লীগ নিষিদ্ধঃ জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারে মুখ্য বিবেচনা কোনটা


লীগ নিষিদ্ধঃ জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারে মুখ্য বিবেচনা কোনটা
গৌতম দাস
২৩ নভেম্বর ২০২৪

https://wp.me/p1sCvy-5PC

বিচারের শুদ্ধতার জন্য ট্রাইব্যুনালে আপিলের বিধান: আসিফ নজরুল

 

[এককথায় মুখ্য বিবেচনার প্রসঙ্গটা হল, জুলাই হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্ট দল ও সরকারের যে সম্মিলিত কমান্ড স্ট্রাকচার এভাবে সেই দল-সরকারের কাঠামোটাকেও
বিচারের আওতায় আনবেন কিনা। ফলে এটা মোটেও বিচ্ছিন্ন ভাবে আওয়ামি লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা – সেই প্রশ্নই নয়। ]

ব্যক্তি ইউনুস এবং ইউনুস সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হল, রাষ্ট্র (ও রাষ্ট্রক্ষমতাও) বুঝতে না পারা এবং এই অর্থে অরাজনৈতিক থেকে যাওয়া।

যেমন দেখেন, এখনকার জলন্ত ইস্যুটা হল, যারা জুলাইয়ের হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে এবং ওর সহযোগী ছিল তাদের কে শাস্তি দেওয়া হবে না হলে কীভাবে?
এটা কী কেবল কিছু ব্যক্তির নামে মামলা হবে এরপর নানান লটরপটর করে সময় নষ্ট করে শেষ সব আউলায়ে ওরা নিজেরাই নিজেদের মাপ করায় নিবে?

আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে যারা জুলাই হত্যাকান্ডের জন্য অপরাধী তাদের বিচার কী কেবল তারা বিচ্চিন্ন ব্যক্তি হিসাবে দেখা হবে নাকি, এটা একটা অরগানাইজ ক্রাইম হিসাবে দেখে এর শিরোমনি হিসাবে শেখ হাসিনা এবং এদের কমান্ড পরম্পরা ও এরই সাথে তাদের দল আওয়ামি লীগের কমান্ড কাঠামোর হিসাবে নানান কমিটির নেতাদের এক সম্মিলিত অপরাধ হিসাবে দেখা হবে এবং সে হিসাবে বিচার করা হবে?

কিন্তু ভারতসহ দেশের আওয়ামি প্রগতিশীল (মানে আসলে হিন্দুত্ববাদের এদেশীয় দোসরেরা) ও এর সহযোগী সবাইওকে এই পুরা বিষয়টাকে   শধু কয়েকটা শব্দ – আওয়ামি লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা এতে পর্যবসিত করে দিয়েছে। আর ইউনুস সাহেব নিজে ও তাঁর উপদেষ্টা মন্ত্রীরাও এই শব্দগুলো ও এর বয়ান মেনে নিয়ে এই অসৎ তর্কের ফাঁদে পা দিয়েছে। এতে মুল ইস্যুটাই হারিয়ে গেছে।

ইউনুস ও উপদেষ্টারা প্রশ্ন করতে ভুলে গেছে কেন  আওয়ামি লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা – এভাবে কথা বলছেন?  কেন লীগ নিষিদ্ধ করার কথা বলছেন পালটা এই প্রশ্ন করাই ছিল সঠিকভাবে তাদের বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করার আসল পথ। যেন লীগ কে নিষিদ্ধ করার যে রিভেঞ্জ – ইউনুসেরা তা নিবেন কিনা এই প্রশ্ন ভারতের দোসরেরা পুরা সমাজকে এই প্রভাবিত করে ফেলেছে।    অথচ মুল ইস্যুটা ছিল, জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারটা কীভাবে করা হবে? কেবল বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি অপরাধী হিসাবে না তারা সকলেই ছিল একটা রাজনৈতিক দল ও এই দলের সরকার – এভাবে৪ দল-সরকারের যে সম্মিলিত কমান্ড স্টাকচার সেই দল-সরকারের কাঠামোও আমলে নিয়ে বিচার করা হবে?

মুল ইস্যুটা ছিল, জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারটা কীভাবে করা হবে?
কেবল বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি অপরাধী হিসাবে না তারা সকলেই ছিল একটা
রাজনৈতিক দল ও এই দলের সরকার – এভাবে দল ও সরকারের যে
সম্মিলিত কমান্ড স্ট্রাকচার সেই দল-সরকারের কাঠামোটাকেও আমলে
নিয়ে এই বিচারটা করা হবে কিনা?
অথচ একে বদলে নিয়ে এক নয়া ভাষ্য বানানো হয়েছে
যে – “আওয়ামি লীগ নিষিদ্ধ করা হবে কিনা”?

 

অর্থাৎ “আওয়ামি লীগ নিষিদ্ধ করা হবে কিনা” – এই বাক্যের আগে পিছে কিছু নাই – এটা তো ইস্যুই না, ছিল না। অথচ ভারতের হেজিমনির দোসরেরা কখন কিভাবে ব্যাপারটাকে শুধু লীগ নিষিদ্ধের ইস্যু বানিয়ে ফেলেছে তা ইউনুস নিজে বা উপদেষ্টারা (বিশেষ করে আসিফ নজরুল) কেউই হুশ করেন নাই। তাদের উচিত ছিল এভাবে শুধু লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্ন তুললে এর জবাব না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করা যে কেন আওয়ামি লীগ নিষিদ্ধের কথা তুলছেন আপনি আর কী বুঝে? সেট আগে আপনার প্রশ্নের ভিতর হাজির করেন তবেই আমি জবাব দিব!

এককথায় কেন কেউ আওয়ামি লীগ নিষিদ্ধের কথা  তুলছে সেটা উহ্য এবং অস্পষ্ট রেখেই এর জবাব দিতে গিয়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে চলেছেন ইউনুস সরকার! যেন  আওয়ামি লীগের উপর ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা কোন কারণ ছাড়াই তারা এনিয়ে কথার জবাব দিতেছেন!!!

পোলাপানি ও অরাজনৈতিক আচরণের এক ইউনুস সরকারঃ
এটাই মূলত এক নাইভ [Naive বা ভোলেভালা] বা পোলাপানি ও অরাজনৈতিক আচরণ ইউনুস সরকার সংশ্লিষ্ট সকলের। খুবই দুঃখের কথা এটা যে এই সরকার না রাষ্ট্রক্ষমতা কী জিনিষ, না রাজনীতি কী জিনিষ সেটা কখনও মনোযোগ দিয়ে বুঝতে গেছিলেন!   অথচ ইন্ডিয়ান হেজিমনির দোসরদের বয়ান কখন আপনাদের মুখে তুলে দিয়ে গেছে খেয়ালো করেন নাই!
ইউনুস সরকার ও মন্ত্রীদের বলার কথা বা উচিত ছিল যে, আমরা  “আওয়ামি লীগ নিষিদ্ধ করা হবে কিনা” এমন কোন ইস্যু আমাদের টেবিলাই নাই। তবে, জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারটা আমরা কী সেসময়ের ক্ষমতাসীন দল ও সরকার যারা ছিল তাদেরকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি হিসাবে বিচার না তারা দল ও সরকারের এক  সম্মিলিত কমান্ড স্ট্রাকচার এর অধঈনে ততপর থাকার অপরাধী সেভাবে বিচার করব – এব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্তের একটা বিষয় আছে। আমরা মনে করি  সেসময়ের দল ও সরকারের এক  সম্মিলিত কমান্ড স্ট্রাকচারকে সাথে বিবেচনায় নিয়ে এই বিচারকাজ পরিচালনার দিকে আমাদের যেতে হবে।

এবং সেই লক্ষ্য এক গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্তঃ
সেসময়ের ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের এক  সম্মিলিত কমান্ড স্ট্রাকচারকে সাথে বিবেচনায় নিয়ে এই বিচার অনুষ্ঠানে দায়েরকৃত যেকোন মামলা নিষ্পত্তিতে যাদেরকে আদালত অপরাধী গণ্য করবে এমন সংশ্লিষ্ট দল ও সরকারি সকল ব্যক্তি আগামি জীবনের উপর কখনও জনপ্রতিনিধি (ইউপি সদস্য থেকে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত) না হতে পারেন সেই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে।  সংশিষ্ট সেই রাজনৈতিক দলের সকল ততপরতা নিষিদ্ধ হবে এবং দলের গুরুত্বপুর্ণ সকল নির্বাহি কমিটির সকল সদস্যও অভিযোগের আওয়তায় আসবে। এরা সকলের জন্য আগামিতে জনপ্রতিনিধি হওয়া নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে।

যারাই যেকোন স্তরের জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্বেও জনগণের উপর বেপরোয়া হত্যাযজ্ঞে সামিল হবে এমন ক্ষমতা অপব্যবহারকারী সকলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা যাবে। আমাদের সরকার অচিরেই এ’সংক্রান্ত এক অধ্যাদেশ জারি করবো। যেটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সহ যেকোন প্রচলিত আদালতে এই অভিযোগে মামলা করা যাবে।
মোটা দাগে এই হতে পারে  সেই আইন। আইনি বিষয়ে অনেক খুটিনাটি ও টেকনিক্যাল দিক থাকে। যা মেনে এই আইডিয়াটা প্রকাশ করা হয় নাই। আশাকরি সেকাজে দক্ষরা কথাটা বুঝবেন।
এছাড়া এবিষয়ে উপদেষ্টা সবার কথা না বলে নির্দিষ্ট করে দেয়া যেতে পারে যে আইন মন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টা এনিয়ে বাইরে বা মিডিয়ায় কথা বলবেন।

সারকথায় ভারতীয় আধিপত্যবাদের খপ্পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি বের করে আনতে পারতে হবে আমাদের। আর তা পারতে হলে “আওয়ামি লীগ নিষিদ্ধ করা হবে কিনা”  – এজাতীয় প্রশ্নকে ভেঙ্গে দিতে হবে, প্রশ্ন সংশোধন করে না আনলে জবাব দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এই বলে যে প্রশ্নটা অস্পষ্ট। আর এথেকে সবচেয়ে বড় লাভটা হবে যে, বিএনপি বা জামায়াত ধরণের দলগুলো – আমরা “আওয়ামি লীগ নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে বা কোন দল নিষিদ্ধ্বের বিপক্ষে বা চালাকি জবাব যে এটা জনগণ করবে বলা – যেখানে এই সবগুলোই আসলে ভারতীয়দেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া যে তাদের পেয়ারের আওয়ামি লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরতে তারা ব্যবস্থা করে দিবে – এই সবই লোপাট করে দেয়া যাবে।

মূলত ইউনুস সরকারের এতসব দিক বিবেচনায় না নেওয়ার ফলেই এ নিয়ে – যেন ইস্যুটা “আওয়ামি লীগ নিষিদ্ধ করা হবে  কীংবা হবে না ” – এর মধ্যে আটকে ফেলা হয়েছে। যার সবটা অসৎ সুবিধা নিয়েছে   ভারতীয় আধিপ্ত্যবাদ; যার একে সহযোগিতা করেছে বিএনপি ও জামায়াত!

কাজেই যতদ্রুত সম্ভব এসব অসততার প্যাচ থেকে নিজেদের বের করে আনার পক্ষে ইউনুস সরকার কে পদক্ষেপ নিতে হবে!
কাজেই আসিফ নজরুল যেভাবে পাশ কাটিয়েছেন  যে তারা নাকি বিচারটা শুদ্ধ রাখতেই এসব কান্ড করেছেন – এসব ফালতু শুদ্ধ-অশুদ্ধতার কথা তুলে পাশকাটানোর কিছু নাই। এটা কোন খাঁটি-অখাঁটি মানে পিওর [pure] বা পিউরিটানদের [Puritanism] আলাপই নয়!
মনে রাখতে হবে এটা যে সে কোন বেপরোয়া হত্যাকান্ড নয় বরং এই হত্যাকান্ডে কেবল শিশু [যারা দুদ্ধপোষ্য, বিছানায় মায়ের কোলে শুয়ে দুগ্ধপানরত ছিল, বা দাদি-নানিকে জড়িয়ে বিছানায় ঘুমিয়েছিল অথবা মা ব্যালকনি বা জানালায় দাঁড়িয়ে বাচ্চাকে ঘুম পারাচ্ছিল ] কেবল এমন সব গুলিবিদ্ধ শিশুর সংখ্যাই হল নুন্যতম ১০৫ জন [দেখেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১০৫ জন শিশু নিহত: শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা – ফলে অন্তত এই তথ্যটা মাথায় রাখলে বুঝবেন এটা খাঁটি-বিচার বা শুদ্ধতার কিছু নয়! যেমন দেখেন – বিচারের শুদ্ধতার জন্য ট্রাইব্যুনালে আপিলের বিধান: আসিফ নজরুল এই অদ্ভুত বক্তব্যটাকে দেখেন তাহলে বুঝবেন!

জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারের রায়ে যারাই অপরাধী বিবেচিত হবেনঃ
১। তারা আর কখনও মানে আজীবন জনপ্রতিনিধি হওয়ার নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবেন।
২। যে দল ও সরকারের অধীনে থেকে এই অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হবেন সেই দলও নিষিদ্ধ থাকবে; জনপ্রতিনিধি হয়েও খোদ জনগণের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালানো কাজে এই দল লিপ্ত ছিল বলে।

 

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

আপডেটঃ  সন্ধ্যা ০৬ঃ ৪০   ২৩ নভেম্বর  ২০২৪
শেষ আপডেটঃ      ২০২৪

 

Leave a comment