আবার দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য


আবার দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
গৌতম দাস
৩১ আগষ্ট ২০২৪
https://wp.me/p1sCvy-5Jg

 

 

যে একবার ভারতের দালাল সে সব সময় এমনকি সব দুনিয়াতেই দালালি-ই করার সুযোগ খুঁজবে!
আমি বারবার বলেছি আর  এটা এখন আমার ধারণা যে নতুন সরকারও এটা বুঝে গেছে যে খেলাপি ঋণ চোর খাতকদের গলায় গামছা পেচিয়ে আদায় করা ভিন্ন পথ নেই। কারণ টাকা ছাপিয়ে হাসিনার মত চোরের সমাধানের পথে যাওয়াটা হবে আত্মহত্যা। এটাই দুর্ভিক্ষ ডেকে আনার পথ হবে। মুদ্রাস্ফিতির চাপে গরীব তো বটেই মধ্যবিত্তও সব খাবার কিন্নতে না পেরে মারা যাবে।

কাজেই বর্তমান ইউনুস সরকারও ব্যাপারটা অনুভব করেছে যে দেশে-বিদেশে থেকে চোর আর ঋণ খাতকদের থেকে অর্থ আদায় এটা এনফোর্স করা ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভিন্ন পথ নাই। আমাদেরকে ডেসপারেট হলেও হতে হবে; উপায় নাই।

সেসব সুত্রে গত ২২ আগষ্ট লিখেছিলাম,

রেহমান সোবহান- দেবপ্রিয়দের সিপিডি (CPD) একটা ভারতীয় স্বার্থের প্রতিষ্ঠান
অথচ, ইউনুস তাদেরকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ এর দায়িত্ব দিয়েছে।
রেহমান সোবহান- দেবপ্রিয়দের সিপিডি এর এখন উচিত হবে ২০০৪ সাল থেকে বিগত ২০ বছর যত ভারতীয় দালালি এরা নিজেরা করে গেছে এরই শ্বেতপত্র প্রকাশ করা।আমার বক্তব্য আমল পায় নাই। প্রথম আলোর বক্তব্য – র্থনৈতিক অবস্থার ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করা হবে, কমিটির নেতৃত্বে দেবপ্রিয় – এটাই বাস্তবায়িত হয়েছিল। দেবপ্রিয় এর নেতৃত্বে ১২ জনের এক কমিটিও গঠিত হয়েছে।এই গরীবের কথা বাসি হওয়ার পরে ফলেছে।  এনিয়ে আমার আগের লেখার লিঙ্ক এখানেপাবেন। আমি সেখানে প্রমাণ দিয়েছিলাম ২০১১ সাল একচুয়ালি ২০০৭ সাল থেকেই বাংলাদেশ যেন ভারতকে করিডোর দেয় এই দিবার পক্ষে কাছা খুলে দালালি শুরু করেছিল রেহমান সোবহান ও দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও তাদের  (র-এর অর্থ ছাড়া) অচল সিপিডি [CPD] প্রতিষ্ঠান।
আর সেই সিপিডির দেবপ্রিয় কেই ইউনুস সাহেব স্বেতপত্র প্রকাশ কমিটির প্রধান করেছেন। এনিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কিছু ক্ষমতাবান লোকের সাথে আমাকে সংঘাতে পর্যন্ত যেতে হয়েছে; সম্পর্ক ভেঙ্গে দিতে হয়েছে। তাদের বক্তব্য আমি নাকি ওভার রিয়াক্ট করছি। কিন্তু এখন কী হল?২৯ আগষ্ট দেবপ্রিয় চেহারা দেখিয়েছেনঃ
গত ২৯ আগষ্ট ছিল দেবপ্রিয়সহ ও ১২জনের কমিটির প্রথম মিডিয়ার সামনে হাজির হবার দিন।
দেবপ্রিয় কোন রাখডাক আর করেন নাই। সারকথাটা বলেছেন যে, হাসিনা ও তার পরিবার এবং মন্ত্রী-উপদেষ্ঠাসহ পুরাগুষ্ঠি যা কিছু  অর্থ বিদেশে নিয়ে গিয়েছে তা আর ফেরত আনা সম্ভব নয়।অনেকের মনে হতে পারে দেবপ্রিয় ঠিক কী বলেছিল তা জানা দরকার। হা আমারও তাই ইচ্ছা। তাই এখানে NTV এর প্রচারিত ঐদিনের মিডিয়া রিপোর্টের ক্লিপ পাঠক নিজে মনোযোগ দিয়ে পড়ে নেন।

ভিডিওও টা সবাই নিজে দেখে নেন। এরপরেও ওর ট্রান্সক্রিপ্ট আমি যা বের করেছি তাও এখানে দিয়ে দিচ্ছিঃ

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। মানে বলতে চাইলেন এই অর্থ প্রায় ফেরত আনা যাবে না।
এনিয়ে NTV এর ভিডিও ক্লিপ সাথে দিয়েছি সবাই নিজে খুলে শুনে নেন।
এইটা একটা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। এই টাকা থেকে যে ঐ বাড়িটা কেনা হয়েছিল ঐ দেশে ওই সময়ে এইটাকে লাগানো ফিট করা এত্তো সহজ নয়। এইটা আনার ক্ষেত্রে যে আইনানুগ চুক্তি থাকে সব দেশের সাথে আমাদের সেই চুক্তিগুলো যথোপযুক্তভাবে নেই। তৃতীয়ত ঐ চুক্তিগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করার জন্য আইনজীবী থেকে শুরু করে আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি সেই দক্ষতাটুকুও আমাদের নাই।

এরপরেও অনেকের মনে হতে পারে এত খোলাখুলি তিনি কেমনে বলেন।
তাই তাদের জন্য, দেবপ্রিয়ের শেষ কথাগুলোঃ
“তিনি বলেছেন সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যেন অর্থপাচার আর না হয় এবং পাচারকারীদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়”।

অর্থাৎ এবার এই কমিটি অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তারা কিছুই করতে পারবেন না।  আগামিবার মানে পরের কোন হবু চোর সরকার একই কাজ করলে যাতে সে অর্থ ফেরত আনা যায় সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে চান দেবপ্রিয়!

দেবপ্রিয়ের এটা খুবই এক স্টুপিড বক্তব্যঃ
হ্যা, এটা আসলেই দেবপ্রিয়ের এটা খুবই এক স্টুপিড বক্তব্য। কারণ, তিনি নিজেই এই কমিটি গঠনের ন্যায্যতা কী সেই প্রশ্ন নিজেই তুলে ফেলেছেন!
প্রথমতঃ কোন সরকারের কোন সরকারী কমিটি গঠন (তদন্ত বা স্বেতপত্র প্রকাশের লক্ষ্যে) কোন ফাজলামির বিষয় না। এতে ম্যান্ডেট বা উদ্দেশ্য লেখা থাকতেই হবে, হয়।  কাজেই কমিটি গঠন হয়ে যাবার পরে কমিটিরনেতা কমিটির উদ্দেশ্য-ম্যান্ডেট বা কাজের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করছেন কেন?
অথচ দেবপ্রিয়ের বক্তব্য ইউনুসের উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
কারণ, দেবপ্রিয়কে প্রধান করে ইউনুসের গঠন করে দেয়া এই কমিটি অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তারা কোন কিছুই যদি নাই করতে পারে তবে ইউনুস সরকারের এই কমিটি গড়ার দরকার কী?
সেক্ষেত্রে এই যে ১২ জনের কমিটি এদের পিছনে যদি সরকারী একটা পয়সাও খরচ করা হয় সেটাই তো অপচয় হবে, নাকি?তাহলে যে প্রশ্নের সম্মুখীন ইতোমধ্যেই ইউনুস সরকার হয়ে গেছেন বা দেবপ্তারিয় সাহেব করে দিলেন তা হলঃ
ইউনুস সাহেব কেন এই কমিটি গড়তে গেলেন যারা যোগ্য বা কম্পিটেন্ট না? যারা বলছে এটা কঠিন প্রায় অসম্ভব কাজ! মানে তাঁরা কিছু করতে পারবেন না। তাহলে তারা এখানে কেন?
এছাড়া এবিষয়টা মানে দেবপ্রিয়ের বক্তব্য কী কমিটির সবার বক্তব্য?   না কেবল দেবপ্রিয় সাহেবের? তা জানা জনগণের দরকার আছে।
আর এটা তো এখন সন্দেহজনক যে কমিটির উদ্দেশ্য কমিটির সদস্যরাই পরিস্কার জানেন কি না! তাহলে এটা কোন দায়সারা কমিটি?এজন্যই  দেবপ্রিয়ের নেতৃত্বে যারা হাসিনা সরকার ও ভারতের দাবিদারি করে গেছে শুরু থেকেই তাদেরকে দিয়ে কোন কমিটি গড়াকে প্রশ্ন করেছিলাম!
অথচ পুরা বাংলাদেশের জনগণের দিক থেকে অর্থ পাচার ও খেলাপি ঋণ চোর দেরকে গলায় গামছা দিয়ে আদায় আমাদের জন্য মরা-বাঁচার ইস্যু!
যেদিকটা দেবপ্রিয়ের বক্তব্যে কোথাও প্রতিফলিত হয় নাই!আর কত? আমরা কী আবার দেবপ্রিয়দের হাতে বারবার পরাজিত হব, ট্রাপড হতেই থাকব?

লেখকঃ
গৌতম দাস, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

আপডেটঃ     আগষ্ট ২০২৪
শেষ আপডেটঃ  আগষ্ট ২০২৪

Leave a comment