চলতি বাইডেনের আমলেই আমেরিকা ধ্বংস হবে
গৌতম দাস
১৬ মে ২০২১
চলতি বাইডেনের আমলেই আমেরিকা ধ্বংস হয়ে যাবে। স্পিরিচুয়ালিটির ভাষায় বললে, এটাই সঠিক উপযুক্ত বয়ান-ভাষ্য। মানুষের সমাজের ফাউন্ডেশন মানে সমাজ দাড়াতে পারে বা দাঁড়িয়ে থাকে ও থাকতে পারে এক ন্যায়-অন্যায় বোধ ইনসাফের ভিত্তির উপরেই একমাত্র। এসবনিয়ে নুন্যতম কিছু মৌলিক বোধের চর্চার উপর! বাইডেন এর সব ‘সীমা লঙ্ঘন’ করেছে! তাই বাইডেন ও তার আমেরিকা ধবংস হয়ে যাবেই!
আজকের মিডিয়া রিপোর্টগুলোর একটা থেকে তুলে এনেছি; নিচের বাক্যগুলো লক্ষ্য করেন,
হোয়াইট হাউস বলছে, “আজ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি ইসরায়েলের অধিকারের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বলেছেন- হামাস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রকেট হামলা ঠেকাতে নিজেকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে ইসরায়েলের”।
দেখেন কান্ড বাইডেন নাকি ‘ইসরায়েলের অধিকারের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন”। আর হামাস হল নাকি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’!
মানে কী প্যালেস্টাইনিরা মানুষই না?
এটা কী কোন মানুষের ভাষ্য-বয়ান হতে পারে? অন্যের ঘরবাড়ি দখল করার পর এবার বাইডেন এসেছেন – দখলকারিরই কথিত অধিকার নিয়ে সোচ্চার হতে? দালালি করতে? ছিঃ বাইডেন! আপনি অবশ্যই ধবংস হবেন! আপনার উপর লানত পড়বে!
উপরের নিউজ রিপোর্ট অংশটা যেটা তুলে এনেছি তা আমাকে একজন ইনবক্সে পাঠিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে অনেকেই রেগুলার তাদের ক্ষোভ-দুঃখের কথা জানাচ্ছেন। মূল কারণ, এটা ন্যায়-অন্যায়ের ফাউন্ডেশনের প্রশ্ন, ধর্মীয় প্রশ্নের দিকটা সেকেন্ডারি। তাই এটা ধর্ম-নির্বিশেষে মানুষের মনে আবেদন এবং ক্ষোভ তৈরি করেছে।
এদিকে, এই নিউজটা পড়ার পর থেকে মনের ভিতরের ক্ষোভ-বিক্ষোভ অস্থিরতা টের পাচ্ছি। এসব সময়ে আপনাতেই মানুষের সহায় হয়ে দাড়ায় এক স্পিরিচুয়াল সেন্স! এখানে সে আশ্রয় খুজে পায়। সাথে এক একাত্মবোধ; সংযুক্ত, কানেকটেড – দুনিয়ার দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সবকিছুর সাথে সম্পর্কযুক্ত এক “রিলেশনাল সেন্স” এটা! কারণ মানুষ রিলেশনাল এলিমেন্ট, মানে সম্পর্কযুক্ততাই মানুষ! এই সেন্সুয়াস অনুভুতিপ্রবণ দিকটা বাইরে রাখলে যে বৈষয়িক মানুষ সে জগতের ইট-কাঠ পাথর ধুলাকণা ইত্যাদির মত বস্তু মাত্র।
দুনিয়ার সব অন্যায় অবিচার, নিষ্ঠুরতা অত্যাচারিতা বেইনসাফির বিরুদ্ধে আমরা এক স্পিরিচুয়ালিটিকে আশ্রয় করে আমরা রিলেটেড বোধ করি। আমরা দ্রুত ঘুরে দাড়াই, একাত্মতায় এক হয়ে উঠে দাড়াতে পারি, শক্তি সঞ্চয় করে উঠে দাড়িয়ে যেতে পারি, দাঁড়াই। দাড়িয়েছি! অতএব বাইডেন তুমি ধবংস হবেই! তোমার ধ্বংস অনিবার্য!
দুনিয়ার বাস্তবের শক্তি রাজনৈতিক, তার ভাষাও রাজনৈতিক। তাই এখন স্পিরিচুয়ালিটির থুয়ে রাজনৈতিক জগতে ও ভাষায় ফিরব।
আমাকে অনেকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে আচ্ছা দুনিয়াতে জায়নবাদীদের অত্যাচারের কী শেষ হবে না? প্যালেস্টাইনিদের কী মুক্তি নাই? জবাবে আমি সবসময় বলে এসেছি, রাষ্ট্র হিসাবে আমেরিকা যেদিন ধবংস হবে ঢলে পড়বে, সক্ষমতা হারাবে সেদিন এই ইসরায়েল রাষ্ট্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে, প্যালেস্টাইনিদের মুক্তির দিন হবে সেটা। আজ থেকে কম করে বিশ বছর আগে মানে, যেমন গত শতকের শেষে দুনিয়ার গতিপ্রকৃতি এত স্পষ্ট বুঝা যাবার মত ছিল না। তাই কথাটা তাত্বিকভাবে কল্পনা করে বলতাম। আজকের দুনিয়ায় গ্লোবাল নেতৃত্বে এক পালাবদল আসন্ন; আমেরিকা হেরে যাচ্ছে, ক্ষমতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে – এমন এর সব চিহ্ন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, যা এখন অনেকটাই পরিস্কার।
প্রো-আমেরিকান বা প্রো-ইন্ডিয়ান লোকেরা অনেকে সময় আড়ালে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে যে যেহেতু আমি এই পালাবদল নিয়ে নিরন্ত্রর এবং সম্ভবত সবার চেয়ে বেশি করে বলে চলি চলছি তাহলে, নিশ্চয় আমি প্রো-চায়না বা কোন কমিউনিস্ট।
প্রথমত এটা আমরা চায়না না আমেরিকান সমর্থক হব এমন কোন এর লড়াই ভাগাভাগির ব্যাপার একেবারেই না। অর্থাৎ ঘটনার কর্তা বা সাবজেক্ট হিসাবে আমরা কে কোনটার সমর্থক হব সে আমাদের যার যা ইচ্ছা, অবশ্যই। কিন্তু এই কর্তা-কাহিনীর বাইরে একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়বৃষ্টি বন্যা যেমন সেটা কিন্তু ব্যক্তি কর্তা ইচ্ছার ঘটনা নয়, সেটাই বলে অবজেকটিভিটি বা প্রাকৃতিক বাস্তবতা। মানে যা আমাদের ব্যক্তি কর্তাসত্বার ইচ্ছার বাইরে ক্রিয়াশীল থাকে আর প্রাকৃতিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে যেতে থাকে এবং ততপর ও হাজির হয় – ঠিক সেরকভাবে ও অর্থে গ্লোবাল নেতৃত্বে পরিবর্তন ব্যাপারটা এটাও এক অবজেকটিভ ও এক পালাবদ্ল আসন্নের ঘটনা।
আর এর সবচেয়ে ভাল প্রমাণ, এনিয়ে আমেরিকারই নিজস্ব সরকারি গবেষণা স্টাডি রিপোর্ট। গত ২০০৮ সাল থেকে চলতি ২০২১ পর্যন্ত নিয়মিত এসব রিপোর্ট আপডেট প্রকাশিত হচ্ছে। এবং সবগুলোই এপর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে একইকথা বলে আসছে যে প্রথম অ্যামেরিকার অর্থনীতিতে ফলে নেতৃত্বে পতন ঘটবে। আর এতে এরপর য়ামেরিকার সব-ধরণের ক্ষমতা ও প্রভাবেও পতন ঘটবে, ঢল নামবে। আর বরং এসব গবেষণা রিপোর্ট অ্যামেরিকার খোলা সমাজ বলে যতটা আমরা সহজেই দেখতে পাই নেটে পেতে পারি ঠিক ততটাই যেন কম আমরা চীনের ভাষ্যগুলো জানতে পারি।
এখন কোন যুদ্ধে রাজার পরাজয়ের খবর তো কাউকে না কাউকে বয়ে আনতে হবে। যে বয়ে আনে তাকে বাংলায় “ভগ্নদুত” বলে। কিন্তু প্রায়ই মানুষ যা ভুল করে তা হল সেমনে করে বসে যেন ভগ্নদুতই রাজার পরাজয়ের জন্য দায়ী! অথচ তা একেবারেই নয়। তবু ভগ্নদুতেরাই ইতিহাসে অনেকেই খুন হয়েছেন।
কাজেই প্রো-আমেরিকান বা প্রো-ইন্ডিয়ানদের চোখে আমি ভগ্নদুত অবশ্যই। আমি আমেরিকান রাজত্বের পরাজয় ঘটানোর কোন নায়ক নই। অথবা আমি চীন-পছন্দের কেউ নই। আমি আমেরিকান স্টাডি রিপোর্ট পড়েই তা ব্যাখ্যা করে মূলত আমেরিকান পতনের প্রসঙ্গ বিশ্লেষণ করি।
এবার পাঠকেরা অবকজেকটিভ চোখে দেখেনঃ
গ্লোবাল নেতা হিসাবে অ্যামেরিকার পতন আসন্ন ও অনিবার্য। এটাই আমি বলছি। উপরে যেটা বেইনসাফি জুলুমের ঘটনা – বাইডেনের নিষ্ঠুর অমানুষ পাষাণ চরিত্রকে দোষারোপ করছিলাম, আর স্পিরিচুয়াল শান্ত্বনা খুজে সেই চোখে প্রথম প্যারাটা লিখছিলাম আর দীপ্তকন্ঠে স্পিরিচুয়ালি বলেছিলাম বাইডেন ধবংস হবে – এখন সেই কথাটাই নিচে আবার স্পিরিচুয়াল থুয়ে বস্তুগত স্টাডি বুঝাবুঝির চোখে বলছি বাইডেনের আমেরিকা ধংস হয়ে যাবে আর তা আসন্ন।
গত ১৯৪৮ সালের পর থেকে আমেরিকা ইসরায়েলকে নিয়মিত রক্ষা করে আসছে, সমর্থন করেছে। কিন্তু এবারের বাইডেনের আমেরিকার একই অবস্থান কিন্তু হবে অনেক বেশি নির্ধারক। এই অর্থে যে তা আমেরিকার নিজের পতনকে ডেকে আনা ত্বরান্বিত করবে। তার এবারের অবস্থানকে আগামি দিনের ঐতিহাসিকেরা মুল্যায়ন করে বলবে বাইডেন কিভাবে প্যালেস্টাইন ইস্যুতে নিজের পতন আরো তাড়াতাড়ি ও অনিবার্য করে তুলেছিল।
আবার বাইডেন যে হিউম্যান রাইট প্রশ্নে অবস্থান একেবারেই ভুয়া, তুচ্ছ এ্ক তৃতীয় শ্রেণীর ব্যক্তিত্ব ও দালালের তাই তিনি প্রমাণ করেছেন।
সব মিলিয়ে বদলে যাওয়া আসন্ন দুনিয়া দেখতে কেমন হবে? এতে সবার আগে বদল হবে মধ্যপ্রাচ্যের ম্যাপে। তাতে চীন-ইরানের ২৫ বছরের চুক্তি এটা দাঁড়াবে সব কিছুর কেন্দ্রে। আমেরিকান গ্লোবাল নেতৃত্বের আমলে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি-র যে কেন্দ্রীয় ভুমিকা ছিল তা বদলে চলে যাবে ইরানের হাতে। দ্বিতীয় গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা নিবে কাতার আর সাথে তুরস্ক, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ বা অন্যান্যরা। আর সৌদি, দুবাই এর মত এরাও নতুন করে পালাবদলে গঠিত এই আঞ্চলিক ক্ষমতার পিছনের সারিতে থেকে যোগ দিবার সুযোগ পাবে। কিন্তু সেটা কী চেহারায় তা, নির্ভর করছে চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক সাজানোর উপর আর ‘সদাচরণের’ উপর। মূল কারণ ইরানের হাতে ‘তাদের’ ধবংস হওয়া ঠেকে গিয়ে তারা স্বাভাবিক কোন দেশ-রাষ্ট্র হয়ে হাজির থাকার ভারসাম্যটা থাকবে চীন-রাশিয়ার হাতে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে আদর্শ হতে পারে, একটা ব্রডবেস নতুন মধ্যপ্রাচ্য নীতি যার পিছনে থাকবে ইসলামি জনসংখ্যা প্রধান দেশগুলোর এক ফান্ডামেন্টাল ও কমন অবস্থান দাড় করানো ও এর ঐ নীতির সমর্থন – এই বিষয়টা যত দ্রুত আকার পাবে ততই সবকিছু উঠে দাড়াতে পারবে।
আর এই সম্মিলিত শক্তিটাই প্রথম চীনা গ্লোবাল নেতৃত্বে নতুন করে সাজানো দুনিয়ায় প্রথম নির্ধারক ঘটনা হবে। এই শক্তিই বাধ্য ও নির্ধারণ করবে ইসরায়েলের ভবিষ্যত। তবে ইসরায়েলই ঠিক করবে সে যুদ্ধে ধ্বংস হবে না আলোচনার টেবিলে আলোচনায়। যেখানে ধ্বংস হওয়াটা অনিবার্য। আর তাতে বলাই বাহুল্য প্যালেস্টাইনি ও দুঃখের দিনের অবসান ঘটবে, মুক্তির আলো ফুটবে ।
এই মুহুর্তে যতটুকু দূরে দেখা যাচ্ছে সেটাকে ভিত্তি করে, বড় বড় চোখে তাকিয়ে এক কল্পনার ছবি আকলাম।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com