সে পাঞ্জাব প্রদেশের পরে যেন দ্বিতীয়,এমন অনুমান দেখা যায় কিন্তু সিন্ধুনদ আসলে সারা পাকিস্তানকেই সব ধরণের পানি সরবরাহের প্রধান উৎস। যেমন,পানীয়,সেচ,বাধ-বিদ্যুৎ ইত্যাদি সবকিছুর প্রধান উৎস।
সর্বপরি এই সিন্ধুনদের তীরেই গড়ে উঠেছিল অবিভক্ত ভারতবর্ষ যার আদি নাম সিন্ধু সভ্যতা। অবিভক্ত ভারতবর্ষের কথা বললে সে হিসাবে যখন আমরা তিন দেশ এক ভারতবর্ষে ছিলাম তখন তার এক খুবই গুরুত্বপুর্ণ সিন্ধুনদ হিমালয় থেকে আসা আরেক প্রভাবশালী নদী।
সভ্যতা কী?
আগে বলেছিলাম দুনিয়াতে জৈবপ্রাণ প্রজাতি হিসাবে মানুষ এসেছিল ছয় মিলিয়ন বছর আগে। কিন্তু স্রেফ আরেকটা জৈবপ্রাণ প্রজাতি হিসাবে মানুষের প্রকৃতিতে টিকে থাকা বা টিকে যাওয়ার লড়াইয়ে কেটেছে এক লম্বা সময়কাল। এসময়েই নিজের শারীরিক আকার বৈশিষ্টে মানুষকে ক্রমাগত বদল করে নিতে হয়েছে টিকে যাওয়ার জন্য। অন্যভাবে বললে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু অনুমান করা যায় সবচেয়ে দীর্ঘ সময়গুলো মানুষের কেটে গেছে নিজেকে প্রকৃতিতে টিকে যাওয়ার উপযুক্ত প্রজাতি হিসাবে গড়ে নিতে।
মানুষ নিয়ে এসব হিসাবের বাইরে আরেক হিসাব করতে দেখা যায়, সেটা ‘সভ্যতা’র হিসাব। যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কথা যেমন বলা হল,গড় হিসাবে বললে ‘মানুষের সভ্যতার বয়স’ মাত্র ছয় হাজার বছর। অর্থাৎ এখানে আর মিলিয়নের হিসাব না। বরং শেষের দিক থেকে,মানে একালের দিকে তাকিয়ে বললে,সেই মিলিয়ন বছরের পুরানা আদিম মানুষই তো আজকের পরিণত মানুষ বা মানুষের সমাজ। তাই কথাগুলো আদি প্রজাতি হিসাবে মানুষের শুরু না বরং সভ্য বা ‘সভ্যতার’ সে মানুষ, সেই মানুষের দিক থেকে মানুষ ধরে নিয়ে পুরানা সেই আলাপ তোলা যাক। যেখানে ‘মানুষের সভ্যতার বয়স’ মাত্র ছয় হাজার বছর। অর্থাৎ স্রেফ প্রজাতি হিসাবে মানুষের বয়স নয়, ‘মানুষের সভ্যতার বয়স’ মাত্র ছয় হাজার বছর।
এখন তাহলে চাষাবাদ বা উতপাদন মানে কী?
এর সোজা মানে হল, প্রকৃতি [উপরে প্রকৃতি-মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে সেকথা বলেছি সেই আলোকে বুঝতে হবে] আমাদের জন্য বরাদ্দ আমাদেরকে কী কী খেতে দিবে, কতদিন দিবে, কতগুলা দিবে ইত্যাদি সবকিছু প্রকৃতির হাতে এর উপর নির্ভরশীল হয়ে যে বাঁচা হয়ে চলছিল সেটা আর নয়। যেমন যাযাবর জীবন শেষে কৃষিকাজের জীবন সেটাই যখন ফলের গাছ লাগানো, গাছ পরিচর্যা করে ফল বের করে আনা নিজের খাদ্য যোগানো ইত্যাদির লম্বা প্রক্রিয়ার জগতে প্রবেশ করা। এটাকেই বলে চাষাবাদ শিখে যাওয়া বা নিজের “খাদ্য উতপাদন” বলে বর্ণনা করছি সেটা শিখে যাওয়া। এককথায় প্রকৃতি যা দেয় তাই নয়,প্রকৃতিতে না পেলে, না দিলে ছেড়ে অন্য অঞ্চলে চলে যাওয়া নয় চাষাবাদ বা উতপাদনের জগতে প্রবেশ করে যাওয়া।
এখানে উদাহরণ দিতে গিয়ে খুব সহজে গ্যাদারিংয়ের সমাজ থেকে চাষাভবাদের সমাজে রুপান্তরিত কি করে হওয়া যায় বা পরিণত হয় তা বলে ফেললাম। বাস্তব এটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে নাই যদিও। এছাড়া গ্যাদারিং সমাজের আরেক রূপও আছে এট হল হান্টিং এন্ড গ্যাদারিং সোসাইটি। মানে হল, শুরু ফল পেড়ে খাওয়া নয়,মাছ তো বটেই পশু শিকারও সুরু করে দেওয়া।
কিন্তু তাহলে আগেই হান্টিং এন্ড গ্যাদারিং একসাথে বলি নাই কেন? কারণ, শিকারি সমাজ হয়ে উঠার আবার এক পুর্বশর্ত আছে যা আগে পূরণ না হলে শিকারি হওয়া যায় না। তা হল আগুনের আবিস্কার। কারণ পশু শিকারের পর আগুন না হলে কাচা পশু খাওয়া যাবে না।তাই ঐ সমাজে আগুনের আবিস্কার ও চল শুরু হওয়ার আগে শিকার শুরু হবে না।
চাষাবাদ মানে কী?
তাহলে চাষাবাদের অর্থ হল প্রকৃতি যেভাবে আমাদের জন্য প্রাকৃতিকভাবে খাবার তৈরি দেয় সেটা আর নয়। বরং ইতোমধ্যে আমরা পর্যবেক্ষণ শক্তি অর্জন করে বুঝেছি যে আমাদেরকে খাদ্য দেয় প্রকৃতির এমন উদ্ভিদগুলোকে আর প্রাকৃতিকভাবে নয় নিজের গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তির বুঝাবুঝি দিয়ে সেগুলোকে জন্মানো। এভাবে প্রকৃতিতে এক নতুন শর্ত চালু করা যে সবটাই প্রকৃতির ইচ্ছা বা খেয়াল নয় এর সাথে এবার মানুষের ইচ্ছাও মিশাল দেয়া। আর স্বভাবতই এতে মানুষের শ্রম শামিল করতে হয়। এটার নাম দিয়েছি আমরা চাষাবাদ বা কৃষিকাজ।
এটা এক অর্থে প্রকৃতির স্বভাবকেই নকল করা যাতে মানুষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়। মানুষে খাদ্য-উদ্ভিদ্গুলো “জন্মানোর’ বেলায় তাতে মানুষের ইচ্ছা বা মাতব্বরি প্রাধান্য পায়। এই বাক্য জন্মানো শব্দটাকে লক্ষ করেন। এতে এই যে মানুষের ইচ্ছা বা মাতব্বরিকে প্রাধান্যে নিয়ে আসা এটাকেই আমরা নতুন শব্দে বলছি জন্মানো।
কিন্তু সাবধান আমাদের ভিতর যেন খোদার উপর বেকুব কোন খোদগিরি-বোধ না ভর করে। কথিত “জন্মানো” এই ঘটনার তখন থেকেই “আমরাই” সব সৃষ্টি করছি’ টাইপের চিন্তা কিংবা মানুষই প্রকৃতির রাজা হয়ে গেছে টাইপের চিন্তা থেকে সাবধান। একেবারে সাত হাত দূরে থাকতে হবে আমাদের।
আমরা কখনই প্রকৃতির মালিক বা ‘রাজা’ নই; হই নাই অথবা আমরাই ‘সব সৃষ্টি করছি’ এটাও কখনই হবে না। এটা দম্ভোক্তি। তবু যদি এমন বেকুবি মানুষেরই কোন লোভী সদস্য যদি করেই ফেলে তাহলে বুঝতে হবে দুনিয়া থেকে মানুষ-প্রজাতির বিলুপ্তি আসন্ন। তাহলে মানুষের চাষাবাদ বা জন্মানো বলে কী কোন তাতপর্য নাই?
অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটা সীমিত যেমন আমরা প্রকৃতিতে অবশ্যই বদল ঘটিয়েছি। তবে সেটা সেখানেই আর ততটুকুই যতটুকু প্রকৃতি আমাদের এলাও করেছে। বা অন্যভাষায় বললে যতটুকুতে প্রকৃতির মৌলিক স্বভাব আমরা বোকার মত বদলে দিতে যাই নাই। আর এতটুকু ঘটানোতেই প্রকৃতি অনেকটাই এখন মানুষের খাদ্যদাতা হয়েই প্রকৃতি তার নিয়মিত বদলগুলোও ঘটিয়ে চলেছে।
একারণের মানুষের চাষাবাদ শুরু অনেক কিছুর দিক থেকে প্রকৃতিতে খুবই গুরুত্বপুর্ণ এই পরিবর্তন। অর্থাৎ এই প্রথম যেন প্রকৃতির পাশাপাশি প্রকৃতিকে ‘বুঝে বুঝে চলার’ এই নতুন যুগের শুরু হয়েছিল। খেয়াল রাখতে হবে এটা ‘বুঝে বুঝে চলা’ কোন আলগা মাতবরি বা মিথ্যা রাজাবোধ মিথ্যা অহংবোধ আসাটা হারাম হবে। তা একেবারে আত্মধংসী ও পরিণতিতে মানুষের বিলুপ্তি। থিওলজিগুলোও বারবার নিজের মত করে এই সাবধানতার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করেছে নানাভাবে।
আসলে কৃষিকাজ এর এই যুগে এসে মানুষো টের পেতে শুরু করেছিল যে এ’এক তাদের নতুন অভিজ্ঞতার জীবন। যখন মানুষ তার আরেক ফ্যাকাল্টি আরেক যোগ্যতা আরেক হাতিয়ারের ব্যবহার শিখে গেছে – এটাকে বলা যায় বুঝাবুঝির ফ্যাকাল্টি। তার পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়নের সক্ষমতা।
নিশ্চয় আমরা এখন টের পাচ্ছি কৃষিকাজ মানেই আসলে একারণে সিভিলাইজেশন। মানুষ ধীরস্থির হয়ে ‘বুঝে বুঝে চলা’, বুঝাবুঝির ফ্যাকাল্টি মানুষের এই হাতিয়ার যোগ্যতাটাকেও ব্যবহারে নিয়ে আসা – মানুষ কয়েকদিনেই যেন বিরাট দায়ীত্ববান হয়ে উঠেছিল। একটা মেটাফোর বাক্যে বলা যায়, প্রকৃতি যেন তার বুঝাবুঝির কাজের ভার তখন থেকে পরিপক্কতা লাভ করা, ‘চাষাবাদ’ বা ‘জন্মানোর’ দক্ষতা সম্পন্ন এই নয়া মানুষকে শঁপে দিয়েছিল। মানুষ তখন থেকে দায়ীত্ববান মানুষ হতে শুরু করেছিল। এটাই মানুষের মধ্যে থিওলজিক্যাল চর্চা ও এমন জ্ঞানবুদ্ধি জাগবার শর্ত তৈরি হতে শুরু করেছিল।
চাষাবাদ থেকে সিভিল বা সিভিলাইজেশনঃ
উপরের এসবগুলো কথাগুলোর একটা ছোট শব্দে প্রকাশ আছে বা প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল অনুমান করি। সেই শব্দটা হল ইংরাজিতে সিভিল (civil)। আর এখান থেকেই সিভিলাইজেশন (civilization)বা বাংলায় সভ্যতা। বাংলায় সিভিলের প্রতিশব্দ অনেক। ওর মধ্যে একটা হল সভ্য। কিন্তু অসুবিধা হল মানুষ সভ্য শব্দের বিপরীত শব্দটা – অসভ্য। ইনফরমালি অসভ্য শব্দটা সভ্য শব্দের সব সিরিয়াস ধারণাকে লঘু করে দেয়। এদিকটা খেয়াল রাখলে আমরা ভাল করব। সভ্য বা সিভিল মানে হল
যখন থেকে মানুষ তার সজ্ঞানে তার জ্ঞানবুদ্ধি তার বুঝাবুঝির ফ্যাকাল্টি এই হাতিয়ার বা যোগ্যতাও ব্যবহার শুরু করেছিল। অর্থাৎ যখন থেকে মানুষ শুধু খায় আর ঘুমায় আর মজা করে তাই নয়। বড় কথা, মানুষ চিন্তাও করে। এটা সেবুঝে যায়। আর মানুষের জীবনে এর প্রয়োগ শুধু মানুষই না সারা প্রকৃতিই এক নয়া রূপ পায়। নয়া রূপে প্রকৃতি হাজির হতে শুরু করেছিল। মানুষ, প্রকৃতির এক বর্ধিত অংশ মানুষ; মানুষই প্রকৃতির আরেক রূপ-চেহারা – সে যেন হয়ে উঠে এক রেজিষ্টার – যেন প্রকৃতি যাকে কার্যকারণ ঘটনাবলীর সবকিছুর ‘নোট’ নিতে বলে দিয়েছে। ফলে যেন তখন থেকে আর প্রকৃতিতে যত জ্ঞান কার্যকারণ তা আর হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা কমে গেছিল। এতে এক নতুন সম্পর্ক, নতুন উন্মোচনের দুনিয়া হাজির হয়েছিল। একারণে মানুষের কৃষিকাজ শুরু করা, একে সিভিলাইজেশনেরও শুরু হওয়া ধরা হচ্ছে। আর মানুষের সিভিল বা সভ্য হয়ে বা এক সভ্য রূপ হাজির করছে।
উপরে সিন্ধু সভ্যতার মত আরো কতগুলো সভ্যতা যা আমাদের মতই তবে আগে বা পরের এমন সভ্যতার নাম বলেছি। অর্থাৎ সরাসরি বললে, সব সভ্যতা একই সময়ে শুরূ হয় নাই। মানে দুনিয়া স্কল ভুমি বা ভুগোলের মানুষ একই সময়ে তার সভ্যতার যাত্রা শুরু করে নাই, আগে-পিছে আছে। আবার লক্ষ করলে দেখব সভ্যতাগুলো সবই প্রায় আমাদের সিন্ধু সভ্যতার কাছাকাছি। জায়গাটা হল এখনকার দিনের পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে তবে উপরে আফগানিস্তান আর নিচে ভারতের খুবই কম অংশ এই এলাকাটা নিয়ে। আবার সিন্ধু সভ্যতার আরও উত্তর-পশ্চিমে হল পারস্য সভ্যতা এবং আরও উত্তর পশ্চিমে হল বিখ্যাত সুমের বা মেসোপটমিয়া (এখনকার ইরাক)আবার আরও পুর্বে চীন সভ্যতা। তবে সবচেয়ে লক্ষণীয় দিকটা হল,এসব সভ্যতার নিদর্শন মানে হল, তাদের গড়ে তোলা এক বা একাধিক নগর গড়ে তোলা। যেমন পুরানা সিন্ধু সভ্যতা মানে হল সিন্ধুনদের তীরে গড়ে উঠা দুই নগর হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগর এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। মাটি খুড়ে প্রত্নতাত্বিক (archiology) ভাবে তাদের সম্পর্কে যা জানার জানা যায়। অর্থাৎ আমরা হলাম ধ্বংসপ্রাপ্ত বা বিলুপ্ত রূপের বিচ্ছিন্ন ধ্বংসাবেশের কোন অংশ থেকে ধীরে ধীরে লম্বা সময় নিয়ে আবার জেগে উঠে রূপ।
সিভিলঃ
সিভিল [Civil] শব্দের আরেক অর্থ নগর যেখান থেকে একালে এসে নাগরিক শব্দটা। আর সিভিলের আরেক পুরানা বাংলা হল পুর বা পৌর। যেমন পুরকৌশলী মানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। পুর এর আরেক মানে বসবাসের ঘরবাড়ি। পৌর মানে এখান থেকে পৌরসভা বা মিউনিসিপাল্টি। এছাড়া আরও বড় ঘটনা হিসাবে বললে তা ‘সিটি কর্পোরেশন’।
সিভিল শব্দের অর্থের যেন শেষ নাই। যেমন সিভিল সার্ভিস। এখানে সিভিল মানে হল নাগরিক শব্দের সাথে জুড়ে তৈরি। নাগরিকদেরকে সেবা বা সার্ভিস দিবার সরকারি কর্মচারিদের চাকরি করা যারা নাগরিকদের বিভিন্ন সেবা দিবার জন্য কাজ করে থাকে। অর্থাৎ এখানে এটা আর শুরু মিউনিসিপাল্টির কর্মচারিই নয়, রাষ্ট্রের কর্মচারিদেরকেই বুঝায়।
সিভিল থেকে আরেক শব্দ এসেছে সিভিক বা সিভিকস (civics)। স্কুলের ক্লাসে বাংলায় আমরা এটাকে বলতে শুনি ‘পৌরনীতি’। এটা আসলে পরবর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যেটাকে রাজনীতি-বিজ্ঞান বা রাজনীতি বিভাগ হবে ওরই ছোট ভার্সান। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে বা আমরা টের পাচ্ছি সিভিল শব্দটাই ‘রাজনীতি’ শব্দটার এবং এই সাবজেক্টের দিকে মোড় নিবার একটা ঝোঁক আছে। হা অবশ্যই আছে। কিন্তু কেন?
আসলে চাষাবাদ বা কৃষিকাজ মানুষ করবে মাঠে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু বসবাস করবে কোথায়? এখনও আমাদের এদিকের গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ বলে যে কাঠামো তা হল, চাষাবাদের জমির সাথে পাশেই বসবাসের ভিটা। সভ্যতাগুলোর বেলায় রূপটা তেমন নয়। বসবাসের যে রূপ-কাঠামো তা খুবই দলবদ্ধ এবং তা চাষাবাদের জমাজমির অংশ থেকে দূরে আর সকলের জন্য একসাথে। সকলের জন্য একসাথে যেখানে কমন ফেসিলিটি বা সুবিধাদি সব একই জায়গায় – এটাকেই নগর বলা হত।
আসলে আরেকটা রূপ ছিল মাঝখানে। যেমন সিন্ধু সভ্যতার নগরদ্বয় হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো এর সম্পর্কে বলা হয় তা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর টিকে নাই। একটা মতামত বলে সিন্ধুনদের এর উতসের দিকের এক বড় নদী স্বরসতী কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে শুকিয়ে যেতে থাকে। আরেকটা মতামত বলে এক প্রলঙ্কারি বন্যায় নগরের সব ধুয়ে যায়। সেটা যাই হোক সারকথায় নগর দুটো আর টিকে নাই। এঘটনা অনুমান করা হয় মোটামুটি ১৯০০ খ্রীষ্টপুর্ব মানে জীশুর জন্মের ১৯০০ বছর আগের ঘটনা এটা।
আসকো পারপোলা (Asko Parpola)তিনি একজন ফিনল্যান্ডের নাগরিক এবং তিনি সিন্ধু সভ্যতা ও সিন্ধুনদ বিষয়ে গবেষক ও এক্সপার্ট। তার মতে, হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর পড়শি আরো দুই সভ্যতা এর সমৃদ্ধির পিছনে ছিল। এরা হল মেসোপটমিয়া ও আরবদের সাথে তাদের গভীর বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল আর তা ছিল খ্রীষ্টপুর্ব 2600 and 1800 BCE এই সময়কালে। অর্থাৎ এই সভ্যতার ধ্বংস হবার আগে দিয়ে।
অর্থাৎ ঐদুই নগর ধ্বংস হয়ে যাবার পরে আবার নতুন করে ধ্বংসাবশেষের বিচ্ছিন্ন অংশ থেকে আজকের আমরা। অর্থাৎ আবার সবকিছু সেই বিচ্ছিন্ন গ্রাম আর সেখান থেকে, নগর বন্দর জেলা রাজধানী ইত্যাদি সবকিছু পেরিয়ে আবার সব নতুন করে গড়ে উঠা জিনিষ।
কাজেই সিভিল ধারণা এখনকার বাস্তবতায় যা আর তা আগে সেকালে যেমন ছিল তা ঠিক এক নয়। এখনকার সিভিল বা নাগরিক ধারণা এটা কলোনিয়াল উৎস থেকে শুরু। মোগল আমলেও এর হদিস তেমন জানা যায় না। যদিও মোগল আমলের অন্তত তিনটা নগর বা বড় শহরের কথা আমরা জানি – হায়দ্রাবাদ, লক্ষনৌ আর দিল্লি। কিন্তু বৃটিশ আমলে এসে সেসবের আর কোন ধারাবাহিকতা থাকে নাই। তাই বৃটিশ আমলের যে নগর বা সিভিল সোসাইটি ধারণা যতটুকুই তা ছিল সেটা বৃটিশদের থেকে পাওয়া। আর একালে যে সিভিল সোসাইটির কথা ফিরে এসেছে দেখি এটা একেবারেই পশ্চিমা উৎস থেকে। বিদেশি সাহায্য অনুদানে খোলা এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় যারা পরিচালনা করে থাকে তা এদেরই বড় জোর একটা ক্লাব মাত্র।
দলবদ্ধভাবে বসবাসের ধরণ থেকে অনেকে অনুমান করে যে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো রোম বা গ্রীকদের মত নগররাষ্ট্র ধরণের কিছু ছিল। যেখানে মূলত নগরের কমন ফেসিলিটি মানে নগরে বসবাসকারীদেরকে দেয় পানি বা পয়ঃ প্রণালি ধরণের বিষয়ে সুযোগ সুবিধাগুলো ও নগর পরিচালনার জন্য একটা পরিচালনা কাঠামো বা নগররাষ্ট্র ধরণের কিছু হয়ত সেখানে ছিল। তাই এতে পুরানা সিভিল ধারণার কোন ধারাবাহিকতা একালে আর নাই। একালের যা কিছু আছে এর উৎস কলোনি শাসক বৃটিশদের থেকে যা কিছু একালে পাওয়া গেছে।
সিন্ধু থেকে হিন্দু বা ইংরাজিতে ইন্ডাস (indus):
উপরে বলেছি সিন্ধু সভ্যতার মানুষদের সাথে আরবদের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। বলা হয় যে উচ্চারণের দিক থেকে স কে হ উচ্চারণ করাতে সিন্ধু হয়ে যায় হিন্দু ফলে অনেকের উচ্চারণে সভ্যতার নাম হয়ে যায় হিন্দু সভ্যতা। সিন্ধু উপত্যকা হয়ে যায় ইন্ডাস ভ্যালি (indus valley)। কিন্তু খুবই সাবধান। আমরা এখানে সভ্যতা নিয়ে কলা বলছি,ধর্ম নয়। ফলে হিন্দু ধর্মের জয়জয়কার ধরণের কোন সিদ্ধান্ত এখান থেকে আসার কিছু নাই।
সভ্যতা আর ধর্মকে মিলিয়ে ফেলার এই বদ উদ্দেশ্য এগুলো কেবল বৃটিশ আমলে এই উনিশ শতকের ঘটনা। হিন্দু জাতি ধারণার রাজনৈতিক রূপ খাড়া করার উদ্যোগ যখন প্রবল হয়েছে তখনকার।
সব সময়ই একটা ইসলামফোবিক বা বিদ্বেষ ছড়ানোর মুড এর ভিতর থেকে গেছে এটাই সব সংঘাত ও অসন্তোষের মূল উৎস। আর এটা প্রবল হয়েছে ১৯১৫ সালে হিন্দু মহাসভা (আরএসএস- বিজেপি এদুই সংগঠনের আগের রূপ ও নাম) গঠিত হয়েছিল। এরপর থেকেই এই বিদ্বেষী ততপরতা চরমে উঠা শুরু করেছিল। এরাই সভ্যতার নামকে ধর্মের নাম বলে চালানো শুরু করেছিল।
কিন্তু সবসময়ই এক বাস্তবতা তাদেরকে বাধা দিয়েছে। সেটা হল,সিন্ধু সভ্যতার দুই নগরী হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো এদের কোনটাই এখনকার ভারতের কোন অংশ নয় নয়। বরং দুটার পুরাটাই এখনকার পাকিস্তানে পড়েছে। তবু শব্দ চুরি করে একালের ইন্টারনেটের যুগে সিন্ধু সভ্যতাকে ইন্ডিয়ান সভ্যতা নামে ডেকে অযথা আরো বিভ্রান্ত ছড়ানোর চেষ্টাও দেখা যায়। যেখানো সাদা কথাটা হল সিন্ধু সভ্যতা হল অবিভক্ত ভারতবর্ষের (কেবল ভারতের না। বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য পুরানা নাম ভারতবর্ষ লেখা উচিত)প্রসঙ্গ। সারকথা, এসব বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কোন কারও বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়ানো একেবারেই কাম্য নয়।
তবে আমাদের সাথে সিন্ধু সভ্যতার সম্পর্ক কী – এনিয়ে আরো কিছু কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। আগে বলেছি মোটা দাগে আমাদের সকল সভ্যতা বা সিভিলাইজেশন-গুলোর বয়স গড়ে মনে করা হয় ছয়হাজার বছর। আমরা বৃহত্তর সিন্ধু সভ্যতারই উপ-সভ্যতার মত। ঠিক যেমন এখনকার ভারতের ৩০টার মত রাজ্য আছে যার মধ্যে ১৭-২০ টা হল এমন সুনির্দিষ্ট করে আলাদা করা যায় এমন এথনিক -জাতি। যার একটা হল বাঙালি। আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হল ঐ বাঙালি এথনিক-জাতির পশ্চিম অংশ যা হিন্দু প্রধান। আর বাংলাদেশ হল আলাদা রাষ্ট্র যা বাঙালি এথনিক-জাতির পুর্ব অংশ যা মুসলমান প্রধান। এসব বিচারে মূল সিন্ধু সভ্যতারই উপ-সভ্যতা বলতে পারি আমরা ভারতের ১৭-২০ টা আলাদা করে চিনা যায় এমন বৈশিষ্টের এথনিক জাতি। এসব বিচারে আমরা বাঙালি হিশাবে সিন্ধু সভ্যতার উপ অংশ।
সভ্যতা বা সিভিলাইজেশন শব্দের আরেক অপব্যবহারঃ
সবশেষে সিভিলাইজেশন শব্দটাকে একালে চলতি শতকে বুশের আমলের অপব্যবহার নিয়ে কিছু কথা বলে শেষ করব। উপরে একটু ছুয়ে থেকে বলেছিলাম সিভিল শব্দের এক বাংলা হল সভ্য। আর তা থেকে বিপরীত শব্দ অ-সভ্য। এই অসভ্য শব্দটার অপব্যবহার হয় প্রচুর। যেমন সভ্য শব্দ থেকে কেউ “অসভ্য কিনা” তা বলবার জন্য সভ্য শব্দটা যদিও চালু হয় নাই। তবু এই অপব্যবহার অর্থে সভ্য শব্দের একটা ব্যবহার অনেকে করে থাকে। এবং এভাবে কাউকে সভ্য/অসভ্য বলার ভিতর দিয়ে তাঁকে উচা-নিচা দেখিয়ে ফেলার চেষ্টা দেখা যায়।
কিন্তু এখান থেকেই সভ্য শব্দের আরেক ব্যবহার আছে। যেমন কেউ কাউকে কলোনি বা অধীনস্ত করে এরপরে ঐ কলোনিদখল করার পক্ষে সাফাই দিতে বা যোগাড় করতে গিয়ে বলতে দেখা যায় যে ‘কলোনিদখলদার যেহেতু অনেক বেশি সভ্য কাজেই তার দখলিকাজটা জায়েজ’। এমনই নষ্টা কথা আমরা অনেককে বলতে শুনি। বা অনেকে কায়দা করে বলে কলোনিদখলটা খারাপ কিন্তু সভ্য তো বানিয়ে তো দিয়ে গেছে। যেন তাকে ‘সভ্য’ বানানোর জন্য দাওয়াত দেয়া হয়েছিল!
এই ধরণের কাছাকাছি আর্গুমেন্ট চলতি শতকের শুরুতে প্রেসিডেন্ট বুশ নাইন-ইলেভেনের টুইন টাওয়ার হামলার পর থেকে দেয়া শুরু করেছিলেন। নাইন-ইলেভেন বা ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পরেই ২০ সেপ্টেম্বর এক সিনেট বক্তৃতায় [BUSH ..“told the nation Monday that the war against terrorism is “a struggle for civilization,”] তিনি স্পষ্ট করে বলেই বসেন “দিস ইস সিভিলাইজেশন’স ফাইট” মানে এটা নাকি সভ্যতার যুদ্ধ বা সভ্যতা প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। যেন কে কত সভ্য তা যুদ্ধে কে হারল বা জিতল তা দিয়ে নির্ণয় করা যায়,করতে হয়। আবার এর ভিতর বুশ ইঙ্গিত দিচ্ছেন তিনি মুসলমানদেরকে এবার সভ্যতা শিখাবেন। যেন একদল জনগোষ্ঠি অন্য দলকে সভ্যতা শিখাতে শিখাতেই আজকের দুনিয়া এজায়গায় এসেছে! এসব কথা বিস্তারে আগে বলেছি।
বলাই বাহুল্য এতে সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ প্রথমত তিনি দুনিয়ার পুরা মুসলমান জনগোষ্ঠিকে নিচা দেখাতে আর অধীনস্ত দেখানোর কসরতে নামতে চাইছেন। দুই, তিনি এখান থেকে ব্যাপারটাকে ‘জাত শ্রেষ্ঠত্ব’ প্রদর্শনের যুদ্ধ করতে চান, এই হুমকি তৈরি করেছেন। ‘জাত শ্রেষ্ঠত্ব’ ভাবে ভাবা বা দেখানোর চেষ্টা এটাই ‘হিটলারিজম’। কেউ নিজে নাকি ‘জাত শ্রেষ্ঠ’ কাজেই অন্য কোন জনগোষ্ঠির সবাইকে দুনিয়া থেকে একেবারে নির্মুল করে দেয়ার কাজটা যেন জায়েজ। এই ঘৃণ্য ও বিপদজনক বয়ান এখানে হাজির করা হয়েছে। এই হল ভয়ংকর খুনির নৃশংসতার পক্ষে অদ্ভুত এক সাফাই এটা। হিটলার নিজেকে জর্মানেরা শ্রেষ্ট জাতি তাই তাদের নীল চোখ,তারা শ্রেষ্ঠ আরিয়ান জাতি ইত্যাদি সাফাই দিয়েছিলেন। সেজন্য তারা ইহুদিদেরসহ দুনিয়া যেকোন অন্য জাতিকে নির্মুল করতে পারে। এই হল হিটলারের বয়ানের সারকথা। এখান থেকেই পরবর্তিতে নুরেমবাগ ট্রায়াল ও সর্বশেষে আইসিসি ২০০১ (বা আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট এক্ট ২০০১) চালু হয়েছে। এই আইন অনুসারে কোন জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদী বা বক্তব্য বা কোন জনগোষ্ঠিকে নির্মুল করা বিষয়ক বক্তব্য দেয়া বা করা এমন যেকোন কাজ সর্বোচ্চ শাস্তিদন্ড দানযোগ্য কাজ।
তৃতীয়ত,সব রাষ্ট্রের মতই আমেরিকান আইন অনুসারে, যে তার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে তাকে সে বিচার করে সর্বোচ্চ বা মৃত্যুদন্ড দিতে পারে। দুনিয়ার প্রায় সব দেশেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার শাস্তি এটাই। কিন্তু বুশের মারাত্মক অন্যায় অবিচারটা হল, নাইন-ইলেভেনের অপরাধীদের ধর্ম কী? প্রেসিডেন্ট বুশ অপরাধীদের ধর্ম – ইসলাম, এর বিরুদ্ধে প্রচার প্রপাগান্ডা নিয়ে মেতে উঠেছিলেন। এটা মারাত্মক বেআইনি। অপরাধীর ধর্মকে নিচা দেখানো এক মারাত্মক অপরাধ। আমরা এখানে সিভিলাইজেশন নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। ফলে এর ফাঁকে আমরা যেন সতর্ক থাকি যে সভ্যতা বা ইংরাজিতে সিভিলাইজেশন শব্দটার অপব্যবহার সম্পর্কে। আমরা যেন সিভিলাইজেশন শব্দটার ব্যবহার কঠিন করে না দেই। আর মনে রাখতে হবে সভ্যতা অন্যকে শিখানোর জিনিষ নয়, যদি না সেটা স্বেচ্ছায় ঘটিত জেনে নেয়া ধরণের কোন ততপরতা হয়।
গৌতম দাস
০৩ ডিসেম্বর ২০২১
লেখক রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
[এই লেখাটা এর আগে এক প্রিন্টেড ভার্সান হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল। ছাপা হয়েছিল “ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন” – এই নামের ছাত্র সংগঠনের এক বার্ষিক সংকলনে। সেটা ছিল গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, তাদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রকাশিত “সভ্যতা ও সংস্কৃতি” এই শিরোনামে এক প্রকাশনায়। সেই প্রিন্টেড সংকলনে এ’লেখা্টার শিরোনাম ছিল “সিন্ধু সভ্যতায়ঃ সভ্যতা মানে কী”। যদিও দুঃখের বিষয় ঐ প্রিন্টেড সাময়িকীর কোন অনলাইন ভার্সান এখনও তাঁরা বের করে নাই। হয়ত পরে করবে। তবে সেই পুরানা ছাপা লেখার একটা পিডিএফ কপির এখানে লিঙ্ক দিলাম। এখানে পাওয়া যাবে। এছাড়া সেই লেখাটারই আরেক ফাইনাল ভার্সান যেখানে এখন প্রচুর সংযোজন-বিয়োজন ও এডিট করে নয়া ভার্সান হিসাবে তা এখানে প্রকাশ করা হল। তাতে আগের শিরোনাম যেটা ছিল তা একটু বদল করা হয়েছে। আর এবার লেখাটা বড় হয়ে যাওয়াতে তা দুই পর্ব করে, এখানে আজ কেবল প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হল। আর এই লেখাটাই ওর দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব আজ ১২ আগষ্ট ২০২৩ প্রকাশিত হল। ]
আপডেটঃ ১২ আগষ্ট ২০২৩ রাত ১০ঃ১০
আপডেটঃ ১২ আগষ্ট ২০২৩ রাত ১০ঃ ৪৬
সর্বশেষ আপডেটঃ ১৫ আগষ্ট ২০২৩ ভোর ০৬ঃ ১২

