বেনজীর-আজিজদের ‘প্রটেকশন’ দেয়া বা না দেয়ার তর্কের ফাঁকে আলী রীয়াজ!


বেনজীর-আজিজদের ‘প্রটেকশন’ দেয়া বা না দেয়ার তর্কের ফাঁকে আলী রীয়াজ!
গৌতম দাস
৩০ মে ২০২৪
https://wp.me/p1sCvy-5E3

‘বেনজীর-আজিজকে সরকার প্রটেকশন দেবে না’

তামাসাটা বেশ ভাল জমেছে! বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোতে একটা নতুন পপুলার শব্দ চালু হয়েছে আজিজ-বেনজীর। এমন এই খবরের শিরোনাম হল আজিজ-বেনজীর এর “প্রটেকশন”! আবার পাঠকও ধরে ফেলেছে এই নয়া শব্দের অর্থ কী; যদিও এখনও বিশ্বাস করে নাই। এমনিতেই, “প্রটেকশন” – এটা সঠিক শব্দ একেবারেই নয়। তবু সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টা যারাই “প্রটেকশন” শব্দটা ব্যবহার করছেন। আর এতে তাদের ধরে নেয়া হয়ে গিয়েছে যেন এই সরকারের স্বাভাবিক কাজ হচ্ছে অসৎ, দুর্নীতিবাজ, পাবলিক মানি লুটেরা সরকারী কর্মচারীদেরকে “প্রটেকশন” দেয়া। যার মানে হল, আদালতসহ রাষ্ট্র-সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান অসৎ, দুর্নীতিবাজ, পাবলিক মানি লুটেরাদের আইনের আওতায় আনার জন্য বিচারের দায়ীত্বপ্রাপ্ত এবং স্টাডিং অর্ডারে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় অফিসগুলো – এরা যেন ততপর না হয়, দেখেও না দেখে বা কেউ “মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণী” এই পক্ষের সদস্য বলে অজুহাতে ছাড় দেয় বা এড়িয়ে যায়; এভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে  খামোশ করে রাখাই যেন সরকারের কাজ। আর তাই এইবার আজিজ-বেনজিরের কেসে তারা ব্যতিক্রম করবে। তারা আজিজ-বেনজিরকে এবার বাঁচাতে যাবে না। যার সোজা অর্থ হল, গত ১৬ বছর সরকার এভাবে চলেছে বলেই  এই “প্রটেকশন” শব্দের উতপত্তি। নইলে দুদক বা আদালত ধরণের প্রতিষ্ঠান এরা তো কনষ্টিটিউশন অনুযায়ী ‘চোর’ ধরার স্টাডিং অর্ডারে দায়িত্বপ্রাপ্ত; মানে এরা এসব অপরাধের বিরুদ্ধে ততপর হতে চাইলে তো কোন মন্ত্রী বা সরকার আদেশ-নির্দেশ দিছেন কিনা সেজন্য অপেক্ষার দরকার নাই। অর্থাৎ এখানে কাউকে অপরাধ থেকে বাঁচাবে, আড়াল করবে যেটাকে “প্রটেকশন” শব্দ ব্যবহার করে তারা বুঝিয়েছেন, কথা বলছেন – এই শব্দ ব্যবহারের তো কোন জায়গাই নাই। কিন্তু গত ১৬ বছর সরকার এভাবেই মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণী বা চেতনা শ্রেণী নামে অথবা এই শ্রেণীকে রক্ষার নামে আজিজ-বেনজীর টাইপের লোকেরা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি – এরা যেন কার্যত আইনের উর্ধে – এই ধারণাই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে!  আর তা হয়েছে বলেই এই “প্রটেকশন” শব্দের উতপত্তি হয়েছে। গত ১৬ বছর যে সরকার এমন প্রাকটিস চালু রেখেছে – ত যেন সরকার এভাবে “প্রটেকশন” শব্দ ব্যবহার করে সরকার তার সেই অসৎ প্রাকটিসকেই স্বীকার করে নিল! সরকারের কাজের স্টাইল ও অভ্যাসই আছে বলেই এবার, আজিজ-বেনজির কেসে বলছে তারা “প্রটেকশন” দিবে না! তাই এককথায় সরকারের “প্রটেকশন” শব্দ ব্যবহার  করে সরকারের অসৎ প্রাকটিসকেই যে স্বাভাবিক গণ্য করে ফেলেছে সেটা পরোক্ষে-অজান্তে বলে ফেলেছে। সারকথায় এবারের আজিজ-বেনজির কেসে সরকার যে – অসৎ প্রাকটিসকেই স্বাভাবিক ধরে নিয়ে চলেছে- সেটা করবে না। মানে ব্যতিক্রম করবে, এই হল সরকারের “প্রটেকশন” শব্দের অর্থ ও ম্যাসেজ!

আবার শব্দের আরো মারপ্যাচ আছে। যেমন উপরে যা লিখলাম সেখানে “প্রটেকশন” শব্দটা নেগেটিভ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ নাগরিক ও রাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে “প্রটেকশন” খুবই ইতিবাচক শব্দ। রাষ্ট্র নাগরিককে সুরক্ষা বা “প্রটেকশন”[protection] দিবে এটাই তো রাষ্ট্রের কাজ। এই মুখ্য উদ্দেশ্যেই তো নাগরিকেরা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। অর্থাৎ লক্ষ্যের দিক থেকে “প্রটেকশন ইজ ফান্ডামেন্টাল” – চাওয়াটা এমন। অথচ বাস্তবে এখানে “প্রটেকশন” শব্দটা নেগেটিভ অর্থে ব্যবহার করেছে – অসৎ প্রাকটিসকেই স্বাভাবিক – মনে করা সরকার।  আর তাই, এবার এখান থেকেই  অনেকে দাবি তুলেছে যে অসৎ প্রাকটিস বাদ রেখে ফেলে দিয়ে নাগরিক সুরক্ষাই বরং সরকারের কাজ। এমনকি একটা ব্যক্তি-নাগরিকের নামে বড় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ এসেছে এমন যদি হয়ও সেক্ষেত্রেও, ঐ অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও “প্রটেকশন” দেয়াই সরকারের কাজ! আর এটাই “প্রটেকশন” শব্দের ইতিবাচক, সঠিক ও উপযুক্ত ব্যবহার। নাহলে কী হবে?
সরকার যদি সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিকে কোন ফিজিক্যাল আক্রমণ থেকে প্রটেকশন দিয়েই ঐ ব্যক্তিকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি না করে তবে তো আবার পাবলিক বিক্ষুব্ধ হবে। আর এক পর্যায়ে পাবলিক হয়ত  নিজেই ঐ অপরাধী-অত্যাচারীকে শাস্তি দিবার জন্য প্রকাশ্যে নিজ হাতে পাবলিক লিঞ্চিং [public lynching]. যাকে আমরা হাটুরে মার বা গণপিটুনি বলি তেমন একটা কিছুতে কথিত অপরাধীর মৃত্যু হয়ে যেতে পারে; যেটা একেবারেই কাম্য নয়।

আবার একটু পিছনে ফিরব। নয়া মিডিয়া শব্দ আজিজ-বেনজীর এর অর্থ অনেকেই জানলেও এখানে সব পরিস্কার রাখাই ভাল। এখানে আজিজ মানে হল, ২০১৮ সালের হাসিনাকে বিজয়ী ঘোষণার নির্বাচন ঘটানোর নায়ক সাবেক এই সেনাপ্রধান, জেনারেল আজিজ আহমেদ আর, বেনজির মানে হল সাবেক র‍্যাব প্রধান ও পরে পুলিশ প্রধান হয়ে অবসরে যাওয়া বেনজির আহমেদ।  আর এই আজিজ-বেনজীর শব্দযুগল মানে যেন এক দড়িতে ফাঁসি চাওয়া হচ্ছে এমন এক ইঙ্গিতও আছে!  এদুই নামের বিরুদ্ধে কমন অভিযোগটা হল এরা সীমাহীন দুর্নীতি, অবৈধ আয় লুটপাট ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারকারী। যেন এরা, হাসিনার জন্য কিছু বিরাট কাজ করে দিয়েছে আর এরই কিছু “বিনিময়-মুল্য” নিয়েছে তাঁরা!  আজিজের বেলায়, তিনি সেনা প্রধানের পদ-পদবী ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজ সব অপরাধী ভাইদেরকে  নিজ বাপ-মায়ের নামসহ একেবারেই সব ডাহা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ন্যাশনাল আইডি আর পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন যা, কোন ছোটখাট না মারাত্মক অপরাধের অভিযোগ। এছাড়া পদ-পদবির জোরে যদি এমন করাই যায় তবে আর কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারের আইডি আর পাসপোর্ট প্রকল্প করার দরকার কী ছিল? আর এর চেয়েও বড় কথা আজকাল আমাদের গ্রামগুলোর যেকোন মানুষও সম্ভাব্য বিদেশগামী প্রবাসী। এই অর্থে দেশ-বিদেশে এর ফারাক অনেক কমে গেছে। মানে হল, “আইডেনটিফিকেশন” – আপনি দেশ বা বিদেশে যেখানেই থাকেন না কেন – আপনি কে, পরিচয় বা রাষ্ট্রীয় আইডেনটিটি কী? এটা এখন একালে খুবই গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের রাষ্ট্র যদি নাগরিক-ব্যক্তির আইডেনটিটির নিশ্চয়তার দিবার অথরিটির ভুমিকার ক্ষেত্রে শৈথিল্য  মানে  ন্যাশনাল আইডি আর পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে দেশ-প্রশাসনেরই বিশ্বাসযোগ্যতাই নিচে নামিয়ে ফেলে ধুলায় মিশায়ে নষ্ট করে ফেলেন তবে যেকোন বিদেশি রাষ্ট্রই আমাদেরকে আর গ্রহণ করবে কেন? তারা তো প্রবেশ করতেই দিবে না। সন্দেহ করবে আর সেখান থেকে শুরু হবে আমাদেরকে আরো নিচা চোখে দেখা! আমি নিশ্চিত জেনারেল আজিজ এসব গভীর দিকের নজর করেন নাই; বরং সারা দেশের প্রতিটা মানুষের মৌলিক স্বার্থ পায়ে দলেই কেবলমাত্র নিজ অপরাধী ভাইদের রক্ষাই তাঁর একমাত্র স্বার্থ-জ্ঞান করে সেনাপ্রধান হয়েও এসব কাজ করেছেন।
আর ওদিকে বেনজির এর কথা বলে শেষ হবে না। কেবল এবার দুদকের আদালতে যে মামলা তাতে অবৈধ অর্থে ৬২১ বিঘার জমির মালিকানার কথা আছে; সাথে অন্যান্য প্রায় সব ধরণের দেশে-বিদেশে সম্পদের কথাও!

বিবিসি লিখেছে, “আইনজীবীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত আদালত বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের যে সব সম্পদ জব্দ বা ফ্রিজকরার নির্দেশ দিয়েছেন তার মধ্যে আছে ঢাকার গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাংক হিসেব, তিনটি শেয়ার ব্যবসার বিও অ্যাকাউন্ট, প্রায় ৬২১ বিঘা জমি, উনিশটি কোম্পানির শেয়ার এবং ত্রিশ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র”।

আবার, এছাড়া আদালতের মুল আবেদনে বলা হয়েছে, বেনজির তার সারা চাকরি জীবনের বেতন ও সুবিধাদি সব মিলিয়ে কোন ব্যয় ছাড়াই মোট আয়ের মুল্যমান ২ কোটি টাকার নীচে। অথচ তাঁর যে সম্পত্তির কথা বলা হচ্ছে এর মুল্য কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকারও বেশী। এটা কিভাবে সম্ভব?

সেখানে বলা হয়, অথচ ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট
আয় করেছেন
এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা। এর বাইরে পদবি অনুযায়ী পেয়েছেন আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা।

বেনজীর ও আজিজদের বিচারের মুখোমুখি করছে আওয়ামী লীগঃ
এবিষয়ে গতকাল ছিল খুবই এক সিরিয়াস দিন, তা বলা যায়। কেন তা বলছি?
বেনজিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রিপোর্ট করেছিল বসুন্ধরা গ্রুপের কালের কন্ঠ, সেই গত ৩১ মার্চ ২০২৪।  তখনও কিছুই জানা যায় নাই যে এই রিপোর্ট থই পাবে কিনা!! এরকম হাইকোর্টের নির্দেশ এস আলমের নামেও এসেছিল। কিন্তু দুসপ্তাহ পরে তা উর্ধতন কোর্টে খারিজ করে দিয়েছিল। কাজেই এসব যে আস্থা বিশ্বাস রাখার মত ঘটনাবলী নয়, আম-পাবলিকের অনুমান এরকমই। এককথায় তারা এটাকে বলে আই-ওয়াস!  কিন্তু এরপরেই এলো জেনারেল আজিজের উপর আমেরিকান পদক্ষেপ এর নিউজ। আর তা থেকেই এক-পা দুই-পা করে আগাতে আগাতে  ওবায়দুল কাদেরের বিবৃতি আসল যে এতে লীগের কোন দায় নাই কারণ তারা অবসরপ্রাপ্ত। কিন্তু সপ্তাহ দুই পরে দেখা গেল অন্যকিছুর ইঙ্গিত! সেটা এলো আবার নয়া অর্থমন্ত্রীর মুখ দিয়ে। এবারের অর্থমন্ত্রী পেশাগত ভাবে কূটনীতিক ক্যাডার, পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। কিন্তু এবার তিনি অর্থমন্ত্রী কারণ সরকার ডলার বা বৈদেশিক মদ্রা সংকটে। তাই সারাদিন কাটে তাঁর আমরা পাবলিকলি তাকে দেখি একটা সোফায় তিনি বসে আছেন বা কথা বলছেন দেশি-বিদেশিদের সাথে। অর্থাৎ ডলার আনার কূটনীতি ততপরতায় আছেন তিনি।   এদিকে বাজেটসহ অর্থ-মন্ত্রণালয়ের বাকি কাজে আমরা দেখছি একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তিনিই সামলাইতেছেন। মানে কাজ ভাগ করা হয়েছে। তা হোক, কিন্তু আমাদের আগ্রহ অন্য জায়গায়। গত ২৬ মে এই অর্থমন্ত্রী একটা কথা বলেছেন বাজ পড়ার মত। কিন্তু মন্ত্রীর লো প্রফাইল, অরাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্টডের জন্য সম্ভবত সেটা আম-পাবলিক লেবেল আমল করতে রাজি হয় নাই।
এমনিতে, অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁর জেনারেল আজিজকে নিয়ে আমেরিকান নিষধাজ্ঞা বা পদক্ষেপ যা নিয়েছে তাতে এর অর্থ তাতপর্য কী – এটা ঠিক অর্থমন্ত্রীর ইস্যু না। আর জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঠিক অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ এক্তিয়ার না। বরং দুদক ও আদালত ধরণের অফিসের ইস্যু। কিংবা বড় জোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিছু যদি নিজের ইস্যু আছে মনে করে। অথচ তিনি বলেছেন – ‘সরকার কিছু করেনি মানে সেনাবাহিনী কিছু করবে’, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ সম্পর্কে  এটা ছিল অর্থমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া এবং এটাই মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছিল!
সত্যি বলতে কী খবরটা পড়ার পর কিছুটা বিরক্ত লেগেছিল।  কারণ খবরের শুরুর নাইনটা হল, “অবসরে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ব্যবস্থা নেবে”। কথা হল, সেনাবাহিনী যদি ব্যবস্থা নেয়ও তো এই সেনাবাহিনী কী অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে? অবশ্যই না। তাহলে?
এর মানে অর্থমন্ত্রীর কথা এরপরেও যদি সত্যি হতে হয় তবে এর একটাই অন্য সুযোগ আছে। তা হল, প্রধানমন্ত্রী আর সাথে পুরা ক্যাবিনেট অথবা বিশেষ দু-চারজন মিনিষ্টার মিলে (অর্থমন্ত্রী যাদের একজন) কোন আসরে বসে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যেটার মুখপাত্র অর্থমন্ত্রী হলে বা না হলেও অর্থমন্ত্রীই সেসব কথার উপর দাঁড়িয়ে হয়ত একথাগুলো বলছেন। এমন কথা মনে হবার পিছনে আরেকটা কারণ আছে। প্রথম আলোর ওই রিপোর্টের পরের বাক্য দেখেন। বলছে, “ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে” অর্থমন্ত্রী আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে … কথা বলছিলেন। এছাড়া ঐ একই রিপোর্ট আরেক স্থানে অর্থমন্ত্রী বলছেন,  ‘এখন ঋণখেলাপিদের ধরতে হবে”।

অর্থমন্ত্রী নিজেই হঠাৎ বলেন, ‘এখন ঋণখেলাপিদের ধরতে হবে।’ এ বাক্য শেষ করার পর চুপ থাকলে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘পারবেন? ঋণখেলাপিরা তো অনেক শক্তিশালী।’ তখন তিনি বলেন, ‘দেখা যাক পারি কি না।
আপনারা দেখছেন, সাবেক পুলিশপ্রধানের (বেনজীর আহমেদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁর কি ক্ষমতা কম ছিল?’

এমনকি তিনি বেনজিরের বিরুদ্ধেও একই ধরণের কথা বলেছেন যে “…সাবেক পুলিশপ্রধানের (বেনজীর আহমেদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁর কি ক্ষমতা কম ছিল?”
এথেকে একটা অনুমান হচ্ছিল যে কিছু একটা হতে যাচ্ছে। কিন্তু অন্তত প্রধানমন্ত্রী নিজে বা না হলে ওয়ায়দুল কাদের এনিয়ে একই ধরণের কিছু বলেন কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখা! হা ঠিক তাই! গতকাল বুধবার ছিল সেই দিন। ওবায়দুল কাদের বলেন,.”..বেনজীর ও আজিজদের বিচারের মুখোমুখি করছে আওয়ামী লীগ: ওবায়দুল কাদের”আওয়ামী লীগ বিচারের মুখোমুখি করছে – এটা তো একেবারেই নতুন ডায়লগ। কারণ সপ্তাহ-দশদিন আগে এনিয়ে কাদেরের বক্তব্য ছিল, ওরা দুজন এখন অবসরে যাওয়া ফলে সরকারের দায়দায়িত্ব নাই – ধরণের।
এবং একই দিনে একটিভ আরেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও একই কথা বলেছেন; আরো তিন মন্ত্রীর সাথে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সভা শেষে মিডিয়ার কাছে। সালমান বলেছেন, (তিনি কাদেরের রেফারেন্সেও কিছু কথা বলেছেন), “বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে সরকার কোনো ধরনের প্রটেকশন [সুরক্ষা] দেবে না এবং দেশের আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে

সালমান রহমানের গুরুত্ব কী ও কেনঃ
সুনির্দিষ্ট এক্ষেত্রে সালমান রহমানের গুরুত্ব কী? যেখানে বাকি আরো অনেক সালমানের মত উপদেষ্টারা পাবলিক ডিল কমই করেন? এক্ষেত্রে সম্ভাব্য জবাবটা হল, যেকোন কারণেই হোক আমেরিকার সাথে হাসিনার যেকোন ডিল বা কী দিলে কী পাব ধরণের প্রস্তাব চালাচালিটা দৃশ্যতঃ সালমানের মাধ্যমেই করার একটা চর্চা তৈরি হয়েছে। এবং উভয়দেশ বা পক্ষই এটা ব্যবহার করতে আগ্রহী তা দেখা যায়। এটাই সালমনের গুরুত্ব অনেক মন্ত্রী বা ওবায়দুল কাদেরের থেকেও অনেক সময় বেশী ওজনদার হতে দেখা যায়। তাহলে কী দাঁড়ালো?

দাঁড়ালো যে আজিজ-বেনজীর  এর পক্ষে “নো প্রটেকশন” এর আওয়াজ – এটা খুব সম্ভবত এদেরকে বলির পাঁঠা বানিয়ে ফাঁসিয়ে বা ডুবিয়ে দিয়ে সরকার ভেসে উঠতে চায়, নিজের ক্রেডিবিলিটি বা বিশ্বাসযোগ্যতা ও সক্ষমতা দেখাতে চায়। আর এটার বিনিময়ে আমেরিকার কাছে তাদের কিছু চাওয়ার আছে সম্ভবত!
যেমন এবার ল্যু এলে পরে সরকার র‍্যাবের [RAB] নিষেধাজ্ঞা তুলতে কী একশন সরকারকে করে বা নিয়ে দেখাতে হবে যেন তাই জানার মহড়া হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বেনজিরের বিরুদ্ধে একশন এবং সরকার একেবারেই যদি তাঁর হাত ছেড়ে দেয় – এটা তো একটা ভাল পদক্ষেপ হিসাবে সরকার আমেরিকার কাছে তখন এটা বেচতে বা তুলে ধরতে পারে। ওদিকে আবার র‍্যাবের প্রধান বদলাতে আগ্রহ হয়েছে সরকারের। আর কাকে করা হবে তাতে দেখা যাচ্ছে যে আমেরিকার স্যাংশনে খেয়ে বড় দাগী যে সেই-ই যেন বড় ক্যান্ডিডেট – এই নীতি এবার ব্যত্যয় ঘটেছে। নিষেধাজ্ঞা খাওয়া (তখন তিনি পুলিশ প্রধান) বেনজিরকে জাতিসংঘ ভিজিটে যাচ্ছে এই উসিলায় সরকার স্যাংশন খাওয়া বেনজিরকে আমেরিকা ঘুরিয়ে এনে তাতে নিজের সাফল্য দেখেছিল। যার নিট লাভ হলো স্থানীয় আওয়ামী লীগারদের নিয়ে তাঁর এক হোটেল-সভা করা। অথচ তিনি তো তখনও সরকারী কর্মচারি!!! অবশ্য সাথে আর সাথে দাবি করা যে সরকার আমেরিকান স্যাংশন কেয়ার করে না। আমেরিকাকে উপেক্ষা এই ছিল এতদিন সরকারের মূলনীতি! সেজন্যই কী এবার এক ব্যারিষ্টারকে র‍্যাবের প্রধান করা? সংস্কার করা বলে দেখানো?? আমেরিকার সাথে নুন্যতম একটা ওয়ার্কিং রিলেশনে পৌছানো যার লক্ষ্য? তাই কী?  আমরা এটা নিশ্চিত না; তবে এদিকে কী হচ্ছে তাতে চোখ রাখতে পারি।

এনিয়ে কিছু সহায়ক তথ্য দেইঃ
আমেরিকান ফরেন পলিসি পত্রিকায় এশিয়া নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষে সব ঠিকঠাক চলছে কিনা এনিয়ে এক সাপ্তাহিক রিপোর্ট লিখে থাকেন মাইকেল কুগেলম্যান। তিনিও বর্তমানে আলী রিয়াজের জায়গায় তবে বেশী গুরুত্ববাহী আরেক থিঙ্কট্যাংক ফেলো!  তিনি আজ মানে গত ২৯ মের রিপোর্ট শুরুই করেছেন এমন কিছু তথ্য দিয়ে। যেমন তাঁর প্রথম লাইনটা হল, Hasina makes pitch for U.S. investment. হাসিনা আরো আমেরিকান বিনিয়োগ [FDI] চান! তিনি লিখছেন, হাসিনা যতই আমেরিকার উপর সবসময় রাগ ঝারেন না কেন, তিনি আমেরিকান ব্যবসায়ীদের চান, commercial partnership with Washington এর পক্ষে তিনি এখন; দেশের আগামি সত্তর বছরের বার্ষিকী (২০৪১ সালে) আমেরিকান ব্যবসায়ীদের হাত ধরে উঠে উতযাপন করতে চান! [এটাই কী গত সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালের ইন্ডিয়া-আমেরিকান পরিকল্পনা ছিল? ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ এর পরের বাইডেনের প্রস্তাব ছিল? ]
তবে কুগেলম্যান লিখছেন, হাসিনা আমেরিকান ব্যবসায়িক বিনিয়োগ সহায়তা [ এতে ডলার আসবে অন্তত] চান বিশেষত রিনিউএবল এনার্জি, শিপবিল্ডিং, ফার্মাসিউটিক্যাল ও মেডিকেল যন্ত্রপাতি উতপাদনের খাতে! “হাসিনার এই আবেদনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আবেদন আছে বলে মনে করছেন কুগেলম্যান! হাসিনা বাংলাদেশের রপ্তানিতে গার্মেন্টেসের ভিত্তি আবার ফিরিয়ে আনতে চান। আমেরিকান বাজার ধরতে চান আগের মত করে ট্যাক্স মুক্ত বা ছাড়দেয়া কিছু ট্যাক্সে রফতানি সুবিধা চান! যেন এটা বড় রপ্তানি খাত হিসাবে আবার উঠে দাঁড়ায়। [আগ্রহিরা বিস্তারিত দেখে নিতে ফরেন পলিসির সাইথ এশিয়া ব্রিফ থেকে।]

From South Asia Brief:
“However, Hasina has always strongly backed commercial partnership with Washington, and on Monday she made a strong pitch for greater investment to a visiting delegation of the U.S.-Bangladesh Business Council. Hasina called on U.S. business leaders to help make Bangladesh a “smart nation” by 2041, referring to a developed country driven by innovation and competition. (The year will commemorate 70 years since Bangladesh’s independence.)”
“Hasina seeks to expand Bangladesh’s export base, and she singled out investment-ready “high-potential sectors,” including renewable energy, shipbuilding, pharmaceuticals, and medical equipment. Such appeals have both economic and political motivations. One of South Asia’s economic success stories, Bangladesh has suffered a slowdown in the past few years, and economists warn that it’s not sustainable to rely so heavily on garment exports.”

এখানে বলে রাখা ভাল, হাসিনা সরকার বেনজির-আজিজ নিয়ে ঠিক কী করতে চাইছেন, কেন এবং ঠিক কী লক্ষ্যে তা সুনির্দিষ্ট করে আমরা জানি না। আমি কেবল সম্ভাব্য কিছু তথ্য দিলাম এখানে।

শুধু ডলার সংকটই নয়, আরেক বড় সংকট হল খেলাপী ঋণ সংকট কীভাবে মিটবেঃ
দুইটা আলাদা ইস্যু – মানে সরকারের ডলার সংকট কোন একশনে মিটে গেলে তাতেও খেলাপি ঋণ সংকট মিটাবে না। কারণ দুটা সংকট আলাদা। সরাসরি ব্যাপারটা ঝেড়ে বলে ফেলতে হবে। খেলাপি ঋণের একমাত্র সমাধান হচ্ছে খেলাপি ঋণ গ্রহিতাকেই ধরে এনে ঋণ আদায় করা। তাঁর যা সম্পত্তি পাওয়া যায় তা আদালতের মাধ্যমে ক্রোক করা – এরপর অর্থঋণ আদালতের কাছ থেকে নির্দেশ ও রায় নিয়ে সম্পত্তি নিলামে তুলে অর্থ আদায় করতে হবে। যারা বিদেশে পাচার করেছে সেসব দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে নিয়ে সেসব নিয়োজিত অর্থ দেশে ফিরানোও সম্ভব। একমাত্র এটাই উপযুক্ত পথ।
যদি এপথে না যাওয়া হয় তবে এর দায় খেলাপী ঋণের অর্থ এই দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘাড়ে উঠবে। যার অর্থ আরো টাকা ছাপানো যার সোজা মানে আরো মুদ্রাস্ফীতি। যেটা ১৫% ছাড়ায় কোথায় যায় তা অকল্পণীয়। যার পরিণতি হতে পারে গরীব মানুষের খাদ্য কেনার মত সামর্থ বা অর্থ না থাকা, মানে দুর্ভিক্ষ!!! আর ওদিকে অনিয়ন্ত্রিত গণ ক্ষোভ বিক্ষোভ, বিদ্রোহ ইত্যাদির সম্ভাবনা -শ্রীলঙ্কান পরিস্থিতি্র মত ইত্যাদি!!
কাজেই দুএকটা  আজিজ-বেনজির নয় সবার বিরুদ্ধেই কোনরূপ ফেবার বা ব্যতিক্রম ছাড়াই ব্যবস্থায় নিতে যেতে হবেই। আবার এটা হাসিনার জন্য উভয় সংকট অবশ্যই! যাদের “বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ” ধ্বনি শুনে হাসিনা ও তাঁর দল আত্মতৃপ্তি নিয়েছেন এরাই তো সেই ঋণ খেলাপী! যতবড় ঋণ খেলাপী তত তার গলায় জোর, উচ্চস্বর!!! কাজেই ঋণ খেলাপীর বিরুদ্ধে একশন মানে এক অর্থে নিজ দলের বিরুদ্ধে হয়ত একশন হবে সেটা!! তাহলে এখন হাসিনা কী এমন একশনে যেতে পারবেন? আমরা কিছুই জানি না। তিনি হয়ত বেছে বেছে আগানোর পথ নিতে পারেন; যেমন বেছে বেছে কিছু লোকের উপরে একশন। কিন্তু এটা একেবারেই ফল দিবে না। কারণ এটা আই-ওয়াশের ইস্যু নয়; মেজর খেলাপী বা পাচারকারিদের অর্থ ফেরত এনে দেখানোর বিষয় এটা। আর এর উপর নির্ভর করছে অর্থনীতি আবার ফিরবে কীনা, কী সে? নাকি এটা মুদ্রাস্ফীতি আকাশ্চুম্বি করবে!!
অনেক শক্ত হাতে, লম্বা হাতের ডিসিশন লাগবে – হতে হবে এটা!!!

সব শেষে আলী রিয়াজ প্রসঙ্গঃ
আলী রিয়াজ আরেক আমেরিকান থিঙ্ক ট্যাংক ফেলো; যিনি স্পষ্ট করতে চান না যে তিনি বাংলাদেশ নয়, বরং আমেরিকান রাষ্ট্রস্বার্থের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, কথা বলেন। তিনি গত ২৬ মে দেশে এই বেনজির-আজিজ ইস্যুর মুখে কিছু মন্তব্যসুচক বক্তব্য রেখেছেন যেটা প্রথম আলো মতামত-কলামের ঢংয়ে ছেপেছে। পাওয়া যাবে এখানে, আওয়ামী লীগকেই দায় নিতে হবেএই শিরোনামে।আলী রীয়াজের কথা ঠিকই আছে, এনিয়ে আপত্তির কিছু নাই। কিন্তু তাঁর কথাটা অসম্পুর্ণ। ঘটনার জন্য কী কেবল আওয়ামি লীগই দায়ী? নাকি থিঙ্কট্যাঙ্ক ফেলো আলী রীয়াজ-সহ ২০০৭ সাল থেকে সকল আমেরিকান প্রশাসন ও প্রেসিডেন্ট সকলেই দায়ী?   এর উত্তর না দেওয়াতে বা বিবেচনায় না নেওয়াতে যেন তিনি নিজেকে ও আমেরিকাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন এই লেখা দিয়ে এমন দাড়িয়েছে ব্যাপারটা।
আলো রীয়াজ যদি বুঝে থাকেন এর দায় আওয়ামী লীগেরই তবে তিনি তো বহু আগে থেকেই জানতেন বা না জানার কোন কারণ নাই যে এর দায় তাঁর এবং আমেরিকান প্রশাসনেরও!
আবার যেহেতু সেসময় থেকেই তিনি জানতেন তাহলে এনিয়ে কী কিছু লিখেছেন তিনি? জানিয়েছেন তার পাঠককে আজকের মত যে কে  কে দায়ী?
বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে একটা গভীর গুম,খুন, অপহরণ এর রাষ্ট্র হিসাবে হাজির করা ; সরকারবিরোধী যেকোন ব্যক্তি নাগরিক ও রাজনীতিককে গুম, খুন করা, ভয় দেখানো আর এসবই করা হয়েছে সেই ২০০৭ সাল থেকে; এদের সকলকে কোন প্রমাণ ছাড়াই বাচবিচারহীন এরা সশস্ত্র ইসলামি রাজনীতির লোক অথবা জঙ্গী সন্ত্রাসী বলে ট্যাগ লাগিয়ে দিয়ে। আর হাসিনা যে ২০০৯ সাল থেকে এটাই করবে এই নীতিতে চলবে তাতো আমেরিকা ২০০৮ সালেই হাসিনার স্টেট ডিপার্টমেন্ট সফরের সময় থেকেই জানত। এমনকি হাসিনার ক্ষমতা চর্চার সবঘটনাই তো আমেরিকা প্রশাসন দেখেছে, জানে ও ওয়াকিবহাল থেকেছে কিন্তু মুখে কুলুপ এটে চলেছে। বাংলাদেশের আমেরিকান রাষ্ট্রদুতের আমেরিকার বদলে ২০১৩ সালে ভারতে গিয়ে ব্রিফ নিয়ে আসার কথা কে না জানে? এই ভারত প্রীতির কাফফারা আমেরিকা আজ এড়াবে কী করে?  পরে ঐ ২০১৩ সালের শেষের দিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের বাংলাদেশ সফর আর এরশাদকে বিরোধি দল বানিয়ে দিয়ে যাওয়া ইত্যাদি করে প্রত্যক্ষ্য ভারতীয় হস্তক্ষেপ এটাক কী তখন আমেরিকার চোখের সামনে ঘটে নাই? এসব সময়ের ঘটনাবলীতে বেনজির-আজিজদের ভুমিকা কী ছিল? এরা কারা ছিল তা কী আমেরিকা প্রশাসন তখন দেখে নাই জানে না? সব আমেরিকান প্রশাসন হাসিনা সরকারের এসব কাজকে – জঙ্গী দমন- বলে কী জায়েজ করে নাই? এসবই কী অর্থহীন ও আত্মঘাতি ইসলামবিরোধীতা, ইসলামবিদ্বেষের ততপরতা আর নয়া ঘৃণা ছড়ানোর ততপরতা ছিল না?  সবচেয়ে বড় কথা এর কোনকিছুই হাসিনা একা করে নাই। সব সময় সে পশ্চিমা অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে।  কথিত থিঙ্কট্যাঙ্ক ও আমেরিকান প্রশাসনের এর সবকাজেই প্রকাশ্যে বা গোপনে অনুমোদন ছিল না কী? ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণে প্রলুব্ধ করে টেনে আনা অথচ হাসিনার সাথে তাদের কী গোপন ডিলে আমেরিকান রণে ভঙ্গ ঘটলো? কী কারণে? কেন আমেরিকান রাষ্ট্রদুত অসময়ে ঢাকা ছেড়েছিলেন,  ঐ নির্বাচনের আগে  আচমকা রাষ্ট্রদুত বদল ঘটেছিল কেন?  সেকথা আমেরিকার চেয়ে ভাল কে জানে?
কাজেই আলী রিয়াজ যেটা বলছেন, আওয়ামী লীগকেই দায় নিতে হবে – সেটা ঠক আছে হয়ত কিন্তু  থিঙ্কট্যাঙ্ক ফেলো গং এবং সব আমেরিকান প্রশাসন এর দায় থেকে দূরে থাকবেন কীভাবে, কেন?

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

[এই লেখা কোন নিউজ নয়, ব্যক্তির নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষণ মাত্র। ফলে পাঠকের এ’লেখা পড়ে কিছুই বহন করা বা মান্য করার বাধ্যবাধকতা নাই। কেবল জানলেন যে এমন একটা মতামত আছে!]

আপডেটঃ     মে ২০২৪  রাত
শেষ আপডেটঃ   ০২ জুন মে ২০২৪, সকাল ১০ঃ ৫৭

Leave a comment