হাসিনা কী আদৌ চীন সফরে যেতে পারবেন?


হাসিনা কী আদৌ চীন সফরে যেতে পারবেন?
গৌতম দাস
১০ মে ২০২৪  সন্ধ্যা ১৮ঃ ৫৩
https://wp.me/p1sCvy-5zZ

 

আমেরিকা আর ভারত দুই সরকারই ক্ষেপে উঠেছে। এরই মধ্যে ডেইলি স্টারকে দিয়ে বা ডেইলি স্টার একটা রিপোর্ট ছেপেছে যেটাকে “গাছে কাঁঠাল গোফে তেল” – রিপোর্ট বলতে পারে কেউ। মানে এটা একটা হবু বা WOULD BE – রিপোর্ট। যেমন আমি আজ দেশের রাজা হলে কী হত – এধরণের রিপোর্ট। গত ৮মে ২০২৪ এর এই রিপোর্টের শিরোনাম “Beyond Dollar: Bangladesh to seek over 36b yuan in Chinese loans। শিরোনামের শুরুর দুই শব্দ [Beyond Dollar] বোকামির নিদর্শন। এখানে ধরে নেয়া হয়েছে যে চীনের কাছে হাসিনা ডলার ছাড়িয়ে মানে ডলারে নয় ইউয়ানে ঋণ চাওয়ার কথা ভাবছে। আর এখানে ডলার না চাওয়াটা খারাপ বা নেতি দিক। এমন মন্তব্য জুড়ে দিয়ে বা ইঙ্গিত দিয়ে এমন শিরোনাম দেওয়ার দরকারটা কী?  এটা কী ডেইলিস্তার বুঝাতে চায় যে তারা মূলত ইন্ডিয়ার পোঁ-ধরা মিডিয়া ও এমন ফান্ডে চলা মিডিয়া হলেও সরকারের হয়ে এই রিপোর্টটা করছে বলে যেন কেউ এটা তার “সুনামের” বিরুদ্ধ কিছু বলে না মনে করে? এরকম?
এখানে দুইটা কথা। এক. এটা সোর্স উল্লেখ করে একটা রিপোর্ট মানে সোর্সের মা-বাপ হীন। তার উপর এটা এখনও হয় নাই হতে পারে ধরণের রিপোর্ট। চীনা ইউয়ানে নগদে পাঁচ বিলিয়ন ডলার সমতুল্য অর্থ আদৌ চীন দিতে রাজি হয়েছে কীনা তা আমরা নিশ্চিত না, স্পষ্টও না।  রিপোর্টটা তা দাবি করেও বলতে পারে নাই। বরং এনিয়ে “হবু কথা ও নিগোশিয়েশনে” বাংলাদেশ কী বলবে তা নিয়েই এই (সোর্স ছাড়া) রিপোর্ট। এমনকি যেখানে চুক্তি করতে বসলেও শেষে চুক্তি নাও হতে পারে।  এই সোর্স হীন রিপোর্টই লিখেছে, Chinese minister said his government in principle agreed to it and asked Ahasanul to proceed. মানে চীনা মন্ত্রী নাকি ঋণদানের প্রস্তাব নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। কিন্তু একথা আমাদের যে মন্ত্রীর নামে লেখা হচ্ছে তা আমাদের মন্ত্রী পাবলিকলি বলেন নাই – কয়েকজন সাংবাদিকের সামলে বা সাংবাদিক সম্মেলনেও বলেন নাই। ফলে বিশ্বাসযোগ্যতা কম। মানে মন্ত্রী অস্বীকার করলে কিছুই করার নাই।
কথা দুইঃ বাংলাদেশের রিজার্ভ যে তলানিতে ফলে সংকটে তাতে এটা ইউয়ান না ডলার মুদ্রা তা বাছার অবস্থায় সে নাই। যে ভিক্ষা নিতে বের হয় সেই ভিখারির কাছে চালটা অনেক জরুরি; সেটা ময়মন্সিঙ্ঘ না চট্টগ্রামের চাল তাতে কিছু যায় আসে না। তাইলে ডেইলিস্টারের কাছে ইউয়ান আমাদের সরকারের “ডলার ছাড়াইন্না” চাওয়া কিনা একথা মনে করিয়ে দেয়া কেন? এত ডলার ভক্ত রিপোর্টার তাহলে দেখাক,  নগদ পাঁচ বিলিয়ন ডলার কোন দেশ দিতে সক্ষমতা রাখে? বাজারে ডালের দাম যদি চড়া হয় তবে ভাতের প্লেটে ছোট গর্ত করে এরপর ডাল নিতে হয়। তাই না?
এখন মুল প্রসঙ্গে ফিরব; এর আগে আমার ব্যক্তিগত অনুমান হল, চীন নগদ ইউয়ানে পাঁচ বিলিয়ন ডলার সমতুল্য অর্থ বাজেট সহায়তা দিতে (নীতিগতভাবেও) রাজী হয়েছে এটা এখনও বিশ্বাস-আস্থায় নিবার মত সংবাদ হয়ই নাই। বরং আগামিতে এর সত্য হবার সম্ভাবনা খুবই কম! চীনের হাত ছেড়ে আবার এখন তার কোলে উঠে বসতে চাইলেই তা ঘটার সম্ভাবনা তো প্রায় নাই-ই হবে!

এসব সত্বেও ডেইলিস্টারের উড বি রিপোর্টের আগে ও পরে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা আর ভারত দুই সরকারই ক্ষেপে উঠেছে। ভারতের সচিব কোয়েত্রা আর আমেরিকার সহকারিমন্ত্রী ডোনাল্ড ল্যু এদের ঢাকা সফর হাসিনার কথিত চীন সফরকে কেন্দ্র করেই বলে অনুমান হয়। পুরান কথাটা হল, ২০২৩ এর কথিত নির্বাচনের আগে এদুই দেশ একসাথ হয়েছিল; হাসিনাকে অবাধে নির্বাচনি প্রহসন করতে দিয়েছিল। নির্বাচনে যাই হোক, হাসিনা নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল আর এই দেশদুটো তা আয়েশ করে তা দেখে মজা নিয়েছিল। এদের উদ্দেশ্য একটাই যে, কথিত নির্বাচনের পরে – হাসিনার সাথে চীনের কোন সম্পর্ক, ঋণ, প্রভাব কিছুই থাকবে না; তা বাস্তবায়নের কাজে এদুই শক্তি নেমে পড়েছিল।

আর হাসিনার জীবনের সবচেয়ে বড় নিজেরই পায়ে কুড়াল মারা কাজটা তিনি করে ফেলেছিলেন তখনই। তিনি সেই টোপ খেয়েছিলেন।  এখন তিন মাস যেতেই সেসব বেড়িয়ে আসছে। হাসিনা এখন হাহাকার করছেন চীন, চীন করে! তিনি নাকি চীন সফরে যাচ্ছেন, অথচ কোনপক্ষের  সরকারী ভাষ্যে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু দেখি নাই। কেবল ভারত বলছে তাই বাংলাদেশে  আমরা জেনেছি, আর জপ করতে দেখছি। ভারত কায়দা করে নিজেদের গুরুত্ব জাহির করতে আমাদের জানিয়েছে  এভাবে যে “চীন সফরে যাবার আগে” হাসিনা ভারতে যাচ্ছেন। তো সেটা “চীন সফরে যাবার আগে” কিনা সেটা কী ভারতের বলার কথা? এর এক্তিয়ারই বা কী? এছাড়া অনেকটা যেন ব্রিফ করতে ও অনুমতি নিতে যাচ্ছেন হাসিনা এমনভাবে কথা ছড়ানো হচ্ছে যে কোন সীমার মধ্যে হাসিনাকে চীনের সাথে কথা বলতে / থাকতে হবে? এছাড়াও হাসিনা যে চীন যাচ্ছেনই তা ভারতকে কে নিশ্চিত করল? কেউ জানে না। এমনকি চীনও কী আশা করছে যে এক্সপেকটেড বা আগ্রহি যে তারা হাসিনাকে অতিথি হিসাবে দেখতে চাচ্ছেন? তাও সরকারিভাবে চীনও তা এখনও নিশ্চিত করে নাই। সম্ভাব্য আলোচনার ইস্যু কী হতে পারে তাও কেউ জানে না। তবে ভারতের মুখ দিয়ে প্রচারিত হচ্ছে যে এটা নাকি হবে তিস্তা প্রকল্পের কথা!

মনে রাখতে হবে গত ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ এর পরে চীনের সাথে আমাদের সরকার প্রধান বা উচ্চমহলে কোন দেখা সাক্ষাত আলাপ হয়েছে এমন কেউ জানে না। কেবল গতমাসে একটাই শীতল আলাপের কথা জানা যায় তাও আমাদের সরকারী মিডিয়া সুত্রে। গত ৩ এপ্রিল ২০২৪, চীনা রাষ্ট্রদুত নাকি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে না বাসায় এক আমন্ত্রণে দেখা করতে গেছিলেন। যা নিয়ে সরকারী বাসস এর লেখা একটা ভাষ্য “দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী” – এই শিরোনামে কয়েকটা পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সেই বাসসের ভাষ্যেও লেখা আছে যে জবাবে “চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন”। যার অন্তর্নিহীত অর্থ হল, বুরোক্রাসির লাল ফিতা; মানে,  আগে ফরমালি অনুরোধ পাঠান এরপর আমরা লাল ফিতায় বাধা ফাইল চাপা দিয়ে সেটা ফেলে রাখব হয়ত!

কেন বাসসের এই খবরটায় যা কিছু দাবি করা হয়েছে এর বিশ্বাসযোগ্যতা কম?
মানে এটা ঘরে বসে বানানো ধরণের। কারণ, এর একটা উপ-শিরোনাম আছে – “পায়রায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর হবে এবং চীন সে সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে।” – এটা বাংলাদেশের দিক থেকে বলা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ফ্যাক্টস হল, পায়রায় কোন গভীর সমুদ্র দূরে থাক – চট্টগ্রামের মত ড্রাফটের ছোট জাহাজের বন্দরের জন্য এই লোকেশন উপযোগী না। সেটা সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত নিজেই মিডিয়ার সামনে বলে গেছেন। মূল কারণ, ঐ বন্দর এলাকায় পানি নাব্যতা খুবই কম আর এরচেয়েও বড় কথা যতটুকু এখন আছে এটা বজায় রাখতে হলেও সবসময় ড্রেজিং করাতে হবে। এই লোকেশনে বন্দর নির্মানে মূল উতসাহি ছিল ভারত। অথচ বিনিয়োগ দেওয়ার কথা উঠলে ভারত ভেগে যায়। আবার চীনা ঋণ যাতে পায়রা প্রকল্পে না ঢুকে এব্যাপারে ততপর ছিল ভারত। শেষ আমাদের রিজার্ভ ভেঙ্গে এই প্রকল্প শেষ করতে হ্যেছে। এই হল গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া। তাহলে এই মিছা কথা যে পায়রাতে এখন  গভীর সমুদ্র করার উপযোগী – এই মিছা কথা বলা আর তাতে এখন চীনকে বিনিয়োগের জন্য কথিত ডাকাডাকি এটা কী সত্যি?  আমাদের বিরাট সন্দেহ রাখার সুযোগ আছে।

যাই হোক হাসিনার কথিত চীন সফর – এনিয়ে ভারতের লাফালাফিটাই বেশ বেশি,  যা অনেকটা এমন যেখানে, যাদের বিয়ে তাদের খবর নাই – অবস্থা। মানে হাসিনার কথিত চীন সফর নিয়ে চীন বা বাংলাদেশের এনিয়ে তেমন সরকারি ভাষ্য নাই অথচ পিনাক রঞ্জনকে দিয়ে এতদিন এতে ভারতের চাহিদা কী তা নিয়ে প্রপাগান্ডা চালানোর [আর আমাদের মানবজমিন এসব গারবেজকে মিথ্যা গুরুত্বের hype তুলে রিপ্রিন্ট করেছে ] পরে; এখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিবই বাংলাদেশে হাজির যে তারা চীন সফরের আগে হাসিনাকে ভারত সফরের দাওয়াত দিতে এসেছেন। আর চীনের বদলে তারাই তিস্তা প্রকল্প করে দিতে চান এই প্রস্তাব নিয়েও হাজির।

হাসিনার এখন তিস্তা প্রকল্প বা এমন কোন প্রকল্প নয় দরকার ৫ বিলিয়নের নগদ ঋণ বা বাজেট সহায়তাঃ
হাসিনার জন্য এখন কঠিন ও নেতি বাস্তবতাটা হল, তাঁর সরকার চরম রিজার্ভ সংকটে। এছাড়াও আবার আদায় অযোগ্য প্রায় প্রত্যেক আওয়ামি ব্যাংকের খেলাপী ঋণের ভারে ব্যাংকগুলোসহ খোদ অর্থনীতিটাই ভেঙ্গে পড়ার অবস্থায়!  কাজেই হাসিনা সরকারের এখন তিস্তা প্রকল্প বা এমন কোন প্রকল্প নয়, দরকার ৫ বিলিয়নের নগদ ঋণ বা বাজেট সহায়তা। এই সুনির্দিষ্ট দিকটা  ভারত বা আমেরিকার অজানা থাকার কোনই কারণ নাই। অথচ তাদের ভাল-ভনিতা দেখেন!  আবার তারা ভয়ে আছে যদি হাসিনা চীনকে তিস্তা প্রকল্প দেওয়ার শর্তে ঋণ নেয়!    মানে হল, হাসিনার দিক থেকে দেখলে  বৈদেশিক মুদ্রার এই কঠিন সংকটে এখন গত তিন মাসে ভুল ও লোভি সিদ্ধান্তে সব হারানো উপলব্দি করে আবার হাসিনা চীনের কথা তোলাতেই এর প্রতিক্রিয়ায়, ভারত আর আমেরিকা দিশাহারা ছোটাছুটিতে ক্ষেপে উঠেছে। এদিকে তাই ডোনাল্ড ল্যু তিনিও আসতেছেন।
মূলকথাটা হল, ক্যাশ বা নগদ বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে হাসিনার বাংলাদেশের; নুন্যতম ৫বিলিয়ন ডলার; যা দশ বিলিয়ন হলে একটা অর্থনৈতিক পুণরুদ্ধারে দিক থেকে ভাল স্টার্ট হয়।  কিন্তু না আমেরিকা না ভারত এদের সেদিকে মন নাই। আর না আছে তাদের মুরোদ বা যোগ্যতা যে এমন বড় অর্থ তারা দিতে পারে অথবা এমনকি এটা আইএমএফ এরও সামর্থ নাই; কাউকে দিয়েছে এমন রেকর্ড আছে জানা যায় না। তাহলে এরা কেন আসতেছেন? হাসিনা চাহিদা আর এই দুই দেশের আনা-গোনা বকোয়াজি তো এক নয়, এক সুরেরও কথা না।
সবচেয়ে বড় কথা এদুই দেশ আসতেছে হাসিনাকে চীন যাওয়া ঠেকাতে! অথচ হাসিনা কী আসলেই চীন যেতে পারতেছেন? চীনও কী তাকে স্বাগত জানাতে রাজি হয়েছে? কোনটারই কোন নিশ্চয়তা কোথাও নাই! তবুও ভারতের কোয়াত্রা গেলেন, এবার ল্যু আসতেছেন! আর এদের দুজনের কমন দিকটা হল, কারোরই মুরোদ নাই হাসিনাকে কোন নগদ বৈদেশিক মুদ্রা দিবার।

এবার বিস্তারিততে যাবঃ
বাংলাদেশকে চীনের প্রভাবশুণ্য করা মানে বাংলা ভাষায়,  চীন ঠেকানো বা বাংলাদেশ থেকে চীন খেদানো – এই হচ্ছে তাদের বিশেষত আমেরিকার মুখ্য টার্গেট আর এই লক্ষ্য পুরণের উপায় সেই “ঘ্যাগের ওষুধ” নাকি এরা পেয়ে গিয়েছে! আর এই খুশিতে আমেরিকা তার ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ প্রতিষ্ঠা আর সাথে ‘স্যাংশন আরোপ’ এর ফরেন পলিসি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রয়োগ ভুলে গিয়ে, ফেলে দিয়ে বরং আমেরিকা হাসিনাকে অবাধে নির্বাচনি প্রহসন করতে গত বছর শেষের দিকে সেই সুযোগ দেওয়ার রাস্তা ধরেছিল। এভাবেই বাংলাদেশকে আবার ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল।

অথচ গত ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে আমেরিকা সারা দুনিয়াকে জানিয়ে বিশাল হুঙ্কার তুলেছিল যে বাংলাদেশে তারা ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। একাজ করে আমেরিকা সারা দুনিয়াকেই ফকফকা পরিস্কার করে জানিয়ে দিয়েছিল যে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ আর সাথে ‘স্যাংশন আরোপ’ এসবই নাকি আমেরিকার টার্গেট।

অথচ এটা মিথ্যা কথা; এটা বাইডেনের ক্ষমতায় আসার আগে পরে এবং গত দুবছর সবসময়ও ছিল ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ, আমেরিকার মূল লক্ষ্য আমাদের মত দেশে দেশ উঠতি চীনের প্রভাব ঠেকানো। অথচ এই চীনের প্রভাব ঠেকানো অসম্ভব কারণ এটা অবজেকটিভ – ঘুর্ণিঝড় জলোচ্ছাসের মত ঘটনা।  ইতিহাসের এক একটা সময়ে একেকটা দেশের অর্থনীতি চরমভাবে উদ্বৃত্বের দেশ বা সারপ্লাসের অর্থনীতির দেশ হিসাবে বেড়ে উঠে্ছে। এই সারপ্লাস সম্পদই সে দেশ তখন অন্যান্য দেশে অবকাঠামো ঋণ-অনুদান দাতা ও বিনিয়োগ দাতা হিসাবে হাজির হয়েই যায় – অপ্রতিরোধ্য ভাবে। এটাই আরেক অর্থে আমরা তখন সেই দেশকে গ্লোবাল নেতা, বা গ্লোবাল প্রভাব-ধারী নেতা, ইত্যাদি নানান ভাবে ডাকি। এভাবে ১৯৪৫ সালের পর থেকে আমেরিকা ছিল সেই গ্লোবাল প্রভাবের নেতা। একইভাবে সময় এসেছিল জাপানেরও একসময়, সেই ১৯৬৫ সালের পর থেকে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সে আমেরিকান অনুগত থাকতে বাধ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হারুপার্টি বলে আর পরে এর পুণর্গঠনে আমেরিকান কমসুদের বিনিয়োগ সহায়তার জন্য। তাই জাপানের রাজনৈতিক শক্তির দিক আমরা অনুভব করি নাই। বরং অর্থনৈতিক প্রভাবটাও আমেরিকারই যেন – এভাবেই তা প্রকাশিত ছিল। আমরা এমনকি খেয়ালও করি নাই যে এডিবির [ADB] বড় মালিকানা কার?
আর একালে একই ভাবে এখন এটাই চীনের উত্থানের কাল! তাতে আমরা আমেরিকাকেই ভালবাসি নাকি চীন-কে সহ্যই করতে পারি কিংবা পারি না,  তাতে কোনটাতেই কিছু আসবে যাবে না। এটা চীনা প্রভাব বিস্তারের কাল, এই হল অবজেকটিভ ফ্যাক্টস। কারণ এটা চীনা ঋণ-বিনিয়োগের কাল। এমনকি বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো প্রকল্প চীন মাঙনা করে দিতে পারে নিজ স্ট্রাটেজিক স্বার্থে ও সুবিধা হবে বলে। যেমন পাকিস্তানের গোয়াদর গভীর সমুদ্র বন্দর এটা আসলে চীনের স্ট্রাটেজিক প্রকল্প। এটা পাকিস্তানকে সে মাঙনায় করে দিলেও চীনের তাতেও অমুল্য সুবিধার স্ট্রাটেজিক লাভ হবে। কারণ, চীনের একমাত্র বন্দর কেবল পুব দিকে যেটা মালাক্কা প্রণালি বন্ধ করে দিলে চীনের সব শেষ। তাই সে পুরা উলটা পশ্চিমদিকে যেটা আসলে ১৮ হাজার ফুট উচু পর্বতমালায় ঘেরা সেটা ফুঁরেও চীন গোয়াদর গভীর সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুযোগ লাভ করে ফেললো। অথচ আমেরিকাই প্রথম মালাক্কা প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে বলে আলাপ তুলেছিল। নিজ সিনেটে (মানে প্রকাশ্যেই পবেষণা পেপার পড়া হয়েছিল) আলোচনা করেছিল। কিন্ত এতে শেষ কার লাভ হল?

অথচ আমেরিকা জিদ ধরেছে যে চীনের উত্থিত এই প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতার কালে আমেরিকা তার অর্থনৈতিক মুরোদ নাই হয়ে গেলেও নিজ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করা  ও সামরিক সক্ষমতা দিয়ে নিজ অর্থনৈতিক সক্ষমতা সে পূরণ করতে পারবে!! কিন্তু জিদ আর বাস্তবতা এক না। হাসিনার আজকের দুর্দশা আমেরিকান এই জিদ এর পরিণতি।  গত ২৮ জানুয়ারি থেকে আমেরিকা ভারতকে সাথে নিয়ে হাসিনাকে প্রলুব্ধ করতে পেরেছিল দুইটা জিনিষ দিয়ে। একটা হল খুব সম্ভবত ২০৪৫ সাল পর্যন্ত সম্ভবত তাঁকে ক্ষমতায় রাখার লোভ দেখানো। আর দুই, অর্থনৈতিক সংকট যা আছে (যে সংকটটা নিয়ে হাসিনা পরিপুণ্য সজ্ঞান ছিলেন বলেই এবারের নির্বাচনের পর থেকে ১২-২৮ জানুয়ারি চীনের সাথে সখ্যতা ও সফর নিয়ে কথা বলে গেছিলেন। এমনকি – “বাংলাদেশ রিজার্ভ সংকটে পড়লে পাশে থাকবে চীন— রাষ্ট্রদূত”; এমন কথাও উঠেছিল তখন)। কিন্তু এত সবকিছু জানা থাকা সত্বেও – কথায় আছে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু দশা হয়েছিল হাসিনার। তিনি সম্ভবত সুখস্বপ্ন দেখেছিলেন যে, ২০১৩-১৮ সাল ধরে যেভাবে তিনি ভারতের মাধ্যমে আমেরিকান চাহিদা মিটিয়েছেন; ডিল করে টিকে থেকেছেন তেমন এক স্বর্ণ না হলেও “তামার যুগে” তিনি আবার আরামে থাকতে পারবেন! অথচ তিনি ভুলে গেছিলেন তার অর্থনীতি সংকটে, যাতে নগদ বৈদেশিক মুদ্রা এক প্রধান চাহিদা! যা স্বচ্ছন্দে পুরণ করে দিতে পারবে চীন! কিন্তু সেই চীন কী আর হাসিনার বাংলাদেশের জন্য আছে? না, হাসিনা নিজে সেই হাসিনা আছেন

তাই বেশী না মাত্র তিন মাস! এই তিন মাসের মধ্যে হাসিনা আর সাথে ভারত-আমেরিকা সবপক্ষকেই বাংলাদেশের অর্থনীতির দুর্দশার সামনে এখন হাজির করে দিয়েছে।  যেটাকে  ২৮ জানুয়ারির পরে ভারত-আমেরিকা নানান চাপাচুপা মেরে হাসিনাকে ভুলিয়ে প্রলুব্ধ করে রেখে দিতে তখন সক্ষম হয়েছিল ; আর হাসিনাও তাতে মিথ্যা ক্ষমতার স্বর্গসুখে  ‘বহল গয়া’ মানে  আউলায়ে ভেসে গেছিল! কিন্তু এখন? ডোনাল্ড ল্যু আসতেছেন তিনি কী করবেন? তিনি কী হাসিনাকে অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা যোগাড় করে দিতে পারবেন? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউএস-এইড এর কোন প্রকল্প কী এমন বড় পরিমাণের বা যা হাসিনা সরকারের জন্য এখন চালু আছে? আমেরিকা লাস্ট কবে কাকে এমন বড় পরিমানের প্রকল্প দিয়েছে?  মনে রাখতে হবে হাসিনার কিন্তু প্রকল্প দরকার নাই, নগদ বৈদেশিক মুদ্রা যা বাজেট সহায়তা নামে আসে তা হতে হবে। আছে আমেরিকার মুরোদ?
এর সোজা মানে হল, হাসিনা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি – এরা সকলে ডুবে মরে যায় যাক; আমেরিকার টার্গেট একটাই বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ, ঋণ বা প্রভাব ইত্যাদি এসব সে কিছুই দেখতে চায় না!  সে নিজস্বার্থ, নিজ টার্গেট নিয়েই ব্যস্ত থাকতে থাকবে!!!!

অথচ আমেরিকা ঠিকই জবরদস্তিতে বা প্রলুব্ধ করে হাসিনাকে চীনের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করাতে চায় এটাই আমেরিকার একমাত্র টার্গেট ও বিদেশনীতি।
একারণের গত বছর মোটামুটি সেপ্টেম্বর থেকেই তাই দানব হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে দিলে যদি আমেরিকা মনে করে তার লক্ষ্য হাসিল হবে তো সেই করবে – আর এটাই সে করেছিল! তাতে বিগত দুই বছর সে বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনকে প্রচ্ছন্নে সমর্থন করে চললেও সে এটা ত্যাগ করে চলে গেছিল!  কারণ, শুরুর দিকে আমেরিকার মনে হয়েছিল হাসিনাকে উতখাত করলে তার বাংলাদেশে ‘চীন ঠেকাও’  – এই লক্ষ্য পূরণ হবে। কিন্তু মোটামুটি সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালের পর থেকে আমেরিকা বাংলাদেশকে হাসিনার শাসনেই থাক বলে ফেলে পালিয়েছিল। এটা ভারতের নিরন্তর ঘ্যানর ঘ্যানর এর জন্যই হোক অথবা আমেরিকা নিজ লক্ষ্য অর্জন (‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ প্রতিষ্ঠা নয় কিন্তু বরং চীন ঠেকানো) অসম্ভব জ্ঞান করাতে মানে তা যেটাই হোক;  আমেরিকা আমাদের ফেলে পালিয়েছিল।

এক নিঃশ্বাসে বলা পরের ঘটনাবলী হল, ৭ জানুয়ারির কথিত নির্বাচন, পরে ১১ জানুয়ারির মধ্যেই নয়া এমপি, নয়া মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের শপথ গ্রহণও সমাপ্ত। এরপর থেকে ২৮ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত প্রতিদিনের মিডিয়া হেডলাইন ছিল হাসিনার সাথে চীনের সম্পর্ক নিয়ে। নগদ ডলার (বাজেট সহায়তা) সংকট, তিস্তাসহ নতুন চিনা প্রকল্প ইত্যাদির কিছু বাকি ছিল না যা নিয়ে কথা উঠে নাই। আর এর প্রত্যেকটাতেই চীনারা হাসিনা সরকারকে সহায়তা করতে রাজি – এই ছিল সারকথা। এজন্য এমনকি হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন এর জন্য চীনা আমন্ত্রণও দেয়া হয়ে গেছিল।
কিন্তু হায়! ঐ ২৮ জানুয়ারির বিকেল থেকেই পরিস্থতি একেবারে উলটা হয়ে যায়। ঐ সন্ধ্যায় ওবায়দুল কাদেরের সাথে দেখা করেছিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদুত প্রণয় ভার্মা। তিনি আসলে সেদিন একা ভারত না ‘আমেরিকার এডভান্স পার্টি’ হয়েও কথা বলেছিলেন। মানে হল, আমেরিকা আমাদের ফেলে পিছটান দিছিল ভারতের সাথে শলাপরামর্শ করে আর তাতে তারা কী সাব্যস্ত করেছিলেন তা বয়ান করেছিলেন। এরপরের এক সপ্তাহের ঘটনা হল, অজিত দোভালের সরকারিভাবে অস্বীকৃত থেকে যাওয়া ঢাকা সফর আর শেষ ৪ ফেব্রুয়ারি হাসিনাকে লেখা নয়া উদ্যোগে একসাথে কাজ করার আগ্রহ জানিয়ে  বাইডেনের চিঠি -ঢাকায় হস্তান্তর।

আলী রিয়াজের এসাইনমেন্টঃ
অনেকদিন পরে দেখলাম তিনি ডিপ্লোম্যাটে লেখা ছেপেছেন গতকাল। যার সারকথা একটাই চীনারা খারাপ!
পুরানা কথা, চীনা ঋণ কত খারাপ আর পরিশোধ অযোগ্য হয়ে গেছে ইত্যাদি।
আমার মনে হয় না, আলী রিয়াজ কখনও আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের দেয়া ঋণ তলিয়ে গেছে; কেউ শোধ দিতে পারে নাই – এমন একটা ক্যাটাগরির দেশের লিসট আছে যা তিনি স্টাডিকরেছেন। এর নাম HEAVILY INDEBTED POOR COUNTRIES (HIPC) । নেটে সার্চ দিলে পাবেন। যেমন এমনই একটা সাইট হল, এখানে DEBT RELIEF UNDER THE HEAVILY INDEBTED POOR COUNTRIES (HIPC) INITIATIVE
এর কথা এখানে আনার মানে হল, এমন অবকাঠামো ঋণ বিতরণ করতে গিয়ে সবারই ব্যর্থতা আছে। কিন্তু সেজন্য যে ঋণ ব্যবসায়ী বা ঋণের জ্বালে ফাঁসানোর দেশ – এসব প্রপাগান্ডার মানে হয়। মানে আমি বলতে চাই, HIPC এর এক্টিভিটি দেখে আলীরিয়াজ নিশ্চয় বলবেন না যে তাহলে  আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক কোন “ঋণ ব্যবসায়ী বা ঋণের জ্বালে ফাঁসানোর” প্রতিষ্ঠান। হাল্কা মন্তব্য না করাই ভাল।

আলী রিয়াজের লেখার আরেক সারকথা এখানে,

“China’s influence on Bangladesh increased remarkably after 2009 when the
relationship between India and Bangladesh has been described as a “golden era.”
This development juxtaposed with the upcoming joint military exercise of
Bangladesh and China, and the possibility of Chinese involvement in the 
Teesta project, indicates that the geopolitical great game in Bangladesh
will be more intense.”

তিনি আসলে আমেরিকান স্বার্থের চোখ দিয়ে দেখে লিখেছেন। নিশ্চয় আমাদের রাষ্ট্রস্বার্থ আলাদা; এর উপর আবার হাসিনা নিজেও নিজের ক্ষমতায় থাকবার স্বার্থও এর মধ্যে পাঞ্চ করবেন।

চীনা ঋণের সাথে চীনের পলিটিক্যাল এজেন্ডা থাকে তাই এটা খারাপ, আর আমেরিকান ঋণ সুচিশুভ্রঃ
ব্যাপারটা কী তাই?  চীনা ঋণের সাথে চীনের পলিটিক্যাল এজেন্ডা থাকেই আর আমেরিকান স্বর্ণ যুগে যখন সে একাই দুনিয়ার ঋণদাতা ছিল সেই ঋণ সুচিশুভ্র? কোন পলিটিক্যাল এজেন্ডা ছিল না? তাই কী আলী রিয়াজ বলতে চাইছেন?
তিনি লিখেছেন,  Loans and investments from China, particularly the former, come with a political agenda of increasing its sphere of influence.
আমারটাই শ্রেষ্ঠ – এই মনোভাব ধারণ করলে এমন সবাইই নিশ্চিহ্ন হবে। শ্রেষ্ঠত্বই হিটলারিজম। এথনিক নির্মুলের পক্ষে আমাদের নিয়ে ফেলবে। কাজেই সাবধান। ঋণ-বিনিয়োগ দিবার সক্ষমতা নিয়ে উপরে অনেক বলেছি। পরিস্কার করে বলেছি সবধরণের ঋণ-বিনিয়োগ দিবার সক্ষমতা এটাই যেকোন দেশের অন্যের উপর কম-বেশি খারাপ-ভাল এবং তা নানান মাত্রার এটা হাজির হবেই। এখানে রাজনৈতিক প্রভাবের বেলায় আমার হলে সেটা ভাল আর চীনের হলে সেটা খারাপ এটাই শ্রেষ্ঠত্ববোধের সমস্যা হয়ে হাজির হবে।
তবে মজার কথা হল, এই চীনেরই অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে উত্থান এর পিছনে আছে আমেরিকান বিনিয়োগ – ওয়াল স্টিট বিনিয়োগ – যারা সবচেয়ে বেশী এর সুবিধাভোগী;  এখনও চীনের প্রতি তারা উদার। বিশ্বব্যাংকের সস্কারের প্রস্তাব তাদেরই। চীনের নেতৃত্বে ব্রিকস গঠনের বুদ্ধি পরামর্শ রেকমন্ডেশন ছিল তাদেরই।
তাহলে তখন নিশ্চয় চীনের উপর আরেরিকারও রাজনৈতিক এজেন্ডা ও প্রভাব ছিল? তাহলে সেগুলোচীন টপকাতেও পেরেছিল! সেটা এভাবে বা সেভাবে? কাজেই এগুলো শেষ কথা নয়। আবার ভাল করেলক্ষ্য করবেন রৃণদাতা আর গ্রহিতার মধ্যকার সম্পর্কও আগের মত না। অনেক বদল এসেছে তাতে। যেমন চীনের এব্যাপারে ডায়লগ হল এটা উইন-উইন সিচুয়েশন। না এতা একদম পবিত্র তা বলা আমার উদ্দেশ্য না। আমি কেবল এটুকু বলছি এটা অন্তত আমেরিকার যুগের মত নয়!
এখন ঋণ নেয়া ছাড়া আমরা প্রাক্তন কলোনি দেশের বিকল্প কী আছে? যেখানে আমাদের নিজস্ব সারপ্লাস দখলদারের লুটে নিয়ে গেছে। আবার আমাদের শাসকেরা ঋণের নয়ছয় করবে সেতা কতটা কম রাখা যায় এভাবেই আমাদেরকে আগাতে হয়। এছাড়া আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের আমেরিকা-চীনের কিনে নেওয়ার অভ্যাস-রেওয়াজও তো আছেই!

GOLD BACKED CURRENCY -ইংরাজি কথাটার মানে হল, শুরুতে ডলারসহ সব দেশের মুদ্রাই গোল্ড ব্যাকড ছিল। শুরুতে মানে সব মুদ্রাই জন্ম থেকেই। আর এটা ছিল ফিক্সড মুল্যমানের। মানে, আমেরিকান ডলার এর মান ছিল – এক আউন্স সোনা সমান ২৫ ডলার – এই স্থায়ী মূল্যের। ফলে এখনকার মত আজকের ডলারেররেট কী – এমন প্রশ্ন কেউ করত না। আর ডলার ছাপাবনার আগে সেই ব্যাংককে নিজ ভল্টে প্রতি ২৫ ডলার পরিমান নোট ছাপবার আগে এক আউন্স করে সোনা রাখতেই হত। কারণ যেকোন নোতধারী এসে ব্যাংকে সোনা ফেরত চাইলে তা দিতে বাধ্য থাকতে হত।
আমি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের নামে রেফারেন্স দিয়ে কথা বলেছি বহুবার। আজ আবার একটা দিতে হচ্ছে।  তিনি জিতেছিলেন প্রথম ১৯৩২ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে। পরের ১৯৩৩ সালের ২০ জানুয়ারি শপথ নিবার পরে তিনিওই প্রথম প্রেসিডেন্ট ডলারের অবমুল্যায়ন করার ঘোষনা দেন। তাতে এক আউন্স সোনার মূল্য হয় ৩৫ ডলার। তাঁর যুক্তি ছিল কথা সত্যও বটে সারা ইউরোপঅই ইতোমধ্যে নিজ নিজ মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটিয়ে ফেলে৪ছে। মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের খরচ মিটাতে না পেরে। আর তা থেকেই ১৯৩০ সালের দুনিয়াব্যাপী যে প্রথম মহামন্দা দেখা দিয়েছিল তা থেকেই সারা ইউরোপের প্রত্যেকটা দেশ এই অবমূল্যায়ন ঘটিয়েছিল। রুজভেল্টের পয়েন্ট হল, তিনি ইউরোপের মুদ্রাগুলোর সাথে নিজ ডলারকে সামতুল্য করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
পরে এই মুল্যাও স্থিত্মুল্য হয়ে যায়। এমনকি আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক ১৯৪৫ সালে জন্মের সময়ও এই ৩৫ ডলার স্থায়ীমুল্য ধরে প্রতিষ্ঠান দুটা যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু ১৯৫৮ সালে এসে হঠাত আমেরিকা ঘোষণা দেয় যে সোনা ভল্টে জমা রাখার নিয়ম বাধ্যবাধকতা সে মানে নাই অনেক দিন ধরেই। আর এখন তার আর কিছুই করার নাই।

সারা দুনিয়া পড়ে এক বিরাট গর্তে। এরই উপায়হীন সমাধান হিসাবে আসে নয়া নিয়ম, মুদ্রার বাজার দর ব্যবস্থা। মানে প্রতিদিনের (সেকালে টপ লেনদেনের) চারটা কারেন্সির মুল্য গড় করে তা আবার ডলারে প্রকাশের এক ব্যবস্থা চালু হয়। যেটা আবার আইএমএফের কারেন্সি [SDR]তে প্রকাশ করা হয়। প্রতিদিনের আইএমএফের সাইটে পাওয়া যায় আজকের কারেন্সি রেট কী। আর এসব নয়া নিয়ম সামলাতে নতুন করে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর ম্যান্ডেট লিখতে হয়েছিল সত্তরের দশকের শুরুতে।
এখন  আমেরিকা রাষ্ট্রের সারা দুনিয়ার কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ – এটা কী আলী রিয়াজ শুনেছেন কখনও! আমেরিকান এই প্রতারণা নিয়ে তাঁর মন্তব্য কী?

১/১১ কী? তা বাংলাদেশের সবাই জানে। কিন্ত্য এই ক্ষমতাদখল ঘটিয়ে আমেরিকা বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল কেন? তাঁর নিজেরও প্রথম ফেলো হিসাবে নিয়োগ সেসময়কালেরই ঘটনা।  কাজেই বাস্তবসম্মত ও একাদেমিক  থেকে কথা বলাই ভাল। নইলে তো ভাড়াখাটা ভাড়াটে মনে হবে। আলোচনা আর আলোচনা থাকবে না।
কাজেই আমেরিকা সব সততার দৃষ্টান্ত – এমন মনোভাবে না লিখাই ভাল। অবশ্য আপনাকে লেখার এসাইমেন্ট দিলে আর আপনি কী করবেন!!!!
কী আর করার; বুদ্ধিমান হন, ঠিক কাজটা করেন!

 

 

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

[এই লেখা কোন নিউজ নয়, ব্যক্তির নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষণ মাত্র। ফলে পাঠকের এ’লেখা পড়ে কিছুই বহন করা বা মান্য করার বাধ্যবাধকতা নাই। কেবল জানলেন যে এমন একটা মতামত আছে!]

Leave a comment