গত পরশু পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর মিথ্যা প্রপাগান্ডা


গত পরশু পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর মিথ্যা প্রপাগান্ডা
গৌতম দাস
৩১ মার্চ ২০২৪ সন্ধ্যা ০৭ঃ ৫৩
https://wp.me/p1sCvy-5tZ

‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’

 

রাতে বাসায় ফেরার পথে বাঁশ বাগানের নিচ দিয়ে যেতে যেতে পথিক ভুতের ভয়ে উচ্চস্বরে গান গেয়ে থাকে। সে অবস্থা হয়েছে ভারতের পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর! পিনাক বাংলাদেশে ২০০৭ সালে, ১/১১ এর শুরুর কালে ভারতীয় রাষ্ট্রদুত ছিলেন। আর, বর্তমানে রিটায়ার্ড সরকারী কূটনৈতিক চাকরি থেকে; তবে এখন নয়াদিল্লি-কেন্দ্রিক এক স্থানীয় থিঙ্কট্যাংক [ORF] এর ফেলো। ভারত সরকারের হয়ে বা র-এর হয়ে বয়ান দিতে তিনি সময় সময়ে ক্ষেপ মারা বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এবারও তাই!  সম্প্রতি বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি শতভাগ মিথ্যা – যেটাকে ডাহা মিথ্যা বলা হয় – এমন এক বয়ান ছেড়েছেন। পত্রিকার শিরোনামে তা হল, ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন। আমাদের বাংলা ট্রিবিউন পত্রিকা যেটাকে বলা যায় প্রো-ভারত এজেন্সির দ্বিতীয় প্রজন্ম – এদের পত্রিকা; এরা হাসিনার এই কালে নিয়মিত নয়াদিল্লির এক রঞ্জন বসুর কলাম ছেপে থাকেন।  বসুন্ধরার সময় খারাপ যাচ্ছে; পত্রিকায় অর্থ ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। তাই এবার এমন ফোকাস কাজের কনট্যাক্ট পেয়েছে যেন এই বাংলা ট্রিবিউন। এখানে ছাপা হওয়া প্রোপান্ডা নিউজের শিরোনাম হল  ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেনএটা লিড প্রোপাগান্ডিস্ট এর খবর। আর বাকি আরো তিনটা পত্রিকাও (যুগান্তর, ভোরের কাগজপ্রথম আলো ইত্যাদি) একই খবরটা নিজেরা করছে সুত্রবিহীন গায়েবি খবর হিসাবে তারা ছেপেছে। প্রথম আলোর কায়দাটা মোক্ষম, তারা একই বয়ান কিন্তু দাবি করেছে এটা তাদের দিল্লির প্রতিবেদক সৌম্য ব্যানার্জি এর পাঠানো খবর।

ঘটনাস্থল দিল্লি কিন্তু আওয়াজ বাংলাদেশেঃ
ঘটনাস্থল দিল্লি যেখানে পিনাক রঞ্জনের এক বই-প্রকাশ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। তার তাতে সেই বইয়ের খবর পাশে ফেলে রেখে দিয়ে, – এই ডাহা মিথ্যা প্রপাগান্ডাটা ছড়ানো হয়েছে মূলত পিনাক রঞ্জনের মুখ দিয়ে।  আর এই প্রপান্ডা খবরের ব্যাকগ্রাউন্ড বা পটভুমিটা হল বাংলাদেশে ক্রমশ তুঙ্গে উঠা ভারত-বিরোধিতার ক্ষোভ যা ভারতের পণ্য বর্জন নামে শুরু হলেও এখন ভারত খেদাও বলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করতে চাইছে। রাজনীতিতে যা কিছুই হাসিনাবিরোধী বা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বা গণ-মানুষের স্বার্থবিরোধী বা অপছন্দের – তাই, একই সাথে ভারতের ইন্ধনে ঘটছে বলে তা ভারতবিরোধীও – এই হল এর প্রধান বক্তব্য – প্রাইম ন্যারেটিভ লাইন অব পলিটিক্স!  আর সর্বশেষ এতে বিএনপি কার্যত পুরাদমে নেমে পড়াতে এর মোমেন্টাম এখন তুঙ্গে উঠেছে!  তা এখনই খোদ হাসিনা সরকার ও মোদির ভারতও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। অথচ এই পরিস্থিতি তো খোদ সরকারই ডেকে এনেছে।  যেমন  – “ভারত পাশে ছিল বলেই” নাকি সরকার এখন ক্ষমতায় বলে ভারতকে হাসিনা সরকার নিজের ভগবান বানিয়ে ফেলেছে। এমন বক্তব্যটাই যে সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারে তা সরকার ভাবেই নাই।  এই বাড়াবাড়িটাই কী শেষে নিজেদেরই বিরুদ্ধে  চলে যাচ্ছে – বলে হাসিনা-ভারতের মনে “কু-ডাকা” শুরু করেছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে!
আর এই দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে বের হতেই সম্ভবত হাজির করানো হয়েছে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীকে। আর এবার তাঁর সাথে আছে ইসলাম  বা এনিয়ে এথনিক উন্নাসিকতার প্রতিবিম্ব বীনা সিক্রি। সাথে আমাদের “এক সাবেক” শহিদুল হকও ডাক পেয়ে বর্তে গেছেন; কিছু কাজ পেয়েছেন বেকার জীবনে!

সবচেয়ে বড় তামাসাটা হল  একটা শিয়ালেরও যে বুদ্ধি আছে – মানে একটা শিয়ালও জানে বাঘ মামাকে কেন মামা বলে তোয়াজ করতে হবে! আবার তাই বলে মামার আসনে বসে নিজেকেই “বনের রাজা” দাবি করা বা ভাব ধরা যে চরম গর্হিত কাজ সেটা শিয়াল পরিস্কার বুঝে! তাই একাজ সে কখনও করে না!  কিন্তু পিনাক রঞ্জন তাও বুঝে নাই। তিনি দাবি করেছেন যেন মোদির ভারতই পরাশক্তি আর পিটার হাসের আমেরিকা হল ভারতের অনুসারি এক স্যাটেলাইট রাষ্ট্র! তাই ভারতের এক হুঙ্কারে –  ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই– নাকি পিটার হাস হাসিনাকে বিরক্ত করা ছেড়ে একেবারেই পালিয়েছে!!!! যুগান্তর এনিয়ে লিখেছে পিটার হাস নাকি এই হুঙ্কারেই আত্মগোপনে চলে গেছেন।  এই হল আমেরিকার জায়গায় যেন ভারতই হল যে পরাশক্তি – এমন ভাবনায় মোদির দালালটা হলেন পিনাক রঞ্জন!

ভারতের কঠোর অবস্থান জিনিষটা কীঃ
 এখনও আমেরিকাই এক পরাশক্তি  – তাতে আমরা যতই আমেরিকান অযোগ্যতা তুলে ধরি না কেন; অথবা আমরা যতই প্রমাণ দেই যে আমেরিকার পুরান সক্ষমতা ঢিলা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এসব অবজারভেশন সত্য হলেও আমেরিকা এখনও পরাশক্তি!  এটা মাথায় রেখে আমাদের কথা বলতে হবে। বাইডেনের গত দুই বছরের প্রচেষ্টা ছিল মূলত চীনের বাইরেটাতে এশিয়াকে কতটা চীন-মুক্ত করা যায় এরই প্রচেষ্টা ও পরীক্ষা করতে বসা। তাই এশিয়াকে চীন-মুক্ত অর্থে বাংলাদেশকেও কতটা চীন-মুক্ত করা যায়; এই লক্ষ্যে বাইডেন তিনটা জিনিষ প্রয়োগ করেছিল – গণতন্ত্র, মানবাধিকার আর স্যাংশন।  কিন্তু ডিসেম্বর ২০২৩ ছিল টাইম লিমিট।  আর এই সময়কালের মধ্যে তারা নিজেদের টার্গেট কিছুই তেমন অর্জন করতে পারছেনা  – এটা টের পাবার পরেই তারা ২০০৭ সালের মতই দ্বিতীয়বার বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে কেটে পড়ার পথে রওয়ানা দিয়েছে – আমার আগের লেখায় আমি এটাই বলছি। যেটাকে আমরা আমেরিকার ফেলে পালানো বা প্রতারণা বলছি। আর এই বিষয়টাকে আমরা তুলে ধরাতে এই সুযোগে মোদির চামচা  পিনাক রঞ্জন র-এর খেপ মারতে এসে হাজির!  ভারতের ফাঁকা বাহাদুরি যে যেন ভারত হুঙ্কার দিয়েছে বলেই  বা ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই– নাকি পিটার হাসের আমেরিকা ভাগছে!  ভারতের এসব হামবড়া বা মুই কি হনু রে ভাব এসব মফস্বলি ভাব-স্বভাব সেই নেহেরু আমলের!  যে সবসময় ভাব করতে চায় বৃটিশেরা চলে গেলেও নেহেরুই এখন ভাইসরয় বা রাণীর রেখে যাওয়া প্রতিনিধি!!! অথচ রাণীর শাসন মানে এক ঘৃণিত কলোনি দখলদারের শাসন সেটাই ভারত এখনও বুঝতে পারল না! এসব কথা বার্তা এতই পেটি-সংকীর্ণ যে কথা বলতে অস্বস্তি লাগে। যেমন পিনাক লিখছেন শুনিয়ে দেয়া – বলছেন “কড়া বার্তাটা (আমেরিকাকে) শুনিয়ে দেয়া হয়েছিল”। মানে ব্যাপারটা যেন নিম্ন আয়ের ঘরের বউ-শাশুড়ি বা বউ-ননদের কথা শুনিয়ে দেওয়ার তৃপ্তি…!  কথা শুনানোর তৃপ্তি তিনি কলকাতায় থাকার সময়ে শিখেছিলেন; এখন অভ্যাস হয়ে গেছে! অথচ সেই স্বভাব না গেলেও বনে গেছেন তো কূটনীতিক!!!

যাহোক আমরা যদি গত ২০২৩ সাল জুড়ে র-এর তিন হাতা-চামচা; মানে সুবীর ভৌমিক, এএমএন আবদি  আর চন্দন নন্দী – এই তিনের কথা মানে তারা এসময়ে যত কিছু লিখেছেন তা পিনাক রঞ্জনকে দেখতে বলি, পরামর্শ দেই –  কারণ, তাদের সেসব লেখাই পিনাক রঞ্জন-কে মিথ্যাবাদি বলে দেখাবে! সেসময়ের এই তিন জন সমানে প্রতিটা লেখায় আকুলিবিকুলি করে গেছে আমেরিকার সমীপে আবেদন করে। যার সার কথা, আমেরিকা তুমি হাসিনা সরকারকে স্যাংশন দিয়ে দিলে বা তাতে এসরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ভারতের আর বাংলাদেশকে চুষে লুটে খাবার গত ১৫ বছরের সুখ সব শেষ হয়ে যাবে। তাহলে এখন পিনাক রঞ্জন কী বলতে চাচ্ছেন এটাই ভারতের কঠোর অবস্থান এর নমুনা???? নিজেকেই এসব আত্ম-প্রতারণা কেন করছেন তিনি?
এমনকি শেষ লেখায় ফেডারল পত্রিকায় সুবীর মন্তব্য করেছেন – হাসিনা সম্ভাব্য ক্ষমতাচ্যুতির পরে আমেরিকা বার্মার দখল নিলে সেটা নাকি এক []Will US do a Bosnia on Myanmar?….]https://thefederal.com/opinion/will-us-do-a-bosnia-on-myanmar-no-fly-zone-move-may-involve-india/ মানে বসনিয়া কসোভো ম্যাসাকারে এথনিক ক্লিনজিং বা নির্মুল এর মত ঘটনা হবে।  র-এর এই তিন এজেন্ট এর লেখাগুলোই বড় সাক্ষী যে গত ২০২৩ সাল জুড়ে ভারতের অবস্থান আর মুরোদ কী ছিল! পিনাক রঞ্জনের উচিত ছিল আগে কিছু পড়াশুনা করা; না আমাদের লেখা পড়ার কথা বলছি না। এবারের বই প্রকাশের নামে প্রপাগান্ডায় এসাইমেন্ট নিয়ে নামার আগে পিনাক রঞ্জনের উচিত ছিল এটুক হোম-ওয়ার্ক করে আসা!

সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের কবে থেকে বলা শুরু করেন – “ভারত পাশে ছিল বলেইঃ”
এটা নিয়েও পিনাক রঞ্জনের সবার আগে স্টাডি করে আসা দরকার ছিল – বিশেষত এবারের এসাইনমেন্ট নিবার আগে!  কারণ, সেটাই পিনাক রঞ্জনের এবারের দাবি যে পুরাটাই মিথ্যা – এরই আরেক অকাট্য প্রমাণ!
কাদের দাবি করে বলে যাচ্ছেন যে “ভারত পাশে ছিল বলেই” – বিএনপি আমেরিকান সহায়তা নিয়ে নির্বাচন বানচাল করতে পারে নাই! আর একথারই পিনাক রঞ্জনি ভাষ্য হল, ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস বাবাজি ভেগে গেছিল।

কিন্তু প্রশ্ন হল তাহলে কাদের কবে থেকে মানে কবে প্রথম বলা শুরু করলেন যে ভারত পাশে ছিল বলেই” – …?
আর সাথে দুইটা প্রশ্ন। কাদের কী নির্বাচনের আগে থেকে বলা শুরু করেছিলেন, না পরে? প্রশ্ন দুইঃ পরে হলে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের কতদিন পরে?
জবাদটা আগেই জানায় দেই। কাদের একথা বলা শুরু করেছেন ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে।  মানে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে। এবং নির্বাচনের  প্রায় তিন সপ্তাহ পরে।

তাই, এর জবাব হাতে গুনে বলে দেয়া সম্ভব।  ওবায়দুল কাদের “ভারত পাশে ছিল বলেই” – এটা বলাটা নির্বাচনের আগে বলেন নাই। এমনকি নির্বাচনের পরে বা ৭ জানুয়ারির পরে পরেও না। এককথায় বলা যায়, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ এর আগে কখনই কাদের বলেন নাই।

কেন?
এবার ধারাক্রমে বলে দেয়া যাক!
১। ৮ জানুয়ারি ২০২৪ প্রথম ভারতীয় রাষ্ট্রদুত প্রণয় ভার্মা, হাসিনাকে ফোন করে কেবল নির্বাচনী বিজয়ে অভিনন্দন জানাতে পেরেছিলেন। যদিও এই খবরটুকুও দাবি করেছে কেবল আনন্দবাজার তাদের ইংলিশ ABPlive এর দাবি করা সেটা  – Indian Envoy Calls On Bangladesh PM Hasina After Her Election Victory For 5th Term। তাও আবার কিছুটা মিথ্যা দাবি আর চাতুরিতে এটা করা হয়েছে। যেমন শিরোনামে দেখেন Calls On আছে যার অর্থ কারও সাথে গিয়ে দেখা করা। এমনকি এই নিউজে একটা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে যে হাসিনার সাথে প্রণয় ভার্মা কথা বলছেন। কিন্তু এটা কোনভাবেই কোন কল অন Calls On নয়, এটা ছিল ফোনে কথা বলা আর ঐকথার বিষয়বস্তু হল সংক্ষিপ্তভাবে নির্বাচনী বিজয়ে অভিনন্দন জানানো।  অর্থাৎ কাদেরের ভারত পাশে ছিল বলেই” .অথবা পিনাকের ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই ইত্যাদি বলার সময় সেটা ছিল না। অথবা কোন মিডিয়াও এটা দাবি করে নাই।

২। পরের সাক্ষাত সেটা ঠিক সাক্ষাত না, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ সম্প্রীতির বাংলাদেশ নামে ভারতীয় কিছু পরিচিত বাংলাদেশি এজেন্টদের খুশি প্রকাশ। সারকথায় প্রণয় ভার্মা সেখানে সরকারের কারও সাথে কথা বলেও যান নাই। মিট দ্যা সোসাইটি’ শীর্ষক আলোচনা  – এনিয়ে একমাত্র ইত্তেফাক এখানে বিরাট সার্ভিস দেয়া এক রিপোর্ট করেছে।

৩। পরের সাক্ষাত একেবারে ১৫ জানুয়ারি ২০২৪। বাংলাদেশ-ভারত দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত; কারণ ওটা ছিল এর আগেই ১১ জানুয়ারিতে শপথ নেয়া নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সাথে প্রণয় ভার্মার প্রথম সাক্ষাত। কিন্তু সেখানেও কথাবার্তায় মুখ্য বিষয় কী ছিল? সেটাও – কাদেরের ভারত পাশে ছিল বলেই” .অথবা পিনাকের ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই ইত্যাদি কোন প্রসঙ্গ ছিল না। এনিয়ে সরকারি বাসসের নিউজের শিরোনাম, দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যে টাকা-রুপি ব্যবহারের উদ্যোগ প্রশংসনীয় : সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী – অর্থাৎ এখানেও এটা কাদের বা পিনাক রঞ্জনের দাবি করা ইস্যু নাই।  এই ইস্যুতে বনিক বার্তার রিপোর্ট এর শিরোনাম দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো গতিশীল হবে -ভারতীয় হাইকমিশনার যার মানে হল ভারত এখানে “উন্নয়ন অংশীদারত্ব” হতে চলে গেছে। কোনই রাজনৈতিক ইস্যু এটা ছিল না। অর্থাৎ প্রণয় ভার্মা খুজে পাচ্ছিলেন না ৭ জানুয়ারির পরে কী নিয়ে বাংলাদেশের সাথে কথা শুরু করলে তা সঠিক হবে।

৪।  এরপরেই একেবারে ২৮ জানুয়ারী ২০২৪।
এদিন থেকেই কাদের ও প্রণয় ভার্মা  উভয়েই কথা মানে কথা বলার ইস্যু – খুঁজে পাওয়া শুরু করতেন।  দেশ রুপান্তর এর শিরোনাম, নির্বাচনের সময় ভারতে আমাদের পাশে জোরালোভাবে দাঁড়িয়েছিল। এরপর কালবেলা এর শিরীনাম –  অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙেছেন দুদেশের প্রধানমন্ত্রী : ওবায়দুল কাদেরএরপর  টিবিএস এর রিপোর্ট-  India stood beside Bangladesh when BNP tried to foil polls with another country’s help: Quader । কেন ডেইলি স্টার এর শিরোনাম – India played its part as ‘honest neighbour’: Quader । এর সোজা মানে হল, কাদের এর আগে জানতেনই না যে  আমাদের কথিত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে-পরে ভারত পাশে ছিল বলেই” – কিনা?
একইভাবে পিনাক রঞ্জনও জানতেন না যে   ভারতের কোন কঠোর অবস্থানের কারণেই ইত্যাদিতে আমেরিকার পিটার হাস পালিয়ে গেছিলেন কিনা!!

চীন আর চীন-ময়ঃ
৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল। সেই থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন আমাদের মিডিয়া শিরোনামে চীন থেকেছিল।

ধারাক্রমে সেসব খবরঃ
১। ২২ জানুয়ারি বিডিনিউজ চীনা রাষ্ট্রদুত আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের সাথে দেখা করেছেন সেই রিপোর্ট
২। ২২ জানুয়ারি   নয়াদিগন্ত আরেকটা রিপোর্ট নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণের পরিধি বাড়াতে চীনের প্রতি অনুরোধ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

৩। ২৫ জানুয়ারি আরেক রিপোর্ট শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন শি’ – হাসিনার সাথে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধির সাক্ষাতে। এটা বাসসের রিপোর্ট ছাপিয়েছে যুগান্তর।

৪। ২৫ জানুয়ারি আরেক রিপোর্ট বাংলা ট্রিবিউন, চীনের কাছে আরও সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

৫। ২৮ জানুয়ারির বনিক বার্তার রিপোর্ট বাংলাদেশ রিজার্ভ সংকটে পড়লে পাশে থাকবে চীন রাষ্ট্রদূত
৬। ২৮ জানুয়ারি আরেক মারাত্মক নিউজ হাসিনার চীন সফরের দাওয়াত নিয়ে, China invites PM Hasina on official visit to Beijing। মজার কথা হল এটা সরকারি রিপোর্ট। মানে বাসসের করা রিপোর্ট যা ছেপেছে ইংলিশ ট্রিবিউন।

৬। ৩০ জানুয়ারি বিবিসি বাংলা (এরা বাংলাদেশের ভিতরের রিপোর্ট ছাপতে ছাপতে দেরি করে ফেলে তাই) বাংলাদেশ রিজার্ভ সংকটে পড়লে চীন ‘পাশে থাকবে’ কীভাবে?

তাহলে সারকথাটা কী দাড়ালোঃ
মূলকথাটা হল, পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ডাহা মিথ্যা বলছেন। এর সোজা মানে হল, ৭ জানুয়ারি কথিত নির্বাচনের আগে-পরে ভারতের হুঙ্কারে পিটার হাসের আমেরিকা ভেগে গেছিল – এটা পুরাটাই মিথ্যা দাবি।  বরং ৭ জানুয়ারির আগে ভারত অসহায়ত্ব প্রকাশ করে গেছে, আক্ষেপ করেছে।  আর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হল, নির্বাচনের পরের বিশদিন। প্রতিদিনের সংবাদের শিরোনাম হয়ে থেকেছিল চীন। গত ১১১ জানুয়ারি নয়া মন্ত্রীরা আর সংসদ সদস্যরা সকলেই নিজ নিজ শপথ গ্রহণ এবং নয়া মন্ত্রীসভা গঠন সব সম্পন্ন করে ফেলেছিলেন। সেই থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চীন ছিল সব খবরের উপরে আর তা প্রতিদিন!

কিন্তু হায় ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ছিল জংশন পয়েন্ট।    ঐদিনের পরে আর চীনের সাথে সরকারের কোন সম্পর্ক আলাপ দেখা সাক্ষাতের খবর মিডিয়ায় আর দেখা যায় নাই। মানে এসব ঘটেছে এমন কোন সংবাদ নাই। সোজা কথায় এসব আর ঘটে নাই। বরং একই ২৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে ঢাকায় প্রণয় ভার্মার সাথে সাক্ষাত করেন। আর এরপর থেকে সব কিছু ঘুরে যায়। মজার কথা হল, ২৮ জানুয়ারি নিয়ে মিডিয়া রিপোর্টগুলো ছোট দুলাইনের। কিন্তু দিনশেষে সরকারি ভাষ্যটা আসে। যেটা সরকার UNB কে দিয়ে প্রকাশ করে। আর এতে মিডিয়ায় প্রাণ আসে। কারণ নাহলে অনুমিত কানাঘুষা শোনা দিয়ে রিপোর্ট হয় না। যেমন এজন্য ডেইলি স্টারের বড় রিপোর্টটা ২৯ জানুয়ারির।
আর এই সরকারি ভাষ্য থেকেই শুরু হয়েছিল ভারত পাশে ছিল বলেই নির্বাচন নিয়ে কোনো দেশ অশুভ খেলার সাহস পায়নি :। যদিও ২৮ জানুয়ারির পরেই বক্তব্যটা এমন ছিল না। এমন বক্তব্য এসেছে আরো পরে ১৬ মার্চ ২০২৪। আর এর আগের বক্তব্যটা ছিল “India stood beside Bangladesh when BNP tried to foil polls with another country’s help: Quaderএরকম। এটাই ছিল খাটী সরকারি ভাষ্য। কারণ এটা টিবিএস UNB কে সরকারের প্রকাশিত বক্তব্যটাই হুবহু ছেপেছিল।  আর একই UNB এর সরকারী ভাষ্যই তবে অন্য অংশ থেকে তুলে এনে শিরোনাম করেছিল কালবেলা  অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙেছেন দুদেশের প্রধানমন্ত্রী : ওবায়দুল কাদের
প্রশ্ন হল, এখানে ২৮ জানুয়ারি কাদের কারকথা বলেছেন যার সাথে হাসিনার অবিশ্বাসের দেওয়াল ছিল??

উত্তর সহজ। পিনাক রঞ্জন যদি দাবি করতে চান নির্বাচনের আগেই –  “ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস বাবাজি ভেগে গেছিল”।  তাহলে এখন ব্যাখ্যা দেক উনি যে কাদের কেন ভারতের সাথে অবিশ্বাসের দেওয়ালের কথা বলছেন? অর্থাৎ অবিশ্বাস যে ছিল এটা তো পরিস্কার। এখানে অবিশ্বাস মানে হল আস্থাহীনতা যে ভারত কিছুই করতে পারলো না! এছাড়া আমরা উপরে দেখলাম ২৮ জানুয়ারির আগে ভারত কোন বোলচাল দাড় করাতেই পারে নাই।
বরং এরপর ভারতের অজিত দোভাল এসেছেন ৫ ফেব্রুয়ারির আশেপাশের সময়ে। কারনে তার সফর নিয়ে আমাদের সরকার কোন পাবলিক বক্তব্য দেয় নাই। তবে কিছু কিছু পত্রিকায় অনুমিত নিউজ দেখা গেছে যেমন নিউ এজ এরটা – Ajit Doval completes brief visit to Bangladesh
আর এরপর থেকেই হাসিনা সরকার চীনের হাত ছেড়ে গাট্টিবোচকা নিয়ে ভারতের কোলে উঠা সম্পন্ন করেছিল।

কিন্তু সাবধান! অনেকেই মনে করবেন হয়ত যে,  বুঝাই যাচ্ছে এরপর থেকেই পিনাক রঞ্জনের কাহিনী শুরু হয়েছে!! তাই কী????

না সেটাও একেবারেই মিথ্যা।  কারণ এটা কোন পিটার হাসের আমেরিকাকে কোন “ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই – ছিল না। বরং উলটা হাসিনা সরকারের ভারতের কোলের পক্ষে ভারতের সমর্থন প্রকাশিত হয়েছিল ঐ একই ৫ ফেব্রুয়ারিতে। বাইডেন চিঠি লিখেছিলেন হাসিনাকে যেতা পিটার হাস সরকারকে পৌছে দিয়েছিলেন। অজিত দোভালের সফর আর পরে বাইডেনের আপোষের চিঠি সবটা মিলিয়েই হাসিনা চীন ত্যাগ করেছিলেন।
আর এখন চান্স মত পিনাক রঞ্জন চাপাবাজির ঝুলি নিয়ে হাজির হয়েছেন – আমেরিকাকে কথিত ধমকদাতা হয়ে!

আর সেই সাথে , কমপক্ষে গত ১৭ বছর ধরে “ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক” এক মহান অথবা চিরায়ত অথবা আমরা আমরাই তো ইত্যাদি ধরণের অসংখ্যা মিথ্যা আবেগ তুলে বারবার, ভাষ্য খাড়া করে গেছে ভারত; যার সার কথা হল বাংলাদেশ ভারতের সম্পত্তি বা ভারতের কলোনি। ভারতের এই  মনোভাবকে আমাদের কবর দিতে বন্দোবস্ত করতে হবে।
এককথায়, ভারত আমেরিকার যৌথ উদ্যোগেই  হাসিনা সরকার চীনের হাত ছেড়ে গাট্টিবোচকা নিয়ে ভারতের কোলে উঠা সম্পন্ন করেছিল।  আর এটাকেই পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর মত মফস্বলী ভেবেছেন তিনি এখানে ডাহা মিথ্যা এক চাপাবাজি করলেও কেউ বুঝতে পারবে না। তাই ভারতের আমেরিকাকে ধমক দেয়া বা ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই – বলে ডাহা মিথ্যা গল্প সাজিয়েছেন।

তবে এসব যাই হোক হাসিনা-মোদি দুই সরকারেরি অনিশ্চয়তা টেনশন ক্রমশ বাড়ছে ভারত খেদাও পরিস্থিতিতে জনমত কী তারা নিজেরাই ডেকে আনলেন? এই ডেকে এনে কী তারা ভুল করলেন?
বাকিটা আগামিতে……।

 

 

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

[এই লেখা কোন নিউজ নয়, ব্যক্তির নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষণ মাত্র। ফলে পাঠকের এ’লেখা পড়ে কিছুই বহন করা বা মান্য করার বাধ্যবাধকতা নাই। কেবল জানলেন যে এমন একটা মতামত আছে!]

আপডেটঃ     মার্চ ২০২৪ ০৭ঃ ১৯   সন্ধ্যা
আপডেটঃ     মার্চ ২০২৪ ০৮ঃ ১০   রাত

 

Leave a comment