১৫% ভ্যাট আইএমএফের চাপঃ কেন? এটা আসলে কাদের চাপ?


১৫% ভ্যাট আইএমএফের চাপঃ কেন? এটা আসলে কাদের চাপ?
গৌতম দাস
১৫ জানুয়ারি ২০২৫
https://wp.me/p1sCvy-6dr

 

 

১৫% ভ্যাট আরোপ করতে আইএমএফের চাপ????
এটা আইএমএফ এর ভারতীয় অরিজিন স্টাফদের এক গোপন কাজ! সুক্ষ্ম কারচুপির মত?
উদ্দেশ্য কী? ইউনুস সরকার যেন ফেল করে বা আনপপুলার হয়? অর্থনীতি সোজা না হয়???

আইওএমএফের ভারতীয় অরিজিন স্টাফদের বিরুদ্ধে অভিযোগ টা খুবই কড়া।
আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বড় শেয়ার মালিক আমেরিকার। ফলে এর সোজা মানে হল,  আমেরিকান সরকারের এখানে অনেক কিছুই বলার আছে, করার আছে। কাজেই এখনই আমেরিকান প্রশাসন যদি এদিকটায় মনোযোগী না হয় যে এখানে কী চলছে তবে এটা ক্রমশ বাংলাদেশকে চীনের ঘনিষ্ট হওয়ার রাস্তায় ঠেলে দিবে। সেটা আমেরিকার ভাল লাগলে ভাল!!!!
ফলে সিদ্ধান্ত আমেরিকার, সময় থাকতে যা করার করেন আপনারা!
আর আমরা এই ইস্যুটা নিয়ে ইন্ডিয়া যাদেরকে ক্ষমতায় বসানোর লোভ দেখাচ্ছে এমন বাংলাদেশের দলগুলোর ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে  এটা হুমকির হাতিয়ার করুক, তা হতে দিব না।  দেখতে চাই না। সবাই সাবধান হন! 
দেখেন ভিডিও ক্লিপ টাঃ
ভ্যাট মানে কীঃ
এটা ইংরাজী VAT (Value added tax)  থেকে আমরা বাংলায় ভ্যাট করে নিয়েছি। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তার রাজস্ব ( নানান ধরনের ট্যাক্স, শুল্ক) আদায় আমাদের মত দেশের জন্য সবসময় এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।  কাজেই দ্রুত কমিউনিস্ট হয়ে যেয়েন নাই। অন্তত বাস্তববাদী হন, তাহলেই হবে। এর সমাধানে কী করা যায় তানিয়ে ভ্যাট হল আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের নিয়োজিত এক গবেষণা লব্ধ সুপারিশ ও সমাধান!

আমাদের মত গরীব দেশে ট্যাক্স আদায় করা খুবই কঠিন। সরকার ট্যাক্স বাড়ায় দিলে চাপটা শেষমেশে ঐ গরীব বা স্বল্প আয়ের মানুষের উপরেই পড়বে!  এদিকে দেশে শিল্পায়ন বড় কারখানাই গড়ে উঠেনি তেমন! এর উপরে এনবিআরের (সরকারের রাজস্ব বোর্ড) অদক্ষতা আর ঘুষ চুরি তো আছেই। ফলে এটা মারাত্মক উভয় সঙ্কট ধরনের। আবার ক্ষমতাসীন সরকার ট্যাক্স আদায় না করতে পারলে নিজ সরকার চালানোর ব্যয় তো আছেই সাথে প্রতিবছরের এডিপি (ADP বা বার্ষিক অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ কর্মসুচীতে) তে ব্যয় করার সামর্থ থাকবে না। বা কমে যাবে। এর সোজা অর্থ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিনিয়োগ কমে যাবে। কাজ সৃষ্টি হবে না এমন আরো কত বিপদ!  অবকাঠামো মানে হল গ্রামে রাস্তাঘাট কালভার্ট ইত্যাদি বিনা পয়সায় সরকার যদি গড়ে দিতে না পারে তবে গ্রামের মানুষটার আয় বাড়বে না; ঐ গ্রামের আমাদের মূল অর্থনীতিরতে অংশ নিতে পারবে না উলটা বোঝা হয়ে থাকবে।  অবকাঠামো কথাটার অর্থই এটা। দুটা জিনিষ এক অর্থনীতিতে ফিজিক্যাল কাঠামো (রাস্তাঘাট ব্রিজ ইত্যাদি) তৈরি আর মানব সম্পদ তৈরিতে বিনিয়োগ (নুন্যতম চিকিতসা ও শিক্ষায় বিনিয়োগ) এগুলোতে সরকার যত অর্থব্যয় বাড়াবে ততই মূল অর্থনীতি দ্রুত বেগে সচল হয়ে উঠবে! কাজ সৃষ্টির রেট বাড়বে!  কাজেই ট্যাক্স আদায় ছাড়া অর্থনীতির চাকা সবলের কোল বিকল্প নাই।
তাই এই উভয় সঙ্কট সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ভ্যাট হল, আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক গবেষণা লব্ধ সুপারিশ ও সমাধান। যার সারকথা হল, সরকার সব শ্রেণীর ভোক্তা মানুষের উপর দোকানি কেনাবেচায় আড়াই বা ২.৫% ট্যাক্স যদি আরোপ করে তবে একটা ভাল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ হতে পারে সরকারের।
এটাই সারা দুনিয়াতে আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সদস্য গরীব রাষ্ট্রগুলোর উপর প্রযোজ্য শুরু হয়েছিল নব্বই এর দশক থেকে। বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালের খালেদা জিয়া সরকারের সাইফুর রহমানের আমল থেকে।
আড়াই পার্সেন্ট খুব বড় পরিমাণ নয় বলে এটা নিয়ে কখনই ভোক্তা প্রতিক্রিয়া হয় নাই বা দেখা যায় নাই। কিন্তু এখন ১৫% কেন?
হাসিনার আরেক চোর অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের বুদ্ধিতে এটাকে নিজে নিজে বাড়িয়ে ৫% করে দেন তিনি। এটাও আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক গবেষণা লব্ধ রেকমন্ডেশনের বাইরে করা হয়েছিল। কারণ, মনে রাখতে হবে ২.৫% ভ্যাট এটা কেবল বাংলাদেশের জন্য নির্ধারণ করা হয় নাই। এমন সকল আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সদস্য যারা গরীব বা স্বল্প আয়ের দেশ ( যারা IDA লোন খাতক যার সুদ .০.৭৫%  অথবা যা্রা মধ্য-আয়ের দেশে প্রবেশ করেছে এমন যারা 2% সুদ দাতা) – এমন সকল সদস্য দেশের উপর প্রযোজ্য!
অর্থাত সারা দুনিয়াতে আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক গবেষণা লব্ধ রেকমন্ডেশন ২.৫%। তাই আপনি আফ্রিকাতে যান সেখানেও দেখবেন ২.৫% ভ্যাট।  সারকথা এটা কেবল বাংলাদেশের জন্য আরোপিত কোন কিছু নয়! আর সবচেয়ে বড়কথা এটা ২.৫% এত কম রাখা হয়েছিল যেন এটা গরীব ভোক্তার উপর জুলুম না হয়ে যায়।
কারণ, মনে রাখতে হবে ভোক্তা মানুষ যদি ব্যয় কমিয়ে দেয় এতেও মূল অর্থনীতি মারাত্মক ভাবে ভেঙ্গে পড়বে, ব্যহত হবে। অর্থাৎ এটা ভারসাম্যপুর্ণ একটা পার্সেন্ট – এই ২.৫% যা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
অথচ এখন, এই ইউনুস সরকারের আমলে?
আর এখন এই ভারতীয় অরিজিনের কুতুবগুলা এটাকে এক ধাক্কায় ১৫% করে দিয়েছে! কেন?
যাতে ইউনুস সরকার আনপপুলার হয়? অর্থনীতি সোজা না হয়???
এটা তো আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক গবেষণা লব্ধ রেকমন্ডেশন বা সুপারিশকেই উল্টে দিয়েছে!  এখন ১৫% ভ্যাট-ট্যাক্সের চাপে অর্থনীতির গতি উঠে দাড়ানোর আগেই আবার শ্লথ হয়ে যেতে পারে! এর দায় কে নিবে?

আমাদের অনেক রাজনৈতিক দল সমালোচনাটা ইউনুসের উপর চাপাচ্ছে – আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের নি নীতিবিরুদ্ধ কাজের উপরে না কিংবা এর ভারতীয় স্টাফদের শয়তানির দিকটাতে নয়। কেন?

লেখকঃ
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

আপডেটঃ   রাত ০৮ঃ ৫৯     ১৪  জানুয়ারি ২০২৫

Leave a comment