একজন শেখ রোকন: লেখক ও গবেষক; সহযোগী সম্পাদক, সমকাল


একজন শেখ রোকন: লেখক ও গবেষক; সহযোগী সম্পাদক, সমকাল
গৌতম দাস
২৬ আগষ্ট ২০২৪
https://wp.me/p1sCvy-5HS

 

শেখ রোকন, সমকাল


সরি সরাসরি নাম ধরেই বলতে হল।  তিনি কবে সমকালে ঢুকে গেছেন আমি খেয়াল করি নাই।  কিন্তু এখন মানে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির আশপাশের কালে সর্বক্ষণ তিনি; ওদিকে চোখ ফেলতে না চাইলেও চোখে পড়ে যাচ্ছেন। কারণ, তিনি যে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতা এখন তলানিতে ঠেকেছে সেখানেই মুক্তি খুঁজছেন। তাদের এখনও ত্রাতা ভাবছেন!
তিনি হয়ত কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতায় গভীর আস্থা রাখেন। তা রাখেন তাতে নতুন অসুবিধা নাই। সেটা ব্যক্তিগত পছন্দ! কিন্তু সাথে সময়কাল সংক্রান্ত জ্ঞান না থাকলে তা আত্মঘাতি। এই সময়কালটা হল, হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির আশপাশের কাল। হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি উত্তরকালে কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলরা এবার আর নিজেদের নয়া পরিচয়ের কোন নৌকা ভাসাতে ব্যর্থ হয়েছে অথচ এটাও আপনি খেয়াল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তবু সেই তাদেরকেই [কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল] যারা নিজেরাই নিজেদের অতলে হারিয়ে ফেলেছেন সেখানেই আপনি এখনও মনিমুক্তা খুঁজছেন!   ঠিক যেমন ২০০৯ সালে হাসিনা উত্থানের যুগের শুরুতে এই গোষ্ঠি তারা কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতায় হাসিনার গুম-খুনের রাষ্ট্র বানানোটাকে মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণীর  চেতনা পক্ষে কাজ গণ্য করে এর পক্ষেই মানে হাসিনার ক্ষমতার পক্ষেই সাফাই যোগাড় কর্তা হয়ে হাজির হয়েছিলেন; শাহবাগে জড়ো হয়েছিলেন! ঠিক সেভাবেই আবার হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কালেও আবার নৌকা বদলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মানুষ এদেরকে ২০১৩ সালে তাদের শাহবাগী প্রকল্পের কালেই তাদের চেহারা দেখে ফেলেছিল। তাই হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কালেও তারা এবার আর কোন নৌকাতেই উঠতে পারেন নাই।
অথচ আপনি নিয়মিত এদেরকে নয়া (যদিও তা সেই পঁচা) উপস্থাপনাই হাজির করার জায়গা করে দিয়ে চলেছেন! কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতায় আপনার ভক্তি যাচ্ছেই না; অথচ এই অতিভক্তির খেসারত শুধু আপনি না দেশের মানুষ তো বটেই সাথে আপনার পত্রিকার স্টাফ ও মালিক সকলকেই বইতে হবে। কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতা গত শতকেই (মানে ২০০০ সালের আগেই) মৃত হয়ে গেছে। তবে এটা মোটা দাগে বলা কথা! একচুয়ালি এটা আনুষ্ঠানিকভাবে মরে গেছে ১৯৯১ ডিসেম্বরে; প্রতীকীভাবে বললে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পরে।
একথাটা বাংলাদেশিদের বুঝবার জন্য সহজ করে বলি।

মনিসিংহ-খোকা রায় এসব জমিদার-সন্তানদের হাত ধরে ১৯৪৮ সালে শুরু হওয়া পুর্ব-পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (যেটা এখন মূলত সিপিবি নামে) কথা কমবেশী সকলেই জানেন। যেটা একালে মানে ১৯৯১ সালের পরে ভেঙ্গে যাওয়া একাংশ মুজাহিদুল সেলিম বা প্রিন্সদের অংশকে কেবল আপনারা দেখতে পান। অপর অংশ মানে যারা অন্তত এখনও পার্টির সম্পত্তিতে তৈরি হওয়া বহুতল ভবনের অপর অংশের মালিক; এরা এখন কোথায়? এর উত্তরে এটুকু বলা যায় এই অংশ আর সেলিম- মঞ্জুরুলদের মত আরেক সিপিবি’র  কোন ‘কমিউনিস্ট পার্টি’ খুলে নাই। কেন?
পঙ্কজ ভট্টাচার্য, অজয় রায়েরা কোথায় হারিয়ে গেলেন? আগে যে রীতি চালু ছিল যে বাংলাদেশে হিন্দুরা জন্মানো মাত্রই পরিবারসহ নিজেকে ‘কমিউনিস্ট’ গণ্য করত; এই রীতিতে ছেদ পরেছিল তাতে! কিন্তু কেন?
এখানেই উত্তর পাবেন কেন জমিদার-সন্তানদের হাত ধরে ১৯৪৮ সাল থেকে নতুন করে “পুর্ব-পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি” শুরু হয়েছিল। মূল ঘটনা হল, পাকিস্তানের জন্ম মানেই কার্যত জমিদার উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া – জমিদার-হিন্দু আধিপত্য ও  দুশ বছরের জমিদারি রুস্তমি খতম তাদের শাসন উচ্ছেদ – এটাই ঘটেছিল। এরই লিগাল বা আনুষ্ঠানিক উচ্ছেদ হল পুর্ব-পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ১৯৫০ সালের জমিদার উচ্ছেদ আইন আনা। যেটা ১৯৫১ সালের আগষ্ঠে অনুমোদিত বা আইনে পরিণত হয়েছিল। আর এতে ক্ষুব্ধ জমিদার-হিন্দুরা এটাকে দেখেছিল এতদিন যাদেরকে তাঁরা পায়ের নিচে দলে  রেখেছিল সেই মুসলমানদের মাথা তুলে দাঁড়ানো। অন্যভাষায়, সেই থেকে – ইসলামই তাদের এনিমি বা স্থায়ী শত্রু। আর একারণে ইসলাম কোপানো (ধর্ম কোপানোর সুবিধা একমাত্র কমিউনিস্ট হলেই পাওয়া যেতে পারে বিবেচনা থেকেই) এই সুবিধা পাবার লোভ থেকেই জমিদার সন্তানেরা কমুউনিস্ট হয়ে গেছিল। না হলে মানে এরা নুন্যতম সাচ্চা কমিউনিস্ট হলে তো সবার আগে জমিদারী উচ্ছেদের পক্ষে তাদের কমিউনিস্ট পার্টির (চীনপন্থি অংশসহ সকলের) অন্তত একটা রেজুলেশন থাকত! তা নাই কেন? সিপিবি’র জবাব দেয়া উচিত!

ভুমি মালিকানা ব্যবস্থা নিয়ে খোদ কার্ল মার্কসের মৌলিক অবস্থান কী? তা কী এসব হিন্দু-কমিউনিস্ট এরা কখনও পড়ে দেখেছেন? কোন প্রমাণ নাই তাই মনে হয় না। অথচ মার্কস মনে করেন, জমিতে যেকোন (মানে জমিদারিসহ) মালিকানা ব্যবস্থা থাকা মানে ক্যাপিটালিজম বিকাশের পথ রুদ্ধ করা; মানে মার্কসের মূলকথা তাদের ভাষায় “পুরানা ফিউডাল সম্পর্ক”  বা সামন্তবাদ থেকে যাবে; যেমন, জমিদারতন্ত্র বিলুপ্ত হবে না এতে।
অথচ এই জমিদার নন্দন কমিউনিস্টেরা  আমাদের ইলা মিত্রের (কমিউনিস্ট হবার পরেও) তেভাগার গল্প শুনায় যার স্বামী (পুরানা) রাজশাহীর এক জমিদার ছিলেন। আসলে, কে জমিদার ছিলেন না?
প্রমথ চৌধুরী, কিশোরগঞ্জের জমিদার নীরোদচন্দ্র চৌধুরী (আত্মঘাতি বাঙালির লেখক)?

আবার এদের কান্ড দেখেন,  জমিদার-হিঁন্দুর ১৯০৫ সালের “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী” আন্দোলন নাকি পুর্ববঙ্গের স্বার্থে! অথচ প্রকৃত ঘটনা এর উলটা। সুর্য সেন ছিলেন, জমিদার-হিঁদুর স্বার্থের লেঠেল বা লাঠিয়াল! প্রীতিলতা বা কল্পনারাও তাই! অথচ তাদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল!!!  এর বিরুদ্ধেই পরের বছর ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল। সত্যি কথাটা হল,  পুর্ববঙ্গে জমিদার উচ্ছেদ এর কাজ শুরুর ক্ষেত্রে এক নম্বর প্রথম বীর হলেন হাজী শরীয়তুল্লাহ! এনিয়ে আমার লেখা পড়ে নিতে পারেন! অরিজিনালি লেখাটা প্রথম ছাপা হয়েছিল ২০১১ সালে।

হাজী শরীয়তুল্লাহ ও গণ-প্রতিরোধ
গৌতম দাস
আগস্ট ১২, ২০১৬
http://wp.me/p1sCvy-1EO

 

তাই এককথায়, ইসলাম কোপাতেই আর পুরানা জমিদার-হিন্দুর হারানো আধিপত্য যতটা পারা যায় ফিরিয়ে আনা ঘটাতেই ১৯৪৮ সাল থেকে আমাদের এদিকে  “পুর্ব-পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির” গঠন হয়েছিল। আর তা থেকেই ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জন্ম!

আর সেকারণেই ১৯৯১ সালে সোভিয়েত পতনের পরে তারা একেবারেই হতাশ হয়ে পরেছিল যে কমিউনিজমের আড়ালে ইসলাম কোপানো ব্যাপারটা আর কাজ করবে না,  এটাই ভেবেছিল।

যদিও মোট মাত্র ৯ বছরের মধ্যে তারা নতুন রাস্তা খুঁজে নিয়েছিল। ২০০১ সালে প্রায় সকল কমিউনিস্টেরাই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বুশের কোলে উঠে গিয়েছিল – সে তখন থেকেই এক নতুন বাপ তাদের! যে আর “মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ” নয় তখন থেকে!  কারণ সে আবার ইসলাম কোপানোর ফয়দা- এই লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ট দিবে পুরান কমিউনিস্টদেরকে। এই হল, পুরান কমিউনিস্টদের কাছে নাইন-ইলেভেন – টুইন টাওয়ার হামলা – ওয়ার অন টেরর এর মূল তাতপর্য ।  যা এক নয়া রাস্তা হয়ে এসেছিল জমিদার-হিন্দুর হারানো আধিপত্য ফেরত পারার আশা হিসাবে!

আর এসব কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল  এদের ততপরতায় বাংলাদেশের নীট ক্ষতিটা হল, বাংলাদেশের জনমত – ইসলামিজম আর প্রগতিশীল বলে শার্প আর বিপদজনকভাবে দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেছিল। সমাজে মতভেদ থাকা একজিনিষ আর ইসলাম কোপানো বা নির্মুলের চিন্তা আরেকটা! আর এর ফাঁক দিয়েই হিন্দুত্ববাদ ও র-এর ততপরতা বাংলাদেশে জেঁকে বসেছিল।
অথচ হাসিনা উতখাত বা মন্দির রক্ষা আর এখনও জীবন্ত বন্যা মোকাবোলা প্রশ্নে এই প্রথম ২০০১ সাল থেকে চলে আসা নয়া শতকে এখন ২০২৪ সালে এসে, এই প্রথম আমরা একতাবদ্ধ এক জনগোষ্ঠি!

একারণের বলেছি ২০০০ সালের পরের নয়া শতক থেকে পুরান  কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতা মৃত হয়ে আছে!  আর তখন থেকে যেকোন পুরান (বেশির ভাগ) কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল এর মুখ দিয়ে বেরোনো প্রথম শব্দ হল (যেমন ইনুকে স্মরণ করতে পারেন) জঙ্গীবাদ; মানে আর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ না।  এসবের হাত ধরেই গত ষোল বছরের হাসিনার ফ্যাসিজম এর পক্ষে সাফাইদাতা হল কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতা। শাহবাগ কী ছিল? কারা তাত্বিক সমর্থন দিয়েছে সাফাই দিয়ে পত্রিকা বের করেছিল? এরা আর এটাই জমিদার-হিন্দুর কমিউনিজম-প্রগতিশীলতার আড়ালে জমিদারি চিন্তা আধিপত্য রাজনীতি ফিরিয়ে আনার ততপরতা! যে জমিদারি চিন্তা আধিপত্য রাজনীতি এর পিঠে পা দিয়েই ইন্ডিয়া বা র-এর ততপরতা বাংলাদেশে ছেয়ে গেছিল!

অথচ গত শতকের পুরান কমিউনিজম এর কোন পুণর্মুল্যায়ন মানে আবার একে ভেবে দেখা, ঢেলে সাজানো (খোদ মার্কসের ভাষায় যেটা পর্যালোচনা -Critique) এটা ছাড়া এই মুরোদ ছাড়া কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতা এরা সকলেই কঠিনতম রাজনৈতিক অপরাধী! যেহেতু নয়া শতকে এসে পুরান কমিউনিজম একেবারেই মৃত!

আপনি শেখ রোকন এসব দিকে বেখবর! সেকারণে আপনি এসব পঁচা কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল নতুন করে কথা বলতে দিবার দাওয়াত দাতা – জায়গা করে দিতে এগিয়ে এসেছেন। আমি গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি” এর কথা বলছি বুঝতে পারছেন আশা করি।
গত ৫ আগষ্ট  আপনি এদের প্রধান নেতা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটা সাক্ষাতকার ছাপিয়েছিলেন। শিরোনাম ছিল উভয় পক্ষকে সাময়িক হলেও সমঝোতায় আসতেই হবে”অথচ আপনাদের উভয়ের কপাল খারাপ । পরের দিনই হাসিনা পদত্যাগ করে গোপনে ভারতে পালিয়ে যায়। মানে হল না আপনার মিডিয়ার কেউ না, এমনকি  সাক্ষাতকারদাতা চিন্তাও করতে পারেন নাই যে বাস্তব পরিস্থিতি কী? কোন দিকে এর অভিমুখ! এর মূল কারণ  কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতা তো আসলে মৃত, মুরোদহীন হয়ে আছে এটাই আপনারা জানেনই না; অথচ এই মৃত লাশের উপর মুখ লাগিয়ে আপনারা এর চর্চার গুনগান গাইতেছেন!

বুয়েটের কনসালটেন্ট শিক্ষক যারা আপনার কাছে পরিবেশবাদ বুঝা বন্ধু-সুহৃদঃ
যতদুর মনে পড়ে বুয়েটের এক ছাত্র আবরারকে হাসিনা সরকার ও তাদের কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল ক্যাডারেরা খুন করার পরে আপনি আমাকে ম্যাসেজ করেছিলেন। আপনার সাথে জেআরসি [জামিলুর রেজা চৌধুরী বুয়েটের প্রবীন শিক্ষক যিনি বাংলাদেশের যে কোন বড় ব্রীজ বা সিভিল প্রজেক্ট এর কনসালটেন্ট] কথা হয় যেখানে স্যার আমার নাম তুলেছিলেন প্রাক্তন ছাত্রনেতা হিসাবে আর সেদিন সেকথা আপনি আমাকে জানিয়েছিলেন। পাঠকেরা অনেকে জানেন হয়ত তবু জানিয়ে রাখি আমি ১৯৭৯ সালে প্রথম বুয়েটে ভর্তি হয়েছি্লাম কিন্তু গ্রাজুয়েট হয়ে বের হয়েছিলাম ১৯৯৩ সা্লে, মানে এরশাদ পতনের পরে বুয়েটে ফিরেছিলাম রেগুলার হয়ে তাই। মাঝের প্রায় দশবছর সক্রিয় রাজনীতি করে বেড়ানোর কারণে বুয়েটের বাইরে ছিলাম, বা ছাত্রত্ব ছিল না।  তবে মূল কথাটা হল আমার কঠিন রাজনৈতিক সক্রিয়তার জন্য (১৯৮০-৮৩) এই সময়কালের খুব কম ছাত্র-শিক্ষককেই পাওয়া যাবে যাদের কাছে আমি পরিচিত এবং ইতি-নেতি চরিত্র ছিলাম না। ভিসি থেকে সিনিয়র শিক্ষকেরা মূলত তাদের এপলিটিক্যাল [রাজনীতি খারাপ জিনিষ] এটিচ্যুডের কারনে আমার রাজনৈতিক সক্রিয়তাকে নেতি চোখে দেখতেন। যদিও এই রিটায়ের্ড বয়সে এসে এদের অনেকেই এখন উলটা আমাকে প্রশংসা করেন । (যদিও আমাকে এখনও ভালবাসেন এমন প্রবীন বুয়েট শিক্ষকের সংখ্যাও কম না।) আপনি শেখ রোকন আমাকে সেকথাই জানায়ছিলেন আমার যতদুর মনে পড়ে বলেছিলেন আমাদের আমল হলে এমন আববার হত্যা আমরা ঘটতেই দিতাম না।

কিন্তু আমার শিক্ষকদের সম্পর্কে সাধারণভাবে আমার ব্যক্তিগত মুল্যায়ন তখনও যা এখনও তাই আছে!
এরা মূলত এ-পলিটিক্যাল [রাজনীতি খারাপ জিনিষ মনে করা এটিচ্যুডের]। অথচ এরা প্রায় ব্যতিক্রম খুব কম এভাবে যত বয়স্ক হন ততই সরকারী কনসালটেন্সি পাবার বা ভিসি হবার দৌড়ে সরকারের কোলে উঠে পড়তেও দ্বিধা করেন না। এমনকি এখনও তারা রাজনীতিই বুঝেন না অথচ ভাব করেন তারা রাজনীতির তত্ব বুঝেন এমনকি পরিবেশবাদও বুঝেন! কী এক তামাশা!

এদের তামাশার একটা নমুনা দেখেনঃ
যেখন দেখেন এবারের সিলেট-কুমিল্লা-ফেনী-লক্ষীপুর-চট্টগ্রাম ডুবে যাবার পরে – “রাজনীতির অংশ নয় এই বন্যা আইনুন নিশাত – এই লেখাটা ছাপা হয়েছে সমকালে।
আইনুন নিশাত উনি অরিজিনালি বুয়েটের সিভিলের শিক্ষক; উনি  রাজনীতি বলতে কী বুঝেন? এছাড়া উনি তাহলে কী রাজনীতি বুঝেন? মনে হচ্ছে আসলে উনি রাজনীতি বলতে “দলবাজী” বুঝছেন। বুয়েটের ছাত্র হিসাবে আমার অভিজ্ঞতা হল বুয়েটের কোন শিক্ষকের রাজনৈতিক-বোধ নাই। পলিটি (polity) ধারণা সে তো অনেক দুরের বাত! তা না থাক! কিন্তু তাদের ভান আর কোন দলবাজিকে রাজনীতি বলে বুঝা এটা অসহ্য, অগ্রহণযোগ্য।  এর চেয়ে অসহ্য হল এরাই আবার নিজ পেশার শেষের দিকে সরকারী প্রজেক্টের প্রধান কনসালটেন্ট হওয়া কিংবা ভিসি হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন; ফ্যাসিজমের কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে ঝুলে পড়তে দ্বিধা করেন না।

এই যে  আইনুন নিশাত সাহেব “রাজনীতির অংশ নয় এই বন্যা” বলে ফতোয়া দিলেন – তাহলে উনি রাজনীতি বুঝেন বলে দাবি করে বসলেন! নাকি? অথচ এটাই হল তাঁর নিরেট ভারত-প্রীতি। সোজাসাপ্টা করে বললে ভারতের পক্ষে, লীগের পক্ষে দালালি। এছাড়া নিজ ইঞ্জিয়ারিং টেকনোলজি ও এনভায়রণমেন্ট বুঝবার অযোগ্যতাই উনি নিজে ধরেছেন!

কমন নদী বা প্রবাহিত অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে ভাটির দেশের এমন নদীতে সমান হিস্যা ও অধিকার থাকে। তাই অভিন্ন নদীতে বাধ-ড্যাম বা এর প্রবাহে যে কোন বাধা সৃষ্ঠি করা এমনকি পানি টেনে অন্যদিকে নেওয়া ইত্যাদি সব কাজই অবৈধ; ভাটির দেশের অধিকারকে ক্ষুন্ন করা – এসব কথা উনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, কথিত পরিবেশবাদী বা দাবিকৃত রাজনৈতিক-বোদ্ধা হয়েও জানেন না। আসলে না জেনে এসব কথা বলার মজাই আলাদা তাই না!

কী আর বলব? উনি আমাদের শিক্ষক হয়ে বসে আছেন! সারাজীবন এরাই [জেআরসি সহ সেকালের সিনিয়র শিক্ষকেরা] আমার-বিরুদ্ধে গালাগালি করে গেছেন যে আমি নাকি বুয়েটে ছাত্রদের মধ্যে রাজনীতি ঢুকিয়েছি! অথচ তারা প্রায় সকলেই কনসালটেন্ট কিংবা ভিসি হওয়ার জন্য ফ্যাসিজমের কোলে উঠে বসতে দ্বিধা করেন নাই, এখনও করছেন ভারতের দালালি!

এবার শেখ রোকনের কথায় আসিঃ
আর শেখ রোকন তিনি নাকি কোন নদী বিষয়ক, পরিবেশ বিষয়ক এনজিও সাথে যুক্ত বিধায় তিনিও  আইনুন নিশাত সাহেব এর সমর্থন পেয়ে দাবি করছেন এবারের বন্যায় সবই বৃষ্টির পানি, ভারতের দোষ নাই। আর সাথে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও তাঁর সাথে আরও কিছু শাহবাগী কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলদের [যারা সেসময় সর্বজন কথা বের করতেন] পাল্লায় পড়ে তাদের লেখা এখন প্রমোট করছেন শেখ রোকন, হয়ত ভাবছেন আমরা বন্যায় ভারতকে দায়ী করে সাম্প্রদায়িকতা করছি! অথচ শেখ রোকন আপনিও অপরাধী! অজ্ঞ থেকে মিথ্যা প্রপাগান্ডা করার অপরাধে।

আগে পরিবেশ কী তা বুঝেনঃ
আগে পরিবেশ কী তা বুঝেন। এটা অন্তত বস্তুবাদ না যে সাইন্স বা বিজ্ঞানের জ্ঞানে আপনি তা বুঝে যাবেন; ইঞ্জিনিয়ারদের লগে ঘুরে ঘষাঘষি করলেই শিখে যাবেন! অন্তত কিছু ফিলসফির মৌলিক জ্ঞান-ধারণা ছাড়া কেউই   পরিবেশ বুঝতে পারবে না। যেমন পরিবেশ শব্দটাই ভুল! প্রাণ-পরিবেশ বলা উচিত তাহলে আপনার যে কিছু হুশ আছে তা বুঝা যাবে।

আবার আরও কিছু সহজ পথও আছে।
পারিবারিকভাবে মুসলমান নাম করে আছেন যারা সেই ভরসায় বলছি। নূহ-নবীর নাম না চাইলেও তো জেনেছেন শুনেছেন। এই নাম ও সাথে তার বয়ান ও এর তাতপর্য বুঝতে মনোযোগ দেন। অনেক ফয়দা হবে।  হুমায়ুন আজাদ বা জাফর ইকবালসহ কথিত যত বিজ্ঞানবাদী আছেন তাদেরকে  মাথা থেকে ফেলেন আগে আর এসবের চেয়ে নূহ-নবীর তাতপর্য অতুলনীয় শ্রেষ্ঠ! শুনতে অবাক লাগতে পারে কিন্তু এটাই কঠিন সত্য!
আচ্ছা আপনা্রা তো কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতা শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করে ইসলাম কোপানো কে ফরজ জ্ঞান করেন। তাই আসেন নূহ-নবী বাদ রাখেন। ক্রিশ্চানিটিতে নোহা [NOAH]  এর কনসেপ্ট আছে। অথবা আসেন হিন্দুত্ববাদই তো শ্রেষ্ঠ প্রগতিবাদ; আসেন সেখানে আসেন। সেখানে মনু-অবতার (অবতার মানে সনাতনি ব্যাখ্যা হল আরেক দুনিয়া থেকে যে এই দুনিয়াতে মানুষকে উদ্ধারে সময় সময়ে ‘অবতরণ’ করে আসেন) খুঁজে দেখেন। সব জায়গায় মানে সব থিওলজিতেই (ধর্মতত্বে) কমন একটা জিনিষ পাবেন একটা নৌকার প্রতীক আর দেখবেন জোড়ায় জোড়ায় প্রাণ-প্রজাতি নূহ-নবীর মতন করে ঐ নৌকায় তুলছেন!
যেকোন ধর্মতত্ব মেটাফরিক্যাল [metaphor] ভাষায় দুনিয়ায় হাজির হয়;  এর সোজা মানে, এর ভিতর একটা গভীর মানের দিক আরেকটা  সাদা-সাপ্টা মানে থাকে। চিন্তার মুরোদ থাকলে, ওর গুঢ় অর্থের দিকটা তালাশ করেন। রব এর গুণ, প্রতিপালক এর গুণ বৈশিষ্ঠ যদি বুঝেন আপনার উপর হেদায়েত হয়ে থাকে তবে বুঝবেন নূহ-নবী সংক্রান্ত প্রতীক মেটাফোর!

আবার ভুল বুঝেন না যে আমি আপনাকে ধর্মে মনোযোগী হতে বলছি। সেটা আপনার ব্যক্তিগত! বলছি পারিবারিকভাবেই যেটা আপনার ভিতর যতটুকু আছে যা আপনি কখনও এক্সপ্লোর করেন নাই; মেরে ফেলেছেন কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলদের পাল্লায় পরে; ইসলামবিদ্বেষে আর বিজ্ঞানবাদীতাই – সেটা ফিরে এখনও মনে করে হাতড়ে দেখলে এখনও অনেক কিছু পেতে পারেন। ধর্ম পালন না করেন সেটা আমার এখানে বিবেচ্য নয়; কিন্তু সবার আগে ধর্মতত্বকে তুচ্ছ জ্ঞান করারটা অন্তত ত্যাগ করেন।

আর যদি মুরোদ হয় তবে ফিলসফির মৌলিক কিছু দিকে পথ ধরে আগাতে হবে। স্পিরিট [Spirit) বুঝতে হবে মানে, মানুষ স্পিরিচুয়ালও। অর্থাৎ মানুষ কেবল বস্তু না – কেবল এক ফিজিক্যাল ফেনোমেনা নয়। তাই কেবল বিজ্ঞান এর বুদ্ধি দিয়ে মানে যেটা ইম্মানুয়েল কান্ট [1724-1804] এর বিজ্ঞানবোধ বা লজিক (চিন্তার লজিক্যাল বা র‍্যাশনাল পদ্ধতি)  – এসব দিয়ে মানুষ বুঝা সম্পন্ন হবে না।  মানুষ স্পিরিচুয়ালও এদিকটা বুঝা যাবে না।। তাই সেদিক্টাও মানে কান্ট এর এই চিন্তার পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা বুঝতে হবে যেটা কান্ট [মানে kantian logic / rationality] এর সীমাবদ্ধতা! অন্যভাষায় এটাইকেই বলছি,  ফিলসফির মৌলিক কিছু দিকে পথ ধরে আগাতে হবে। স্পিরিট বুঝতে হবে মানে মানুষ স্পিরিচুয়ালও। তাতে স্পিরিটের অর্থ ধর্মতত্ব দিয়ে বুঝেন কিংবা হেগেলের (absolute Spirit) স্পিরিট অর্থেই বুঝেন তাতে অসুবিধা নাই – হেগেলের স্পিরিট যেটার বাংলা অনেকে করেছেন প্রজ্ঞা। আবার  আধাবুঝের ধর্মতত্ব দিয়ে অনেকে এটাকে আধ্যাত্ববাদ বলে এক স্টুপিড বা পচা বাংলাও করে থাকেন অনেকে!
আর এরপরেও যদি চিন্তার মুরোদে কুলায় তবে হেগেলকে মার্কস কিভাবে ও কোথায় কোথায় বদলে নিয়েছেন ততদুরও যেতে পারেন। এটাই খোদ মার্কসের গুরুত্বপুর্ণ অবদান যেটাকে বলে, আইডিয়াল [ideal] আর রিয়েল [real] এর ফারাক কী – সেই প্রসঙ্গ! তবে মনে রেখেন এই অংশের খবর ব্যক্তি স্টালিন ও স্তালিনের অনুসারী (কার্যত এটাই আবার মার্কসবাদ বলে সারা দুনিয়ায় পরিচিত; যেকারণে আমার অনুবাদ বইয়ে বলেছি মার্কস আর মার্কসবাদ দুইট আলাদা) এমন এদের কারো কাছেই নাই; জানা নাই। এদিকটা বুঝতে জর্মান ইডিওলজি পড়তে হবে। বিশেষ করে ফয়েরবাখ সম্পর্কে মার্কসের গুরুত্বপুর্ণ মূল্যায়ন কী আছে সেখানে, সেটা!
কেবল একটা নোট দিয়ে রাখতে পারি। আমার নিজের ওয়েব সাইট [goutamdas.com] যেখানে আমার নানান লেখা গত ১০ বছর ৫০০ এর বেশী হয়ে গেছে বলে আমাকে জানিয়েছে। ওখানে গান্ধীর সত্য মানে ‘ট্রুথ’ নয়, ফ্যাক্টস নামে আমার একটা লেখা আছে। ওখান আসলে আমি  আইডিয়াল [ideal] আর রিয়েল [real] নিয়ে মার্কসের ধারণাটা প্রয়োগ করেছি – গান্ধীর চিন্তা ভাবনার বৈপরীত্য-কে দেখিয়ে দেবার জন্য। কাজেই শিরোনাম দেখে ওটা গান্ধীর উপরে লেখা মনে হলেও আসলে ওটাই হেগেল প্রসঙ্গে মার্কসের অবস্থান নিয়ে লেখা! বুদ্ধিমানেরা সেভাবে পড়তে পারেন!

তবে আমাদের এখানে এই লেখার প্রসঙ্গে মৌলিক রাজনৈতিক বুঝাবুঝির মুল জায়গাটা হল, কমন বা অভিন্ন নদীর পানির উপরে ভাটির দেশের অধিকার বা সম-অধিকার।
এই জায়গায় আইনুন নিশাত সহ সকল ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানবাদীতার নামে ভারতীয় দালালদেরকে আমাদের উপরে ফেলে দিতেই হবে!

এই কথাটা শেখ রোকন যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই সেটা উনার ব্যক্তিগত, উনার পত্রিকার স্টাফ ও মালিকের জন্য ভাল ও সঠিক হবে! নইলে এরা সবাই জনগণের হাতে উপড়ে ফেলে দেওয়া দশাতে পড়বেন!

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

আপডেটঃ   ০২ঃ৫৩ দুপুর  ২৬ আগষ্ট ২০২৪
শেষ আপডেটঃ  ৩ঃ৩০ দুপুর  ২৬ আগষ্ট ২০২৪

 

Leave a comment