বার্মা-আরাকান নিয়ে ইন্ডিয়ান প্রপাগান্ডায় মেতে উঠার কিছু নাই
গৌতম দাস
২০ এপ্রিল ২০২৫
https://wp.me/p1sCvy-6pT
আরাকান আর্মি, bbc থেকে নেওয়া
মাতবর-তালেবরে দুনিয়া তো বটেই ফলে বাংলাদেশও ভরে উঠেছে। ঘটনা হল ইউটিউব-কে নিয়ে।
ইউটিউবকে কীভাবে দেখব?
ইউটিউব আরেক ধরনের মিডিয়া যেটা সোশাল মিডিয়া; মানে হল যা মেইন স্ট্রিম মিডিয়া নয়।
যদিও অনেক সময় মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ভিডিও ক্লিপ নিউজ বের করে থাকে।
আসলে মুল ফারাকটা হল, মেইনস্ট্রিম মিডিয়া মানে হল যা জার্নালিজমের নীতি মেনে চলে। কোন জিনিষ নিউজ বা মিডিয়া রিপোর্ট হতে গেলে যে জার্নালিজমের নীতি মেনে চলতেই হয়। এছাড়া নিউজ, ভিউজ বা এনালাইসিস এর ফারাক যে বজায় রাখে ও পাঠক-দর্শককে সতর্ক করে রাখে। নিউজের মধ্যে যে নিজের (রিপোর্টারের) ভিউজ বা মন্তব্য ঢুকিয়ে না দেয়। ইত্যাদি…। আর সবার উপরে এটা প্রাতিষ্ঠানিক জার্নালিজম হতেই হয়। যেমন সেখানে একজন দায়ীত্ব দেয়া দায়ীত্ববান এডিটর থাকতেই হয়। রিপোর্টার কিছু লিখে দিলেই তা কোন এডিটর পাশ করে দিবেন না। লেখায় লিখিত অক্ষরে যা দেখা যায় তাই সত্যি না; সত্যি বলে দাবি করা যাবে না – এই নীতি মেনে সম্পাদককে কাজ করতে হয়।
বিপরীতে সোশাল মিডিয়া (মানে ফেসবুক, এক্স বা ইউটিউব ইত্যাদি) যার এসবের বালাই নাই। এর মূল কারণ, এটা ব্যক্তি যেভাবে সমাজে কথা বলে; পরিচিত ও বন্ধুবান্ধব বা সার্কেলে যেভাবে কথা বলে এটা তাই। মূল কথা সোশাল মিডিয়ায় এসব বক্তব্যকে জার্নালিজমের নিয়মরীতি বা দায় মেনে বলতে হয় না।
কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় অংশ নেয়া অনেক অসচেতন ব্যক্তি দুই মিডিয়ার এই সীমারেখা খেয়ালই রাখেন না। এর উপর লেখায় লিখিত অক্ষরে যা দেখা যায় তাই সত্যি বলে মনে করার অসচেতনতা ও ব্যাধি আছে তাদের!
আরেকটু পরিস্কার করে বলিঃ এনালাইসিস আর রিপোর্ট এর ফারাক
ইউটিউবার এর এনালাইসিস বা এনালাইটিক্যাল লেখা যদি হয় তো শোনা যায়, যার যা পছন্দ অনুসারে তা আমরা ফলো করতে পারি, করিও!
কিন্তু রিপোর্ট? মানে ইউটুবার এর এ নিয়ে “রিপোর্ট”?
সরি এবার এর বিশ্বাসযোগ্যতা লাগবে, এটা জার্নালিজম হতে হবে ইত্যাদি……; যা ইউটিউবারের থাকে না।
আর এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মিথ্যা প্রচারের রমরমা কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে ইউটিউব বা ফেসবুক!
গরীব রাষ্ট্র ইন্ডিয়া সামরিক বা ফাইন্যান্সিয়াল ব্যয় করার সামর্থ নাই এমন ইন্ডিয়ার তাই নানান সোশাল মিডিয়া বা ছুপা (গদি মিডিয়া খুলে) মিডিয়া প্রপাগান্ডায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। এটা হল গরীবের ফাইভ স্টার হোটেল যাপনের কল্পনার মত!
এমন ইন্ডিয়ার কথা মনে রেখে আমাদেরকে মিডিয়া কোনটা কী তা মনে রাখতেই হবে, সচেতনতা থাকতেই হবে!
সম্প্রতি,
“মিয়ানমারের রাখাইন বা আরাকান রাজ্যকে ঘিরে ভূ-রাজনীতির এক চক্রের মধ্যে পড়ে গেছে বাংলাদেশের কূটনীতি ?
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির এক গোলক ধাঁধায় পড়ে এ থেকে বের হয়ে সহজ পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশের জন্য এই সমস্যার একদিকে আছে আরসা ও রোহিঙ্গারা এবং আরাকান আর্মি ও জান্তা সরকার, অন্যদিকে আছে চার বৈশ্বিক পরাশক্তি। এমন পরিস্থিতিতে ছায়া যুদ্ধ কি আসন্ন” – মোটামুটি এমন সারকথায় এক ব্যাপক প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এর মাদার প্রপাগান্ডাটা হল, (সাবেক র-অফিসারের সন্তান) চন্দন নন্দীর লেখা। কাজ যোগাড় করতে না পেরে এটাই তার পেশা হয়ে দাড়িয়েছে। তাই তাঁর এক লেখা হল এর মূল মিথ্যা খবরটা। যার সার মিথ্যা দাবিটা হল, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশ আর্মি কে দিয়ে বার্মা বা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে এক প্রক্সি যুদ্ধের পরিকল্পনা নিচ্ছে। আর সেজন্যই নাকি আমেরিকার দুই স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্তা বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।- এই হল সারকথায় মিথ্যা বক্তব্যটা!
এদিকে এনিয়ে আপনার মতামত জানতে চেয়ে ইনবক্স করেছে। চুপ ছিলাম সাড়া দিতে চাই নাই।
আজ এখানে এনিয়ে একটু সাড়া দিচ্ছিঃ
১। বটম লাইন হল, ট্রাম্পের নীতি বলছে তারা নতুন করে দুনিয়ার কোন বিবাদে কোন পক্ষের সাথে জড়াবে না যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনকে অর্থ ঢালতে হয়।
কাজেই বার্মায় আরেকটা যুদ্ধের ফ্রন্ট খুলা (মানে অর্থ ঢালা শুরু করা) ট্রাম্পের নীতি-পলিসিই নয়।
২। কাজেই আমার কাছে এমন রিপোর্ট (?) এখনও প্রো-ইন্ডিয়ান জল্পনা-কল্পনাই। যার নুন্যতম কোন ফর্মাল বা মেইনস্ট্রিম মিডিয়া রিপোর্ট নাই। আমি দেখি নাই। ইন্ডিয়ার প্রায় সব মিডিয়ায় এখন মোদির অর্থ খাবার জন্য ভিখারি। তবুও এমন রিপোর্ট সেখানে দেখি নাই।
বাংলাদেশে যারা সফরে এসেছে তাদের কী কোন ফর্মাল বক্তব্য কী কোথাও ছাপা হয়েছে? হদিস নাই……।।
৩। সবচেয়ে বিরক্তিকর দুইটা মন্তব্য হল ১। ড. ইউনূসের চীনে গিয়ে ‘যা চান সব দিয়ে দেব’ ধরণের বশ্যতা দেখানো ২। সর্বশেষ জেনারেল ওয়াকার রাশিয়া সফরের নেপথ্য ঘটনা
এর প্রথম বাক্যটা হল, ইন্ডিয়ান জলুনি। এমন কোন বক্তব্য ড. ইউনূস চীন সফরে করেন নাই। আমি নিশ্চিত। আসলে এই সাজানো বাণী থেকে বুঝাই যাচ্ছে এটা ইন্ডিয়া সরকার বা র-এর ক্ষোভ বা অসহায়ত্বের ভাষা!
আর দ্বিতীয় বাক্যে ওয়াকার সাহেব যেখানেই ঘুরতে যান না কেন তিনি বাংলাদেশ আর্মিকে (as a whole) প্রতিনিধিত্ব করে করেন নাই। এভাবে বুঝলে তা সঠিক হবে বলে মনে করি।
৪। এবারের ট্রাম্প প্রশাসনের স্টেট ডিপার্টমেন্ট (পররাষ্ট্র) বা পেন্টাগনেরও এমন খায়েশ থাকতেই পারে। কিন্তু তা মানে, তেমন খায়েশ পুরণ করতে হলে যখনই এমন ফাইল হোয়াইট হাউজ বা ট্রাম্পের অফিস টেবিলে এরা পৌছাতে যাবে ট্রাম্প সেসব ফাইলে ডাস্টবিনে ফেলে রেখেদিবেন। এটাই ট্রাম্পের নীতি-পলিসি। এই একই কাজ ট্রাম্প তার আগের (ট্রাম্প-১) প্রশাসনের আমলেও করেছিলেন।
৫। যদিও আগের বাইডেন প্রশাসন “বার্মা এক্ট” বা আরাকান আর্মি তে হাত ঢুকানো ইত্যাদি নিয়ে অনেক কিছু আগিয়ে ছিলেন। কিন্তু এবারের ট্রাম্প তার অর্থব্যয় কমানোর নীতির কারণে সেসব দিকে আকর্ষণ রাখেন না।
৬। একটা বুঝাবুঝির চিহ্ন দিয়ে / জানিয়ে রাখি। যারা পরাশক্তি এই শব্দটা ব্যবহার করে তারা নাদান ইন্ডিয়ান। সোভিয়েত রাষ্ট্রের (১৯৯১) পতন এর পরে “পরাশক্তি” বলে কিছু নাই। এটা সেকালের একটা ভুল শব্দ মাত্র! আর যারা ইন্ডিয়াকে যারা চার পরাশক্তির একটা ভাবে এরা গাধা; বোধশক্তি-বুদ্ধি প্রতিবন্ধি!!
কাজেই নুন্যতম মেইনস্ট্রিম নিউজে কিছু না পাওয়া পর্যন্ত; আর তাতে ট্রাম্পের পরিস্কার কোন মনোভাব যাতে প্রতিফলিত; তা না হওয়া পর্যন্ত এসব কিছুকে ইন্ডিয়ান র-এর প্রপাগান্ডার অধিক কিছু ভাবতে পারছি না। সরি!
লেখকঃ
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
সবশেষ আপডেটঃ , এপ্রিল ২০২৫

