প্রতি বিপ্লব কী? ওয়াকার ম্যাজিক?
গৌতম দাস
২৭ এপ্রিল ২০২৫ সন্ধ্যা ০৬ঃ ৫১
https://wp.me/p1sCvy-6rH
আমার অবজারভেশন এটাই প্রতি-বিপ্লব বহনের চিহ্ন, ছবিটা বাংলা নিউজ / কালের কন্ঠ থেকে নেয়া
দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে বিপ্লব শব্দটা যতটা পরিচিত; আর এটাও বুঝি বা-বুঝি এটা ব্যবহার করতে দেখি আমরা অনেককেই এবং অতি সহজেই। বিশেষ করে এটা যখন “জুলাইয়ের বিপ্লব” বা “আগষ্ট বিপ্লব” বা “২৪ এর বিপ্লব” এর যুগ বা কাল পার হচ্ছি আমরা। কিন্তু ঠিক তার দ্বিগুণ হল আমাদের অজ্ঞতা বা বেখবর!!! কিন্তু কী নিয়ে? সেটা হল বিপ্লব না হয় যা হয় বুঝলাম; তাহলে প্রতি-বিপ্লব, সেটা আবার কী? এমনিতে বিপ্লব এই কথা বা ধারণাটাকে কমিউনিস্ট-প্রগিতির লোকেরা নিজেদের একচেটিয়া মনে করে থাকে। তারাই সবচেয়ে ভাল বুঝে এমনও মনে করে থাকে। তবুও তাদের মধ্যেও দেখা যায় প্রতই-বিপ্লব জিনিষটা কী? কেন তা আসে? কখন আসে? – এসব প্রশ্নে খুব স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। যদিও তারা প্রতি-বিপ্লব কথাটা শুনেছেন এমন দাবি করে থাকে।
তত্ব কথা প্রতি-বিপ্লব কে বুঝানো যায়; বুঝাবও অবশ্যই। কিন্তু আগে প্রাকটিক্যালি দেখাবো। এর মূল কারণ, আমরা সকলে প্রগতি বুঝি কিংবা ইসলামিজম বুঝি অথবা আম-জনতা যাই হই না যেন বিপ্লব কী তা ৫ আগষ্টের পর থেকে আমরা সবাই বলব আমরা বুঝি। কারণ এটা বাস্তবে আমাদের সবাইকে দেখায়ে দিছে; আগে না জানলেও এখন জেনে গেছি বিপ্লব কী!
তাহলে প্রতি-বিপ্লব কী?
এর ইংরাজি হল, কাউন্টার-রেভেলিউশন [counter revolution] । বুঝাই যাচ্ছে কাউন্টার মানে একটা ঘটে যাওয়া ঘটনাকে উলটা দিকে ঘুরানো। অর্থাৎ হাসিনা উতখাত উপড়ে ফেলা যদি বিপ্লব তবে এখানে প্রতিবিপ্লব হচ্ছে হাসিনাকে ফিরে ক্ষমতায় বসানো! হা ব্যাপারটা তাই এখানে একটু টুইস্ট বা মোচড় আছে। হাসিনা ক্ষমতায় ছিল ১৬ বছর ইন্ডিয়ান আধিপত্যের প্রতিনিধি হিসাবে। তাহলে হাসিনার উতখাত মানে আসলে তা সেই ইন্ডিয়ান আধিপত্যেরও উতখাত। তাহলে এখানে প্রতিবিপ্লব মানে কেবল হাসিনাকে নয় মূলত একেবারেও মূল শক্তি হচ্ছে ইন্ডিয়ান আধিপত্য একেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা মানে ইন্ডিয়ান আধিপত্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এটাই হল মৌলিক দিক!
আর সেখান থেকেই এতে আরো কিছু ভিন্নতা থাকবে বা দেখব আমরা। অর্থাৎ কেবল ঠিক হাসিনার পুনঃপ্রতিষ্ঠা নয় এর বদলে আমরা দেখব মূল শক্তি ইন্ডিয়ান আধিপত্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা তাই। এটাই প্রতি-বিপ্লব ও প্রতি-বিপ্লবী চিহ্ন বা মূল প্রতীক।
এবার আর ইন্ডিয়ান আধিপত্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এর সাথে আরো দেখব – তারেক জিয়ার বিএনপি, স্পষ্ট করে জামায়াত, ফাঁকে কান্নি মারছে এমন হাসিনার লীগ ইত্যাদি আর সবার উপরে ভাসবে তাদের সমন্বয়ক ওয়াকার। আর সব মিলিয়ে এরাই হতে যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রতিবিপ্লবী শক্তি!
এবার আরেকটু সার করে বলিঃ তাহলে ৫ আগষ্ট কে যদি ধরি হাসিনার সাজানো সেনাবাহিনী এর অর্ডার ভেঙ্গে দিয়ে এই সেনা প্রতিষ্ঠানেরই (ওয়াকার বাদে) বাকীদের (মূলত জুনিয়র অফিসারদের) আধিপত্যের বিজয় (যেখানে অসহায় ওয়াকার পুরানা পদপদবীসহই ব্যক্তি মাত্র); আর এটাই মূলত হাসিনার উতখাত ও পলায়নের মূল চালিকা শক্তি। আর পরবর্তিতে এই ঘটনাটাই ৫ আগষ্ট ২০২৪ থেকে ছাত্র-জনতার দ্বারা এন্ডোর্সড বা অনুমোদিত হয়ে যাওয়াতে পুরা পরিবর্তন টাই একটা বিপ্লব; একটা বিল্পবী চরিত্র নিজে হাজির হয়ে যেতে পেরেছিল। যদিও ভিতরে নানান পকেটে অনেক ধরনের দুর্বলতাও থেকে গেছিল। যেমন ওয়াকারকে উপরে প্রতীকী হলেও রেখে দেওয়া। বাওইরে থেকে ইউনুস সাহেব-কে এনে সরকার প্রধান করে বসানো ইত্যাদি অনেকগুলো দুর্বল-পকেট এতে থেকে গেছিল।
তবুও অর্থ তৈরির দিক থেকে আবেগ-উচ্ছাসে এটা সবার দিক থেকে এটা একটা বিপ্লবই গন্য হয়েছিল । আর এই বিপ্লব ও এই বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রথম বিরুদ্ধচারণ শুরু করেছিল ইন্ডিয়া ও মোদি। এদিকটা খেয়াল করলেই ব্যাপারটা বুঝা যাবে। এতবড় সধিপয়ত্য হারানো মূল শক্তি প্রতিবিপ্লব বা বিরোধিতার মূল হাল ধরবে তা বলাই বাহুল্য! কিন্তু এর সাথে সহযোগী হবে তারেকের বিএনপি, আগা-পিছা করা জামায়াত (যার শুরুটা হয়েছিল ইসকন-চিন্ময় আর এদের গলা জড়িয়ে ধরে চুমা দেয়াদের কে দিয়ে)। ওদিকে সেনা প্রতিষ্ঠানের ভিতর বিজয়ী শক্তিরো যতটা সম্ভব খামতি পূরণ করে পয়লা স্ত্র পেরিয়ে নিজেদের সংহত হয়ে দারাতেই নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ লেগে যায়।
কিন্তু সবচেয়ে বড় আরেক দুর্বলতা ক্রমশ বড় হয়ে উঠতে থাকে। সেটা হল, খো ইউনুস সাব, আসিফ নজরুল ও অন্যেরা। এদের কাজটা ইনোসেন্ট বা নিস্পাপ অজ্ঞতা বলবেন হয়ত অনেকে। কিন্তু এটা আসলে বাচ্চাদের আপাত নির্দোষ পুকুরে ঢিল মআরা যেটা পুকুরের ব্যাঙের দিক থেকে প্রাণঘাতি, এরকম। না ইউনুস না তার মন্ত্রীসভা (উপদেষ্টারা) কেউই প্রতি-বিপ্লব ব্যাপারটা কী তা আমল করেন নাই শুধু তাই না প্রায় অযোগ্যও বটে। কিন্তু এটা যে গণমানুষ রাষ্ট্রস্বার্থের দিক থেকে বাঁচামরার সেখবর তাদের নাই। এরই প্রমাণ হল, মুজিবের ছবি অবলীলায় মাথার উপরে টাঙাতে অসুবিধাবোধ না করা, লীগেরও রাজনৈতিক অধিকার দিতে ব্রি. শাখাওয়াত প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাচাল কথাবার্তা ও অপসারিত হওয়া অয়থবা ধরেন খোদ ইউনুস সাবের সস্তায় ইলিশ মাছ খাওয়ার রাষ্টড় ও সরকার প্রধান হয়ে থাকার লক্ষ্য নির্ধারণ……!!! আমাকে বারবার লিখতে হপ্যেছে ক্ষমতা কী? রাষ্ট্রক্ষমতা মানে মারো নাহলে নিজে মরো! ফ্রেন্ড-এনিমি টনটনে বোধ! আগেই আপনাকে নির্মম্ভাবে আপনার ক্ষমতার এনিমি কে মারতে হবে নইলে পরে শত্রুর হাতেই নিজে উতখাত হতে হবে!! ক্ষমতা মানে এটাই।
এটাই বিপ্লব কে রক্ষা করা! ফলে হয় মারো নয়ত মরো! বিপ্লব কে সুরক্ষা দাও আর নয়ত প্রতি-বিপ্লবে মারা যাও! একথাতাই কখনও ইউনুস সাবকে পরিস্কার বুঝানো যায় নাই আধা-বুঝ ভাবে উনি থেকে গেছেন। আর ততই উনি মটিভেশন আর স্পিচ নিয়ে নিজের ক্যারিসমা দিয়ে সব জয় করতে রওনা দিয়েছেন। প্রতিবিপ্লব বুঝাতে যান নাই। এমনকি আমি বলে আপনি নিজেও মারা পড়তে পারেন এই ভাল-ভালাইয়াতে! ক্ষমতা ভাল-ভালাইয়ার জিনিষ নয়।
যাই হোক, আজ “জেনারেল ওয়াকার ম্যাজিকে গণমানুষের উচ্চাশা” – এই শিরোনামে যে আর্টিকেল ছাপা হয়েছে কালেরকন্ঠ সহ বসুন্ধরা, বাংলাভিষন ও এলাইক মিডিয়াতে একযোগে এতাকে আমি মনে করি আরো ঘনিভুল হয়ে আবার দাড়ানো এক প্রতিবিপ্লবী পরিকল্পনা হিসাবে। ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা বলবেন হয়ত অনেকে।
সরকার প্রধান হওয়া তুলনামূলক সহজ কিন্তু যদি আপনার প্রতি-বিপ্লব ঠেকানো কাজটা কী ও কেন? – এমন ধারণা নাই থেকে থাকে ?????
তবে আপনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে নিজের জন্য, দেশের ও গণস্বার্থ রক্ষার দিক থেকে বিপদজনক! তাই আপনার উচিত এদিকটা রাষ্ট্রক্ষমতা রক্ষা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য “উপযুক্ত” যাকে ইউনুস সাব আপনার কম্পাটাবল মনে হয়; তাকে বিশেষ এসাইনমেন্ট ক্ষমতাপ্রাপ্ত করে দিতেই পারেন। বলাই বাহুল্য তিনি ওয়াকার সাব নন! নির্দিষ্ট সময়-অন্তে এর রিভিউ ও অগ্রগতি মনিটর মিটিংয়ের ব্যবস্থাও রাখতে পারেন।
লেখকঃ
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
সবশেষ আপডেটঃ সন্ধ্যা ০৭ঃ ৩৫, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

