সৌম্যদের হিন্দুত্ববাদী উগ্র দেশপ্রেমের সাংবাদিকতা
গৌতম দাস
২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
https://wp.me/p1sCvy-4VZ
[প্রথম কথা হল, আজকের লেখার প্রসঙ্গ এর দুইটা পার্ট আছে। এর প্রথম অংশটা আজকে যেখানে বাংলাদেশের সাথে সরাসরি জড়িত নয়ই বলা যায়। তবে অপর যে পার্ট বা অংশটা সেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কিত তা কাল আনবো। এখানে কেবল এখনকার অবস্থান হল, এটা কাশ্মীর ফোকাস ঘটনা কিন্তু তা মূলত জি-২০ এর সম্মেলন কেন্দ্রিক। চীনের প্রেসিডেন্ট সি আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এরা দুজনের এই সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় এবার জি-২০ সম্মেলন ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এর পিছনের চীন-ভারত বিবাদই হল আজকের প্রসঙ্গ। যেখানে আমরা হিন্দুত্ববাদের আরেক ভয়ঙ্কর দিক দেখতে পাব। ]
প্রথম আলোর দিল্লি প্রতিনিধি সৌম্য বন্দোপাধ্যায়, এবার এসেছেন নিজ দেশপ্রেমের উপর দাঁড়িয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং এর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে যে তিনি কেন জি-২০ সম্মেলনে ভারত সফরে আসবেন না, অপ্নুপস্থিত থাকবেন! তবে এটা জি-২০ সম্মেলন চীন বর্জন করছেন ঠিক তা নয়। তবে রাষ্ট্রপ্রধান হিশাবে সি আসছেন না, বদলে চীনা প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন, প্রতিনিধিত্ব করবেন। আগে বলেছি ভারতীয় জার্নালজমের সমস্যা হল তারা নিজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেধে দেওয়া ব্রিফিং বা লাইনের বাইরে গিয়ে কিছু লিখতে পারে না। আর এতেই তারা অভ্যস্তও বটে। এছাড়া দ্বিতীয়ত, এক উগ্র জাতিবাদ (হিন্দুত্ববাদ) দেশপ্রেমের নামের কোনটা বর্জ্য আর কোনটা খাদ্য তাতে ফারাক করে না বা করতে অক্ষম – এটা সারা ভারত জুড়ে ছেয়ে আছে। আসলে ঘটনা হল তারা মোদি ও বিজেপির স্বার্থকেই দেশের স্বার্থ আর দেশপ্রেমিক কাজ মনে করে মোদির পায়ে পুজা দিয়ে চলেছে!
যেমন এক মজার অভিজ্ঞতার কথা বলি। একবার এক লোক নেদারল্যান্ডে বেড়াতে গেছিলেন তার বউ সেখানে তখন স্কলারশীপে হায়ার স্টাডিতে সেখানে পড়তে গিয়েছিল সেই সুত্রে এই ভ্রমণ। আর ফেরার পথে সেই লোক কলকাতা হয়ে আসছিল। ইংরাজিতে সুভ্যেনির [Souvenir] বলে একটা শব্দ আছে যার সারার্থ হল, তা সংস্কৃত ঘেঁষা বাংলায় বললে হবে “নিদর্শন চিহ্ন”। মানে হল আপনি কোন এক বিদেশভুমিতে ভ্রমনের গেছিলেন; আর সেই সুখস্মৃতির চিহ্ন হিশাবে সেখানকার প্রতীকী কোন বস্তু বা পণ্য তা কিনে বা সংগ্রহ করে “চিহ্ন” সাথে বয়ে এনেছেন। সেটা নিজে কিনে আনা হতে পারে, কেউ উপহার দিয়েছে তাও হতে পারে। এরপর দেশে ফিরে সেই নিদর্শন আপনি ব্যবহার করছেন অথবা নিজ ড্রয়িং রুমে শোকেসে সাজিয়ে রেখেছেন। এই হল, সুভ্যেনির কথার অর্থ-তাতপর্য।
তো নেদারল্যান্ড থেকে কলকাতায় দুএকদিন স্টপ-ওভার করা সেই ব্যক্তির কলকাতায় প্রবেশের সময় তাঁর গায়ে ছিল একটা টি-শার্ট। নেদারল্যান্ডের বিরাট সংখ্যক মানুষ সাইকেলে চড়ে শহরে কাজে বের হয়, সাইকেলের জন্য রাস্তায় আলাদা লেন ইত্যাদি অনেক কিছু আছে। আর সেঘটনা বলছি গত নব্বই শতকের প্রথমার্ধের ঘটনা। তো সেই লোকের গায়ের টি-শার্টে বুকের উপরে খুবই আকর্ষনীয় এক সাইকেলের ছবি আর নিচে ইংরাজিতে নেদারল্যান্ড লেখা ছিল। এই দেখে ঐ লোকের এক পরিচিত কলকাতার স্থানীয় লোক খুব ক্ষেপে গেলেন। ঝারি দিয়ে বলতে শুরু করলেন, “মশায়, আপনি তো খুব খারাপ লোক; নিজে বাংলাদেশি হয়ে নেদারল্যান্ডের জামা গায়ে দিয়ে প্রচার করছেন। আপনার খারাপ লাগছে না, নিজদেশ ফেলে অন্যদেশের প্রচার করতে্…! ইত্যাদি”।
এমন দেশপ্রেমের কোন ঝারি যে হাজির করা যেতে পারে সেটা বুঝতেই প্রথম কয়েক মিনিট যাওয়ার পর এবার সেই বাংলাদেশি অনেক ঠান্ডা মাথায় বললেন, “তার মানে আপনি সুভ্যেনির শব্দটা কখনও শুনেন নাই; তাই শব্দটার অর্থ কী তাও আপনি জানেনই না। এর মানে তো তাহলে পরদেশ ভ্রমণে যাওয়াটাও খুবই খারাপ, কারণ আপনার দেশপ্রেম আছে আর আপনি মহান দেশপ্রমিক! অথচ আরও কড়া কথাটা হল যে তাহলে, আপনার প্রাণপ্রিয় দেশ-রাষ্ট্র ফেলে এর বাইরে ভিনদেশের কোন মানুষের সাথে আপনার কোন ধরণের “হিউম্যান রিলেশন” অনুভব করে ফেলা – এটা তো আরো বিরাট পাপ ও অন্যায় করা। নিজ দেশেওর বাইরে কোন মানুষ এমন মনুষ্য জীবনের প্রতি কোন মানবিক টান অনুভব করা তো তাহলে খুবই অন্যায় কী বলেন? যে অন্যায়ের কোন সুযোগই নাই? সেটা দেশবিরোধী কাজ? যেন সে আপনার সাক্ষাত শত্রু মাত্র?” তাই কী? কী মনে হয় আপনার!
এরপরের পর্ব সংক্ষিপ্ত। বাংলাদেশির শেষ ডায়লগ, “যাক কী আর করা আপনি আপনার দেশপ্রেম বোধ নিজের কাছে যত্নে রাখেন! আমি সরি!!” এই বলে সেই পর্ব শেষ হয়েছিল। আর বুঝেছিলাম ভারতে একেবারে সবখানে ছেয়ে থাকা দেশপ্রেম-বোধ জিনিষটা কেমন! কত গাধা-গরুর কারবার! বলা বাহুল্য এরা একেকটা ঘৃণার ডিব্বা। মানুষ ও তার জীবন এবং এর অফুরন্ত সম্ভাবনার দিকটা সম্পর্কে এরা একেবারেই বেখবর! তাই একচোখা, একদেশদর্শী তাই সংকীর্ণ এমন চিন্তা! যেন হিটলারের বাবা একেকজন এমনই উগ্রতম জাতিবাদি! অথচ নিজের স্বার্থ বা অস্তিত্বটা কী তাও বুঝে না!
ভারতের জাতিবাদ ওদের নিজের জন্যই কত বিপদজনক, তাই এখানে আমল করার বিষয়। এদিকে আর ছয় মাসের মধ্যে ভারতে সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচন মানে মোদির “হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদকে” পাবলিকের মানে ভোটারের মুখোমুখি হতে হবে যে, সেটা আরও আয়ু পাবে কিনা। নাকি মোদি-সহ তার শ্রেষ্ঠত্ববাদকে এই ভোট কোন ভাগাড়ে নিক্ষেপ করবে! তাই স্বভাবতই মোদির দিক থেকেও হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদ, উগ্র জাতিবাদ আর উগ্র দেশপ্রেম ইত্যাদি ধারণাগুলোর ইমোশনাল সুরসুরি তুলে এর সফল ব্যবহার করতে হবে যাতে এই আবেগে ভোটারেরা ভোটবাক্সে মোদির পক্ষে ভরিয়ে ফেলে। অর্থাৎ হিন্দুজাতি-ই দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ এমন উস্কানি চরমে তুলতে মোদি একে চরমে নিবার কোন কসুর ছাড়বে না – আগামি ছয়মাস এটাই আমরা দেখব! কিন্তু সৌম্যের মত দেশপ্রেমিকেরা হয়ত ভাববে তা কেন আমরা তো মোদির মতই দেশপ্রেমিকতা দেখাচ্ছি! মোদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং মেনে সাংবাদিকতা করছি অতএব আমাদের চেয়ে দেশপ্রেমিক আর কে আছে! অথচ তারা বুঝবেনই না বা বুঝতে চান না যে মোদির স্বার্থ আর দেশের স্বার্থ কখনো এক নয়!
“অরুণাচল প্রদেশ” না কি “ঝাঙনান” – এই হল ক্যাচালঃ
ঘটনা হল, ভারত-চীন সীমান্তে ভারতের চোখে যেটা অরুণাচল প্রদেশ চীনের চোখে সেই ভুখন্ড এর নাম ঝাঙনান [Zangnan]; যার সোজা অর্থ দাড়ায় এটা বিতর্কিত ভুখন্ড। আরো সহজ করে বললে এই ভুখন্ড নিয়ে ম্যাপ দু-রাষ্ট্রের কাছে দুরকম – একই কোন কমন ম্যাপের কপি দুদেশের কাছে নাই। সৌম্য এই অরুণাচল নিয়ে একটা রিপোর্ট লিখেছে প্রথম আলোতে গত ৩১ আগষ্ট। যার শিরোনাম “সির দিল্লি সফর এড়াতেই কি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করল চীন”।
অরুণাচল নিয়ে সৌম্য লিখেছেঃ
“মাত্র কয়েক দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় জোহানেসবার্গে ‘ব্রিকস’ শীর্ষ সম্মেলনে সি চিন পিং যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর কিছুক্ষণ কথাও হয়। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা জানিয়েছিলেন, ওই বৈঠকে পূর্ব লাদাখের সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে দুই নেতা সম্মত হয়েছেন।
সেই আলোচনা চীন না ভারত, কার তাগিদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তা নিয়ে পরে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক বাধে। এর চার দিন পর গত মঙ্গলবার চীনের পক্ষে থেকে এক নতুন মানচিত্র প্রকাশ করা হয়। তাতে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চীনকে সে দেশের অংশ দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে পারস্পরিক চাপান–উতোরও অব্যাহত। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ওই মানচিত্র নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে”।
এই বক্তব্য থেকে বুঝার উপায় নাই যে ভারতের দাবিকৃত অরুণাচল প্রদেশ চীনের সাথে একটা বিতর্কিত ভুমি। বরং এখানে উগ্র জাতিবাদী দেশপ্রেমিক সেজে এটা ভারতের ভুখন্ড ধরে নিয়ে এই বয়ানটা তৈরি করা হয়েছে। কোন ইঙ্গিতও নাই যে এটা বিতর্কিত ভুমি! তবে চীন একটা “ডিস্টার্বিং দেশ” যে ভারতকে খালি যেন বিরক্ত করে এই বয়ান হাজির করা গেছে।
লক্ষ্যণীয় যে সৌম্য লিখছেন, “ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চীনকে সে দেশের অংশ দেখানো হয়েছে”। যেন কোন কারণ ছাড়াই – মোদির ভারতের কোন অবদান ছাড়াই এমনটা হচ্ছে। এই বাক্য লিখে সৌম্য অবলীলায় জার্নালিজম ত্যাগ করে এর উপর জায়গা দিয়েছেন নিজ হিন্দুত্ববাদী দেশপ্রেমিকতাকে! কেন এমন কথা বলছি?
সাংবাদিকের কাজ কী? সাংবাদিকতা না দেশপ্রেমিকতাঃ
অরিজিন থেকে যদি শুরু করি। কাশ্মীর এটা ভারতের না পাকিস্তানের ১৯৪৭ সাল থেকেই এটা অমীমাংসিত। বৃটিশ ভারতের কাশ্মীর রাজ্য ছিল একটা প্রিন্সলি স্টেট [Princely State] বা করদ রাজ্য। সংক্ষেপে বললে এর মানে, বৃটিশেরা ভারত দখলের পরেও কাশ্মীর ওর পুরান রাজাদের দ্বারাই শাসিত হতে থাকবে তবে শর্ত থাকবে বৈদেশিক ও সামরিক বিষয়-ইস্যুতে বৃটিশ রাজের কথাই শেষকথা মানতে হবে। আর কাশ্মীরের রাজা বছরে যা রাজস্ব উঠাবে এর একটা অংশ বৃটিশ রাজের সাথে শেয়ার করবে – এসব অর্থে বা শর্তে কাশ্মীর স্বাধীন রাজ্য। যার অর্থ এরা প্রিন্সলি স্টেট। বৃটিশ-ইন্ডিয়ায় এমন ৫৫০ এরও বেশি ছোট বা বড় প্রিন্সলি স্টেট ছিল।
আবার এই প্রিন্সলি স্টেট গুলো নিয়েই ১৯৪৭ সালে আরেক বড় সমস্যা দেখা দেয়। এসময় বৃটিশেরা ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার আইনি মানে হল বৃটিশদের সাথে ঐ প্রিন্সলি স্টেট চুক্তির সমাপ্তি টানা। মানে হল এরপর ঐ রাজারা কোথায় – ভারতে না পাকিস্তানে যোগ দিবে এনিয়ে বৃটিশদের বলবার কোন রাইট নাই।
কাশ্মীর এক মুসলমান জনসংখ্যা অধ্যুসিত কিন্তু হিন্দু রাজার দেশ! ১৯৪৭ সালের পরে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং নেহেরুর সাথে এক একশেসন চুক্তি [ accession pact; রাজার রাজ্যকে কোন প্রজাতন্ত্রে অন্তভুক্তির চুক্তি] করার পর এরা উভয়েই দাবি করতে থাকে যে পুরা কাশ্মীর ভারতের হয়ে গেছে।
উতসাহের ঠেলায় নেহেরু নিজে জাতিসংঘ কী তা না জেনে, নবগঠিত (১৯৪৫) জাতিসংঘের কাছে মতামত চাইলে তারা জানায়, কোন রাজার করা একশেসন চুক্তি বৈধ নয়। কারণ জাতিসংঘের জন্ম ও গঠনভিত্তি অনুসারে কোন রাজা দেশ-ভুখন্ডের কেউ না। বরং ভুখন্ডের বাসিন্দাদের মতামত (রেফারেন্ডাম) ভোটে নির্ধারিত হতে হবে ভুখন্ড কিভাবে শাসিত হবে। তাই জাতিসংঘের রেকমেন্ডেশন যে, রেফারেন্ডাম করতেই হবে; যা আর আজও হয় নাই। অর্থাৎ কাশ্মীর ভারতের নয় লিগালি বা আইনত এটা তাই থেকে যায়। এই ক্ষত ঢাকতে নেহেরূ ভারতের নয়া কনষ্টটিউশনে ৩৭০ ধারা (সাথে ৩৫এ) ধারা যুক্ত করে কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদার রাজ্য (আইনত কভার না হলেও) বলে ভারতে যুক্ত করে নেয়।
গত ২০১৯ সালের মে মাসে মোদি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। আর হবার পরই ৫ আগষ্ট ২০১৯ সংসদে শুধু মাত্র এক ঘোষণা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সারা কাশ্মীর ভারতের অংশ বলে একেবারেই গায়ের জোরের ঘোষণা দেন। ঘোষণা স্বপক্ষ্ব তিনি কোন কারণ উল্লেখ করেন নাই। মানে কেন কিভাবে কাশ্মীর ভারতের এর কোন ব্যাখ্যা অমিত শাহ দেন নাই। আর এই সারা কাশ্মীর মানে হল ভারতের অধীনে অংশ, পাকিস্তানের অধীনে অংশ এবং চীনের অধীনে অংশ মিলিয়ে পুরাটাই।
এব্যাপারে পাকিস্তানের কোন নতুন প্রতিক্রিয়া ছিল না। তবে চীনের প্রতিক্রিয়া ছিল তবে সেটা এক বড় একশনে, কথায় না। এটাই পরের বছর (২০২০) শীত চলে গেলে মে-জুনের একশন যেখানে কমপক্ষে ২০জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল। তবু এটা বড় ঘটনা ছিল না। বড় ঘটনাটা হল, চীন ১৯৬২ সালেরও আগে (১৯৫১-১৯৫৯ পর্যন্ত সময়কালের দখলি ভুখন্ড আর শেষে ১৯৬২ সালে আসাম দখলের পরের কিছু) তার নিজের দাবি করা যে সীমানা ছিল [যার অনেক অংশই ভারতকে আপোষে চীন হস্তান্তর করে দিয়েছিল] সেই ভিত্তিতে সব দখল করে নেয়। কিন্তু মজার কথা হল মোদির সরকার এরপর থেকে ভারতের সংসদে বলে আসছে চীন ভারতের কোন ভুখন্ড দখল করে নাই। কেন?
প্রথম কেন চীন ১৯৬২ সালের আগের সীমানায় ফিরে গেল? আর এমন প্রতিক্রিয়ার অর্থই বাকী ছিলঃ
সবার আগে, কেন চীন-ভারত সীমানা বিতর্ক? – তা নিয়ে একটা তথ্য বেস ফ্যাক্টস জানায় রাখি। বৃটিশ-ইন্ডিয়া সারা ভারত ভুখন্ড-কে অবিতর্কিত রাখতে একটা ব্যবস্থা নিয়েছিল। তা হল, অখন্ড ভারতের পড়শি তা সেকালে যে দেশেরই হোক তার সাথে বসে আপোষ মীমাংসায় ভুখন্ড চিহ্নিত করে এরপরে সেই সীমানা ম্যাপে পর্যন্ত পৌছে যেত। যার একই কপি দুইটা ফটোকপির মত করে দুই দেশের কাছে তা রেখে দেয়া হত। এরপর যেহেতু দুপক্ষের কাছে একই ম্যাপের দুইটাকপি তাই এরপর আর সীমানা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ মেরে রেখে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু একটা ব্যতিক্রম – প্রিন্সলি স্টেট বা করদ রাজ্যগুলোর বেলায়। যেহেতু আইনত করদ রাজ্য গুলো কার্যত স্বাধীন তাই তাদের বেলায় (যাদের ক্ষেত্রে পড়শি বলতে বৃটিশ ভারতের বাইরের কোন দেশ ছিল); এমন কোন বহিঃর্দেশ থাকলে সেক্ষেত্রে আর বৃটিশ রাজ প্রিন্সলি রাজ্যগুলোর বেলায় কোন যৌথ সীমানা টানার কাজ করে নাই। কারণ এ’দায়ভার ঐ করদ রাজার। আর ঠিক এরই ফাঁদে পড়েছিল কাশ্মীর (লাদাখসহ) আর ওপারের চীন। একইভাবে যেটাকে ভারতের দিকে অরুণাচল বা চীনের তীব্বত এর সাথে এভাবে সকল সীমান্ত। এল্ককথায় চীন-ভারতের সীমান্ত বৃটিশ আমল থেকেই পরস্পর সম্মতিতে কখনই মাপাজোখা করা হয় নাই। একারণে, একটা শব্দ চালু আছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি বা LAC)। উগ্র জাতিবাদি ভারতের সরকারগুলো পাবলিকের মনে এটা খুব পবিত্র শব্দ এধারণা দিয়ে রেখেছে। যেন লড়কে লেঙ্গে বলে সীমানা আকড়ে দাড়ানোটাই দেশপ্রেম – এই হল উগ্র জাতিবাদী স্বভাব ও চিন্তা। অথচ দেশের সীমানা নিয়ে পড়শির সাথে আপোষে সীমানা চিহ্নিত করে নেয়াটাই যে সবচেয়ে উচিত কাজ ও পথ – এটা উগ্র জাতিবাদের ডিকশনারিতে নাই। এর বদলে ভারতে বিশেষ করে মোদির ভারতের আছে উলটা অবস্থান। মোদি এখানে এই ইস্যুতে প্রপাগান্ডায় মেতে উঠতে চায়। আর এই উগ্র (হিন্দুত্ববাদি শ্রেষ্ঠত্বের) জাতিবাদের লাইনে মিথ্যা প্রপাগান্ডা করে মোদির বুকের ছাতি ফুলিয়ে যেন সে আজই অন্যের কাছ থেকে ভুখন্ড ছিনিয়ে নিয়ে আনবে সে এত বড় বীর, “দেশমাতার সম্মান” একমাত্র মোদিই রক্ষা করেছে কাজেই মোদিকে এইবার আপনার ভোট টা দেন – এই হল নির্বাচন আসলেই মোদির উগ্র উসকানির বয়ান ও কৌশল!
যেন যুদ্ধ বা যুদ্ধ-ধরণের বিরোধ সংঘাত এড়িয়ে সাজানো বিদেশনীতি ভাল না, এমন ডিপ্লোমেসি বলে দুনিয়াতে কিছু নাই – সেসবই যেন কাপুরুষের কাজ। এটাই উগ্র (হিন্দুত্ববাদি শ্রেষ্ঠত্বের) জাতিবাদের লাইন ও এর বেকুবি চিন্তা। কিন্তু এর লক্ষ্য একটাই – সেটা নিজ ভুখন্ড আদায় করে আনে সেটা অবশ্যই নয়; তাহলে? বরং কথিত দেশপ্রেমের উসকানি সুরসুরি তুলে নিজ ভোটের বাক্স ভরিয়ে ফেলা এই মোদির উদ্দেশ্য! একারণে, ভোটের আগে ভারতে এমন উস্কানি বেড়ে যায়। তাহলে, চীন কেন ৬২ সালের আগের সীমান্তে ফিরে গেল, এর ব্যাখ্যা কী?
চীন কেন ১৯৬২ সালের আগের সীমান্তে ফিরে গেলঃ
মোটামুটি ১৯৭৮ থেকে ১৯৯০ এটাকে বলা হয় চীনের নিজ অর্থনীতিতে প্রথম ডাবল ডিজিট জিডিপির প্রথম দশক। নিজ সেই অভিমুখ টের পেয়ে চীন ১৯৯১ সাল থেকে আপোষে ভারত-চীন সীমান্ত চিহ্নিত করে নিবার প্রস্তাব দেয় ভারতকে। মানে চীন কোন যুদ্ধে জড়িয়ে নিজ উন্নয়ন বা পুঁজির সক্ষমতা নষ্টের বিরুদ্ধে – এটাই এর ভিতরের সুপ্ত ম্যাসেজ। সীমানা বিরোধকে যুদ্ধের দিকে ঠেলা যে গাধামি তা সে জানে। তাই এখানে চীনের ডিপ্লোমেসি ছিল আপোষে সীমানা চিহ্নিত করে নেয়ার দিকে। সাথে যে নীতি চীন অনুসরণ করে তা বলার আগে এলএসি বা LAC কথাটা ভেঙ্গে নেই। ১৯৪৭ সালের স্বাধীন ভারত আর ১৯৪৯ সালের মাওয়ের বিপ্লবের পরের চীন, উভয় পক্ষই সেসময় টের পায় যে তাদের অচিহ্নিত সীমানা আছে। আর তাই যার চোখে যে অঞ্চল স্ট্রাটেজিক্যালি গুরুত্বপুর্ণ মনে হয়েছে সে অংশ তার বলে সে দাবি টাঙ্গিয়েছে (মূল কারণ এগুলো বেশি অংশই জনবসতির এলাকা নয় ) – তার মানে সেটা ছিল মূলত আমার দখলে ওটা আছে বলে দাবিটাঙ্গানীর পর্যায় সেটা। এটাই পরবর্তিতে ডকুমেন্টে বা পরসপরের মধ্যে চিঠি চালাচালিতে এলএসি এই শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করা হত বা হয়েছিল। যার আসল মানে হল, “ঐ অঞ্চল তার সেটা উভয় পক্ষ একমতে না মানলেও এখন ওটা তার দখলে” – এই অর্থে। কিন্তু ভারতের উগ্র জাতিবাদ যে ক্ষতিটা করেছে যে, পাবলিক পর্যায়ে এটাই তাদের আসল সীমানা এই ধারণা দিয়ে পাবলিকের মধ্যে উস্কানি তুলে গেছে। এখনও করছে যেটা সৌম্যের লেখাতেও বর্তমান।
এখন সোজা প্রসঙ্গে ঢুকবো। চীন ১৯৯১ সালের ওই আপোষে ভারত-চীন সীমান্ত চিহ্নিত করার প্রস্তাব থেকেই এই প্রথম সীমানার অনেকগুলো ভুখন্ড অংশের দাবি সেটেলমেন্টে একমতে পৌছেছিল। এক্ষেত্রে চীন যে নীতি নিয়েছিল বলে মনে করা হয় তা হল, যেসব ভুখন্ড চীনের কাছে স্ট্রটেজিক্যালি তেমন গুরুত্বের নয় আর তাতে যদি ভারতের দাবি থাকে তবে তা ভারতের অনুকুলে চীন ছেড়ে দিয়েছে। একারণে এসময়েই এলএসি কথাটা আরো মিনিংফুল ও চালু হয়েছিল। এভাবে ১৯৯৪-৯৬ প্রতিবছর নতুন নতুন ভুখন্ড ভারতের অনুকুলে চীন ছেড়ে দিয়েছিল।
কিন্তু, ২০১৯ সালের ৫ আগষ্ট সংসদে ভারতীয় কনষ্টিটিউশনের ৩৭০ ধারা বাতিল বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঘোষণা করা ও সারা কাশ্মীরই ভারতের বলে দাবি – এটা চীনকে অসন্তুষ্ট করেছিল মারাত্মকভাবে। কারণ, উপরে যেভাবে বললাম – “এভাবে ১৯৯৪-৯৬ প্রতিবছর নতুন নতুন ভুখন্ড ভারতের অনুকুলে চীন ছেড়ে দেয়া” – এভাবে আলাপ-আলোচনা করে কাশ্মীরের লাদাখ সীমান্তের সীমানা বিতর্ক সমাধান মানে তো যে কিছু কিছু বিতর্কিত ভুখন্ড চীন ভারতকে ছেড়ে দিচ্ছে। চীন-ভারত আপোষ হয়ে গেছিল। যার সোজা মানে ওসব ভুখন্ড তাহলে অবশ্যই আগে চীনের ছিল – এটা ভারত চীনের কাছে স্বীকার করে নিয়েছিল! তাহলে ভারত চীনের সাথে আপোষ আলোচনা করে ভুখন্ড নিবে আবার দাবিও করব যে সারা কাশ্মীরই ভারতের – এ তো স্ববিরোধী কথা; এদুই কথা তো একসাথে চলবে না! কিন্তু মোদি-অমিতের উগ্র জাতিবাদের উস্কানিতে এমন দাবি করেছিল! একারণেই চীন ১৯৬২ সালের আগের চিহ্নিত ও ভারতের দখলে থাকা চীনা সীমানায় ফিরে তা বার দখল করে নিয়েছিল। আর একারণেই চীন মোদিকে বাধ্য করেছিল যে চীন কোন ভুখন্ড নয়া দখল করতে নাই। আর সেকথাটাই – নিজের ইজ্জত বাঁচাতে – মোদি ভারতীয় সংসদে বলেছিল যে চীন কোন ভুখন্ড ফিরে সেবার (২০২০ সালে) দখল নেয় নাই। কারণ যদি বলে নিয়েছে তবে তাকে সে ভুখবন্ড উদ্ধারে তাকে যুদ্ধে যেতে হয়। আর এর চেয়েও বড় কথা ৫ আগষ্ট্রে সংসদে ঘোষণা করার কারণেই যে এইভারতের এই দুর্ভোগ তা প্রকাশ হয়ে পরত – সেটাই মোদি লুকাতে একাজ করেছিল।
এককথায় বললে, সেই থেকে চীন-ভারত সীমানা বিষয় প্রসঙ্গে চীন আর কখনও মোদি সরকারের কোন কথাই মানে না, বিশ্বাস করে না। বরং সামরিক চাপের মধ্যেই রেখে চলেছে। আর মোদির নিজ ডেকে আনা এই দুর্ভোগ আর অপমান! আর একারণেই আবার চীন ‘অরুণাচল’ একইভাবে পুরাদমে দখলে রেখে দিল।
এখন অবস্থা হল, ভারতের কোন সাংবাদিকের বলার সাহস নাই যে বলতে পারে, ২০১৯ সালের ৫ আগষ্টে সংসদে অমিত শাহের ঘোষণা সব সমস্যা অসন্তোষের মূল কারণ! এছাড়া এটাও সাংবাদিকদের মুরোদ নাই যে বলে, বুকের ছাতই দেখিয়ে বিতর্কিত সীমান্ত দখলের পক্ষে নির্বাচনের আগে সবসময় বিজেপির উগ্র-দেশপ্রেমের কথা বলে ভোটারদেরকে জজবা-জোশ তুলে ভোটের বাক্স ভরাবার কৌশল – এটাই বিজেপি-আরএসএস লক্ষ্য ও কাজ। আর এটাই দেশ্বের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর কাজ ও ততপরতা! কাজের মোদির আমলের সরকার কখনও সীমান্ত সমস্তা মিটাতে আগ্রহী না, মিটাবে না! কিন্তু ভোটের বাক্সে তা অপ-ব্যবহার করবে – এই হল তাদের নীতি!
অথচ সৌম্যও এসব কথা বলতে পারে না কারণ উলটা উগ্র জাতিবাদিরা তাকে দেশদ্রোহি বা দেশপ্রেম নাই বলে প্রপাগান্ডা করতে পারে – এই ভয় আছে। তাই সৌম্য বরং নিজের গা ভাসিয়ে আরেক প্রপাগান্ডায় যোগ দিয়েছে। বলছে “… হয়তো শি জিন পিং ভারতে না আসার একটা কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন”। অথচ ব্যাপারটা একেবারেই সত্যি না।
ফ্যাক্টস হল, প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে গত ২০ মে এই সৌম্য-এর আরেকটা রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোতেই। যার শিরোনাম হল, “কাশ্মীরে জি–২০ বৈঠকে আসছে না চীনও” । কারণ কি?
কাশ্মীর বিতর্কিত ভুমি সেখানে ভারতের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের একটা পর্ব (ট্যুরিজম) ডাকা মানে ঐ বিতর্কে জি-২০ অংশগ্রহণকারীদের দেশগুলো যেন তারা ওর ভুমি বিতর্কে ভারতের পক্ষ নিল – এমন ইঙ্গিত ভারত দাবি শুরু করতে পারে! আর তাতে কাশ্মীরের ভুমিতে অংশ নেয়া দেশ অপ্রয়োজনে সে বিতর্কে প্রবেশ করে ফেলবে। স্বভাবতই এসব অসৎ ও কূটবুদ্ধির ভারতিয় ততপরতার সাথে চীন যুক্ত হতে চাইবে না। সৌম্য ঐ রিপোর্টে নিজেই লিখেছিল, “চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গতকাল শুক্রবার এ খবর জানিয়ে বলেন, চীন ওই সম্মেলনে যোগ দেবে না। এর আগে চীন অরুণাচল প্রদেশের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও যোগ দেয়নি”। আর এখন একদম ভোলেবাবা সেজে সৌম্য উলটা চীনা প্রেসিডেন্ট সি এর উপর দোষ চাপিয়ে উগ্র জাতিবাদি এক ভারতীয় দেশপ্রেমিক সাজতে চাইছে!!!
কী অদ্ভুত এই মানসিকতা! এক অদ্ভুত উগ্রতার হিন্দুত্ববাদি শ্রেষ্ঠত্ব বোধ!
ঘটনা হল, ভারতের এই উগ্র হিন্দুত্ববাদি দেশপ্রেম ভারতের সাথে অন্যদেশের কোন সীমান্ত বিরোধ থাকলে খুশি হয়! কেন? কারণ এটাকে লড়কে লেঙ্গে ভাব-জোশ তুলে সেই দেশপ্রেমের আবেগকে বেচাবিক্রি করে হিন্দুত্ববাদিরা তা ভোটের বাক্স ভরাতে চায়। এই হল মোদির বুকের ছাতি দেখানো দেশপ্রেমে; এটাই বিজেপি-আরএসএস এর রাজনীতি। কিন্তু মজার কথা হল এরা সত্যি সত্যি বাস্তবে দেশের জন্য প্রাণ দেয়ার জন্য প্রস্তুত না, সেটা তাদের লক্ষ্যি নয়। একারণে, সত্যি প্রাণ দিবার অবস্থা তৈরি হলে তারা কেটে পড়ার তালে থাকে। আর সীমানা-বিরোধে চীণের সামরিক মারের খাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে দ্রুত আপোষ করে নেয়। এনিয়ে ২০২১ সালের এমনই এক আপোষ নিয়ে আমার পুরানা লেখায় এখানে দেখতে পারেন। আমার আর্টিকেলের তথ্যের সোর্স ভারতের এক অবসরে যাওয়া লে জেনারেল পানাগ [Gen. Panag] । তিনি প্রায়ই পত্রিকায় কলাম লিখেন। আর চীন-ভারত লাদাখে সুনির্দিষ্ট যে ভুখন্ড নিয়ে বিতর্ক সেটার নাম ‘প্যাংগং সো (Pangong Tso) । এটা চীন-ভারতের লাদাখ এলাকার একটা বিতর্কিত ভুখন্ড। সেখানে চীন আগে ভুখন্ড এলাকা ভারতের হাতে ছেড়ে দিলেও ২০২০ সালে চীনেরর দাবিকৃত পুরানা ১৯৫৯ সালের সীমানা অনুসারে ভারতের হাতে ছেড়ে দেয়া এলাকা পুনঃদখল করে বসে। আর চীনের সেই দাবি অনুসারে সেটা মেনেই সেবার ২০২১ সালে মোদি চীনের দাবি আপোষে মেনে নেওয়ার শর্তে উভয় পক্ষ সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ নিয়েই জেনারেল পানাগ বলছেন, মোদির ভারত এটা মেনে নিয়েছে কারণ, ভারতের সামরিক যোগ্যতা-সক্ষমতা নাই এই পরিস্থিতিকে বদলে দিতে [ because India has no military capability to alter the situation….it is “good for the long term peace”]। তাহলে মোদি দেশপ্রেমের জিগির তুলে চীনের সাথে লাগতে গেছিলেন কেন? কারণ, ভোটের বাক্সের হিসাব। দেশপ্রেমের জিগির জোশ বেচে ক্ষমতায় আসীন হবেন মোদি! কিন্তু ঘটে গেছিল উলটা…।।
সৌম্য এসব ঘটনার কী ব্যাখ্যা দিবেন? আসলে সবই জানেন তারা কারণ জেনারেল পানাগ এর ঐ বক্তব্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার ইকোনমিক টাইমসে ছাপা হয়েছিল। একটা লোক টু শব্দ করে নাই তাতে। অর্থাৎ এটা জানা সত্বেও উগ্র জাতিবাদি হিন্দুত্বের দেশপ্রেমের তলেই সৌম্যসহ সকলেই আশ্রয় নিবেন। আর এখন সব দোষ চীন বা অন্য পড়শি রাষ্ট্রের বলে দায় চাপাবেন। অসততার সাথে হিন্দুত্ববাদের এই খেলা আর কতদিন?
ইতোমধ্যে ভারতের মিডিয়া জগতে একই ভাবে মোদি-ই সত্য এবং সহি বলে জয়গান করে মোদির থেকে ফান্ড হাতানোর এক ধরণের সাংবাদিকতাও শুরু হয়েছে। একাজে নামকরা “দ্যাপ্রিন্ট” গ্রুপের সম্পাদক শেখর গুপ্তা অগ্রগামী। তিনি বিতর্কিত কাশ্মীরে জি-২০ এর ট্যুরিজম সেশন অনুষ্ঠানের যে স্থান ফেলেছেন তাই এটার সমর্থনে এটা দেশপ্রেমিক কাজ বলে সম্পাদকীয় কলাম লিখেছেন। দাবি করেছেন এতে চীনসহ কিছু ইসলামি দেশ যোগ দিতে অস্বীকার করলেও সেটা ভারতের আমলে নেওয়ার কিছু নাই। কারণ মোট অংশগ্রহণকারি দেশের এটা মাত্র ২০% দেশের অনুপস্থিতি!!! বলাই বাহুল্য এমন কথা বিশ্বাস করা কোন সুস্থ মানুষ বলে না তার কাজ না। তবে, বলে কোন ফান্ডের ইশারায়!



Thank you for letting us know the truth. Love your analytical writing.
LikeLike