২৩ জুন পালন
গৌতম দাস
২৭ জুন ২০২৩ দুপুর ০২ঃ ৪৫
https://wp.me/p1sCvy-4Gi
আমাদের সমস্যার শেষ নাই।
এবারের ২৩ জুন পার হয়ে গেল; আজ ২৭ জুন।
এই ২৩ জুন এদিন কেউ লেখেন ‘পলাশী দিবস’ কেউ ঐতিহাসিক ‘পলাশী দিবস’। এমনকি প্রথম আলোও লেখেছে – ‘ইতিহাসের এই দিনে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন’ হয়েছিল। আর বেশির ভাগ উতযাপন কর্ণারে দেখা যায় নবাব সিরাজুদ্দৌলার একটা ছবি।
হা কথা ঠিক, এদিন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনে বৃটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বিজয় ঘটেছিল। আমাদের কলোনিদেশ হওয়ার পথ সুগম হয়েছিল।
তবে ইদানিং এদিন পালনে যেটা বাড়ছে তা হল, নবাবের বন্দনা। নবাব সিরাজকে এক ধরণের হিরো-ভাবে দেখানো – ঠিক আছে এমনটা তো হবেই। কিন্তু এখানে কিছু “অতিরিক্ত” হয়ে যাচ্ছে। অসতর্কে হয়ত মানে যথেষ্ট ভেবেচিন্তে তা করা হচ্ছে না বলে।
যেমন ধরেন এই ২৩ জুন ১৭৫৭ – এটা প্রায় তিনশ বা পোনে তিনশ বছর আগের ঘটনা। আর সেটা ছিল নবাবের আমল আর আজ হাসিনার আমল। হাসিনার নামে যতই ভটচোরের প্রমাণ বা অভিযোগ থাক হাসিনাকে কিন্তু স্বীকার করতে হয় যে তাঁর ক্ষমতার উৎস জনগণ। যেটা নবাব সিরাজের বেলায় তার সম্পর্কে যতই ইতিবাচকভাবে লিখি তাঁর ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়।
হাসিনাকে মিথ্যা করে হলেও দাবি করতে হয় “জনগণ তাকে ভোট দিয়েছে” – সেজন্যই তিনি নাকি ক্ষমতায়! বিপরীতে নবাব সিরাজের বেলায় “জনগণ তাকে ভোট দিয়েছে” এরকম কোন ধারণাই তখন ছিল না। কারণ তখন না জনগণ বলে ধারণার জন্ম হয়েছিল, না ভোট বা রিপ্রেজেন্টেশন বলে কোন ধারণা। আমরা বড়জোর ছিলাম নবাবের প্রজা। কোন নবাবী বা নবাবগিরি আমাদের ফেরত আনবার ব্যবস্থাই নয়। আমাদের কাজও নয় – এটা যেন না ভুলি!
মানে এক রিপাবলিক দুরত্বে এ’দুই শাসন ব্যবস্থা। আমরা আগামিতে হাসিনাকে সরিয়ে বা পরাজিত করে এক নয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা ও জনগণের শাসন বা জনশাসন ব্যবস্থা চালু করব। আর নিশ্চয় সেটা কোন “নবাবী শাসন ব্যবস্থা” হবে না। আর মূলকথা হল কোন নবাবী শাসন ব্যবস্থা কায়েম নবাবের প্রজাদের কাজই নয়। এজন্যই তা নবাবী শাসন মানে এক মনার্কি বা রাজ-শাসন ব্যবস্থা। আর প্রজা সে তো নবাব বা রাজার অধীনস্ত প্রজা-ই। আর বিপরীতে জনগণ মানে স্বাধীন জনগণ, যা নবাবের আমলে কেউই নয় – অস্তিত্বই নাই; হয়ে উঠতে পারে নাই।
কোন ২৩ জুন দিবস পালনের সময় – এই “নবাবী সীমাবদ্ধতা” -এটা যেন আমারা খেয়াল রাখি। সবার আগে নাগরিক, সিটিজেন, পাবলিক ইত্যাদি শব্দগুলোর অর্থ বুঝেন – ঠিক বুঝেছেন কিনা নিশ্চিত হন – নিজেকে ঝাকায় জিজ্ঞাসা করেন!
নিচে একটা পুরানা লেখার লিঙ্ক দিলাম। সাপ্তাহিক দেশকাল এরা কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল ম্যানেজমেন্ট ও স্টাফ দিয়ে পরিচালিত। কিন্তু তারা আমার একটা লেখা দুদুবার ছেপেছিল কি বুঝ থেকে দুই ভিন্ন প্রায় বছর খানেকের ফারাকে; আর দুই ফর্মে তা আমার জানা নাই। দ্বিতীয়বার সেটা আবার বড় করে লেখার পরে। কেন তাদের এলেখা এত পছন্দের তা আমি বলতে পারবে না। সেই লেখার শিরোনাম “সাতচল্লিশের দেশভাগের তাৎপর্য, অতঃপর …” । নিচে লিঙ্ক……।
এর বড় ভার্সানটাই এখানে আবার পাঠককে পড়তে দিলাম। তবে জানিয়ে রাখা ভাল এই লেখাটারই আরো বিস্তার ঘটিয়েছিলাম আরো পরে – তবে সেটা দুই পর্বে, ছাপা হয়েছিল আমার নিজস্ব ওয়েব সাইটে তখন আবার এই শিরোনামে “ ‘৪৭এর দেশভাগ – সকলেই সুবিধাভোগী, দায় নেয়নি কেউ”।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com



